14+15
#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:14
মাহির নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।যে কথাটা শোনার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছে ওর ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে আজ তা পূরণ হয়েছে।তাও মাহিরের কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে তাই আবার সারা কে জিজ্ঞাসা করছে।
.
মাহির : কি আবার বলো।( উত্তেজিত হয়ে )
.
সারা মুচকি হেসে মাহিরের গালে একটা চুমু দিয়ে আবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
.
সারা : ভালোবাসি প্রিয়।
.
মাহির খুশিতে কি করবে ভেবে পায়না। সারা কে কোলে নিয়ে সমস্ত বাড়ি ঘুরতে থাকে। সারা অনেকবার বলেছে ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।সারার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে শশুর,শাশুড়ি,ননদের সামনে বরের কোলে করে ঘুরে বেড়াতে।মাহি তো সারা কে খেপানো শুরু করে দিয়েছে। সারা মাহি র সাথে না পেরে লজ্জায় মাহির কে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজে থাকে।মাহিরের মামনি, বাবাই ছেলেমেয়েদের খুনসুটি দেখে হাসতে হাসতে তাদের রুমে চলে যায়। মাহির সারা কে নিয়ে ছাদে চলে যায়। সারা কে দোলনায় বসিয়ে মাহির সারার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। সারা আস্তে আস্তে মাহিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করে।
.
সারা : এখানে নিয়ে এলে যে ডিনার করবে না? চলো ডিনার করে নিবে।
.
মাহির সারার এক হাত দিয়ে হাতের মধ্যে নিয়ে একটা চুমু দিয়ে হাতটা বুকের সাথে চেপে ধরে বলে।
.
মাহির : পরে খাবো। তুমি বলতে পারো তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল কোথায়?
.
সারা : আমাদের বিয়ের সময় বোধহয়।
.
মাহির : না আরো এক বছর আগে তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে।
.
সারা : কি? কিভাবে?( অবাক হয়ে )
.
মাহির : বলছি! তোমাদের আগের কলেজে ইন্টারে থাকা কালীন একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল না।
.
সারা : হ্যা মনে পড়েছে। আমি আর মিথিলা কালো রঙের শাড়ি পড়েছিলাম। আর রাজও আমাদের সাথে মেস করে পাঞ্জাবির পরেছিল। কিন্তু তুমি একথা জানলে কি করে?
.
মাহির : তোমাদের কলেজের অনুষ্ঠানে ছয় মাস আগে লেখাপড়া শেষ দেশে ফিরি।এক দুই মাস বন্ধু বান্ধব আড্ডা এসব নিয়ে ছিলাম। একদিন বাবাই বলে আমার বয়স হয়েছে এবার তুমি তোমার বিজনেস বুঝে নেও। আমি আর অমত করিনি। একদিন না একদিন আমাকেই তো সব সামলাতে হবে।তাই বাবাই কথা রাখতে মন দিয়ে বিজনেস করতে শুরু করি।ব্যস্তায় দিন ভালোই কাটছিল।সাড়ে চার মাসের মধ্যে দেশের প্রথম পাঁচ জনের বিজনেস ম্যান মধ্যে আমিও একজন হয়ে যাই। আমার এই সাফল্যে বাবাই খুব খুশি হয়। এরমধ্যে তোমাদের কলেজে থেকে বাবাই কে ইনভাইট করা অনুষ্ঠানে জন্য। বাবাই কাজ পড়ে যাওয়ায় বাবাই না গিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। আমার কলেজ লাইফে এসব অনুষ্ঠানে কখনো এটেন করেনি আমার কাছে এগুলো বিরক্তর বিষয়। একরাশ বিরক্তি নিয়ে যাই অনুষ্ঠানে।যে যার মত পারফরমেন্স করছে। আমার এসব ভালো লাগছিলো না বলে নিজ মনে ফোন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। হঠাৎ একটা মিষ্টি কন্ঠ আমার কানে এসে লাগে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি স্টেজে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পরনে ছিলো কালো শাড়ি। অসম্ভব সুন্দর লাগছিল মেয়েটাকে। চোখ সরানো যাচ্ছিলো না। বারবার চোখ ঘুরে ফিরে ওর উপরে ই পড়তো। মেয়েটা খুব সুন্দর গান গাইছিল।””মম জিবনও যৌবনও,
মম আঁখিলো ভবনও, তুমি ভরিবে গৌরবে।
নিশি দিনের সময়, ” জানো গানটা এখনো আমার কানে বাজে। বলতে গেলে আমি ঐ মেয়েটাকে দেখে ক্রাশ খাই।ঐ ছিলো আমার জীবনের প্রথম ক্রাশ।ঐদিনের মত অনুষ্ঠান শেষে করে বাড়িতে চলে আসি। গানটা শুনে আমার মনটা খুব ভালো। না চাইতেও ঐ মেয়েটার মুখ বারবার ভেসে ওঠে। নিজের কেমন জেনো পাগল পাগল মনে হতো। অনেক কষ্টে নিজেকে দুই দিন সামলে রাখি। পরেরদিন নিজের সাথে আর না পেরে কলেজে যাই লুকিয়ে আমার ক্রাশকে এক নজর দেখার জন্য।ওর হাসি মুখটা দেখে অফিসে চলে যাই। এরপর থেকে প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে ওর হাসি মুখটা দেখে যাই। ওকে একদিন না দেখে অফিসে গেলে আমার কোনো কাজে মন বসতো না। এভাবে কিছু মাস কেটে যায় তখন ও আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। একদিন আমি কলেজে গিয়ে আমি ওকে পাই না। মনে করেছি কোনো কারনে আজ কলেজে আসেনি। কিন্তু এভাবে সাতদিন চলে যায় ওর খবর পাইনা।ওর যে দুই বন্ধু ছিলো ওদের কোনো খোঁজ নেই। আমি আমার লোক লাগিয়ে দিয়েছি ওদের খোঁজার জন্য কিন্তু ওদের কোনো ভাবেই পাচ্ছিলাম না। আমার তখন পাগল পাগল অবস্থা। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছি। ততদিনে আমি বুঝে গেছি আমি আমার ক্রাশকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ফেলেছি। বাবাই আর মামনি আমার এই পরিবর্তন দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে যায়।তারা আমার কাছে জিজ্ঞেস করলে আমি প্রথম থেকে সব বলে দেই। বাবাই বলে আর দুই এক দিন দেখতে এরমধ্যে ওর কোনো খবর না পেলে বাবাই খোঁজার চেষ্টা করবে। মামনি আর বাবাই আমাকে অনেক বুঝায় ওর কিছু হয়নি তবুও আমার মন যে মানতে চায় না। ঐদিন দুপুরে আমার লোকরা খবর পায় ওর।ও ওর বন্ধুদের নিয়ে গ্ৰামে গেছে, ফোনে সিগন্যাল না থাকায় ওকে ফোনে কেউ পায়নি। আমার লোকরা আরো বলে ওরা কাল সকালে ই ঢাকা চলে আসবে। আমার কাছে তখন এক এক সেকেন্ড এক এক বছর মনে হতো। আমি আর দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাই ওকে এক নজর দেখার জন্য। শেষ বিকেলে আমি গিয়ে পৌছাই ওদের গ্ৰামে। গিয়ে দেখি আমার নাওয়া খাওয়া ঘুম সব কেরে নিলে,ম্যাডাম দুই বন্ধুর সাথে ঝগড়া করেছে কার গাছ থেকে আম চুরি করে এনে।সূর্য অস্ত গেলে পাখিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজ গৃহে ফেরার জন্য,ওরাও ঠিক তেমনি সূর্য অস্ত হবার পর নিজ গৃহে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি বিষন্ন মন নিয়ে ওর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকি আর এক নজর দেখার আসায় কিন্তু সে রাতে ভাগ্য আমার সাথ দেয়নি।রাত নয়টা বাড়িতে ফিরে সোজা বাবাই মামনি কে বলে দেই। আমি আমার ক্রাশকে বিয়ে করতে চাই যেকোনো মূল্যে। বাবাই আর মামনি অমত করেনি। আমি আমার ক্রাশের সব ডিটেলস বাবাই কে দিয়ে দেই। ঘটনা চক্রে আমার ক্রাশের বাবা আমার বাবাই অনেক পুরনো বিজনেস পার্টনার।বাবাই আঙ্কেল কে আমার বেপারে সব বলে কিন্তু তিনি তার মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে রাজি না। আমি আঙ্কেল কে অনেক বুঝানোর পর তিনি রাজি হয়। তিনি আমাকে শর্ত দেন বিয়ের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমার ক্রাশের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারবো না। আমি তার শর্ত মেনে নেই। কিন্তু প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে ওর হাসি মুখটা একবার দেখে যেতাম। আমার ক্রাশের অজান্তেই আমার দুজন লোক ওকে ফলো করতো। ও কোনো সমস্যায় পড়লে বা কেউ ডিস্টার্ব ওর অজান্তেই আমি সমস্যা সমাধান করে দিতাম। ওকে দূর থেকে দেখে খুব ইচ্ছে করতো ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার মনের কথা খুলে বলি। কিন্তু আমি যে ওর বাবার কাছে ওয়াদা বদ্ধ ছিলাম।দিন যায় মাস যায় দেখতে দেখতে ওর পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়। বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আমার ক্রাশের সাথে আমার বিয়ে হয়। আমার ভালোবাসা মানুষকে নিজের করে পেয়ে খুশি মনে বাসর ঘরে যাই। গিয়ে দেখি ও কান্না করছে। মনে এক অজানা ভয় বাসা বাঁধে। ওকি বিয়েতে রাজি ছিলো না না কি ওর ভালোবাসার মানুষ আছে? আমার সব ভাবনা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বলে ও লেখাপড়া করতে চেয়েছিলো।ও একজন বড় ডাক্তার হতে চেয়েছিলো।ওর কথা শুনে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। আমিও সিদ্ধান্ত নেই ওর ইচ্ছে আমি পূরন করবো। আমার #ক্রাশ_ডাক্তার_বউ বলে কথা।( মুচকি হেসে )
.
সারার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি মাহিরের গালে আছড়ে পড়ে। মাহির হন্তদন্ত হয়ে সারার কোল থেকে উঠে সারার চোখ মুছে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে।
.
মাহির : কি হয়েছে বউ তুমি কান্না করছো কেনো?
.
সারা : —- ( সারা কোনো কথা বলছে না মাহির কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিচ্ছে। )
.
মাহির : ও বউ তুমি আমার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছো? সরি বউ আর কখনো বলবো না।প্লিজ তুমি কান্না করো না।
.
সারা : আমি এরজন্য কান্না করছি না।( কান্না করতে করতে )
.
মাহির : তাহলে?
.
সারা : তুমি আমাকে এত ভালবাসো। আর আমি কি না এতদিন না জেনে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।( কান্না করতে করতে )
.
মাহির : পাগলি বউ আমার তুমি জানতে ই না এসব কথা। এবার কান্না থামাও।( চোখ মুছে দিয়ে )
.
সারা : হুম।( হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে )
.
মাহির : জানো বউ আমি আজ খুব খুশি। আমার #ক্রাশ_ডাক্তার_বউ নিজে বলেছে ও আমাকে ভালোবাসে।আজ আমি খুব খুশি।খুব।
.
সারা : আচ্ছা পাগল চলো ডিনার করে নিবে। তারপর না হয় আবার গল্প করবো।( মুচকি হেসে )
.
মাহির : তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে?( বাচ্চাদের মত করে )
.
সারা : আচ্ছা চলো দিবো খাইয়ে।
To be continue…🍁
#ক্রাশ_ডাক্তার_বউ
#Writer_Sarjin_Islam [সারজীন]
#Part:15
সারা : আচ্ছা পাগল চলো ডিনার করে নিবে। তারপর না হয় আবার গল্প করবো।( মুচকি হেসে )
.
মাহির : তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে?( বাচ্চাদের মত করে )
.
সারা : আচ্ছা চলো দিবো খাইয়ে।
.
মাহির সারার ভালোবাসার দিনগুলো ভালই চলছিল। ছুটির দিনে মাহির বাড়িতে থাকলে সারা কে সারাদিন বিরক্ত করা, সারা কে হঠাৎ হঠাৎ সারপ্রাইজ দেওয়া, সারা কে মাঝ রাতে ঘুম থেকে তুলে লং ড্রাইভে চলে যাওয়া। সারা কলেজ পৌঁছে দেওয়া, নিয়ে আসা, সারা মাঝেমধ্যে মাহির কে ফোন করে কলেজে ডাকে, মাহির কখনো কখনো মিটিং ছেড়ে সারার কাছে চলে আসে। সারা নিজের সবটা দিয়ে মাহির কে ভালোবাসেছে।আর মাহির নিজের ভালোবাসা দিয়ে সারা কে আগলে রেখেছে। কিন্তু ওদের ভালোবাসায় কারো নজর লেগে যায়। ওদের জীবনের কালো অধ্যায় হয়ে আছে রিয়া আর রিয়ন। ওরা মাহিরের খালাতো ভাই বোন। রিয়া সেই কলেজ লাইফ থেকে দাবি করে ও মাহির কে ভালোবাসে। কয়েকবার প্রপোজ করে মাহির কে কিন্তু মাহির ওকে সব সময় নিজের ছোট বোনের মত দেখছে। হঠাৎ করে প্রেমিকা?তা কখনো সম্ভব নয়।তাই মাহির ওকে বারবার বোঝানো চেষ্টা করছে।আর রিয়ন ওর পরিচয় দিতে হলে এক কথায় বলতে হয়,ও মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা করে। ওদের মাকে এই বিষয়ে কেউ কিছু বললে গেলে তিনি বলেন এখনকার যুগে এসব কমন বেপার, এনিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু হয়নি। খান বাড়ির হল রুমে বসে গল্প করছে এরা তিনজন মামনির সাথে।মাহি এদের কে দুই চোখে দেখতে পারেনা। কাল রাতে মাহির সারা কে রাত দুইটা পর্যন্ত পড়ার টেবিলে বসিয়ে রেখেছিল। আর দুই মাস সারা দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। সকালে নামাজ পড়ে সারা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে মাহির সারা কে জোর করে নিয়ে শুয়ে পড়ে। সারা জানে এখন মাহির কে হাজার বকলেও মাহির ওকে ছাড়বে না।তাই সারা চুপ করে সময়টা উপভোগ করতে থাকে।মাহিরের বুকে মাথা রেখে ধুক ধুক শব্দ শুনতে থাকে। এই শব্দের সাথে খুব করে পরিচিত।বেলা আটার সারা মাহির কে ডেকে তুলে দুজনে ফ্রেশ হয়ে একসাথে নিচে নামে। রিয়া মাহির কে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরতে গেলে মাহির সারা কোমর টেনে নিজের সাথে জড়িত ধরে। সারা এই ঘটনায় বেশ ঘাবড়ে যায়।মাহি মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে।
.
মাহির : হেই রিয়া মিট মাই ওয়াইফ সারা! সারা খান! আমার জান। আমার কলিজা।সব কিছু।
.
রিয়ার রাগ সপ্তমে উঠে যায়। তবুও রাগ সামলে রেখে মাহিরের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে শুরু করে।
.
রিয়া : তোমাদের দুজনকে খুব ভালো মানিয়েছে।
.
এতক্ষন রিয়ন সারার সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত ছিলো।ওর লাইফে সারার মত কাউকে পায়নি। খুব খারাপ দৃষ্টিতে সারার দিকে তাকিয়ে আছে।সারার শাড়ি ভেদ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সারার পেটের দিকে। মাহির সেদিকে খেয়াল করে মাথায় রক্ত উঠে যায়। মাহির সারা কে আচমকা সবার সামনে কোলে তুলে নেয়। সারা ভয় পেয়ে মাহির কে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মাহিরের খালা এবিষয়ে কথা শুনতে ছাড়ে না।
.
খালা : কি রে মাহির সব কান্ড জ্ঞান কি হারিয়ে ফেলেছি। বড়দের সামনে কি শুধু করেছিস।
.
মাহির : না খালা তা কেনো হবে। আমি আমার বউকে ভালোবাসে এসব করি। এখানে তো কান্ড জ্ঞান হারানোর মত কিছু করিনি।
.
সারা : তুমি আমাকে কোলে থেকে নামিয়ে দেও।কি শুধু করেছো বড়দের সামনে?( আস্তে আস্তে বললো )
.
মাহির : চুপ আর একটাও কথা নয়।( ধমক দিয়ে ) এখন আমার সাথে ব্রেকফাস্ট করে তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নেও। আমার অফিস তাড়া আছে।
.
সারা মাহিরের ধমক খেয়ে চুপচাপ খেয়ে রেডী হয়ে নেয়। এরমধ্যে রিয়া অনেকবার মাহিরের সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। সারা রাগ করে মাহিরের সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। গাড়িতে দুজন চুপচাপ ছিলো। মাহির নিজ ভাবনায় মগ্ন ছিলো রিয়ারা হঠাৎ করে কেনো এলো এই নিয়ে। মাহির একটু নিরিবিলি জায়গায় দেখে গাড়ি থামিয়ে সারার হাত ধরে বলতে শুরু করে।
.
মাহির : বউ আমার কথা মন দিয়ে শোনো। আমার যে খালা বাড়িতে এসেছে উনি মোটেও সুবিধা লোক নয়। উনি চায় উনার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে কিন্তু আমি রিয়াকে সব বোনের চোখে দেখেছি।এসব নিয়ে কখনো ভাবিনি।আর ওর ভাই রিয়ন ছেলেটা অসম্ভব খারাপ। এইটুকু বয়সে ইতিমধ্যে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করে ফেলেছে।তাই ওদের থেকে তোমাকে সাবধানে থাকতে হবে। ওদের কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আমি বাড়িতে না থাকলে তুমি মাহি অথবা মামনির সাথে থাকবে। ওদের থেকে যতো পারো দূরে দূরে থাকবে।
.
সারা এতোক্ষণে বুঝতে পারলো তখন মাহিরের ধমক দেওয়ার কারণ। সারা মনে মনে খুব খুশি মাহির সারার কথা ভেবেই ওকে ধমক দিয়েছে। সারা কোনো কথা না বললে মাহির আবার বলে।
.
মাহির : আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছো?
.
সারা : তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার কোনো কথার অবাধ্য হবো না।
.
মাহির আর কথা না বাড়িয়ে সারা কে কলেজে নামিয়ে মাহির অফিসে চলে যায়।
.
দেখতে দেখতে সারার পরিক্ষা শেষ হয়ে যায়। এরমধ্যে রিয়া সারা কে অনেক ভাবে মাহিরের নামে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সারা ওদের ফাঁদে পা দেয়নি। কিন্তু মাহির সারা কে ইদানিং ভুল বুঝতে শুরু করে। কিন্তু কি কারনে তা সারা জানে না। এরমধ্যে সারা নিজের মধ্যে নতুন অস্তিত্বের সন্ধান পায়। সারা মা হতে চলেছে। সারা কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ থাকায় মিথিলাকে নিয়ে ওদের মেডিকেলে কিছু টেস্ট করায় তখন এ খবর জানতে পারে। সেদিন সারা মিথিলা কে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না করেছিল খুশি হয়ে। মিথিলা সারা কে বলে মাহির কে এখনি ফোন করে বলতে কিন্তু সারা বলে সামনের মাসে ওর জন্মদিন তখন ওকে সারপ্রাইজ দেবে। মিথিলা আর কিছু বলেনি। এরমধ্যে রাজ আর মিথিলার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ওরা রাঙ্গামাটি বেড়াতে চলে যায় কিছুদিনের জন্য। সারা এদিকে একলা হয়ে পড়ে, ওরা সারা কে ওদের সাথে বেড়াতে যেতে বলেছিল কিন্তু সারা রাজি হয়নি। সারা এখন শুধু দিন গুনছে মাহিরের জন্মদিনের। এদিকে মাহির সারা কে কিছুদিন যাবৎ ইগনোর করছে। সারা মনে করে মাহিরের বিজনেসে কোনো সমস্যা হয়েছে তাই সারা আর জিজ্ঞাসা করে নি। কিছুদিন পর সারা কলেজে কিছু কাজ পড়ে যাওয়ায় সারার আসতে রাত হয়ে যায়। সারা রাত আটটা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছে বেশ অবাক হয় কারণ সারার মাম্মা, পাপা, মাহির, মামনি, মাহি,মাহিরের খালা, রিয়া সবাই হল রুমে বসে আছে বেশ গম্ভীর হয়ে। সারা হল রুমে আসতে না আসতে সারার মাম্মা এসে সারা গালে থাপ্পড় মারে সবার সামনে। সারা ছলছল চোখে ওর মাম্মার দিকে তাকিয়ে আছে সারার গায়ে আজ পর্যন্ত কেউ হাত তুলেনি সেখানে ওর মাম্মা সবার সামনে সারা কে মারলো।সারার মাম্মা সেদিকে না তাকিয়ে বলতে শুরু করে।
.
মাম্মা : তোকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি? ঘরে স্বামী রেখে অন্য পুরুষের সাথে ছি!এসব বলতে আমার রুচিতে বাঁধছে।
.
সারা : মাম্মা কি বলছো এসব? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।( অবাক হয়ে )
.
মাম্মা : খবরদার তোর এই মুখে আমাকে মাম্মা বলে ডাকবি না।আজ থেকে আমি জানবো আমার একটাই মেয়ে আছে।আজ থেকে তুই আমার কাছে মৃত।
.
সারা : মাহির দেখো না মাম্মা কি বলছে। তুমি মাম্মা কে বোঝায় না।
.
মাহির কিছু ছবি আর একটা পেন ড্রাইভ সারার মুখের উপর ছুড়ে মেরে বলে।
.
মাহির : তোকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে ছিলাম এই তার প্রতিদান দিলি। আমি তোর কোন চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ রেখেছি যার কারণে অন্যের সাথে বিছানায় পর্যন্ত চলে গেলি।কি হলো চুপ করে আছিস কেনো বল।( চিৎকার করে বললো )
.
সারা একটা ছবি ফ্লোর থেকে তুলে দেখে রিয়ন আর সারার আপত্তিকর কিছু ছবি। সারা ছবি দেখে হতবাক হয়ে যায়। সারা চোখের পানি মুছে মাহিরের কাছে গিয়ে বলে।
.
সারা : মাহির এসব কিছু মিথ্যা। আমি এমন কিছু করিনি তুমি বিশ্বাস করো।
.
মাহির : তুই আমার কাছে আসিস না আমি অপবিত্র হয়ে যাবো। তুই একটা কলঙ্কিনী। তুই এখনি বেরিয়ে যায় আমার বাড়ি থেকে।তোর মুখ যেনো আমি আর কখনো না দেখি।( মাহির সারা কে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়।ফ্লোরে বারি খেতে সারার মাথার কিছুটা জায়গা কেটে যায়। সারা মাথায় হাত দিয়ে রক্ত দেখে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে মাহিরের সামনে গিয়ে বলে।)
.
সারা : নিজের ভালোবাসাকে বিশ্বাস না অন্যকে বিশ্বাস করেছো। এই তোমার ভালোবাসা? আমি নিজের হয়ে আর একটা কথাও বলবো না। তুমি এই দিনটার জন্য খুব আফসোস করবে মাহির খুব।
.
মাহির কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখে। সারা ওর মাম্মার সামনে গিয়ে বলে।
.
সারা : তুমি তো তোমার মেয়েকে চিনো।কি করতে পারে না পারে সবি তুমি জানো। তুমি এই ছবিগুলো দেখে আমাকে নষ্ট মেয়ে নামে উপাধি দিলে।( মুচকি হেসে ) চিন্তা করো না এই নষ্ট মেয়ের জন্য তোমাদের মান সম্মানের কোনো ক্ষতি হবে না। তুমি তো বলেই দিলে সারা নামে তোমার কোনো মেয়ে নেই।আর আমিও বলছি আমি এতিম।এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নেই। ভালো থেকো।
.
সারা মাহি আর মামনির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়।মাহি আর মামনি কান্না করছে।
.
সারা : তুমি কি বিশ্বাস করো আমি অপবিত্র?
.
মামনি সারা কে জড়িয়ে ধরে বলে।
.
মামনি : কোনো ফেরেস্তা এসে বললেও আমি বিশ্বাস করবো না আমার সারা মামনি অপবিত্র। কখনো একথা বলিস না।( কান্না করে )
.
সারা মামনি কে ছাড়িয়ে নিয়ে সারার নাকফুল, বিয়ের আংটি,গলার চেন সব খুলে মামনির হাতে দিয়ে বলে।
.
সারা : এগুলোর উপর আমার আর কোনো অধিকার নেই তাই ফিরিয়ে দিলাম।
.
সারা মাহি র কাছে গিয়ে বলে।
.
সারা : মাহি খুব ভালো করে লেখাপড়া করো কেমন আসি আমি।
.
মাহি সারা কে জড়িয়ে ধরলে সারা ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়। সারার পাপা মাথা নিচু করে বসে আছে। রিয়া আর খালার চোখে খুশির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। মাহির আর মাম্মা রেগে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সারা ওদের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত এক হাসি দিয়ে পা বাড়ায় অন্ধকার রাস্তায় দিকে।
To be continue…🍁