#Lover_Boss
#Season_2
#part_7
#Mihika_Rahman
“ছেড়ে দাও আমায়!কি করেছি আমি??কে তোমরা?আমায় এখানে কেন ধরে এনেছিস?”চিৎকার করছে মিহি তবে লোকগুলো মিহির প্রশ্নের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না । একসময় বিরক্ত হয়ে চুপ হয়ে যায় মিহি । মাথাটা ঝিমঝিম করছে । হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা,সামনে এই লোকগুলো,পালানোর কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না মিহি । “দীপ তো এতক্ষণে বাসায় চলে এসেছে!ও কি খুঁজছে আমায়?”দীপের কথা ভাবতে ভাবতেই মিহির মাথায় আসে সে গ্যাসের চুলা অন করে চলে এসেছে । মুহূর্তেই মুখ বিবর্ণ হয়ে যায় তার । সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগতে শুরু করে । লোকগুলো কি যেন ফিসফিস করছে,সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে মিহি ।
–বসের মাথায় যে কি চলছে!মেয়েটাকে আবার ধরে আনালো তাও পাহারার দায়িত্ব আমাদের । এবার যদি দীপ আসে,আমরা শেষ ভাই ।
–ওসব কথা মুখেও আনিস না ,বস যে কাজ দিয়েছে চুপচাপ সেটা কর ।
–নিজের জান প্রিয় রে ভাই । আমি চা আনতে যাচ্ছি । তোরা মেয়েটার উপর নজর রাখ ।
–আচ্ছা যা ।
লোকগুলোর কথায় মিহি বুঝলো এরা দীপ আসার জন্য ভয় পেয়ে আছে । মিহির মনও বলছে দীপ আসবেই । চোখ বন্ধ করতেই দীপের রাগী চেহারাটা ভেসে উঠছে । “ওর যা প্রখর বুদ্ধি!নির্ঘাত এতক্ষণে বুঝে গেছে যে আমাকে তুলে আনা হয়েছে । ছেলেটা এখন বলতেছে হয়তো, গাধা!তোকে কতবার বলছিলাম দরজা খুলবি না!গাধাই একটা,মানুষ আর হইলি না ।”কথাগুলো ভাবতেই মুচকি হেসে ওঠে মিহি ।
🖤
“রিশাদ স্যার,আই এম স্যরি । আমার কাছে আর কোন ওয়ে ছিল না । ওরা দিব্যকে মেরে ফেলতো ।”রিত্ত কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলে উঠে । রিশাদ ভেবেছিল দিব্যর ঐ ফেক ভিডিও ক্লিপ দেখানোর পর হয়তো রিত্ত দিব্যর মায়া ছেড়ে দিবে কিন্তু ঐ লোকটা ফেক ভিডিওর ব্যাপারটাও রিত্তকে জানিয়ে এমন একটা চাল চেলে দিল । মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রিশাদ । দৃষ্টিটা ভাবলেশহীন । দীপও চুপ তবে তার দৃষ্টি বলছে সে যেন পারলে এখনি রিত্তকে মেরে ফেলত । রিশাদ স্বাভাবিক হয়ে বসলো ।
–আচ্ছা রিত্ত, ওরা যে মিহিকে কিডন্যাপ করেছে এ নিয়ে কিছু বলেছে তোমায়?
–না স্যার ।
–শুরু থেকে বলো কি কি হয়েছে ।
–স্যার,আমি আর দিব্য পালিয়েছিলাম,ওটা ঐ লোকের প্ল্যান ছিল যাতে আমাকে এই বাড়িতে আনতে পারে । ও বলেছিল আমাকে আপনার থেকে ছাড়িয়ে দিব্যর সাথে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিবে । আপনি যেদিন আমার বিয়ে ঠিক করলেন,আমি বিয়ে ভেঙে দিই,এটাও ওর প্ল্যান । কাজী অফিসে,ওরা আমাকে থ্রেট করে আপনাকে বিয়ে করতে । দিব্যকে আমি খুব ভালোবাসি স্যার,ওর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবো না , কোনদিন না ।
–রিত্ত স্টপ!কান্না থামাও । না দিব্যর কিছু হবে আর না মিহির ।
কিছুক্ষণের জন্য পরিস্থিতিটা বেশ নীরব হয়ে যায় । রিশাদ বেশ কিছুক্ষণ ধরে কিছু একটা ভাবতে থাকে । অতঃপর আচমকাই উঠে দাঁড়িয়ে দীপের সামনে দাঁড়ায় ।
–মাহিন সাহেবের সাথে তোদের লাস্ট কথা হয় কবে?
–লেটারটা দেওয়ার আগের দিন । তখন সব স্বাভাবিক ছিল । লেটার পাওয়ার পর আমরা আর ওনাকে খুঁজে পাইনি । ওনি আমাকে বলেছিলেন মিহিকে নিয়ে দেশ থেকে চলে যেতে । মিহিরও সেটাই ইচ্ছা ছিল ।
–হঠাৎ দেশে আসলি কেন?
–কয়েকদিন ধরেই মিহি তোর কাছে ক্ষমা চাইতে চাচ্ছিল । ও যে এভাবে হুট করে চলে আসবে বুঝিনি । কিডন্যাপারদের থেকে ওকে ছাড়িয়ে সেফ হাউজে নিয়ে গেছিলাম ।
–থাম,কিডন্যাপার?আগেও মিহি কিডন্যাপ হয়েছিল । ঐ লোকগুলোর সবাইকে মেরে ফেলেছিস নাকি কেউ বেঁচে আছে?
–ওদের সবাই শেষ তবে ওদের ফোন,ওয়ালেট সিফাতের কাছে আছে । আমি আনাচ্ছি,ওয়েট ।
–হুম,কফিটা খেয়ে নে আর শান্ত হ ।
সিফাতকে কল করে কফিতে চুমুক দেয় দীপ । কফির বিন্দুমাত্র স্বাদটুকু পাচ্ছে না সে । শীতের হিমশীতল বাতাস বইছে অথচ মিহির উদ্বিগ্নতায় ঘামছে সে । সবকিছু যেন বিপরীতমুখী হচ্ছে তার কাছে । মিহির এই বাচ্চামোগুলোর জন্য বরাবরই রেগে যায় দীপ তাও শুধরায় না মেয়েটা । কফির মগটা হাতে দীপের কিন্তু কফিটুকু আর খেতে পারল না । সিফাত আসতেই মগটা রেখে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল কিডন্যাপারদের ওয়ালেট আর ফোন । তেমন কোন তথ্য না মেয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল দীপের । সেই একইরকম প্রাইভেট নম্বর থেকে কল যেমনটা মিহি আর রিত্তর ফোনেও এসেছিল । রাগে হাতে থাকা ফোনটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে দীপ । সাথে সাথে সেটা কয়েক টুকরো হয়ে যায় । রিশাদ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না । হঠাৎ মাহিন সাহেবের কথাটা মাথায় আসে তার ।
–দীপ,মাহিন সাহেব এখন কোথায় তোরা জানিস না?
–আমরা তো এটাও জানতাম না যে উনি বেঁচে আছেন কি না ।
–এতদিন পর হঠাৎ মিহির অনুতাপ!মাহিন সাহেবের উধাও হওয়া !দেশে আসতেই মিহির কিডন্যাপ!আর একবার কিডন্যাপ হওয়ার পরও মিহির আবার বোকামি করা!
–তুই কি মিন করছিস রিশাদ?
–তুই যেটা ভাবছিস আমি সেটাই মিন করছি ।
–মিহি ইচ্ছা করে??কিন্তু কেন??ও কেন এসব করতে যাবে?
–সেটা মিহি অবধি পৌঁছালেই জানা যাবে ।
–মিহি অবধি পৌঁছাবো কি করে?
–মাহিন সাহেবের একটা পুরনো বাংলো ছিল না?
–এখনো আছে হয়তো ।
–ওখানেই চল!কিছু না কিছু তো নিশ্চয়ই জানা যাবে ।
🖤
ইট দিয়ে বাঁধানো একটা দোতলা বাড়ি, বহু পুরনো । আশেপাশে গাছ দিয়ে ঢেকে গেছে চারপাশ । একপ্রকার পরিত্যক্ত আর জঙ্গলবাড়ি মনে হচ্ছে বাড়িটাকে,অর্ধশত ভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে এখানে সাপ-বিচ্ছুদের আড্ডা রয়েছে । বেশ সাবধানতার সহিত ধীর পায়ে বাড়িটার দিকে অগ্রসর হয় দীপ আর রিশাদ । আশপাশটা সবসময় নজরে রাখছে । বিপদ যেকোন দিক থেকে যেকোন সময় আসতে পারে তবে একটা বিষয় নিয়ে দীপের বেশ খটকা লাগছে । কয়েক বছরের ব্যবধানে বাড়িটা এণন পরিত্যক্ত কি করে হতে পারে । গাছপালা আগেও ছিল তবে বাড়িটা তো এত পুরনো ছিল না । এখন দেখে মনে হচ্ছে বাড়িটা যেন শত বছর আগের । এসব কেউ ইচ্ছে করে করেনি তো?বাড়িটাকে পরিত্যক্ত বানিয়ে কোন ষড়যন্ত্র চলছে না তো ভিতরে?প্রশ্নগুলো খুব ভাবাচ্ছে দীপকে । রিশাদ একমনে সামনে এগোচ্ছে । আচমকা কারো পায়ের শব্দ পেয়ে থেমে গেল দীপ আর রিশাদ । পায়ের শব্দ গভীর হচ্ছে কিন্তু এই ঘন গাছপালার মাঝে কাউকে ঠিকমতো দেখাও যাচ্ছে না । হঠাৎ দীপের চোখে পড়ল দূরে একটা লোক ফোনে কথা বলতে বলতে চা খাচ্ছে আর এদিকেই আসছে । ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল দীপ আর রিশাদ । “এই গভীর জঙ্গলে এই লোক কি করছে?”রিশাদকে চুপ করিয়ে সামনে দেখতে ইশারা করল দীপ । কথা শেষ করে লোকটা বাড়ির দিকে যেতে লাগলো । রিশাদ আর দীপও তার পিছু পিছু যেতে লাগল ।
🖤
“রিশাদ আর দীপের কোন আপডেট নেই কেন?কোথায় ডুব দিল ওরা?যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের আপডেট আমার চাই!”কথাগুলো বলতে বলতে লোকটা পিছনে ঘুরল । রিশাদ আর দীপ তখন জানালার এককোণে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে । লোকটার চেহারা দেখেই আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে উপনীত হলো তারা ।
চলবে……
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।]