“তোলপাড় পর্ব ১

“নিজের বেস্টফ্রেন্ডের বাসরঘরে বউ সেজে বসে আছে রিমি।কিছুক্ষণ আগে ওর বান্ধবী স্রুতির জায়গায় ওর বিয়ে হয়েছে।স্রুতিকে তার প্রেমিকের সাথে পালাতে সাহায্য করার শাস্তিস্বরুপ ওকেই বিয়ের পিরিতে বসতে হয়েছে।রিমি ওর বাবাকে ছোটবেলা থেকে ভয় পায়।তাই বাবার এক ধমকেই দুমদুমিয়ে বউ সেজে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে রিমি।আগাম ঝড়ের আভাস পাচ্ছে ও।দরজা লাগানোর শব্দ শুনে তীব্র ভয়টা বিশাল আকার ধারণ করে নিয়েছে ওর ভেতর। ফ্লর কাঁপানো শব্দ করে কেউ একজন এগোতে লাগলো রিমির দিকে।রিমি বেশ বুঝতে পারছে লোকটি কে হতে পারে।বেচারি ঘোমটার নিয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।ঘনঘন ঢোক গিলছে আর আল্লাহ নাম জোপে যাচ্ছে।

-নামো আমার বিছানা থেকে!

হুংকার দিয়ে বলায় রিমি চট করে মাথার ঘোমটা খুলে পিট পিট করে তাকায়।সামনের লোকটির রাগান্বিত চাহনি দেখে ভয়ে কেঁদেয় দেয় রিমি।কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না আহসান।আমি আসলে…রিমি পুরো কথা শেষ করার আগেই আহসান রিমির কথার মাঝে বলে,

-আমি সব জানি।লোভি মেয়ে তুমি।নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তুমি স্রুতিকে পালাতে সাহায্য করেছো,যাতে আমাকে বিয়ে করতে পারো।

-না বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে বিয়ে করার জন্য কিছু করিনি।আমি স্রুতিকে পালাতেও সাহায্য করিনি।শুধু আমি জানতাম ও পালাবে।কিন্তু আমি বন্ধুত্বের খাতিরে বলিনি কাউকে।বরং আমি ওকে বারবার বলেছি ও যেন এমন কিছু না করে।

-শাট আপ!যতসব ছোটলোক,লায়ার,থার্ডক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে।ধমকের সুরে বলায় রিমি দু পা গুটিয়ে বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়।আহসান খাটে লাথি মেরে বলে,আমি কি বলেছি কানে যায়নি!এবার রিমি উচ্চস্বরে কেঁদেই দেয়,এ্যাআয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া,,,

-এই থামো।নেকাকান্না কাঁদতে হবে না।ওয়াটলেস মেয়ে কোথাকার।যাও সরো আমার চোখের সামনে থেকে। I say get out in front my eyes…আমি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোমার মুখ যেন না দেখি বলে কাবার্ড থেকে একটা টি-শার্ট আর টাউজার বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।

(পরিচয়ঃআহসান তালুকদার হচ্ছে গল্পের হিরো।আহসান Australia থেকে ডাক্তারি পড়া শেষ করে বিডিতে ব্যাক করে।কিছুদিন আগে বাবার হসপিটালে জয়েন করেছে।এমবিবিএস বাবার একমাত্র ছেলে সে।আহসানের বাবার নাম রঞ্জিত তালুকদার এবং মায়ের নাম অপা তালুকদার।অপা হাউজওয়াইফ।ছেলের পেছনেই সারাদিন কেটে যায় ওনার।স্রুতি আহসানের ফুপির মেয়ে।স্রুতি আমজাদ শেখ এবং রুপা শেখের একমাত্র মেয়ে।আহসান ও স্রুতি কাজিন হওয়ায়, সেই সুত্রে ওদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।স্রুতি আর রিমি একে অপরের বেস্টফ্রেন্ড।ওরা সবসময় একই কলেজ ও ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে।রিমিরা দু বোন।বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।আহসান ও স্রুতির মতো ওরা তেমন বিত্তবান নয়।রিমির বাবা নাজমুল হোসেন একজন পাবলিক কলেজের টিচার।ওর মা আম্বিয়া বেগমও পাবলিক হাই স্কুলের টিচার।রিমির বাবা মা দুজনই রিটায়ার করেছেন।রিমি মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর জব করতে চেয়েছিল।এরই মধ্যে এসব হয়ে গেল।)

আহসান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।সকালে আহসানের ঘুম ভাঙে কারো গোংরানির শব্দ শুনে।আহসান এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না।তারপর যেদিক দিয়ে আওয়াজ ভেসে আসছে সেদিকে পা বাড়ালো।আস্তে আস্তে বেলকনির দিকে যায় আহসান।সেখানে গিয়ে দেখে বেলকনির এক কোণে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে রিমি।কাঁপছে আর মুখ দিয়ে শব্দ করে যাচ্ছে অনবরত।মুখ যেন রক্তশুন্য হয়ে গেছে রিমির।ঠোঁটের লিপ্সটিক ছেতরে গেছে।কাজলটাও চোখ বেয়ে অন্যত্র লেপ্টে আছে।আহসানের কাছে রিমিকে উম্মাদের মতো লাগছে।রিমিকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে মায়াও হচ্ছে।ও রিমির কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে।তারপর রিমিকে ডাক দেয়,

-এই মেয়ে শুনতে পারছো!তুমি এখানে কেন শুয়ে আছো?এই মেয়ে, এই বলে রিমির গালে হাত রাখতেই আহসান বেশ চমকে উঠে।আর বলে,ওহ নো!এর তো খুব ফিভার হয়েছে।অসহ্যকর।এখন যদি বাপি শোনে উনি বারান্দায় শুয়ে জ্বর বাধিয়েছে,তাহলে আমি শেষ।এই মেয়ে দেখছি বিপদের পর বিপদ খাড়া করে দিচ্ছে।শেট বলে রিমিকে পাজকোলে নিয়ে নেয়।তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বেড সাইড ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার বের করে রিমির মুখে ধরে।কিছুক্ষণ পর থার্মোমিটার চেক করে বলে,ওএমজি!এনার তো ১০২° ফিভার!

#তোলপাড়💓
#সুচনা পর্ব
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here