মারিয়া,পর্ব:৮

“মারিয়া”
পর্ব:- ০৮
কলমে:- সায়ীদা নুহা
__________

গত পর্বের অল্প অংশ থেকে;
*আচ্ছা, মেয়েটা কী দেখেছিল স্বপ্নে? এরকম অস্থির ছিল কেন সে?
মাথা ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শোয় ইয়াসির। কুশনটা শক্ত করে বুকে চেপে চোখ বুজে। কল্পনা করার চেষ্টা করে, তার মারিয়াটা কি তাকে ছেড়ে খুব ভালো আছে?
স্মৃতিতে ভাসে এক হাস্যোজ্বল চেহারার নারী…যার স্মিত হাসিতে বুঝি মুক্ত ঝরে পড়ছে!*
___

সকাল বেলা,
ভোরের দিকে শহরজুড়ে ঝুম বৃষ্টি নামে। রাতে ঠিক মতো ঘুম না হওয়াতে মারিয়া শেষরাতের দিকে একটু আরাম করে ঘুমায়। ভোরের বৃষ্টি সেটাও কেড়ে নেয়। উঠে বসে সে। খাটের পিছনের জানালার পর্দা সরিয়ে একপলক সেদিকে তাকিয়ে থাকে। চাহিদা মতো ঘুমাতে না পেরে মাথা, চোখ সব ভার হয়ে আছে। তবুও বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মারিয়া। হাত-মুখ ধুয়ে বাহিরের রুমে আসে। এত সকালে কারও উঠার কথা না, তবুও সে রান্নাঘরে একবার উঁকি দিলো। ইয়াসির সজাগ কিনা? পেল না কাউকে। সদর দরজা খুলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে মারিয়া। গায়ের ওড়নাটা আরও জড়িয়ে নেয় শরীরে। ঠান্ডা লাগছে খুব! তবুও বৃষ্টিতে ভিজতেই হবে!

ছাদে গিয়েই মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে দু’হাত মেলে ধরে মারিয়া। ঠান্ডায় গা কাঁপছে রীতিমতো। ইয়াসিরের বাসার ছাদটা দু’ভাগে বিভক্ত। মাঝে সিঁড়ির ঘর দিয়ে দু’পাশেই ছাদের অংশ। একপাশে মারিয়া আর অন্যপাশে…
ছাদ জুড়ে নীরবতা পালন হচ্ছে। বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই ঠান্ডা পরিবেশে। মারিয়া সুদূরে তাকায়, যতদূর অবধি চোখ স্পষ্ট দেখতে পারে। শহরটা খুব ভিন্ন, ঢাকার অন্য শহরের মতো তো মোটেও না। কীভাবে যে সে এই শহরের মায়ায় আটকে গেল। ভেবে পায় না মারিয়া, যদি আজকে ইয়াসির, রাফি, রিমি ওদের সাথে দেখা না হতো। এতদিনে নিশ্চিত সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত। বা এই মুহূর্তে তার উপর পৈশাচিক নির্যাতন চলতো। আচ্ছা, নির্যাতনগুলো কেমন হতো?
চোখের কোনায় জ্বল ইতোমধ্যে উপস্থিত। কিন্তু বৃষ্টির জন্য সেটা আর বুঝা যাচ্ছে না… দু’হাতে চোখ মুখ মুছে নেয় মারিয়া। কবে আব্বু, আম্মু আর ছোটো ভাইটাকে দেখতে পারবে সে? তাদের কথা মনে পড়ছে খুব!

বৃষ্টি থেমে গেলে নিচে নামতে উদ্যত হয় মারিয়া। সিঁড়ির কাছে আসতেই ইয়াসিরের সাথে দেখা হয়ে যায় তার। দু’জনেই চুপচুপে ভেজা। ইয়াসির মারিয়াকে একমুহূর্ত দেখে গেট ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। মারিয়া আগে নামুক। মারিয়াও আর কিছু বলল না। নেমে গেল নিঃশব্দে।
___

“মারিয়া, ভয় পাচ্ছ?”
রাফির কথায় চমকে তার দিকে তাকায় মারিয়া। পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“কীসের জন্য?”
“না মানে, আবার ঐ বাড়িতে যেতে হবে। যদি অনাকাঙ্ক্ষিত…”
রাফির কথা শেষ না হতেই রিমির হাতের মার পড়ে তার পিঠে। আউচ করে উঠতেই রিমি বলল,
“একদম ঠিক আছে। অযথা মেয়েটাকে ভয় দেখাচ্ছ। দরকার কী?”

রাফি হেসে ফেলে। উত্তরে বলল,
“বাহ্, বোন বানিয়ে ফেললে নাকি? এত দরদ কেন?”
রাফির মুখে উচ্চারিত বোন শব্দটা শুনে রিমির হাস্যোজ্বল মুখটা নিভে যায়। চুপচাপ মাথা দুলিয়ে রাফির কথায় সমর্থন করে। মারিয়ার ঠোঁটে চিকন হাসি ফুটে উঠলো। অপরিচিত মানুষগুলো আজ তাকে কেমন আপন করে নিচ্ছে! অথচ ক’দিন আগেও তো কেউ কাউকে চিনেনি।

নাস্তা খাওয়ার শেষ পর্যায়ে রিমির ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে স্পষ্ট হাসপাতালের নাম দেখা যাচ্ছে। রাফিও সেটা দেখতে পায়। ফোন নিয়ে ওপাশে চলে যায় রিমি। কিছুক্ষণ পর এসে বলল,
“রাফি, তুমি হাসপাতালে চলে যাও? আমি এখানে থাকি।”
“কেন? কী হয়েছে?”
“না, একটা ইমারজেন্সি আছে নাকি। তুমি যাও না? আমি এখানেই থাকি।”
“তুমি যাও। আমি আজকে প্ল্যান করেছি যাব না হাসপাতালে। আমার রুগীদের সব ক্যানসেল করিয়েছি। গেলে তুমি যাও।”
ইয়াসিরও রাফির কথায় সমর্থন করে বলল,
“তুইই চলে যা না?”
রিমির একটুও ইচ্ছে নেই সে খালি বাসায় ইয়াসির আর মারিয়াকে একা রেখে যাবে। রাফির যা অভ্যাস, সে আরও ঠেলেঠুলে এই দু’জনকে এক করার চেষ্টায় থাকবে। যেটা রিমি কোনোদিনও চায় না! আবার, দু’জনই তাকে বের করে দিতে চাইছে। আর কিছু ভেবে না পেয়ে রিমি ধীরকণ্ঠে বলল,
“আমার শরীরটা ভালো না…তাই বলছিলাম।”
সাথে সাথে রাফি চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে। রিমির দু’বাহু চেপে ধরে,
“কী হয়েছে? আমাকে তো রাতে বলোনি।” রাফির কণ্ঠে উদ্বিগ্নতা প্রখর। তার কণ্ঠ শুনেই বুঝা যাচ্ছে, মুহূর্তেই সে কতটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। রিমি হালকা করে রাফির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। সরে গিয়ে বলল,
“এমনই…. ভালো লাগছে না।”
রাফিও তার বরাবর কাছে এগোয়।
“গুরুতর কিছু হলে বলো? আমার টেনশন হচ্ছে তো!”
রিমি বিরক্তির সুরে তেজ দেখায়।
“আরে আজব তো! আমিও তো ডাক্তার নাকি? নিজেরটা তো নিজে দেখতে পারি?”
এতক্ষণ দু’জন কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের গলাও শোনা যাচ্ছিল না। এইবার রিমির গলার কণ্ঠ জোরে শোনা যায়। ইয়াসির, মারিয়া দু’জনই তাদের দিকে তাকায়। হুট করে কী হলো এই দম্পতির?
রিমির মেজাজ চড়া হয়েছে। ইয়াসির রাফিকেই বলল,
“আচ্ছা তুইই চলে যা। ও যেহেতু যেতে চাচ্ছে না থাকুক!”
রাফি মাথা দোলায়। তবে তার চেহারাটা পাংসুটে বর্ণ ধারণ করে। রিমি কি তার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছে?
___

রাফি চলে যেতেই রিমি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়ো হয়েছে। রাফি যাওয়ার পর থেকেই সে ইয়াসির আর মারিয়ার সাথে লেগে থাকে। দু’জন যেখানে সেও সেখানে। মারিয়া বলেছিল,
“আপু, আপনি একটু রেস্ট নিন?”
রিমি রাজি হয়নি। সে কখনও মারিয়া আর ইয়াসিরকে একা ফেলে যাবে না।
খানিক বাদে ইয়াসির নিজের কাজে বাইরে চলে যায়। বাসায় মারিয়া ও রিমি একা। দু’জনই বসে টিভি দেখছে। এরই মধ্যে রিমির মাথায় এক ভয়ানক চিন্তা এসে ঠেকে। সে যেন বেপরোয়া হয়ে গেল!
ইয়াসিরের কাছে সে মারিয়াকে কোনো পর্যায়েই থাকতে দিবে না…

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here