“-প্লিজ আমার একটা রুমের খুব দরকার। আজকের রাতটা কোনোরকমে কাটাতে পারলেই হলো। আমি কাল সকালেই চলে যাব। শুধু রাতটা কাটানো হয়েছে সমস্যা। ছোট হোক, নোংরা হোক যেকোন একটা রুম হলেই হবে। আপনি যদি বেশি টাকা চান আমি তা দিতেও রাজি আছি। ডাবল টাকা নিয়ে হলেও একটা সিঙ্গেল রুম দিন না প্লিজ। ‘
“-ম্যাম আপনাকে তো বলেছি এখানে কোনো রুম খালি নেই। সব রুম বুকিং দেয়া। আপনি ডাবল টাকা দিলেও আমি রুম দিতে পারব না ম্যাম।’
“-আপনি চাইলে কি একটা রুমের ব্যবস্থা করতে পারেন না? ‘
“-কি করে পারব ম্যাম বলুন? আগে থেকে যারা রুম বুক করে রেখেছে তাদের রুম তো আমি আপনাকে দিতে পারবো না। আমাদের তো রুলস ফলো করে চলতে হয়।’
আতিয়া বুঝতে পারলো এই লোকটার সাথে কথা বলে তার কোনো লাভ হবে না। রাত বাড়ছে। তাকে রাতে থাকার জন্য এক্ষুনি কোনো ব্যবস্থা করতে হবে। রাত আরো বেড়ে গেলে সে কোথায় যাবে? এক এক করে তিনটা হোটেলে চেক করে এসেছে। কোথাও একটা রুম খালি পায়নি। এই হোটেলটাই ছিল তার শেষ আশা। কিন্তু এখান থেকেও তাকে রুম না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। অচেনা একটা শহরে কোথায় যাবে সে? কার কাছে গিয়ে থাকার জায়গা চাইবে? একা মেয়ে মানুষ সে তো আর রাস্তায় রাত কাটাতে পারবে না। না জানি এখানে রাতের বেলা কত বাজে মানুষ রাস্তায় ঘুরাঘুরি করে। আতিয়া বিরবির করে বলতে লাগলো,
“-শিট আতিয়া! শিট! আজ কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম? ‘
আতিয়া একটু ভাবলো,
“-ঘুম থেকে উঠে বাবাকেই তো সবার আগে দেখেছিলাম। ধ্যাত! এই সময়ে আমি কী সব উল্টাপাল্টা কথা ভাবছি। আমাকে তো রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।’
আতিয়া আবার লোকটার দিকে ফিরে বলল,
“-কোনোভাবেই কি আপনার একটা রুম ম্যানেজ করতে পারবেন না? একচুলি আমি এই শহরে একদম নতুন এসেছি। কাউকে চিনি না। আই ডোন্ট হেভ এনি ফ্রেন্ডস অর রিলেটিভস হেয়ার। আমি একটা মেয়ে হয়ে এতো রাতে কোথায় যাব। আপনি নিশ্চয়ই আমার প্রবলেমটা বুঝতে পারছেন। খুব সমস্যায় না পড়লে আমি আপনাকে এতো রিকোয়েস্ট করতাম না। ‘
“-সরি ম্যাম। আমার হাতে কিছু করার নেই। আমি আপনার প্রবলেমটা বুঝেছি। আমার হাতে যদি কিছু করার থাকতো তাহলে আমি ঠিকই করতাম। ‘
আতিয়া এবার হার মেনে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“-হুম। বুঝেছি আপনিও আমার মতই অসহায়। আচ্ছা তাহলে আসি। বাই। ‘
আতিয়া যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াল। সে সামনে পা বাড়াচ্ছে আর ভাবছে এখন কোথায় যাবে? আতিয়া মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছে,
“-আতিয়া ইডিয়ট এখন কী করবে তুমি? কোথায় যাবে এবার? কার কাছে থাকার জায়গা চাইবে? প্রতিবার পালানোর আগে সবকিছু প্ল্যান করে নাও। এবার প্ল্যানিং ছাড়া এমন একটা কাজ কেন করতে গেলে? কেন আজই বাড়ি ছেড়ে পালালে?’
আতিয়া দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। প্রথমে মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে এখন আবার নিজেই সান্ত্বনা দিচ্ছে।
“-আতিয়া জান তুমিই বা কী করতে? তোমার হাতেও তো কিছু করার ছিল না। বাবা হঠাৎ করে এমন একটা ডিসিশন না নিলে আমিও হঠাৎ করে এই ডিসিশন নিতাম না। এই বার বাড়ি ছেড়ে পালানোর আমার কোনো প্ল্যানই ছিল না। আমি তো কথা দিয়েছিলাম আর কোনোদিন পালাব না। কিন্তু বাবা আমাকে আবার পালাতে বাধ্য করলো। ‘
আতিয়া কিছু দূর এগিয়ে এসেছে। পেছন থেকে তাকে রিসেপশনিস্ট লোকটা ডাকছে। কিন্তু সে শুনতে পেল না। লোকটা পেছন থেকে আতিয়াকে ডাকতে ডাকতে ওর কাছে এগিয়ে এলো।
“-ম্যাম দাঁড়ান।’
আতিয়া ফিরে তাকালো। সে ভেবেছে লোকটা হয়তো রুম ম্যানেজ করে ফেলেছে। তাই তাকে ডাকছে। আতিয়া বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে বলল,
“-রুমের ব্যবস্থা হয়েছে? ‘
“- না ম্যাম।’
আতিয়ার রাগ উঠে গেল। এই ব্যাটা চায়টা কী হ্যাঁ? রুম ম্যানেজ হয়নি তাহলে পেছন থেকে তাকে ডাকছে কেন? ফাজলামি পেয়েছে নাকি? নাকি এই ব্যাটার অন্য কোনো মতলব আছে। তাকে এখানে কথায় ভুলিয়ে রেখে লেট করাবে। তারপর বেশি রাত হয়ে গেলে…
“-না, না। এসব কী ভাবছি আমি? ‘ আতিয়া তার ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল,
“-রুমের ব্যবস্থা হয়নি তাহলে পেছন থেকে আমাকে ডাকছেন কেন হুম? এমনিতে এতো রাত হয়ে গেছে। এখন আবার আপনি লেট করাচ্ছেন। রাত গভীর হলে আমি কোথায় যাব হ্যাঁ? এখানে তো রুম দিতে পারবেন না। আপনার বাসায় নিয়ে আমাকে রাখবেন নাকি? শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে কেন দেরি করাচ্ছেন? ‘
“-ম্যাম আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি আপনার হেল্প করার জন্যই আপনাকে ডেকেছি। আসলে এতক্ষণ মনে ছিল না। এখনই মনে পড়লো। আমাদের এখানে একটা রুম খালি ছিল। আজ সন্ধ্যায় ওটাতে একজন স্যার উঠেছেন। উনাকে দেখে তো মনে হচ্ছিল উনি একাই আছেন। রুমটা উনি আগে থেকেও বুক করেননি। হঠাৎ এসে উঠেছেন। ‘
“-আর ইউ কিডিং মি?দেখুন মিস্টার এই মূহুর্তে আমি একদমই মজা নেওয়ার মুডে নেই। আমার গা জ্বালা করছে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আপনি ঐ লোকটার কথা বলার জন্য আমাকে আটকেছেন? আমি যাকে চিনি না জানি না তার কথা বাড়িয়ে টাড়িয়ে আমার কাছে বলে একাকার করে ফেলছেন। ঐ লোকটা একা উঠুক বা একশজন নিয়ে উঠুক তাতে আমার কি? ‘
“-আরে ম্যাম আপনি বুঝতে চাইছেন না। আপনি চাইলে উনার সাথে রুম শেয়ার করতে পারেন। না মানে যদি উনি আপনার সাথে রুম শেয়ার করতে রাজি হন। আপনি আপনার সমস্যার কথা উনাকে বললে উনি হয়তো রাজি হয়ে যেতে পারেন। আপনার সমস্যার কথা ভেবেই বললাম আরকি। একটা রাতেরই তো কথা। আপনি… ‘
আতিয়া উনাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে উঠলো,
“- ভাই! আপনি এই কথা এতক্ষণ কেন বলেননি? আপনি ঐ লোকটার কথা আমাকে আগে জানালে এতক্ষণে আমি আরাম করে বেডে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম। কোনো ছেলেকে রাজি করাতে আমার জাস্ট দুমিনিট সময় লাগবে। ছেলে পটানো আমার বাঁ হাতের কাজ। আপনি তো জানেন না, আমি চোখ টিপ দিলে আমার পেছনে ছেলেদের লাইন লেগে যায়। এখন বলুন তো ঐ লোকটা কোথায়? কত নাম্বার রুমে আছেন উনি? ‘
“-উনি ২০৭ নাম্বার রুমে উঠেছেন। ডাবল রুম। কিন্তু ম্যাম আপনি এখন গেলে উনাকে পাবেন না।’
“-পাবো না? ‘
“-না। উনি সন্ধ্যায় এসে রুমের চাবি নিয়ে একটু পরেই বেরিয়ে গেলেন। এখনো ফিরেন নি।’
“-এতো রাতে লোকটা বাইরে কী করছে? উফ অসহ্য লাগছে। এখন আমি উনার আশায় বসে থাকবো। পরে যদি উনি আমার সাথে রুম শেয়ার করতে রাজি না হয়। তখন আমি কোথায় যাব? আস্তে আস্তে রাত তো বাড়ছে। ইয়া আল্লাহ তুমি আমাকে এ কোন বিপদে ফেললে?’
আতিয়া বিরবির করে কথাগুলো বলল। লোকটা আবার জিজ্ঞেস করলেন,
“-ম্যাম কিছু বলেছেন? ‘
“-না ভাই। আপনাকে কিছু বলিনি। আই ওয়াজ টকিং টু মাই সেল্ফ।
“-আপনি কি এখন স্যারের জন্য ওয়েট করবেন? ‘
“-হুম। তাছাড়া আর উপায় কি? দেখি আল্লাহ ভরসা। আমার ভাগ্য যদি ভালো থাকে তাহলে উনি নিশ্চয়ই রাজি হবেন।’
#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি
সূচনা পর্ব
#Jerin_akter_nipa
চলবে…
প্রথম পর্ব তাই ছোট করে দিলাম। আপনাদের রেসপন্স পেলে দ্বিতীয় পর্ব খুব শীঘ্রই আসবে 🌼