তোলপাড় পর্ব ২+৩

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ২
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

এনার তো খুব জ্বর এসেছে!এখন আমি কি করি?

খুব চিন্তায় পড়ে যায় আহসান।তারপর ওয়াশরুম গিয়ে এক বালতি পানি নিয়ে আসে।নিজের রেইনকোর্ট টা বের করে রিমির মাথার নিচে রেখে পানি ঢালতে শুরু করে।

– জাস্ট এনাফ ইজ এনাফ! সকাল সকাল ঘুমের বারোটা বাজিয়ে কিসব করতে হচ্ছে আমায়!একে বারে নেওয়া যাচ্ছে না।ডিজগাস্টিং।

কয়েক মিনিট পানি ঢালার পর সব কিছু সরিয়ে একটা রুমাল ভিজিয়ে রিমির মাথায় দিয়ে শাওয়ার নিতে চলে যায় আহসান।ফিরে এসে দেখে রিমি নড়েচড়ে উঠেছে।

-Don’t wake up,keep rest..

রিমি চোখ দুটো কচলাতে কচলাতে উঠে বসে।তাই দেখে আহসান অগ্নিমুর্তি হয়ে কথার বাণ দিয়ে এ্যাটাক করে।

-এই তুমি কি কানে বধির?আমি কি বলেছি বঝোনি?আমি রেস্ট করতে বলেছি সো ঘুমোও।

ধমক খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে রিমি।আহসান এসে রিমির হাতে থার্মোমিটার দিয়ে বলে,চেক করো এখন জ্বর কতখানি।রিমি মুখে থার্মোমিটার ঝুলিয়ে নিলো।১০ মিনিট হয়ে গেল তাও বের করলো না।আহসান কপাল ঘুচিয়ে জিগ্যেস করে,আমি কি মুখে গুজে বসে থাকতে বলেছি!জ্বর মাপতে বলেছি আমি।

রিমি ভাঙা গলায় বলে,আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি বকা দিবেন তাই বের করিনি।

-তোমার তো দেখছি গলাটাও বসে গেছে।প্রথমে আদা দেওয়া চা খেতে হবে।এখন বলো জ্বর কতখানি?

রিমি থার্মোমিটার চেক করে বলল, ১০০° আছে এখন।

-কিছুটা কমেছে তবে পুরোপুরি নয়।এরই মাঝে দরজা খটখটানির শব্দ হয়।রিমি উঠে যেতে নেবে তখন আহসান বলে ওঠে,আস্তো বেকায়দার মেয়ে তো তুমি!আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি, দরজাটা আমিই খুলছি ওকে?

রিমি ভয়ে মাথা নিচু করে নেয়।আহসান গিয়ে দরজা খুলতেই কাজের মেয়ে রুমি সাইড কেটে ডিরেক্ট রুমে ঢুকে যায়।

-গুড মানিং নুতান ভাবি।ছোটসাহেবের জন্য কফি আর আপনার জন্য চা বানাইয়া আনছি।

রিমি হালকা হেসে বলে,ওটা গুড মানিং নয়,গুড মর্নিং হবে।

-ওই একটা হইলেই হইলো।সেম টু সেম।আপনি কি চা খান?নাকি কফি নিয়া আসমু?

-না থাক,আমি চা কফি কোনোটাই খাইনা।

-ওমা গো!আপনার হাতে জ্বর মাপানি ক্যান?জ্বর আইছিলো নাকি?বলেই হেসে দিলো।

আহসানের ক্রোধ এবার রুমিকে গ্রাস করলো,এতো গল্প কিসের?জ্বর এসেছে এতে হাসার কি হলো?যাও গিয়ে একটা রঙ চা নিয়ে এসো।

-আর এই দুধচা ডা কি করবো?

-আমার মাথায় ঢালো।

রুমি মহল বুঝতে পেরে চুপচাপ দুধচা টা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।রুমি চলে গেলে আহসান রিমিকে বলল,তুমি চেঞ্জ করে নাও আর পারলে ফ্রেশ হয়ে আসো।রিমি এক দিকে মাথা কাত করে সম্মতি জানালো।তারপর এক কদম বাড়াতেই ওর মনে পড়ে যে ওতো কোনো কাপড় নিয়ে আসেনি এখানে।রিমিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহসান ধমক দিয়ে বলে,দাঁড়িয়ে আছো কেন?

-আ আ আসলে আমার তো কোনো জামা কাপড় নেই এখানে।গতকাল যেই ড্রেসটা পড়ে এসেছিলাম সেটা আপনার মায়ের রুমেই ফেলে এসেছিলাম।কারণ,,

-থাক বুঝেছি।তুমি এইসব ভাড়ি গহনা গুলো খুলে ওয়াশরুমে যাও আমি মমকে গিয়ে বলছি কিছু একটা ব্যবস্থা করতে।

-কোথায় দেখি তোমার নাকি জ্বর আসছে!

এক ঝাক আতংক নিয়ে অপা রুমে প্রবেশ করলো।

-মম আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম।ওরতো কাপড় নেই এখানে।

-আমি রুমিকে দিয়েছি মাত্র, ও নিয়ে আসছে।দেখি মেয়েটার কি হাল হয়েছে।একি!তোমার মুখের এই অবস্থা হয়েছে কেন?জ্বর আসলো কিভাবে!

-খালা আপনি যে কি কন!নতুন বউয়ের জ্বর তো আইবোই।(পেছন থেকে রুমি বলে)

আহসান কিছু বলার আগেই অপা চোখ রাঙিয়ে বলে,তোকে কিছু বলতে হবে না।শাড়ি গুলো রেখে গিয়ে কাজ কর।

-জ্বি খালা বলে চলে যায়।

-কি হলো! বলো জ্বর কিভাবে আসলো?

রিমি আহসানের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,আসলে কাল রাত থেকে পেটে কিছু পড়েনি তাই হয়তো জ্বর এসেছে।

-ইশ,কাল এতো ঝড় ঝামেলার মধ্যে তোমাকে খাবার দেওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছিলাম।তুমি ফ্রেশ হও আমি রুমিকে দিয়ে তোমাদের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

-নো মম,আমি এখনি হসপিটালে যাচ্ছি একটা ইমার্জেন্সি পড়ে গেছে।ওখানেই ব্রেকফাস্ট করে নেব।

-ও,ঠিক আছে।আর তুমি একটু তাড়াতাড়ি করো নইলে অসুখ সারবে না।জ্বর বসে যাবে।এটা কিন্তু ডাক্তারদের বাড়ি,রুলস রেগুলেশন্স খুব টাইমলি মেইনটেইন করে চলতে হবে।

রিমি মাথা কাত করে বলে,ওকে।

-গলাটাও দেখছি বসে গেছে।আমি রুমি কে দিয়ে আদা চা পাঠাচ্ছি বলে চলে যায় অপা।

রিমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে আহসান আয়নার সামনে চুল ঠিক করছে।আহসান আয়নার ভেতর থেকে দেখলো রিমি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

-এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?খাবার দিয়ে গেছে খেয়ে মেডিসিন নিয়ে নিন।আমি প্রয়োজনীয় মেডিসিন বিছানার উপর রেখে দিয়েছি,এই বলে ঘড়ি পড়তে পড়তে চলে যাচ্ছিলো তখন রিমি আহসানকে আটকে নেয়।

-আপনি তো টাইটা ঠিক করে বাঁধলেন না।

-মম বেঁধে দেবে।

-আমি পারি যদি কিছু মনে না করেন আমি বেঁধে দেই!

-কোনো দরকার নেই।বেশি বাড়াবাড়ি করতে আসবেন না এই বলে চলে যায় আহসান।
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৩
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

রিমি গোসল করে কোনোরকম শাড়িটা পেচিয়ে খাবার খেতে বসে যায়।গপগপ করে এক নিমিষেই প্লেট সাফ করে ফেলল।প্লেটটা চেটেপুটে খেয়ে পানিটা খাওয়া মাত্র ওর কলিজা ঠান্ডা হলো।বেচারি পুরো রাত না খেয়ে ঘুমিয়েছে।তাই এভাবে তাড়াহুড়ো করে খেলো।তারপর এঁটো প্লেটটা নিয়ে ধির পায়ে নিচ অবধি যায়।খাবার টেবিলে প্লেট টা রেখে যেই ঘুরতে যাবে ওমনি শাড়ির সাথে পা বেজে পড়ে যায়।রুমি দেখতে পেয়ে ফিক করে হেসে দেয়।রান্নাঘর থেকে অপা বেরিয়ে এসে বলে,তুই হাসছিস কেন রুমি?কি হয়েছে?

-আমাগো নুতান ভাবি তো চিৎপটাং হয়ে পড়েই গেছে হিহিহি।

অপা নিচিয়ে তাকিয়ে দেখল রিমি নিচে পড়ে আছে।গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে দাঁড়ানোর জন্য।কিন্তু এমন ভাবে শাড়ি পেঁচিয়েছে যে কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।

-হায় আল্লাহ!তুমি এখানে কি করছো বলে রিমিকে ধরে উঠায়।রিমি কোনো মতে দাঁড়িয়ে আছে অপার হাত ধরে।লজ্জায় যেন ওর মাথা কাটা যাচ্ছে।এমন অবস্থায় এন্ট্রি মারলো রঞ্জিত তালুকদার,মানে রিমির শ্বশুরমশাই।

-এসব কি হচ্ছে এখানে?
(রাগান্বিত স্বরে বললেন)

-আসলে মেয়েটার জ্বর তাই পড়ে গেছে আর এদিকে রুমিরানী তা দেখে হেসে চলেছে।

-সেকি জ্বর বাধিয়ে ফেলেছে!জ্বর বাঁধিয়ে নিচে আসার কি প্রয়োজন ছিলো?কি দরকারে নিচে নেমেছো তুমি?(ধমক দিয়ে বলে)।ধমক খেয়ে রিমির পরাণ যায় যায় অবস্থা।একে উদ্ভট ভাবে শাড়ি পড়ে লজ্জাজনক সিচুয়েশনে আছে,তার উপর ধমক খাচ্ছে।সব মিলিয়ে রিমির নাজেহাল অবস্থা প্রায়।রিমিকে চুপ করে থাকতে দেখে রঞ্জিত আবার জিজ্ঞেস করে,এই মেয়ে আন্সার দিচ্ছো না কেন?রিমি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।বিয়ের প্রথম দিন শ্বশুরের ধমক খেতে হবে তা ওর ভাবনার ও অনেক বাহিরে ছিলো।

-আহা!এভাবে বোকো না মেয়েটাকে।এমনি শরীর ভালো নেই।আমি জিজ্ঞেস করছি ওয়েট।তুমি এখানে কেন এসেছিলে রিমি?

রিমি ধির গলায় বলে,আমি এঁটো প্লেট রাখতে এসেছিলাম।

-অপা ওকে বলে দাও আমাদের বাড়িতে কাজের লোকদের মাস গেলে স্যালারি দেই।বসে বসে বেতন নেয়না তারাএসব কাজ তারাই করে।তাই কাউকে এসব কাজ করতে হবে না।অবশ্য ওদের বাড়িতে তো আর কাজের লোক নেই,তাই নিজের কাজ নিজেই করে ওরা।যে যেমন পরিবেশে বড় হয়েছে তার স্বভাব তো তেমনি হওয়ার কথা।কিন্তু আমি একটা কথা বলে রাখলাম,ও কিন্তু এখন আমার বাড়ির বউ তাই ওকে আমাদের বাড়ির নিয়ম অনুসারে চলতে হবে।আর এভাবে শং সেজে দাঁড়িয়ে আছে কেন?এটা শাড়ি পড়েছে নাকি অন্য কিছু?এখনি গিয়ে ঠিক করতে বলো।আর রুমি আমাকে খেতে দে হসপিটালে যেতে হবে।

-দিতাছি সাহেব।

রঞ্জিত বেশ কড়া ভাবে কথা গুলো বলে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো।অপা রিমিকে ওর রুমে নিয়ে গেল।

-তুমি কিন্তু কিছু মনে করো না।তোমার শ্বশুর একটু কড়া টাইপের মানুষ।কিন্তু মনটা বেশ ভালো।

-আমি বুঝতে পেরেছি আন্টি।

-সেকি! আন্টি কেন বলছো?মা বলবে আমায়।আমি তোমার শ্বাশুড়ি বুঝেছো।

-ঠিক আছে মা।

-এইতো লক্ষি মেয়ে।আচ্ছা,তুমি এভাবে পেঁচিয়ে শাড়ি পড়েছো কেন?

-না,মানে,ইয়ে আমি,
রিমিকে আমতা আমতা করতে দেখে অপা বলে,

-বুঝেছি শাড়ি পড়তে জানো না।
রিমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উওর দিলো।

শাড়ি পড়ে রিমি চুপিচুপি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে রঞ্জিত তালুকদারের ভয়ে।অপার রুম থেকে বেরনের সময় নিয়ত করেছিলো যাতে রঞ্জিতের সামনে পড়তে না হয়।তেমনটাই হলো।রঞ্জিত মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়ছিলো,এই সুযোগে উপরে উঠে যায় ও।

-যেমন বাপ তার তেমন ছেলে।আরে আপনারা যখন আমাকে এতোই অপছন্দ করেন,তাহলে ঘরের বউ কেন করলেন আমায়!আমরা তো বলিনি আমাকে তাদের বাড়ির বউ করতে।ওনারাই তো আত্মসম্মানের দায়ে আমার সাথে ওই ভ্যাম্পায়ার টার বিয়ে দিলেন।মনে হচ্ছে জীবন টা আমার নরক হয়ে যাবে।ছেলে আর বাবা দুটোই এক।আমাকে শুধু অপমান করে কথা বলতে জানে এরা।ছেলে যেভাবে নিচু ক্লাস বলে খোটা দিল,সেম বাপটাও দিল।আমরা কাজের লোক রাখিনা বলে কি আমরা কাঙালি নাকি হু!মন চাচ্ছে এই বাপ ব্যাটাকে মাথায় তুলে আছাড় দেই।

-কাকে আছাড় দেওয়ার কথা বলছো তুমি?
আওয়াজটা শুনে রিমির কলিজা প্রায় পানিশূন্য।চোখ দুটো বড় বড় সাইজ করে পেছনে ফিরতেই রিমি আহসানকে দেখতে পায়।আহসানকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে রিমি।চোখের পলক না ফেলে একই রিয়েকশনে তাকিয়ে আছে রিমি।তা দেখে আহসান পুনরায় জিজ্ঞেস করে,এই মেয়ে!বলছো না কেন কাকে আছাড় দিবে?

-আমি তো মশাকে বলছিলাম।খুব জ্বালাচ্ছে আমায়।হুশ হুশ দূরে যা মশার বাচ্চা মশা।
জীবন বাঁচানো ফরজ।এই ভেবে মুখে যা আসলো তাই বলে দেয় রিমি।

-How peculiar!এখানে কোনো মশা আসতে পারবে না ওকে?এখানে mosquito protection আছে।আমার কাছে সময় নেই ফার্স্ট বের হতে হবে আমাদের।

রিমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে,কোথায় বের হবো আমরা?

-শপিং করতে হবে।মাত্র বাপি বললো আপনাকে নিয়ে শপিং এ যেতে।

-কেন?

-আপনার জন্য ড্রেস কিনতে বলেছে।শাড়ি নাকি পড়তে পারেন না তাই।কোথায় ভাবলাম একটু রেস্ট করবো তার ও উপায় নেই।সব তোমার জন্য হলো এই বলে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুম চলে যায় আহসান।

-আজব তো!আমি কি বলেছি যে আমায় নিয়ে শপিং এ যান!এতো অদ্ভুত কেন উনি!কখনো তুমি বলে,আবার কখনো আপনি।মাথায় ঘোড় গন্ডগোল আছে বুঝলাম।থাকবেই তো ভ্যাম্পায়ারদের লিডার যে উনি।একটা মস্ত দানবের হাতে পড়েছি রে বাবা।আগে জানলে স্রুতির বিয়েতেই আসতাম না।ভুল হয়ে গেছে বিয়ে খেতে এসে।জীবনে ভুলের খাতায় এই ভুলটাই উপরের কাতারে লিখা আছে মনে হচ্ছে।

#চলবে?
(সবাই নেক্সট না লিখে গঠনমূলক মন্তব্য করুন।ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিন।হ্যাপি রিডিং)
#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here