#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__০৯
বেলকনিতে বসে আছি আমি ৷ কিছু কিছু সময় একা একা থেকে মনকে ফ্রেশ করতে হয় ৷ আজ মনটা ভার হয়ে আছে প্রচুর ৷ কার জন্য, কিসের জন্য বুঝতে পারছি না ৷ একদৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি ৷ হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি সায়ান দাঁড়িয়ে আছে ৷ ওকে দেখে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : কি বলবে?
সায়ান : সরি?
কাশফিয়া : কিসের জন্য?
সায়ান : ওই সময় আরিহানের সাথে তোকে দেখে মাথা ঠিক ছিল না ৷ তাই ওইরকম বিহেভ করেছি ৷ সরি কাশফি ৷
কাশফিয়া : ইটস ওকে ৷
সায়ান : রাগ করে আছিস না?
কাশফিয়া : রাগ কেন করবো?
সায়ান : তোর বিহেভেই বোঝা যাচ্ছে ৷
এতক্ষন আমার দৃষ্টি ছিল বাহিরের দিকে ৷ ওর এই কথায় সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : ভালো লাগছে না সায়ান ৷ একটু একা থাকতে দাও প্লিজ ৷ মুড ভালো নেই ৷ ইচ্ছা করছে না কথা বলতে ৷
সায়ান : কি হয়েছে তোর?
কাশফিয়া : কিছু না চলে য…
আর কিছু বলার আগেই হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো ৷ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আননোউন নাম্বার ৷ আননোউন নাম্বার থেকে কে কল করে সেটা আমার জানা আছে ৷ কিন্তু এখন কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছা করছে না ৷ তার ওপর সায়ান তো আছেই ৷ কলটা কেটে দিলাম ৷ সায়ান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,
সায়ান : কার ফোন?
কাশফিয়া : আননোউন নাম্বার ৷
তখন আবারও বেজে উঠলো ৷ সেটা দেখে সায়ান ওর হাত ফোনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,,,,
সায়ান : ফোনটা দে…দেখি কে?
কাশফিয়া : তোমার দেখতে হবে না ৷ তুমি যাও এখান থেকে ৷
সায়ান : কাশফি….
কাশফিয়া : সায়ান প্লিজ যাও ৷
আর কিছু না বলে চলে গেলো ৷ আমি দরজাটা লাগিয়ে এসে বিছানায় বসলাম ৷ ফোন দিয়েই যাচ্ছেন আরিহান ৷ এতবার ফোন দেয়ার কি হলো? ফোন কেটে মোবাইল অফ করতে যাবো তখনি একটা ম্যাসেজ আসলো ৷ ম্যাসেজটা এরকম যে,,,,”ফোন না তুললে আমি এখনি তোমার বাসায় চলে যাবো ৷ আর তোমার বাড়ির সবার সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে আসবো তোমাকে ৷ সেটা কি চাও? না চাইলে রিসিভ করো ৷”
এরপর আরেকটা কল আসলে রিসিভ করলাম ৷ সঙ্গে সঙ্গে উনি বললেন,,,,,
আরিহান : হয়েছেটা কি কল রিসিভ করছো না কেন? হ্যাঁ?
কাশফিয়া : এমনি ৷
আরিহান : এভাবে কথা বলছো কেন?
কাশফিয়া : এমনি ৷
আরিহান : ভার্সিটি আসো নি কেন?
কাশফিয়া : এমনি ৷
আরিহান : পাগল হয়ে গেছো? এমনি এমনি করছো কেন?
কাশফিয়া : এমনি ৷
আরিহান : কাশফিয়া রাগাবা না আমাকে ৷ কি হয়েছে তোমার??
কাশফিয়া : কিছু না ৷
আরিহান : তাহলে এরকম করছো কেন?
কাশফিয়া : এমনি ৷
আরিহান : ওহ গড ৷ তোমার সাথে কথা আছে আমার ৷ বাহিরে এসো ৷
কাশফিয়া : ভালো লাগছে না ৷ পরে কথা বলবো ৷
আরিহান : কোনো বাহানা না ৷ ম্যাসেজ করে দিচ্ছি ৷ সেই জায়গায় চলে আসো ৷
কাশফিয়া : বললাম না ভালো লাগছে না ৷ ভার্সিটি যাই নি ৷ আর এখন আপনার সাথে ঘুরতে যাবো?
আরিহান : কি হয়েছে তোমার?
কাশফিয়া : মুড অফ ৷
আরিহান : কিসের জন্য?
কাশফিয়া : জানিনা ৷
আরিহান : আচ্ছা আজ আসতে হবে না রেস্ট করো ৷ তুমি যে সায়ানকে বিয়ে করবে এটা তোমার পরিবারকে বলেছো সেটা কিন্তু আমি জানি ৷ আর বিয়ে কবে সেটার খবরও পেয়ে যাবো ৷ তাই বলছি সময় থাকতে ভেঙ্গে দাও ৷
কাশফিয়া : সম্ভব নয় ৷ আর আপনি কোনো ঝামেলা করবেন না প্লিজ ৷ আমি বিয়েটা ভাঙ্গতে পারবো না ৷
বলেই কল কেটে দিলাম ৷ কিন্তু অারিহান জানলো কি করে এটা??
____________
দেখতে দেখতে আরো তিনটা দিন চলে গেলো ৷ আজ বিকালে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে ৷ আর কাল বিয়ের ৷ যেহেতু ঘরোয়াভাবে তাই বাহিরের কেউ নেই ৷ শুধু আমার, সায়ানের আর আমার খালাতো বোন মালিহার পরিবার রয়েছে ৷ বাহিরের বলতে শুধু নিধিই আছে আর কেউ নেই ৷ এই কয়েকদিনে মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে ৷ বিয়ে বাড়ি বলে কথা একটু তো আনন্দ হবেই ৷ ওতো ঝাকঝমক না হলেও অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ৷
গত কয়েকদিন আরিহানের সঙ্গে কথা হয়েছে ঠিকই ৷ কিন্তু এতোটাও নয় ৷ সব বিষয় এড়িয়ে চলেছি আমি ৷ আর এই কয় দিন আমাদের কারোরি সামনাসামনি দেখা হয় নি ৷ কিন্তু মনে একটা প্রশ্নই আসে যে… “আরিহান কি জানেন কাল আমার বিয়ে? জানলেই বা কি করবেন? আর না জানলেও পরে জানলে কি করবেন??”
আমাকে সাজিয়ে নিয়ে স্টেজে বসানো হলো ৷ সবার গায়ে কমলা হলুদ মিক্সড ড্রেস ৷ আমার পোশাক কাচা হলুদ রঙের ৷ সায়ান এখানে নেই ৷ ওর আজ ফুপাইয়ের সাথে একটা কাজ পরে গেছে ৷ তাই আগেই হলুদ লাগিয়ে চলে গেছে ৷ একে একে সবাই হলুদ লাগালো ৷ হলুদ লাগানো শেষে নাচ,গান আর গল্পের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করা হলো ৷
উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ছাদে এলাম ৷ ছাদে এসে দেখি নিধি কার সাথে যেনো কথা বলছে ৷ ওর কাছ গিয়ে ওকে ডাক দিলে ও যেন চমকে উঠলো ৷ কিন্তু তার কারণ আমার জানা নেই ৷
কাশফিয়া : কি হয়েছে? এখানে কি করছিস?
নিধি : ককই ককিছু না ৷ তুই এখানে কেন? চল ৷
কাশফিয়া : কার সাথে কথা বলছিলি? (ভ্রু কুচকে)
নিধি : কারো সাথে তো নাহ ৷
কাশফিয়া : মিথ্যা বলছিস কেন? সত্যি করে বল ৷ কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে? কি চলছে তোর মাথায় ৷
নিধি : নাথিং জানু ৷ তোর বিয়ে তো তুই বিয়েতে তোর মনযোগ ফোকাস কর ৷ এসব ছাড় তো ৷
কাশফিয়া : সব ঠিক আছে তো?
নিধি : হুম ৷ তো জিজুর সাথে কথা হয়েছে?
কাশফিয়া : জিজু? কার কথা বলছিস?
নিধি : আব না মানে…আরিহান জি…না ভাইয়ার কথা বলছিলাম ৷
কাশফিয়া : না ৷ কিন্তু সেটা জেনে তুই কি করবি?
নিধি : আরে চলতো তোকে এসব ভাবতে হবে না ৷
অদ্ভুত!!!
পরেরদিন….
পার্লারের থেকে মেয়েরা এসে এই মাত্র সাজিয়ে দিয়ে গেলো আমাকে ৷ বাসার সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ৷ মনটা খালি খচখচ করছে ৷ আজ কি হবে? জানা নেই আমার ৷ সায়ানের সাথে বিয়ে হলে আমার জীবন থেকে অবিবাহিত ট্যাগটা মুছে যাবে ৷ এই বাড়ির পর হয়ে যাবো আমি ৷ কিন্তু আরিহান??
বাহির থেকে ‘বর এসেছে, বর এসেছে’ হরতালে কিছুটা নড়ে চড়ে বসলাম আমি ৷ তখন নিধি এসে আমার পাশে বসে বললো,,,,
নিধি : যাক সব ঠিক আছে ৷
কাশফিয়ার : সব ঠিক না হওয়ার কি হলো? (ভ্রু কুচকে)
নিধি : কি আর হবে বল ৷ বাদ দে ৷ আজ কি হয় শুধু দেখ ৷
কাশফিয়া : আজ কি হয় মানে?
নিধি : ধুর ছাড় তো ৷ নিচে চল এখন ৷
কাশফিয়া : কি বলছিলি তুই?
নিধি : উফ কিছুই না ৷ চল এবার ৷
নিধি আমাকে নিয়ে নিচে নিয়ে সায়ানের পাশে বসিয়ে দিলো ৷ সবাই কিছুক্ষন চুপ থাকলো ৷ তারপর কাজীকে বিয়ে পরানো শুরু করতে বললো ৷ কাজী রেজিস্ট্রি পেপারে নাম লিখতে লাগলো ৷
তখনি কয়েকজন বাড়ির ভিতর এলো ৷ প্রায় ১০/১২ জন হবে ৷ প্রত্যেকের হাতে একটা করে বন্দুক ছিলো ৷ প্রত্যেকের মুখও ঢাকা ছিল ৷ যার কারণে চিন্তে পারি নি আমি কাউকেই ৷ আমার বাড়ির সবাইকে ঘিরে ধরলো ওরা ৷ তারপর আমার আর সায়ানের কাছে এসে ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে দিলো ৷ যার কারণে আমরা দুজনেই অজ্ঞান হয়ে যাই ৷
জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটা রুমে বন্দী অবস্থায় পাই ৷ তারপরের সব কিছু তো জানেনই ৷ (পর্ব-১ থেকে)
এখন আসি আগের কথায়,,,,,,
কাশফিয়া আর সায়ানের বিয়ের কথা আরিহান কিভাবে জানতে পারলো?
আরিহানের বাবার বেস্টফ্রেন্ড হচ্ছে জয়ের বাবা ৷
সেই সূত্রেই আরিহান আর জয় দুজন দুজনকে চিনে ৷ যেহেতু জয়ের নিধির সাথে পরিচয় আছে আর নিধি কাশফিয়ার ফ্রেন্ড সেহেতু খবর পাওয়া ততটাও কঠিন না ৷
আরিহান ওর লোক দিয়েই কাজগুলো করতে পারতো তবুও করেনি ৷ নিধি কাশফিয়ার বিয়ের সব কথা জয়কে আর জয় আরিহানকে বলতো ৷
তাই আরিহান কবে, কি, কখন, কিভাবে হবে সব জানতে পেরেছিল ৷
একটা বিয়ে বাড়ির আয়োজন করতে যত লোকজন লাগে সব আরিহানের লোক ছিল ৷ যাতে শেষের দিকেও কোনো সমস্যা না হয় ৷
এমনকি যেই কাজী বিয়ে পরাতে এসে ছিল সে নকল ছিল ৷ আরিহানই পাঠিয়েছে তাকে ৷
কাশফিয়া আর সায়ানকে অজ্ঞান করে ওদের পরিবারকে বন্দুক দিয়ে ভয় দেখিয়ে, ব্ল্যাকমেইল করে কাশফিয়াকে নিয়ে যায় ৷ আর ওর কাছে বন্দী করে রাখে ৷
যেহেতু তাড়া মাস্ক পরেছিল তাই উপস্থিত কেউই তাদের মুখ দেখতে পায় নি ৷ সায়ানের জ্ঞান ফিরলে ও বিভিন্ন জায়গায়ও খোঁজাখুঁজি করে কাশফিয়াকে ৷ পুলিশকেও ইনফর্ম করে তবুও কিছু জানা যায় নি ৷
(অতীত শেষ ৷ কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন ৷)
In the present…
দরজা ধাক্কানোর শব্দে বর্তমানে ফিরে এলাম আমি,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,