#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৬
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
এলার্ম বাজার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আহসানের।ঘুম ঘুম চোখে এক হাত দিয়ে এলার্ম অফ করে উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে।আচমকা আহসানের চোখ আটকে যায় বিছানা থেকে কিছুটা দূরে সোফায় শুয়ে থাকা রিমির দিকে।রিমির মুখখানা ভোরের আলোয় রাঙা হয়ে আছে।আলো চোখে পড়ায় পাপড়িগুলো নড়েচড়ে উঠছে ওর।আলো টা যেন রিমির ঘুমে মস্ত এক বাধা।তাইতো কপাল ভাজ করে রেখেছে।আহসান বিষয়টা বুঝতে পেরে জানালার পর্দাটা টেনে দিল।এরপর গুটি গুটি পায়ে রিমির কাছে গিয়ে উবু হয়ে রিমির অবাধ্য চুলগুলো কানের গোড়ায় গুঁজে দেয়।এই প্রথম আহসান রিমিকে এতো কাছ থেকে দেখলো।রিমির দাগহীন ফর্সা মুখটায় এক অজানা মায়া দেখতে পেল।রিমির কালো জোড়া ভ্রু যেন ওর ফর্সা দীপ্তির সৌন্দর্য্যকে আরো আকর্ষণীয় করে রেখেছে।সাথে ডাগর আঁখি আর তার উপর লম্বা মোচড়ানো পাপড়ি!জাস্ট ওয়াও।আহসান যেন সম্মোহিত হয়ে পড়েছে রিমির রুপে।আহসান আরো একটু ঝুকে গেল।একেবারে রিমির নিশ্বাসের সাথে গিয়ে বারি খায়।রিমির গরম নিশ্বাসের ছোঁয়া পেতেই আহসান আর নিজের মধ্যে থাকতে পারলো না।আহসান হাত বাড়িয়ে রিমির হালকা লাল ঠোঁট জোড়ায় হাত বুলাতে থাকে।করো স্পর্শ অনুভব করতে পেরে লাফিয়ে উঠে পড়ে রিমি।আহসানকে এতটা কাছে দেখে চোখ উল্টে যায় ওর।তারপর ভয়জনিত স্বরে বলে,আ আপনি ক কি করছিলেন?
আহসান রিমির কথায় ঘোড় থেকে বেরিয়ে আসলো।তারপর পরিস্থিতি সামলাতে বলে,তোমার মাথার এখানে রাতে একটা রিপোর্ট রেখেছিলাম সেটা খুঁজতেই এখানে আসা।কোনো প্রকার বিপত্তি ছাড়াই বলে ফেলে।তবে রিমি যেন বিশ্বাস করতে পারলো না আহসানের এক্সকিউজ টা।
-আপনি মিথ্যে কেন বলছেন?আপনি তো এখানে কোনো রিপোর্ট রাখেননি!কি করতে এসেছিলেন তাই বলুন।
আহসান দুম করে উঠে দাঁড়ালো।তারপর রাগান্বিত গলায় বলল,Don’t cross your limits.who the hell are you to ask me questions?Don’t talk rubbish okh?
-চেচামেচি ছাড়া আর কি পারেন আপনি?চেচামেচি করে কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়?না যায়না।So Don’t Shout.
-তুমি কি বলতে চাইছো হুম?আমি মানে আহসান তালুকদার তোমার রুপে মোহিত হয়ে তোমায় টাচ করতে গিয়েছিলাম!সো ফানি হাহাহা,কত বিউটিফুল, সুইট সিক্সটিন,রিচ ফ্যামিলির মেয়ে আমার পেছনে ঘোরে, আর আমি কিনা তোমার মতো একটা মিডিলক্লাস মেয়ের কাছে যাব!তোমার মতো cheap মেয়ে আমার পায়ের ধুলো ছোঁয়ার ও অ্যাবিলিটি রাখো না।
-ব্যাস অনেক হয়েছে।অনেক সহ্য করেছি আমি।আপনি রীতিমতো আমাকে অপদস্ত করে যাচ্ছেন আমি কিছুই বলছি না।আপনি নাকি ধনী!আরে ধনী হলেও আপনার মধ্যে বিন্দুমাত্র শিক্ষা নেই।শুধু দুটো সার্টিফিকেট পেলেই সে শিক্ষিত হয়না মিস্টার।শিক্ষিত হতে হলে সুন্দর বিহেভিয়ার জানতে হয়।
-ইউ রাস্কেল!চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে(বেশ উঁচু গলায় বলল আহসান)
রিমি হালকা হেসে বলে,আপনাকে বড় বলে বড় সে নয়,লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।রিমি সোফা হতে নেমে আবার বলে,আমি বাহিরে পড়াশোনা করিনি ঠিকই,তবে আমি কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।শুধু আমি নই।আমার বাবা-মা,আপুও উচ্চ শিক্ষিত।আমি একটা জিনিস খুব ভালো করে জানি জানেন,শিক্ষিত হলেই বেশি রিচ হওয়া যায়না।আবারকেউ কেউ রিচ হলেও তাদের মধ্যে শিক্ষার বিন্দুমাত্র ছিটে ফোঁটাও থাকে না।যতই সে বিশাল ডিগ্রির অধিকারী হোকনা কেন।তার মধ্যে হিতাহিত জ্ঞানই অর্জিত হয়না।আহসান নিজের রাগকে কাবু করতে না পেরে সজোরে একটা চর লাগায় রিমির গালে।রিমি ছিটকে গিয়ে সোফার উপর পড়ে।এরই সাথে দরজার ঠকঠকানির আওয়াজ বেজে ওঠে।আহসান নিজেকে স্বাভাবিক করে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।আহসান দেখে বাহিরে সম্পা দাঁড়িয়ে আছে কফির মফ হাতে নিয়ে।(অনেকেই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছেন রুমি আর রিমির নাম নিয়ে।তাই কাজের মেয়ের নামটা রুমি বদলে সম্পা দিলাম)। সম্পা রুমে ঢুকবে কি আহসান ওকে বাধা দেয়।
-রুমে ঢুকতে হবে না কফিটা আমাকে দিয়ে চলে যাও।
-আচ্ছা বলে কফির মগটা আহসানের হাতে তুলে দিল।,আপনারে খালা ডাকতে কইছে। কি যেন কইবো কইলো খুবই আজ্জেনড নাকি।
-ওটা আজ্জেন্ড নয়,আর্জেন্ট ওকে!এখন যাও এখান থেকে।
-সেম টু সেম আপনি বুঝতে পারছেন সেইডা হইলেই হইলো।নুতান ভাবি কই?দেখতাছি না।
-বেশি কথা না বলে এখান থেকে যাও বলছি।ঝারি খেয়ে চলে আসে সম্পা।
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৭(বোনাস পার্ট২)
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
রিমির ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে।সাথে দুটো আঙুলের ছাপ ও বসে আছে।দাগ ওর খুব অপছন্দের।মুখে সামান্য কিছুর দাগ দেখলে কান্না পায় ওর।আয়নার সামনে গিয়ে একগাদা পাউডার মেখে নিলো।কিন্তু তাও যেন দাগ লুকাতে ব্যর্থ হলো।সম্পা খাবার নিয়ে এসে দেখে রিমি চাপা শব্দে কাঁদছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।সম্পা বড় বড় পা ফেলে রিমির কাছে গিয়ে বলে,ভাবি আপনি কাঁনদেন ক্যান?
সম্পাকে দেখে রিমি তরিঘরি করে চোখ মুছে নিয়ে বলে,কই নাতো।
-আপনি মিছা কথা ক্যান কইতাছেন?
-আমি মিছে কথা কেন বলবো!আজব।
-তাইলে আপনার নাক, মুক, চোখ ফোলা ক্যান হুম?ওমাগো আপনার গালে কিসের দাগ পড়ছে?
-কিছু না বলছি তো। তুমি কিছু মনে না করলে এখন যাও এখান থেকে। আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দাও।
-আমি যাইতাছি খালারে ডাইকা আনি।এই বলে সম্পা চলে যাচ্ছিলো কিন্তু রিমি আটকে নেয়।
-এই না,এটা করবেনা।
-আমি করুম,আপনি আমারে কিছু কইবেন না তাই খালারে ডাকি আনতাছি।
-আচ্ছা যাও বলো গিয়ে।কিন্তু তারপর আমি আর কখনো তোমার সাথে একটা কথাও বলবো না বলে দিলাম।(অভিমানী সুরে)
-তাইলে কন কি হইছে!
-মশা মারতে গিয়ে গালে,রিমিকে আটকে দেয় সম্পা।
-এই পুরাতন বাহানা আর চলে না ভাবি।অন্য কিছু কন।কইলেও কি?আমি তো জানি আপনারে ছোটসাহেব মারছে।
রিমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে,
-তুমি কিভাবে জানলে!
-আমি দরজার বাহিরে থেইকা সব শুনতাছিলাম।আপনারে ছোটসাহেব দ্যাকতে পারেনা তাইনা ভাবি!
-হুম,তুমি তো জানোই আমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে।আচ্ছা ছাড়ো।তুমি বলো উনি কি চলে গেছেন হসপিটালে?
-হুম।আপনি তাড়াতাড়ি খাইয়া নেন।আর প্লেট আমি নিয়া যামুনে।
-আচ্ছা,আর তুমি এই মারার কথাটা মাকে বলোনি তো?
-না বলিনাই।খালা যদি ছোটসাহেবরে বকা দেয় তাহলে হেয় তো আমারে ধরবো আইসা।এই ভয়ে কইনাই।
-ভালো করেছো।
দুপুর বেলা°°°°°
আহসান বাসায় এসেই ল্যাপটপ নিয়ে অনলাইনে হসপিটালের কাজ করতে শুরু করে দেয়।রিমি বসে বই পড়ছিল আহসানকে দেখতে পেয়ে ওর বই পড়ার মুডটাই খুব বেশিই খারাপ হয়ে গেল।রিমি উঠে নিচে যাবে কি আহসান বলে ওঠে,শোনো।
রিমি পিছনে ফিরে তাকায় মুখ ভাড় করে।তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,জ্বি।
-এই ওয়েন্টমেন্ট টা গালে লাগাও।ব্যাথা কমে যাবে।
-আমার কিছু হয়নি এতো ব্যস্ত হবেন না।
আহসান উঠে দাঁড়িয়ে রিমির দিকে তেড়ে যায়।তারপর বলে,আমি যা বলছি তাই করো।ফেসে দাগ একেবারে বসে যাওয়ার আগে ওয়েন্টমেন্টটা লাগিয়ে নাও।
-লাগবে না বলে চলে যেতে নেয় কিন্তু তার আগে আহসান রিমির একহাত টেনে ধরে।রিমি ওর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছে না।
-আমার হাতটা ছাড়ুন আমার লাগছে।
-ছুটাছুটি করলে আরো লাগবে।
রিমি তাও হাত ছাড়াতে ব্যস্ত।আহসান রেগে গিয়ে রিমিকে জোড় করে কোলে তুলে নিল।রিমি আহসানের এরুপ কাজে বেশ অবাক হয়ে গেল।আহসান এরকম কিছু করবে বুঝতে পারেনি ও।আহসান রিমিকে সোফায় বসিয়ে রাগী সুরে বলল,keep silence you damn it.
রিমি জেদ দেখিয়ে উঠে যেতে নিবে তখন আহসান রিমির দু বাহু চেপে ধরে।
-কি করছেন আপনি!যেতে দিন আমায়।
-নড়াচড়া করলে আরেকটা পড়বে কানের নিচে।now finger on your lips!চেচিয়ে বলায় কেঁপে ওঠে রিমি।তারপর স্থির হয়ে যায়।রিমিকে শান্ত হতে দেখে আহসান বলে,That’s like a good girl..তারপর আলতো করে রিমির গালে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিতে থাকে।রিমি এক ধ্যানে আহসানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কাছে এই আহসানকে খুব অচেনা লাগছে।রিমিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহসান বলল,
-ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?এখন একটু রেস্ট নাও।ঘুম থেকে উঠে দেখবে পেইন কমে গেছে আর দাগও ভ্যানিশ হয়ে গেছে।
রিমি বাধ্য মেয়ের মতো ঘুমিয়ে গেল।এরপর আহসান স্টাডি টেবিলে গিয়ে পুনরায় নিজের কাজে মন দিল।
#চলবে?
(আগামী পর্বে কেউ একজন আসতে চলেছে🥰)
#চলবে?
(আম্মু খুবই অসুস্থ।সব কাজ সামলে গল্প লিখাটা খুব টাফ হয়ে গেছে।তবুও ট্রাই করবো আজ আরেকটা পার্ট দেওয়ার।হ্যাপি রিডিং)