#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই
#পর্ব-০৫
#লেখনী-সুরাইয়া ইসলাম সানজি
,
আয়াতদের আগে থেকেই হোটেল বুক করা ছিলো। পাশাপাশি দুটো রুম একটা আয়াত অন্যটায় আলাইনা।
আলাইনা তার রুমের ভিতরে ডুকতেই একটু অবার হয়, পাশাপাশি দুটো রুম হলেও দুটো রুমের ভিতরে একটা দরজা আছে। দরজার ওপাশের রুমটা আয়াতের।
আলাইনা দরজা টোকা দিতেই দরজা খুলে যায়। দরজার ওপাশে দুটো মানুষকে একসাথে দেখে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছেনা আলাইনা।
আয়াত আর ন্যান্সি এক সাথে বসে আছে। ন্যান্সির গায়ে হাটু পর্যন্ত একটা ছোট নাইটি। আয়াত দূরত্ব নিয়ে বসে থাকলেও আয়াতের একটা হাত ন্যান্সির দু হাতের মাঝে।
আচমকা দরজা খুলতে আয়াত আর ন্যান্সি দরজার দিকে তাকিয়ে আলাইনাকে দেখতে পায়।
ন্যান্সি রেগে আলইনাকে বলে- “আর ইউ ডাফার, কারো রুমে ডুকতে হলে নক করতে হয় এ টুকু সামান্য জ্ঞান কি তোমার নেই। এতো রাতে কি চাই হ্যাঁ ইডিয়েট।”
,
আলাইনা মুচকি হেসে বলে- “সরি ম্যাম আপনারা হয়তো ভুলে দরজা আটকাতে ভুলে গেছেন। আমি নক করাতেই খুলে গেছে দুঃখিত ম্যাম। গুড নাইট।”
,
,
আলাইনা দরজা আস্তে করে বন্ধ করে চলে আসে, চোখ থেকে কয়ক ফোটা পানি পরে, আচ্ছা সে কেনো কাঁদছে? তার তো কষ্ট পাবার কথা ছিলো না সে তো কষ্ট দিতে এসেছে। কিন্তু ন্যান্সির সাথে আয়াতকে দেখে তবে তার কেনো কষ্ট হচ্ছে? আচ্ছা এতো রাতেও বা ন্যান্সি আয়াতের সাথে কেনো কিসের এতো সম্পর্ক?
______________________________
সকাল সকাল আলাইনা তৈরি হয়ে বসে আছে, চুলগুলো উচু করে ঝুটি ব্যাথা, ঠোটে হালকা ম্যাড লিপস্টিক। গায়ে কালো কালারের লেডিস সার্ট আর জিন্স। সব মিলিয়ে অসাধারণ সুন্দর।
মূলত সকাল সকাল এভাবে তৈরী হওয়া কারন আয়াত কালকেই বলে দিছে আজ সকালে যেনো তাড়াতাড়ি রেডি থাকে।
,
,
আলাইনার রুমের দরজায় নক করতেই দরজা খুলে আয়াতকে সমানে দেখে। আয়াত আলাইনার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়।
“আচ্ছা এ মেয়ে কি প্রতিজ্ঞা করে নিছি তার সব রুপেই আমাকে ঘায়েল করতেই হবে”
আলাইনা আয়াতের চোখের দিকে তাকাতে দেখে আয়াতের চোখে অপরাধবোধ ফুটে। আচ্ছা এ আপরাধ বোধের কারন কি কালকের রাত?
—“স্যার আম রেডি”
আয়াত আলাইনার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে কিছু না বলে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। আলাইনাও জিঙ্গেস না করে আয়াতকে অনুসরণ করে সামনের দিকে পা বাড়ায়।
______________________________
একটা ক্যাফে বসে আছে আয়াত, আলাইনা, ন্যান্সি আর কিছু লোক। সবাই সবার কাজের বিষয়ে বর্ণনা দিচ্ছে আর আয়াত সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
কিছুখন পর ন্যান্সি ওঠে আলাইনার কানের কাছে কিছু বলতেই আলাইনা ওঠে চলে যায়।
আয়াত কাজের কারনে আলাইনা কখন গেলো এটা দেখি নাই। কিছুখন পর সবাই চলে গেলে আয়াত পাশের চেয়ারে তাকাতে দেখলো আলাইনা নেই।চারপাশে চোখ বুলিয়ে আলাইনাকে খুজতে থাকে।
,
,
এদিকে জ্ঞান ফিরতেই একটা অন্ধকার রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে আলাইনা। ওঠে চারপাশে বাহিরের দরজা খুজতে থাকে। তখন কিছু লোকের আওয়াজ শুনতে পায় হয়তো তারা রুমের ভিতরেই আসছে।
আলাইনা তারাতাড়ি করে একটা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পরে, লোকগুলো কি বলছে আলাইনা বুঝতে না পারলে এটা বুঝতে পারছে তাকেই খুজছে। একটা লোক ফোন করে কাউকে কিছু বলছে।
আচ্ছা তারা কি ভুল করে তাকে কিডন্যাপ করেছে সে তো তাদের চিনেনা বা কারো কোনো কিছুও করেনি। ন্যান্সির কথা মতো সবার জন্য খাবারের অর্ডার দিতে গেছিলো তখনই কিছু লোক এসে মুখে রুমাল চেপে অজ্ঞান করে এখানে নিয়ে এসে। তবে যাই হোক এখন এখান থেকে পালাতে হবে, আলাইনা চুপচাপ পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে।
,
লোকগুলো তড়িঘড়ি করে বাহিরে আলাইনাকে খুজতে চলে যায় সেই সুযোগে আলাইনা বাহিরে চলে আসে।
,
,
এদিকে আয়াত আলাইনাকে অস্থির হয়ে খুজতে থাকে, নিজের কিছুলোক ক্যাফের চারদিকে খুজতে পাঠিয়ে দেয়।
—আয়াত এতো অস্থির হচ্ছো কেনো। হয়তো কোথাও গেছে চলে আসবে আর তাছাড়া বাহিরের একটা মেয়ের জন্য এতো অস্থির হওয়ার দরকার কি?
—ওহহ ন্যান্সি চুপ করো তো, কাকে বাহিরের মেয়ে বলছো। ওহ আমার খুব কাছের। অচেনা একটা জায়গা কোথায় গেলে হারিয়ে গেলে তখন নিজেকে আমি কি জবাব দিবো। ওর কিছু হলে আমি কি করে বেঁচে থাকবো?
আয়াত ন্যান্সিকে রেখেই গাড়ি নিয়ে চলে যায়। ন্যান্সি দৌড়ে আয়াতের গাড়ির কাছে আসলেও আয়াত না দেখেই একা চলে যায়। ন্যান্সি রাগে ফুসে ওঠে।
হঠাৎ ন্যান্সির ফোনে ফোন আসে।
—“এতোগুলো লোক একটা মেয়েকে ধরে দেখে রাখতে পারো না তাহলে আর কি পারো ইডিয়েটের দল। যাও ভালো করে বাহিরে খুজো পালিয়ে গেলো বেশি দূর আর যাবে কই। আমি আসছি।”
,
,
আলাইনা বাহিরে চলে আসে পাশের একটা শপিংমলে ভিতরে গিয়ে আয়াত কে ফোন করে, ভয়ে কান্নার জন্য ঠিক মতো কথাও বলতে পারছেনা। আয়াত বার কোথায় আছে জানতে চাইলেও আলাইনা বলতে পারনা পরে আয়াতের কথা মতো কোনো রকমের লোকেশন চালু করে।
কিছুখন পর আয়াতকে শপিংমলে ডুকতে দেখেই কিছু না ভেবে দৌড়ে গিয়ে আলাইনা আয়াতকে জড়িয়ে ধরে।
আয়াতের মনে হচ্ছে এতোখনে দেহে প্রান ফিরে পেয়েছে।
______________________________
কালকে ফিরে যাবে বাংলাদেশে সাথে ন্যান্সিও যাবে।
মিটিংয়ে ডিলটা তারাই পাইছে। আজ ন্যান্সির কোম্পানির সাথে একটা ছোট মিটিং শেষ করে কালই চলে যাবে।
এর মাঝে বেশ কয়েক বার ন্যান্সি আলাইনাকে আঘাত করার চেষ্টা করছে কিন্তু প্রতিবারই আয়াত আলাইনাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। যদিও আয়াতকে এখন পর্যন্ত সব গুলোকে এক্সিডেন্ট বলে ভেবে নিয়েছে।
,
,
ন্যান্সির অফিসে বসে সবাই কথা বলছিলো। কথার এক পর্যায়ে আয়াত ফাইল খুলে কিছু একটা খুজতে থাকে, না পেয়ে আলাইনা কে বলে-
—“আমাদের গাড়ির ভিতর একটা ব্লু কালারের আরজেন্ট ফাইল ফেলে এসেছি। এখনি ফাইলটা নিয়ে আসুন মিস আলাইনা।”
আলাইনা চলে যাওয়ার পর আবার কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরে আয়াত।
হঠাৎ বিকট আওয়াজে সবার ধ্যান ভাঙে। দৌড়ে অফিস রুমের বাহিরে বের হয়ে আসে আয়াত। অফিসের কয়েকজন স্টাফদের কাছে জিঙ্গেস করলে তারা বলে লিফট নষ্ট হয়ে গেছে, সব কিছু ভেঙ্গে গিয়ে আগুন ধরেছে লিফলেট ভিতর।
আয়াত মনে মনে বার বার প্রার্থনা করছে এই লিফটে যেনো আলাইনা না থাকে। দৌড়ে সাত তলা থেকে নিচে নামে আয়াত ইতিমধ্যে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের লোক এসে গেছে।
আয়াত চারদিকে আলাইনাকে খুজছে।
লিফটের ভিতরে সাতজন মানুষ ছিলো তাদের ভিতরে ৫ জন ছেলে আর দু জন মেয়ে। সবাই মারা গেছে। মেয়ে দুজনের ভিতর একজন মাঝ বয়সি আর একটা মেয়ে অল্প বয়সি।
সবাইকে মেজের উপর শুইয়ে রেখে ওপরে সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে দিয়েছে। কাপড়ের পাশ দিয়ে একটা হাতের কিছু অংশ বের হয়ে আছে লাল জামা পড়া একটা মেয়ের হাত।
আজ সকালে আলাইনা লাল জামা পড়েছিলো, ভাবতেই আয়াতের কলিজা কেপে ওঠে
আয়াতের দুনিয়া ধমকে যায়, ধুম করে সেখানেই বসে পরে। চোখ থেকে আজ অঝোরে জল পরছে।
আগোছালো ভাবে আয়াত সেদিকে এগিয়ে।
,
,
চলবে,,,,