‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-০৫|
লেখাঃসুনেহরা শামস
.
.
“শুভ জন্মদিন প্রাঙ্গন”
প্রাঙ্গণ পিছনে ঘুরে তাকায় এই শব্দের উৎস খুজতে।দরজার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।ছায়ামূর্তি দেখে বুঝতে পারে কোনো এক মহিলা।আর মহিলাটা কে তাও ভালোভাবে জানে প্রাঙ্গণ।মুহূর্তেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠে প্রাঙণের,কপালের রগগুলো একে একে ফুলে উঠে।জীবনে প্রাঙ্গণ যাদেরই খুন করুক না কেন তাদের সাতগে তার শত্রুতা ছিল ঠিকই কিন্তু তাদের প্রতি ঘৃণা আসত না যতটা এই মহিলাকে দেখলে হয়।
মহিলাটি ভেতরে আসে।পাশে থাকা ধুলো পড়া চেয়ারটায় তাকায়।বেশ অনেকটাই ঘিন্না দৃষ্টি নিয়ে চেয়ারটায় ফু দিয়ে পরিষ্কার করে বসার উদ্দেশ্যে।পরিষ্কার করা শেষ হলে চেয়ারে বসে প্রাঙ্গণকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,
–মাই সন,শেষ স্মাগলিং-এ তোমার যা আয় দেখলাম তা তো তোমার ২ বারের স্মাগলিং-এর আয়।মূল কারণটা কি জানতে পারি?
প্রাঙ্গণ জানত যে এই জন্মদিন এই মহিলার কাছে কিছু না।সে তো এই ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছে,ওইসব জন্মদিনতো তার কাছে একটা বাহানা মাত্র।প্রাঙ্গণ তার মায়ের বিপরীত পাশের চেয়ারটায় বসে।সামনে বসে থাকা মহিলাটি আর কেউ না প্রাঙ্গণের জন্মদাত্রী মা,আয়েশা আখতার।প্রাঙ্গণ তো তার মায়ের অগোচরে তাকে “মাদার অব বেনিফিটস” বলত।অবশ্য যে নিজের ছেলেকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে তাকে “স্বার্থপর মা” মনে করে প্রাঙ্গণ।সব ভাবনাকে সাইডে রেখে তার মাকে শান্তগলায় জিজ্ঞেস করে,,
–এখানে আপনাকে কে নিয়ে এসেছে?
আয়েশা আখতার নিজের ছেলের থেকে জবাব পেয়ে আরেকটু সাহস পায়।হেসেই জবাব দেয়,,”আর কে?মাই আনাদার বয়,সাহিল”
সাহিল আয়েশার দিকে সরু চোখে তাকায়।কি মিত্থুক!সে কি নিয়ে এসেছে সেধে এই মহিলাকে?সেই তো ফোন করে কতকিছু বলে তাকে দিয়ে প্রাঙ্গণের এই এলাকার ঠিকানা বের করে নিল।সাহিল আয়েশার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।এদিকে প্রাঙ্গণের মন চাইছে সাহিলের দুইগালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় মারতে।এই মহিলার জন্য কত জায়গা বদলেছে সে।এবার ভেবেছিল এই এলাকার ঠিকানা সে পাবেনা কিন্তু সে তো আর জানত না যে “ঘরের শত্রুই বিভীষণ”। প্রাঙ্গণ রাগী দৃষ্টিতে একবার তাকায় সাহিলের দিকে যা দেখে যা দেখে সাহিল একটা শুকনো ঢোক গিলে।কারণ এখন এই মহিলা গেলেই সাহিলের বারোটা বাজাবে প্রাঙ্গণ।
–কিছু কি বলবে তুমি?
মায়ের ডাকে ঘুরে তাকায় প্রাঙ্গণ।তার মায়ের এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই।কারণ সে যে এদিকে প্রেমকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল তা এই মহিলাকে বলা যাবে না।প্রেম-মা এসবের মাঝেই হুট করে অতীত নাড়া দিয়ে উঠে।মাথা ঝাকায়,ঘাড়ে হাত বুলায় প্রাঙ্গণ।যা এত বছরে মনে পড়েনি তা আজকে আবার মাথায় বাড়ি খাচ্ছে প্রাঙ্গণের।প্রাঙ্গণের এই মহিলাকে এখন নিজের সামনে সহ্য হচ্ছে না।সে দাঁড়ায় আর ঘুরে বাইরের দিকে দৃষ্টি দেয়।এখন উত্তর দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার।শান্তির বাতাস দরকার এখন।আয়েশাকে এখন বের করতে এখান থেকে,,
–সবসময় একই রকম টাকা হাতে পাবেন না।মনে রাখবেন,অবৈধ আয় দিয়েই কিন্তু নিজের স্বামীর চিকিৎসা করাচ্ছেন।
কথাটা কাটার মতো ফুটল আয়েশার গায়ে।নিজের ব্যপারে সব শুনতে পারলেও তার স্বামীর ব্যপারে কোনো উল্টো কথা প্রাঙ্গণের কাছ থেকে শুনতে পারে না সে।আর এখন যে কথা বললেই প্রাঙ্গণ সব কথার উল্টো জবাব দেবে তা ভালো করেই জানে।কিন্তু আয়েশা আখতার তো আর দমে যাওয়ার পাত্রী নন।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আর এগিয়ে যায় প্রাঙ্গণের দিকে।কাধে হাত রাখে তার।
–এই কাজে অবহেলা করার ছেলে তো তুমি নও।বিষয়টা কি?আমাকে বলতে পারো তুমি।
এদিকে সাহিল হুট করে জবাব দিয়ে উঠে,,”আরেহহ,সেই মেয়েকে নিয়েই এখন বিজি থাকে প্রাঙ্গণ,আমিতো…”
চট করে প্রাঙ্গণ ঘুরে তাকায় সাহিলের দিকে যা দেখে সাহিলের মুখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়।আবারও ভুল যায়গায় মুখ খুলে ফেলেছে সে।তারাতারি করে নিজের মুখে হাত দেয় সাহিল।এদিকে এতক্ষন সবকিছু শুনে আয়েশা আখতার।মেয়ে?কোন মেয়ে?আয়েশার মাথায় ঢুকছে না।তবে কি অতীতের কাজে এখনো শিক্ষা হয় নি প্রাঙ্গণের?নিজের পার্সটা হাতে নেয় আয়েশা আর সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,
–সাহিল,এগিয়ে দিয়ে আসো তো আমায়।
সাহিলও কথামতো কাজ করে।বের হওয়ার সময় আয়েশা পেছনে না ঘুরেই বলে উঠে,,,
–আশা করি তুমি আইজার কথা ভুলোনি প্রাঙ্গণ।তাই ভুলেও কোনো মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে জড়ানোর সাহসও করো না।তাহলে কিন্তু আইজার থেকেও খারাপ অবস্থা হবে তার।
প্রাঙ্গণের ভেতরে এখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।পারছে না এখনি সব শেষ করে দিতে।আয়েশা আর সাহিল বের হয়ে গেলে রাগের দমন করতে দেয়ালে জোরে আঘাত করে হাত দিয়ে।এখন তার শান্তির দরকার,ব্যাপক পরিমানে শান্তি!
~~
প্রেমের এখন চিন্তার অতল গহ্বরে ঢুকে আছে এখন।প্রাঙ্গণ!নামটা তার কাছে নতুন,একদম নতুন।এরকম নাম সে আগে কখনো শুনেছে বলে মনে হয়না তার।হ্যা,সে মানে তার নামও একদম আনকমন কিন্তু প্রাঙ্গণ?গতকালই সাহিলের মুখে প্রাঙ্গণের নাম শুনেছে।এদিকে সাহিলের চিন্তাও তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।গতকালকের তার বলা সবকথা আর কথায় কি ইঙ্গিত পায় তাও বুঝেছে সে।কিন্তু এরকম ব্যপার যে এদিকে এসে ঘটে যাবে সে কল্পনাও করতে পারে নি।
কল্পনায় ব্যঘাত ঘটে যখন রুমে কেউ প্রবেশ করে।প্রেম বিরক্ত!তার ভাবনার মাঝেই সবাই কেন প্রবেশ করব,সে বুঝে না।বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে সামনে তাকায় প্রেম।সেই ব্যাক্তি অর্থাৎ প্রাঙ্গণ!
প্রাঙ্গণকে দেখে প্রেম দাঁড়িয়ে যায়।সে এখানে আবার এসেছে?আজকে জানতে পারবে যে তাকে কেন এখানে আনা হয়েছে?প্রাঙ্গন তার কাছে আসে,একদম কাছে।এভাবে আগাচ্ছে কেন তার দিকে?বুঝার চেষ্টা করে প্রেম।কিন্তু তার এই মিনি সাইজের ব্রেনে আপাতত কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না।প্রাঙ্গন হুট করেই একদম কাছে চলে আসে প্রেমের।হঠাৎ আগমনে ভয় পেয়ে যায় সে,তাও আবার একদম কাছে চলে আসে।এতই কাছে যে প্রাঙ্গণের উত্তপ্ত নিশ্বাস তার মুখের উপর আছড়ে পড়ছে আর প্রাঙ্গণের মুখে অবস্থিত এক উদ্ভট গন্ধও তার নাকে ঠেকছে।প্রেমের ভেতরের সকল অন্ত্র সাড়া দিয়ে বলছে,এটি কোনো নিষিদ্ধ জিনিসের বিকট দুর্গন্ধ।প্রেম শুনে,প্রাঙ্গণ কিছু বিরবির করছে তার দিকে তাকিয়ে।ভালোভাবে কান দিয়ে কথা গুলো বুঝার চেষ্টা করে কিন্তু কথাগুলো আড়ষ্ট হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে।শুধু একটি শব্দ একদম স্পষ্টভাবে প্রেমের কানে বাড়ি খাচ্ছে,”আইজা”।
~~
এহসান ভিলায় মূর্তির ন্যায় বসে আছে সুহা।সম্পর্কে প্রেমের একমাত্র কাছের বান্ধবী সে।বিগত আটদিন যাবত প্রেমের কোনো খোজ না পাওয়ায় এ বাড়িতে এসেছে তার খোজ নিতে।কিন্তু এখানে এসে সে নিজেই অবাক!প্রেম নিখোঁজ!এই “নিখোঁজ” শব্দটা তার কানে বোমার মতো ফেটেছে।আর তার থেকে সবচেয়ে বড় কথা এহসান সাহেব তাকে এ কথাও জানিয়েছেন যে প্রেমকে অপহরণ করা হয়েছে।এ পর্যন্ত অনেকবার হিসাব মিলিয়ে দেখেছে সুহা যে এমন কেউ আছে কী না যে প্রেমকে অপহরণ করবে।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে এমন কাউকেই পায় নি।এদিকে একনাগাড়ে কেদেই যাচ্ছে প্রিয়া।না পারছে তাকে থামাতে আর না পারছে কিছু খাওয়াতে।সুহা বুঝে,একমাত্র মেয়ে বিধায় এমন কষ্ট তার ভেতরে।কিন্তু এখন কিভাবে খুজে বের করবে প্রেমকে?আছে কে তার সাথে?মোবাইলের রিংটোন-এ ভাবনা থেকে বের হয় সুহা।মোবাইলের দিকে নজর দেয়,যেখানে স্পষ্টভাবে “সাহিল” নামটা ফুটে উঠেছে।
‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-০৬|
লেখাঃসুনেহরা শামস
.
.
প্রেমের কিডন্যাপ হওয়ার ১০ দিন।দাগটা টান দিল প্রেম।এই পর্যন্ত প্রতিদিন নিয়ম করে একটি করে দেয়ালে দাগ টানে সে।একদম জেলখানায় বন্দি কয়েদিদের মতো।অবশ্য সে তো একপ্রকার জেলখানায় বন্দি কয়েদিদের মতোই।নিয়ম করে ৩ বেলা খাবার ছাড়া এ রুমে আলো-বাতাস কিছুই ঢুকে না।এখন তো বেলকনির দরজায় শিকল লাগিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।আর তাছাড়া কোনো জানালাও নেই রুমে।বাইরের কোনো শব্দও ঢুকে না এখানে।এভাবে আরো কয়েকদিন থাকলে সে হয়তো পাগল হয়ে যাবে নাহলে মরেই যাবে।এখন তো সাহিল বা প্রাঙ্গণ কেউই এ ঘরে আসে না।প্রাঙ্গণকে সেদিনের পরে আর দেখা হয় নি প্রেমের। তাছাড়া সাহিল প্রতিদিন তিনবেলার খাবার দিয়েই চলে যায়। নিয়ম করে প্রতিদিন রাতেই মা-বাবা,সুহার কথা মনে পড়ে তার।কে জানে কেমন আছে?এসব ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে যায় প্রাঙ্গণের বলা সেদিনের শেষ কথাগুলো,,,,
.
বিরবির করে একা একা কথা বলতে বলতেই ভারসাম্য হারিয়ে বেডের উপর পড়ে যায় প্রাঙ্গণ।এদিকে প্রাঙ্গণের অবস্থা দেখে মনে মনে আল্লাহর নাম একনাগাড়ে জপতে থাকে প্রেম।কারণ এমন মাতাল সে কখনো নিজ চোখে দেখেনি,না জানি নেশার ঘোরে তার সাথে উল্টা-পালটা কিছু করে না বসে প্রাঙ্গণ।হুট করে বিরবির করতে করতেই বেড থেকে বালিশ নিয়ে তা একদম প্রেমের মুখের উপর ছুড়ে মারে।প্রেম হতভম্ব,অবাক,বিস্ময়কর দৃষ্টি নিয়ে নাক ডলতে ডলতে প্রাঙ্গণের দিকে তাকায়।এভাবে হুট করে প্রাঙ্গণ এমন কাজ করে বসবে সে বুঝেনি।আস্তে আস্তে ঘরের সবকিছুই বিরবির করতে করতে উলট-পালট করে ফেলে প্রাঙ্গণ।প্রেম বুঝে,নেশার মাত্রা অধিক।অবস্থা বেগতিক দেখে গ্লাসে পানি নিয়ে প্রাঙ্গণের মুখ বরাবর ছুড়ে দেয়।মুখে পানি পড়ায় প্রাঙ্গণের চিন্তা-চেতনা ধীরে ধীরে ফিরে আসে কিন্তু তা হয়তো বুঝতে পারে নি প্রেম।পানি ছোড়ার মতো মারাত্মক কাজ করার পর যেন প্রেমের উপর একঝাক সাহস এসে ভর করেছে।সুযোগ বুঝে প্রাঙ্গণকে উদ্দেশ্য করে প্রেম বলা শুরু করে,,
” ” এই যে,সমস্যা কি আপনার?প্রথমত কোনো কারণ ছাড়াই এখানে জোর করে এনে বেধে রেখেছেন এখন আবার আমার সামনে এসে মাতলামি করছেন??আপনাকে কি কেউ শিক্ষা-দীক্ষা দেয় নি??শিক্ষাই দেয় নি নাকি আপনিই একটা অমানুষ কে জানে?একটা মেয়েকে জোর করে এনে বন্দি করে রেখেছেন।তাও আবার ভালো মতো খেতেও দেন না।কিসব খিচুরি খাওয়ান আমায়।তাছাড়া কতদিন যাবত বাইরের আলো দেখি না আমি জানেন।এভাবে বন্দি থাকলে তো আমি মরেই…….” ”
আর কিছু বলা হয়ে উঠে নি প্রেমের কারণ সামনেই রক্তচক্ষু নিয়ে তার গাল চেপে ধরে আছে প্রাঙ্গণ।প্রেম একটা ফাকা ঢোক গিলে মুখ নাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু প্রাঙ্গণ শক্ত করে ধরে রাখায় আর মুখ নাড়ানোয় আরো বেশী ব্যথা পাচ্ছে প্রেম।অতিরিক্ত ব্যথা চোখ থেকে একফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।প্রাঙ্গণ প্রেমের চোখের পানি দেখার সাথে সাথেই হাত শীথিল হয়ে আসে কিন্তু এখনো তার হাত প্রেমের গালেই।প্রেমের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলে উঠে,,,
–অমানুষ আর তাদের কাজের সম্পর্কে ধারণা নিশ্চয় হয়ে গেছে আপনার??
প্রেম তাকায় প্রাঙ্গণের দিকে।চোখ লাল হয়ে আছে তার যেন এই বুঝি টুপ করে কেদে দিবে।প্রেমের মায়া হয় প্রাঙ্গণের জন্য।ছেলেরা কাদলে একদম মানায় না।সেখানে প্রাঙ্গণের মতো এমন একজন মানুষকে চোখের পানি ফেলতে দেখলে যে কারোই খারাপ লাগবে।প্রেম নিজের হাত আলতো করে ছোঁয়ায় প্রাঙ্গণের গালে।প্রাঙ্গণ তাকায়,সরে যেতে নেয়।প্রেম আরেক হাত দিয়ে প্রাঙ্গণর কলার ধরে তাকে কাছে টেনে নেয়।প্রাঙ্গণ প্রেমের সাহস দেখে অবাক!এভাবে তার কলার ধরেছে আবার টানও দিয়েছে।প্রাঙ্গণ অন্যদিকে ঘুরে চোখ বন্ধ করে এক দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।যে কেউ হলে এতক্ষনে আর এ দুনিয়ায় থাকত না কিন্তু কেন যেন প্রেমের প্রতি কোনো ক্ষোভ আসছে না।প্রেম নিজের হাত প্রাঙ্গণের গালে রেখে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়।প্রাঙ্গণ চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় ঘুরে প্রেমের দিকে।প্রেম বুঝে যে প্রাঙ্গণের ভীষণ রকমের রাগ হচ্ছে কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারছে না।কেন পারছে না?প্রেমের অজানা।প্রেম সাহস করে আস্তে আস্তে নরম সুরে বলা শুরু করে,,,
” “আপনি এমন কেন??সবসময় রাগ নিয়ে চলাফেরা করেন??বিশেষ করে,আমার সাথে আপনি কত নিষ্ঠুর ব্যবহার করেন।কারণ কি??আচ্ছা যদি কোনো সমস্যা থাকে আমার সাথে তাহলে আমাকে বলে দিন,এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কেন??যতটা কষ্ট আপনি আমায় একদিনে দিয়েছেন তা তো আমি আমার এ জীবনেও পাই নি।বিনা কারণে এভাবে এখানে আমাকে কেন বেধে রেখেছেন??জানেন আমার পরিবারের সবাই কত কষ্ট পাচ্ছে??আর তাছাড়া যদি আপনার মা-বাবা যদি জানে যে আপনি এভাবে একটা মেয়েকে ধরে-বেধে রেখেছেন তাহলে তারা কষ্ট পাবে না??” ”
একনাগাড়ে বলা প্রেমের সব কথাই প্রাঙ্গণ শুনল।কিন্তু প্রাঙ্গণের চেহারায় তেমন কোনো ভাবমূর্তি প্রকাশ পাচ্ছে না।প্রেম এভাবে কখনো কোনো ছেলের গালের হাত রেখে তাকে বুঝায় নি এভাবে। কে জানে?কাজে দিয়েছে কী না?অপেক্ষা করছে এই বুঝি প্রাঙ্গণ কিছু বলবে কিন্তু নাহ,,সে কিছুই বলছে না।প্রেম হালকা বিরক্ত প্রাঙ্গণের এমন খাপছাড়া ব্যবহারে।কন্ঠে বিরক্তি মিশিয়ে বলে উঠে,,,
–কিছু কি বলবেন আপনি??
–দুর্বলতার জায়গায় বসে আছো,ছাড়া সহজে পাবে না।আর যদি পালানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেছ,পরের বার বেচে না থাকলেও এইখানেই থাকবে।মাইন্ড ইট!
কথাগুলো বলা শেষে গটগট করে বের হয়ে চলে যায় রুম থেকে প্রাঙ্গণ।এদিকে একদৃষ্টে প্রাঙ্গণের যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে প্রেম আর ভাবে,কত ধরনের মানুষ হয় পৃথিবীতে??
~~~
এই পর্যন্ত ৩৬টা কল দিয়ে ফেলেছে সাহিল সুহাকে।গতকাল রাতে তাকে প্রায় দেড় ঘন্টার মতো ঝেড়েছে।কারণ একটাই,সে গত ৩ দিন ভালোমতো কথা বলতে পারেনি সুহার সাথে।অবশ্য কারণও আছে,সে তো এতদিন ব্যস্ত ছিল প্রাঙ্গণের স্মাগলিং এর ব্যপারে।তাই সাহিল ভালোমতো খোজ-খবর নিতে পারেনি।তাই সুহার মাথায় রণচণ্ডী ভর করেছিল গতকাল,যা ছিল মনে আগামীকাল সব সাহিলের উপর ঝেড়ে এখন তার ফোন সুইচড অফ।৩৭ নাম্বার কলটাও রিসিভ না হওয়ায় মুখ গোমড়া করে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে সাহিল।
সুহা সম্পর্কে সাহিলের একমাত্র গার্লফ্রেন্ড!দুই বছরের তাদের সম্পর্কে এই পর্যন্ত দুইহাজার বারের অধিক তাদের ব্রেকআপ হয়ে গেছে।কিন্তু সাহিল জানে,যত যা-ই হোক না কেন সুহা তাকে ছাড়বে না।সুহা-সাহিলের ব্যপারটা প্রেমের অজানা নয় তবে কোনো গ্রাহ্য না থাকায় কখনো সুহাকে তার বয়ফ্রেন্ডের নাম বা ছবি দেখার ইচ্ছা পোষণ করেনি।এদিকে সাহিলও কোনো সময় প্রেমকে দেখেনি,বলতে গেলে সুহাই দেখায় নি এই ভেবে যদি সাহিল আবার প্রেমের রুপে পিছলে যায়।
এখন পর্যন্ত কোনো খবর নেই সুহার।তাই মুখ গোমড়া করেই সাহিল ফোনটা পকেটে ঢুকায়।একন বড় আফসোস হচ্ছে তার,কেন সে সুহার খোজ নিলনা।একটা মাত্র গার্লফ্রেন্ড তার,এভাব্র অবহেলা করা আসলেই উচিত হয় নি।আফসোসের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রওনা দিল লাশগুলো গুম করতে যা একটু আগেই জীবিত মানুষ থেকে লাশে পরিনত হয়েছে।।
~~~
প্রেম মাত্রই লম্বা একটা হাই দিয়ে বিছানা ছাড়ে।এখন বাইরের আবহাওয়া সে বুঝতে পারে না,তবে যতটুকু আন্দাজ করতে পারে এখন সন্ধ্যা।থাই দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখা যাচ্ছে।নিচে খোলা মাঠে বালির সমাহার,,এ প্রান্তে আর ও প্রান্তে দুটো মরা বিনাপাতার গাছ।এরকম পরিবেশ সন্ধ্যায় ভয়ানক লাগলেও এখন তার লাগছে না।নিচেই বিচের দুইপাশে বড় বড় লাইটগুলো একদম আলোকিত করে রেখেছে,,কালো পোশাকধারী অনেকগুলো মানুষ,,চোখে কালো চশমা,হাতে কালো বন্ধুক।তার কাছে একদম হলিউড সিনেমায় থাকা গার্ডগুলোর মতো লাগছে,,একদম পারফেক্ট!!নিচে কিছু একটা চলছে কিন্তু প্রেমের সহজ-সরল ব্রেন তা ক্যাচ করতে পারছে না।নিচে সাহিলকেও চোখে পড়ে ব্লু জ্যাকেট আর কনভার্সে।বেশ লাগছে দেখতে তাকে,,কিন্তু কেন জানি এই পোশাকধারী ব্যাক্তিগুলোর সাথে তাকে যাচ্ছে না।চিন্তা-চেতনার উপর প্রভাব ফেলে কেমন মানুষকে মানাবে তা ভাবার চেষ্টা করে প্রেম কিন্তু ভাবতে না ভাবতেই প্রাঙ্গণের উদয় হয়।প্রেম প্রাঙ্গণের দিকে কিছুক্ষন হা করে চেয়ে থাকে,,কারণ এই প্রাঙ্গণের বেষভুষা এরকম নয়।একদম উপর থেকে নিচ কালো,,ভেতরে কালো শার্ট এর উপর কালো কোর্ট,, শার্টের উপর বোতাম খোলা,,কালো সানগ্লাস,,কালো সু-তে একদম পারফেক্ট লাগছে প্রাঙ্গণকে।কিন্তু এরকমভাবে উদয় হওয়ার কারণ কি??আর এদিকেই বা এতো আয়োজন করে কি চলছে??প্রেম কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করে।কিন্ত তার ছোট খাটো এই মস্তিষ্কে এত বড় একটা ব্যপার ঢুকছে না।কিছুক্ষন পর কালো পোশাকধারী একজন যেয়ে টেনে হিচড়ে একটা লোককে নিয়ে আসে।লোকটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে লোকটাকে আগেও মারা হয়েছে অনেক।প্রেম হতবাক!এভাবে টেনে-টুনে কেন নিয়ে আসছে লোকটাকে?প্রেমের বুঝতে দেরী কিন্তু প্রাঙ্গণের বন্দুক থেকে গুলি বেরুতে সময় লাগল না।মুহূর্তের মাঝেই ৪টা গুলি পরপর শরীর ভেদ করে গেল।প্রেম একদম পাথরের মতো জমে আছে,সামনে কি হচ্ছে না হচ্ছে মস্তিষ্ক ধারণ করতে পারছে না।সামনে সবকিছু ঝাপসা অতঃপর??গভীর এক ঘুম।
চলবে…
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আজকের পর্ব সম্পর্কে একলাইনের মন্তব্য ছেড়ে যাবেন।ধন্যবাদ।]
চলবে…
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ]