#প্রণয়ের_পরিণতি
#পর্ব_২০
#Writer_Sadia_afrin_nishi
একমুঠো স্বপ্ন এসে ছুঁয়ে যায় সারাক্ষণ
চেয়ে থাকি আমি তার আশায়
একমুঠো ইচ্ছে রাখি লুকিয়ে হৃদয়ে
হয় না সাজানো ভালোবাসায়
কখনো মন রোদেলা
কখনো হয় মেঘলা
যায় না তারে ভোলা
কাঁটেনা যে বেলা
একাকি একলা
ভালোবাসার একী জ্বালা………….
সারা রুম অন্ধকার করে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে এই গানটি শুনছে রিশি।তার আজ ভীষণ তৃপ্তির কথা মনে পরছে।খুব করে তৃপ্তিকে দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয়।তাই মুডটা ঠিক করার জন্য এভাবে গান শুনছে।কিন্তু এতে করে মুড ঠিক হওয়ার চেয়ে মন খারাপ আরও বেশি হচ্ছে। এভাবে এই গান শুনলে আরও বেশি তৃপ্তির কথা মনে পরছে তার। তাই বিরক্ত হয়ে রিশি গান বন্ধ করে ড্রইংরুমে চলে গেল।সেখানে গিয়ে দেখে সবাই আছে। রিশিকে এমন সময় নিচে দেখে সবাই একটু অবাক হলো।এই সময় রিশি নিজের ঘরেই বেশি থাকে নয়তো বাহিরে।এভাবে সবার মাঝে রিশি এই পাঁচবছরে নিজে থেকে এসেছে বলে কারোই মনে পড়ে না। তাই সবাই একটু অবাক হয়। কিন্তু সবার এমন রিয়েক্ট রিশির ঠিক পছন্দ হচ্ছে না।
রিশি-এভাবে কী দেখছ তোমরা(বিরক্তির স্বরে)
সবাই একসাথে কিছু না।
রিশি-ভাবি আমাকে একটা কফি করে দেবে?
তনয়া-হুমম তুমি বসো একটু আমি এখনি দিচ্ছি
রিশান-আমারও একটা
রিশানের বাবা-আমার এক কাপ চা হলেই হবে
রিশানের মা-আমি আর কেন বাদ যাই
তনয়া যেতে গিয়েও থেমে একবার পেছনে ফিরে তাকায়।দেখে সবাই ওরদিকে চেয়ে আছে। তারপর সবাই একসাথে হেসে দেয়, তনয়াও সবার সাথে তাল মিলিয়ে হেসে দিয়ে চলে যায় রান্নাঘরে।
তনয়া সবার জন্য শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর জন্য চা, রিশি,রিশান আর নিজের জন্য কফি করে নিয়ে এলো।সাথে গরম গরম পাকোড়া। এটা তনয়ার স্পেশাল পাকোড়া প্রতিদিন সন্ধায় সবাই একসাথে এই পাকোড়া খায়।এই পাকোড়া তনয়া শিখেছে ওর মায়ের কাছ থেকে। আগে বাড়িতে থাকতে মা আর বোনদের সাথেও প্রতি সন্ধ্যায় এটা খেত। এখন এ বাড়িতে এসেও একই নিয়ম চালু করেছে। সবাই তনয়ার রান্নার বেশ প্রশংসা করে সবসময়।
সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে আর নাস্তা খাচ্ছে। এমন সবাই কলিং বেল বেজে উঠল।সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে পরল।রিশান উঠে দরজা খুলতে গেলে তনয়া বলল আমি যাচ্ছি।রিশান আবার বসে পরল।তনয়া গিয়ে দরজা খুলে দিতেই কেউ একজন ওকে খুব দ্রুত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। ঘটনার আকষ্মিকতায় তনয়া খুবই অবাক হলো।দরজা লাগিয়ে তনয়া পেছন ফিরে দেখল কোনো এক মেয়ে সবার সামনে রিশানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। মেয়েটির পরনে শার্ট আর জিন্স, চুলগুলো ব্রাউন কালার। পেছন থেকে আর কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তনয়া আস্তে আস্তে এগিয়ে সবার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে ঘটানাটি বোঝার চেষ্টা করছে।মেয়েটি কেমন নির্লজ্জের মতো রিশানকে জড়িয়ে ধরেই আছে ছাড়ছেই না। তনয়ার কেমন জানি লাগছে। রিশানকে এভাবে ধরায় কেন জানি ওর খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। রিশি,রিশির বাবা-মা সবাই মাথা নিচু করে বসে আছে।
রিশান -প্রিসা কী হচ্ছে কী?ছাড়ো আমাকে।সবার সামনে এভাবে কেউ ধরে(ছাড়াতে চেষ্টা করে)
প্রিসা-প্লিজ আর একটু থাকি না। কতোগুলো বছর পর তোমাকে দেখছি বলো?প্লিজ আর একটু থাকি।
রিশান-প্রিসাহহহহ ছাড়ো প্লিজ
প্রিসা-আচ্ছা যাও ছেড়ে দিলাম।এবার বলো এতোদিন আমার ফোন,মেসেজের রিপ্লাই কেন দেওনি আর দেশে আসার আগে একবার আমাকে জানানের প্রয়োজন মনে করনি?আমি তোমার জন্য কতটা পাগল হয়ে গিয়েছিলাম জানো?এতোদিন শুধু পড়াশোনা শেষ করার অপেক্ষায় ছিলাম নয়তো আরও আগে চলে আসতাম তোমার কাছে। সো এবার কিন্তু আমি আর তোমাকে ছাড়ছি না। এখান থেকে বিয়ে করে তারপর তোমাকে সাথে নিয়ে বিদেশে চলে যাবো।
তনয়া আর এক মুহুর্ত ওখানে দাড়াল না। এতোক্ষণে তনয়া বুঝে গেছে এইটা রিশানের গার্লফ্রেন্ড। তনয়ার কেমন জানি খারাপ লাগছিল এগুলো শুনতে তাই চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল।
রিশান-বাবা,মা,রিশি এই হলো প্রিসা আর প্রিসা এই হলো আমার বাবা,মা আর ভাই।
প্রিসা সবার সাথে হাই হ্যালো করল।প্রিসার ব্যাপারে সবাই আগে থেকেই জানে তাই সবাই ওর সাথে তাল মিলিয়ে কোনোরকম হাই হ্যালো করল।তারপর রিশি উঠে চলে গেল সোজা নিজের ঘরে। এইসব মেয়েদের তার একদম পছন্দ না। এই মেয়েটাকেও তার কাছে নিশার মতো মনে হতে লাগল।এইসব ফালতু মেয়েদের জন্য কতো কতো সত্যিকারের ভালোবাসারা গুমড়ে মরে।তাই রিশি চলে গেল। রিশানের বাবাও চলে গেছে। শুধু আছে রিশানের মা।
রিশান-প্রিসা তোমাকে আরও একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দি চলো
প্রিসা-কে সে?
রিশান-মিট মাই…..এই বলে পাশে তাকিয়ে দেখল তনয়া নেই।
রিশান আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কোথাও তনয়া নেই।
প্রিসা-কী হলো, কই এখানে তো কেউ নেই। তুমি কার কথা বলছ?
রিশানের মা-তনয়া অনেক আগেই ঘরে চলে গেছে রিশান
রিশান -ওহহ আচ্ছা
প্রিসা তোমাকে তার সাথে পরে মিট করিয়ে দিবো
প্রিসা- আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বলো তোমার রুমটা কোনদিকে?আমি ভীষণ টায়ার্ড একটু রেস্ট নিবো।
রিশান -আমার ঘরে কেন রেস্ট নিতে হবে? আমাদের বাড়িতে তো ঘরের অভাব নেই তুমি বরং গেস্ট রুমে চলো।
প্রিসা-নাহহ আমি তোমার সাথেই থাকবো
রিশানের মা -এটা কেমন কথা। তুমি একটা মেয়ে হয়ে কী করে ওর ঘরে থাকবে।তাছাড়া এটা বিদেশ নয় এখানে ভদ্রতা বলে একটা বিষয় আছে। তুমি গেস্ট রুমেই থাকবে।রিশান ওকে দিয়ে আয় রুমে(এই বলে চলে গেলেন)
রিশান-চলো প্রিসা তোমাকে রুমটা দেখিয়ে দি।
প্রিসা-কিন্তু রিশান
রিশান -কোনো কিন্তু না। চলোওও
প্রিসা মন খারাপ করে চলে গেল রিশানের সাথে।
এদিকে তনয়া ঘরে এসে বেলকনিতে গিয়ে গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। তার আজকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। রিশানের সাথে ওই মেয়ের সম্পর্ক আছে ভাবতেই কেমন জানি বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তনয়ার আজ ভীষণ ওর মায়ের কথা মনে পরছে, মায়ের কোলে মাথা রেখে শুতে ইচ্ছে করছে। এ বাড়িতে এসে এই কয় মাসে তনয়ার তেমন কোনো কষ্টই হয়নি।সবাই তাকে খুব ভালো রেখেছে কিন্তু আজকে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। আজকে আকাশে তারায় ভরা কিন্তু চাঁদটা দেখা যাচ্ছে না। তনয়া চুপটি করে দাড়িয়ে আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
__________
রাতে তনিমা অফিসের কিছু কাজ শেষ করে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে ওর ফোনটা বেজে উঠল।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার তাই ফোনটা রেখে আবার শুতে যায় তনিমা। কিন্তু আবার ওই নাম্বার থেকে কল আসে। এবার তনিমা বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করে।
প্রিন্স -কী রে একটা ফোন ধরতে এতো সময় লাগে?
তনিমা-কে আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
প্রিন্স -হায়রে গাঁধি আমি প্রিন্স
তনিমা -ওহহহ সরি রে আমি বুঝতে পারিনি। আসলে আননোন নাম্বার তো তাই ভেবেছিলাম কে না কে।
প্রিন্স -ইটস ওকে, এবার একটা কথা শোন। আমার না একটা প্ল্যান আছে। এখন তুই রাজি হলেই ডান।
তনিমা-কী প্ল্যান
প্রিন্স -অনেক বছর পর আবার আমরা একসাথে হলাও সো কাল আমরা ঘুরতে যাবো। যদি তুই চাস তো?
তনিমা -হুম যাওয়াই যায় তবে বিকেল পর্যন্ত তো অফিস আছে। গেলে তো সন্ধ্যায় যেতে হবে।
প্রিন্স -সমস্যা নেই তোর যখন সুবিধা হবে তখনই যাবো।
তনিমা -আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তাহলে রাখি কাল সকালে আবার তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
প্রিন্স -ওকে,গুড নাইট
তনিমা -গুড নাইট
প্রিন্স-এই দারা দারা
তনিমা -কী?
প্রিন্স -ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কিন্তু আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবি আর কাল আমাকে বলবি কী দেখলি
তনিমা -(হেসে দিয়ে)সেই ছোটবেলার মতো শুরু করলি তো
প্রিন্স-হুম করলাম তো। আমি কিন্তু কিচ্ছু ভুলিনি সবকিছু মব আছে আমার
তনিমা-আমারও মনে আছে। আচ্ছা বাই ঘুমিয়ে পর এবার
প্রিন্স-আচ্ছা বাই
__________
তৃপ্তির মনটা এই কয়দিন ধরে বেশ খুশি।যতদিন যাচ্ছে তার দেশে ঘেরার সময় ঘনিয়ে আসছে। নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তৃপ্তির আর তর সইছে না। সে পারলে এখনি ছুটে দেশে চলে যায় এমন অবস্থা। তবে এদেশে এই পাঁচবছর থেকে এদেশের প্রতিও একটা মায়া জন্মেছে তৃপ্তির। মানুষ এমনি অভ্যাসের দাস।তবুও নিজের দেশ, নিজের কাছের মানুষদের সাথে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। আজকাল বোনদের সাথেও বেশি একটা কথা হয় না। তাকে কেমন জানি সবাই এড়িয়ে চলে। এই এড়িয়ে চলার মজা বাড়ি গিয়ে দেখাবে সবাইকে। কিন্তু তার মা তো তার সাথে এই কয়েকমাস ধরে কথা বলে না। বোনদের কাছে বললে বলে মা একটু অসুস্থ, নয়তো ঘুমিয়েছে, নয়তো নামায পরছে এসব বলে কথা ঘুড়িয়ে নেয়। মা কে আর ফোনটা দেয় না। তৃপ্তির খুব মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে তো আর জানে না তার মা তাকে ছেড়ে পারি দিয়েছে না ফেরার দেশে।যেখান থেকে চাইলেও আর মেয়ের সাথে কথা বলা সম্ভব না।
চলবে,