প্রেমাসক্তি পর্ব ৪

#প্রেমাসক্তি
#পর্ব__০৪
#অদ্রিতা_জান্নাত

কিছুক্ষন এভাবে থেকে পাশে তাকিয়ে দেখি ইশান তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ ওনার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ালাম ৷ তবুও কোন রেসপন্স করছেন না দেখে ধাক্কা দিয়ে জোরে বললাম,,,,,,

ইশিতা : এই আজিব এভাবে কি দেখছেন?

ইশান চমকে উঠে বললেন,,,,,,,

ইশান : কী কী?

ইশিতা : কোন জগতে গিয়েছিলেন বলুন তো ৷ এভাবে কেন দাঁড়িয়ে আছেন এখানে?

ইশান : আমি দাঁড়ালে তোমার কি সমস্যা?

ইশিতা : অনেক সমস্যা ৷ একদম আমার পিছে পিছে ঘুরবেন না আপনি ৷

ইশান : আমার আর কাজ নেই না? যে তোমার পিছে পিছে ঘুরবো ৷

ইশিতা : বাহিরে যাবো কখন সেটা বলুন ৷

ইশান : দুপুরে খেয়ে বেরোবো ৷

ইশিতা : এতো পরে?

ইশান : পরে কই? ১২ টা বাজে আর দেড় ঘন্টার মতো আছে ৷ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ৷

আমি আর কিছু না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম ৷ তারপর খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পরলাম ৷

আবার জীপে করে যেতে হবে এবার ৷ দুজনেই উঠে বসলাম ৷ আমি আশেপাশে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,

ইশিতা : কোথায় যাবো?

ইশান ফোন টিপতে টিপতে বললেন,,,,,,

ইশান : শৈলপ্রপাত ৷

আমি একটু ভ্রু কুচকে হেসে বললাম,,,,,,

ইশতি : শৈলপ্রপাত? সত্যি?

ইশান : তো কি মিথ্যা বলবো?

ইশিতা : না ৷ বাট ফোনে কি করছেন আপনি? এতো ফোন টিপেন কেন?

ইশান : আমার ফোন আমি টিপবো তাতে তোমার কি?

ইশিতা : আমার আবার কি? হুহ!

প্রায় অনেকক্ষন পর ওরা এসে নামলো শৈলপ্রপাতে । শৈলপ্রপাতের পানি বয়ে যাচ্ছে অনেক নিচে দিয়ে । উপর থেকে দেখা যাচ্ছে সেই পানি । ইশিতা হা করে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষন ৷ তারপর খুশির ঠেলায় সেখানেই লাফালাফি শুরু করে দিলো । ও ইশানকে ধাক্কিয়ে বলতে লাগল,,,,,

ইশিতা : ওয়াও কতো সুন্দর এতো সুন্দর…? এত্তো সুন্দর কীভাবে?

ইশান : হুম এবার আসো । আর সাবধানে পা ফেলবা ৷ ওইখানে গিয়ে কিন্তু একদম লাফালাফি করবা না । পাথরগুলো অনেক পিচ্ছিল একবার পিছলে গেলে সর্বনাশ । আর পাথরগুলো অনেক ধারালোও । কেটে যাবে কিন্তু তাই দেখে শুনে পা ফেলবা ।

ইশিতা : আচ্ছা আচ্ছা । চলুন তো এখন । একটু কাছে গিয়ে দেখি ৷ চলুন না ৷

ইশান আর কোনো কথা না বলে ইশিতার হাত ধরে আস্তে আস্তে শৈলপ্রপাতের কাছে নিয়ে গেলো । ওখানে গিয়ে ইশিতা হা হয়ে চারপাশে তাকাতে লাগল । কি সুন্দর করে পানি একটার পর একটা পাথর বেয়ে বেয়ে চলে যাচ্ছে । কি স্বচ্ছ সেই পানি । আশেপাশে একটু উঁচু উঁচু পাহাড়, গাছ আর মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে এই শৈলপ্রপাত । এক কথায় দেখতে অসাধারণ লাগছে ৷ ইশিতা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সব কিছু ৷

ইশান ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে । ইশিতা আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে বারবার আর সেই পানি ইশানের চোখে, মুখে ছিটকে আসছে ৷ ইশিতা এবার পানির মধ্যে জোরে জোরে হাত ঝাপটাতে লাগল আর খিলখিল করে হেসে উঠলো । ইশান মুগ্ধ নয়নে সেই হাসির দিকে এক মনে তাকিয়ে রইলো ।

পানির শব্দে ইশানের হুশ ফিরলো ৷ সামনে তাকিয়ে দেখে ইশিতা পা দিয়ে পানি ছিটাচ্ছে আর হাসছে । সেটা দেখে ইশান আস্তে করে বললো,,,,,,,

ইশান : এরকম করো না পড়ে যাবা কিন্তু ।

এদিকে ইশিতার কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না ও ওর মতো পা দিয়ে পানি নাড়াচ্ছে । ও নিজেই আজ নিজের মধ্যে নেই ৷ সব কিছু গুলিয়ে ফেলছে ৷ ইশিতার কোনো উত্তর না পেয়ে ইশান সামনে এগিয়ে গেলো ৷

এর মধ্যেই হঠাৎ করে ইশিতার পা পিছলে গেলো । ইশান তাড়াতাড়ি করে ইশিতার কাছে গিয়ে ওর হাত টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো ৷ কিছু সময়ের জন্য ইশান প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল । হার্ট বিট এতো টাই বেড়ে গিয়েছে যেন এখানই বেরিয়ে আসবে ৷ রাগে চোখ, মুখ শক্ত করে ইশিতার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশিতা ফুপিয়ে কেঁদে দিলো ।

ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও অনেক ৷ আবার পায়েও ব্যাথা পেয়েছে ৷ ইশান এতো জোরে টান দেয়ায় হাতেও ব্যথা পেয়েছে ৷ ইশান ইশিতার চোখে পানি দেখে আর কিছু বলতে পারলো না ৷ ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,

ইশান : বললাম এরকম করো না ৷ আমার কথা তো শুনলে না ৷ কোথায় ব্যথা পেয়েছো?

ইশিতা : আপনার জন্য আমি হাতে ব্যথা পেয়েছি ৷ (ঠোঁট উল্টে বললো)

ইশান ইশিতার হাত তুলে দেখলো হাতটা লাল হয়ে গিয়েছে ৷ খামচির দাগও বসে গেছে ৷ সেটা দেখে বললো,,,,,,

ইশান : সরি ৷ খেয়াল করি নি ৷ চলো একটু বসবে ৷

বলেই ইশিতাকে ধরে নিয়ে যেতে নিলেই ও আবার ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো ৷ ইশান বলতে লাগল,,,,,,,

ইশান : ককী হয়েছে?

ইশিতা : ওহ আম্মু…

বলে আবারো কেঁদে দিলো ৷ ইশান হা করে তাকিয়ে রইল ৷ এতো বড় মেয়ে এভাবে কাঁদে? ব্যাপারটা অবিশ্বাস্যকর ৷ ইশান ইশিতাকে কোলে করে নিয়ে একটা পাথরের উপর বসিয়ে দিল ৷ তারপর বললো,,,,,,,,

ইশান : তুমি এখানে একটু বসো ৷ আমি জিপ থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসি ৷

বলেই একপ্রকার দৌঁড়ে গেল আবার দৌঁড়ে চলে এলো ৷ তারপর সেখান থেকে মলম বের করে আমার হাতে লাগিয়ে দিল ৷ পায়ে হাত দিতে গেলে আমি বলতে লাগলাম,,,,,

ইশিতা : ফার্স্ট এইড বক্স কোথায় পেলেন?

ইশান : এগুলা জিপে রাখা থাকে সব সময় ৷ ওখান থেকেই নিয়ে এসেছি আমি ৷ এবার দাও পা এদিকে দাও ৷

ইশিতা : আমাকে দিন আমি লাগিয়ে নিচ্ছি ৷

ইশান : পা কি ছিলে গেছে নাকি মচকে গেছে নাকি কেটে গেছে কোনটা?

ইশিতা : জানিনা ৷

ইশান : তাহলে সেটা তো আমাকেই দেখতে হবে নাকি?

ইশিতা : আপনি কি ডাক্তার যে আপনি দেখবেন?

ইশান : ডাক্তারি বিষয়ে একটু হলেও জানা আছে আমার ৷ এখন চুপ থাক আর কাজ করতে দাও ৷

বলেই আমার ডান পা ওনার হাটুর উপরে নিয়ে নিলেন ৷ পায়ের নিচটা একটু কেটে গেছে আর উপরের দিকে হালকা ছিলে গেছে ৷ ইশান সেভলনযুক্ত তুলা নিয়ে আমার পায়ে চেপে ধরলেন ৷ ব্যথায় চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম ৷ হাত দিয়ে ইশানকে খামচে ধরলাম ৷ ইশান আমার দিকে একবার তাকিয়ে পা ব্যান্ডেজ করে দিলেন ৷ তারপর নিচ থেকে উঠে আমার পাশে বসে বলতে লাগলেন,,,,,,,

ইশান : না করেছিলাম কিন্তু শোনো নি ৷ এখন কষ্টটা কার হচ্ছে আমার নাকি তোমার?

ইশিতা : আপনার!

ইশান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল ইশিতার দিকে ৷ ইশিতা আমতা আমতা করে আবার বললো,,,,,

ইশিতা : না মানে আপনি যেভাবে ব্যান্ডেজ করে দিলেন ৷ মনে হচ্ছিলো ব্যাথাটা আপনি পেয়েছেন তাই আর কি?

ইশান : ও রিয়ালি? তাহলে ব্যথার জন্য কাঁদলো কে?

ইশিতা : আমি কেঁদেছি তাতে আপনার কি? সরুন তো ৷

বলেই উঠতে গেলে পায়ে হাত দিয়ে ‘আহ’ করে বসে পরলাম ৷ ইশান আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলতে লাগলেন,,,,,,

ইশান : হুম ৷ ওঠো ওঠো ৷ কে কষ্ট পেয়েছে বা ব্যথা পাচ্ছে বুঝতে পারবা ৷

ইশিতা : এই আপনি না…আপনি না একটা অসহ্যকর লোক ৷

ইশান : এখন সারাদিন কি এই হাত পা কেটে এখানেই বসে থাকবে? নাকি রিসোর্টে ফিরবে কোনটা?

ইশিতা : মাত্রই তো আসলাম আর মাত্রই চলে যাবো?

ইশান : ০৬ টা বাজে ৷ দুই ঘন্টার মতো আছি এখানে আর তুমি বলছো মাত্র?

ইশিতা : এ্যাঁ? ৫ মিনিটও গেল না সেখানে দুই ঘন্টা হয়ে গেল?

ইশান : হ্যাঁ এবার ওঠো যেতে হবে নাহলে আবার রাত হয়ে যাবে ৷

ইশিতা : আরেকটু থাকি ৷

ইশান : আর একটুও না ৷ চলো ৷

বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন ৷ কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে ৷ ইশানের মাথার চুল বাতাসের কারণে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার ৷ হাত বারিয়ে সেই এলোমেলো চুলকে আরো এলোমেলো করে দিলাম ৷ ইশান অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে ৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম,,,,,,

ইশিতা : এএএভাবে তাকানোর কি হলো? আআপনি আমাকে কোলে নিতে পারলে আমি আপনার চুল ধরতে পারবো না?

ইশান ইশিতার কথা শুনে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মাথা নামিয়ে ইশিতার মুখের কাছে নিয়ে বললো,,,,,

ইশান : নাও ধরো ৷

আমি ওনার চুল আরো এলোমেলো করে দিয়ে হেসে দিলাম ৷ ইশান হেসে বললো,,,,,

ইশান : হয়েছে?

ইশিতা : হুম এবার তাড়াতাড়ি চলুন ৷

__________________

আমাকে রুমে বসিয়ে রেখে ইশান রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ কিছু বললেন না আর বলতেও দিলেন না ৷ একটু পর হাতে একটা প্লেট আর প্যাকেট নিয়ে রুমে আসলেন ৷ আমার পাশে বসে বলতে লাগলেন,,,,,,,,

ইশান : হুম হা করো ৷

অবাক হয়ে বললাম,,,,,,,,

ইশিতা : মানে?

ইশান : খেয়ে ওষুধ খেতে হবে ৷ তাই বলছি হা করতে ৷ হা করো ৷

বলেই মুখের সামনে খাবার ধরলেন ৷

ইশিতা : আআমি খেয়ে নিচ্ছি দিন ৷

ইশান : তোমার হাতে ব্যথা তো ৷

ইশিতা : তাতে কি? অল্পই তো ৷ আমাকে দিন আমি খেয়ে নিচ্ছি ৷

ইশান : নিজে থেকে হা করবা? নাকি জোর করে করাতে হবে কোনটা? (ধমকে)

ইশিতা : আমি…

ইশান : হা করো ৷

আমি আর কিছু বললাম না ৷ ইশান চুপচাপ খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলেন ৷ পাশের টেবিলে প্লেট রেখে বলতে লাগলেন,,,,,,,,

ইশিতা : ঘুমিয়ে পরো ৷ ভালো লাগবে ৷ আমি ফ্রেশ হয়ে অাসছি ৷

বলেই উঠে চলে গেলেন ৷ আমি শুয়ে চোখ বুঝে নিলাম ৷ কোথাও হাত ধরে নিয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরা, আবার হঠাৎ কোলে নেওয়া, তারপর নিজের হাতে খাওয়ানো এগুলা কি শুধুই কেয়ারিং নাকি অন্যকিছু? আমি কি ওনার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছি? না না সেটা হলে তো হবে না ৷ ওনার মনে আমার জন্য কোনো জায়গা না থাকলে আমি কেন রাখবো? কেন ওনার কথা ভাববো? ভালোবাসি কি? দুদিনে কি আদো ভালোবাসা হয়? সবই ভুল ৷ তুই ভুল চিন্তা করছিস ইশিতা ৷ এসব কিছুই হবার না, হতে পারে না ৷

_________

ইশান মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলো ৷ ইশিতার দিকে তাকিয়ে দেখে ও ঘুমিয়ে গেছে ৷ ওর ঘুমন্ত চেহারাটা দেখে মুচকি হাসলো ৷ রুমের লাইট অফ করে ওর পাশে গিয়ে বসে পরলো ৷ ইশিতার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে লাগল,,,,,,,,,

“জানি না কেন তোমাকে দেখলে নিজেকে এমন অসস্থির মনে হয়? কেন এতো এলোমেলো লাগে নিজেকে? তোমার হাসি দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না জানো? ইচ্ছা করে হালকা ভাবে ছুঁয়ে দি তোমায় ৷ আজ যখন পরে যাচ্ছিলে তখন একটুর জন্য মনে হয়েছিল হারিয়ে ফেলবো তোমায় ৷ যখন নিজেই তোমাকে ব্যথা দিয়েছি তখন নিজেকেই শেষ করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছিল ৷ কেন এরকম হচ্ছে জানো? হয়তো ভালোবাসি তোমায় ৷ হ্যাঁ ভালোবেসে ফেলেছি আমি ৷ জানিনা তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না? তবে আমি তো ভালোবাসি ৷ এই কয়দিনেই তুমি আমার নেশায় পরিণত হয়ে গিয়েছো ৷ থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া ৷ খুব ভালোবেসে ফেলেছি যে!!”

ওর কথার মাঝেই ইশিতা হালকা নড়েচড়ে উঠলো ৷ ইশান কম্বলটা ওর গায়ে টেনে দিয়ে কিছুক্ষন ওকে দেখে উঠে পরলো ৷ পাশ থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় চলে গেল ৷ সোফায় শুয়ে নিজের এক হাতে মাথা রেখে ঘুমন্ত ইশিতার দিকে গভীর ভাবে চেয়ে রইল৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here