তোলপাড় পর্ব ৪৯-৫২

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ(৪৯-৫২)
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

-ওয়াও! সো রোমান্টিক। আমার রিফাতটা যদি তোর আহসানের মতো হতো তাহলে কি যে ভালো হতো রে বোন।

-রিফাত ভাইয়াও খুব ভালো। সবাই যদি একইরকম হতো তাহলে দুনিয়ায় এতো ভ্যারাইটি থাকতো না বুঝলি?

-ঠিক। কিন্তু রিমি, আহসানের সাথে তো আমার আর দেখাই হলো না। কাল তো চলেই যাচ্ছি।

-রাতে আসবে বলেছে।

-রাত তো হয়ে গেছে অলরেডি। সেদিনের মতো আজও দেখ আসবে না হয়তো।

-আজ না আসলে তেরোটা বাজাবো ওনার।

-জানিস আমি আব্বু আম্মুকে তোর আর আহসানের কথাটা বলে দিয়েছি।

-কেন বললি? এইজন্যই আব্বু আম্মু আমাকে দেখে হাসছিল। মিষ্টি করে কথাও বলছিল।

-তা তো বলবেই। বাবা মার সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে তার ছেলে মেয়ের সুখ। তারা সবসময় চায় তাদের ছেলে মেয়ে সুখে শান্তিতে ঘর করুক।

-আপনি তো সবই জানেন। জ্ঞানের পন্ডিতমশাই। রিমি রিমলি এটা ওটা নিয়ে তর্কাতর্কি করছে। এরই মাঝে রিমির ফোনে আহসানের ম্যাসেজ আসে। রিমি ম্যাসেজটা ওপেন করেই দরজা খুলতে চলে যায়। আহসান দাঁড়িয়ে ছিলো হাতে আইসক্রিম এর বক্স নিয়ে। রিমি আহসানকে দেখা মাত্রই লজ্জায় চোখ নামিয়ে রাখলো। রিমি এই প্রথম আহসানকে দেখে রাগ না করে লজ্জা পাচ্ছে। আহসানের কাছেও ব্যাপারটা ভালো লেগেছে। একেবারে রোমান্টিক টাইপ। যেমনটা সে চাইতো।

-এভাবে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাবে নাকি ভেতরে যেতে দেবে?

রিমি এবার হচকচিয়ে যায় আহসানের কথায়। তারপর সাইডে চেপে আহসানকে ভেতরে আসার সুযোগ করে দেয়। আহসান রিমির হাতে আইসক্রিমের বক্সটা ধরিয়ে দিয়ে রিমির রুমে যেতেই রিমলি বলে ওঠে আসসালামু আলাইকুম ছোট ভাই। আহসান রিমলিকে দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারে যে ও নিশ্চয়ই রিমির বড় বোন হবে। তাই বলে, ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনি নিশ্চয়ই রিমির বড় আপু?

-হ্যাঁ, ঠিক ধরেছো। তবে তুমি কিভাবে জানলে?

-একটু একটু মিল আছে রিমির সাথে। তাছাড়া আমি শুনেছি রিমির বড় বোন আছে।

-ও, খুব ভালো। তবে শ্বশুর বাড়ি এসেছো খালি হাতে? মিষ্টি নিয়ে আসবে তো! (মজা করে বলল)

-কথাটা ঠিক বলেছেন আপু। আসলে আমার খেয়াল ছিলো না। যদি জানতাম আপনি এসেছেন তাহলে মিষ্টির দোকান নিয়ে আসতাম। তবে আমি আইসক্রিম নিয়ে এসেছি। ওয়েট করুন আমি মিষ্টি অর্ডার দিচ্ছি। এখনি চলে আসবে।

-আরে ভাই আমি মজা করেছি। তুমি যে বলেছো এটাই অনেক। আমি মিষ্টি লাইক করি না। তবে খাবারের তালিকার মধ্যে আইসক্রিম আমার খুব পছন্দের। আমি তাহলে তোমার আইসক্রিম খেতে গেলাম তুমি বসো। এই বলে বেরিয়ে আসলো রিমলি। কিছুক্ষণ পর রিমি একটা ট্রেতে আইসক্রিম সাজিয়ে নিয়ে আসলো। আহসান রিমিকে দেখেই বলল, কি করছিলে তুমি? এতোক্ষণ লাগে নাকি?

-একটু সময় তো লাগে নাকি? আচ্ছা সরি। আপনি যে এখানে এসেছেন, সেটা আপনার বাপি বুঝতে পারেনি তো? আর মাও তো চিন্তা করতে পারে আপনার জন্য!

– বাপি বুঝলেও আমার কিছু করার নেই। আর আমি মমকে বলেই আসি সবসময়। যদি কোনো প্রবলেম হয়, তাহলে মম আমাকে জানিয়ে দেবে। তাছাড়া আমার মম আমাকে খুব সাপোর্ট করে। আমার হয়ে অনেকবার বাপিকে বুঝিয়েছে।

-কথা ঠিক। আপনার মা খুব ভালো একজন মা। আমার কাছে মনে হয় উনি আমার নিজের মাই। খুব ভালবাসে আমাকে। ওনাকে দেখলে মনটাই ভালো হয়ে যায়।

-আমি শুনেছি মেয়েরা তার শ্বাশুড়িকে টোটালি সহ্য করতে পারেনা। আর তোমার নাকি শ্বাশুড়িকে দেখলে মন ভালো হয়ে যায়!

-হুম কারণ আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটেছে। শ্বশুর আমার যেমন তেমন, শ্বাশুড়ি আমার মনের মতন। বুঝলেন?

-আমার বাপিও খুব ভালো। তুমি তার উপরের আত্মাকে দেখেছো, ভেতরের না।

-হুম জানি আমি। কিন্তু আপনার বাবা টাকার মোহে ছোটকে ছোট করেই দেখে। ওনার মনটাই বিলাসবহুল।

-ঠিক তবে আমি বুঝে উঠতে পারি না বাপি আমাকে আর মমকে এতো ভালবাসে। নিজের কাজকে সম্মান করে। এমন অনেক গরীব রুগী আছে তারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনা। বাপি তাদেরও ফ্রি চিকিৎসা করে। এতো ভালো একটা মানুষ তোমার ক্ষেত্রে এতো নির্বিচার কেন?

-তা তো জানি না। এখন আইসক্রিম টা খান নইলে সব গলে যাবে। অনেকটা গলে গিয়েছেও।

-তোমার আপু আসুক তারপর।

-আপু আসবেনা বলেছে৷ ও বললো আমাদের মধ্যে আসতে চায়না তাই অন্যরুমে চলে যায়। এখন আপনি নিন তো।

আহসান রিমির হাত থেকে আইসক্রিমের বাটিটা নিয়ে নেয়৷ তারপর বলে, এভাবে আইসক্রিম খাওয়ার মজা নেই জানো।

-তাহলে কিভাবে মজা আছে?

আহসান ঠোঁটে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে আইসক্রিম নিয়ে রিমির গালে ঠোঁটে লাগিয়ে দেয়। তারপর আহসান রিমির গাল ঠোঁট থেকে আইসক্রিম খেতে থাকে। রিমি চোখ বন্ধ করে কাপড় খামছে থাকে। ইতোমধ্যে রিমির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। আহসান যেন তার কাজে ব্যস্ত। থামার নাম গন্ধই নেই। এদিকে রিমির শরীর অসাড় হয়ে এসেছে। হিমশীতল করা অনুভূতি গ্রাস করে নিয়েছে রিমিকে। আহসান রিমির গলায় ছোট ছোট ভালবাসার স্পর্শ দিতেই রিমির হৃদ স্পন্দন থেমে যায়। আস্তে আস্তে আহসান এক ঘোরের মধ্যে চলে যায়। হারিয়ে যায় তার প্রেয়সীর মায়াজালে। পূর্ণতা দেয় জমে থাকা অনুভূতিগুলোকে। সকালে আহসানের ঘুম ভাঙে ফোনের শব্দে। ফোনটা হাতে নেবে কি রিমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আহসানকে। আহসান রিমিকে সামলে কোনমতে ফোনের নাগাল পেল। তার মধ্যে কল কেটে যায়। আহসান ফোনের স্কিরে তাকাতেই বড়সড় একটা শক খেল। এখন অবধি ১০০ টার মতো মিসড কল ভেসে আছে রঞ্জিতের নাম্বার থেকে। আহসান রিমির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রিমিকে না জানিয়েই চলে গেল। এই ভেবে যে পরে রিমিকে জানিয়ে দেবে। রিমিকে ডাকলো না কারণ রিমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। বাড়িতে এসেই আহসান রঞ্জিতের মুখোমুখি হলো। রঞ্জিতের চোখ লাল। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো।

-কোথায় ছিলে রাতে?

-রিমির সাথে ছিলাম বাপি। আহসান যে এতো সহজে এভাবে মুখের উপর উত্তর দেবে তা রঞ্জিত কল্পনাও করতে পারেনি।

-তুমি কি তোমার উপর হাত তুলতে বাধ্য করবে আহসান? কখনো তো মার খাওনি আমার হাতে।

-তুমি আমার বাপি। চাইলেই আমাকে মারতে পারো।

-মুখে মুখে কথা বলাটা তোমার স্বভাব হয়ে গিয়েছে। সব ওই রিমির থেকে শিখেছো। আমার থেকে কি রিমি বেশি আপন হয়ে গেল নাকি?

-কখনোই না৷ নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে রিমির থেকেও অনেক বেশি ভালবাসি। কিন্তু সবাই সবার জায়গায় আমার কাছে প্রিয়। আমি যেমন তোমার আর মমের জায়গায় কাউকে বসাতে পারবো না, ঠিক সেভাবে রিমির জায়গায় ও অন্য কোনো মেয়েকে বসাতে পারবো না। আমি এক কথায় রিমিকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবো না৷ তাই কোনো নাদিয়াকে আমার জীবনে জড়ানোর দুঃসাহস দেখিও না। কথাটা বলেই আহসান সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। রঞ্জিত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। রাগে ফুসছে সে। চোখ যেন তার আগুন ছুড়ছে আনাচে কানাচে।

#চলবে,,,
(আর মাত্র ২-৩ টা পার্ট বাকি আছে। সবাই ভুল গুলোকে ক্ষমার চোখে দেখবেন। আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ। আপনাদের মন্তব্যই আমাকে ইন্সপায়ার করবে ভালো কিছু লেখার জন্য)

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৫০
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

দিনকে দিন আহসান আর রিমির সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়ে উঠছে। রঞ্জিত চেয়েও কিছু করতে পারছে। আর সহ্যও করতে পারছে না। রঞ্জিত নাদিয়া আর তারেকের সাথে মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আহসানকে নাদিয়ার প্রতি দুর্বল করার জন্য। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়ে উঠছে না। নাদিয়া যতবার আহসানের সাথে কথা বলতে গিয়েছে, আহসান ততবারি নাদিয়াকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারেক তার মেয়ের সাথে মিলিত হয়ে রঞ্জিতের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে এটা সম্পর্কেও রঞ্জিত এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত। সে বুঝতেও পারছে না তার জন্য কতো বড় ষড়যন্ত্র রেডি হয়ে আছে। এদিকে রিমি তার লক্ষ্যে সফল হয়েছে। সামির এবার পাস করে গেছে। শুধু পাস নয়, প্রত্যাশার চেয়েও খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এর পেছনে রয়েছে সামিরের নিরলস পরিশ্রম সাথে রিমির অক্লান্ত প্রচেষ্টা। আগের তুলনায় এইচএসসি তে এবার পাসের হার বেশি। প্রিন্সিপাল বড় করে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কলেজে। সেখানে রিমিকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে। সাথে প্রিন্সিপাল তার কথা অনুযায়ী রিমিকে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালের পদ প্রদান করেছেন। প্রিন্সিপাল সকলের সামনে সেটা ঘোষণা দিয়েছেন। রিমি আজ খুব খুশি। জীবনের বড় কোনো এক লক্ষ্য জয় করে ফেলেছে সে। রিমিকে নিজস্ব একটা ক্যাবিন দেওয়া হয়েছে। রিমি ওর ক্যাবিনে গিয়ে সর্বপ্রথম বাবা মায়ের সাথে ওর খুশি ভাগ করে নিল। তারপর আহসানকে কল দিল। আহসান বিজি থাকায় ফোন রিসিভ করতে পারেনি। রিমি দু একবার কল দিয়ে আর দিলনা। কারণ ও বুঝতে পেরেছে আহসান বিজি আছে। তারপর একে একে অপা, রিমলি, জিসান, স্রুতি সকলের সাথে কথা বলে কলেজের কাজে মন দিল। কিছুক্ষণ পর,,,

-আমি কি আসতে পারি ম্যাম?

-কে? রিমি দেখলো দরজার সামনে সামির দাঁড়িয়ে আছে। রিমি হালকা করে হেসে বলল, ইয়েস।

সামির একটা র‍্যাপিং করা বক্স নিয়ে ভেতরে ঢুকে বলল, থ্যাঙ্কিউ ম্যাম। আপনার জন্য আমি এ যাত্রায় পাস করে গেলাম। তাই আপনার জন্য ছোট একটা গিফট আনলাম। এক্সেপ্ট করলে খুশি হবো।

-আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি কেবল। তার জন্য উপহার দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

-প্লিজ ম্যাম।

-আমি তোমাকে আগেও মানা করেছিলাম সামির।

-জানি তবে এই গিফট টা স্পেশাল। তাছাড়া আপনাকে আমি কিছু বলতে চাই। যেটা বলার জন্য আমি এতদিন ধরে ওয়েট করছিলাম। আজকেই সঠিক সময়।

-কি এমন বলবে?

-আগে গিফট টা খুলে দেখুন তারপর বলছি। প্লিজ
ম্যাম। আমার কথাটা রাখুন।

রিমি গিফট খুলে দেখলো সেখানে একটা শাড়ি আছে। শাড়ি দেখে রিমির মুড একেবারেই বিগড়ে গেল। রিমির মুখে কান পঁচে যাওয়ার মতো এক্সপ্রেশন ফুটে উঠেছে।

-তুমি শাড়ি গিফট দেওয়ার সাহস কোথায় পেলে? আমি কি তোমার ফ্রেন্ড লাগি নাকি?

-ম্যাম আমি আপনাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ওইদিনই আপনাকে ভালো লেগে যায়। আপনি যদিও বিবাহিতা। তবুও আমি আপনাকে এক্সেপ্ট করতে পারবো। কারণ আমি জানি ভালবাসা ছোট- বড়, ধনী-গরিব, কালো-ফর্সা দেখে হয়না। ভালবাসা মন দিয়ে হয়। আমি সেই মনটাই আপনাকে উৎসর্গ করেছি। হয়তো এটা সমাজের চোখে খারাপ। আপনাকে নিয়ে আমার ভাললাগা,ভালবাসার বিষয়টি জানলে লোকে নানান কথা বলবে। কিন্তু আমি সেটা নিয়ে ভাবিনা। আমি জানি আমি শুধু আপনাকে ভালবাসি। তাইতো যেই আমি কখনো বই ধরে দেখি না কেমন। সেই আমি কিনা পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠেছি। ফলে ফেইলিয়ারের তকমা থেকে রেহাই পেয়েছি। সবই আপনার কারিশমায়। আপনি আমার লাইফে আসার পর থেকে আমি আমার প্রতিটি বদ অভ্যাস ত্যাগ করেছি। ভালো হয়ে গিয়েছি। পিতামাতার বাধ্য সন্তান হয়ে গিয়েছি। তাই এগুলোকে বিচার বিবেচনা করে আমি বলতে চাই, আমার জীবনে আপনার গুরুত্ব সত্যি অত্যাধিক। আমি চাই আপনি সারাজীবন আমার পাশে থাকুন। আমি আর কিছুই চাইনা। আপনি শুধু আমার প্রপোজাল গ্রহণ করুন শুধু। তারপর আমি পুরো দুনিয়ার সাথে লড়াই করে হলেও আপনাকে নিজের করে রাখবো। সামির চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলে দিল। তারপর আস্তে আস্তে চোখ মেলতেই দেখলো রিমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে। রিমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে সামিরের দিকে। একটুও রাগ নেই রিমির চোখে মুখে। রিমি খুব শান্ত গলায় বলল,

-আর কিছু বলবে?

-ম্যাম, আপনি কোনো রিয়েকশন করলেন না যে?

-হুম করিনি। কারণ এটা রিয়েকশন করার বিষয় না। এটা খুবই সিম্পল একটা বিষয়।

সামির খুশি হয়ে বলল, তার মানে আপনি রাজী!

-আগে আমার কথাটা শোনো মনোযোগ দিয়ে। তারপর বলছি রাজী কি, রাজী না।

-ওকে ম্যাম।

-তুমি তোমার জায়গায় ঠিক। একজন মানুষের একজন মানুষকে ভালো লাগতেই পারে। ভাললাগার কাজটা কারো হাতে থাকে না। এটা কেবল মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মন যার প্রতি দুর্বল হবে তাকেই ভালো লাগবে। একইভাবে মন যার প্রতি ক্ষিপ্ত হবে তাকে ঘৃণা করবে। আর এই ভাললাগা বা মন্দলাগার বহিঃপ্রকাশ করবে আমাদের শরীর। আমরা যেকারোর প্রতি ভাললাগা মন্দলাগা পোষণ করতে পারি। এক্ষেত্রে বয়স, ধর্ম, স্বভাব,চরিত্র বিচারের কোনো উপায় নেই। একটা মানুষকে ভাললাগা অথবা ভালবাসার পর এগুলো কখনোই বাধা সৃষ্টি করে না। ভালো লাগলে রাস্তার কুকুরকেও সুন্দর দেখায়৷ সে যতই নিকৃষ্ট আর নোংরা হোকনা কেন। তোমার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। আমি বিবাহিতা, তোমার থেকে একটু হলেও বয়সে বড়। তুমি যতই ভেবে থাকোনা কেন, তুমি বেশ কয়বার ফেল করেছো বলে তুমি আমি সেম বয়সের। কিন্তু তবুও তুমি আমার থেকে বড় কেন, আমার সমবয়সীও নও। তো গেল সেটা। আর একটা বিরাট কারণ হলো আমি তোমার টিচার। কি কি প্রসঙ্গ দাঁড়ালো তাহলে? বয়সে বড়,বিবাহিতা এবং টিচার। সবগুলো প্রসঙ্গে আমি তোমার থেকে সিনিয়র। আমার লেভেল আর তোমার লেভেল পরীক্ষা করেছ কখনো? আমার মতে করোনি। তাইতো আমাকে খুব সহজে প্রস্তাব দিয়ে দিলে। তুমি ভাললাগা থেকে গড়ে ওঠা ভালবাসাকে গুরুত্ব দিলে, কিন্তু আমার লেভেল আর তোমার লেভেলকে একটা বালি সমানও গুরুত্ব দিলে না। এটা কেমন? তুমি যদি গভীর চিন্তা করতে, তোমার আর আমার মাঝের দূরত্বটা মেপে দেখতে তাহলে আই সোয়ের, তুমি আমাকে প্রপোজাল কেন, আমাকে নিয়ে সামান্য পরিমাণ ভাললাগার অনুভূতিটুকু ফিল করতে না। বয়সে বড় বা টিচারের কথা নাহয় বাদই দিলাম। আমি শুধু বিবাহিতা হওয়ার প্রসঙ্গ তুলি। আমি আমার হাসবেন্ডকে নিঃসন্দেহে ভালবাসি। সেও আমাকে ভালবাসে। তো আমি কোন সাহসে তোমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবো বলতে পারো? তোমার বিন্দুমাত্র সেন্স থাকলে আজ এই কথাটা তুমি আমায় বলতে পারতে না। তুমি কতটা নির্বোধ সেটা তুমি নিজেই জানোনা। জানলে আগে বিচার করতে তারপর আমার সামনে এসে ভালবাসার কথা বলতে। আজ আমি চাইলে তোমার সাথে চিৎকার চেচামেচি করতে পারতাম। তোমার বাবা এমনকি পুরো কলেজের সামনে অপমান করতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি। তার কারণ এসব করলে তুমি বুঝবে না কিছুই। বরং উল্টো হিতে বিপরীত হতো। তোমার মনে হিংস্রতা জন্ম নিত। আমি অনেক আগেই বুঝেছিলাম তুমি আমার প্রতি ইনটারেস্টেড। আমি অবুঝ নই। কোন স্টুডেন্ট এর মনে কি চলছে তা আমি তার চোখ,আকার-আকৃতি,ভাব-ভঙ্গি দেখেই বুঝে যাই। তোমার ব্যাপার টাও বুঝে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কিছুই বলিনি। কারণ আমি আজকের দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি সবসময় মানি, চিল্লাচিল্লি করে কখনো কাউকে ভালোর পথে আনা যায়না। যে ভালো হতে চাইবে সে দুটো শান্ত গলার ভাষা শুনেই মুগ্ধ হয়ে ভালো হয়ে যাবে। কাউকে ভালো করতে শাস্তির প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ করে মনের ক্ষেত্রে কখনোই শাস্তি বা প্রতিশোধ নামক টোটকা কাজে লাগে না। লাগে ধৈয্য, সঠিক সময়। আশা করেছি তুমি বুঝতে পেরেছো আমার কথাটা। আজ তোমার চুপ করে থাকাটাই অনেক কিছু বলে দিচ্ছে তুমি কতটা অনুতপ্ত। সামির গিয়ে রিমির পা জড়িয়ে কান্না করে দিয়ে বলল,

-ম্যাম আমাকে মাফ করে দিন। আমি সত্যি অনেক জঘন্য একটা কাজ করে ফেলেছি। আমি খুবই লজ্জিত আমার কাজে। আমার মরে যাওয়া উচিত। আপনি আমাকে শাস্তি দিন নাহলে এই মুখ নিয়ে কখনোই আর আপনার সামনে এসে দাঁড়াতে পারবো না।

রিমি ধমকের সুরে বলল, পা ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও বলছি। দাঁড়াও!

সামির সোজা হয়ে দাঁড়ালে রিমি আবার বলল, প্রায়শ্চিত্ত করতে হলে মরার প্রয়োজন পড়ে না। ক্ষমা চেয়ে মন থেকে তওবা করে আলোর পথে ফিরে আসলেই হয়। তাহলেই প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যায়। আমি তোমার থেকে এটাই আশা করেছিলাম। তাইতো কিছু বলিনি এতোদিন। আমি খুব খুশি হলাম। আর তোমাকে মাফও করে দিলাম। এবার থেকে আর কারো সাথে এমন কাজ করবে না। যেভাবে আমি বলি সেভাবে চলো দেখবে জীবনের মানে খুঁজে পাবে।

-তাই করবো ম্যাম। আজ থেকে আপনি আমার অভিভাবক। আপনার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো। আর একজন ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র হয়ে দেখাবো।

-আই লাইক ইওর স্পিরিট। এভাবেই এগিয়ে যাও নিজের গন্তব্যের দিকে। মনোবল দৃঢ় রাখো। আমি সবসময় আছি তোমার মতো সকল স্টুডেন্টসদের পাশে।

#চলবে,,
(আজ পুরো ১২৩৫ টি শব্দ লিখেছি। সবাই ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।)

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৫১
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

আহসান ফ্রি হয়ে রিমিকে কল দিল। রিসিভ হতেই আহসান বলে ওঠে,

-সরি আমি বিজি ছিলাম বলে তোমার ফোন ধরতে পারিনি।

-ইট’স ওকে। আই ক্যান আন্ডার্স্ট্যান্ড। আগে একটা গুড নিউজ শোযেন ।

-কি গুড নিউজ?

-আমি এখন থেকে এই কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল। আর আমার স্টুডেন্টসরা খুব ভালো রেজাল্ট করেছে এইচএসসি তে।

-ওহ গ্রেট! তাহলে তো আমাকে ট্রিট দিতে হবে।

-আপনাকে আমি কি ট্রিট দেব বলেন?

-এই কথাটা কেন?

-আমি মিডিলক্লাস ফ্যামিলির সাধারণ একজন মেয়ে। আমার কি ক্ষমতা বলুন?

-এই কথাটা আর কত বলবে বলো তো? আমি কতবার সরি বলবো বলতে পারো?

-আমি আপনার উদ্দেশ্যে কথাটা বলিনি।

-তাহলে? হুম বুঝেছি। তুমি চিন্তা করোনা বাপিও একদিন বুঝবে। আমি গিয়ে বলি বাপিকে গুড নিউজ টা।

-না থাক। আপনি কিছুই বলতে যেয়েন না। তাহলে আরও রেগে যাবে। কাজের মধ্যে ওনাকে ডিস্টার্ব করবেন না। আমি মাকে বলেছি উনি কোনো না কোনো ভাবে জেনে যাবে। কিন্তু আপনার মুখে শুনলে ব্যাপার টা উনি অন্যভাবে নেবে।

-ওকে তাই হবে। আমি এখন ফ্রি আছি তুমি কখন বের হবে কলেজ থেকে?

-আমার আজ সময় লাগবে।

-ও, তাহলে আমি বাড়ি যাচ্ছি তাহলে।

-সেটাই ভালো হবে।

আহসান বাড়িতে গিয়ে ওর রুমে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখে অবাকের শেষ সীমান্তে পৌঁছে গেল৷ মেয়েটি আর কেউ নয় নাদিয়া। আহসান নাদিয়ার সামনে গিয়ে বলল, আপনি এখানে কি করছেন? আপনার এতো বড় আস্পর্ধা কি করে হয় আমার বাড়িতে, আমার বেডরুমে ঢোকার?

-আঙ্কেল আসতে বলেছে। সকাল থেকে আমি এখানেই আছি আন্টির সাথে।

-হোয়াট! মম আপনাকে অ্যালাউ কিভাবে করলো বলে আহসান ওর মাকে ডাকতে লাগলো। দু থেকে তিনবার ডাকার সাথে সাথে অপা চলে আসে।

-আহসান তুই কখন আসলি?

-যখনই আসি। মম তুমি এই মহিলাকে আমার রুমে ঢোকার পারমিশন কিভাবে দিলে?

-আমি তো দেখিনি। ওকে তো বলেছি ড্রইং রুম নইলে আমাদের রুমে থাকতে। এই তুমি আহসানের রুমে কেন এসেছো? আমি মানা করেছিলাম না?

-আসলে আন্টি আমি বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই এখানে এসে দেখছিলাম। তাছাড়া কিছুদিন পরতো এটা আমারও রুম হয়ে যাবে। তাই,, নাদিয়া ওর পুরো কথাটা শেষ করার আগেই আহসান নাদিয়ার গালে সপাটে চড় বসিয়ে দিল। আরেকটা মারবে কি অপা আহসানকে থামিয়ে দিল।

-মম তুমি আমাকে না আটকে এই মহিলাকে এখান থেকে চলে যেতে বলো। নইলে আমার হাত থামবে না।

-নাদিয়া মা, তুমি দয়া করে বাড়ি যাও। আর ঝামেলা পাকিয়ো না। আহসানের হয়ে আমি মাফ চাচ্ছি। নাদিয়া গালে হাত দিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে গেল। নাদিয়া চলে গেলে অপা আবার বলল, তুমি একজন মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করতে পারোনা আহসান। নাদিয়া একটা মেয়ে ভুলে যেওনা।

-আমি অনেকদিন নিজেকে কন্ট্রোল করে এসেছি মম। আজ আর নিজেকে সংযত করে রাখতে পারলাম না। তাই হাত তুলে ফেলি।

-এটা খুব খারাপ করেছো। কিন্তু মেয়েটাও গায়েপড়া,ঘাড়ত্যাড়া। আমি বারবার বলেছি তোর রুমে না আসতে। শুনলো না আমার কথা। আমি এখন কি যে করি? তোর বাপিকে নিয়ে আমার ভয় করছে। মেয়েটা যদি ওর বাবাকে সব বলে দেয়। তাহলে তোর বাপির সাথে তুলকালাম কান্ড বাধাবে দেখে নিস।

-আজ বাপির সাথে আমারও ফাইনাল ফয়সালা করতে হবে।

-এতো সব কিছু হয়ে গেছে আর আপনি আমাকে আজ জানালেন বিষয় টা!

-সরি রিমি। আসলে আমি চাইনি তুমি টেনশন করো তাই বলিনি। তবে আজ আর পারলাম না আমি। বাধ্য হয়ে নাদিয়ার গালে চড় মেরে দেই।

-আপনি যে কি? ঝামেলা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিলেন চড় মেরে। এখন আপনার বাপি যদি ব্যাপার টা জানতে পারে, তাহলে কি হবে ভেবেছেন?

-হুম ভেবেছি।

-কি ভেবেছেন?

-আমি বাপির মুখোমুখি হবো। আর আজ একটা ফাইনাল ডিসিশনে যাবো। কিন্তু একটা বিষয় আমাকে ভাবাচ্ছে জানো?

-কি সেটা?

-আমি নাদিয়াকে মেরেছি বিকেলে। এখন রাত হয়ে গিয়েছি। বাপি এখনো কেন আমাকে একটা ফোন দিয়ে বকাবকি করলো না? নাদিয়া কি বলেনি?

-সত্যি, এটা ভাবার বিষয়।

-হুম যাই হোক কংগ্রাচুলেশনস। তোমার নতুন পদক্ষেপের জন্য অনেক শুভেচ্ছা। বলে রিমির হাতে জোড়া শক্ত করে ধরলো।

-ধন্যবাদ। আজ আমি আপনার পছন্দের খাবার রান্না করেছি। অবশ্য মা আমাকে সামান্য হেল্প করেছিল। অনেক লেট হয়েছিল কলেজ থেকে আসতে তাই আরকি। নইলে সব নিজ হাতেই করতাম।

-বুঝলাম। কিন্তু আমি তো আমার ট্রিট পাইনি।

-কি চান বলুন আমি দেওয়ার চেষ্টা করবো।

আহসান বাকা হেসে ওর ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে ইশারা করলো।

-যানতো, আপনি যাতা একজন লোক।

-কোথায় যাব? বলে একটানে রিমিকে ওর বুকে ফেলে দেয়। তারপর ওর ট্রিট উসুল করে ছাড়ে। রিমি আহসানের থেকে কোনমতে নিজেকে ছাড়িয়ে ভোঁ দৌড় লাগিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর অপার কল আসে আহসানের ফোনে। আহসান কথা বলে তরিঘরি করে বেরিয়ে পড়ে। আহসানের চোখে মুখে আতংকের ছাপ। আহসান চলে যাচ্ছিলো রিমির ডাকে দাঁড়িয়ে পড়ে,

-আপনি না খেয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

-আমাকে ইমিডিয়েটলি বাড়িতে যেতে হবে। পুলিশ এসেছে বাড়িতে।

-পুলিশ! কিন্তু কেন?

-বাপি আর আমার রুমে নাকি অবৈধ ড্রাগস আর প্রাণঘাতী মেডিসিন পাওয়া গেছে।

-কি বলছেন এসব?

-আমি তো বুঝতে পারছি না এটা কিভাবে সম্ভব হলো। আমাদের রুমে এসব আসলো কোথা থেকে! তুমি বিশ্বাস করো রিমি, বাপি বা আমি এসব কাজ করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।

-আমি জানি। তাছাড়া আমি ওই বাড়িতে ছিলাম। এরকম কোনো কিছু আমি কখনো দেখিনি। আমার মনে হয় কেউ আপনাদের ফাঁসাতে চাইছে।

-সেটা গেলে বুঝতে পারবো।

-আমার খুব ভয় করছে। আপনি যেয়েন না আজ।

-যেতে তো হবে। পুলিশ বাপিকে যা নয় তাই বলছে। আমি থাকতে সেটা কিভাবে মেনে নেই বলো?

-তাও ঠিক। আপনি যান তাহলে। আর বুঝে শুনে কথা বলবেন। উত্তেজিত হয়ে রাগারাগি করবেন না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করবেন।

#চলবে,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। নাইস নেক্সট, না লিখে ঘটনামূলক মন্তব্য করুন। নাইস নেক্সট দেখলে খুব রাগ হয় আমার।)

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৫২
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

এসি বিহীন চার দেয়ালে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রঞ্জিত। প্রচুর গরমে অতিষ্ঠ তার প্রাণ। তবুও যেন আজ গলা ছেড়ে বলতে পারছে না, অপা! এসি অফ কেন? অবশ্য রঞ্জিত একা নয় আহসানও একই জেলের ভেতর। আহসান নিজেকে নিয়ে ভাবছে না। ভাবছে তার বাপিকে নিয়ে। আহসান সেদিন থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল, যেদিন মন থেকে রিমির হাতটা ধরেছিল। তারপর থেকে কৃত্রিম হোক বা প্রাকৃতিক, যেকোনো পরিবেশেই সে মানানসই। তবে তার বাপির ক্ষেত্রে সে এটা মেনে নিতে পারছে না। আহসান ওর বাপির পিঠে হাত রেখে বলল, এটা কি হয়ে গেল বাপি? কে করলো এটা আমাদের সাথে?

রঞ্জিত কোন রেসপন্স করলো। আহসান অনেক চেষ্টা করলো রঞ্জিতের সাথে কনভারসেশন করার জন্য। কিন্তু পারলো না। আজ রঞ্জিত ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে সে৷ কে বা কেন এই জঘন্য কাজটা করলো তা সম্পর্কে রঞ্জিত অজ্ঞাত। কিছুক্ষণ পর রঞ্জিত মুখ খুললো। সে মৃদু গলায় বলল, আহসান তোমার মম কোথায়? অপা কি এসেছে এখানে?

-না মমকে দেখছি নাতো! ওয়েট করো আমি জিজ্ঞেস করছি কাউকে। আহসান একজন constable কে ডাক দিয়ে বলল, এক্সকিউজ মি। আপনাকে তো আমাদের বাড়িতে দেখেছিলাম।

কনস্টেবল গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিল, হুম তো? কি সমস্যা?

-আসলে আমরা চলে আসার পর আমার মমকে কি করেছেন আপনারা? মানে উনি কি আসেনি এখানে? নাকি বাড়িতেই আছে?

-কিসের বাড়ি? আপনাদের বাড়িতে তালা ঝোলানো হয়েছে। সাথে আপনাদের হসপিটালেও। শুধু যারা আগে ভর্তি ছিল তারা আছে। আর আপনার বাড়ির চাকর বাকরসহ একজন ভদ্র মহিলাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। রঞ্জিত কথাটা শুনে তেড়ে আসলেন।

-বের করে দেওয়া হয়েছে মানে? কি যা তা বলছেন? আমার বাড়ি থেকে আমার স্ত্রীকে কোন সাহসে আপনারা বের করে দিলেন?

-চোরের মায়ের বড় গলা। আকাম-কুকাম করার আগে ভাবা উচিত ছিল না? এখন বউয়ের চিন্তা মাথায় আসলো?

-দেখুন আমার বাপির সাথে ভদ্রভাবে কথা বলুন। কিসের আকাম-কুকাম? কোন প্রুফ ছাড়া কাউকে অহেতুক ব্লেম দিতে পারেন না।

-এটা অহেতুক ব্লেম নয়। বাপ ছেলে মিলে টাকার জন্য কত মানুষের প্রাণ নিয়েছেন আল্লাহ মালুম। আমরা নিজ হাতে আপনাদের দুজনের রুম থেকে অবৈধ ড্রাগ সাথে ভয়াবহ মেডিসিন পেয়েছি। গলাবাজি কম দেখাবেন। সরি, তোদের আপনি করে কেন বলছি? তোরা দেশের জন্য হানিকর,কলঙ্ক।

-আপনি মুখ সামলে কথা বলুন বলে দিলাম।

-এই তুই কি করবি রে? কিছুক্ষণ বাদে ইনস্পেক্টর সাহেব এসে এলোপাতাড়ি দিবে তখন তোর গলা কমবে। সত্যিটা বের করার উপায় তার কাছে আছে।

-যা করার করুন। আমরা যা করিনি তা কেন মুখ বুজে মেনে নেব?

-চুপ করো আহসান। তর্কাতর্কি করে কোন লাভ নেই। সরে আসো এখান থেকে বলে রঞ্জিত আহসান কে টেনে কিছুটা দূরে নিয়ে আসলো। তারপর বলল, কি করছো তুমি এসব? এনাদের কাছে প্রমাণ আছে আমাদের বিপক্ষে। এভাবে উত্তেজিত হলে সমস্যা আরও বাড়বে। আমাদের শান্ত গলায় কথা বলতে হবে ইন্সপেক্টরের সাথে। সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে। এখন ভাবো তোমার মম কি করছে? রাস্তায় কি করছে না করছে! কোথায় যাবে না যাবে। আমার খুব টেনশন হচ্ছে ভেবেই।

-টেনশন! তোমার? আজ নিজের স্ত্রী বলে এতটা টেনশন হচ্ছে তোমার। একদিন আমার স্ত্রীকে তুমি অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলে। তখন আমার কেমন লেগেছিল ভেবেছো কি একটাবার? আমার কতটা টেনশন হয়েছিল উপলব্ধি করতে পারছো কি বাপি?

-আহসান এখানে আমার স্ত্রী মানে তোমার মমের কথা হচ্ছে।

-তো? আমি আজ একজন হাসবেন্ড হিসেবে আরেকটা হাসবেন্ড এর সাথে কথা বলছি। ছেলে হিসেবে না। তুমি বলো, আমার স্ত্রী সেদিন রাতে অসহায়ের মতো একা একা রাস্তা দিয়ে হেঁটেছিল। আজ নিজের স্ত্রীকে কল্পনা করে দেখো আমার স্ত্রীর উপর দিয়ে যাওয়া ঝড়টার আভাস পাবে। সেই দৃশ্যটা কতটা ভয়ংকর ছিল আমার জন্য, আজ সেটা বুঝতে পেরেছো তো? রঞ্জিত কিছু বলছে না। কি বা বলবে? বলার মুখ আজ তার নেই। আহসানের কথাটার প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতা আজ আর তার নেই। কিছুক্ষণ বাদে রিমি আসলো নাজমুলের সাথে। এসেই আহসান বলে ডাক ছাড়তে লাগলো। আহসান জেলের ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে রিমিকে ডাকলো।

-এইতো আমি এখানে রিমি। রিমি গিয়ে কান্না জুড়ে দিল আহসানকে দেখে। রিমি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,

-আপনি জেলে কেন? বিনা দোষে জেলে কেন দিল আপনাকে?

-আমি কিছুই বুঝতে পারছি না রিমি। কে করেছে এটা আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না।

-আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আর বাবা মিলে উকিল ধরেছি। উনি কোনো না কোনো উপায় ঠিক বের করবেন।

পাশ থেকে রঞ্জিত বলে ওঠে, আহসান ওকে জিজ্ঞেস করো তোমার মমের ব্যাপারে কিছু জানে কিনা।

নাজমুল বলল, আপনি কিছু চিন্তা করবেন বেয়াই সাহেব। বেয়ান আমাদের বাড়িতে আছে৷ আম্বিয়ার সাথে পাঠিয়ে দিয়েছি। রঞ্জিত এখনো তাকালেন না রিমি ও তার বাবার দিকে। তবে এতোক্ষণ পর রঞ্জিত একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তারপর জেলের খাঁচা থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। আহসান রিমির হাতটা ওর কপালের সাথে ঠেকিয়ে বলল, থ্যাংকস রিমি। আমার মমকে তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

-আপনার মাতো আমারও মা। আচ্ছা আপনি একটা কথা বলুন তো আপনাদের রুমে যে অবৈধ জিনিস আছে সেটা পুলিশকে সর্বপ্রথম কে জানিয়েছে?

-আমি অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি বাট ইন্সপেক্টর স্যার বলেননি।

-ওও, জানেন আপনার মম আর সম্পা কি বলেছে?

-কি বলেছে?

-বলেছে ওইযে নাদিয়া মেয়েটাই নাকি আপনাদের রুমে এসব জিনিস রেখেছে। সে নাকি আজ মস্ত বড় একটা হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে এসেছিলো। বলেছিল সেটার মধ্যে নাকি জামাকাপড় আর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ছিল। কিন্তু সম্পা বলল যাওয়ার সময় ব্যাগটা হালকা হয়ে গিয়েছিল৷ আর সম্পা নাকি নাদিয়াকে দেখে সন্দেহ করেছিল। ওর উপর নজর রাখতেও চেয়েছিল। তবে মা নাকি মানা করে দেয়৷ ফলে নাদিয়া সুযোগ পেয়ে যায়।

-হতে পারে কিন্তু নাদিয়া তো বাপির বন্ধুর মেয়ে।
আহসান কথাটা বলার সাথে সাথে রঞ্জিত বলে ওঠে, আহসান ওকে বলে দাও আমার বন্ধু বা তার মেয়ে সম্পর্কে যেন একটাও বাজে কথা না বলে তাহলে আমি কিন্তু ওকে ছেড়ে কথা বলবো না।

-বাপি তুমি আজ চুপ থাকবে। একটা কথাও বলবে না। এরই মাঝে ইন্সপেক্টর সাহেব চলে আসেন। এসেই বলেন,

-হোয়াট ইজ দিস? এখানে এতো হট্টগোল কিসের? আপনারা কি করতে এসেছেন এখানে? কনস্টেবল! এসব কি হচ্ছে?

-স্যার ওনারা আসামির বাড়ির লোক।

-তাতে কি? এটা থানা। সময় নির্ধারণ করা আছে এখানে। ওনারা কতক্ষণ হয়েছে এসেছে?

-স্যার আমি আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা বলতে চাই। আমার হাসবেন্ড ও শ্বশুর নির্দোষ।

-মুখের কথায় তো আর সব হয়ে যায় না। আমরা প্রমাণ পেয়েছি তারপরই ওনাদের ধরে এনেছি।

-হুম তবে আমার কথাটা একটু শুনুন।

-আচ্ছা জলদি বলুন।

-তারপর রিমি অপা ও সম্পার থেকে যা যা জেনেছে সব খুলে বলল। সব শুনে,

-দেখুন এসব মন গড়া কথা কোনো প্রুফের মধ্যে পড়ে না। তাছাড়া আমরা মেইন গেট ও ড্রইং রুমের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। আপনি যেই মেয়েটার কথা বললেন, তাকে দেখে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি।

-সিসিটিভি ক্যামেরা? কথাটা বলে রিমির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। রিমি সোজা আহসানকে গিয়ে বলল, আহসান আপনি যে আমাদের রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন ওটা কি এখনো আছে?

-আরে হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আছে এখনো। আমি আসলে চেক করিনা তাই মাথাতেই ছিল না।

-তো সেটা চেক করলেই আসল সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। কে বা কারা রেখেছে সব দেখা যাবে।

-হুম ঠিক বলেছো রিমি। ইন্সপেক্টর স্যার, আপনি কাইন্ডলি আমার ফোনটা দিলে ভালো হতো।

-ঠিক আছে তবে মিস্টার আহসান, আপনার রুমে যে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে সেটা আগে বলেননি কেন? আমরা তো কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা দেখিনি!

-সরি স্যার। আমি সত্যি এতো টেনশনের মধ্যে ভুলে গিয়েছিলাম। আর ওই সিসিটিভি ক্যামেরা আমি এমন জায়গায় লাগিয়েছি যে কেউ সহজে খুঁজে পাবে বা সন্দেহ করতে পারবে না।

-ওকে, কনস্টেবল মিস্টার আহসানের ফোনটা নিয়ে আসুন।

-ওহ ড্যাড আজ যে আমি কতটা খুশি তা শব্দে এক্সপ্লেইন করতে পারবো না। আমাকে অপমান, চড় মারার ফল পেয়ে গেছে ওই আহসান।

-ঠিক বলেছিস মা। এতোক্ষণে পুলিশ নিশ্চয়ই বাপ ব্যাটাকে গণধোলাইয় দেওয়া শুরু করে দিয়েছে।

-হুম, কিন্তু তুমি কোনো ভুল করোনি তো? পুলিশ বোঝেনি তো তুমি রঞ্জিত আঙ্কেলের ফ্রেন্ড?

-পরিচয় দিলে তো বুঝবে। আমি ফোনে বলেছি যে আমি মিস্টার রঞ্জিত তালুকদারের হসপিটালে কাজ করতাম। আমি তার সব অবৈধ কাজ সম্পর্কে জানতে পেরে যাই বলে উনি আমাকে বের করে দেন তার হসপিটাল থেকে। বিশ্বাস না হলে মিস্টার রঞ্জিতের বাড়ি সার্চ করে দেখতে পারেন।তারপর তো সব জানিসই। হাহাহা। কিন্তু তুই ভালো করে জেনে নিয়েছিলি তো ওই বাড়িতে কোথায় কোথায় সিসি ক্যামেরা ছিল?

-হুম ড্যাড। সব জেনেই কাজটা করেছি। এখন তো মজা দেখার পালা। তুমি চেয়েছিলে রঞ্জিত আঙ্কেল রাস্তায় নেমে আসুক। আমি তাই করে দিলাম। এবার জানলে তো তোমার মেয়ে কতটা জিনিয়াস।

-আই প্রাউড অব ইউ। তবে আহসান ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here