#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__১৪
দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো একটি মাস ৷ এই এক মাসে আরিহানের সম্পর্কে কিছুই জানতে পারি নি আমি ৷ ওনার বাবা ওনার সঙ্গে এই মাসে আর দেখা করতে আসেন নি ৷ জয় ভাইয়ার অফিসে কাজের চাপ আগের থেকে অনেক ৷ তাই তার সঙ্গেও কথা বলার সময় হয়ে উঠে নি ৷
এই এক মাস সায়ানের কোনো খোঁজ নেই ৷ বাড়িতেও যায় না ৷ কোথায় আছে কারো জানা নেই ৷ তবে আমি সায়ানকে এক দুইবার দেখেছি ৷ আরিহানের সাথে বাহিরে গেলে রাস্তায় সায়ানকে দেখতে পাই ৷ আবার নিজের বেলকনি থেকে রাস্তায় তাকালেও দেখতে পাই ৷ বুঝতে পারছি না এভাবে আমার আশেপাশে সায়ানকে কেন দেখতে পাই?
ছাদে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবছি আমি ৷ এই একটা মাস ঘর বন্দি করে রেখেছেন আরিহান আমাকে ৷ বাড়ির বাহিরে যেতে চাইলে উনি নিয়ে যান নয়তো এভাবেই থাকতে হয় ৷ হাপিয়ে উঠেছি আমি এভাবে থাকতে থাকতে ৷
পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আরিহান দাঁড়িয়ে আছেন ৷ আমাকে তাকাতে দেখে বললেন,,,,,
আরিহান : কি ভাবছো?
কাশফিয়া : কিছু না ৷
আরিহান : এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে?
কাশফিয়া : এমনি ৷
আমার দৃষ্টি আকাশের দিকে ৷ বেশ কিছুক্ষন নিরবতা বজায় ছিল আমাদের মাঝে ৷ নিরবতা ভেঙ্গে আরিহানকে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : একমাস ৷ কম সময় নয় কিন্তু ৷ এটা লম্বা একটা সময় ৷ আমি এই একমাস আমার মা বাবাকে ছেড়ে এখানে পরে আছি ৷ এটা আমার ভালো লাগছে না ৷ মা বাবা শব্দটাই এমন যে তাদেরকে ছাড়া তাদের সন্তান চলতে পারে না ৷ আমিও ঠিক তাই ৷
যেই আমি এক মিনিটও আমার আব্বু আম্মুকে না দেখলে অস্থির হয়ে যেতাম সেই আমি এক মাস তাদের থেকে দূরে থেকেছি ভাবা যায়?
পৃথিবীর সব সন্তানের কাছেই তাদের বাবা মা বেস্ট ৷ আমার কাছেও তাই ৷ আব্বু আম্মুকে খুব মিস করি ৷ জানি আমাকে ছাড়া তারা ভালো নেই ৷ আমিও ভালো নেই ৷
কথা গুলো বলে আরিহানের দিকে তাকালাম ৷ উনি সামনে তাকিয়ে আছেন ৷ ওনার চোখের কোনায় পানি ৷ নিঃশব্দে হাসলাম আমি ৷ যতই রাগ, অভিমান থাকুক সন্তান তার মা বাবাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ৷ ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,
কাশফিয়া : আমার মা বাবাকে একমাস না দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে না ৷ কষ্ট হচ্ছে ৷ তাদের সবকিছু মিস করছি ৷ আপনি করছেন না? কষ্ট হচ্ছে না আপনার?
উনি চোখ বন্ধ করে নিলেন ৷ কিছুক্ষন পর চোখ খুলে চলে যাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরলে তার হাত ধরে আটকে দিলাম ৷ ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি ৷ চোখ বন্ধ করে আছেন আরিহান ৷ কিন্তু কেন?
কাশফিয়া : আমি জানিনা আপনি কেন আপনার মা বাবার থেকে আলাদা থাকেন ৷ কিন্তু শুধু শুধু আলাদা থেকে লাভ কি? আমার যেমন আমার মা বাবার উপর একটা অদ্ভুত টান আছে ৷ আপনারও তো আছে আপনার মা বাবার প্রতি ৷ তো কেন নিজের রাগ নিয়ে তাদের থেকে দূরে থাকছেন?
উনি চোখ বন্ধ করেই শুনলেন আমার কথাগুলো ৷ একটুপর চোখ খুলে তাকালেন আমার দিকে ৷ ওনার চোখ লাল হয়ে গেছে ৷ মাথার রগ ফুলে উঠেছে ৷ কিন্তু কি এমন বললাম যে উনি রেগে গেলেন? আমি কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যেতে নিবো ৷ তখনি উনি আমার হাত ধরে টেনে তার সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,,,,,
আরিহান : কে বলতে বলেছে তোমাকে এসব কথা? নিজের মা বাবাকে কতটা মিস করো সেটা বোঝাচ্ছো আমাকে? তাদের দেখতে পাচ্ছো না বলে অনেক কষ্ট হচ্ছে না? তাদের থেকে আলাদা থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠেছো তাই তো? ওকে ডান…তাহলে তোমাকে তোমার মা বাবার সাথে একটু দেখা করিয়ে আনি ৷ কি বলো? সেই সুযোগে আমিও আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে দেখে নিব ৷ ভালো না? (রেগে)
কাশফিয়া : মমমানে??
আরিহান : কিছুক্ষন অপেক্ষা করো ৷ বুঝতেই পারবে ৷ এখন চলো ৷
আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন নিচে ৷ কি করবেন উনি এখন কিছু বুঝতে পারছি না ৷ হঠাৎ কি হলো যে এতো রেগে গেলেন ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,
কাশফিয়া : কোথায় নিয়ে যযাচ্ছেন আমাকে? যাবো না আমি ৷ ছাড়ুন ৷
উনি ছাদ থেকে নিচে নিয়ে এসে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গাড়ি লক করে দিলেন ৷ তারপর বাহিরে থেকেই কাকে যেন কল করে কিছু একটা বললেন ৷ বলা শেষে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷ আমি হাত পা ছোড়াছুড়ি করছি গাড়ি থেকে নামার জন্য ৷ কিন্তু পারছি না ৷ কি করতে চাচ্ছেন উনি কিছুই বুঝতে পারছি না ৷
চোখে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে যাচ্ছি ৷ উনি আমাকে অামার মা বাবার সাথে দেখা করাবে এই কথাটার মানে কি ছিল? কিছুক্ষনপর গাড়ি থামালেন উনি ৷ চোখ মুখ থেকে হাত সড়িয়ে আশেপাশে ভালো করে দেখে নিলাম ৷ গাড়িটা যেই সাইডে ব্রেক করা হয়েছে এবার সেই সাইডে তাকালাম আমি ৷ চোখ মুখে বিস্ময় ছেয়ে গেলো ৷ অজানা ভয়ে বুকটা ধুক করে উঠলো ৷
চোখ সরিয়ে আরিহানের দিকে তাকালাম আমি ৷ কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,,,,,,
কাশফিয়া : এএএখানে কেন নননিয়ে এসেছেনন?
আরিহান : গাড়ি থেকে নামো ৷
কাশফিয়া : নননা ননননামবো না ৷ আমি নননামবো না৷
আরিহান গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে দরজা খুলে দিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : নামো ৷
কাশফিয়া : বববলেছিনা? নামবো না ৷ আপনি চচলে যান ৷ আমি নননামবো না ৷
আরিহান : নামতে হবে আজ তোমাকে ৷ নামো নাহলে কোলে করে ভেতরে নিয়ে যাবো ৷
কাশফিয়া : কেন করছেন এরকম? আমি যাবো না ভেতরে ৷ যাবো না আমি ৷ দোহাই লাগি আমাকে ভিতরে নিয়ে যাবেন না ৷
কাঁদতে কাঁদতে বললাম ৷ কিন্তু উনি আমাকে ধমক দিয়ে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলেন ৷ আমি কান্না করেই যাচ্ছি ৷ কিন্তু উনি যেটা করতে চাচ্ছেন সেটাই করবেন ৷ আমার কোনো কথাই কানে নিচ্ছেন না এখন ৷
আরিহান : কান্না থামাও ৷ ভালো লাগছে না আমার ৷
কাশফিয়া : আআমাকে যেতে দিন ৷
আরিহান : চুপ একদম চুপ ৷ কোত্থাও যেতে পারবে না ৷ নাও সাইন করো ৷
বলেই একটা পেপার এগিয়ে দিলেন আমার দিকে ৷ পেপারটা হলো রেজিস্ট্রি পেপার ৷ আর আমরা এখন কাজী অফিসে ৷ পেপারটা হাতে নিয়ে ছিড়তে যাবো তখনি উনি হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললেন,,,,,
আরিহান : তোমার ছেঁড়ার জন্য আনিনি এটা ৷ সাইন করো চুপচাপ ৷
কাশফিয়া : ককরবো না ৷ কখনোই করবো না ৷
আরিহান : ভালো ভাবে বলছি সাইন করো ৷
কাশফিয়া : না না না করবো না আমি সাইন ৷ বেঁচে থাকতে কখনোই করবো না ৷ (চিৎকার করে)
আরিহান : আচ্ছা?…তো ওয়েট ৷
বলেই কাকে যেন ফোন করলেন ৷ কিন্তু উনি মুখে কিছুই বললেন না ৷ ফোন রেখে দিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : সাইন করবে?
কাশফিয়া : না ৷
আরিহান : ওকে ৷ শুধু দেখতে থাকো কি হয়?
— কাশফি মা ৷
পিছন থেকে কারো আওয়াজ পেয়ে পেছনে ঘুরে দেখি আম্মু আব্বু দাঁড়িয়ে আছে ৷ তাদেরকে দেখে তাদের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,
কাশফিয়া : কেমন আছো আম্মু আব্বু?
আব্বু : তোকে ছাড়া ভালো নেই ৷ তুই কেমন আছিস?
কাশফিয়া : কতদিন পর দেখলাম তোমাদের ৷ অনেক ভালো লাগছে আমার ৷
আম্মু : কিন্তু তুই এখানে কেন?
কাশফিয়া : আমি…
আর কিছু বলার আগেই আরিহান আমাকে আম্মু আব্বুর থেকে ছাঁড়িয়ে নিয়ে বললেন,,,,,
আরিহান : আপনাদের মেয়ের বিয়ে হবে ৷ তো ও থাকবে না তাহলে কে থাকবে বলুন?
আম্মু : বিয়ে? কার সাথে?
আরিহান : আপনাদের হবু জামাই আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ৷ তবুও চিনতে পারছেন না?
আব্বু : এই ছেলে কি বলছো তুমি এসব? কাশফি এসব কি?
কাশফিয়া : আব্বু আমাকে জোর করছেন উনি ৷ ওনাকে বোঝাও না আমি ওনাকে বিয়ে করবো না ৷
আরিহান : আসো ৷ অনেক হয়েছে ৷ এবার সাইন করো তাড়াতাড়ি ৷
কাশফিয়া : বললাম না আমি সাইন করবো না ৷ বিয়ে করবো না ৷
আরিহান : ওহ তো এতেও কাজ হলো না? বয়েস…?
আম্মু আব্বুকে যেই লোকগুলো ধরে এনেছে ৷ তাদেরকে ইশারা করে বললেন ৷ সঙ্গে সঙ্গে লোকগুলো আব্বু আম্মুর মাথায় গান চেপে ধরলো ৷ আর ওনারা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো ৷
কাশফিয়া : কি করছেন এগুলা? বববন্দুক নামান ৷ প্লিজ কিছু করবেন না ওনাদের ৷
আরিহান : তুমি সাইন করে দাও তাহলে ওনাদের কিছুই হবে না ৷
কাশফিয়া : করবো না ৷ (জোর গলায়)
আরিহান : ওকে!! বয়েস শুট দেম!!!
কাশফিয়া : নাহ ৷ না করবেন না এরকমটা ৷
আরিহান : বারবার বলছি সাইন করতে ৷ আমার কথা না শুনলে আমি কি করবো? করো সাইন ৷
আমি আম্মু আব্বুর দিকে একবার তাকালাম ৷ ওনারা মাথা নেড়ে ‘না’ করলো ৷ আমি চোখ ফিরিয়ে আরিহানের দিকে তাকালাম ৷ করুন সুরে বললাম,,,
কাশফিয়া : আরিহান…..
আরিহান : সাইন করো ৷
চোখের পানিটা মুছে আম্মু আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : ভুল বুঝো না আমায় তোমরা ৷ আমাকে এখন করতেই হবে ৷ পারলে ক্ষমা করে দিও ৷ তোমাদের কোনো ইচ্ছাই আমি পূরণ করতে পারলাম না ৷
চোখ সরিয়ে নিলাম ৷ আরিহান পেপারটা সামনের দিকে বারিয়ে দিলেন ৷ পেপারটার দিকে তাকিয়ে হাতে নিয়ে সামনের টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসলাম আমি ৷ কাঁপাকাঁপা হাতে কলমটা নিয়ে সাইন করে দিলাম ৷
প্রথমে আইনিভাবে তারপর ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হলো আমাদের ৷ না চাইতেও করতে হলো আমায় ৷ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আমি ৷ আরিহানও দাঁড়িয়ে গেলেন ৷ তার চোখে চোখ রেখে নিজের রাগটা দমিয়ে রেখে বলতে লাগলাম,,,,,
কাশফিয়া : নিজের ক্ষমতা দেখানো হয়েছে মিস্টার আরিহান আহমেদ? নাকি আরো বাকি আছে? তো দেখান দেখতে চাই আমি ৷ আজ থেকে আপনার জন্য আমার মনে শুধু ঘৃণার তৈরি হলো ৷ আমার মনে আপনার জন্য জেগে থাকা এক শুন্য অনুভূতি নিজের হাতে শেষ করে দিলেন আপনি ৷
ভালোবাসি নি আর কক্ষনো বাসবোও না ৷ ফোর্স করেছেন আপনি আমায় ৷ ব্ল্যাকমেইল করেছেন ৷ এভাবে একটা সম্পর্ক তৈরি করলেও আমি এই বিয়ে মানিনা ৷ আর আপনাকেও মানিনা ৷
নিজের অধিকার দেখাতে আসলে নিজেকে নিজেই শেষ করে দিব আমি ৷ মনে রাখবেন দুটো প্রাণকে বাঁচাতে আমি এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি ৷ ভালোবেসে নয় ৷ আর আবারও কোনো প্রাণকে বাঁচাতে হলে এই বন্ধন ভেঙ্গে দিতে পারবো আমি ৷
সারাজীবন ঘৃণা করে যাবো আমি আপনাকে ৷ সহ্য করতে পারলে করে দেখুন ৷
আরিহান আমার হাত ধরে বললেন,,,,
আরিহান : চলো ৷
বলেই বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলো ৷ আম্মু আব্বুর কাছে এসে থেমে বললাম,,,,
কাশফিয়া : ভালো থেকো আর নিজেদের খেয়াল রেখো৷
তাদের দিকে একবার ব্যথিত চোখে তাকিয়ে আরিহানের সাথে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম ৷ আমাকে গাড়িতে বসিয়ে উনি পেছনে ঘুরে লোক গুলোকে আব্বু আম্মুকে বাসায় পৌঁছে দিতে বললেন ৷ তারপর গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷
চোখ বন্ধ করে সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসে আছি আমি ৷ চোখ থেকে পানি পরছে ৷ এই কয়েক মূহুর্তে আমার পুরো জীবনটা পাল্টে গেলো ৷ আমি তো চাই নি আমার সাথে এরকম হোক ৷ তো কেন হলো? সবাই দূরে চলে গেলো আমাকে ফেলে ৷ ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,