ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ২৭+২৮

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-২৭+২৮

প্রচন্ড কম্পনে হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় পুতুলের।মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী টা কাপছে।কম্পনের উৎস খুজতে শব্দ অনুসরণ করে তাকাতেই দেখে টেবিলে কারো ফোন ভাইব্রেট হতে হতে থেমে গেল।আশেপাশে ভালো করে তাকাতেই দেখে শ্রেয়া আপু তার পাশে বেঘোরে ঘুমচ্ছে।শ্রেয়াকে দেখে চট করে উঠে বসে পুতুল।সে তো সূর্যর সাথে গাড়িতে ছিল, এখানে এলো কী করে?পুতুল রুমের চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কোথায় আছে।কিন্তু তেমন কিছুই বুঝতে না পেরে উঠে জানলার পর্দা সরিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করে পুতুল।

বাইরে তাকাতেই মনে হলো গ্রামীণ এলাকা।কিছু বড় বড় আমগাছ আর বড় পুকুর দেখতে পেল পুতুল।সূর্যটা বেশ তাপ ছড়াচ্ছে পৃথিবীর বুকে।জানলা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া গা ছুয়ে দিচ্ছে।
-“ওহ গড,এগারোটা বেজে গেছে?শিট।”
শ্রেয়ার কথা শুনে পুতুল দ্রুত পিছনে তাকিয়ে দেখে শ্রেয়া ফোন হাতে হুরপার করে বিছানা থেকে নামছে।কোনদিকে না তাকিয়ে উঠেই রুম থেকে বের হয়ে যায় শ্রেয়া।

শ্রেয়া পিয়াসের রুমে ঢুকে দেখে সবগুলো বিছানায় জট পাকিয়ে ঘুমচ্ছে,এর মাথা ওর পায়ের কাছে টাইপ জট।এতো এতো কাজ রেখে সবগুলো কী নিশ্চিতে ঘুমচ্ছে।আহ,দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ভেবেই সবাইকে ডাকতে শুরু করে শ্রেয়া।কিন্তু আল্লাহর বান্দাগণের একফোঁটা রেসপন্স নেই।হাতের কাছে সামির থাকায় ওর মাথায় দেয় এক থাপ্পড়।থাপ্পড় খেয়ে সামির ধড়ফড় করে উঠে বসে।শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই বলল,
-” বড় ভাইয়ের বিয়ে আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস ছোটলোক। তাড়াতাড়ি এগুলোকে উঠা গাধা।”

শ্রেয়ার কথায় সামিরের হঠাৎই মনে পড়লো আজ তো তার বড় ভাইয়ের বিয়ে।ইসস,,,,ভাইয়ের বিয়ে হলেই তার পালা ভেবেই নিজেকে বেশ চাঙা লাগছে সামিরের।কিন্তু পিয়াসের দিকে তাকাতেই চাঙানেস উড়ে একরাশ হতাশার সাথে বিখ্যাত প্রবাদ বাক্য মনে পড়লো। তাই সে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে “যার বিয়ে তার খোঁজ নেই অথচ পাড়াপড়শির ঘুম নেই” প্রবাদটা মনে মনে আওড়ালো।শ্রেয়ার আরেকটা চাটি খেয়ে বাস্তবে ফিরে আসে সামির।
-“বসে আছিস কেন গাধা ডাক ওদেরকে।”
বলে বের হয়ে যায় শ্রেয়া।

দরজায় দাড়িয়ে পুতুল ভ্রু কুঁচকে উঠানের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু শাড়ি পরিহিতা মেয়ে-মহিলা একসাথে বসে হাসাহাসি করছে আর হলুদ বাটছে। ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে।সাজসজ্জা দেখে মনে হচ্ছে বাড়ি টা তে কোন উৎসব হচ্ছে।ভাবনার মাঝেই শ্রেয়া এসে বলল,
-“উঠে গেছো পুতুল?”
-“হুম,আপু এখানে কী কোন ফেস্টিভ্যাল চলছে?”
-” হুম,,,আজ আমাদের দ্যা কুম্ভকর্ণ পিয়াসের সাদি মোবারক পুতুল,তারই আয়োজন চলছে।”
-“আমরা পিয়াস ভাইয়ার বিয়েতে এসেছি!কিন্তু আমি তো কোন ড্রেস নিয়ে আসিনি আপু।”
বাচ্চা মেয়ে টা বিয়েতে কী পড়বে ভেবে ভীষণ কিউট ফেস বানিয়ে চিন্তা করছে।তা দেখে শ্রেয়া পুতুলের গালটা টেনে বলল,
-“টেনশন করো না কিউটি,ক্যাপ্টেন সাহেব আছে না সব পেয়ে যাবে।”
বলেই এক চোখ টিপ দিল শ্রেয়া।

কলতলায় বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে আছে পুতুল।বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হলেও অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে।এতো ভীড়ে ওয়াশরুম ফাঁকা পাওয়া সম্ভব হয়নি।তাই কিছুক্ষণ আগে শ্রেয়া তাকে নিয়ে ফ্রেশ হবার জন্য কলতলা এসেছে।কিন্তু বিপত্তি বাধে পিয়াস ভাইয়ার মা এসে কী দরকারে যেন শ্রেয়াকে নিয়ে গেছেন।আর যাবার আগে ব্রাশ করার জন্য হাতে সাদা পাউডার দিয়ে গেছেন।পুতুল ভ্রু কুঁচকে পাউডার গুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছে এটা দিয়ে কীভাবে ব্রাশ করে?

ফ্রেশ হয়েই সামিরের রুমের দিকে ছুট লাগায় সূর্য।সামিরের রুমে কাউকে না পেয়ে বেরিয়ে আসতেই দেখে শ্রেয়া আন্টির সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।শ্রেয়ার থেকে জানতে পারে পুতুল কলতলা।তাই সোজা কলতলার দিকে হাঁটা ধরে সূর্য।কলতলা আসতেই দেখে পুতুল ভ্রু কুঁচকে তার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।এগিয়ে কাছে যেতেই বুঝতে পারে পুতুল হাতের মাজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
-” কোন সমস্যা পিচ্চি?”
সূর্যকে দেখেই মুখের চিন্তা মিলিয়ে খুশির আভা ফুটে ওঠে পুতুলের।বাম হাতটা সূর্যের দিকে এগিয়ে বলল,
-“ক্যাপ্টেন, এটা দিয়ে ব্রাশ করে কীভাবে?”
পুতুলের প্রশ্নে সূর্য ফিক করে হেসে উঠে।এলোমেলো চুল,ফোলা ফোলা মায়াবী চোখ গুলোর উপরে ভ্রু দুটো হালকা কুঁচকে ভীষণ কিউট হয়ে তাকিয়ে আছে তার উত্তরের আশায়।সূর্য পুতুলের নাক টিপে নিজে মাজন দিয়ে ব্রাশ করে পুতুলকে শিখিয়ে দেয়।পুতুলের ব্রাশ করা হলে সূর্য ঝুকে নিজের প্যান্টটা গুটিয়ে নেয়। তারপর পুতুলের পায়ের দিকে হাত দিতেই পুতুল লাফিয়ে এক পা পিছিয়ে যায়।সূর্য ধমক দিয়ে বলল,
-” লাফাচ্ছো কেন?স্টে স্ট্রেইট।”
ধমক খেয়ে পুতুল সোজা হয়ে দাড়ালে সূর্য পুতুলের প্যান্টটা গুটিয়ে দিয়ে হাত ধরে টিউবওয়েলের কাছে নিয়ে আসে।সূর্য টিউবওয়েল পাম্প করতে করতে বলল,
-“পুতুল হারি আপ,আমার অনেক কাজ আছে জলদি করো।”
সূর্যের কথায় পুতুল ফটাফট হাত-মুখ ধোয়া শুরু করে।ইসস,,,,,ক্যাপ্টেন টার সাথে এখানে থেকে গেলে বেশ হবে।ক্যাপ্টেনের সাথে রোজ ওই পাউডার দিয়ে ব্রাশ করে এই টিউবওয়েল থেকে হাত-মুখ ধুতে পারবে। উফফ,,,,এই ভালবাসারা আবার শিরশির করছে।এসব ভাবনার মাঝেই সূর্য বলে উঠে,
-“রাতে গাড়ি চালু করার আধাঘন্টা পরেই ঘুমিয়ে গেছিলে।তাই তোমার কঠিন শাস্তি পাওনা হয়েছে পিচ্চি, কঠিন শাস্তি।”
সূর্যের কথা শুনে পুতুল ভীতু ভীতু চোখে তার দিকে তাকালো।

ঘুম থেকে টেনে তুলেই ইতর গুলো মিলে টানাটানি করে জামা-কাপড় খুলে একটা সাদা সেন্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়ানোতে নিজের ভান্ডারে যতগুলো গালাগালি ছিল সব উগরে দিয়েছে পিয়াস।কিছু সময়ের জন্য নিজেকে দ্রৌপদী আর ইতর গুলোকে দুঃশাসন মনে হয়েছে পিয়াসের।এমুহূর্তে এদেরকে গালি দেয়ার মতো আর কোন গালাগালি মাথায় আসছে না তাই রাগী চোখে জঙ্গলি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।সবগুলো হুরপার করে তাঁর মতো সাদা সেন্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি পড়ে গলায় সেওলা রংয়ের গামছা ঝুলিয়ে নিচ্ছে।সবার দিকে তাকিয়ে হামি তুলে বলল,
-” সকাল সকাল সবাই এমন তামিলনাড়ু ভিলেন সাজার মহত্ত্ব কী বলবি?”
সূর্য পিয়াসের গলায় একটা লাল গামছা ঝুলিয়ে বলল,
-” একটু পরেই দেখতে পাবি।”
বলে এক চোখ টিপ দেয়। আর বাকি গুলো দাঁত কেলিয়ে সবাই মিলে পিয়াসকে পাঁজাকোলা করে পুকুর ঘাটের দিকে হাটা দিল।
শ্রেয়া সাদা রংয়ের ঢিলাঢালা সালোয়ারের সাথে সাদা কামিজ আর মাল্টি কালারের ওড়না পড়েছে।পুতুলও একই ড্রেস পড়ে আয়নাতে ঘুরেফিরে নিজেকে দেখছে।শ্রেয়া আপু তার চুল গুলো সামনে থেকে টুইস্ট করে সুন্দর করে বেধে দেওয়ায় নিজেকে কেমন অন্যরকম লাগছে পুতুলের।তবে বেশ ভালো লাগছে।শ্রেয়া রেডি হয়ে পুতুলকে নিয়ে কলতলায় যেতেই দেখে অনেক গুলো মহিলা মিলে একটা হলুদ শাড়ি পড়া লম্বা চুলওয়ালা মেয়েকে হলুদ লাগাচ্ছে।শ্রেয়া গিয়ে মেয়েটার মুখে হলুদ লাগিয়ে হেসে বলল,
-” দিশিকা তুমিই মনে হয় প্রথম মেয়ে যার শ্বশুর বাড়িতে গায়ে হলুদ হচ্ছে। ব্যাপারটা কিন্তু দারুণ।”
শ্রেয়ার কথায় দিশিকা লাজুক হাসি দিয়ে বলল,
-“কেমন আছো আপু?”
ওদের কথায় পুতুল এতক্ষণে বুঝতে পারলো এটাই কনে।শ্রেয়া পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“নতুন বউকে জলদি হলুদ লাগাও।আমাদের তো বরকেও হলুদ দিতে যেতে হবে পুতুল।”
শ্রেয়ার কথায় পুতুল হলুদ নিয়ে মেয়েটার মুখে লাগাতেই পাশ থেকে শ্রেয়া হেসে বলল,
-” নতুন বউ আমাদেরকেও একটু হলুদ লাগিয়ে দাও তো।এই উছিলায় যদি আমাদেরও তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়।”
শ্রেয়ার কথায় দিশিকা হেসে দুজনের গালে হলুদ লাগিয়ে দিল।

চলবে

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-২৮

পিয়াস হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।নিজেকে কোরবানির গরু মনে হচ্ছে, যাকে সবাই মিলে ধুয়ে কিছুক্ষণ পর জবাই দেবে। কানে শুধু মায়ের কথা বাজছে, বিয়ে!! আজ তার বিয়ে আর সে কেবলমাত্র ঘুম থেকে উঠলো,ব্রাশটাও করেনি।সে নিশ্চিত হা করলে মুখ থেকে বাজে স্মেল বের হবে।সে তো দিশিকার উপর রেগে মাকে বিয়ে করার কথা জানিয়েছিল আর মা সত্যি সত্যি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।মায়ের মুখের উপর কখনো কথা বলেনি সে কিন্তু দিশিকার কী হবে?সে তো দিশিকা কে ভালবাসে।ভেবেই মাকে কিছু বলার জন্য তাকিয়ে দেখে মা নেই,আশেপাশে কোন খানেই নেই।

হঠাৎই দিশিকার কথা মনে হতেই রাগটা খট করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।বেশ করেছে,মা বিয়ে ঠিক করে একদম ঠিক করেছে। সে অবশ্যই মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে।এসব ভাবনার মাঝেই মুখে ধপ করে একদলা হলুদ এসে পড়ে।সামনে তাকিয়ে দেখে কল্লোল দাঁত কেলিয়ে হলুদ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই একসাথে পিয়াসকে চেপে ধরে হলুদ লাগিয়ে চেচিয়ে বলল,
-“সাদি মোবারক বন্ধু!”

পুতুল আর শ্রেয়া পুকুর ঘাটে এসে সবার অবস্থা দেখে কিছুক্ষণ হা করে দাড়িয়ে থাকে।পিয়াসকে দেখে মনে হচ্ছে কয়েক বালতি হলুদ তার মাথায় ঢালা হয়েছে, জাস্ট লাইক আ হলুদ মানব, বাকি চারজনেরও একই অবস্থা।ওদের বেহাল অবস্থা দেখে প্রতিবেশী মহিলারা হতাশ হয়ে ভেতরের দিকে যাচ্ছে।এদের জন্য এরা যে বরকে হলুদ লাগাতে পারেনি বেশ বুঝতে পারছে শ্রেয়া।কিন্তু এরা এতো হলুদ কোথায় পেল?বিয়ে বাড়িতে কী রান্নাবান্না না করে সবাই শুধু হলুদই বেটেছে।পুতুল তো অবাক হয়ে সবার গেটআপ দেখছে।সবাইকে দেখেই ফিক করে হেসে উঠে।
শ্রেয়া অবাক হয়ে বলল,
-“তোরা কী গায়ে হলুদ দিচ্ছিস নাকি হলি খেলছিস?”
শ্রেয়ার কথায় সবাই পিয়াসকে ছেড়ে পিছনে ঘুরে তাকায়।শ্রেয়াকে দেখেই কল্লোল গদগদ হয়ে দুহাত মেলে বলল,
-“ডক্টরপাখি, আসো তোমাকে হলুদ দিয়ে দিই।”
-“একদম না।”
শ্রেয়া হাত দেখিয়ে ঝারি দিতেই কল্লোল মুখটা চুপসে হাত নামিয়ে নেয়।আর সূর্য গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে এসে পুতুলের হাত ধরে বলল,
-“চলো বরকে হলুদ লাগাবে।”
সূর্যের কথা শুনে শ্রেয়া পিয়াসের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বলল,
-” এর আর কোথায় হলুদ লাগাবে শুনি?”
শ্রেয়ার কথায় পুতুল পিয়াসের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
-“শালা তোদের বিয়েতে আমি ফায়ার সার্ভিসকে ডাকবো, আগুন নিভাতে নই। গাড়ির ট্যাংকি ভরে হলুদ নিয়ে পাইপ সেট করে তোদের গায়ে হলুদ দেবার জন্য।”
বলেই পিয়াস সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পুকুরের টলটলে পানিতে ঝাপ দিল।পিয়াসের দেখাদেখি রক্তিম আর সামিরও হেসে তার সাথে যোগ দিল।এর ফাঁকে কল্লোল ফট করে শ্রেয়াকে কোলে তুলে বলল,
-“ডক্টরপাখি, চলো তোমাকে চুবিয়ে মাথা ঠান্ডা করে দিই।”
শ্রেয়া চেচিয়ে ছটফট করেও ছাড়া পেলো না।পুতুল হেসে সূর্যের দিকে তাকাতেই দেখে সূর্য ঠোঁট কামড়ে হাসছে।
-”পিচ্চি আয় তোরে হলুদ লাগিয়ে দিই।”
বলেই পুতুলকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

পিয়াসের মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মাথা থেকে মগজ গুলো গরম লাভার মতো গড়িয়ে পড়বে।কিছুক্ষণ আগেই নিজের রুমে বসে কবুল বলে আয়না দর্শনে বউয়ের মুখ দেখেই মাথার এমন অবস্থা হচ্ছে। হাতের কাছে A4 বিস্ফোরক থাকলে নিরদ্বিধায় মেরে সে এখুনি তাদের বাড়িটা উড়িয়ে দিতো।তবু ওই দিশিকা নামক সন্দেহ বোমকে বিয়ে করতো না পিয়াস।দিশিকা হলো পিয়াসের ফুপির ছোট মেয়ে।বর্তমান তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’তে অনার্সে পড়েন।মেয়েটা ভীষণ মিশুক আর চঞ্চল হলেও অল্পতেই সন্দেহ করার জন্য গত তিনমাস আগে দুই বছরের সম্পর্কের ইতি টেনেছে পিয়াস।আর মনে মনে পণ করেছে ল’তে পড়ুয়া কোন মেয়ের সাথে প্রেম তো দূরে থাক তাদের আনাচে কানাচেও যাবে না।তার মতে ল’তে পড়ুয়া মেয়েরা তাদের বয়ফ্রেন্ডকে বিপক্ষ উকিল হিসেবে দেখে। আর বিয়ের পরে নিজেকে জর্জ আর স্বামীকে কাঠগড়ায় দাড়ানো আসামি হিসেবে দেখে।এখন তার নিজেকে ফাঁসির আসামি মনে হচ্ছে।

গিরগিটি গুলোই নিশ্চয় এই ঐতিহাসিক ঘটনার পেছনে রয়েছে।জেনে শুনে এই সন্দেহ বোমকে তার গলায় ঝুলিয়েছে।বন্ধু গুলো না হয় তার বাঁশ দিলো কিন্তু তার ভাই, নিজের একমাত্র আপন ভাই এভাবে মীর জাফরি করলো?একবার শুধু হাতে পাক ওর মীর জাফরি ছুটাবে।ভেবে রেগে আশেপাশে তাকিয়ে সামিরকে খুজতে লাগে।কিন্তু দূর দূর পর্যন্ত সামির কী? গিরগিটি গুলোর চুলও খুঁজে পেল না পিয়াস। রেগে হতাশ হয়ে সামনে তাকাতেই দিশিকা ফট করে গালে চুমু একে দেয়।পিয়াস হতবাক হয়ে আশেপাশে সবার দিকে তাকালো কেউ দেখেছে কিনা?

প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে পেটে দুহাত চেপে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে পুতুল।আশেপাশে তাকিয়ে শ্রেয়াকে খুজছে।আন্টি টা বার বার এই শ্রেয়া আপুকে নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে।বিরক্তিতে তার এখন এখানে বসেই কাঁদতে ইচ্ছে করছে।গায়ে জড়ানো নীল সিল্কের শাড়িটাকে পৃথিবীর সবথেকে ভয়ংকর ড্রেস মনে হচ্ছে পুতুলের।মাম্মার সাদা রংয়ের পিউর জামদানী টা একবার পড়ে ছিল সে।তখনই তার শাড়ি নামক ড্রেসটাকে ডিজগাস্টিং মনে হয়েছিল।আজও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে।
কিন্তু কোন উপায় নেই, সূর্য তার জন্য এই সিল্ক শাড়ির সাথে ভেলভেটের মেরুন রংয়ের ঢিলা ব্লাউজ এনেছে।আর সেই ঢিলা ব্লাউজ টাই শ্রেয়া আপু পিন দিয়ে সেটআপ করে শাড়ি টা পড়িয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।এদিকে ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা শেষে আর কিছু খাওয়া হয়নি।এখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চলেছে, বিয়ের ব্যস্ততায় সবাই হয়তো খেতেও ভুলে গেছে।শাড়ি পড়ে অনেকক্ষণ ক্ষুধা পেটে বসে থেকে শ্রেয়াকে খুজতে বের হয় পুতুল।কিন্তু বিপত্তি বাধে বারান্দা পর্যন্ত আসতেই তার মনে হচ্ছে শাড়িটা খুলে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে হাতের কাছে বেল্ট পেলে ঝট করে কোমড়ে বেল্ট টা সেট করে নিতো।কিন্তু এখানে কী করে পাবে?এসব ভাবনার মাঝেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপ করে বারান্দার হাপ ওয়ালে ঝুকে পড়ে যায় পুতুল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here