#Lover_Boss
#Season_2
#Part_4
#Mihika_Rahman
রিত্ত এখনো রিশাদের বাহুডোরে আবদ্ধ । রিশাদকে ছাড়ার মতো শক্তিটা কেন যেন পাচ্ছে না রিশাদ । ধীরে ধীরে রিত্তকে ছেড়ে দাঁড়ালো রিশাদ । অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে রিশাদের । নতুন এক অনুভূতি যে অনুভূতির সাথে কখনোই পরিচিত ছিল না রিশাদ । রিশাদের চোখমুখ অসম্ভব লাল যেন এখনি কান্না করে ফেলবে । চেয়ারে বসল রিশাদ ,রিত্তকে বলল সামনে বসতে ।
–রিত্ত,কিছু কথা বলি তোমায় ।
–জ্বী স্যার ।
–কয়েক বছর আগে আমি একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলাম । মেয়েটার বাবা এই অফিসেই জব করত । আমার খুবই স্নেহের আর সম্মানের একজন মানুষ,মাহিন সাহেব। পৃথিবীতে আপন বলতে তার একমাত্র মেয়ে ছিল,মিহি । প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় মিহিকে । নিজের নজরে বন্দী করে ফেলি মিহিকে । রিশাদের সীমানায় আবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম মিহিকে কিন্তু বুঝে উঠতে পারিনি আবদ্ধ করার জায়গায় মিহিকে বন্দি করে ফেলেছি আমি । আমাকে কখনোই ভালোবাসতে পারেনি মিহি । সে ভালোবেসেছিল অন্য কাউকে । আমায় প্রতারণা করে চলে গেল ।
–ভালো না বেসে থাকলে ছেড়ে যাওয়াটা কখনোই প্রতারণা হয় না ।
–লেট মি ফিনিশ । মিহি চলে যাওয়ার পর প্রচণ্ড রাগ হয় । ভেবেছিলাম আমি মিহিকে ভালোবাসি কিন্তু মিহিকে ছাড়া আমি দিব্যি ভালো ছিলাম,মিহিকে খোঁজার চেষ্টা অবধি করিনি। কিন্তু তুমি যখন চলে গেলে এক ঘণ্টার মধ্যে তোমায় খুঁজে বের করি আমি কারণ মিহি ভালো লাগা ছিল কিন্তু তুমি ভালোবাসা ।
“ভালো লাগা আর ভালোবাসার পার্থক্যটা আমি খুব ভালোমতোই বুঝি ।”রিত্তর চোখে চোখ রেখে বলল রিশাদ । রিশাদের চোখে রিত্ত নিগের প্রতি দুর্বলতা দেখতে পারছে কিন্তু রিত্তও যে দুর্বল দিব্যর জন্য । দিব্যকে ছাড়া রিত্ত পারবে না অন্য কারো মায়ায় নিজেকে জড়াতে । রিশাদ এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে রিত্তর কাছাকাছি আসল । রিশাদের সামনাসামনি চেয়ারে বসে ছিল রিত্ত । রিত্তর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে রিশাদ রিত্তর দুহাত নিজের মুঠোয় নিল রিশাদ,”আজ আভার লাইফের সেসব কথা তোমায় বলেছি যা আজ অবধি আমি কাউকে বলিনি । একটু কি ভালোবাসা যাবে আমায়,রিত্ত? আজকে আমার এই যে ছন্নছাড়া রূপটা দেখছো এটাই তোমাকে ছাড়া আমার অবস্থা । ভালোবাসবে আমায়??”রিশাদের অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকাতে অবধি পারছে না রিত্ত, এতটা ভালো কেন বাসে রিশাদ রিত্তকে । আচমকাই উঠে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগল রিশাদ । রিশাদের হাসির কারণ রিত্ত ঠিক বুঝে উঠতে পারল না রিত্ত । একটু আগেই তো ছেলেটার চোখ ছলছল করছিল,এখন এভাবে হাসছে কেন রিশাদ??রিশাদ এখনো হাসছে ,কারণটা এখনো অস্পষ্ট রিত্তর কাছে ।
–এসব বলেই দিব্য তোমায় নিজের প্রতি দুর্বল করেছে,তাই না??আরেহ ,এসব মেয়ে পটানোর জন্য সব ছেলেই বলে ।
–রিশাদ!!!!আপনি এতটা খারাপ হতে পারেন আমি কখনো ভাবতেও পারিনি । দিব্য আর যাই করুক,নূন্যতম সম্মানটা আমায় করে আর এইটুকু সম্মান দিয়ে সারাজীবন কাটানো যায় কিন্তু আপনার মতো একটা নোংরা মানসকিতার মানুষের সাথে একটা সেকেন্ডও থাকা সম্ভব নয় ।
–তো যাও!!চলে যাও ,আর আটকাতে চাইনা তোমায় । তবে যাওয়ার আগে একটা জিনিস দেখে যাও ।
রিশাদ ফোন থেকে একটা ভিডিও ক্লিপ ওপেন করে রিত্তর মুখের সামনে ধরে । রিত্ত ফোনের স্ক্রিণের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে । দিব্য একটা মেয়ের সাথে নোংরামিতে ব্যস্ত । রিত্তর মন চাচ্ছে ফোনটা এখনি ছুঁড়ে মারবে কিন্তু তাতেই কি ফোনে চলমান কার্যকলাপগুলো থেমে যাবে?? ভিডিও ক্লিপটা বন্ধ করে রিত্তর দিকে তাকাল রিশাদ।
–সম্মান করা আর দেখানোর জন্য সম্মান করা বিষয় দুইটার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য । আমার এসব নাটক করার কারণই ছিল আমি যেন দিব্যর সত্যটা তোমার সামনে আনতে পারি । স্বাভাবিক ভাবেও সব বলতে পারতাম কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ দিলাম আর কি । যদি ভিডিওটা মিথ্যে মনে হয়,বাসায় চলো । দিব্যকে আসতে বলেছি,চলে যেও ওর সাথে ।
🖤
–দীপ,ব্যস্ত তুমি??
–তোমার জন্য আমি কখনোই ব্যস্ত না ।
–তাই বুঝি??
–না!!ডাইনি!!যা!!
–আচ্ছা ।
–ঐ কিসের আচ্ছা??কাছে আয় ।
–তুমিই তো যাইতে বললা।
–অ্যাঁহ! যেন সব কথা শোনে আমার । ঢঙ কম কর,আয় কাছে,ফাস্ট।
মিহিকে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় দীপ । জীবনের এই মুহূর্তটা যদি এখনি থেমে যেত,কত সুন্দর হত!!
আচমকা চোখে পানির ছিটা পেয়ে চোখ খোলে মিহি । আশেপাশে তাকিয়ে দেখে লোকগুলো বেহায়া দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে । মিহির চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে । হঠাৎ অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো মিহির,চেনা একটা সুগন্ধ যেন হাওয়ায় ছড়িয়েছে । মৃদু একটা ভালোবাসার ছোঁয়া যেন হাওয়ায় হাওয়ায় মাদকতার মতো নেশা ছড়িয়েছে । চারপাশে নোংরা লোকগুলো দিয়ে ঘেরা,এসবের মাঝেও দীপের শরীরের সেই পরিচিত ঘ্রাণ অনুভব করতে পারছে । একটা ছেলে বেশ নোংরা দৃষ্টিতে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে । ধীরে ধীরে মিহির দিকে নোংরাভাবে এগিয়ে আসতে লাগল ছেলেটা । মিহির গায়ে হাত দিতে যাবে ছেলেটা ঠিক এমন সময় গুলির তীব্র একটা শব্দ হলো । ছেলেটা মেঝেতে পড়ে গেল । আতঙ্কে এমনিতেই মিহির চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে । গুলির শব্দে মিহি যেন কাঁদতেও ভুলে গেল । গুলির শব্দে পিছনে তাকাল সবাই । পরিচিত সেই মুখ,কারো মুখে প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস তো কারো কপালে দুশ্চিন্তার ঘাম ।
“দীপ!!!!”মিহির ডাকে যেন রাগটা আরো মাত্রা ছাড়িয়ে গেল দীপের । গুলির তীব্র আওয়াজ কানে আসলো শুধু মিহির । ঝাপসা চোখে দীপকে আর দেখতে পেল না মিহি । চোখজোড়া কখন বন্ধ হয়ে গেছে তাও আর অনুভব করতে পারল না ।
ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই সামনে দীপকে দেখতে পেল মিহি । দেখেই বোঝা যাচ্ছে মারাত্মক রেগে গেছে । হালকা একটু কাশল মিহি । মিহিকে উঠতে দেখে দীপ এসে বসল মিহির সামনে ।
–তোকে হাজারবার বলছি,পাকনামি কম করবি।
–স্যরি!!
–আমাকে খুন কর,করে বল স্যরি।
–…….
–খবরদার যদি আভার চোখের আড়াল হয়ছিস আর কখনো ।
–হবো না ।
–দেখো মিহি,একটা কথা বলি ।
–বলো ।
–কথা শেষ হইছে আমার??তোরে আস্ক করছি ?? বলতে চাইছি , চুপচাপ শুনবি ।
–আচ্ছা ।
–আবার কথা!!চুপ । দেখো,আমি কখনোই এমন কিছু বলছি যাতে তোমার খারাপ হয় বা তোমার প্রবলেম হয়??
–না।
–তাহলে কেন শোনো না কথা??বাচ্চা তুমি যে বারবার বুঝাইতে হয় ??
–বাচ্চাই তো ।
–অ্যাঁহ!!চাইলে বাচ্চার মা হবে আর উনি নাকি বাচ্চা ।
–এই!!লজ্জা নাই তোমার!!
–নাহ!!নাই।আয় তো,বুকে নিব।
–যাবোনা!!
বলেই মিহি বিছানা থেকে উঠে দৌড় দিতে যাবে এমন সময় অনুভব করল দুই পায়ে অসম্ভব ব্যথা । ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল । দীপ গিয়ে মিহির কোলে শুয়ে পড়ল,আলতো করে দীপের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল মিহি ।
–এখানে চুপ করে বসে থাকো ।
–তুমি কই যাবে??
–তেল গরম করে আনি,পায়ে মালিশ করে দিলে ঠিক হয়ে যাবে ।
–দীপ!
–জ্বী মহারানি!
–এখন ওঠার দরকার নাই,শুয়ে থাকো।
–পরে ব্যথা বাড়বে।
–বাড়বে নাহ!
–একটা কথা শুনিস না আমার!!
–শুনবো নাই তো।
–অ্যাঁহ!!এক থাপ্পড় দিলে সাতদিন বিছানায় পড়ে থাকবে । ঢঙ দেখো সে মেয়ের!!
–দে তো থাপ্পড়!!দেখি কত সাহস তোর!!
–দিব না!!
–কেন??
— আমার ইচ্ছা!!আমি দিব না,বাস!!
দীপের কথা শুনে মিহি হাসতে থাকে আর দীপ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে মিহির দিকে । তবে দীপের চিন্তা এখনো শেষ হয়নি । এখন তো সে বাংলাদেশে,কখন কোথা থেকে বিপদ আসবে তার নিশ্চয়তা নেই তার উপর মিহির যত অকাম । এই মেয়েটা কখন কি করে বসে তারও ঠিক নেই । আপাতত ঐ শয়তানগুলোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে,ভাবতে ভাবতে চোখ বুঁজল দীপ ।
চলবে …….
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । লেখা কমপ্লিট হলো তাই দিতে পারলাম । পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ শনিবারে পাবেন । ধন্যবাদ সবাইকে ।]