#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০৯(শেষ)
#বিনতে মাহনূর
“আপনি যদি রায়ার হবু বর না হয়ে থাকেন তাহলে তোয়ানা চিনতে পারলো না কেন?”
“কারন তোয়ানা আলিফকে কখনো দেখেনি।তাই আমাকেও চিনতে পারেনি।”
“ও বাড়ির কেউ দেখেনি আলিফ ভাইয়াকে?”
“দেখেছে তো।”
“তাহলে অন্য কেউ চিনলো না কেন?”
“কয়েক জন বাদে অন্য সবাই জানে আমি রায়ার বন্ধু।এসব অবশ্য রায়া ম্যানেজ করেছে আমি কিছু করিনি।”
তার কথা শুনে কিছু কখন চুপ করে ভাবতে থাকি।হঠাৎ ওই ফোন কল এর কথা মনে পরলো।
“বিয়ের দিন ওই ফোনটা আপনি করে ছিলেন তাই না?”
তিনি একটা কিউট হাসি দিয়ে উপরে নিচে মাথা নাড়াল।হায়,আমি মাথায় হাত দিয়ে বললাম,
“এতো কিছু করে কি লাভ হল সেই তো কিডন্যাপ করে বিয়ে করলেন।”
উনি ইনোসেন্ট ফেস করে বললো,
“আমার কি দোষ?সব তোমার জন্য হয়েছে।কে বলে ছিল রাদের সাথে হাসাহাসি করতে?তোমাদের দুজনকে এক সাথে দেখে রাগ উঠে যেত।ভয় পেয়ে গেছিলাম।যদি তোমায় হারিয়ে ফেলি তাই তো নিজের সাথে বেধে ফেললাম।”
আমি তার দিকে তাকিয়ে ছোট একটা নিশ্বাস নিলাম।কিছু বলার নেই আজ শুধু তার ভালোবাসা অনুভব করতে চাই।
কিছুক্ষণ পর তিনি খুব শান্ত সরে ডেকে উঠলেন,
“মাহনূর”
কেপে উঠলাম কিন্তু কিছু বললাম না।চুপটি করে তার বুকের সাথে লেগে আছি।অপেক্ষা করছি তার পরবর্তী কথা শোনার।
“যা হয়েছে সব ভুলে কি নতুন করে আবার শুরু করতে পারি না আমরা?দুটো বছর দূরে থেকেছি আর একদিনও তোমার থেকে দূরে থাকতে চাই না।”
তার কথায় হাসি পেয়ে গেল।এমন করে বললে কি কেউ না করতে পরে?
“ঠিক আছে।কিন্তু একটা শর্ত আছে।”
প্রথম কথাটিতে খুশি হলেও পরের কথায় ওনার মুখে হাসি গায়েব হয়ে গেলো। ভীত কণ্ঠে বলল,
“কি শর্ত?”
আমি দুহাতে ওনার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
“সবাইকে সাক্ষী রেখে আবার বিয়ে করতে হবে আমাকে, রাজী?”
তিনি চমৎকার একটি হাসি দিয়ে বললো,
“একবার কেন হাজার বার তোমাকে বিয়ে করতে রাজী।”
সাথে সাথে হেসে দিলাম আমি।এতো সুখ সত্যি কি আমার ভাগ্যে ছিল?শুনেছি কষ্টের পর নাকি সুখ আসে।সত্যিই এসেছে।দু বছর কষ্ট করার ফল আমি পেয়েছি।তাকে পেয়েছি।
————————
জানালার পাশে দাড়িয়ে দৃষ্টি বাহিরের দিকে দিয়ে আছি।রাতের আঁধারের মনোরম দৃশ্য দেখছি।বাহির থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে আহনাফের দিকে তাকালাম।তিনি আমাদের দের বছরের মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।কি সুন্দর সেই দৃশ্য।এরা দুজন এখন আমার পুরো দুনিয়া।আমদের মেয়ে মানহা আমাদের চোখের মণি।বাবা বলতে পাগল।সুখ দুঃখের জোয়ারে ভেসে গেলো তিন তিনটি বছর।
সেদিনের দেয়া কথা আহনাফ রেখে ছিল।ঠিক ১০ দিনের মধ্যে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন।আমার বাবা মাকে রাজি করানোর দায়িত্বও তিনি নিয়ে ছিল।তার বাবা মা আমার বাবা মা আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে আবার আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের পর যেন আমার জীবন পুরো পাল্টে যায়।নিত্যদিন আহনাফের ভালোবাসায় শুরু হতো আবার তার ভালোবাসায় শেষ হতো।এই তিন বছরে যা পেয়েছি তা এর আগে পাইনি।বিয়ের ৭ মাস পর যেদিন জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি,খুশির অন্ত ছিল না। আহনাফকে জানালে সে খুশিতে কেঁদে দিয়েছিল।জড়িয়ে ধরে শুধু একটাই কথা বলে ছিল,
“তুমি আমাকে জীবনের সব সুখ দিয়েছো জানপাখি।”
তার সেদিনের কান্নাতে একটুও বিচলিত হয়নি।বরং হেসে ছিলাম আমি। প্রেগনেন্সির পুরোটা সময় তার ভালোবাসা যেন আরো বেড়ে গিয়ে ছিল।যেদিন আমাদের মেয়ে পৃথিবীতে আসে সেদিনও কেঁদেছিলেন তিনি সাথে আমিও কেঁদে ছিলাম।ছোট্ট শরীরটা কোলে নিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দিয়ে ছিলেন।মেয়েকে কোলে নিয়ে আমার কাছে এসে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ ছুঁইয়ে দিয়ে ছিলেন।আমি আর আমাদের মেয়ে তার জান।প্রতিনিয়ত তার ভালোবাসা বেড়েই চলছে।মাঝে মাঝে ভাবি এতো ভালোবাসাও কি সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব না হলে তিনি কি করে বাসেন?
হঠাৎ পিছন থেকে কেউ তার বাহু বন্ধনে আমাকে আবদ্ধ করে নিলো।আমি চমকালাম না কারন জানি কাজটা আমার তিনি করেছেন।ঠোঁটের কোণে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠল।শরীরের সমস্ত ভার তার ওপর ছেরে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।তিনি আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললেন,
“এতো রাতে আমাদের রেখে এখানে কি করছো মানহার আম্মু।”
তার কথায় ঠোঁটের হাসি আরো বৃদ্ধি পেল।তার মুখের “মনহার আম্মু”শুনলে নিজেকে পরিপূর্ণ লাগে।আমি চোখ বন্ধ অবস্থায় বললাম,
“ঘুম আসছিলো না তাই প্রকৃতি দেখছিলাম।আপনি কখন উঠে গেলেন?”
“এইতো।”
“ওহ”
কিছুক্ষণ নিরবতা পর তিনি আমার কোলে তুলে নিলেন।হঠাৎ এমন করায় ভয় পেয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম।রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালে তিনি মুচকি হাসি দিলেন।আমার রাগ ওখানেই পানি হয়ে গেলো।তিনি হাসি বজায় রেখে বললো,
“আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি চলো।”
বেডে নিয়ে গিয়ে আমাকে শুইয়ে দিয়ে মানহাকে কোলে তুলে পাশে রাখা দোলনায় শুইয়ে দিলেন।আর নিজে এসে আমার পাশে শুয়ে আমাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন।চুলের মধ্যে হাত দিয়ে মৃদু বিলি কেটে দিচ্ছেন।তার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।কতজন পায় এমন জীবন সঙ্গী?নিজের বলার জন্য হলেও এমন একজনকে চাই।তাকে আমার ইহকাল পরকাল দুকালেই চাই।শুধু তাকেই চাই।
————সমাপ্তি————