“মারিয়া_পর্ব:- ১০”
কলমে:- সায়ীদা নুহা।
~~~~~~~~~~~~~~~
বাসায় এসেই ইয়াসির চমকে উঠে। এই দু’জন কী করছে? সামনে এগিয়ে যায় সে। মারিয়া, রিমি দু’জনেই খুব মনোযোগ দিয়ে খাটে উপুড় হয়ে কিছু দেখছে। গেট খোলার আওয়াজ হয়তো তাদের কানেও পৌঁছায়নি। খাটের কর্ণারে এসে দাঁড়ায় ইয়াসির। ঘাড় কাত করে তাকাতেই দেখতে পায়, মারিয়া আর রিমি লুডু ঘর নিয়ে পর্যালোচনা করছে। এটা বললে ভুল হবে! তারা মূলত সাপের কোন ঘরে কোন গুটি ফেলবে সেটা নিয়ে দ্বিধায়।
কিছুটা ভারি গলায় ইয়াসির বলল,
“তোদের হলে আমার রুম থেকে বের হো!”
দু’জনেই ঈষৎ কেঁপে উঠলো। পিছনে ফিরে ইয়াসিরকে দেখতে পেয়েই দু’জন হুরমুড় করে উঠে যায়। রিমি বলল,
“তুই নেই। তোর ঘরে লুডুর ঘর পেয়ে এখানেই খেলতে বসছিলাম।”
মারিয়াও ঘাড় নেড়ে সায় দিলো। ইয়াসির পাল্টা কোনো কথা বলেনি। ওদের চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে সে। রুম থেকে মারিয়া বেরিয়ে যেতেই রিমি ইয়াসিরকে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,
“কোথায় গিয়েছিলি?”
“সেটা জেনে তোর লাভ?”
রিমির মুখ কালো হয়ে যায়। তবুও হাসিমুখে বলল,
“এমনিই! অনেকক্ষণ বাহিরে ছিলি দেখে…”
“হ্যাঁ, কাজ ছিল। বের হো এখন?”
বেরিয়ে যায় রিমি। ইয়াসির যে ওকে পাত্তা দেয় না, এটা ভালো করেই বুঝে সে। তবুও বেহায়া হবেই!
*****
হাসপাতালে রুগীর ভিড় বেশ খানিকটা কমেছে। রাফি ফ্রী হয়েই আগে রিমিকে ফোন দিলো। আসার পর থেকে তার ভেতর অস্থিরতা কাজ করছে। কী এমন হলো রিমির? ভালোই তো ছিল সে! রিমির অল্প থেকে অল্প কিছু হলেই রাফির দিন দুনিয়া সব থেমে যায়। সারাক্ষণ রিমির চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়!
ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই রাফি বলল,
“এখন কী অবস্থা? ঠিক আছো তুমি?”
“হুম।”
“কী হয়েছিল তখন? আমাকে কিছুই বলতে চাও না। কোনো কিছু নিয়ে সমস্যা থাকলে বলো? ওখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে? নাকি অন্য কিছু? পেটে ব্যথা? মাথা ব্যথা হচ্ছে? শরীর খারাপ করছে? দুর্বল লাগছে?”
ওপাশে রিমি ক্রমাগত বিরক্ত হচ্ছে রাফির এসব প্রশ্নে। জেদ দমিয়ে রেখেই বলল,
“একসাথে এত প্রশ্ন কেন করো রাফি? ঠিক আছি তো আমি। তখন একটু দুর্বল আর বমি লাগছিল, তাই। আর মারিয়া মেয়েটাও বাসায় একা থাকবে, তাই থেকে গিয়েছি আমি। হয়েছে এবার? এত দুশ্চিন্তা কেন করো?”
“এই এক সেকেন্ড, এক সেকেন্ড! তোমার এ মাসে পিরিয়ড ব্রেক হয়েছিল?”
রিমির কপালে ভাঁজ পড়ে,
“নাহ্ তো!”
“বলো কী?”
“আরে কী হয়েছে বলবে তো?”
“রিমি, তুমি কি ভুলে গেছ আমরা যে ট্রাই করছি?”
চুপসে যায় রিমি। মৃদু কেঁপে ওঠে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দিলো,
“না তো, ভুলব কেন?”
হাফ ছাড়ে রাফি। তবুও বলল,
“তাহলে মিস হলো না কেন?”
বিরক্তির সাথে ফোন রেখে দেয় রিমি। এইসব প্যাঁচাল একদম সহ্য হয় না তার। ফোন রাখতেই ব্যাগের ভেতর থাকা জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেটের পাতাটার দিকে নজর রাখে সে। রাফির ইচ্ছে হয়তো কোনোদিনও পূরণ হবে না!
রিমি ফোন রেখে দিতেই রাফি চমক হেসে উঠে। ভাবলো, মেয়েটা এখনও লজ্জা পায়! ডেস্কের থেকে চায়ের কাপ হাতে নিতেই এসিস্ট্যান্ট এসে বলল,
“স্যার, নেক্সট রুগীকে আসতে বলব?”
*****
পৌনে দু’টোয় রাফি ইয়াসিরের বাসায় এসে পড়ে। হাসপাতালে তার আর ভালো লাগছিল না। দ্রুত কাজ সেরে এসে পড়েছে। ভেতরে আসতেই চারজনের আড্ডার ধুম পড়ে যায়। রাফি আর ইয়াসির প্ল্যান করে, বিকেলের দিকে বের হবে তারা। মারিয়াকে ভেতরে ঢুকিয়ে তারা বাড়ির পেছন দিক দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে। যা ভাবা তাই রইলো!
মারিয়াকে তাদের প্ল্যানিং জানালে সেও সায় দেয়। অবশ্য, সায় না দিয়েও সে কিছু করতে পারবে না।
*****
সুরাইয়া বেগম ছোটো ছেলের ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছেন। তাকে হোস্টেলে রেখে পড়াবেন তিনি। ছোটু যেতে না চাইলেও তিনি জোর করে তাকে পাঠাচ্ছেন। নয়তো তার কাজ সব ভেস্তে যাবে!
ছোটু বারবার বলছে,
“আম্মা, আপাকে একটা ফোন দিয়ে যাই? আপা ফোনও দেয় না।”
সুরাইয়া বেগম বিরক্তির সাথে বলেন,
“আরে, ও কি ওখানে আয়েশ করতে গেছে? সেও তো সারাদিন কাজই করছে। এত জ্বালাস কেন তুই? পড়ালেখার যা অবস্থা, তোকে বাসায় রেখে পড়ানোই উচিত না।
ছোটুর মুখে আঁধার ছেপে যায়। এখান থেকে যাওয়ার পর আপা একদম ভুলে গেল তাদেরকে!
চলবে…