এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ৪৬+৪৭

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৪৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

রূপ মায়া আহমেদের হাত ধরে এক দৃষ্টিতে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের নিচের কালো দাগ গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুখটা ও কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল গুলো মুছে দিয়ে রূপ মায়া আহমেদকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে নিলো। খুব আপন লাগছে মায়া আহমেদকে। ঠিক নিজের আপন মা এর মতো।

বেশ কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো আহমেদ মন্জ্ঞিলে। সানোয়ার আহমেদ কিছুক্ষন আগেই গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেছে। উনি হয়তো এতক্ষনে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট ও নিচ্ছে। এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। সোহেলী আহমেদ কিচেনে রান্না বসিয়েছে। মারু ড্রইং রুমে সোফার উপর বসে বেশ আয়েস করে আমের আচার খাচ্ছে। এমনিতেই সে অনেক আচার পাগলী। প্রেগনেন্সির পর এক নতুন ছুঁতো পেয়ে টাইম টেবিল ছাড়াই আচারের কৌটো নিয়ে বসে পড়ে। মৃন্ময় ড্রইং রুমে পা রেখেই রাগে গজগজ করতে করতে মারুর হাত থেকে আচারের কৌটো টা ছিনিয়ে নিলো। মারু আপাতত আচারের স্বাদ ভুলে গিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে এক দৌঁড়ে গিয়ে সামনে খিলখিল হেসে দাঁড়িয়ে থাকা রূপকে ঝাপটে ধরল। রূপ ও মারুকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। মারু খুব হাসছে আর বলছে,,,,,

—-“কতোদিন পর তোকে দেখলাম বল? খুব মনে পড়ছিলো তোকে।”

—-“হ্যাঁ রে অনেক দিন পর দুজনের দেখা হলো। আমি ও তোকে খুব মিস করেছি।”

মায়া আহমেদ মৃদ্যু হেসে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।

মুহিত খানিক গলা ঝাঁকিয়ে মায়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—–“আম্মু…..আমি এক্টু ফ্ল্যাটে যাচ্ছি। দরকারী সব জিনিসপএ ফ্ল্যাটেই রয়ে গেছে। তাছাড়া আমাদের জামা, কাপড় ও সব ফ্ল্যাটে।”

মায়া আহমেদ মুহিতের সামনে এগিয়ে এসে মুহিতের কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বেশ আহ্লাদি স্বরে বলল,,,,,,

—–“যাও বাবা। কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে এসো। খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমার। সবাই মিলে একসাথে খাবো।”

মায়া আহমেদ কিছুটা থেমে আবার বললল,,,,,

—-“শুনো মুহিত….. সাথে মৃন্ময়কে নিয়ে যাও। এক হাতে সব চেঁচিয়ে আনতে তোমার কষ্ট হবে।”

মুহিত হালকা হেসে মায়া আহমেদের ডান হাতের তালুতে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,

—–“আমি একাই পারব আম্মু। ভাইয়াকে আর কষ্ট করে যেতে হবে না। আর আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে আসব। চিন্তা করো না।”

মৃন্ময় আচারের কৌটো টা সোফার উপর রেখে দৌঁড়ে এসে মুহিতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—–“এই তুই চুপ যা। আমি ও তোর সাথে যাবো। একা একা আলমারী ভর্তি জামা কাপড় টেনে আনতে পারবি না। আম্মু যা বলছে তাই হবে।”

মুহিত ভাবলেসহীন ভাবে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া আহমেদ মৃদু হেসে মৃন্ময় আর মুহিতের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,

—–“দুটোই আমার চাঁদ। আমার ছোট্ট আকাশটায় দু দুটো চাঁদ! ভাবা যায় এগুলা?”

পিছন থেকে মারু আর রূপ তেড়ে এসে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তা আমরা কি আপনার আকাশের তাঁরা হতে পারি? নাকি তা ও কপালে জুটবে না?”

মায়া আহমেদ খিলখিল হেসে মারু আর রূপকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—–“তোমরা শুধু তাঁরা না। তোমরা দুজন আমার মস্ত বড় আকাশ। যাদের গাঁয়েই আমার চাঁদ দুটোর অবস্থান।”

মুহিত আর মৃন্ময় অবাক হয়ে মায়া আহমেদের কথা গুলো শুনছে। কি মধুর উনার প্রতিটি কথা। এতো দিন এসব মধুর মধুর কথা গুলো কোথায় ঘাপটি মেরে ছিলো? আচমকাই এতো সব মধুর কথা গুলো মুখে খই এর মতো ফুটছে। মানুষ বড় অদ্ভুত। কখন তাদের ভাবনা চিন্তা বদলে যায়, ঠিক ঠাওর করা যায় না। আসলে উপর ওয়ালা চাইলে সব পারে। উনি ক্ষনিকের মধ্যে এক্টা মানুষকে ভালো করতে পারে আবার খারাপ ও করতে পারে।

মায়া আহমেদের হাসি মুখ খানা দেখতে খুব শুভ্র আর অমায়িক লাগছে। ফর্সা মুখে মিষ্টি হাসিটা ফুটে আছে। মুহিত আর মৃন্ময় কিছুক্ষন উনার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে দুই ভাই গলাগলি করতে করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

সোহেলী আহমেদ ছলছল দৃষ্টিতে জড়িয়ে থাকা তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো নিজের ছেলে মেয়ের কথা মনে পড়ছে। সোহেলী আহমেদের দিকে চোখ পড়তেই মায়া আহমেদ ইশারা করে উনাকে বলল সামনে এগিয়ে আসতে। সোহেলী আহমেদ চোখের জল মুছে মায়া আহমেদের দিকে এগিয়ে এলো। মায়া আহমেদ ক্ষীণ হেসে সোহেলী আহমেদের ডান হাতে হাত রেখে বলল,,,,,,,

—–“কাদিস না সোহেলী। সাকিব আর সানায়াকে এক্টু শাস্তি পেতে দে। বাস্তবতাটা এক্টু বুঝুক ওরা। ভুলের শাস্তি পাক। যেমনটা আমি পেয়েছি। দেখছিস না পাপের শাস্তি আমাকে কতোটা সহজ করে দিয়েছে। আমি এখন নিজেকে বু্ঝতে পারছি। ঠিক, ভুলের হিসেবটা অনায়াসে করতে পারছি। ওদের ও আমার মতো হতে দে। শিক্ষা পেতে দে।”

মায়া আহমেদ কিছুটা থেমে আবার বলল,,,,,,,

,—–“তুই চিন্তা করিস না সোহেলী। কিছুদিন পরেই আমরা সাকিব আর সানায়াকে তোর বুকে ফিরিয়ে আনব। সবাই আমরা মিলেমিশে একই বাড়িতে থাকব। দু দুটো মেয়ে হয়েছে আমার। দায়িত্ব আরো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। মোট চার খানা মেয়ে আমার। এতো গুলো দায়িত্বের ভার বইতে বইতে না পৃথিবী ই ছাড়তে হয়।”

আচমকাই রূপ মায়া আহমেদের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে বেশ রাগী চোখে মায়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“দায়িত্ব না নিতেই অতিষ্ট হয়ে উঠছ? তাই তো অসব অলক্ষুনে কথা বলছ। তুমি কোথাও যাবে না আমাদের ছেড়ে। তোমার সব গুলো ছেলে, মেয়ে তোমাকে খুব যত্নে বুকে আগলে রাখব। কোথাও যেতে দেবো না।”

কথা গুলো বলেই রূপ গাল ফুলিয়ে মায়া আহমেদকে ক্রস করে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। মারু এক্টা বড় করে ভেংচি কেটে মায়া আহমেদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সোফার উপর থেকে আচারের কৌটো টা হাতে নিয়ে আবারো আচার খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মায়া আহমেদ এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধীর পায়ে হেঁটে উনার রুমে চলে গেলো। সোহেলী আহমেদ মুখটা ভাড় করে কিচেনে চলে গেলো।

রুমে ঢুকেই মায়া আহমেদ এদিক সেদিক তাকিয়ে সানোয়ার আহমেদকে খুঁজছে। ব্যালকনির দিকে তাকাতেই মায়া আহমেদের চোখ দুটো স্থির হয়ে গেলো। সানোয়ার আহমেদ ইজি চেয়ারে বসে চোখ জোড়া বন্ধ করে পাশেই ছোট্ট এক্টা টেপ রেকর্ডারে লাতা মাংগেসকারের “লাগ জা গালে” গানটা শুনছে। পুরোনো দিনের গান গুলোতে এক্টা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। যার বিশ্লেষন আপনি ভাষায় বলে বুঝাতে পারবেন না। মন, প্রাণ ছুঁয়ে যায় গান গুলো শুনলে। ইচ্ছে হয় কেবল শুনতেই থাকি। কিছুটা সময়ের জন্য সবকিছু থমকে যাক। ঐ গান গুলোর প্রতিটা তালে মজে থাকি। তাদের কন্ঠে এক্টা অন্য রকম দম থাকে। তাদের কন্ঠ এবং ব্যক্তিত্ব দুটোই এভারগ্রীণ।

মায়া আহমেদ পা টিপে টিপে সানোয়ার আহমেদের মুখোমুখি দাঁড়ালো। কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে সানোয়ার আহমেদ চোখ জোড়া খুলে সামনের দিকে তাকালো। মায়া আহমেদের মলিন মুখটা দেখার সাথে সাথে সানোয়ার আহমেদ খুব শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“যাও মায়া। ফ্রেশ হয়ে এসো। এরপর আমরা কথা বলব।”

মায়া আহমেদ কিছুটা উদাসীন হয়ে বলল,,,,,

—–“তুমি এখনো সুপ্রিয়াকেই ভালোবাসো তাই না? এতক্ষন ওর কথাই ভাবছিলে?”

সানোয়ার আহমেদ এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,,,,,

—–“যে মানুষটা চলে গেছে তাকে নিয়ে আর টানা হেছড়া করো না মায়া। সে যেমন আমার মনে আছে। তুমি ও তেমন আমার মনের কোথাও না কোথাও আছো। পার্থক্য এটাই, আমি সুপ্রিয়াকে দেখতে পাই না। তবে, তোমাকে দেখতে পাই। আমি চাই তোমার মাঝে আমার সুপ্রিয়াকে দেখতে। খুব করে চাই তোমার মাঝে আমার সুপ্রিয়াকে খুঁজে পেতে। আমি তোমাদের মাঝে বৈষম্য দেখতে চাই না। দুজনকেই একজনের মাঝে দেখতে চাই।”

মায়া আহমেদ চোখের জল আড়াল করে আলমারী থেকে কালো রং এর এক্টা কাপড় নামিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। মায়া আহমেদের এমন লুকায়িক কান্নার ভাবার্থ সানোয়ার আহমেদ সঠিক বুঝছে না। আদৌ কি এটা দুখের কান্না নাকি সুখের কান্না? ব্যাপারটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে সানোয়ার আহমেদ আবারো চোখ বুজে গানের দিকে ধ্যান ফিরিয়ে নিলো। উনি গানের প্রতিটা মর্মকে গভীরভাবে ফিল করছে।



ঘড়িতে দুপুর দুইটা। মুহিত আর মৃন্ময় সবে মাএ ফ্ল্যাট থেকে বাড়ি ফিরল। দুজনের হাতেই বড় বড় দুটো ল্যাকেজ ভর্তি জামা কাপড়। হাতের ল্যাকেজটা মুহিতদের রুমের দরজার সামনে রেখে মৃন্ময় নিজের রুমে চলে গেলো। মারু এই অবেলায় নাক টেনে ঘুমুচ্ছে। প্রেগনেন্সির পর থেকেই সে সারাক্ষন ঘুম আর আচার এ দুটো নিয়ে পড়ে থাকে। মৃন্ময় রুমে ঢুকে মারুকে ঘুমোতে দেখে মলিন হেসে মারুর পাশে বসল। মারুর দিকে কিছুটা ঝুঁকে মৃন্ময় মারুর কপালে এক্টা চুমো খেয়ে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মারু এখনো কিছুই টের পায় নি। আরামসে ঘুমুচ্ছে সে।

মুহিত ল্যাকেজ দুটো নিয়ে রুমে ঢুকে আচমকাই চোখ দুটো বড় বড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ জোড়া এখনই বের হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে মুহিত এক্টা ঘোরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠছে। ল্যাকেজ দুটো দুদিকে রেখে মুহিত দ্রুত পায়ে হেঁটে পেছন থেকে রূপকে জড়িয়ে ধরল। সাথে সাথেই রূপ খানিক কেঁপে উঠল। মুহিতের এমন কান্ড দেখে রূপ লজ্জায় মুর্ছা যাচ্ছে। কারন, রূপের পড়নে শুধু এক্টা ব্লাউজ আর পেটিকোট। ভেজা শাড়িটা বারান্দার ব্যালকনিতে ছড়ানো। ঐ সময় রূপ শাড়ি ছাড়াই ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছিলো। তাছাড়া এই বাড়িতে রূপের এক্সট্রা কোনো শাড়ি ও নেই। মারু রুমে ঘুমুচ্ছে বলে রূপ ডিস্টার্ব করে নি। না বুঝেই সে শাড়িটা গা থেকে খুলে ভিজিয়ে দিয়েছিলো। ভেবেছিলো শাওয়ার নিবে। কিন্তু পরক্ষনে মনে পড়ল এই বাড়িতে তার এক্সট্রা কোনো শাড়ি নেই। তাই সে দৌঁড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শাড়িটা ব্যালকনিতে ছড়িয়ে দিলো। তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য। এর জেরেই রূপ পড়নে কেবল ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে রুমে পায়চারী করছে।

প্রায় অনেকক্ষন পরে মুহিত রূপকে ছেড়ে হেচকা টান দিয়ে রূপকে সামনের দিকে ঘুড়িয়ে নিলো। রূপ মাথাটা নিচু করে মুহিতের সামনে থেকে সরতে নিলেই মুহিত রূপের হাত ধরে ফেলল। রূপ অনেকক্ষন চেষ্টা করে ও মুহিতের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। আচমকাই মুহিত বাঁকা হেসে বলে উঠল,,,,,,,

—–“হানিমুন ট্যুর টা কি আজ রাতেই বুক করব?”

রূপ হাসি হাসি মুখ করে মুহিতের দিকে তাকালো। মুহিত বুঝে গেছে রূপ খুব এক্সাইটেড। রূপের হাতটা ছেড়ে মুহিত শার্টের হাতা ফোল্ড করছে আর বলছে,,,,,,,,

—–“ল্যাকেজ থেকে শাড়ী নামিয়ে পড়ে নাও।”

রূপ দৌঁড়ে ল্যাকেজ দুটো ঘাটাঘাটি করে শাড়ী এক্টা বের করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মুহিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতম খুলে শার্টটা চেইন্জ্ঞ করে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। রূপ ওয়াশরুম থেকে বের হলেই মুহিত ওয়াশরুমে যাবে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই রূপ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। মুহিত তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। রুম থেকে বের হয়ে রূপ সোজা নিচে চলে গেলো। মারু এতক্ষনে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে খাবারের জন্য বসে আছে। মায়া আহমেদ মাএ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। সোহেলী আহমেদের সাথে রূপ ও হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে। কিচেন রুম থেকে সমস্ত খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে জড় করছে। মায়া আহমেদ এক্টা চেয়ার টেনে বসে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,

—–“কাল থেকে দুটো কাজের লোক রাখতে হবে বুঝলি মা? তাহলে তোদের এতো কষ্ট করতে হবে না।”

রূপ কিছু বলার আগেই সোহেলী আহমেদ বলে উঠল,,,,,,,

—–“কাজের লোক তো এখন পাওয়া ই যায় না ভাবী। দুইদিন কাজ করে তো তিনদিনের বেলায় ফেরার।”

এর মাঝেই বাড়ির সব পুরুষরা নিচে নেমে এলো। মুহিত আর মৃন্ময়কে দেখে মায়া আহমেদ মুচকি হেসে বড় এক্টা প্লেইটে ঠাসা ঠাসা ভাত আর তরকারী নিলো। উপস্থিত সবাই হা হয়ে মায়া আহমেদের কান্ড দেখছে। মায়া আহমেদের ডান পাশের চেয়ার দুটো টেনে মুহিত আর মৃন্ময় বসল। আর বাম পাশের দুটো চেয়ারে বসল সানোয়ার আহমেদ এবং রেজাউল আহমেদ। কিছুক্ষন আগেই রেজাউল আহমেদ থানা থেকে ফিরেছে। আরো এক সপ্তাহ পর সাকিব আর সানায়াকে ছাড়ানো যাবে। এর আগে কিছুই করা যাবে না। তাই উনি মুখটা ভাড় করে বসে আছে।

মায়া আহমেদ ভাত মাখছে আর বলছে,,,,,,,

—–“আজ আমি আমার ছেলে মেয়েদের নিজের হাতে খাইয়ে দেবো। মায়ের হাতের মাখা ভাতের মজা ই আলাদা।”

রূপ দৌঁড়ে এসে মুহিতের চেয়ারের পেছনে দাঁড়ালো। মারু এসে দাঁড়ালো রূপের পাশে। মুহিত, মৃন্ময়, রূপ, মারু চারজনের মুখেই ক্লোজ আপ হাসি। রূপ পেটে হাত দিয়ে মুখটা কাচুমাচু করে বলল,,,,,,,,

—–“ফুফুমনি প্রথম লোকমাটা আমাকে দাও। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।”

মায়া আহমেদ মুখটা কালো করে বলল,,,,,,

—-“আমাকে এখনো মা ভাবতে পারছিস না তাই না রূপ?”

রূপ জিভ কেটে মায়া আহমেদকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,

—–“স্যরি মা। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কক্ষনো এই ভুলটা হবে না। এবার তো ফার্স্ট লোকমাটা আমাকে দাও।”

—–“দিচ্ছি দিচ্ছি আগে তো ছাড়।”

রূপ এক গাল হেসে মায়া আহমেদকে ছেড়ে দিলো। রূপের মুখের কাছে লোকমা ধরতেই মায়া আহমেদের হাতটা ঘুড়িয়ে মুহিত নিজের মুখে লোকমাটা পুড়ে নিলো। রূপ এখনো হা করে আছে। বাকি সবাই হু হা করে হেসে দিলো। মুহিত খাবার চিবাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। রূপ কঠোর দৃষ্টিতে মুহিতের দিকে তাকিয়ে মুখটা বন্ধ করে সিঁড়ির দিকে পা রাখতে নিলেই মুহিত রূপকে হেচকা টান দিয়ে ওর কোলে বসিয়ে নিলো। রূপ ছুটাছুটি করছে মুহিতের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর। তবে মুহিত ছাড়ছে না। এইদিকে উপস্থিত বাকিরা লজ্জায় মুর্ছা যাচ্ছে। হুট করেই মারু মুখটা কালো করে বলে উঠল,,,,,,,,

—–“ধ্যাত কেউ আমার দিকে তাকাচ্ছেই না। এইদিকে যে আমি আর আমার বাবু ক্ষিদেয় মরছি সেদিকে কারো খেয়াল ই নেই। ধুর বাবা চলে যাচ্ছি আমি!”

মায়া আহমেদ মারুর হাত টেনে ধরে বলল,,,,,,

—–“এই না না। আমি আমার নাতনীকে অভুক্ত রাখতে পারব না। দাঁড়াও তোমাকে আগে খাইয়ে দিচ্ছি।”

মারু বাঁকা হেসে রূপের দিকে তাকালো। রূপ রাগে দুঃখে ব্লাস্ট হয়ে যাচ্ছে আর মুহিতকে বড় বড় নখ দিয়ে খামচি দিচ্ছে। মুহিত হাসি মুখে সব সহ্য করে নিচ্ছে। মায়া আহমেদ এক এক করে হাসি মজার মাঝে সবাইকে খাইয়ে দিলো। মৃন্ময় আর মুহিত প্রতিবার মারু আর রূপের খাওয়ায় ডিস্টার্ব করেছে। রূপ আর মারু ফায়ার হয়ে সবার সামনে ওদের খুব বকেছে ও। সানোয়ার আহমেদ খাওয়া বাদ দিয়ে মা আর ছেলেমেয়েদের খুনশুটি দেখছে। মায়া আহমেদের প্রতি উনি এক্টু এক্টু করে আকৃষ্ট হচ্ছে।

এভাবে হাসি খুশিতে কেটে গেলো প্রায় এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে মায়া আহমেদ প্রতি বেলা ছেলেমেয়েদের খাইয়ে দিয়েছে। মারুর খুব যত্ন নিয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে মারু আর রূপকে নিয়ে হাটতে বের হয়েছে। সুযোগ পেলেই রূপের রুমে ঢুকে রূপের পাশে ঘুমিয়েছে। রূপের মাথায় বিলি কেটে দিয়েছে। রূপ আর মারুর সাথে সারাক্ষন আড্ডা দিয়েছে। কিচেনের কাজে রূপ আর সোহলী আহমেদকে হেল্প করেছে। দুটো কাজের লোক রাখা সত্ত্বে ও সোহেলী আহমেদ নিজ হাতে রান্না করত। তাই রূপ আর মায়া আহমেদ হাতে হাতে সোহেলী আহমেদকে সাহায্য করত।

এই এক সপ্তাহে আদনান আর মিসেস আয়রা ও প্রতিদিন এসে রূপ আর মায়া আহমেদের সাথে দেখা করে যেতো। আদনান পুরো বাড়ি ঘুড়ে ঘুড়ে দেখত। ড্রইং রুমের দেয়ালে ঝুলানো সানায়ার ছবিটার দিকে আদনান বরাবরই হা করে তাকিয়ে থাকে। রূপ ব্যাপারটা বেশ বুঝতে পারে। তবে সামনাসামনি কিছু জিগ্যেস করে না।

মুহিত এখন নিজেদের অফিসে যায়। বাবা, চাচা, ভাতিজারা মিলে কোম্পানীকে নতুন ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। কোম্পানীর সব ভাড় এখন মৃন্ময় আর মুহিতের উপর। মুহিত আর মৃন্ময় খুব উসখুস করছে হানিমুন ট্রিপে যাওয়ার জন্য। কিন্তু মুখ খুলে কাউকে কিছু বলতে পারছে না। মায়া আহমেদ ব্যাপরটা আঁচ করতে পেরে সানোয়ার আহমেদের সাথে কথা বলে হানিমুন ট্রিপটা ফাইনাল করে দিলো।

আজ দুই জোড়া দম্পতি সাজেক যাবে। হানিমুন ট্যুরে। রূপ আর মারু খুব এক্সাইটেড। সকাল থেকেই ওরা গোজ গাজ শুরু করেছে। রাতের ট্রেনে ওরা সাজেক যাবে। রূপ আর মারু খুব বায়না ধরেছে ট্রেন চড়বে বলে। মৃন্ময় আর মুহিত চেয়ে ও ওদের মানাতে পারছে না। দুই পাট রানীর জেদের কাছে ওদের হাড় মানতেই হলো। বিকেলের দিকে মুহিত আর মৃন্ময় অফিস থেকে ফিরলেই ওরা সবাই শপিং যাবে। এরপর সন্ধ্যার দিকে ট্রেন স্টেশানের দিকে রওনা দিবে।

অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে সকাল পেরিয়ে বিকেল ঘনিয়ে এলো। দোলা এক্টু আগে শ্বশুড় বাড়ি থেকে এ বাড়িতে এসেছে। মূলত রূপ কল করে দোলাকে এ বাড়িতে এনেছে। কারন রূপ আর মারু যাওয়ার পর বাড়িটা খালি হয়ে যাবে। মায়া আহমেদ খুব একা হয়ে যাবে। সব দিক বিবেচনা করেই রূপ দোলাকে এই বাড়িতে এনেছে। দোলা ও খুব ভলো হয়ে গেছে। ফ্রি লি কথা বলছে মারু আর রূপের সাথে।

মুহিত আর মৃন্ময় অফিস থেকে ফিরতেই রূপ আর মারু রেডি হয়ে শপিং এ রওনা দিলো। প্রায় তিন ঘন্টা পর ওরা শপিং থেকে বাড়ি ফিরল। সব গোজ গাজ করে ওরা রাত আটটার মধ্যেই রেল স্টেশান পৌঁছে গেলো।
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_৪৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

মুহিত আর মৃন্ময় অফিস থেকে ফিরতেই রূপ আর মারু রেডি হয়ে শপিং এ রওনা দিলো। প্রায় তিন ঘন্টা পর ওরা শপিং থেকে বাড়ি ফিরল। সব গোজ গাজ করে ওরা রাত আটটার মধ্যেই রেল স্টেশান পৌঁছে গেলো।

রূপ আর মারু লাল চুড়িদার পড়েছে। মুহিত আর মৃন্ময় লাল আর কালো রঙ্গের চেক শার্ট পড়েছে। চোখে কালো চশমা। দারুন লাগছে দুইজনকে দেখতে। ফর্সা গাঁয়ে শার্ট টা যেমন ফুটে আছে তেমনি কালো চশমাটা। মেয়েরা কিছুক্ষন পর পর মুহিত আর মৃন্ময়ের দিকে তাকাচ্ছে। তবে মৃন্ময়ের থেকে বেশি মুহিতের দিকে নজর ওদের। রূপ অনেকক্ষন ধরেই এসব খেয়াল করছে। আর রাগে ফুসছে। মুহিত ও হেসে হেসে মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে। রূপের যেনো রাগে গাঁ পিওি জ্বলে যাচ্ছে। রূপ মুহিতের এক্টা হাত বগলের তলে পুড়ে দাঁত কিড়মিড় করে আশেপাশের মেয়ে গুলোর দিকে তাকাচ্ছে।

মৃন্ময় মারুর প্রতি খুব কেয়ারিং। মারুর হাতে হাত রেখে সে আস্তে ধীরে মারুকে নিয়ে হাঁটছে। এদিক সেদিক তাকানোর সময় খুঁজে পাচ্ছে না। মারু বেশ খুশি মৃন্ময়ের প্রতি। ঐদিকে রূপ পারছে না মুহিতকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে। মেয়েদের দিকে কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে সে। ক্ষনে ক্ষনে দাঁত বের করে হাসছে সে ও। রূপ কিছুক্ষন পর পর মুহতিকে খোঁচা মারছে। মুহিত রূপের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসি টেনে আবারো মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছে। মুহিতের এহেন কান্ড দেখে রূপের চোখে জল চলে এলো। মুহিতের হাতটা ছেড়ে সে নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলো।

মুহিত আড়চোখে তাকিয়ে রূপের কান্না দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। রূপকে রাগাতে ওর দারুন লাগছে। এর মাঝেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেন চলে এলো। এক এক করে সবাই আস্তে ধীরে ট্রেনে উঠে পড়ল। আগে থেকে দুটো পাশাপাশি সিটের টিকেট কেটে রেখেছে মুহিত। দু জোড়া দম্পতি জোড়ায় জোড়ায় ওদের সিটে বসে পড়ল। রূপ আর মারু বসেছে জানালার পাশে। জানালার পাশে বসে জার্নি করার মজাই আলাদা। চোখ বুলিয়ে বাইরের পটভূমি সব দেখা যায়। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায়।

এর মাঝেই ট্রেন ছেড়ে দিলো। ট্রেনের জানালা দিয়ে মৃদ্যু মন্দ বাতাস বইছে। রূপ এক ধ্যানে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। অবাধ্য খোলা চুলেরা এক প্রকার নাচতে শুরু করেছে। মুহিত রূপের গাঁ ঘেঁষে বসেছে। আর মুগ্ধ নয়নে রূপকে দেখছে। রূপ কিছুক্ষন পর পর মুহিতের থেকে সরে বসছে। গাঁ ঘেঁষে বসতে ওর বিরক্ত লাগছে। এই মুহূর্তে রূপ মুহিতের উপর ভীষন ভাবে রেগে আছে।

মারু ট্রেনের সিটে মাথা এলিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে আছে। মৃন্ময় মারুকে বাহু ডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে। সে নিজে ও ট্রেনের সিটে মাথা এলিয়ে রেখেছে। রাত হওয়ার দরুন ট্রেনে মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সবাই যার যার সিটে মাথা এলিয়ে ঘুমুচ্ছে নয়তো ঘুমানোর চেষ্টা করছে। রূপের চোখে ঘুম নেই। সে সিটে মাথা এলিয়ে এক দৃষ্টিতে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। মুহিত রূপের দিকে ঝুঁকে রূপকে দেখতে ব্যস্ত।

কিছুক্ষন পর মুহিত মৃদ্যু হেসে রূপের বাম হাতটা আঁকড়ে ধরল। রূপ খুব মোচড়ামুচড়ি করে মুহিতের হাত থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। মুহিতের দিকে তাকাতে এমনকি মুহিতের হাত ধরতে ও সে বিলকুল নারাজ। মুহিত বুঝতে পেরেছে রূপ দারুন রেগে গেছে। তাই সে কিছুক্ষন নীরব থেকে আবারো রূপের হাতটা আঁকড়ে ধরল। রূপ এবার রাগী রাগী ফেইস নিয়ে মুহিতের দিকে তাকাতেই মুহিত বাঁকা হেসে রূপের ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। রূপ বড় বড় চোখ করে সম্পূর্ণ বেকুব হয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিত আস্তে আস্তে করে রূপকে ওর সাথে মিশিয়ে নিচ্ছে। রূপের রাগটা আচমকাই শান্ত হয়ে গেলো। রূপ ও চোখ জোড়া বুজে মুহিতের শার্টের কলার আঁকড়ে ধরল। মুহিত চোখ বন্ধ করে রূপের ঠোঁটের স্বাদ নিতে ব্যস্ত।

প্রায় অনেকক্ষন পর মুহিত রূপকে ছাড়ল। দুজনই জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে। রূপের ভেজা ঠোঁট জোড়া মুছে দিয়ে মুহিত রূপকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। রূপ গুটিশুটি মেরে মুহিতের বুকে মিশে আছে। দুজনই চোখ জোড়া বন্ধ করে দুজনকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে আছে। মৃন্ময় আর মারু অলরেডি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।

,
,
,

গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো সাজেক। লোকজনের হাঁক ডাকে রূপ, মারু, মৃন্ময়, মুহিত সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়ল। এক এক করে সবাই ল্যাকেজ নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ল। রূপ আর মারু ঘুমে চোখ খুলতে পারছে না। ঢুলুঢুলু ভঙ্গিতে ওরা হাঁটছে। ঘড়িতে রাত প্রায় অনেকটা বেজে গেছে। রাস্তাঘাট শুনশান। মুহিত রূপের হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটছে। মৃন্ময় মারুর কাঁধে হাত রেখে মারুকে নিয়ে হাঁটছে। অনেক খুঁজাখুঁজি করে দুটো রিকশা নিয়ে ওরা ভালো এক্টা লজে উঠল। পাশাপাশি দুটো রুম বুক করেছে মুহিত আর মৃন্ময়। দুটো রুমেই এডজাস্ট ওয়াশরুম।

রুমে ঢুকেই মারু বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো। ঘুমে ওর চোখ ছিঁড়ে যাচ্ছে। মৃন্ময় ল্যাকেজটা বেডের নিচে রেখে মারুর পাশে বসে মারুর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর বলছে,,,,,,,

—–“মারু…..তোমার শরীর কি খুব খারাপ লাগছে?”

মারু মিনমিন করে বলল,,,,,,,,

—–“না। কিন্তু ক্ষিদে পেয়েছে। খেয়ে এক্টু ঘুমাবো।”

মৃন্ময় বসা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ির ফিতে খুলছে আর বলছে,,,,,,,,

——“এক্টু ওয়েট করো মারু। আমি চেইন্জ্ঞ করে নেই। এরপর মুহিতের সাথে কথা বলে খাবার অর্ডার করছি।”

মারু বড় এক্টা হাই তুলে বলল,,,,,,,

—–“ওকেহ্।”

,,

,,

রূপ রুমে ঢুকেই মুহিতের শার্টের কলার চেঁপে ধরেছে। পাঁচ মিনিট হয়ে যাওয়ার পরে ও সে শার্টের কলার ছাড়ছে না। মুহিত বাঁকা হেসে বুকের উপর দু হাত গুজে রূপের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপ দাঁত গিজগিজ করে মুহিতের চুল টেনে বলল,,,,,,,

—–“এই…. তোর খুব শখ পরকীয়া করার তাই না?”

মুহিত হাসি চেঁপে বলল,,,,,,,

—–“পরকীয়া করতে যাবো কেনো? তোমার পরে যাকে ভালো লাগবে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে করে নিবো। এরপর বৈধভাবে তাকে দেখব।”

রূপ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,,,,,

—–“তবে তুই ঐ সময় আমার ঠোঁটে চুমো খেলি কেনো? এবার থেকে একদম আমার ধারে কাছে ঘেঁষবি না। আমি এখনই ঢাকা ফিরে যাবো। তোর সাথে আর এক মুহূর্ত ও থাকব না।”

কথাগুলো বলেই রূপ মুহিতের শার্টের কলার ছেড়ে চোখের জল মুছে দরজার দিকে পা রাখতে নিলেই মুহিত পিছু ফিরে রূপকে আধ কোলে তুলে নিলো। রূপ চোখের জল ছাড়ছে আর মুহিতের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছে। মুহিত রূপকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেডের কাছাকাছি চলে এলো। রূপকে বেডে শুইয়ে দিয়ে মুহিত রূপের দিকে ঝুঁকে রুপের চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,,,,

—–“তোমার বাইরে আর কোনো নারী আমার জীবনে আসবে না। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। না তুমি কোথাও আমাকে ছেড়ে যাবে। না আমি কোথাও তোমাকে ছেড়ে যাবো। আমাদের সম্পর্কটা আজীবনের। যেখানে দুজন দুজনকে ছেড়ে যাওয়াটা বড্ড বেমানান।”

রূপ কাঁদতে কাঁদতে মুহিতের গলা চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

—–“তবে ঐ সময় মেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়েছিলি কেনো?”

—–“আরে বাপ। তোমাকে রাগানোর জন্য।”

—–“রাগানোর জন্য না ছাই। মেয়ে গুলোকে তোমার ভালো লেগেছিলো তাই তুমি তাকিয়েছ। ওরা তো আমার থেকে ও সুন্দুরী তাই। আমি তো কালো। তাই তোমার নজর এদিক সেদিক যায়।”

মুহূর্তেই মুহিত চোয়াল শক্ত করে রূপের গলায় জোরে এক্টা বসিয়ে দিলো। বাইটের দাগটা লাল হয়ে ফুলে গেছে। রূপ ঠোঁট উল্টে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ে দিলো। মুহিত দাঁত কিড়মিড় করে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,,,

—–“ফালতু কথার শাস্তি। আর যদি কখনো মুখ থেকে এমন কথা বের করো তো কামড়ের গভীরতা আরো দ্বিগুন হবে। নেক্সট টাইম থেকে ভেবে চিন্তে কথা বলবে।”

কথা গুলো বলেই মুহিত রূপের উপর থেকে উঠে সামনের চুল গুলো টেনে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। রূপ উল্টো পাশে ফিরে কামড়ের জায়গাটায় হাত দিয়ে চোখের জল ছাড়ছে। এর মাঝেই মৃন্ময় দরজা ধাক্কাতে লাগল। মুহিত নিজেকে শান্ত করে দরজাটা খুলে দিলো। মৃন্ময় দরজায় দাঁড়িয়েই মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,

—–“ডিনারে কি খাবি? খাবার অর্ডার করব। মারুর ক্ষিদে পেয়েছে।”

—-“দে না। এক্টা দিলেই হলো। তোরা যা খাবি তাই দে।”

—–“রূপ কোথায়? রূপকে জিগ্যেস কর কি খাবে।”

—–“রূপ শুয়ে আছে। তোদের যেটা ভাল্লাগে ঐটাই অর্ডার কর।”

—–“ওকে তবে কাচ্চি অর্ডার করি।”

—–“হুম কর।”

—–“ওকে। ওয়েটার এলে দরজা খুলে দিস। আমি অর্ডার করে দিচ্ছি।”

মৃন্ময় রুমে ঢুকে ল্যান্ডলাইন থেকে কল করে ওয়েটারকে খাবারের অর্ডার করে দিলো। মুহিত রুমের দরজা লাগিয়ে রূপের পাশে বসল। রূপ উল্টোদিকে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। মুহিত রূপের পাশে শুয়ে রূপকে পিছন থেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরল। রূপের ঘাঁড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে মুহিত গলার দিকটায় তাকিয়ে দেখল প্রায় অনেকগুলো দাঁতের দাগ পড়ে গেছে বাইটটায়। জায়গাটা লাল থেকে কালো হয়ে গেছে। অনেকটা জায়গা নিয়ে ফুলে উঠেছে। জায়গাটায় এক্টা ডিপ চুমো খেয়ে মুহিত রূপকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরল। রূপ এক্টু নড়েচড়ে মুহিতকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে আবারো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।

প্রায় পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর ওয়েটার দরজায় কড়া নাঁড়ল। মুহিত রূপকে ছেড়ে রুমের দরজা খুলে খাবার নিয়ে রুমে ঢুকল। রূপকে টেনে হেছড়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে মুহিত ফ্রেশ করিয়ে এরপর রূপকে এক্টু এক্টু করে খাবারটা খাইয়ে দিয়ে রূপকে আবার বেডে শুইয়ে দিলো। চোখে পানি পড়াতে রূপের ঘুমটা যেনো উবে গেলো। কিছুতেই ঘুম আসছে না চোখে। মুহিতের সাথে খুব রাগ করে আছে সে। তাই মুহিতের দিকে ও চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। মুহিত ফ্রেশ হয়ে এক্টু আধটু খেয়ে রুমের লাইট অফ করে রূপের পাশে শুয়ে পড়ল।

রূপ নিজেকে যথেষ্ট জড়সড় করে রেখেছে। মুহিতের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। রূপ যতো ডান পাশে চাঁপছে মুহিত ততো রূপের কাছাকাছি যাচ্ছে। এক পর্যায়ে রূপ সরতে সরতে বেড থেকে পড়ে যেতে নিলেই মুহিত রূপকে হেচকা টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। রূপ কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মুহিতের দিকে তাকালো। মুহিত বাঁকা হেসে রূপের চুল গুলো নাঁড়ছে আর বলছে,,,,,,,,,

——“কি ম্যাম। শেষ পর্যন্ত আমার বুকেই আসতে হলো তো? এতো নাটক করার কি দরকার ছিলো?”

—–“আমি মোটেও নাটক করছি না। আপনি আমাকে ইচ্ছে করে নিজের বুকে জড়িয়েছেন। এক ধরনের হ্যাংলা আপনি। ইচ্ছে করে আমার গাঁয়ে ঘেঁষতে আসেন। শুনুন মিঃ আপনি আমাকে না ধরলে ও আমি নিজেকে সেইফ করতে পারতাম।”

—–“আজ কাল কারো ভালো করতে নেই বুঝলে? এখন যদি আমি তোমাকে না ধরতাম বা আমার বুকে ঠাঁই না দিতাম তবে তো ফ্লোরে পড়ে মাজা টা ভাঙ্গত। তখন আমার কি হতো?”

—–“আর কি হতো? নতুন এক্টা সুন্দুরী বৌ পেতেন।”

—–“এক্টু আগের শাস্তিটায় মন ভরে নি তাই না? আরো লাগবে? দাঁড়াও দিচ্ছি আবার।”

—–“এই না না। আমি কোনো শাস্তি চাই না। আমি ঘুমুতো চাই।”

—–“হানিমুনে ঘুমুতো আসি নি। বাচ্চার প্ল্যানিং করতে এসেছি।”

রূপ দাঁত বের করে হেসে বলল,,,,,,,

—–“সত্যি?”

মুহিত ঘোর লাগা দৃষ্টিতে রূপের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—–“তিন সত্যি।”

—–“তবে আজ থেকে পিল খাওয়া অফ। তাই তো?”

—–“হুম অফ। আমার এক্টা মেয়ে বাবু লাগবে। ঠিক তোমার মতো ফুটফুটে।”

রূপ লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মুহিতকে সম্মতি জানালো। রূপের সম্মতি পেয়ে মুহিত রূপকে নিজের করতে উঠে পড়ে লাগল।

,,

,,

মারুকে খাইয়ে দাইয়ে মৃন্ময় মারুর পাশে শুয়ে পড়ল। মারু মৃন্ময়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আচমকা মুখ ফুলিয়ে বলল,,,,,,

—–“তুমি আমাকে কতো দিন আদর করো না বলো তো? হানিমুনে এসে ও কি তুমি এমন আনরোমান্টিক হয়ে থাকবে?”

মৃন্ময় হু হা করে হেসে বলল,,,,,,,,

—–“তুমি সময় দাও কই? অফিস থেকে ফিরে এসে দেখি তুমি নাক টেনে ঘুমাও। অসুস্থ শরীর বলে ডেকে ডিস্টার্ব করি না। তবে আজ ছাড়ছি না। আগামী তিনদিন ও ছাড়ব না।”

মারু এক গাল হেসে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় মারুর কাছাকাছি এসে মারুকে জড়িয়ে ধরে মারুর ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। দুজনেই আস্তে ধীরে ভালোবাসায় হারিয়ে দিলো।

,,
,,

কেটে দিলো প্রায় তিন দিন। এই তিন দিনে সবাই সারা দিন, রাত ঘুড়েছে, খুব কাছ থেকে মেঘপুন্জ্ঞি দেখেছে। মেঘের রাজ্যকে তিন দিনে বেশ আপন করে নিয়েছে ওরা। সাজেকের মনোরম প্রকৃতি ওদের মনকে সতেজ আর সাবলীল করে দিয়েছে। অতীতের সকল কালো দাগ মুছে দিয়েছে। নানা ধরনের ছবি তুলেছে ওরা মেঘ পুন্জ্ঞির সাথে। মারু আর রূপের ছবি বেশি। এই তিন দিনে হাজার হাজার ছবি তুলা হয়ে গেছে ওদের। মুহিত আর মৃন্ময় ক্লান্ত হয়ে গেছে ছবি তুলতে তুলতে। তবে রূপ আর মারু এক্টু ও ক্লান্ত হয় নি। ওরা লজ থেকে খুব ভোরে বের হতো আর লজে ফিরত রাত ১০টা বা ১১ টা। সারাক্ষন ঘুরাঘুড়ি আর কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কাছ থেকে মেঘপুন্জ্ঞিকে দেখা তো প্রায় অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে ওদের।

মায়া আহমেদ প্রতিদিন টাইম করে তিন বেলা কল করে সবার সাথে কথা বলত। রূপ আর মারুর জন্য হায় হুতাশ করত। সানায়া আর সাকিব ও জেল থেকে ফিরেছে। মোটামুটি মানুষ হয়ে গেছে ওরা। সবার সাথে ভালোভাবে মিলে মিশে থাকছে। রূপ সাজেক যাওয়ার পর থেকে আদনান এবং মিসেস আয়রা ঐ বাড়িতে পা রাখে নি। রূপ ফিরলেই তবে ঐ বাড়ি যাবে। এর মাঝে একদিন মিসেস মারজানা চৌধুরী ও কল করেছে রূপকে। আদ্রিতা এখন পুরোপুরি সুস্থ। নেশা কেটে গেছে। রূপের সাথে প্রায় অনেকক্ষন কথা বলেছে আদ্রিতা। রূপ ও বেশ খুশি খুশি মনে কথা বলেছে।

তিন দিন পর আজ সবার বাড়ি ফেরার দিন। রূপ আর মারুর মেঘের শহরটাকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না। এখানেই আজীবন থেকে যেতে ইচ্ছে করছে। তবে যতোই ইচ্ছে থাকুক ফিরতে তো হবেই। সন্ধ্যা থেকে ওরা গোজ গাজ করছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। রূপ আর মারু ভীষন মন মরা। মুহিত আর মৃন্ময় ওদের দুজনকে শান্তনা দিয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছে।

সন্ধ্যার মধ্যেই ওরা গোজগাজ করে রেল স্টেশান চলে এলো। স্টেশানে গাড়ি থামার সাথে সাথেই ওরা গাড়িতে উঠে পড়ল। প্রায় অনেকক্ষন জার্নির পর ওরা ঢাকা পৌঁছে গেলো। ঢাকা রেল স্টেশান থেকে ওরা রিকশা নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেলো।

বাড়ির ড্রইং রুমে পা রাখার সাথে সাথেই মায়া আহমেদ দৌঁড়ে এসে একসাথে চারজনকে ঝাপটে ধরল। চোখে উনার সুখের কান্না। চোখের জল
ছেড়ে উনি কাঁদছে আর বলছে,,,,,,,

——“খুব মিস করেছি তোদের। বাড়িটা কেমন খাঁ খাঁ লাগছিলো। এবার পূর্ণ হলো বাড়িটা। সাথে আমার মনটা ও।”

মুহিত আর মৃন্ময় মায়া আহমেদের কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,,,

—–“কান্না থামাও আম্মু। এতো দূর থেকে ছুটে এসে তোমার কান্না মুখ দেখতে ভালো লাগছে না।”

মায়া আহমেদ চোখের জল মুছে হাসি মুখে মুহিত আর মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। রূপ আর মারু মায়া আহমেদকে ঝাপটে ধরে আহ্লাদি স্বরে বলল,,,,,

—–“আমরা ও তোমাকে খুব মিস করেছি আম্মু। তোমার হাতের খাবারকে মিস করেছি। তোমার সাথে প্রতিদিন বিকেলে হাঁটতে যাওয়াটা মিস করেছি। তোমার হাসি মুখটা ও মিস করেছি।”

মায়া আহমেদ মারু আর রূপের মাথায় হাত বুলিয়ে মলিন হেসে বলল,,,,,

—–“আমাকে ছেড়ে থাকতে অভ্যেস করে নে তোরা। নয়তো পরে আরো অনেক কষ্ট পাবি।”

কথাটা বলেই মায়া আহমেদ দ্রুত পায়ে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উনার রুমে চলে গেলো। উনার চোখে, মুখে গভীর কান্নার ছাপ স্পষ্ট। মারু আর রূপ কথার আগা মাথা কিছু না বুঝে বেকুব হয়ে মায়া আহমেদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। সাকিব আর সানায়া মাথা নিচু করে মুহিত আর রূপের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলো। মুহিত আর রূপ ও হাসি মুখে ওদের দুজনকে ক্ষমা করে দিলো। সোহেলী আহমেদ হাসি হাসি মুখে রূপ আর মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। দোলা এসে মুহিতের হাত থেকে ল্যাকেজ ছিনিয়ে নিয়ে সমস্ত শপিং ঘেটে ঘেটে দেখছে। মারু আর রূপ ও দোলার পাশে বসে সবার জন্য আনা গিফট গুলো এক এক করে সবার হাতে দিচ্ছে। বাড়ির সবার জন্যই কিছু না কিছু এসেছে ওরা।

রূপ পছন্দ করে মায়া আহমেদের জন্য এক্টা শাড়ি নিয়েছে। শাড়িটা ব্ল্যাক আর রেড রঙ এর মিশ্রনে। দেখতে দারুন। শাড়িটা নিয়ে রূপ মায়া আহমেদের রুমে রেখে এলো। মায়া আহমেদ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছে। তাই রূপ নিশব্দে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

ঘড়িতে রাত বারোটা। সবাই ডিনার করতে বসল। মায়া আহমেদ আজ ও বড় এক্টা প্লেইটে খাবার নিয়ে সানায়া, সাকিব, দোলা, রূপ, মারু, মুহিত আর মৃন্ময়কে খাইয়ে দিলো। এই কয়দিনে সানোয়ার আহমেদের সাথে মায়া আহমেদের সম্পর্ক টা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। উনি এখন মায়া আহমেদকে খুব ইম্পরটেন্স দেয়। প্রতি দিন রাতে মায়া আহমেদকে বুকে জড়িয়ে ঘুমায়।

ডিনার শেষে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। মায়া আহমেদ রুমে ঢুকেই আলমারির উপরে রাখা রূপের দেওয়া শাড়িটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। শাড়িটা প্যাকেট থেকে খুলে উনি দুহাত দিয়ে শাড়িটাকে আঁকড়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো। উনার কান্নার আওয়াজ টেবিলে বসে ল্যাপটপে কাজ করা সানোয়ার আহমেদের কান অব্দি পৌঁছে গেলো। সানোয়ার আহমেদ হম্বিতম্বি হয়ে ব্যালকনিতে ছুটে এলো। মায়া আহমেদকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে উনি শান্ত কন্ঠে বলল,,,,

—–“কি হয়েছে মায়া? কাঁদছ কেনো? শরীর খারাপ লাগছে?”

মায়া আহমেদ তাড়াহুড়ো করে চোখের জল মুছে বলল,,,,,,

—–“কিছু হয় নি। ভালো আছি আমি। ভাই, ভাবীকে মনে পড়ছিলো তো। তাই কাঁদছিলাম।”

সানোয়ার আহমেদ এক্টা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,,,,,,

—–‘যা হয়ে গেছে তা ভুলে যাও মায়া। এসব মনে করে নিজেকে দুখি করো না।”

সানোয়ার আহমেদ কিছুক্ষন নীরব থেকে বলল,,,,,,

—–“ভালোবাসি মায়া।”

মায়া আহমেদ সানোয়ার আহমেদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চোখের জল ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে আর বলছে,,,,,,,

—–“কথাটা বলতে খুব দেরি করে ফেললে সানোয়ার। সময় সংকটে ভুগছি আমি।”

শাড়িটা আলমারিতে গুছিয়ে রেখে মায়া আহমেদ বেডে গা এলিয়ে দিলো। চোখ জোড়া বন্ধ করে উনি ঘুমিয়ে পড়ল। সানোয়ার আহমেদ বিষন্ন মন নিয়ে আবার ল্যাপটপের কাজে মনযোগ দিলো। ইদানিং মায়া আহমেদের হেয়ালী কথা বার্তা উনি ঠিক বুঝতে পারে না।

বাড়ির সবাই এতক্ষনে গভীর ঘুমে ডুব দিলো। মৃন্ময় ও মারুকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। তবে মুহিত রূপকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। শুধু জ্বালাচ্ছে। গত তিনদিন ধরে রূপ মুহিতের রোমান্টিক অত্যাচারের জ্বালায় ঘুমাতে পারে না। চোখ টেনে সে মেলতে ও পারে না। এরপরে ও মুহিত রূপকে ছাড়ছে না। হয়তো প্রতিদিন এভাবেই চলতে থাকবে। যতো দিন না মুহিত বাচ্চার মুখ দেখবে।

#চলবে,,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here