#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_15
#Writer_TanhaTonu
আরশি ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে।হেঁটে যেতে ত্রিশ/পয়ঁত্রিশ মিনিটের মতো লাগে।কিছুদূর হেঁটে আসতেই আরশির মনে হলো কেউ ওর পিঁছনে আছে।আরশি পিছনে তাকাতেই ভ্রু কুচকে ফেলল।সিদ্রাতের কার আরশির পিছনে।আরশি একটু উঁকি দিয়ে দেখল সিদ্রাত আরশির দিকে তাকিয়ে আছে।আরশি কেমন যেনো অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে।কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছে না।সিদ্রাতও কার স্টার্ট দিচ্ছে না।আরশি কিছুক্ষণ ভেবে কারের দরজায় টোকা দিলো।সিদ্রাত গম্ভীর মুখ করেই দরজা খুলে দিলো।আরশি কিছুটা অস্বস্তি নিয়েই ভিতরে ঢুকে বসল।সিদ্রাত সাথে সাথে কার স্টার্ট দিলো।তবে খুবই স্লোলি চালাচ্ছে।আরশি হাতের আঙুল কচলাচ্ছে।কারণ সিদ্রাত একদমই চুপ।আরশি ওর পাশে বসে আছে অথচ ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কার চালাচ্ছে যা আরশির জন্য খুবই অস্বস্তির ব্যাপার।নীরবতা ভেঙে আরশিই আমতা আমতা করে বলল…
—”স্যার আপনি,,কি রাগ করেছেন?”
সিদ্রাত কার চালাতে চালাতেই বলল…
—”রাগ করব কেন?আমি তোমার উপর রাগ করার কে?রাগ তো পরিবারের মানুষ বা কাছের মানুষরা করে”
আরশি নিজের বলা কথাতে নিজেই লজ্জায় পড়ে গেলো।ঠিকই তো..সিদ্রাত কেন রাগ করবে ওর উপর?সিদ্রাত ওর খুবই আপন কিন্তু ও তো আর না।হয়ত ওই মেয়েটা,,,
আরশি আর কিছু ভাবতে পারল না।বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল।কিছুক্ষণ পর সিদ্রাত মৃদু কন্ঠে বলল….
—”আমি তোমার ফ্যামলি মেম্বার না-ই হতে পারি।বাট কারে করে চলতে বলেছিলাম তোমার ভালোর জন্যই।তুমি তো শুনলেই না উলটো হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলে।একটা বিপদ হয়ে গেলে কেঁদেও লাভ হবে না”
“একটা বিপদ” কথাটা শুনে আরশির শরীরটা কেঁপে উঠল।কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল যা মনে পড়ল এখনো ইচ্ছে করে নিজের শরীরের চামড়াগুলো কেটে ফেলে দিতে..
আরশির চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই ও মুছে ফেলল।বিষয়টা সিদ্রাতের চোখ এড়ালো না।রাস্তার একপাশে সিদ্রাত কার থামিয়ে আরশির দিকে তাকালো আর বলল…
—”এইজ,জ্ঞান,এক্সপেরিয়েন্স সব দিক দিয়েই আমি তোমার থেকে বড়।যদি কোনো প্রবলেম থাকে তাহলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।সলভ করতে না পারলেও এডভাইস দিতে পারব”
আরশি নিচের দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ায়।সিদ্রাত জিজ্ঞাসা করে..
—”কি না?”
—”কোনো প্রবলেম নেই”
সিদ্রাত বুঝতে পারল আরশি ওকে বলতে চাচ্ছে না।তাই আর প্রেশার দিলো না বলার জন্য।বয়সই আর কতটুকু মেয়েটার…ওর সাথে এতোটা ম্যাচিউরিটি দেখানো হয়ত ঠিক হচ্ছে না…
সিদ্রাত আবারও কার স্টার্ট দিলো।বাসার সামনে থামতেই আরশি বের হয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসল।সিদ্রাত বুঝতে পারল কিছু একটা তো হয়েছে।বেশি না ভেবে রুমে চলে আসল।শাওয়ার নিয়ে লাঞ্চ করে মোবাইলটা নিতেই এফবিতে নিউজফিডে একটা পোস্ট সামনে এলো যা দেখে সিদ্রাত হেসে দিলো….
একটা পিকচার যেখানে আরশির মুখের আশেপাশে চকোলেটে ভরে গিয়েছে আর ওর কোলে ছোট্ট একটা বিড়াল ছানা।সেটারও একই অবস্থা..দুজনের কি ইনোসেন্ট ফেইস দেখাচ্ছে পিকে..একদম কিউটের ডিব্বা লাগছে।সিদ্রাত এটা দেখে হালকা হাসছিলো।তখনই মুন রুমে এসে ছো মেরে মোবাইলটা সিদ্রাতের হাত থেকে নিয়ে নেয়।সিদ্রাত চমকে গেলেও পরে মুনকে দেখে চোখ গরম করে তাকায়…
—”মুন ফোন দে..”
মুন আরশির পিকটা দেখে দুষ্টু হেসে বলল…
—”কী ব্যাপার ভাই?ছাত্রীর ছবি দেখছো যে?সামথিং সামথিং নাকি?হুম হুম?”
সিদ্রাত ভ্রু কুচকে বলল…
—”কি বলতে চাচ্ছিস?”
—”কি আবার?তুমি বুঝনা বুঝি?ভেরি সিম্পল..স্যার যখন ছাত্রীর প্রেমে হাবুডুবু”
—”মুউউনন..বাজে বকবি না।এসব ফালতু চিন্তা-ভাবনা তোদের মাথায়ই আসে।টিচার-স্টুডেন্টের সম্পর্ক বুঝিস?একজন টিচার হয়ে ছাত্রীর সাথে..ইম্পসিবল!তোর ভাবনা তোর কাছে রেখে আমার ফোন দে”
মুন মুখ ফুলিয়ে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে চলে যেতে লাগল।আর বিড়বিড় করে বলল…
—”নিরামিষ!হুহ..”
আরশি বেডে কাত হয়ে শুয়ে ভাবছে অনেক কিছু।আজ যেনো ভাবনার জগতে পাড়ি জমিয়েছে মেয়েটা।ভাবনার সাথে দরদর করে ঘামও ঝরছে কপাল বেয়ে।সিদ্রাতের কথাগুলো আজ নতুন করে আবারও আরশির মনে ভয়ের সৃষ্টি করেছে…
—”সত্যিই কি তাহলে যেকোনো সময় যেকোনো বিপদে ঘটে যেতে পারে?কিন্তু আমি কি করব?কাকে বলব?কারে করে একা যাওয়ার সাহস যে আমার নেই।সেটা আর হবেও না।কিন্তু স্যার যা বলল তাও তো ঠিক।এভাবে রাস্তায় চলাফেরাও তো বিপজ্জনক! আমি যে স্যারকেও বলতে পারব না এই ব্যাপারে।তাহলে যে উনাকে পাওয়ার শেষ আশাটাও হারিয়ে যাবে আমার থেকে।একটা পুরুষ আর যাই হোক নিজের লাইফ পার্টনারের ব্যাপারে এরকম কিছু মেনে নিবে??..উফফ আর ভাবতে পারছি না”
আরশি মাথা চেপে ধরে কেঁদে দেয়।প্রয়োজনের চেয়েও অধিক টেনশন হচ্ছে ওর।মাথায় কিছু আসছেও না মেয়েটার..কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না…
~~~~~~~~
রাতে ছাদে বসে সবাই গল্প করছিলো।কারেন্ট চলে গিয়েছে অনেক্ষণ হলো।মূলত কারেন্টের সার্ভার আরশি আর সিদ্রাতদের নিজেদেরই।কিন্তু সার্ভারেই কি যেনো প্রবলেম হয়েছে।বিদ্যুতের লোকেরা কাজ করছে প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে।সিদ্রাতের বাবা আর আরশির বাবা দুটো বেতের চেয়ারে বসে বিজন্যাস নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছে।মুন বিল্ডিংয়ের অন্যান্য মেয়েদের সাথে গল্প করছে,সাজিদও বাচ্চাদের সাথে খেলছে।এর মাঝে আরশিই শুধু একা ছাদের একদম শেষ প্রান্তে রেলিং ধরে দূর আকাশে তাকিয়ে রয়েছে।মৃদু বাতাস শরীর মন দুটোই জুড়িয়ে দিচ্ছে।খারাপ লাগছে না পরিবেশটা।আর সিদ্রাত আরশির থেকে একটু দূরে একটা মাদুর বিছিয়ে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে বসে মোবাইল টিপছে।আরশি আড়চোখে একবার সিদ্রাতের দিকে তাকালো।তারপর ভাবল..
—”সিউর উনার শাকচুন্নি গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিং করছে…হুহ ঢং!ঢং দেখে আর বাঁচি না।আচ্ছা একবার দেখব কি এমন চ্যাট করে?হুম তাই করি…”
আরশি গুটি গুটি পায়ে একটু এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে যে সিদ্রাত কি করছে মোবাইলে।কিন্তু ডিস্টেন্স থাকায় ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না।তবে এটুকু বুঝেছে ও সত্যিই কারও সাথে চ্যাট করছে।আর এতেই আরশির কিউরিয়োসিটি আরও বেড়ে যায়।ও আরেকটু ঝুঁকে দাঁড়ায় কিন্তু সিদ্রাত বসে থাকায় ভালো করে দেখতে পারছে না।আর দুইপা সামনে গেলেই ভালো করে দেখা যেতো।কিন্তু এতে সিদ্রাত আরশিকে দেখে ফেলবে।আরশি রেলিংয়ে ভর দিয়ে আরেকটু ঝুঁকতেই ধপাশ করে সিদ্রাতের উপর পড়ে যায়।এরকম ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না।আরশি সিদ্রাতের টিশার্টটা খামচে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।এভাবে শরীরের উপর পড়ায় সিদ্রাত তাল সামলাতে না পেরে আরশির কোমর জড়িয়ে ধরে আরশিকে নিয়েই শুয়ে পড়ে ছাদের ফ্লোরে।দুজনেরই হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে।আরশির মাথাটা সিদ্রাতের বুক বরাবর থাকায় আরশি ভালো করেই সিদ্রাতের হৃদ ছন্দ শুনতে পারছে।আর সিদ্রাত তো অপলকভাবে তাকিয়ে আছে আরশির মুখ পানে।তাকিয়ে থাকতে থাকতেই সিদ্রাত একটা ঘোরের মাঝে চলে যায়।আরশির কোমড়টা আরও শক্ত ধরে আরশিকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ওভাবেই চিত হয়ে পড়ে থাকে ফ্লোরে।আরশির মনে তো একটা কথাই ঘুরছে……
~এই সময়(পথ) যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো..~
চলবে…
আগেই বলেছি আমার এক্সামের প্যারা আছে।তাই গল্প দিতে একটু প্রবলেম হবে।আশা করি সবাই বুঝবে