প্রাণের_চেয়েও_প্রিয় পর্ব ১৬

#প্রাণের_চেয়েও_প্রিয়
#Part_16
#Writer_TanhaTonu

আরশি সিদ্রাতের বুকের উপর আর সিদ্রাত আরশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।দুজনের কাছেই যেনো মূহুর্তটা থেমে গিয়েছে।যেনো দুজনই উপভোগ করছে সময়টা।আরশি তো মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপেও উঠছে সিদ্রাতের স্পর্শে।আর সিদ্রাতও এতো শক্ত করে আরশির কোমর ধরে রেখেছে যে আরশির মনে হচ্ছে হাতটা একদম মাংসের ভিতর চলে যাবে…

—”এহেম এহেম”
কারও গলা ঝাঁকার আওয়াজে আরশি আর সিদ্রাত দুজনই চমকে যায়।দুজনই ধরফরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মুন মিটিমিটি হাসছে।আরশি লজ্জায় দৌড়ে চলে গেলো।মুন দুষ্টু হেসে বলল…
—”কি ব্যাপার ভাই?আমার সামনে তো কত ডায়লগ মারলি আর এখন?বাহ কেমিস্ট্রি তো ভালোই জমেছে”

সিদ্রাত চোখ পাকিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো।মুন হেসে দিলো…
—”হুহ ঢং!আমিও দেখব তোরা কতদিন এভাবে লুকোচুরি করে যাস।একদিন তো ঠিকই দুটোই দুটোর সামনে ধরা খাবি।উফ আ’ম এক্সাইটেড..কবে যে ওরা দুজন দুজনের মনের কথা জানবে আর অবাক হয়ে যাবে”

মুন হেসে আবারও আরেকদিকে চলে গেলো।কারেন্ট কখন ঠিক হবে কেউ জানে না।আরশি রুমে এসে বেডে শুয়ে কাঁপছে অনবরত।একটু আগের ঘটনা মনে পড়তেই মুখ জুড়ে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ছে।ও সিদ্রাতের এতোটা কাছাকাছি গিয়েছে ভাবতেই শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।আরশি লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে দুহাত দিয়ে…

সিদ্রাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টি ওর আরশির বারান্দার দিকে।কেন যেনো মনে হচ্ছে আরশিও আসবে বারান্দায়..
কারেন্ট না থাকলেও রাস্তার ল্যাম্পস্টের আলোয়ই পুরো বারান্দা আলোকিত হয়ে আছে।বুঝার উপায় নেই যে কারেন্ট নেই।
কয়েক মিনিট পর সত্যি সত্যিই আরশি বারান্দায় আসে।সিদ্রাতকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরশি হকচকিয়ে যায়।এত তাড়াতাড়ি সিদ্রাতের সামনে পড়ায় আরশি লজ্জায় মরে যাচ্ছে।দৌড়ে রুমে চলে যেতে নিলে সিদ্রাতের ডাকে থেমে যায়…

—”আরশি দাঁড়াও..”

আরশি ঠোঁট কামড়ে ধরে সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।সিদ্রাত বলে…
—”সরি…তখনকার জন্য”

আরশি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।ও সিদ্রাতের উপর পড়ে গিয়েছিলো কিন্তু এখানে তো সিদ্রাতের দোষ নেই।তাহলে সরি বলল কেন ও?নাকি কোমরে হাত দিয়েছে তাই?উফফ কোমরে সিদ্রাতের হাতের স্পর্শের কথা মনে পড়তেই আরশির পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে ঝেঁকে উঠে।সিদ্রাত মুচকি হাসে এটা দেখে।আরশিও সিদ্রাতের দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে।তারপর দুজনের মাঝেই নীরবতা।কেউই বুঝতে পারছে না কি বলবে।কিছুক্ষণ পর আরশিই বলল…

—”স্যার কিছু বলবেন?”

সিদ্রাত মৃদু হেসে না সূচক মাথা নাড়ায়।তারপর দুজনই আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।বারান্দা দুটো ভিন্ন হলেও আরশির ভালো লাগছে একই সময় দুজন এই নীরব রাতে দাঁড়িয়ে তারা দেখছে।মাঝে দূরত্ব থাকলেও আরশির মনে হচ্ছে দুজন অনেক কাছাকাছি।আরশি ভাবছে কবে যে সে দিন আসবে যেদিন আরশি সিদ্রাতের বুকে মাথা রেখে তারা গুনব আর সিদ্রাত মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবে তার প্রিয়ার মুখপানে।এসব ভেবে আরশি নিজে নিজেই মুচকি মুচকি হাসছে যা সিদ্রাতের চোখ এড়ায়না।সিদ্রাতও হালকা হাসে।এর মাঝেই কারেন্ট চলে আসে।
আরশির মুখটা ছোট হয়ে যায়।সময়টা তো ভালোই ছিলো।দুজন একসাথে দাঁড়িয়ে ছিলো।এখন তো চলে যেতে হবে…
সিদ্রাত বলল…
—”তাহলে আর কী?রুমে যাও।গিয়ে পড়াশুনা করে ঘুমিয়ে পড়ো”

আরশি ছোট্ট করে বলল..
—”জ্বি”
আরশি মন খারাপ করে চলে এলো রুমে।সিদ্রাতও একটা হামি দিয়ে রুমে চলে আসল…

আরশি রমে বসে বায়োলজি পড়ছিলো।নবম অধ্যায়ের তরুণাস্থিটা একদমই বুঝতে পারছে না।হয়ত প্র‍্যাক্টিকেলি ভিডিওতে দেখতে পারলে ভালো বুঝত।আরশি এসব ভেবে মোবাইলটা নিয়ে ইউটিউবে সার্চ করল “স্ট্রাকচার অফ কন্ড্রিও”লিখে।কিন্তু সব ইংলিশ ভিডিও আসল যা আরশি অনেকটা বুঝলেও ভালো করে বুঝতে পারল না।এরপর কন্ড্রিও’র জায়গায় বইয়ের ভাষায় কার্টিলেজ লিখল।তাতেও খুব একটা লাভ হলো না।আধা ঘন্টা লাগিয়ে খুঁজেও আরশি ভালো কোনো ভিডিও না পেয়ে একদম রেগে ফায়ার।এর মাঝেই ওর আম্মু আসল রুমে খাওয়ার জন্য ডাকতে…

—” কিরে খাওয়া-দাওয়া কি করবি না নাকি?চল খেতে”

আরশি রেগে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল…
—”কথা বলবা না আমার সাথে।কত করে বললাম বায়োলজিটা ইমরান স্যারের কাছে পড়ি।শুধু ক্লাসে পড়ে হচ্ছে না।কিন্তু তুমি দিলেই না।দেখো এখন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না”

আরশির আম্মুও হালকা রাগ হওয়ার ভান করে বলল…
—”পরীক্ষায় তুই ফেইল করলেও আমি ইমরানের কাছে তোকে পড়তে দিবো না।তারপর বায়োলজি পড়তে গিয়ে কেমিস্ট্রি শুরু করে দে”

আরশি হতাশ চোখে তাকিয়ে বলল…
—”আম্মু আমি কি উনাকে সে চোখে দেখি?”
—”তুই দেখস না কিন্তু সে তো বাসায় বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে।অন্য কোনো স্যার থাকলে বল।আমার কোনো আপত্তি নেই”
—”আর স্যার কোথায়?তুমি খোঁজ নিয়ে একজন ভালো বায়োলজির টিচার বের করো।অনেক জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাইভেট পড়াটা”

আরশির আম্মু সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে কি যেনো ভাবতে ভাবতে চলে গেলো।আরশিও দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডিনার করে আসল।তারপর বায়োলজি ছাড়া অন্য সাবজেক্টের পড়াগুলো পড়ে সব গুছিয়ে রাখল।টাইম দেখল দশ মিনিট বাকি এগারোটার।ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে একটা প্লাজো আর হোয়াইট কালার একদম পাতলা ঢিলেঢালা লেডিস শার্ট পড়ে নিলো।আরশি এসব পড়েই ঘুমায়।এতেই ও কম্ফোর্টেবল ফিল করে
লাইট অফ করে মাত্র বিছানায় শুয়েছে আরশি তখনই দরজায় নক পড়ল।বিরক্তি নিয়ে উঠে ডিম লাইটটা জ্বালাতেই দেখল ওর রিডিং টেবিলে সাজিদের বাংলা বই।বিড়বিড় করে বলল…

—”অসভ্য পোলা!প্রায় একই কাজ করে।প্রতিটাদিন বই রেখে যাবে আর আমার ঘুমানোর সময় যত ডিস্টার্ব!কুত্তা ”

আরশি বইটা নিয়ে দরজা খুলতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সিদ্রাত আরশির দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলল নিচের দিকে আর মৃদু কন্ঠে বলল…
—”ওড়না ছাড়া এভাবে পরপুরুষের সামনে আসা ঠিক না”

আরশির মাথায় যেনো বাজ পড়ল।নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মরে যেতে মন চাইছে।দৌড়ে বেড থেকে উড়নাটা নিয়ে শরীরে ভালো করে জড়িয়ে নিলো।ও কি জানত এই টাইমে সিদ্রাত আসবে।প্রচুর লজ্জা লাগছে।সিদ্রাত নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠেই জিজ্ঞাসা করল…
—”আসব?”
আরশি লাইট অন করেই আসতে বলল।সিদ্রাত বেডের উপর পা ঝুলিয়ে বসল।আরশি লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।সিদ্রাত জিজ্ঞাসা করল…
—”আন্টি বলল তোমার নাকি বায়োলজিতে কি সমস্যা হচ্ছে।কই দেখি”

আরশি মাথা নাড়িয়ে বইটা বের করে টেবিলে বসল।সিদ্রাতও পাশে বসে বুঝিয়ে দিতে লাগল।আরশির প্রচুর লজ্জা লাগছে সিদ্রাতের সামনে বসে থাকতে।আড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখল সিদ্রাতের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।আরশির লজ্জা আরও বেড়ে গেলো।যতই হোক সে তো পুরুষ..এভাবে উড়না ছাড়া ভাবতেই আরশির শরীর কেঁপে উঠছে।আরশি কোনো রকম নিজেকে সামলে পড়ায় মন দিলো। সিদ্রাত এতো সুন্দর করে বুঝিয়েছে যে আরশি একদম অবাক হয়ে গিয়েছে।আরশি তো জিজ্ঞাস করেই ফেলল…
—”স্যার আপনি না ম্যাথের টিচার।বায়োলজি এতো ভালো করে বুঝালেন কীভাবে?”

সিদ্রাত মৃদু হেসে বলল…
—”ম্যাথের টিচার হওয়ার আগে আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট।তার থেকেও ইম্পোর্টেন্ট কথা আমি ম্যাথে মাস্টার্স করার পর এক বছর ভৌত বিজ্ঞানের উপরও মাস্টার্স করেছি”

আরশি অবাক হয়ে বলল…
—”তার মানে আপনি ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতেও একদম টপার নাকি”
সিদ্রাত হালকা হেসে বলল…
—”হুম আমার স্কোর কিন্তু ১০ এ ১০ই ছিলো..গ্রেড পয়েন্টও ৪ঃ০০ ছিলো আউট অফ ৪ঃ০০ এ”

আরশি সিদ্রাতের কথায় অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।সিদ্রাত আরশির অবস্থা বুঝতে পেরে হাসল।তারপর নিজেই বলল…
—”আর কোনো প্রবলেম আছে?”

আরশি ডানে বামে মাথা নাড়াল।সিদ্রাত বলল…
—”ওকে ঘুমাও তাহলে।অনেক রাত হয়েছে”
—”আচ্ছা..গুড নাইট স্যার”
—”হুম গুড নাইট”

সিদ্রাত একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলো।আরশি দরজা লাগিয়ে ইয়াহুউ বিলে চিল্লিয়ে উঠল…
—”উফফ আরশি তুই কি লাকি!তোর ফিউচার বর তো সব কিছুতেই এক্সপার্ট।উফফ যখন আমাদের বিয়ে হবে তখন আমি প্রাউড ফিল করে বলতে পারব আমার সিদ্রু ইজ বেস্ট..”

আরশি এটা বলে হাসল।পরক্ষণেই মলিন হয়ে গেলো মুখটা…
—”আরশি অতি আশা ভালো না।আমাদের বিয়ে কীভাবে হবে?উনার মনে তো আমায় নিয়ে কিছু নেই।না থাকাটাই স্বাভাবিক।আর আমাদের ফেইমলি তো এরকম কিছু হয়ত ভাবতেও পারে না..হায়াহ আল্লাহ ভরসা!”

আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।ঘুমানোর আগে প্রতিদিনের মতো সিদ্রাতের একটা পিক ওপেন করে ওটাতে ডিপলি কিস দেয়।তারপর মোবাইলের ডিসপ্লেটা সেটিংস থেকে নেভার স্লিপ করে সিদ্রাতের পিকটা ওপেন করে বুকের মাঝে রেখে দেয়।এটা আরশি প্রতিদিনই করে।এতে ওর ফিল হয় সিদ্রাত ওর বুকে শুয়ে আছে।আরশি ব্লাশিং হতে হতেই প্রতিদিন এভাবে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়।আজও তাই হলো
কিন্তু এতে প্রতিদিনই ঘুম থেকে উঠে দেখে মোবাইলের চার্জ ১৫% এর নিচে।কিন্তু তাতে কী?সিদ্রাতের থেকে তো অন্যকিছু ইম্পোর্টেন্ট না।মাঝে মাঝে আরশি নিজেই হাসে নিজের এই পাগলামো দেখে। প্রেমে পড়লে বুঝি এমন পাগলামিই করে সবাই বিশেষ করে যদি তা হয় কিশোর মন…

চলবে…

গল্পটা কী বোরিং হয়ে যাচ্ছে?অথবা ভালো হচ্ছে না?আমি বুঝতে পারছি না কিছু..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here