তোলপাড় পর্ব ৪+৫

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৪(বোনাস পার্ট)
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

পুরো শপিংমল জুড়ে কোলাহল।মানুষের বেশ ভীড়।এটাই তো স্বাভাবিক।আহসান রিমিকে নিয়ে কখনো ড্রেসের শপে যাচ্ছে।আবার কখনো জুয়েলারির।প্রায় দু ঘন্টা ধরে ওরা মলে।কিন্তু এখনো অবধি একটা সুতোও কেনা হয়নি।এর কারণ আর কেউ নয়,রিমি নিজে।ওর যেন কিছু পছন্দই হচ্ছে না।পছন্দ হচ্ছে না বললে ভুল হবে।রিমির পছন্দ ঠিকই হচ্ছে তবে দাম শুনে ওর সব পছন্দ অপছন্দে পরিনত হয়ে যাচ্ছে।ওর যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটার দাম শুনে একই কথা বলছে,তেমন ভালো লাগছে না।আহসান টলার করতে না পেরে দাঁতে দাঁত চেপে বলেই ফেলল,তুমি কি ডাইমন্ড বা গোল্ডের ড্রেস নিতে চাচ্ছো?

আহসানের এমন উদ্ভট প্রশ্নে রিমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।আহসানের কথা বুঝতে না পেরে রিমি জিজ্ঞেস করে,কেন?

-তুমি যে এতো এক্সপেন্সিভ ড্রেসগুলো ইগনোর করছো তাই বললাম।তোমার কি ডাইমন্ড বা গোল্ডের ড্রেস লাগবে!লাগলে বলো তাই নেই।

রিমি বুঝতে পারলো আহসান বিরক্ত হয়ে কথাটা বলেছে।

-আসলে আমি,রিমিকে থামিয়ে আহসান বলে,থাক আমি কিনে দিচ্ছে আমার পছন্দ মতো। তোমাকে পছন্দ করতে হবে না।

রিমি মনে মনে বলে,এই কাজটা আগে করলেই হতো।সময় তো নষ্ট হতো না আপনার।তাছাড়া আমি যেগুলো পছন্দ করেছি সেগুলো খুব দামি।পরে আপনিই বলতেন আমাদের মতো মিডিলক্লাস,থার্ডক্লাস মেয়েদের এসব মানায় না।

-কি ভাবছো!আমি কিন্তু বাড়িতে চলে যাব এখন।(বিরক্তি নিয়ে)

-কিছু ভাবছিলাম না।আপনি যা কিনে দেবেন তাই হবে।

আহসান ওর পছন্দ মতো কিছু থ্রি পিস টপ্স আর কিছু প্লাজু কিনে দেয়।তারপর সেগুলোর সাথে কিছু জুয়েলারিজ ও জুতো কিনে দিলো।

ওরা শপিং সেরে বাসায় আসা মাত্র ড্রইং রুমে কিছু অচেনা লোকজন দেখতে পায়।তারা অপার সাথে কিসব বলাবলি করছে। আহসান গিয়ে অপাকে জিজ্ঞেস করে,মম who they are?

-ওহ তুোমরা চলে এসেছো!এনাদেরর কালকের রিসিপশনের জন্য কথা বলতে ডাকা হয়েছে।কিছু লোক রান্না,কিছু লোক ডেকোরেশন আর কিছু লোক আমাদের সবার জন্য ড্রেস বানাবে তার মাপ নিতে এসেছে।

-reception!কিসের?

-তোমাদের বিয়ের।কালতো বউভাত তাই তোমার বাপি এনাদের ডেকেছেন।

-আবার নিউ ড্রামা শেট!আহসান বিরক্তিকর ফেস করে উপরে চলে যায়।আর রিমি এদিকে ওর জিনিসপত্রের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

-তুমিও উপরে যাও মা।এসব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন!এই রুমি,

-জ্বি খালা কন।

-রিমিকে সাহায্য করো ব্যাগগুলো নিয়ে যেতে।

-না মা,আমি পারবো নিয়ে যেতে।তুমি তোমার কাজ করতে পারো,আমি যেতে পারবো রুমিকে বলে ও রুমে চলে আসে।এসে দেখে আহসান ঘুমিয়ে পড়েছে।রিমি ব্যাগগুলো থেকে একটা থ্রি পিস বের করে শাড়ি বদলে আসে।নিজেকে নিজে আয়নায় দেখে বলে,বাহ!ড্রেসটা খুব সুন্দর তো!সব ড্রেসই ভালো লেগেছে আমার।ভ্যাম্পায়ার টার চোখ আছে বলতে গেলে।কথাটা বলে জিভে কামড় বসায়।তারপর উঁকি দিয়ে দেখে আহসান জেগে আছে কিনা।আহসানকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে রিমি যেন জীবন ফিরে পেল।তারপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,যাক বাবা উনি ঘুমাচ্ছেন।

নইলে আমি যেতাম চলতি ট্রেনের নিচে।হুহহ।

কিছু সময় পর রুমি দুজন ফ্যাশন ডিজাইনারদের নিয়ে আসে আহসানের রুমে।রিমি তখন বারান্দায় বসে ওর আম্মুর সাথে কথা বলছিলো।রুমির ডাকে রুমের ভেতর যায়।তারপর বলে,কি হয়েছে!কিছু বলবে আমায়?

-এনাগো নিয়া আইছি আপনার আর ছোটসাহেবের জামাকাপড়ের মাপ নিব।ছোটসাহেবরে ডাক দেন। আমি যাই গিয়া দেহি রান্নার কি অবস্থা।একনাগাড়ে বকবক করে চলে যায় রুমি।

-ম্যাম আপনি একটা লেহেঙ্গা চুজ করুন এই বলে ছেলে ডিজাইনারটা একটা বই এগিয়ে দিলেন।

রিমি বইটা হাতে নিয়ে বলে,

-লেহেঙ্গা বানাতে বলেছে?

-জ্বি মিসেস রঞ্জিত আপনাকে লেহেঙ্গার ডিজাইন দেখাতে বলেছেন।আপনি আপনার হাসবেন্ডকে ডাকুন।উনি শেরোয়ানির ডিজাইন পছন্দ করার পর আমরা মাপ নেব।

-আমি কিভাবে ডাকবো!আপনি ডাকুন।

-সরি ম্যাম,আপনি ডাক দিলে ভালো হতো।প্লিজ কুইক। আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে।(মেয়ে ডিজাইনারটা বলল)

-আচ্ছা ডাকছি আমি।

মুখে খুব সহজে বলে দিল রিমি কিন্তু ভয়ে ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে ইতোমধ্যে।রিমি ধির গলায় বলল,শুনছেন!আপনাকে ডাকছে।এতো আস্তে বলেছে যে ও নিজেই শুনতে পেল না।

-ম্যাম একটু লাউডলি বলুন প্লিজ।

-জ্বি বলছি।রিমি আহসানের কানের কাছে গিয়ে খুব জোড়ে বলল,উঠুন। আহসান লাফিয়ে উঠে চিল্লানি শুনে।আহসান কানের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল।তারপর উচ্চস্বরে বলল,এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন?তোমার জন্য কি শান্তিতে ঘুমাতে পারবো না!ননসেন্স কোথাকার।

রিমি দু কানে হাত চেপে বলে,আমি কিছু করিনি।

এনারা ডাকতে বলেছে।তাদের দেখিয়ে দিয়ে বলল।

আহসান তাদের দেখে নিজের রাগকে সংযত করে বলে,আপনারা কি করছেন এখানে?

-আমাদের মিসেস রঞ্জিত পাঠিয়েছেন,আপনাদের দুজনের ড্রেসের মাপ নেওয়ার জন্য।আপনি চাইলে পরে নেব।এখন আসি।ওনাদের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে কতটা ভয় পেয়ে আছেন।রিমি যে কেন আহসানকে ডাকতে চায়নি সেটাও বেশ ভালো করে বুঝতে পেরেছেন ওনারা।

-no problem,you can continue your work…

তারা তাদের সব ফরমালিটিস শেষ করে চলে যান।তারা চলে গেলে আহসান ধমক দিয়ে বলে,মাথায় কি আছে তোমার?এভাবে কেউ কাউকে জাগিয়ে তোলে!আর ইউ ফুল ইউ সিলি গার্ল?প্রায় আধ ঘন্টা ধমক আর ঝাড়ির লেকচার দিয়ে চুপ হয়ে যায় আহসান।
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৫
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

মৃদু হাওয়া বইছে।শীতল আমেজে পরিবেশটাও যেন তরতাজা হয়ে উঠেছে।আধার নেমেছে তবে আকাশে কোনো তারা নেই তবুও যেন আকাশ টা ঝলমলে হয়ে আছে।এমন মনোমুগ্ধকর আবহাওয়ায় চুল উড়োতে বেশ লাগছে রিমির।গত ২৪ ঘন্টার সব ক্লান্তি ভুলে প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে ও।কিন্তু কে জানে ওর এই শান্তি ক্ষনস্থায়ী?

-তুমি বেলকনিতে কি করছো এতো রাতে?জ্বর একটু কমেছে কি কেয়ারলেস হয়ে যাবে!

পেছনে তাকাতেই রিমি আহসানকে দেখতে পায়।আহসানকে দেখে ওর এতোক্ষণে জমানো সব আবেগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।রিমি বলে,আপনি কখন এলেন?

-মাত্র।রাত তো ১টা প্রায়,ঘুমাওনি কেন?তোমার শরীর ভালো নেই জানো না!

রিমি হালকা হেসে বলে,ভালো আছি আমি।আপনি যেই মেডিসিনটা দিয়েছিলেন,ওটা নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তো জ্বর চলে গেল।আর তো আসেনি!মনে হচ্ছে আসবেও না।আপনি চিন্তা করবেন না।আমার জন্য আপনাকে বিপদে পড়তে হবে না।

-আর কি বিপদে ফেলবেন আমায়!যতটা ফেলার তো ফেলেই দিয়েছেন।এখন শুধু কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিন বসে বসে।

-আমি কি করেছি বলুন তো?আপনার বাবা আর স্রুতির বাবার সম্মান রক্ষার্থে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি এটা আমার দোষ!নাকি আমি আপনাদের মতো বিত্তশালী পরিবারে থেকে বিলং করিনি,এটা আমার দোষ!কোনটা বলুন?

-আপনি স্রুতির কথাটা আগে থেকে কেন বলেননি যে ওর আফেয়ার আছে?আপনি যদি আগে থেকে বলে দিতেন তাহলে তো এতো কিছু হতো না।না হতো বিয়ের আয়োজন,বিয়ের দিন না পালাতো স্রুতি আর আপনার আর আমার বিয়েও হতো না।আমি আগেই বিয়ে cancel করে দিতাম।তো এই সব কিছুর মূলে আপনিই আছেন।আপনি সব কিছু প্লান করে করেছেন,যাতে আমার মতো বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করতে পারেন।

-ওই ঘুরে ফিরে এক কথা!আপনি বড়লোক আর আমি কাঙালি তাইতো?এতই যখন সমস্যা আমাকে নিয়ে,তাহলে কালই তালাক দিয়ে দিন আমায়।নিয়ে আসুন গিয়ে তালাকনামা।গত রাত থেকে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি আপনার এইসব অপমানজনক বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা শুনতে শুনতে।আমি মানুষ হ্যাঁ!আমার বাবা মা তুলেও বলেছেন আপনি।গরীব বলে কি রাস্তার কুকুরের মতো আচরণ করবেন?না কালই ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত হন আপনি।কথা গুলো বলে ওরনা দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।

-হুম দেব।খুব শীঘ্রই দেব।কিন্তু এখন নয়,বাপি বলেছে কিছুদিন যাক তারপর।

-ওহ,বাবা ছেলের দেখি আগে থেকেই সব প্লান করা।এসব তাহলে আপনাদের কার্সাজি।আর ব্লেম আসলো আমার ঘাড়ে!বাহ।চমৎকার।

-যা হচ্ছে সব তোমার জন্যই।তুমি সব কিছু বলে দিলে এতো সব করতেই হতো না।আর যা ইচ্ছে ভাবো হু কেয়ারস?এখন রাত হয়েছে গিয়ে শুয়ে পড়ো।

-শুচ্ছি আপনি যান।

-কোথায় শোবে?আজকেও এই বারান্দায়?

রিমি রাগি ভাব করে বলে,হুম।তাছাড়া আর কি আছে আমার কপালে!

-এখানে শুয়ে আবার জ্বর বাধাবে।তারপর আমাকে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে তোমার সেবায় লেগে যেতে হবে।সারাদিন কাজ করি বাড়িতেও কি শান্তি পাবোনা?no ways..তুমি ভেতরে গিয়ে শোও।

-না,আপনি যেভাবে অপমান করে বিছানা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেনন তা দেখে আমার আর ইচ্ছে নেই।

-বিছানায় কে শুতে বলেছে?তুমি সোফায় শুবে।

-নাহ!ওতো সুখ আমার সইবে না।আমি তো কাঙালি তাই এউ বারান্দার মাটিই যথেষ্ট আমার জন্য।(কান্নাজড়িত গলায়)

-আপনি যাবেন নাকি আপনাকে এখনি আপনার বাবার বাড়ি দিয়ে আসবো?

-বাবা তো রেগে আছে আমার উপর।তাছাড়া আমরা তো কাঙালি।আমাদের সোসাইটিও তাহলে কাঙালি। সো এখন আমাকে বাবার বাসায় দিয়ে আসলে সেখানকার মানুষেরা নানান কথা বলবে আমাকে নিয়ে।তাই আর যাই করুন না কেন এটা করবেন না প্লিজ(হাত জোড় করে)

-করবো না যদি আমার কথা মতো কাজ করো তো।

রিমি কিছু না বলে বারান্দায় পাতা বালিশ চাদর নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।আহসান ও ড্রেস বদলে বিছানায় গা এলিয়ে কিছুক্ষণ ফোন ঘাটে।তারপর ঘুম ঘুম ভাব আসলে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।

ওদিকে ঘুম নেই রিমির চোখে।অনবরত কেঁদে চলেছে চাদরের নিচে মুখ লুকিয়ে।মানুষ কতটা নির্দয় হতে পারে তা ওর জানা ছিলো না।আহসানের মতো লোকের পাল্লায় পড়ে জানতে পারলো।কি জানি আর কতো কি সইতে হবে ওকে?পরস্পরের মধ্যে এতটা দূরত্ব ভেদ করে এক চিলতে ভালবাসার রোদ ওদের মাঝে কখনো কি দেখা দেবে কোনো এক প্রহরে!

#চলবে?

(আমি শেষ করবো বলেই লিখছি।তাই কাউকে দয়া করে নেক্সট লিখতে হবে না।পারলে গঠনমূলক মন্তব্য করুন।এতে লিখার আগ্রহ পাবো।হ্যাপি রিডিং দোস্ত😍)
#চলবে?
(আরেকটা পর্ব দিলাম😉এবার কেউ কমপ্লেইন করতে পারবেন না ছোট হয়েছে এই বলে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here