অনুভূতি_তোমায়_ঘিরে পর্ব ২

#অনুভূতি_তোমায়_ঘিরে
#পর্ব_২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনুঃখোদার কসম ওই আবির যদি আরেকবার আমার লগে লাগতে আসে এরে যে করমু এটা আল্লাহই জানেন৷
.
সামান্তাঃএদের একটা বিহিত করা দরকার৷
.
আরুহিঃরাইট৷ এরা যখন তখন যেখানে সেখানে আমাদের অপমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকে৷
.
ছোঁয়াঃআমার মনে হয় ওদের সাথে না লাগাটাই ব্যাটার৷
.
রিংকিঃআমারও এটাই মনে হয়৷
.
সামান্তাঃতা তোদের দু’জনের কেনো এটা মনে হচ্ছে৷
.
রিংকিঃওরা ছেলে আর আমরা মেয়ে তাই৷ ওদের সাথে আমরা পেরে উঠবোনা৷
.
অনুঃসেসব পড়ে ভাবা যাবে৷ চল ক্লাসে যাই৷ এমনিতেই পড়া শিখে আসিনি কোন মাইর অপেক্ষা করতেছে আল্লাহ্ মালুম৷
.
সামান্তাঃআজ ক্লাস করবোনা৷
.
আরুহিঃকিউ৷
.
সামান্তাঃম্যাডামে মাইর দিবে৷
.
ছোঁয়াঃধুর চলতো৷
🍁
আদনানঃআবির এই মেয়েগুলোর একটা বিহিত করা দরকার দেখলি কিভাবে সুযোগ পেলেই অপমান করে৷
.
আবিরঃহুম সব দেখতেছি৷ এদের ডানা খুব গজিয়েছে এদের ডানা আগে ভাঙতে হবে৷
.
আহিলঃআমার মনে হয়না ওদের ভুল বলে৷ তোরা ইতো আগে লাগতে যাস৷
.
শ্রাবনঃএক্সাক্টলি আমারও তাই মনে হয়৷
.
আদিলঃওই হাদারাম গুলা এটা কী বলছিস৷ ওই মেয়েটা যে সবার সামনে আবিরকে চড় মেরেছিলো সেই কথাটা কী ভুলে গেছিস৷
.
আহিলঃনা ভুলিনি৷
.
আদনানঃতাহলে চুপ থাক৷
🍁
অনু,সামান্তা,আরুহি,ছোঁয়া,রিংকি সবাই বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে আছে৷ রিংকি তো কেঁদে কেটে একাকার৷ ওদের সবাইকে ছেড়ে থাকবে সেইটা ভাবতেই পারছেনা৷

প্রায় এক ঘন্টা পর পাত্র পক্ষ আসলো৷। রিংকিকে ওদের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো৷ রিংকির মা বাবা কিছুক্ষণ উনাদের সাথে গল্প করে চলে গেলেন আরেক রুমে৷ এখন শুধু রিংকির পাশে অনু,সামান্তা,আরুহি আর ছোঁয়াই আছে৷ পাত্রের মা রিংকির দিকে তাকিয়ে বললেন ঘোমটা তুলতে৷ অনুরা ওকে নিজে জেনেই ঘোমটা দিয়ে এনেছে৷

উনি কিছুক্ষণ রিংকির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“আচ্ছা তোমার চোখের নিচ এতো কালো কেনো?
.
সামান্তাঃআসলে আন্টি ও রাত জেগে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে তো তাই ওর চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল আই মিন কালো দাগ পড়েছে৷
.
হাঁটতে পারো তো৷ একটু হেঁটে দেখাও৷
.
রিংকি ল্যাংড়ার মতো হাঁটতে লাগলেো৷

ওমা মেয়ে দেখি হাঁটতে পারেনা৷
.
অনুঃনা আন্টি পারেনা ও জন্মের ল্যাংড়া তো তাই৷
.
রিংকি অনুর কথা শুনে ওর দিকে সরু চোখে তাকালো৷ অনু ব্যাপারটা বুঝে মুখ টিপে হাসলো৷
.
তা রান্না বান্না জানে তো৷
.
ছোঁয়াঃকী যে বলেন আন্টি ওকে যদি চুলায় আগুন জ্বালাতে বলেন তাহলে ও আপনার সারা বাসা জ্বালিয়ে ফেলবে৷
.
থাক এমন বউয়ের আমার দরকার নাই৷ আমরা গেলাম৷
.
পাত্রের মা বাবা সোফা থেকে উঠতেই রিংকির মা বাবা চলে আসলেন৷

রিংকির বাবাঃসে কী আপনারা চলে যাচ্ছেনা কেনো মেয়ে পছন্দ হয়নি৷
.
না আমরা যেমন গুণবতী মেয়ে এক্সপেক্ট করেছিলাম আপনার মেয়ে তেমন না৷
.
উনারা সবাই চলে গেলেন৷

রিংকির বাবাঃঅনু ওরা রিংকিকে কী পরিক্ষা করে জেনো ফেললো যে ও গুনবতী নয়৷
.
অনুঃআসলে চাচ্চু,উনি বলছিলেন বিয়ের পরে নাকি উনারা গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন আর সেখানে নাকি উনারা অনেক ধানের ক্ষেত করেন আর সব ধান নাকি রিংকিকেই একা সিদ্ধ দিতে হবে তুলতেও হবে। রিংকিকে জিজ্ঞেস করলেন ও ধানের কাজ করতে পারবে কী না তো রিংকি বললো,না আমরা কখনো ধানের কাজ করিনি৷ এটলিস্ট কীভাবে করে সেটাও জনিনা৷
.
ব্যস আমার মেয়ে অগুনবতী হয়ে গেলো৷
.
সামান্তাঃশুধু তাই নয় উনারা বলেছেন রিংকি নাকি হাঁটতে পারেনা ও নাকি ল্যাংড়া৷
.
কী এদের এতো সাহস আমার মেয়েকে ল্যাংড়া বলেছে৷ ভালো হয়েছে চলে গেছে নাহলে,,,

রিংকির বাবা রাগে ফুসফুস করতে করতে উনার রুমে চলে গেলেন৷ উনি যাওয়ার সাথে সাথেই অনুরা হেঁসে উঠলো,,

রিংকিঃডান৷ভালো হয়েছিলো চোখের নিচের মেকাপ মুছে ফেলেছিলাম তা নাহলে বাবা বুঝে ফেলতেন শিওর৷
.
আরুহিঃআমরা কী এতই কাঁচা খেলোয়াড় নাকি৷
.
অনিল শুরু থেকে শেষ সবই উপর থেকে দেখেছে৷ সে নিচে নেমে সোফায় একটা ভাব নিয়ে বসলো৷

অনিলঃএসব তোরাই প্ল্যান করেছিস যাতে রিংকির বিয়ে নাহয় রাইট৷
.
ছোঁয়াঃএসব কী বলো ভাইয়া৷ আমরা তো ইনোসেন্ট৷ আমাদের কেনো ফাঁসাচ্ছ৷
.
অনিলঃতোদেরকে দেখে যতটা ইনোসেন্ট মনে হয় তোরা কিন্তু ততটা ইনোসেন্ট নস৷ বজ্জাতের হাড্ডি তোরা৷
.
অনুঃহইসে ভালো হইসে৷
🍁
আদনানঃচাচীমনি আবির কোথায়৷
.
ওতো ওর রুমে৷
.
ঘুমাচ্ছে নাকি৷
.
জানিনা৷
.
আদনান আবিরের রুমে গিয়ে দেখলো সে সোফায় বসে অরেঞ্জ জুস খাচ্ছে।

আদনানঃএখনো তো লাঞ্চ করার সময় বাট তুই এখন জুস খাচ্ছিস কেনো৷
.
মাথা ঠান্ডা করছি ব্রো৷
.
তুই কী এখনও অনুর উপরে রাগ করে পরে আছিস নাকি৷
.
শুধু অনু না ওর পুরো টিমের উপর৷
.
সামান্তা মেয়েটাও বেশি কথা বলে৷ওর পাশ দিয়ে গেলেই পিঞ্চ করে বসে৷
.
আর ছোঁয়া মেয়েটা নাকি সেদিন শ্রাবনের পিটে সেফটিপিন দিয়ে গুতা দিয়েছে৷
.
ওরা জাস্ট ইরিট্যাটিং৷ এদের জন্য মনে হচ্ছে আমরা আমাদের ভারসাম্য হারিয়েছি৷ এই পাঁচটা মেয়ে যারা কী না আমাদের পাত্তা দিবে দূরে থাক দাম পর্যন্ত দেয়না৷
.
আদিল আবিরের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,,,

ওই আরুহি মেয়েটা কিন্তু মিচকা শয়তান৷ বেটি সামনাসামনি কিছু না বললেও ওদেরকে শিখিয়ে দেয়৷

আবিরঃঅনু তো হলো শয়তানের সর্দার৷ ও কাউকে ভয় পায়না৷ এমন ভাব নেয় যেনো দেশটা সে স্বাধীন করেছে একেবারে ফ্রিডম৷
.
আদনানঃদেখতেও গুন্ডি গুন্ডি লাগে৷
.
শ্রাবনঃতোরা কাদের নিয়ে এতো গসিপ করছিস৷ আমি পাশের রুম থেকে শুনতে পাচ্ছি৷
.
আদিলঃআর কাদের নিয়ে অনুর টিমকে নিয়ে৷
.
শ্রাবনঃএদের নিয়ে তোদের এতো মাথা ব্যাথা কেনো বুঝি না ভাই৷ ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দেনা৷ কী দরকার এতো লেগপুল করার৷
.
আবিরঃআদিল এই বেটারে এক্ষুনি আমার রুম থেকে লাত্তি দিয়ে বিদায় কর৷
.
শ্রাবনঃহে সত্যি বললে তো এমনই৷ ওরা তো লাগতে আসেনা আমরাইতো লাগতে যাই৷ ছাঁয়াকে লাথ দিলে কিন্তু ছাঁয়াও লাথ দেয়৷উচিৎ কথা বলি তো তাই হজম হয়না৷
.
আবিরঃআদনান এরে দুইটাকা পুরুষ্কার দে তো আমাদের এতো সুন্দর উচিৎ কথা শুনানোর জন্য৷
🍁
রাতে একসাথে ছাঁদে বসে চাঁদ দেখছে অনু,সামান্তা,আরুহি,ছোঁয়া আর রিংকি৷

আরুহিঃসত্যি প্রকৃতির মতো সুন্দর আর কিছু হতেই পারেনা৷ আল্লাহ্ কত নিখুত ভাবে সব সৃষ্টি করেছেন তাইনা৷
.
অনুঃহুম চারদিকে মৃদু বাতাস তার তালে তালে পাতাগুলোও নড়ছে৷ চাঁদও যেনো আমাদের সঙ্গ দেওয়ার জন্য আজ আকাশে উঠেছে৷
.
সামান্তাঃহ্যাঁ চাঁদ জানে আজ তাকে দেখার জন্য অনু আর আরুহি ছাঁদে আসবে৷
.
ছোঁয়াঃওই সামুর বাচ্চা অফ যা আর প্রকৃতি উপভোগ কর৷
.
অনুঃএখন চা হলে মন্দ হতো না৷
.
ছোঁয়াঃআমি আর রিংকি নিয়ে আসছি৷
.
প্রায় পনেরো মিনিট পর ছোঁয়া আর রিংকি ট্রেতে করে চা আর বিস্কুট নিয়ে এলো৷ চারজন চা দিয়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খাচ্ছে আর গল্প করছে৷মুখে চা দেওয়ার সাথে সাথেই অনু ভিষম খেলো৷ সামান্তা ওর মাথায় হাল্কা তাপ্পর দিচ্ছে৷

অনুঃকোন হারামজাদা আমারে মনে করছে৷
.
সামান্তাঃআবির হবে৷ ওর মাথায়ই সারাদিন শয়তানি বুদ্ধি ঘুরপাক খায় কিভাবে তোকে শায়েস্তা করবো৷
.
অনুঃওই আবিররররর৷ ওরে যদি আমি পঁচা ডুবাতে নাই ডুবাই তাহলে আমি অনু না৷

আবির মুখে তখন ব্রেড দিয়েছিলো আর গিলতে পারলোনা তার আগেই কাশতে শুরু করলো৷ ওর মা পিঠে চাপর দিচ্ছেন৷ আদনান মুখে ব্রেড দিতে দিতে বললো,,,

আদনানঃকে তোকে গালি দিচ্ছে আল্লাহ্ জানেন৷

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here