#নিরু❤
পর্ব-০৩
writer- #shanta_islam
উপর হয়ে তাকাতেই দেখি আবির ভাই,,,আবির ভাইকে দেখেই মনে হচ্ছিলো এখনি ফিট হয়ে পরে যাবো। মানুষটা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো এখনি আমাকে গিলে খাবে। চোখ বড় বড় করে ধমক দিয়ে আমাকে বললো,,,,
-কিরে দেখে চলতে পারিস না।
আবির ভাইয়ের কথাশুনে প্রচুর রাগ হচ্ছে। কাল এতোবড় একটা ভয়ংকর কান্ড ঘটানোর পরো সে আমার সাথে এমনভাবে কথা বলছে যেনো কিছুই হয়নি। এমনভান করছে যেনো সে কিছুই করে নি। এতোবড় ভয়ংকর একটা ঘটনা ঘটানোর পরও তার মধ্যে কোনো অনুতপ্ত বোধ দেখতে পারছি না। আর আজ আবার সেই আমার সাথেই ধমক দিয়ে কথা বলছে। কতো বড় সাহস। মনটা চাচ্ছে এখনি কয়েকটা কসিয়ে মারি। সয়তান ছেলে কোথাকার। সবার সামনে ভালো সাজার চেস্টা করে কিন্তু ভিতরে যে সয়তানের খালাতো ভাইকেও হার মানায় তা কেও বিশ্বাস করবে না।
-কিরে সরবি নাকি এখানেই মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকবি। আবারো ধমকানো সুরে কথাটা বললো আবির ভাই। মনের মধ্যে অনেক রাগ লুকিয়ে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম উনাকে সামনে পেলেই চার পাচটা থাপ্পড় গালে বসিয়ে দেবো। কিন্তু এখন উনাকে সামনে পেয়ে মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। মনে হয় কেও মুখে সুপারগ্লু মেরে দিয়েছে। না পারছি কিছু বলতে না পারছি উনার ধমকানো কথাশুনতে। অবশেষে আবির ভাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে যেতে নিলে অনেক কস্ট করে মনের মধ্যে কিছু শক্তি সঞ্চয় করে মুখটা খুললাম,,,,
– কাল আপনি আমার সাথে এমনটা করলেন কেনো?
আমার কথাশুনে আবির ভাই থামকে দাড়ায়।
– কি করেছি?
আবির ভাইয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে এখনি আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। কিভাবে একটা মানুষ এতো স্পষ্টভাবে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটানোর পর তা অশিকার করতে পারে।
-কি বলছি তা আপনি ভালো করেই জানেন। কাল বিকেলে আপনি কিভাবে আমার সাথে এমন একটা কাজ করতে পারলেন। আপনার রুহুটা একবারও কাপেনি।
আবির- চোখের সাথে সাথে তোর মাথাটাও গেছে মনে হয়। কি সব আবল তাবল বকছিস।
নিরু- আবল তাবল আমি বকছি না। আমি যা বলছি ঠিকি বলছি। রেগে গটগট করতে করতে কথাগুলো বললাম।
আবির- ওওও এবার বুঝেছি। তোকে যে জ্বীনে আছোর করেছে সে কথাটা সত্যি তাহলে।
নিরু- মানে?
আবির- তোর বোন পুরো এলাকা ঢোল পিটিয়ে সবাইকে বলে বেড়াছে তোকে নাকি জ্বীনে ধরেছে। কথাটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু এখন তোর হাপভাব দেখে মনে হচ্ছে কথাটা পুরো সত্য।
আবির ভাইয়ের কথাশুনে শরীরের রক্ত ৩০৪ বোল্টেজে দৌড়াতে শুরু করলো,,উনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে হচ্ছে না তাই রেগে গটগট করে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে নিলাম হঠাৎ সিড়ির সাথে হোচট খেলাম,,,এখনি মনে হয় মাথাটা যাবে,,পরে যাওয়ার সময় চোখ দুটো বন্ধ করে নেই। কারন মরার সময় নিজের মৃত্যুটা নিজের চোখে দেখে যেতে চাই না। কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে বুঝতে পারলাম হয়তো কেও আমাকে ধরে ফেলেছে। এখনো পড়ে যাইনি যাক বাবা এই যাত্রায় বেচে গেছি। আস্তে করে একটা চোখ মেলে দেখি আমি আবির ভাইয়ের বুকের উপর আবির ভাই আমাকে তার বুকের মধ্যে জাপটে রেখেছে,,আর আমি উনার শার্টের কলার শক্ত করে ধরে রেখেছি,,আবির ভাই রেগে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,
– একটুও ভালোভাবে চলতে পারিস না। সবসময় ছটরফটর করতেই থাকিস। আবির ভাই এতো কাছে এসে কথাগুলো বলছিলো জানো আমার ভিতরটা পুরো নড়ে গেছে। তার গরম নিশ্বাস আমার মুখে এসে পরছিলো। তার হাতের স্পর্শ,,তার শরীরের মাতাল করা গ্রান উফফ নিজেকে যে আটকে রাখাটা দায় হয়ে পরেছে।
নিরু- ছ,,ছা,,,ছা,,,,
আবির- কি চ ছ লাগিয়েছিস। যা বলবি স্পষ্ট করে বল,,
অনেক কস্টে নিজেকে সংযম করে আমতা আমতা করে বললাম,,,
-ছারুন,,
আবির ভাই বিস্ফরিতভাবে একবার আমার দিকে তাকালো,,মনে হলো ভুল কিছু বলে ফেলেছি যেটা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে,,, উনি আমার কোমড়টা ছেরে দিলো আর আমি ধপাস করে পরে গেলাম,,,,
– ও মা গো আমার কোমড়টা গেলো!
– এখন চিৎকার করছিস কেনো? যখন ছেরে দিতে বলেছিলি তখন মনে ছিলো না। কথাটা বলেই রেগে গজগজ করতে করতে সিড়ি বেয়ে উঠে গেলো।
ইসস কি ব্যাথাটাই না পেয়েছি। ছেরে দিতে বলেছি তাই বলে সত্যি সত্যি কি ছেরে দিতে হবে। সয়তান কোথাকার। মাজাটা ধরে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে আশাকে খোজার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। না জানি আর কোথায় কোথায় আমার নামে গুজব ছড়াচ্ছে। গেটের বাহিরে এসেই দেখি আশা তার কিছু ফ্রেন্ডদের সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে। কাল দিপা আপুর গায়ে হলুদ তাই গেটের বাহিরে ডেকোরেটরের লোকরা প্যান্ডেল করছে। অনেক কস্টে মাজায় হাত দিয়ে খুরাতে খুরাতে আশার পিছু দাড়াতেই শুনতে পেলাম আশা ওর ফ্রেন্ডদের বলছে,,,
আশা- আরে হ্যাঁ বলিস না আমি তো জ্বীনের সিং ও দেখেছি। ইয়া লম্বা লম্বা নোক। কিন্তু আমি ভয় পাই নাই,,আশার ফ্রেন্ডরা অবাক হয়ে আশার কথা শুনছে। হঠাৎ তাদের মধ্যে একজন আমাকে দেখে ফেলে। আমাকে দেখা মাত্রই মেয়েটা আশাকে ইশারা দিয়ে ওর কথা থামানোর চেস্টা করে। কিন্তু আশা তো আশাই,, কে শুনে কার কথা সে তার মতো আমার নামে গুজব রটিয়েই যাচ্ছে। পিছন থেকে আমি আশাকে বললাম,,
-আচ্ছা আপা আপনি তো অনেক সাহসি। আমার না জ্বীন ভূতকে অনেক ভয় লাগে,, এখন আমি কি করবো,,,
আশা- ভুতকে আমার নাম বলে দিও,,তাহলেই দেখবে,,,নি,,নি,,নিরু আপা,,,(আমার দিকে তাকিয়ে।)
পাশে থেকে আশার ফ্রেন্ডরা বলে উঠলো,,আশা তোর জ্বীনে ধরা বোন তো এসে গেছে,,, আমাদের খুব ভয় করছে। এখন আমরা কি করবো?
আশা- ভয় পাশ না সুরা পাঠ করতে থাক। আল্লাহুমা বিসমিকা আমুতু ওয়াহ ইয়া,,
– কিন্তু এটা তো ঘুমানোর দোয়া,,
আশা- আরে যেকোনো একটা সুরা পরলেই হয়। কে যানে কখন কোনটা কাজে লেগে যায়। আজ আমার কপালে শনি আছে।
আশার ফ্রেন্ড- আমরা ঘুমানোর দোয়া পরবো না ভাই। আমরা লাইলাহা ইল্লাল্লাহু পরতে থাকি,,
এমনেই তো মাথায় রাগ চরে রয়েছে তার উপর আশার আর ওর ফ্রেন্ডদের কথা শুনে গা জলে যাচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া মেয়েদের মুখে এসব কথা শুনলে কারি না মেজাজ খারাপ হয় বলুন। রেগে পাশে থাকা একটা লাঠি হাতে উঠাতেই আশা জুতো রেগে দেয় এক দৌড়। ওর সাথে এখন যে দৌড়ে পারবো না তা আমার ভালো করেই জানা। মাজার যা অবস্থা হয়েছে এ নিয়ে দৌড়ানো পসেবল না। তাই আবারো রাগে কটকট করতে করতে বাসায় ডুকে পরলাম। এসেই দেখি ডাইনিং রুমে সবাই বসে নাস্তা করছে। অয়ন ভাই(আমার চাচাতো ভাই) এর পাশে আবির ভাইও বসে নাস্তা করছে। অয়ন ভাই আর আবির ভাই দুজনকে জানে জিগার দস্ত বললেও তা কম হবে। এক কথায় অয়ন ভাই আবির ভাইকে ছাড়া চলতেই পারতো না। এখন ভাবি আসার পর আবির ভাইয়ের পিছু কিছুটা ছুটেছে। সবাই দেখি যার যার মতো গোস্ত আর রুটি দিয়ে পেট পুরে ভুরি ভোজন করছে। আমিও নাস্তার টেবিলে যেয়ে খেতে বসে পরলাম।
মা- কিরে সকাল সকাল কোথায় গেছিলি?
নিরু- জাহান্নামের চৌ রাস্তায় গেছিলাম!
দাদি- এই মেয়েটার তেরা তেরা কথার কারনেই মেয়েটাকে জ্বীনে ধরেছে। আমি বলিকি দিপার বিয়ের পর পরই ওর ও একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
চাচি- হ্যাঁ রে নিরু তোকে জ্বীনে কিভাবে ধরলো রে?
চাচি প্লেটে রুটি দিতে দিতে কথাগুলো বলছিলো।
এখন মনে হচ্ছে নিজের মাথায় নিজে ইট মেরে মরে যাই। এই পৃথিবীতে ধৌর্যশীল প্রানীদের মধ্যে যদি কোনো এওয়ার্ড দেওয়া হতো তাহলে মনে হয় আমিও একটা এওয়ার্ড পেতাম। এক কথা বার বার শুনতে শুনতে মনে হয় কানটা পচে গেছে। তাই কারো কথায় কান না দিয়ে আমি আমার মতো খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
দাদি- নিরুর মা আমি বলিকি একটা হুজুর ডাকাও,,নিরুকে যেভাবে ভর করেছে,,,
অয়ন ভাই- বাস আর না,,,এতোক্ষণ অনেক শুনেছি তোমাদের প্যানপ্যান আর ভালো লাগছে না। তোমরা একটু স্বাভাবিক হতে পারো না। মেয়েটা বেহুশ হয়েছে তার মানে যে ওকে জ্বীনে ধরেছে এ কথা তোমাদের কে বলেছে। যতসব ফালতু কথা। ডিহাইড্রেশন বা দূর্বলতার কারনেও তো বেহুশ হতে পারে। এ বাসায় আমি যেনো আর কোনো জ্বীন বা ভূতের কথা না শুনি। বিয়ে বাড়িতে আর যদি কোনো প্রকার অশান্তি দেখেছি তো আমার থেকে খারাপ কেও হবে না। এই আমি বলে রাখলাম। কথাটা বলেই অয়ন ভাইয়া না খেয়ে টেবিল থেকে উঠে গেলো।
দাদি- দেখলি তো দেখলি তোর জন্য অয়ন না খেয়ে চলে গেলো।
লে হালুয়া আমি কি করলাম। আমি কিছু বললামও না করলামও না,,আর ঘুরে ফিরে সেই আমার উপরি দোষ পরলো। এটাকেই বলে জীবন নিরু এটাকেই বলে জীবন। বাজি দিয়ে রুটি খেতে আর ভালো লাগছিলো না তাই মাংসের বাটিটা নেই। মাংসের বটিটা হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই আবির ভাই মাংসের বাটিটা ছো মেরে হাত থেকে নিয়ে নেয়। এ মানুষটা শুধু আমার সাথেই এমন করে কেনো তা আমি বুঝে উঠতে পারি না। সয়তান ছেলে কোথাকার এর জন্যই আজ আমাকে এতোগুলো কথা শুনতে হচ্ছে। একবার বাটে পাই না তারপর দেখাবো এই নিরু কি জিনিস। কি আর করার পোড়া কপালে আর মাংস জুটলো না তাই বাজি দিয়েই কোনো মতে দুইটা রুটি খেয়ে দিপা আপুর বিয়ের কাজে লেগে পরলাম। আমি মা চাচি ভাবি এই চারজন মিলে সেই কখন যে কাজে লেগেছি তার খবর নেই। কাজ শেষ করতে করতে রাত প্রায় অনেক হয়ে এলো। এর মধ্যে আশার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কোথায় যে ঢেং ঢেং করে ঘুরছে কে জানে। বিয়ে বাড়ির চারদিকে অন্য এক ধরনের আমেজ ছড়িয়ে থাকে। দিপা আপুর বিয়েতেও ঠিক তেমন আমেজ ছড়িয়ে রয়েছে। আমাদের বাসার গেট থেকে শুরু করে মহল্লার মেন গেট পর্যন্ত ছোট ছোট লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে লাইট গুলো জালিয়ে দেওয়া হয়। উফ যা সুন্দর লাগছিলো না দেখতে মনে হচ্ছিলো এখনি ছাদে ছুটে যেয়ে উপর থেকে পুরো সুন্দর্যটা দেখি। কিন্তু সেই সৌভাগ্য আর হলো কই মাজার যা অবস্থা তার উপর আজ যেই পরিমান কাজ করেছি শরীরে অবশিষ্ট শক্তি পর্যন্ত বেচে নেই। মাকে বলে গরম পানির সেক নেওয়ার জন্য হালকা কুসুম গরম পানির প্যাক আনাই,,,অন্তত একটু আরাম তো পাওয়া যাবে। রাতে সাধারণত আমি গেঞ্জি পরেই ঘুমাই। তাই গেঞ্জি পরে পিটে গরম পানির প্যাক লাইয়ে চোখ বন্ধ করে উপর হয়ে সুয়ে আছি। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেলাম। বুঝতে বাকি রইলো না যে আশা কুটনি বুড়ি এসে পড়েছে।
এই সময় আশা ছাড়া অন্য কারো রুমে ডুকার কথা না। তাই আমি চোখটা না খুলে উপর হয়েই সুয়ে রইলাম।
-কিরে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?
আশা কোনো কথা বলছে না!
– টেবিলের উপরে দেখ গরম শরিষার তেলের বাটি রাখা আছে,,,,পিঠ থেকে মাজা পর্যন্ত একটু মালিস করে দে তো!
আশা আমার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। মারবো দেখে ভয় পেয়েছে হয়তো। তাই কোনো কথা বলছে না। যাক বাবা ভয় পেয়েও যে ওর মুখটা বন্ধ আছে এটাই ভালো।
-কিরে কি বলছি,,কানে যাচ্ছে না। টেবিলের উপর থেকে তেলটা নিয়ে একটু মালিস করে দে। ধমকিয়ে কথাটা বলাম। ধমক খেয়ে আশা তেলের বাটিটা নিয়ে আমার পাশে বসলো।
-গরম পানির প্যাকটা সরিয়ে নে। এটা আর লাগবে না। ভালো করে তেলটা মালিস করিস। বলেই পিঠের গেঞ্জিটা অনেকটা উঠিয়ে দিলাম,,,
-কিরে মালিশ করছিস না কেনো? সারাদিন তো ঢেং ঢেং করে ঘুরে বেড়াস কাজের কথা শুনলেই জ্বর উঠে তাই না। আচ্ছা মালিস করে দিলে আর মার দিবো না। নে এবার মালিশ কর।
আশা আমার পিঠে হাত রাখতেই আশার হাতের ছোয়া অন্য রকম মনে হলো। আশা পিঠে মালিস করে দিচ্ছে। আহ কি যে আরাম লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না। সারাদিনের ব্যাথা যেনো এক নিমিশেই গায়েব হয়ে গেলো। চোখে হালকা ঘুম ঘুম ভাবো নেমে এসেছিলো।
– বাহ আশা তোর হাতে তো জাদু আছে। মাজাটা একটু ভালো করে মালিশ করে দে। যা ব্যাথা পেয়েছিলাম,,,,
আশা মাজা মালিস করছে আমি আরেকটু নিচে মালিশ করতে বলাম কিন্তু আশা আর মালিশ করছে না,,,
-কিরে থামলি কেনো মালিশ কর না। ভালোই লাগছিলো।
আশা মালিস করছে না। এতোবার বলছি তবুও মেয়েটা চুপ করে বসে আছে। মেজাজটাই গরম হয়ে গেলো আশাকে একটা চর মারার জন্য যেই চোখটা মেললাম সামনে দেখি তেলের বাটি নিয়ে আবির ভাই বসে আছে। আল্লাহ গো আমার মান ইজ্জত সব শেষ। আবির ভাইকে দেখা মাত্রই চোখ বন্ধ করে জোরে একটা চিৎকার দিলাম,,,,
নিরু- আআআ,,,,,
#নিরু❤
পর্ব-০৪
#shanta_islam
মা- নিরু,,নিরু,,এই নিরু,, কি হয়েছে?
চাচি- নিরু মা কিরে কি হলো চিৎকার করলি কেনো?
মা চাচির ডাক শুনে চোখ মেলে দেখি সামনে আবির ভাই নেই। আমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে বরফের মতো জমে গেছি। একটু আগেই তো আবির ভাই আমার সামনে ছিলো,,,নিমিষের মধ্যেই মানুষটা কিভাবে গায়েব হয়ে গেলো। আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আর হাপিয়ে হাপিয়ে বলার চেস্টা করলাম,,
নিরু- আ,,আ,,আবি,,,
দাদি- ওরে নিরুর মা রে নিরুকে জলদি ধর! ওর গারে জ্বীন ভর করেছে।
চাচি- আম্মা আমি সুকনো মরিচ আর ঝাটা নিয়ে আসি। কথাটা বলেই কাকি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। এর মধ্যেই আশা রুমে ডুকে দেখে আমার এই অবস্থা।
আশা- দাদি কি হয়েছে?
দাদি- নিরুর গায়ে আবার ভর করেছে রে!
আশা- লাইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নী কুংতু মিনাজ জলিমিন,,,আমি আজকে ওর সাথে ঘুমাবো না বাবা। কে জানে কখন যাতা মেরে বসে।
দাদি- নিরুর মা নিরুর হাত শক্ত করে ধর। তারপর দেখাচ্ছি জ্বীন বেটাকে!
চাচি- আম্মা নেন শুকনো মরিচ পুরিয়ে নিয়ে এসেছি!
মা আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে রেখেছে। দাদি শুকনো মরিচ আমার নাকের কাছে ধরতেই হাচি দিতে দিতে আমার জান শেষ। নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না।
ভাগিস অয়ন ভাই আর বাবা আমার রুমে আসে। অয়ন ভাই আর বাবা রুমে এসে দেখে আমার উপর কি পরিমান অমানবিক অত্যাচার চলছে। সাথে সাথেই অয়ন ভাই একটা জারি দিয়ে বলে উঠে,,,কি হচ্ছে এখানে এসব। অয়ন ভাই হলো দাদির কলিজার টুকরো। দাদি কারো কথা শুনুক বা না শুনুক অয়ন ভাইয়ের কথা ঠিকি শুনবে।
দাদি- দাদুভাই তোর ছোট বোনকে সত্যি সত্যি জ্বীনে ধরেছে,,,
বাবা- কি জ্বীনের এতো বড় সাহস আমার মেয়েকে ধরেছে। জ্বীন মনে হয় জানে না এই কায়সার কি জিনিস। কই জ্বীন কই আজ জ্বীনের এক দিন কি আমার একদিন! ওই যে এসে গেছে চিরিয়াখানার আরেক নমুনা আমার বাবা কায়সার রহমান। এই চিরিয়াখানার অন্যতম প্রানীদের মধ্যে একজন। তারো একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যেটা আপনারা সামনে জানতে পারবেন। অয়ন ভাই সবার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই সবাই চুপ হয়ে যায়। অয়ন ভাই আমার পাশে এসে বসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,,
-নিরু তোর কি হয়েছে। চিৎকার দিলি কেনো?
এখন আমি ভাইকে কি বলবো। আবির ভাই এসে আমার পিঠ মালিস করে দিয়ে গেছে। এ কথা আমি বলি কিভাবে! যদি এ কথা সবাইকে বলি তাহলে এই বিয়ে বাড়িতে একটা কেলেংকারী কান্ড ঘটবে এটা আমি সিওর।
অয়ন ভাই- কিরে কি হলো? কিছু বলছিস না কেনো?
নিরু- আসলে ভাইয়া একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলাম তাই,,,কোনো উপায় না পেয়ে মিথ্যে কথা বলে দিলাম।
অয়ন ভাই- ও এই ব্যাপার। তাহলে সূরা পুরে ঘুমিয়ে পড়! আর খারাপ স্বপ্ন আসবে না। আমি মাথা নাড়িয়ে ভাইয়ার কথায় সায় দিলাম!
ভাইয়া- তোমরাও যার যার রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল সকাল সকাল সবাইকে উঠতে হবে!
দাদি- শোন দাদুভাই নিরুকে জ্বীনে স্বপ্নটা দেখিয়েছে,,আমি নিশ্চিত,,,সত্তর বছরের অভিজ্ঞতা আছে আমার!
অয়ন- রাখো তোমার সত্তর বছরের অভিজ্ঞতা তোমার কাছে। যাও যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো কাল অনেক মেহমান আসবে তাড়াতাড়ি না ঘুমালে তোমার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেলস পড়ে যাবে। দাদিকে পাম দিয়ে ভাইয়া কথাটা বললো। দাদির একটা দূর্বল পয়েন্ট আছে। দাদিকে তার রুপের প্রশংসা করলে দাদি তাকে সাত আসমানে তুলে রাখে। অয়ন ভাইয়া ঠিক এই টেকনিকটাই কাজে লাগালো।
দাদি- হ্যাঁ তুই ঠিকি বলেছিস দাদুভাই। আমার সুন্দর চেহারায় আমি একটা দাগো লাগতে দেবো না। একে একে সবাই রুম থেকে চলে গেলো। অবশ্য দাদিকে তাড়ানোটা মুশকিল ছিলো কিন্তু অয়ন ভাইয়ের জন্য এ যাত্রার বেচে গেলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ অয়ন ভাইয়াকে। ভাগিস অয়ন ভাই ছিলো নাহলে আজ শুকনো মরিচ আর ঝাটার বাড়ি খেতে খেতে মরে যেতে হতো। আশা আর আমি এক সাথেই ঘুমাই। আশা অনেক্ষন আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থেকে বালিশ নিয়ে নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়লো। হয়তো ভয় পেয়েছে। যাক তবুও ভালো হয়েছে একটু শান্তিতে ঘুমাতে তো পারবো! আমিও চোখ বন্ধ করে ঘুমোতে চেস্টা করছি কিন্তু কিছুতেই চোখে ঘুম আসছে না। বার বার শুধু আবির ভাইয়ের কথা মনে পরছে। ভাবতেই কতো লজ্জা লাগছে উনি আমার পিঠ হাত দিয়েছে। ছি ছি নিরু তোর মান সম্মান সব শেষ। কিন্তু একটা কথা আমাকে অনেক ভাবিয়ে তুলছে,,, ক্ষনিকের মধ্যেই মানুষটা গায়েব হলো কি করে। কোনো গায়েবি শক্তি জানে নাকি? উনি কি আসলেই আবির ভাই ছিলো নাকি আবির ভাইয়ের রূপের ভুত এসেছিলো। আল্লাহ বাচাও। দাদির কথা সত্যি হলো নাকি। আর আবির ভাইয়ের মতো ছেলে এরকম একটা নির্লজ্জের মতো কাজ করবে বলে আমার মনে হয় না। অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার ভিতর। চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি। সকালে চোখ মেলে দেখি ঘড়িতে ছয়টা বেঝে গেছে। নামাজে ওয়াক্ত শেষ হলো বলে। তাড়াহুড়ো করে উঠে নামাজটা পড়ে নিলাম। ডাইনিংএ এসে দেখি সবাই বিয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে। মা আদেশ করলো হলুদের জন্য স্টেজ সাজাতে হবে,,, ফুল সর্ট পরেছে। এখনি যেয়ে ফুল আনতে হবে। অয়ন ভাই আর আমি ফুল আনতে যাবো। কোনো মতে রেডি হয়ে নিচে এসে দেখি আবির ভাই আর অয়ন ভাই একসাথে দাড়িয়ে আছে। আবির ভাইকে দেখে কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। ইসস কি লজ্জা। আল্লাহ এই মুখ নিয়ে আমি কিভাবে উনার সামনে যাবো। না না আমি যাবোই না। এই ভেবে আবার বাসায় ফিরার জন্য পা বাড়ালাম পিছন থেকে অয়ন ভাইয়ের ডাক পরলো।
অয়ন ভাইয়ের ডাকশুনে কোনো উপায় না পেয়ে তার সামনে যেতেই হলো।
অয়ন ভাই- নিরু এখানে স্টেজে আমার অনেক কাজ পড়ে আছে। তাই তুই আর আবির মিলে জলদি করে ফুল নিয়ে আয়।
ইয়া আল্লাহ আমি শেষ যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আবির ভাই তার বাইক স্টার্ট দিচ্ছে আর আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। এই মানুষটার সাথে আমি যাবো কিভাবে। ইয়া আল্লাহ রক্ষা করো।
অয়ন ভাই- কিরে বাইকে উঠছিস না কেনো?
আবির ভাই- নিরুর মনে হয় যেতে ইচ্ছে করছে না। ও বরং থাক আমি একাই যেয়ে নিয়ে আসি।
আবির ভাইয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে কাল রাতে কিছুই হয়নি। এখন আমার নিজেরি সন্দেহ হচ্ছে সত্যিই মনে হয় আমাকে জ্বীনে ধরেছে। যে আবির ভাইয়ের রূপ ধরে আমার সামনে আসে।
অয়ন ভাই- না তুই একা যাবি কেনো? নিরু কেও নিয়ে যা। কি কি ফুল লাগবে মা ওকে বলে দিয়েছে। ও সব জানে। নিরু বাইকে উঠ।।
ভাইয়ার কথা শুনে তার মুখের উপর আর না বলতে পারলাম না আবির ভাইয়ের বাইকে উঠতেই হলো। বাইকে উঠেছি ঠিকি কিন্তু অনেক খানি জাগা ফাকা রেখে বসেছি আর মনে মনে দোয়া ইউনুস পাঠ করছি। কিছুদূর যাওয়ার পর আবির ভাই বাইক থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,, বাইক থেকে নাম।
আবির ভাইয়ের কথা শুনে অনেকটা অবাক হলাম।
-বাইক থেকে নামতে বলেছি শুনতে পাসনি।
আমি সাথে সাথে বাইক থেকে নেমে কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,,কি হয়েছে?
– ভালো করে ধরে বসতে পারলে বসবি নাহলে এখানেই ফেলে রেখে চলে যাবো।
– আমি তো ভালো করেই বসেছিলাম।
আমার কথাশুনে আবির ভাই চোখ রাঙ্গিয়ে আমার দিকে তাকালো। তার চোখ রাঙ্গানো দেখে সাথে সাথে বাইকে চড়ে বসলাম। এবার গেপটা একটু কম রাখলাম। আবির ভাই আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললো এভাবে কেও বসে। ভালো করে ধরে বস। উনার ধমক শুনে সাথে সাথে উনার কাধে হাত রাখলাম। আমাদের মধ্যে আর কোনো গেপ রইলো না। উনার এতো কাছে আসতেই সেই মাতাল করা ঘ্রানটা পাচ্ছি।
চলবে,,,,
চলবে,,,,