“মারিয়া”
পর্ব:- ০৯
কলমে:- সায়ীদা নুহা।
~~~~~~~~~~~~~~~
রিমির মাথায় হুট করেই এক বীভৎস পরিকল্পনা এসে জায়গা দখল করে। একের পর এক বিদঘুটে কাজের ইচ্ছে বুনছে সে। একবার মনে ধরে, সে ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে মারিয়াকে কিছু খেতে দিক। মেয়েটা এভাবেই মরে যাক! তার ব্যাগে ঘুমের ওষুধসহ আরও বেশকিছু ওষুধপত্র তো আছেই। আবার মনে হয়, রান্নাঘর থেকে বটি এনে মারিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করুক। নাহ্, সে ধরা খেয়ে যাবে। তাহলে মারিয়াকে কুপিয়ে মেরে লাশটা টুকরো টুকরো করে ফেললে কী হয়? কিন্তু পরে লাশের টুকরোগুলো কোথায় ফেলবে সে? পলিথিনে ভরে ময়লার বিনে ফেলে আসবে? নাহ্! বাজে গন্ধ ছুটে যাবে। মৃত লাশের গন্ধ যেই বাজে! পরমুহূর্তে মনে হয়, থাক, কিছুই না করি। যদি ধরা খেয়ে যাই? ইয়াসির কোনোদিনও ওর দিকে মুখ ফিরে তাকাবে না। সে তো বিন্দুমাত্র চায় না, ইয়াসির ওর কাছ থেকে দূরে থাকুক। বরং সে চায়, ইয়াসির সর্বক্ষণ ওর পাশে থাকুক। যখন আকাশ ভেদ করে ঝুম বৃষ্টি নামে… রিমির ইচ্ছে করে তখন ইয়াসিরের বুকে লেপ্টে থাকতে। ওকে এতটা কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। চাতক পাখির মতো রিমি ইয়াসিরের অপেক্ষা করে! একবার, শুধু একটাবার ইয়াসির ওকে ছুঁয়ে দেখতো। ওকে একটাবার ভালোবেসে দেখতো? কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত?
অথচ দু’দুবার এই একই চেহারার মানুষগুলো এসে রিমির থেকে ইয়াসিরকে দূর করে দেয়। ইয়াসির তার ধরাছোঁয়ার বাহিরে। তবুও রিমি অপেক্ষা করে! একটা দিন হয়তো আসবে, স্বপ্ন বা কল্পনা যাই হোক, ইয়াসির ওর কাছে ছুটে আসবে। সেদিন সে পাগলের মতো ইয়াসিরকে ভালোবাসবে!
ভাবনায় থেকেই রিমি মুচকি হেসে উঠে। পাশে মারিয়া বসে আছে। টিভির থেকে পলকের জন্য তার রিমির দিকে চোখ পড়ে। তাকে হাসতে দেখে মারিয়া বেশ অবাক হয়। রিমির গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল,
“আপু, এত ইমোশনাল সিন। আর তুমি কিনা মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছ? আমার তো দম আটকে আসছে!”
ভাবনায় ছেদ পড়ে রিমির। বিরক্তও হয় প্রচুর। তারপরও মারিয়ার দিকে হাসিমুখে তাকায়। বলল,
“আবেগ ধরে রাখতে শিখো! কোনো একদিন কাজে দিবে।”
বলেই সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রিমি। খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে বলল,
“রাফিকে একটা কল দেই। কীভাবে কী করছে দেখি।”
রিমির কথায় মারিয়া মাথা দোলায়। আবারও টিভির দিকে নজর দেয় সে।
*****
চীফ রেস্তোরা। রেস্তোরার নামটা অদ্ভুত। ইয়াসিরের কাছে অদ্ভুতই লাগে! এরকম রেস্তোরার নাম সে কখনও শুনেনি। এই নামটা দেওয়ার কারণ কী সে তাও জানে না। যাই হোক, এই রেস্তোরার কর্ণারের টেবিলেই সে বসে আছে; কারও আসার অপেক্ষায়…
প্রায় পনেরো মিনিট পরেই লোকটি এসে ইয়াসিরের সামনে দাঁড়ায়। ইয়াসির ইশারায় তাকে বসতে বলল। বসে পড়ে লোকটি। হাতের ফাইলটা ইয়াসিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“মর্গানের ব্যাপারে যা যা ইনফরমেশন আপনি চেয়েছিলেন। এটায় সব আছে।”
ইয়াসির ফাইল খুলে। একের পর এক ডিটেইলসে সে চোখ বুলায়। কিন্তু এগুলো নাকি দশটা সাধারণ মানুষের সম্পর্কে যেসব তথ্য থাকে, সেরকমই। স্পেশাল কোনো ইনফরমেশন নেই। ইয়াসির লোকটির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল,
“আর ইউ শিউর? এখানে তেমন কিছুই নেই!”
লোকটি এবার টেবিলের উপর হাতের নখ দিয়ে একধরনের আওয়াজ করলো। ইয়াসির তার ফোন বের করে। ফাইলটির পিছন দিকে লক্ষ করে। কোড লেখা আছে সেখানে। ফোনের ক্যামেরায় কোডটি তুলে নেয় সে। লোকটি এবার ইয়াসিরের কাছ থেকে ফাইলটি নিয়ে তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ায়। “আসি” বলে চলে গেল সে।
লোকটি সিবিআই-এর হেড কোয়ার্টারের সিনিয়র অফিসার। ইয়াসিরের বাবার কলেজ লাইফের বন্ধু বলা যায়। ছোটো থেকে কলেজের গণ্ডি পেরনো অবধি তারা একসাথেই ছিল।
মারিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই ইয়াসির মর্গানের দিকে নজর রাখে। তখন থেকেই বাবার বন্ধুর সহায়তায় সে মর্গানের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে। বলতেই হয়, এইক্ষেত্রে পরিচিত হওয়ার সুবাদে সে বেশ সুবিধাই পেয়েছে। কিন্তু যতবারই সে মর্গানকে হাতেনাতে ধরতে উদ্যত হয়, সব প্রমাণ কী করে যেন গায়েব হয়ে যায়! দেখা যাক, এবার কী করা যেতে পারে!
ইয়াসিরও কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে গেল। কিছুদূর যেতেই তার মনে হলো, কেউ তার পিছু নিয়েছে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায় ইয়াসির, কেউ নেই। আশেপাশে ভালো করে তাকায়, সেখানেও কেউ নেই!
সামনে পা বাড়ায় ইয়াসির। ততক্ষণে মর্গান নিজেকে আরও লুকিয়ে ফেলে…
“চলবে”