এক মুঠো গোলাপ পর্ব ৩৩

এক মুঠো গোলাপ
sinin tasnim sara
৩৩
_______
ঘনঘন নাক টানার শব্দে ঘুম ভাঙলো তৌহিদের। লেপের নিচ থেকে মাথা বের করে দেখলো তার বউ জানালার কার্ণিশে মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর কিছুক্ষণ পর পর নাক টানছে।
রাতদুপুরে বউয়ের কান্নার সঠিক কারণ আন্দাজ করতে পারলো না তৌহিদ। ঠান্ডা উপেক্ষা করে লেপ ঠেলে উঠে বসলো। দু হাতে চোখ ঘষে হামি তুলে নিজেকে স্বাভাবিক করে কোমল কণ্ঠে বউকে জিজ্ঞেস করলো_
— কাঁদে কেন আমার বউটা?
তৌহিদের গলার স্বর পেয়েও হেলদোল হলো না রাফনিদের৷ স্রেফ কান্নার গতিটাই বাড়লো।
ব্যাপারটা সিরিয়াস মনে হলো তৌহিদের। বিছানা থেকে নেমে রাফনিদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আলতো করে হাতটা কাঁধে রাখতেই ও ঝটকা মেরে সরিয়ে দিলো তৌহিদের হাত।
এহেন আচরণে হতভম্ব হয়ে গেলো তৌহিদ। চোখমুখ কুঁচকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো_
— হোয়াট হ্যাপেন্ড রাফনিদ? এমন অদ্ভুত আচরণ করছো কেন!
রাফনিদ সে কথার জবাব দিলো না। চোখের পানি মুছে ঘুরে তাকালো। কাঠকাঠ গলায় বললো_
— আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
— স্যরি? বুঝলাম না।
ধাক্কামত খেলো তৌহিদ।
— স্পষ্ট বাংলা ভাষায়ই তো বললাম। না বোঝার কি আছে এতে।
— রাফনিদ রাত সাড়ে তিনটে বাজে। ঠান্ডায় জমে যাওয়ার মত অবস্থা। আর এত রাতে রসিকতা শুরু করেছো তুমি?
— তোমার কি আমায় দেখে মনে হচ্ছে আমি রসিকতা করছি?
— আমার বউটার কি হয়েছে আজকে হু? কেন এত রেগে আছে সে।
রাফনিদের দু গাল আজলা ভরে নিয়ে আহ্লাদী স্বরে বললো তৌহিদ। রাফনিদ পুনরায় ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পূর্বের চাইতেও কঠিন গলায় অনেকটা চিল্লিয়ে বললো_
— এত আহ্লাদ ভালো লাগছে না আমার। কি বলেছি আমি? ডিভোর্স চাইছি না। তুমি এই মুহুর্তে আমাকে ডিভোর্স দেবে।
রাফনিদের চিৎকার এবার তৌহিদকেও রাগিয়ে দিলো। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফট করে চেপে ধরলো রাফনিদের চোয়াল । দ্বিগুণ চিৎকারে বললো_
— এ্যাই মাঝরাতে কিসের ভং ধরেছিস তুই? ডিভোর্স ডিভোর্স বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিস! আর একবার ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করে দ্যাখ জিভ ছিঁড়ে ফেলবো একদম। বেয়াদব মাথা খারাপ মেয়ে কোথাকার। বিয়েশাদি তোর কাছে ছেলেখেলা মনে হয়! মন চাইলো বিয়ে করলাম, মন চাইলো ডিভোর্স দিয়ে দিলাম। কেন রে কিসের অভাব রেখেছি আমি তোর। তোকে ভরণপোষণ দিতে পারছি না নাকি ভালোবাসায় ঘাটতি পড়েছে! সদা জীবনটা বের করে দিতে প্রস্তুত থাকি আর দু’দিন পর পর তোর নতুন নাটক শুরু হয়!
— হ্যাঁ শুরু হয়। নাটক দেখতে ভালো লাগে না তো ছেড়ে দাও আমাকে।
কাঁদতে কাঁদতে বললো রাফনিদ।
— আবার ছাড়াছাড়ির কথা!
কঠোর চোখে তাকায় তৌহিদ। রাফনিদ নিঃশব্দে কাঁদে। তৌহিদ ওর চোয়াল ছেড়ে দিয়ে একটানে কাছে নিয়ে আসে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় কামড় বসিয়ে দেয়।
— কেন এরকম করছো বলো তো?
নরম সুরে শুধায় রাফনিদকে।
রাফনিদ ওর পিঠ আঁকড়ে ধরে দু হাতে । কাঁধে মুখ গুঁজে শ্বাসরুদ্ধকর কান্নার মাঝে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে,
— আমার সব ফ্রেন্ডের দুটো তিনটে করে বেবী। সবাই তাদের স্বামীকে সন্তানসুখ দিতে পেরেছে। আমি তো পারছি না, কখনো পারবোও না। একটা অলক্ষ্মী বাঁজা মেয়ে মানুষের সাথে তুমি কেন থাকবে তৌহিদ?
“বাঁজা” শব্দটা একদম মস্তিষ্কে গিয়ে আঘাত করে তৌহিদের। চড়চড় করে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় । বজ্রমুষ্ঠিতে রাফনিদের হাত চেপে ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে প্রবল এক থাপ্পড় বসায়।
ছিঁটকে পড়ে রাফনিদ এক হাত দূরে। তৌহিদ ওর চুল খামচে ধরে টেনে তুলে মুখের সামনে ধরে রক্তলাল চোখে ধরা গলায় বলে,
— সন্তান তোর কাছে এতবড় রাফনিদ? আমার ভালোবাসার কোনোই মূল্য নেই! প্রতিনিয়ত ডিভোর্সের নাম নিয়ে, নিজেকে বাঁজা বলে, ইনসিকিউরড হয়ে আমার ভালোবাসাকে এভাবে অপমান করিস!
আমি আজ কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি রাফনিদ।
তুই ডিভোর্স চাস তো? ঠিকাছে তা-ই হবে। বংশধর নিয়ে তোদের সবার এত চিন্তা। তোকে ডিভোর্স দিয়ে একটা ফার্টিল মেয়েকেই বিয়ে করবো। ভাত ছড়ালে যেমন কাকের অভাব হয়না, তেমনই আমি তৌহিদ টাকা ছড়ালে মেয়ের অভাব হবে না।
বউ-বাচ্চা নিয়ে এবার তোদের সামনে দাঁড়াবে তৌহিদ। আই প্রমিস।
রাফনিদকে ছেড়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় তৌহিদ। যাওয়ার সময় ঘরের দরজায় গায়ের জোরে একটা লাত্থি বসায়।
রাফনিদ মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে। করতলে মুখ লুকিয়ে ব্যাকুল হয়ে কাঁদে। হাওয়াশূন্য নিস্তব্ধ রাত্রিতে প্রতিধ্বনিত হয় ওর কান্নার শব্দ।
,
এদিকে তৌহিদ আঁধার ছাপিয়ে পিচঢালা রাস্তায় হেঁটে চলে উদ্দেশ্যহীন। নিয়ন আলোগুলোও টিমটিম জ্বলতে জ্বলতে নিভে যায়। তৌহিদের কেবলই মনে হয় ওর জীবনের আলো গুলো এভাবেই নিভে যাচ্ছে একে একে।
রাগ-ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে। প্রগাঢ় নৈঃশব্দ্যতার দেয়াল ভেদ করে দূর দূরান্তে পৌঁছে যায় ওর আর্তচিৎকার।
হাঁটু মুড়ে বসে ও রাস্তার মাঝখানে। টপটপ করে অশ্রু ঝরে পড়ে চোখ থেকে। আপন মনেই বলে, “ যে জীবন কেবল ব্যর্থতায় ভরা সে জীবন রেখে কি লাভ? ”
__________
আনজুমান, নিধি সহ হাঁটতে বেরিয়েছে সুপ্ত। কিছুক্ষণ পর নিদ্রও জয়েন করলো ওদের সাথে। সুপ্ত দেখলো ওর কোলে ইউশা। ইউশাকে একদম জ্যাকেট, টুপি, জুতো হাতমোজা পরিয়ে প্যাকেট বানিয়ে ফেলেছে। কাপড়ের ভারে নড়চড়াই করতে পারছে না ইউশা। সুপ্তকে দেখে গোমড়া মুখে বললো _
— মামুণি আমাকে ফেলে এসেছিলে কেন?
— তুমি তো ঘুমুচ্ছিলে বাবা। আর বাইরে এত ঠান্ডা!
— ওহ্
সুপ্তর উত্তর শুনে চোখমুখের অন্ধকার ভাবটা ওর সরে গেলো। নিদ্রর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চুপচাপ রইলো আর কিছু বললো না।
নিধি ছেলের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার নীরবতা একদম ওর বাবা-র মতন। ইয়াদ কি পূণরায় ফিরে এসেছে ওর জীবনে ইউশা হয়ে?
,
আনজুমান নিদ্রর কোল থেকে ইউশা কে নিয়ে কিঞ্চিৎ হেসে বললেন,
— ইউশা কে নিয়ে এসে ভালোই করেছিস। আমরা এখন ওর ফেভরেট ডাল পরোটা খাবো। তাইনা দাদুভাই?
ইউশা ঘাড় কাত করে সম্মতি দিলো এবং আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে নিধির একটা আঙুল ধরে বললো,
— চলো জামান মামার দোকানে।
নিধি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো চলো।
হাঁটতে হাঁটতে একটুপর ইউশা সুপ্তরও তর্জনী চেপে ধরলো। দু মায়ের মাঝখানে হাঁটতে তার খুব ভালো লাগছে। নিজের ভালো লাগাটা যদিওবা প্রকাশ করলো না।
নিদ্র তার নানীর বাহু জড়িয়ে হাঁটছে। আনজুমান যেন বুঝতে পারলেন নাতী তাকে ধরেছে যাতে সে পড়ে টড়ে না যায়। নিমেষে মুখ কালো হয়ে গেল তার। থমথমে মুখে বললেন,
— তোর কি মনে হয় আমি বুড়ো হয়ে গিয়েছি হাঁটতেই পারবো না? এভাবে চেপে ধরেছিস কেন?
— আরে সুন্দরী কে বলেছে তুমি বুড়ো হয়েছো হু? বুড়ো হোক তোমার শত্রু। আমি তো তোমার হাত ধরেছি একটা কোম্পানির জন্য। দেখছো না আমার বউ ছেলে পেয়ে আমাকেই ভুলে গিয়েছে। একলা আমি, আমারও তো সাপোর্ট প্রয়োজন।
মন খারাপের ভান করে বললো নিদ্র। ওর বলার ভঙ্গিমায় আনজুমান হেসে ফেললেন। মাথা নেড়ে বললেন “পাগল একটা”
সুপ্তরা খানিক সামনে বলে ঠিকঠাক শুনতে পেলো না। তাছাড়াও দুই জা মিলে গল্পে মশগুল। এদিকে কান দেয়ার সময় আছে!
নিদ্র আশা করে ছিলো এমন পিঞ্চিং শুনে অন্তত ফিরে তাকাবে কিন্তু নাহ্ সেগুড়ে বালি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে নানীর সাথেই টুকটাক কথা চালিয়ে গেলো
,
সুপ্ত ইয়াদের ব্যাপারে শুনছে নিধির কাছে। ইয়াদ হলো নিধির একমাত্র ফুপির ছেলে। খুব কম বয়স থেকেই তাদের প্রণয়ের সম্পর্ক। দু পরিবারে জানাজানি হয় নিধির এসএসসির পর। নিধির মা সম্পর্কটা মানতে চান না। তার মতে আত্মীয়দের মধ্যে সুমুন্দি সম্পর্ক গড়তে নেই। এতে সম্পর্কও খারাপ হয় আবার বাচ্চাকাচ্চারও সমস্যা। শ্বশুরবাড়ির ফ্যামিলিতে যে সবাই মেনে নেয় তা-ও না। ইয়াদের বাবা মুদাসসির সাহেবই তো সম্পর্ক মানতে চান না। অনেক ঝামেলা হয়। ইয়াদ যেহেতু তখন এইচএসসিও কমপ্লিট করে ফেলেছে, তাই বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণে সে ছিলো না। মুদাসসির সাহেব বুঝে উঠতে পারছিলেন না কি করা যায়! পরে ওনার এক বন্ধু সাজেশন দিলেন ছেলেকে নেভীতে ট্রাই করতে বল। দূরেও থাকবে, ক্যারিয়ারও সেট হয়ে যাবে। বলা বাহুল্য ইয়াদ ভীষণ মেধাবী এবং লম্বা চওড়া, সুঠাম দেহের মানুষ ছিলো।
মুদাসসির সাহেব বন্ধুর সাজেশান শুনে ছেলেকে সেই সিদ্ধান্ত জানালেন কিন্তু ইয়াদ একদমই মানলো না বরং শাঁসালো নিধির থেকে দূরে পাঠালে ওকে নিয়েই পালিয়ে যাবে।
বড় মুশকিলে পড়ে গেলেন মুদাসসির সাহেব। মাথায় খেলছিল না কি করা যায়!
পরে তার মুশকিল আসান করে দিলেন ইয়াদের মা। সে ছেলেকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে, এটাসেটা বুঝিয়ে রাজি করালো।
চান্স পেলো ইয়াদ নেভীতে। চলে গেলো
নিধির থেকে দূরে। নিধি ভাবলো সম্পর্ক বোধহয় শেষ। ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়লো সে। কিন্তু কথায় আছে যার সাথে যার ভাগ্য জুড়ে থাকে, হাজার চেষ্টা করেও তাদের আলাদা করা যায় না৷
প্রথম ছুটিতে ইয়াদ ঠিকই ফিরলো তার কাছে। এক রাতে হুট করে এসে বলে,চল বিয়ে করবো। নিধি তো অবাক। রাত বিরেতে দুঃস্বপ্ন দেখছে নাকি! কিন্তু না দুঃস্বপ্ন ছিলো না। সে রাত তো তার জীবনের অন্যতম সুখ স্বপ্নের রাত ছিলো।
নিধির এখনো মনে আছে প্যাস্টেল গ্রীন কালারের একটা জর্জেট থ্রিপিস পরে তার বিয়ে হলো। অজানা ভয়ে কাঁপছিল নিধি। এতই ভয়ে ছিল যে মাথায় কাপড় অবধি দিতে ভুলে গিয়েছিল। ইয়াদই তার মাথায় সুন্দর করে ওড়না পরিয়ে দিলো,ভরসার হাত কাঁধে রাখলো। কাঁপতে কাঁপতে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করলো নিধি।
আশ্চর্যের ব্যাপার সাইন করা মাত্র তার সব ভয় গায়েব।
সে রাতের কথা মনে পড়লে সর্বদা একরাশ ভালো লাগার অনুভূতি ঘিরে ধরে নিধিকে।
সুপ্ত জিজ্ঞেস করলো_
— পরিবার থেকে মানলো কবে?
— ইউশা পেটে আসার পর। ওর বাবা-র সাথে লুকোচুরির সম্পর্ক চললো আরো ছয় বছর। ততদিনে আমিও অনার্স থার্ড ইয়ারে উঠে গিয়েছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে সম্বন্ধ আসছে।
আমার পুনরায় মনে ভয় বসে গেল। আমি ওর বাবার সাথে যোগাযোগ করার ট্রাই করলাম বাট পারছিলাম না। খুব প্রার্থনা করছিলাম। একদিন হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়ি। বান্ধবী সহ ডাক্তারের কাছে গিয়ে শুনি ইউশা পেটে। চারমাস হয়ে গেছে আমি বুঝতেই পারিনি। আসলে এত টেনশানে নিজের দিকে তাকানোর সময় পেতাম না।
ভয় পাইনি আমি। ঐদিনই বাসায় এসে সব জানিয়েছি। মারও খেয়েছিলাম অনেক।
আমার ছোটো চাচ্চু আবার আমায় খুব আদর করতেন। তিনি সবটা শুনে সেদিনই ইউশার দাদুকে খবর দিলেন। আমি আমাদের বিয়ের সব ডকুমেন্টস, সাক্ষী দেখালাম। আমার এই ছেলেটার জন্যই ও বাড়িতে ঠাঁই হলো আমার। কিন্তু মা-বাবা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ইউশার বাবা-র সাথে এর মাঝে দু একবার যোগাযোগ হয় কিন্তু জানাই নি বাবু সম্পর্কে।
ও বাসায় এসে আমায় এই অবস্থায় পেয়ে তো অবাক।
সেদিন প্রথম আমি ওর চোখে অশ্রু দেখি। আনন্দ অশ্রু।
বাবু ডেলিভারি হওয়ার দুদিন আগে ধুমধাম করে বিয়ে হয় আমাদের।
সংসারটা আমাদের খুব সুখের ছিলো জানোতো!
কিন্তু নিয়তি বড় নিষ্ঠুর। ইউশার দ্বিতীয় জন্মদিনে ওর বাবা কার আ্যাক্সিডেন্টে সারাজীবনের জন্য আমাদের থেকে হারিয়ে যায়।
এ পর্যায়ে থেমে যায় নিধি। কান্নায় গলা রোধ হয়ে আসছে। সুপ্ত ওর কাঁধে একটা হাত রাখে। নিধি আর্দ্র গলায় বলে,
— জানো? ওর লাশটা চোখে দেখার মতন ছিলো না। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না আমার ইয়াদ আর নেই।
স্টিল ও বাড়িতে গেলে আমার মনে হয় ইয়াদকে দেখতে পাচ্ছি। বাতাসে ইয়াদের শরীরের গন্ধ, ও আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। এমনটা অনুভূত হয় আমার।
— কেঁদো না ভাবি। স্ট্রং হও।
— হু স্ট্রং তো আমায় হতেই হবে। ছেলেটার জন্য।
— বড় মামা-মামী কবে মারা যান?
— ইয়াদের মৃত্যুর দু মাস পরেই। আমার জাস্ট মনে হচ্ছিল কোনো অভিশাপ লেগেছে আমাদের পরিবারে। মৃত্যুর খেলা শুরু হয়েছে।
বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে নিধির। সুপ্ত বুঝতে পারেনা কি বলবে। এমন ভয়ানক গল্প শুনে কি বলতে হয় ওর জানা নেই।
,
কথা বলতে বলতে যে হোটেলের কাছে চলে এসেছে বুঝতেই পারেনি ওরা।
ইউশার গলা পেয়ে পা থেমে যায়। ইয়াদ নিধির হাত ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে হোটেলের সিঁড়িতে ওঠে।
উল্লাসিত হয়ে ডাকে,
— মামা। জামান মামা দেখো কে এসেছে।
কিছুক্ষণ পর মাঝবয়সী একটা লোক বেরিয়ে আসে। দু হাত বাড়িয়ে জাপটে ধরে ইউশা কে।
— এদ্দিন পরে আইলা তুমি মামা? একা আসছো?
— নাহ্ মা, মামুণি সবাই আছে।
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেয় ইউশা।
নিধি সুপ্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
— এই হলো ইউশার জামান মামা। এনাদের হোটেলের খাবার অনেক সুস্বাদু। খেলে বুঝতে পারবে। চলো ভেতরে চলো।
ওদের পেছনে নিদ্ররাও এসে দাঁড়ায়। সুপ্ত এক পলক নিদ্রর দিকে তাকিয়ে আনজুমানের উদ্দেশ্যে বলে,
— নানী চলুন?
— হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।
সকলে একসাথে ভেতরে যায়। এর মাঝে আর নিদ্রর সাথে কথা হয়না সুপ্তর।
কেবল চোখে চোখে ইশারা হয়। নিদ্র ইশারাতেই বলে, ফেরবার পথে সুপ্ত যেন ওর সাথে যায়।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here