‘প্রেম প্রাঙ্গণ’🍂
|পর্ব-০৯|
~সুনেহরা শামস
.
.
“আজকে আমাদের বিয়ে,গেট রেডি ফাস্ট”
প্রেম প্রাঙ্গণের কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই “ওহ” বলে নিচে তাকায় কিন্তু কথার মর্মার্থ বুঝার সাথে সাথে ঝট করে মাথা তুলে তাকায় প্রাঙ্গণের দিকে।একদম “এটা কি হলো?” টাইপের লুক দিয়ে।প্রেম আদেও বুঝতে পারেনি প্রাঙ্গণের কথার মানে।প্রেমের ভাবনা অনুযায়ী প্রাঙ্গণ তার সাথে মজা করছে।তাই হাসতে হাসতেই বলল,,
“আপনাকে এসব মজা মানায় না”
“কে বলেছে আমি মজা করছি?”
প্রেমের সামনে আসতে আসতে কথাটুকু বলে প্রাঙ্গণ।প্রেম আবার হেসে দেয়,,আর বলে উঠে,,
“একটুও ফানি ছিল না”
প্রাঙ্গণ বুঝতে পারে যে এই মেয়ে তার কথার কিছুই বুঝেনি।সে নিছকই মজার ছলে নিয়েছে কথাটাকে।প্রাঙ্গণ এবার একদম কাছে চলে যায় প্রেমের।এদিকে প্রাঙ্গণের হুট করে কাছে চলে আসায় প্রেমের মুখের হাসি মিলিয়ে যায়।প্রাঙ্গণের দিকে চোখ তুলে তাকায় সে।একদম গভীর ভাবে তাকায় প্রাঙ্গণ প্রেমের দিকে,,প্রেমও প্রাঙ্গণের চোখে চোখ রাখে।প্রাঙ্গণ প্রেমের কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,
–আমাদের বিয়ে হবে মিস.প্রেম……
এতুটুকু শুনে প্রেম ভ্রু হালকে কুচকে আসে।
–আর আজকেই আমাদের বিয়ে হবে,,এবং এই মুহূর্তেই……
প্রেম এবার চোখ বড়বড় করে তাকায় প্রাঙ্গণের দিকে।
–বি রেডী টু বি মাই মিসেস।
প্রেম এবার দুই-পা পিছিয়ে যায়।প্রাঙ্গণ তো এমন মজা করার ছেলে না যতটুকু সে চিনে।তাহলে প্রাঙ্গণ সত্যি বলছে??এই অবিশ্বাস্যকর কথাটুকু বারবার প্রেমের মাথায় বাড়ি খাচ্ছে,মস্তিষ্ক শুধু এই কথাই জানান দিচ্ছে যে”তার সাথে ভালো কিছু ঘটতে যাচ্ছে না”
প্রেম হাসার চেষ্টা করে একটু,,প্রাঙ্গণকে হালকা স্বরে বলে উঠে,,
“আপনি মজাই করছেন আমি জানি।তাই না?”
প্রাঙ্গণ এবার একটু বিরক্ত হয়।কতক্ষন যাবত বুঝানোর চেষ্টা করছে সে কিন্তু বুঝতেই চাইছে না প্রেম।প্রাঙ্গণ শান্তসুরে বলে উঠে,,
“বেশী ভাবা লাগবে না তোমার।যাস্ট রেডী হও এন্ড নিচে চলে আসো,,কাজী ওয়েট করছে।”
প্রেম”কাজী”র নাম শুনে থমকে যায়। প্রাঙ্গণ শেষ কথাটুকু বলেই চলে যেতে নিলে তখন প্রেম বলে উঠে,,
“আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
প্রাঙ্গণ থেমে যায়।পিছনে ঘুরে,,প্রেমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,
“কি বললে??”
প্রেম এবার কঠিনস্বরে বলে উঠে,,
“করব না মানে করব না।আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
প্রাঙ্গণ হালকা হেসে বাইরের দিকে হাটা দেয়।যেতে যেতে শুধু বলে উঠে,,
“বিয়েটা তুমি করছ এন্ড দ্যাটস ফাইনাল”
প্রেম হতবাক!তার এই কঠিনত্বকে একটুও পাত্তা দিল না প্রাঙ্গণ?রাগে-দুঃখে বেডের সাথে নিজের পা বাড়ি দেয় জোরে আর সাথে সাথে ব্যথায় মুখ দিয়ে আর্তনাদ বের হয়ে আসে,,
“আম্মুউউউউউ”
~~~
সেই আড়াই ঘন্টা যাবত রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে প্রেম।কারণ একটাই সে বিয়ে করবে না প্রাঙ্গণকে,,কোনোমতেই না!প্রাঙ্গণকে ভালো ভেবে সে এখানে লক্ষী মেয়ের মতো ছিল,,আর প্রাঙ্গণ কীনা তাকে এই প্রতিদান দিল??
এসব ভাবতে ভাবতে এই পর্যন্ত একশোর বেশীবার এই ঘরটি চক্কর কাটা হয়ে গেছে প্রেমের।কিন্তু এতক্ষন কীভাবে বন্দি থাকবে সে?খুদা লাগলে?তখন কি করবে?এসব ভাবতে ভাবতে এসি রুমেও ঘামে চুবুচুবু হয়ে গেছে সে।কিন্তু প্রাঙ্গণ তাকে বিয়ে করতে চায় কেন?সে কী তাকে পছন্দ করে ফেলেছে নাকি এই ক’দিনে?প্রেম এবার নাক ছিটকায়,,”সব ছেলেই এক,কোনোটাই ভালো না”এরকম ভাবনা ঘুরছে প্রেমের মাথায়।প্রেম আবার ভাবে,,আচ্ছা যদি সে বিয়ে করে তাকে পাচার করে দেয়?তখন তো সে কিছু বলতেঅ পারবে না।আবার যদি তাকে প্রাঙ্গণ বিয়ের পর নির্যাতন করে??প্রেম ঘাবড়ে যায়,,এরকম কি প্রাঙ্গণ করতে পারবে?এসব জগাখিচুরি মার্কা ভাবনার মাঝেই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হয়।এই পর্যন্ত ১৫মিনিট অন্তর অন্তর এই ঠকঠকানির আওয়াজ আসছে বাইরে থেকে।তাও আবার যাতা কেউ নয়,,দ্যা গ্রেট সাহিল! মূলত সাহিলই বাইরে দরজায় টোকা মেরেই যাচ্ছে আর তাকে দরজা খুলার অনুরোধ করছে।প্রেম বিরক্তি স্বরে বলে উঠে,,
“এহহ যান তো,কতবার বলব দরজা আমি খুলব না।তাও কেন ঠুকঠাক করেই যাচ্ছেন?”
সাহিল বাইরে থেকে দুর্বল গলায় বলে উঠে,,
“প্রেমপাখি দরজাটা খুলুন প্লিজ,নাহলে প্রাঙ্গণ আমার প্রাণপাখি উড়িয়ে দিবে”
“আর এখন আপনি যদি না যান তাহলে আপনাকে আমি সাহিল থেকে কাহিল বানিয়ে দিব”
সাহিল পড়েছে মহা বিপদে!!না পাড়ছে বন্ধুকে কিছু বলতে আর না পারছে এই নাছোড়বান্দা মেয়েকে কিছু বলতে।
“কাজী আপনার জন্য আরো দুইটা বিয়ে পড়াতে পারেনি,,যদি পড়াতে পারত তাহলে বিবাহিত কাপল’স এখন বাসর ঘরে থাকত”
সাহিলের আফসোসমাখা সুরে প্রেম তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।নিজের মতো ঘরের ভেতর বসে থাকে।
“একটু পর প্রাঙ্গণ আসছে।তখন কি করবে আমি কিন্তু কিছু জানি না।গেলাম,,,”
তারপর?বাইরে কোনো সারাশব্দ নেই।তার মানে সাহিল চলে গেছে?”একটু পর প্রাঙ্গণ আসছে” কথাটুকু শুনে প্রেম বেশ ভালো বুঝতে পারছে যে প্রাঙ্গণ আসলে সে আর এঘরে থাকতে পারবে না।এমনও হতে পারে প্রাঙ্গণ তাকে ধরে-বেধে বিয়ে করে নিল,,তখন??
প্রেম ধীরে ধীরে বেডে বসতে নিলে বাইরে ধুড়ুম-ধাড়ুম দরজায় আওয়াজ হয়।প্রেম লাফ দিয়ে উঠে!এভাবে কে দরজায় বাড়ি দিচ্ছে?প্রেম জোরে চেচিয়ে বলে উঠে,,
“আব্বে কে রে বাইরে?”
“মাইন্ড ইউর ল্যাঙুয়েজ মিস.প্রেম”
প্রাঙ্গণের রাগীস্বর শুনে প্রেম ভেংচি কাটে আর প্রাঙ্গণের কথার ব্যাঙ্গাত্মক করে বলে উঠে,,”মাইন্ড ইউর ল্যাঙুয়েজ মিস.প্রেম”
এদিকে প্রাঙ্গণ এবার শান্তসুরে বলে উঠে,,
“রুম থেকে বের হও,,এভাবে না খেয়ে রুমে বন্দি থাকার কোনো মানে হয় না”
প্রেম এবার বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।একদম দরজার সাথে মিশে দাড়িয়ে বলে উঠে,,
“আর বিয়ে??”
“সেটা তো তোমাকে করতেই হবে”
প্রেম ভেতরে ভেতরে ফুসে উঠে,,পেয়েছে কী তাকে??গলা ঝেড়ে গলার স্বর কঠিন করে নেয় প্রেম।আর বলে উঠে,,
“আমি আপনাকে বিয়ে করব না মানে করব না।যা করার করতে পারেন”
প্রাঙ্গণ জানত যে প্রেম ভীষণ রকমের জেদি কিন্তু এত জেদ দেখাবে তা আগে বুঝতে পারেনি।প্রাঙ্গণ শান্ত সুরেই বলে উঠে,,
“যদি আর ১০ মিনিটের মাঝে দরজা না খুলো তাহলে কিন্তু দরজা ভাঙতে বাধ্য হব।”
প্রেম এবার জিজ্ঞেস করেই ফেলে,,”আমাকে কি পছন্দ করেন আপনি?”
“সেটা আমি কখন বললাম?”
“তাহলে কি ভালোবাসেন?”
প্রাঙ্গণের কাছে এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।সে আদেও কখনো নিজেকে এ প্রশ্নটি করেনি।হ্যা,মানুষ দুটো দেখতে এক হতে পারে কিন্তু চরিত্র,স্বভাব কোনো কিছুই মিল নেই সেখানে অনুভূতিগুলোর মিল??অসম্ভব!
“এসবের আমার কাছে কোনো মূল্য নেই”
প্রেম বিরক্ত!প্রথমত এতক্ষন বাদে এই সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর দিল আর দ্বিতীয়ত উত্তরটাও কোনো পদের লাগল না তার।
“তাহলে বিয়ে করতে চান কেন?”
“সেটার কৈফিয়ত আমি তোমায় দিতে চাই না।”
প্রেমের এবার মন চাইছে প্রাঙ্গণের গলাটা চেপে ধরতে।কোনো সময়ই কোনো প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দেয় না।এর মাঝেই প্রাঙ্গণের শান্তসুর কানে আসে,,
“তারাতারি রেডি হয়ে বের হয়ে আসো,,আর ১০ মিনিট পরই কাজী আসবে।দেরি যেন না হয়”
প্রেম কী যেন একটা ভেবে প্রাঙ্গণকে বলে উঠে,,”আমি একা রেডি হব কীভাবে?”
প্রাঙ্গণ তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে যায়।একটু আগে যেই মেয়ে বিয়ে না করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল সে এখন জিজ্ঞেস করছে,,কীভাবে একা রেডি হবে?কথাটা আদেও বুঝেনি প্রাঙ্গণ,,আবার কোনো কুটনামি মার্কা প্ল্যান করছে না তো?কি যেন ভাবে প্রাঙ্গণ তারপর মুখে বাকা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,,
“ওয়েল,,তোমাকে রেডী করে দেওয়ার জন্য পাঠাচ্ছি একজনকে”
~~~
মাত্র গেমে ঢুকেছিল সাহিল,,ঠিক এই মুহূর্তে কেউ এসে কাধে হাত রাখে।হুট করে এভাবে কাধে হাত রাখায় সাহিল ভয় পেয়ে যায় আর মোবাইল হাত থেকে নিচে পড়ে যায়।সাহিল ঠোট উলটে নিজের ফোনের দিকে একবার চেয়ে আবার পিছনে তাকায়।যা ভেবেছিল,,প্রাঙ্গণ দাঁড়িয়ে তার পেছনে।এই ছেলের জন্য যে কতবার গেমে হেরেছিল আর কয়টা মোবাইল যে তার হাত পড়েছে কোনো হিসাব নেই।সাহিল চোখ কুচকে,ঠোট উলটে প্রাঙ্গণের দিকে তাকালো।প্রাঙ্গণ একটা টেডি স্মাইল দিয়ে দুই ভ্রু উচু করে।সাহিল প্রাঙ্গণকে ভেংচি কাটে।
প্রাঙ্গণ শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে উঠে,,
“সুহাকে আসতে বলত”
মাত্রই পানি খেতে নিয়েছিল সাহিল কিন্তু প্রাঙ্গণের মুখে “সুহা” র নাম শুনে মুখের পানি সব বের হয়ে যায় তার।কাশতে কাশতে প্রাঙ্গণকে জিজ্ঞেস করে,,
“সুহা কে??”
“সাহিল নামের গাধার গার্লফ্রেন্ড”
সাহিল চোখ বড়বড় করে তাকায় প্রাঙ্গণের দিকে।একতো সুহার সম্পর্কে সে জানে আবার এখন তাকে গাধা বলছে?কি ডেঞ্জারাস এই ছেলে!কিন্তু সে সুহাকে কেন এখানে আনতে বলছে?মনের প্রশ্ন মনে না রেখে জিজ্ঞেসই করে ফেলে,,
“তোর কি কাজ সুহাকে দিয়ে??”
তখন প্রাঙ্গণের বাকা হাসি সহ জবাব দেয়,,
“বান্ধবীর বিয়েতে বান্ধবী থাকবে না তা কিভাবে হয়?”
চলবে…
[সরি ফর বিইং লেট।লেখা পর্বটি ডিলিট হয়ে গিয়েছিল।পুর্বের ডিলিট হওয়া পর্বটা আরো বড় ছিল কিন্তু পুরোটা লিখা হয়ে উঠেনি।আজকেই ইনশাআল্লাহ আরেকটা পার্ট দিয়ে দিব।আর হ্যা,নেক্সট পার্টে একটা ধামাকা আছে।বি রেডি ফর দ্যাট।]