বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ পর্ব ৩৩+৩৪

#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৩
#নবনী_নীলা

রুহি হাল ছাড়লো না, আহানের মুখের কাছে মুখটা নিয়ে বললো,” ভালো করে দেখুন তো আপনি আগে কখনো দেখেননি আমাকে।”
আহান মুখটা রুহির একদম কাছে নিয়ে এসে বললো,”আরেকটু কাছে আসো তারপর দেখি।” রুহি সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা পিছিয়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,” কেনো আপনার চোখে কি সমস্যা? দূরের জিনিস দেখতে পান না?”

” দেখতে পাই কিন্তু তোমাকে দূর থেকে না কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করে।”,

” একদম কথা ঘুরবেন না। আপনি বিয়ের আগে আমায় কখনো দেখেননি? বাইকটা আপনার হলে তো দেখার কথা।”, চিন্তা মগ্ন হয়ে বললো রুহি।

আহান না জানার ভান করে বললো,” মানে?”

” আচ্ছা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। রাতের বেলা বাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন তারপর রাস্তায় একটা মেয়ে বিপদে পরে, তখন আপনি মেয়েটিকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচান। একটু ভালো করে মনে করুন।”

আহান কিছুক্ষণ ভেবে বললো,” এমন তো অনেকবার হয়েছে। কিন্তু তুমি এসব জানতে চাইছো যে?”

রুহির নীচের ঠোঁট উল্টে আহানের দিকে তাকালো তারপর বললো,” ধুর আপনাকে কিভাবে বোঝাই!”

” তুমি কি সেই বাইকের ছেলেটার সাথে আমাকে মিলানোর চেষ্টা করছো?”, একটু রাগী স্বরে বললো আহান।

রুহি না শুনেই হা সূচক মাথা নাড়ল তারপর হতবাক হয়ে তাকালো। আহান বাইকের ছেলেটার কথা জানলো কিভাবে?
রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” আপনি জানেন কি করে?”

” তোমার ডায়রি পরে জেনেছি।আমি কখনো ভাবিনি তুমি সেই ছেলেটিকে আমার মাঝে খুজবে। তারমানে তুমি ঐ ছেলেটিকে ভুলতে পারোনি?”, গম্ভীর গলায় রাগের বহিঃপ্রকাশ করে বললো আহান।

রুহি হতভম্ব হয়ে তাকালো। আহান এভাবে তাকে ভুল বুঝবে সে সেটা ভাবেনি।
” আপনি কি বলেছেন কি? আপনার মাঝে আমি তাকে খুজবো কেনো? আর ভালোবাসার কথা আসছে কেনো? ওনাকে শুধু আমার ভালো লাগতো।”ঘাবড়ে গিয়ে গর গর করে বললো রুহি।

আহান একটা ভ্রু তুলে বললো,” শুধূ তোমার ক্রাশ ছিলো?”

রুহি মাথা নিচু করে হা সূচক মাথা নাড়ল। আহান ঠোঁট চেপে হাসি থামিয়ে বললো,” বাহ্ শেষমেশ নিজের ক্রাশকেই বর বানালে।”

আহানের কথা শুনে রুহি হতবাক হয়ে তাকালো কারণ এতক্ষণ আহানের কথায় তার ভুলটা ভেঙে গিয়েছিলো? আহান সে হতেই পারে না। তারমানে লোকটা এতক্ষণ মজা করছিলো তার সাথে। রুহির রাগ চরম মাত্রায় বেড়ে গেছে।

” আপনি আমার সাথে মজা করছিলেন এতক্ষণ? ঠিক আছে থাকুন আপনি এইখানে থাকবো না আপনার সাথে।”, বলেই আহানের কোল থেকে উঠে যেতেই। আহান রুহির হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে জড়িয়ে ধরলো। রুহি নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। আহান ধরেই আছে,তখনি একজন স্টাফ এসে একটা কেক আর এক গুচ্ছ হলুদ গোলাপ টেবিলে রেখে রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,” হ্যাপি বার্থডে ম্যাডাম।”

রুহি অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো। একে তো এরা এইখানেই সাপ নেওলের মতোন ঝগড়া করছিলো মাঝখানে এই লোকটা কেক নিয়ে হাজির তার উপর আহান এখনো তাকে বাহুতে জড়িয়ে আছে। এর থেকে বেশী অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন তাকে আগে হতে হয় নি। রুহি নিরবে রাগ কমাচ্ছে, আহান স্টাফের উদ্দেশ্যে বললো,” thanks, তুমি এবার আসতে পারো।”
স্টাফটা মাথা নেড়ে চলে গেলো। স্টাফ চলে যাওয়ার সাথে সাথে রুহি আহানের হাতে জোড়ে চিমটি কাটতেই আহান আহ্ শব্দ করে রুহিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,” তুমি ভালো হবা না কোনোদিন।”

” হ্যা আমিই খারাপ। সারাদিন তো একবার উইশ করলেন না এখন শেষ বেলায় এসেছেন!”, ঠোঁট উল্টে বললো রুহি।

আহান রুহিকে টেনে নিয়ে রুহির মাথাটা নিজের বুকে রেখে বললো,”আরো আগে যদি তোমায় বলতাম তার কিছুক্ষণ পর তোমার আবার মন খারাপ হয়ে যেতো। তাই সবটা শেষের জন্যে রেখেছি কারণ সব শেষের রেশটা অনেক্ষন পর্যন্ত রয়ে যায়।”
রুহি আহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সত্যি তার মনটা এখন অনেকটাই ভালো। রুহি আহানের বুকে মাথা রেখে বললো,” আপনি কবে আমার ডায়রি পড়েছেন?”

” হু…. ম তোমার জ্বর হয়েছিলো যেদিন। আচ্ছা এবার কেকটা কাটো একটু পর বারোটা বেজে যাবে নইলে।”

রুহি হাসতে হাসতে আহানের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,” কি অদ্ভুত লাগছে শুনতে।”

তারপর রুহি কেকের পাশে থাকা ছুরিটা দিয়ে কেকটা কাটতেই চারিপাশে দিয়ে একসাথে অনেকগুলো ফানুস উড়তে লাগলো। আকাশের দিকে দৃষ্টি জেতেই চোখ আটকে গেলো রুহির, কি অপূর্ব দৃশ্য। আহান কেক নিয়ে রুহিকে খাইয়ে দিয়ে বললো,” হ্যাপি বার্থডে।”
রুহি একবার আকাশটা দেখছে আবার আহানের দিকে তাকাচ্ছে। দিন শেষে এই হাসি মুখটাই আহানের প্রশান্তি। আহান হাতে থাকা কেকটা রুহির গালে আলতো করে মেখে দিতেই রুহি ভ্রু কুচকে আহানের দিকে তাকালো। আহান বিরক্তি চোখে বললো,” এদিকে কি দেখছো? ওদিকে ফানুসগুলো উড়ে যাচ্ছে ওদিকে তাকাও।” বোলেই হাত দিয়ে রুহির মুখ ঘুড়িয়ে কেক মাখা জায়গায় কিস করতেই রুহি চমকে উঠলো। রুহি চোখ বন্ধ করে ওড়নার প্রান্তভাগ শক্ত করে ধরলো। পুরো শরীরে অন্যরকম শিহরন বয়ে গেল।

আহান নিচের অংশ ভিজিয়ে বলল,
” ডেলিসিয়াস।”

রুহি আড় চোখে আহানের দিকে তাকিয়েই আবার চোখ সরিয়ে নিলো।
________________

এভাবে খুনসুটি চলছিল আহান আর রুহির জীবনে। একদিন সকালে হটাৎ ফোন কল পেয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো রুহি। আহান ছিলো অফিসে তাই একটা ট্যাক্সি নিয়েই রুহি বেরিয়ে গেলো। বুকের ভিতরটা অস্থির হয়ে আছে রুহির। বাড়ির সামনেই টেক্সি থামলো। রুহি ছুটে গেলো, ঘরে ঢুকতেই নানাভাই সোফায় গম্ভীর মুখে বসে আছে। রুহি এগিয়ে এসে নানাভাইয়ের পাশে বসলো। রুহির চোখে মুখে অস্থিরতা স্পষ্ট। রুহি হাপাতে হাপাতে বললো,” নানুর কি হয়েছে নানাভাই?”

নানাভাই রুহির মাথায় হাত রেখে বলল,” জানি না দরজা বন্ধ করে বসে আছে বার বার বলছে তোকে ফোন করে যেনো আসতে বলি। বুঝতে পারছি না কি হয়েছে।”

” আচ্ছা তুমি চিন্তা করে, শরীর খারাপ করো না। আমি দেখছি।”,

রুহির ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। বুকের ভিতরের অস্থিরতা কিছুতেই কাটছে না রুহির। শেষমেশ সাহস জুগিয়ে রুহি দরজায় নক করে বললো,” নানু! দরজা খোলো আমি এসেছি। নানু।” আরো কয়েকবার দরজায় নক পড়তেই নানু দরজাটা খুলে রুহির দিকে তাকালেন। তারপর গম্ভীর ঈশারায় রুহিকে ভিতরে বসতে বললো। নানু নিঃশব্দে দরজা লাগিয়ে রুহির সামনের চেয়ারে বসলেন। রুহি নানুকে বরাবরই ভীষন ভয় পায়। তাও খুব সাহস নিয়ে বললো,” নানু তুমি ঠিক আছো? কিছু বলবে আমায়?”

নানুর দিকে তাকিয়েই রুহি বুঝলো কিছু একটা হয়েছে চোখগুলো লাল হয়ে গেছে শেষবার নানুকে এমন দেখেছিল তার মায়ের ঘটনাটি বলার সময়। রুহির বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। নানু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পাশ থেকে কিছু পেপার রুহির সামনের টেবিলে ছুড়ে ফেলল।। পেপার গুলোর দিকে তাকাতেই রুহি আতকে উঠে নানুর দিকে তাকালো।

নানু কঠিন গলায় বললো,” এতো যে বড়ো হয়ে গেছো সেটা তো জানা ছিলো না। তোমাকে বিয়েটা করতে বলেছি তার মানে এই নয় তুমি কারোর চুক্তির বউ হতেও রাজি হয়ে যাবে। জীবনটা কি এতোই ছেলেখেলা? এ জীবনে কি আমার এইটাই পাওনা ছিলো? তোমার মাকে হারিয়ে তোমাকে কোলে নিয়ে বেচেঁ থাকতে শিখেছি। তার মূল্য আজ এই পেলাম? তোমার মা একই ভুল করেছে তার পরিণতি জানার পর তুমিও এমনটা করবে ভাবতেই পারিনি।”রুহি ঘামতে লাগলো। নানুর কথার মাঝে কণ্ঠ বসে আসছে। কতটা কষ্ট সে পেয়েছে সেটা ভেবেই শরীরের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছে রুহি। চোখ দিয়ে নিরবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

“তুমি এই চুক্তিতে রাজি হলে কিভাবে? এতোটা চাপ তো আমরা দেই নি তোমাকে। খুব বড়ো হয়ে গেছো। নানু, নানাকে তো জানবার প্রয়োজন নেই। তোমার নানাভাই জানলে লোকটা সহ্য করতে পারবে? আমদের কথা না হয় বাদ দেও, সেটা নিয়ে তোমায় আর ভাবতে হবে না। কিন্তু নিজের জীবনের সাথে কি করেছো এটা।” বলেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো নানু। রুহি ভয় পেয়ে নানুর কাছে এগিয়ে যেতেই নানু হাত দেখিয়ে রুহিকে থামতে বাধ্য করে। রুহি চোখ মুছতে মুছতে বললো,” নানু একবার আমার কথাটা শোনো।”

নানু কোনো কথা শুনতেই চাচ্ছে না। নানু কিছুক্ষণ চুপ করে নিজেকে শান্ত করে বললো,” তোমার কোনো কথা শুনতে আমি রাজি নই। এবার আমি যা বলব তাই হবে।আজকের তারিখ জানো কতো?১৭ আগস্ট, এই চুক্তি অনুযায়ী তোমরা এখন তোমরা আলাদা, সে খেয়াল আছে? তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তোমাদের মাঝে আর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আজ থেকে তুমি আমাদের কাছে থাকবে আর ওদের সাথে তোমার সব যোগাযোগ বন্ধ। অনেক খেলেছ নিজেকে নিয়ে। এবার আমার কথাই শেষ কথা।”
#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_৩৪
#নবনী_নীলা

সাত মাসের এগ্রিমেন্টের কথা আহান বা রুহির কারোরই মাথায় ছিলো না। আজ থেকে তাদের দুজনের মধ্যে আইনত কোনো সম্পর্ক নেই। ভেবেই রুহির শরীর কেপে উঠছে। নানুকে রুহি কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারলো না, নানু নিজের সিদ্ধান্তে অটল। এদিকে এই ঘটনা জানতে পেরে রুহির নানাভাইয়ের প্রচন্ড বুকে ব্যাথা শুরু হয়েছে। আপাদত তাকে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। ছোট মামা একটু আগে পাড়ার ডাক্টার সাহেবকে ডেকে নিয়ে এলেন। ডক্টর একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন। ছোটো মামা সেগুলো কিনতে বড় ফার্মেসিতে গিয়েছেন। রুহি নানাভাইয়ের মাথার কাছে চেয়ার নিয়ে বসে আছে। কেদে কেদে চোখ লাল করে ফেলেছে রুহি। কিছুতেই শান্ত করতে পারছেনা রুহি নিজেকে। এদিকে নানভাইয়ের এ অবস্থা আর ওদিকে আহান! রুহি দেওয়ালে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো। সাড়ে আটটা বাজে এতক্ষনে আহান নিশ্চই অফিস থেকে ফিরেছে। আহানকে তো বলেও আসিনি, ফোনটাও নানু রেখে দিয়েছে নিজের কাছে। আহান নিশ্চয় অস্থির হয়ে আছে। এসব জানলে কি করে বসবে কে জানে?

রুহি আর চিন্তা করতে পারছেনা তার জন্যে আজ দাদাভাইয়ের এমন অবস্থা। পুরোনো ঘায়ে যেনো আবার আঘাত দিয়ে বসেছে সে। রুহি দাদাভাইয়ের হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে।

এদিকে নানু ড্রয়িং রুমের ইজি চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছেন। তিনি নিজেকে অনেক শক্ত করে ধরে রেখেছেন। এসব শুনে তার যে কষ্ট কম হয়নি তা না। রুহির জন্য আহানকে তিনি উপযুক্ত ভেবেছিলেন, তার দ্বারা যে আবার এতো বড়ো ভুল হবে তিনি সেটা ভাবতেও পারেন নি। রুহি একটু নরম সভাবের মেয়ে তাই হয়তো আহানের মায়ায় পড়ে গেছে কিন্তু যদি সত্যি ভালোবেসে ফেলে তাহলে রুহির এই দুর্বলতা দূর করতে হবে। কারণ আহানের মতো ছেলেকে ভালোবেসে রুহির মতোন মেয়ে কষ্ট পাবে। রুহিকে আবার আহানের কাছে ফিরিয়ে দিতে তিনি মোটেও রাজি নন। রুহি বার বার জেদ করলেও না। দরকার হলে আবার বিয়ে দিবেন রুহির।

ইজি চেয়ারে বসে এসব ভাবছিলো নানু এমন সময় দরজায় নক পড়তেই চোখ খুললেন তিনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। দরজা খুলেই গম্ভীর হয়ে গেলো তার চেহারা। নানুর সামনে আহান দাড়িয়ে আছে আহানের চোখে মুখে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। আহান এক মুহুর্ত দেরী না করে প্রশ্ন করলো,” রুহি কি এখানে এসেছে?” নানু আহানের অস্থিরতা দেখে কিছু বললো না। আহানকে হাতের ইশারায় সোফায় বসতে বললো। আহান ভিতরে এসে চারিদিকে তাকিয়ে রুহিকে খুজলো তারপর ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে সোফায় বসল।

নানু সিঙ্গেল সোফায় বসে মলিন চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ঠিক কি হয়েছে সেটা আহান বুঝতে না পারলেও কিছু একটা আন্দাজ করতে পারলো। আহান কিছু বলার আগেই নানু গম্ভীর গলায় বললো,” বিয়েটাতে যখন মত ছিলো না তাহলে সেটা তোমার দিদা মনোয়ারা বেগমকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেই পারতে। আমার নাতনির জীবন নিয়ে এমন অমানবিক খেলায় নেমেছিলে কেনো?”

কথাটা শুনে আহানের চোখ মুখ আরো বিষণ্ণতায় ভরে গেলো। যার ভয়ে সে ছিলো ঠিক সেটাই হয়েছে। সামিরাকে অফিসে দেখেই সন্দেহ হয়েছিলো আহানের। কিন্তু এতদূর গড়িয়ে যাবে সেটা আহান কল্পনা করে নি। নানু বিষয়টা আরো জটিল করে ভাবছেন। আহান অনুতপ্ত হয়ে বললো,” আমি মানছি আমি ভুল করেছি।দিদা তখন এতটাই অসুস্থ ছিলো, আমি বুঝতে পরিনি আমার কি করা উচিৎ।”

“তোমার দিদা অসুস্থ ছিলো তার জীবন বাঁচানো জরুরি ছিল তাই বলে একজনের জীবন বাঁচাতে গিয়ে আরেকটা জিবন নিয়ে খেলতে নেমে পড়লে। সাত মাসের এগ্রিমেন্ট? মানে বিয়েটা এতোই তুচ্ছ একটা জিনিস। সাত মাস একটা মেয়ের সাথে থেকে সাত মাস পর মেয়েটাকে ছেড়ে দিলে সেই মেয়েটাকে আর তার পরিবারকে কতো বড় অপমান করা হয় তা তুমি জানো। আমার নাতনি নেহাৎ বোকা, নিজের ভালোটা সে বুঝে না তাই এতো বড় একটা ভুল করেছে। কিন্তু তোমাদের ভুলের মেয়াদ আজ থেকে শেষ। তাহলে রুহি এখানে আছে কিনা সেটা দিয়ে তোমার কি দরকার? এগ্রিমেন্টের মেয়াদ কি আরো বাড়াতে চাইছো?”, কড়া গলায় শেষ কথা বললেন তিনি।

” দেখুন আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। এগ্রিমেন্টটা আমি করেছিলাম কারণ আমি কোনো বাঁধনে আটকে পড়তে চাই নি। এই বিয়েটা আমি দিদার জন্য বাধ্য হয়ে করেছি ঠিক কিন্তু এই বিয়েটার মর্যাদা আমি করি। আর রুহিকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি, এই বাঁধন থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।”, কথাগুলো আহান মাথা নিচু করেই বললো। নিজের ভুলটা সে বুঝতে পারছে।

” ভালোবাসা? কিসের ভালোবাসা? রুহিকে যখন ভালোবাসো তাহলে ঐ মেয়েটি কে যে আমায় তোমাদের ডিভোর্সের পেপার দিয়ে গেলো? যাই হোক সে তোমাদের বিষয়। আর রুহির প্রতি তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো সেটা তোমার ক্ষণিকের মোহ সময়ের সাথে সাথে এই মোহ কেটে যাবে। রুহিকে তুমি ভুলে যাও।”,

কথাগুলো আহানের বুকে কাটার মতন বিধলো। চোখ লাল হয়ে গেছে তার। এতক্ষণ মাথা নিচু করে থাকলেও আহান এবার মাথা তুলে নানুর চোখে চোখ রেখে বললো, ” রুহির প্রতি আমার ভালোবাসাটা কোনো মোহ নয়। এর আগে কখনো আমি এমন অনুভুতির মুখোমুখি হই নি। রুহিকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না।”

” আহান এতকিছুর পর আমি ঠান্ডা মাথায় তোমার সাথে কথা বলছি শুধু একটা কথা বোঝাতে যে তুমি ভুল করেছো। তোমার ভুলের মেয়াদ শেষ তুমি এবার আমার নাতনির জীবন থেকে সরে যাও। তুমার দিদার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক তাই সবটা আমি কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষ করতে চাই। আজ রুহির নানভাই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর আমিও পাথর হয়ে গেছি। তাই আমার কাছে তোমাদের ক্ষণিকের অনুভূতির মুল্য নেই। তুমি আমাদের জিবন থেকে সরে যাও।”, গম্ভীর গলায় বললেন তিনি।

” রুহিকে না নিয়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না। আপনার আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার আপনি দিতে পারেন কিন্তু রুহিকে আমি ছাড়ছি না।”

আহানের কথায় নানু বেশ রেগে গেলেন। তিনি রাগী গলায় বললেন,” ওকে যে নিয়ে যাবে কি অধিকার আছে তোমার? সব শেষ। এই জেদ আমাকে দেখিও না। ওকালতি নিয়ে আমারও পড়াশোনা আছে।”

আহান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো। নিজের রাগ সামলে বললো,” ভুল যেহেতু করেছি ভুলটা শুধরে নেয়ার জন্যে আমি আরেকটা সুযোগ চাই।”

” তোমার কাছে রুহি আর ফিরবে না। তাই সুযোগ চেয়ে কোনো লাভ নেই। তোমার থেকে থেকে ভালো পাত্রের সাথে আমি রুহির বিয়ে দিবো আর এই ভুলটা দ্বিতীয়বার আমি করবো না।”, কথাগুলো শুনে আহানের মাথায় যেনো রক্ত উঠে গেল। রুহির সাথে অন্যকারোর বিয়ের কথাটা যেনো আহানের বুকে গিয়ে বিধলো।

” আপনার মনে হচ্ছে না আপনি জেদ করছেন। রুহি কোথায়? রুহিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। রুহি কখনো এ বিয়েতে রাজি হবে না।”,

” সেটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।আমার কথার উপর রুহি কোনো কথা বলবে না।”,

“আপনি নিজের ইচ্ছেটা কেনো রুহির উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।”, রেগে গিয়ে বলল আহান। রাগ সামলাতে না পেরে আহান দাড়িয়ে পড়লো। এমন সময়ে দরজা দিয়ে ছোটো মামা ওষুধ হাতে ঢুকলেন। আহানকে দেখে কিছু বলতে গিয়েও বললেন না তার মায়ের দিকে তাকিয়ে। পাশ কাটিয়ে রুমে চলে গেলেন তিনি।

” তুমি এবার আসতে পারো। আশা করি তোমায় যেটা বোঝাতে চেয়েছি তুমি বুঝেছো।”, উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো নানু।

” কিছু বুঝিনি আর বুঝতেও চাই না। আমি দুঃখিত এভাবে বলার জন্য কিন্ত রুহিকে আবার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টাটা করবেন না। আমি থাকতে সেটা হবে না।আমি সেটা হতে দিবো না। আসছি।”, বলে হনহনিয়ে আহান বেরিয়ে যায়।

ছোটো মামা রূমে ঢুকে দেখে রুহি নানাভাইয়ের বিছানার পাশে মাথা হেলিয়ে পরে আছে। হয়তো চোখ বুজে গেছে রুহির। ছোটো মামা ওষুধের প্যাকেটটা টেবিলে রেখে রুহিকে আস্তে করে কয়েকবার ডাকতেই রুহি চোখ মেললো। মাথা ঝাকিয়ে বললো,” ওষুধ পেয়েছো? মামা।”

” হ্যা পেয়েছি। কিন্তু তুই এইখানে কি করছিস? বাহিরে দেখালাম আহান আর মা…”, মামার মুখ থেকে আহানের নাম শুনে রুহি চমকে তাকালো। উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” উনি এসেছে?”

” হ্যা, ড্রয়িং রুমে। তুই জানিস না। রুমে ছিলি তাই হয়তো শুনতে পাশ নি?”

” তুমি দাড়াও নানার কাছে আমি দেখে আসি।”, বোলেই রুহি দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো কিন্তু আহানকে দেখা হলো না। শুধু কারোর দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার আবছা ছায়া দেখতে পেলো। সেটা দেখেই বুকের ভিতরটা কেপে কেপে উঠলো। তাকে না নিয়েই চলে গেলো আহান। রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের পানি মুছলো।

[ #চলবে ]
[ #চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here