The_Terrible_Lover part 15

#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__১৫

হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছি আমি ৷ চোখের পানি শুকিয়ে দাগ বসে গেছে ৷ মাথাটাও ব্যাথা করা শুরু করে দিয়েছে ৷ দরজা খোলার শব্দে মুখ তুলে সামনের দিকে তাকালাম ৷ আরিহান রুমে ঢুকছেন ৷ তাকে দেখে আরো গুটিশুটি মেরে বসে রইলাম ৷

আমার কাছে এসে বললেন,,,,

আরিহান : ফ্রেশ হয়ে আসো যাও ৷

আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম ৷ আমার কাছে আসতে গেলে পিছিয়ে গেলাম আমি ৷ সেটা দেখে উনি বললেন,,,,

আরিহান : ঘুম পাচ্ছে আমার ৷ ফ্রেশ হয়ে আসো তুমি ৷

বলেই বেলকনিতে চলে গেলেন ৷ আমি আস্তে আস্তে নেমে ওয়াশরুমে গেলাম ৷ ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলাম ৷ আরিহান ফ্রেশ হতে চলে গেলেন ৷ কাঁথা গায়ে দিয়ে বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলাম ৷

কিছুক্ষনপর আরিহান বেরিয়ে লাইট অফ করে দিলেন ৷ সেটা দেখে আমি পিছন ঘুরে দেখার চেষ্টা করলাম আরিহান আমার পাশে শুয়েছেন কিনা? নাহ নেই ৷ সামনে তাকিয়ে দেখি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন ৷ আমি তাকে একবার দেখে চোখ বন্ধ করে দিলাম ৷

_____________

সকালের সূর্যের আলো চোখে পরতেই চোখ মুখ কুচকে গেলো ৷ আস্তে আস্তে চোখ খুললাম ৷ মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে ৷ শোয়া থেকে উঠে বসে মাথা চেপে ধরলাম ৷ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম ৷ আরিহান নেই এখানে ৷ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম ৷ খাট থেকে নামতেই আখি এলো ৷

ও এসে আমার কাছে বসলো ৷ আখিকে একবার দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ৷ আমার হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,,

আখি : ফ্রেশ হয়ে আসো ৷ ব্রেকফাস্ট করবে ৷

আমি মাথা নাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম ৷
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি আখি কি যেন গুচ্ছাচ্ছে ৷ তাই ওকে বললাম,,,,

কাশফিয়া : কি করছো?

ও পেছন তাকিয়ে বললো,,,

আখি : তোমার সব জামা কাপড় গুছিয়ে রেখে দিয়েছি ৷ গতকাল ভাইয়া নিয়ে এসেছিল ৷ তুমি এই সময় শাওয়ার নিলে যে?

কাশফিয়া : মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে তাই ৷ তোমার কাছে কোনো মলম আছে?

আখি : দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি ৷

ও চলে গেলো রুমের বাহিরে ৷ আমি চুল মুছে রুম থেকে বাহিরে চলে এলাম ৷ নিচে গিয়ে দেখি আরিহান ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন ৷ আমাকে দেখে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন ৷ আমি সামনে এগোতে গেলেই পিছন থেকে আখি বললো,,,,

আখি : মলমটা পেয়েছি ৷ নাও লাগিয়ে নাও ৷

কাশফিয়া : হুম দাও ৷ পরে লাগাবো নে ৷ চলো ৷

আখি আর আমি ওখানে গিয়ে বসলাম ৷ আরিহানের সামনাসামনি বসেছি ৷ কয়েকজন সার্ভেন্ট মিলে খাবার বেড়ে দিলো ৷ সবাই চুপচাপ খেয়ে নিলাম ৷ অন্যদিন হলে কথা হতো ৷ কিন্তু এখন হয়নি ৷ খাওয়া শেষে রুমে চলে এলাম ৷

মাথায় মলমটা লাগিয়ে চুপ করে বসে রইলাম ৷ হঠাৎ চোখ গেলো হাতের একটা আংটির দিকে ৷ এটা আমাকে সায়ান দিয়েছিল ৷ ও ভালোবাসে বলে আমাকে পরিয়ে দিয়েছিল ৷ এটাই কি ওর ভালোবাসা? আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে একবারও আমাকে নিতে আসলো না, দেখতে আসলো না ৷ বিয়ের সময় কি আসতে পারতো না ও? কোথায় আছে সায়ান? ঠিক আছে তো?

হাতের থেকে রিংটা খুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিলাম ৷ আজও ভালোবাসি ওকে ৷ হোক ভালো, হোক খারাপ, হোক ক্ষনিকের জন্য ৷ ভালোবেসেছি তো ৷ ভুলতে পারবো না কখনোই ৷ আর সেই জায়গাটা আরিহানকেও দিতে পারবো না কখনো ৷

ড্রেসিং টেবিলের উপরে রেখে দিলাম ৷ দূরে সরে গিয়েছে ও আমার থেকে যেদিন আসবে সেদিন এই রিংটার কথা ভেবে দেখা যাবে ৷ নিচের ড্রয়ার খুলতেই চোখ পরলো বইটার দিকে ৷ হাতে নিয়ে দেখি সেই দিনের বইটা যেটা দেখতে চেয়েও দেখতে পাই নি ৷

বইটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসলাম ৷ খুলে একের পর এক পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম ৷ এই বইয়ের প্রথম পৃষ্টায় আরিহানের পরিচয় বিস্তারিতভাবে লেখা রয়েছে ৷ এরপরের পৃষ্ঠাগুলোতে আছে বিভিন্ন ধরনের স্কেচ ৷ স্কেচ শেষে মা বাবা সম্পর্কে কিছু কথা লেখা রয়েছে ৷ নরমাল বইয়ে যেভাবে লিখা থাকে এখানেও সেভাবে লিখা ৷

লাস্টের দিকে ছোট একটা এলবাম ৷ যেখানে ৬/৭ বছরের একটা ছেলে আর ছেলেটার মা বাবা ৷ ছেলেটা যে আরিহান সেটা বুঝতে পেরেছি আমি ৷ লাস্টের পেজে বাচ্চাদের মতো করে লিখা ‘I miss you mom dad’ লেখাটার উপর হালকা করে হাত বুলিয়ে দিলাম ৷ জানিনা কীসের এতো রাগ যে ওনার সামনে ওনার মা বাবার নাম নিলেই রেগে যান ৷ আর সেই রাগের জন্যই তো আজ আমার এই অবস্থা ৷

পিছন থেকে আরিহানের গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলাম ৷ এই বইটা আমার হাতে দেখতে পেলে না জানি আবার কি শুরু করবেন ৷ বইটা বন্ধ করে পাশে রেখে দিলাম ৷ উনি আমার সামনে এসে বললেন,,,,

আরিহান : কি হলো? কি করছো? বলো?

আমি দাঁড়িয়ে চুপ করে রইলাম ৷ ওনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না আমার ৷ আরিহান আবার বললেন,,,,

আরিহান : আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি বলছো না কেন?

ওনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আমার হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন ৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,,,,

আরিহান : সমস্যা কি তোমার? একটা কথা বললে কানে যায় না? কথা বলছো না কেন?

কাশফিয়া : ভালো লাগছে না ৷ ছাড়ুন আমাকে ৷

আরিহান : কাল থেকে এরকম করছো ৷ কিছু জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দাও না ৷ কেন এমন করছো?

কাশফিয়া : এমন না করার মতো তো কিছু হয় নি ৷

আরিহান : আগের কথা বার বার টানবা না ৷

কাশফিয়া : কেন টানবো না? আপনি আমাকে জোর করবেন আর সেটা মেনে নিবো আমি? আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে না আমার ৷

আরিহান : তোমাকে জোর না করলে তুমি শুনতে আমার কথা?

কাশফিয়া : জীবনেও না ৷

আরিহান : তাহলে? তোমাকে ভালোবাসি দেখেই তো জোর করেছি ৷

কাশফিয়া : ভালোবাসি ভালোবাসি শুনতে শুনতে আম জাস্ট টায়ার্ড ৷ কতবার বলবো আপনাকে, আমি আপনাকে ভালোবাসি না ৷ একটা কথা একবার বললে বুঝেন না?

আরিহান : না বুঝি না ৷ তোমাকে ছাড়া আমি আর কিছুই বুঝি না ৷ ভুলে যাও না সায়ানকে ৷ বিয়ে হয়ে গেছে তো আমাদের ৷

আরিহানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ৷

কাশফিয়া : হোক ৷ আমি মানিনা ৷ ভুলতেও পারবো না৷

আরিহান : চেষ্টা করো ঠিক পারবে ৷

কাশফিয়া : পারবো না পারবো না পারবো না ৷ চলে যান সামনে থেকে ৷ আপনার সব ইচ্ছা তো পূরণ হয়েছে ৷ মাঝখান থেকে আমি আলাদা হয়ে গিয়েছি ৷ এর থেকে ভালো গলা টিপে মেরে ফেলুন আমাকে ৷

ফ্লোরে বসে পরলাম আমি ৷ আরিহান আমার কাছে আসতে চেয়েও আসলেন না ৷ বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে ৷ ফ্লোরে বসে কাঁদছি ৷ সব ছন্ন ছাড়া লাগছে ৷ মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি আখি ৷ আমার সামনে বসে ওর হাত দিয়ে আমার চোখ মুছে দিয়ে বললো,,,,

আখি : কেদোনা ৷ জানি ভাইয়া রাগের বশে ভুল করে ফেলেছে ৷ কিন্তু সত্যিই তো ভাইয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে ৷ হয়তো এখন সেটা তোমার কাছে জেদ কিংবা আবেগ মনে হচ্ছে ৷ কিন্তু যেদিন বুঝবে সেদিন আফসুস করবে ৷ কিন্তু বুঝতে এতোটাও দেরি করো না যাতে করে তোমার কষ্ট বেশি হয় ৷
আর ভাইয়া দূরে চলে যায় ৷ তাই সময় থাকতে বুঝো ৷ তোমরা এখন স্বামী স্ত্রী ৷ হোক সেটা জোর করে, ভয় দেখিয়ে সত্যি তো এটাই ৷ একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়া যতটা সহজ ভেঙ্গে দেওয়াও ঠিক তার চেয়ে অনেক কঠিন ৷ তাই বলছি সময় থাকতেই নিজেদের মধ্যে সব ঠিক করে নাও ৷ মুভ অন করো ৷
মেনে নাও সবটা আর নিজেকে একটু মানিয়ে নাও……আচ্ছা রেস্ট করো তুমি ৷ আমি আসছি এখন ৷

আখি কথাগুলো বলে চলে গেলো ৷ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওর যাওয়ার দিকে ৷

____________________________________

তিনদিন পর…
ডাইনিং টেবিলে বসে আছি ৷ সামনে প্লেটে ভাত নাড়াচাড়া করে যাচ্ছি ৷ কারো মধ্যে কোনো কথা নেই ৷ কিন্তু আমার ভেতরে ভেতরে টেনশান কাজ করছে ৷ টেনশানের জন্য খেতেও পারছি না ৷ আমাকে এরকম করতে দেখে আরিহান বললেন,,,,,

আরিহান : এরকম করছো কেন?

আমি চুপ করে রইলাম ৷ এমন একটা ভাব করলাম যাতে ওনার কথা শুনতেই পাই নি আমি ৷ আবার ধমক দিয়ে বললেন,,,,

আরিহান : হচ্ছেটা কি? খাচ্ছো না কেন?

কোনো রকম নাড়াচাড়া করে এক লোকমা মুখে দিয়ে চিবাতে লাগলাম ৷ মনটা বারবার অশান্ত হয়ে উঠেছে ৷ গত তিন দিন আরিহানের সাথে বেশি একটা কথা হয় নি ৷ যা হয়েছে সব দুই বা তিন বাক্যের ৷ মোবাইল অন করে দেখি ৩ টা বেজে গিয়েছে ৷ সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম ৷ হঠাৎ এরকম করায় আখি আর আরিহান তাকালো আমার দিকে ৷ আমি মেকি হেসে বললাম,,,

কাশফিয়া : আ-আসলে হয়েছে কি!! আমার পেট ভরে গেছে ৷ আর খাবো না ৷ রুমে গেলাম আমি ৷ (বলেই রুমের দিকে চলে গেলাম)

কাশফিয়ার এরকম অস্থিরতায় আখি আর আরিহান কিছুই বুঝতে পারছে না ৷ দুজনে দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বললো,,, “হয়েছে টা কি? আজিব!”

রুমে এসে পায়চারি করছি আমি ৷ এর একটাই কারণ জয় ভাইয়ার সাথে আজ দেখা করতে যাবো ৷ কিন্তু কীভাবে যাবো সেটাই বুঝতে পারছি না ৷ সকাল থেকে ওয়েট করছি আরিহান কখন বাহিরে যাবেন ৷ দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যাচ্ছে তবুও তার যাওয়ার টাইম নাই ৷

জয় ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি ৷ উনি বলেছেন ৩:৩০ এর মধ্যে কফি শপে উপস্থিত থাকতে ৷ উনিও আসবেন ৷ কিন্তু এখন ৩ টার বেশি বাজে ৷ যাবো কখন? বিছানায় বসে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার ঘড়ির দিকে ৷ মিনিট পাঁচেক পর আরিহান রুমে আসলেন ৷ আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম ৷ ৩ টা ৮ বেজে গিয়েছে ৷

আরিহান নিজের ওয়ালেটটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন,,,”আসছি”

উনি যাওয়ার পর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ৷ আলমারি থেকে পার্সটা বের করে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম ৷ আমাকে এভাবে তাড়াহুরা করতে দেখে আখি বললো,,,,

আখি : কি হয়েছে? এরকম করছো কেন?

কাশফিয়া : এতো কথা বলার সময় নেই ৷ আমি বাহিরে যাচ্ছি ৷ আরিহান আসলে একটু সামলে নিও ৷

আখি : কিন্তু তুমি যাচ্ছো কোথায়?

আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললাম,,,,,

কাশফিয়া : এসে বলবো ৷

বলেই এক প্রকার দৌঁড়ে বাইরে চলে এলাম ৷ আর মাত্র ১৫ মিনিট আছে ৷ যাবো কিভাবে? গেইটের সামনে আসতেই দুইটা ছেলে পথ আটকে দিল ৷ পাহাড়া দিতে রেখেছেন আরিহান যাতে আমি বাহিরে যেতে না পারি ৷ ওদেরকে এভাবে দেখে বললাম,,,,

কাশফিয়া : কি হলো? আটকালে কেন?

— ম্যাম স্যার না করে দিয়েছে ৷ আপনাকে বের হতে দেয়া যাবে না ৷

কাশফিয়া : ভালো হয়েছে সরো রাস্তা থেকে ৷

— সরি ম্যাম ৷ আপনাকে যেতে দিলে আমাদের চাকরি থাকবে না ৷

কাশফিয়া : আর আমাকে যেতে না দিলে তোমাদের চাকরি থেকে আউট করবো আমি ৷ এখন ভেবে দেখো কি করবে?

— ম্যাম এরকমটা করবেন না ৷ একদিকে স্যার আরেকদিকে আপনি ৷

কাশফিয়া : আমাকে যেতে দিলে তোমাদের চাকরি যাবে না ৷ আই প্রমিজ ৷ বাট না যেতে দিলে কিছু করার নেই ৷

— কিন্তু ম্যাম ৷

কাশফিয়া : সময় নেই আমার ৷ যেতে দাও কুইক ৷

ওরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো ৷ ধমক দিয়ে বললাম,,,,

কাশফিয়া : সরে যেতে বলেছি তো নাকি?

— সরি ম্যাম ৷

বলেই সরে গেলো ৷ আমি তাড়াতাড়ি করে একটা সিএনজি নিয়ে কফি শপে যাওয়ার দিকে রওনা দিলাম ৷ যেভাবেই হোক সব কিছু জানতে হবে আজ আমায় ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here