Lover boss part 6

#Lover_Boss
#Season_2
#part_6
#Mihika_Rahman

গাড়ির কাঁচে হেলান দিয়ে আছে রিত্ত । নোনা জল গাল গড়িয়ে পড়ছে তবে তা রিশাদের চোখে ধরা দিচ্ছে না । কয়েক প্রহর আগে কি হয়ে গেল তা আঁচ করতেও যেন কান্না আসছে রিত্তর । কি করে পারল সে কবুল বলতে?চাইলেও কখনোই এ বিয়ে মানতে পারবে না রিত্ত কিন্তু দিব্যর জন্য এমনটা করতে সে বাধ্য । বিয়েটা না করলে লোকগুলো দিব্যকে মেরে ফেলবে অথচ ওই লোকটাই একসময় বলেছিল দিব্য আর তার সেফটি তাদের হাতে । নিজ স্বার্থে মানুষ কত রঙ যে ধারণ করে!এসব কথা ভাবতেই চোখ ছলছল করতে লাগল রিত্তর । রিশাদ গাড়ি থামালো ।

–রিত্ত!! আমি আর যাই করি তোমার সাথে এমন কিছু করব না যা তোমার খারাপ লাগবে ।

–এই বিয়েটা আমার খারাপ লাগেনি তা কে বলল আপনাকে?

–বিয়ে না করে নিজের কাছে রাখতে চাইনি । এখন না চাইলেও রিশাদের নজরে বন্দি তুমি ।

রিশাদের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল রিত্ত । খারাপ লাগছেনা তার , একটুও না বরঞ্চ মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই থেমে গেলে বুঝি ভালো হতো । হঠাৎ এমন অনুভূতি হওয়ার কারণটা ঠিক ধরতে পারেনা রিত্ত । নতুন করে ভাবতে নিবে এমন সময় রিশাদ তাড়া দেয় বাড়ির ভিতরে ঢোকার জন্য ।

বেশ শীত পড়েছে বাইরে । কুয়াশায় রাস্তাটা অবধি দেখতে পাওয়া মুশকিল । জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আনমনে অনেক কিছুই ভাবতে ব্যস্ত রিত্ত । খুঁজতে ব্যস্ত সে জীবনের হারিয়ে যাওয়া ছন্দ ।

–কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ।

–আমি কফি খাইনা ।

–আগে বলতে পারতে,চা করে আনতাম ।

–আমার পছন্দ-অপছন্দের এতটা মূল্য কি আদৌ আছে আপনার কাছে?

–দিব্য বাদে তোমার সব পছন্দের মূল্য আছে আমার কাছে ।

–দিব্য আমার পছন্দ না মি.চৌধুরী, সে আমার ভালোবাসা আর পছন্দ-ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্যটা কিন্তু বিস্তর ।

–রাত অনেক হয়েছে,তুমি ঘুমিয়ে পড়ো । আমি পাশের রুমে আছি । কোন দরকার লাগলে ডাক দিয়ো ।

–প্রয়োজন পড়বেনা ।

রিশাদ চলে যেতেই দরজা লাগিয়ে দিল রিত্ত । ফোনে টুং করে একটা আওয়াজ হলো । ফোন হাতে নিল রিত্ত । দিব্যর মেসেজ,

“Tomay kokhono vul bujhbona ami…sudhu blbo valobashi…waiting for you..my love…❤”

দিব্যর মেসেজ দেখে কিছুটা স্বস্তি পায় রিত্ত । এতটা ভালো কেও কিভাবে বাসতে পারে কাওকে? দিব্যর ছবিটাতে চুমু খেয়ে ফোনটা বুকে জড়িয়ে নেয় রিত্ত ।

🖤

–দীপ!!ও দীপ!!শোনো না!!

–বলেন মহারানি ।

–আমি আইসক্রিম খাবো ।

–দরজা লক করো । আমি নিয়ে আসছি । আর শোনো আমার কাছে স্পেয়ার কি আছে । তাই নক করবো না । কেউ নক করলে খবরদার খুলবা না ।

–ওকে ।

দীপ আইসক্রিম নিতে চলে গেল । মিহি কি করবে কি করবে ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরের দিকে গেল । নুডুলস ছাড়া তেমন কিছু দেখল না রান্নাঘরে । অবশ্য অন্যকিছু থাকলেও লাভ হতো না । নুডুলস ছাড়া আর কিছু তো পারেও না মিহি । আবশেষে ভাবলো নুডুলসই রান্না করবে । গ্যাস অন করে লাইটার হাতে নিতেই ফোন বেজে উঠলো মিহির । নতুন নম্বরটা তো কারো কাছে নেই,তবে কে কল করল?লাইটার রেখে ফোন হাতে নিতেই মিহি দেখল অপরিচিত নম্বর । ফোনটা কানে ধরে হ্যালো বলল মিহি কিন্তু অপরপাশ থেকে কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না । বেশ কয়েকবার হ্যালো বলার পরও কোন আওয়াজ শোনা গেল না । বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিল মিহি । রান্নাঘরের দিকে এগোতে যাবে এমন সময় দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলতে গেল মিহি । দরজা খুলতেই মুখে কেউ একটা রুভাল চেপে ধরল মিহির । তৎক্ষণাৎ তার মনে পড়ল দীপ বলেছিল কেউ নক না করলে দরজা না খুলতে ।

আইসক্রিম আর রাতের খাবার নিয়ে বাড়ির দিকে আসছিল দীপ । আচমকা বেশ জোরে সিলিন্ডার ব্লাস্ট হওয়ার একটা শব্দ পেল । বাড়ির দিকে দৌড়ে আসতেই দেখল সারাবাড়িতে আগুন লেগে গেছে । হাতের সবকিছু ফেলে দ্রুত ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করল দীপ । ব্যর্থ চেষ্টা, আগুনের তীব্রতা এতটাই যে দরজার কাছে অবধি যাওয়া যাচ্ছে না । মুহূর্তেই চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল দীপ তবে নিজেকে সামলে নিল । “সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে এতবড় আগুন লেগেছে মানে গ্যাস সারাবাড়িতে ছড়িয়ে ছিল । তাহলে মিহির বুঝতে পারার কথা । বাড়ির দরজা আধখোলা অথচ গাধাটাকে বলেছিলাম দরজা না খুলতে!!গাধাই একটা!!আবার কোথায় নিয়ে গেল!!রিশাদ!!ঐ করেছে এসব!ভেবেছিলাম তোর মুখোমুখি কোনদিন হব না কিন্তু তুই বাধ্য করলি । গেট রেডি রিশাদ আফসান চৌধুরী !! তোর সাথে আবার দেখা হচ্ছে ।”রাগে চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে দীপের ।

🖤

“রিশাদ আফসান চৌধুরী!!”রিশাদের নাম ধরে কেউ চিৎকার করছে বাইরে । চিৎকার শুনে রিত্তর ঘুম ভেঙে যায় । রিশাদ কি শুনতে পাচ্ছে না এসব?পেলে তো এতক্ষণে চেঁচামেচি বন্ধ হওয়ার কথা । চোখেমুখে পানি দিয়ে নিচে নামে রিত্ত । হলরুমে একটা লোক দাঁড়িয়ে চিৎকার করে যাচ্ছে। রিত্ত নামার পরপরই রিশাদ নিচে নামলো । চোখ লাল হয়ে আছে রিশাদের,সম্ভবত সারারাত ঘুমায়নি । মুখ থেকে কেমন একটা বিশ্রি গন্ধ বের হচ্ছে । রিশাদ মদ খেয়েছে!!বিষয়গুলো প্যাঁচ লেগে যাচ্ছে রিত্তর মাথায় ।

–দীপ..তুই এখানে কি করছিস?

–মিহি কোথায়?

–দেখ দীপ!মিহি চলে যাওয়ার পর ওর সাথে আমি না দেখা করেছি না কথা বলেছি । আমি জানিনা মিহি কোথায় ।

–ওহ রিয়েলি??দেশে পা রাখতে না রাখতেই তোর লোক মিহিকে কিডন্যাপ করেছিল,এসব কি বুঝি না আমি??

–আমার লোক??দেখ দীপ,মিহির সাথে আমার কোন কানেকশন নাই!আর সবচেয়ে বড় কথা আমি জানি মিহি তোকে ভালোবাসে তবে আমাকে ধোকা না দিয়ে গেলেও পারতো । চাইলেই তোরা পারতি আমায় সব বলতে । আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলি ।

–তোকে জানাতাম??তুই মেরে ফেলতি মিহিকে যেমন ভাবে মিহির বাবাকে থ্রেট দিয়েছিলি ।

–থ্রেট??মাহিন সাহেবকে আমি কোন থ্রেট দেইনি । ইভেন উনি তো তখন ফরেনে ছিলেন ।

–মিথ্যা!!অন্তত আমার সামনে এসব নাটক করতে আসবি না ।

–আমি কেন নাটক করতে যাবো?

–তাহলে??আমাদের মধ্যে এসব মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং কে ক্রিয়েট করল?? আর মিহিকে কিডন্যাপ করল?

–তুই শান্ত হ । আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি । এক মিনিট!

–যা কিন্তু এসব যদি তোর নাটক হয়,পস্তাবি তুই ।

দীপের কথা শুনে দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে ভেতরে গেল রিশাদ । ফ্রেশ হয়ে রিত্তকে বলল দুইকাপ কফি আর নিজের জন্য চা আনতে । দীপ এখনো রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিশাদের দিকে ।

–লিসেন দীপ!আমি রিত্তকে ভালোবাসি । মিহির প্রতি যা ছিল তা নিতান্তই আবেগ তবে ও আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল যেমনটা তুই । আমি সত্যিই জানতাম না তোরা দেশে ।

–আসছি কয়েকদিন আগে । আমি বাইরে ছিলাম । এসে দেখি বাড়িতে আগুন,এত এক্সপ্লেইন করার টাইম নেই । মিহিকে কেউ কিডন্যাপ করেছে । ওকে বাঁচাতে হবে ।

–মিহির ফোন ট্র্যাক করছিলি?

–লাস্ট লোকেশন বাড়িতেই ছিল আর একটা আননোন নম্বর থেকে কল এসেছিল ।

–সেই আননোন নম্বর ট্রেস করছিস?

–প্রাইভেট নম্বর, সম্ভবত সিম ডিজেবল করে দিয়েছে । কোন তথ্য পাইনি ঐ নম্বর থেকে ।

–সিফাত কোথায়?

–ওকে দায়িত্ব দিয়েছি মিহিকে খোঁজার ।

–আচ্ছা । একটা কথা,মাহিন সাহেব কি নিজে বলেছিল যে আমি তাকে থ্রেট দিয়েছি?

–নাহ!একটা লেটার পাঠিয়েছিলেন যে তুই ওনাকে মারতে চাস । একটা ছবি ছিল তার সাথে যেখানে তুই ওনার দিকে রিভলবার ধরেছিলি ।

–আমি?রিভলবার?ওয়েট!!রিভলবার ধরেছিলাম কিন্তু সেটা মাহিন সাহেবের দিকে না । আমি টার্গেট প্র্যাকটিস করছিলাম । ওনি সামনে চলে আসেন । এই মোমেন্টটাকেই কেউ ক্লিক করেছে আমায় ভুল প্রমাণ করার জন্য ।

–তুই সত্যি বলছিস?

–বিশ্বাস করতে পারিস । বেইমান কখনোই ছিলাম না ।

রিত্তর আসার শব্দে চুপ হয়ে যায় রিশাদ । কফি রেখে রিত্ত রুমে যেতে নিতেই ফোনে মেসেজ আসে । মেসেজ দেখামাত্র রিত্তর মুখ বিবর্ণ হয়ে যায় । রিত্তর ভাবভঙ্গি দেখে রিশাদও ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে ।

চলবে….
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here