#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২২_২৩
সাদিত দরজা নক করে বলল মম আসবো—–
সাদিয়া চৌধুরী তখন খাটে আধ শুয়া হয়ে শুয়ে ছিলো।সাদিতের কথা শুনে উঠে বসতে বসতে বলল——
হুম আয়।।।
সাদিত বসতেই সাদিয়া চৌধুরী নিজের চশমাটা মুছে পড়ে নিলো।
এরি মধ্যে সাদিত বলে উঠলো — মম ম্যানেজার কাকা এসেছিলো।
সাদিয়া চৌধুরী সাদিতের কথা শুনে বলল —- ও হ্যাঁ এসেছিলো তো। তখন এসে একটা ফাইল দিয়ে গিয়েছিলো।যেনো তোকে সেটা পৌঁছে দেয়।কিন্তু তোকে দিতে যাবো এরি মধ্যে তোর পাপা আমাকে ডেকে পাঠালেন। পরে যে তোর কাছে গিয়ে দিয়ে এসবো। তা আর মনে ছিলো না।
সাদিয়া চৌধুরী এটা বানিয়ে বললেন কারণ এখন তো উনি এটা বলতে পারেন না যে—তোকে রুমে দিতে গিয়ে তোদের ওইসব দেখে চলে এসেছি।
সাদিত সৌজন্যমূলক হেসে বলল — ইট’স ওকে মম।
সমস্যা নেই।
সাদিয়া চৌধুরী৷ উঠে গিয়ে ফাইলটা এনে— সাদিতের হাতে ফাইলটা দিয়ে ওর পাশে বসলো।
সাদিত ফাইলটা হাতে নিয়েই খুলে দেখতে শুরু করলো—
সাদিয়া চৌধুরী সাদিতের কাঁধে হাত রেখে বলল—-বাবা সাদিত
সাদিত ফাইলের দিকে চোখ রেখেই বলল—- হুম মম বলো—-
তোকে একটা কথা বলতে চায়।
সাদিত হুম বলল
মিসেস চৌধুরী আবার বলল সাদিত
সাদিত তখনো ফাইলের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে কি জানি দেখছিলো।আর মিসেস চৌধুরীর কথায় হুম হুম করছে
সাদিতের মা রেগে ফাইলটা নিয়ে বিছানায় রেখে দিয়ে বলল—
আমি তোকে কিছু বলছি আর তুই হুম হুম করছিস। আমার কথায় কান না দিয়ে তুই তখনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত।মায়ের থেকে তোর ফাইলটা বড়ো। আমি তোকে কিছু বলতে চাচ্ছি আর আমাকে তুই ব্যস্ততা দেখাচ্ছিস।বের হো আমার রুম থেকে।আমার কথা শুনা লাগবে না তোর। ফাজিল ছেলে।
সাদিত এবার বুঝতে পারলো ওর মা রেগে গেছে। তাই সাদিত ওর মার দু কাঁধে হাত রেখে সাদিয়া চৌধুরীকে কিছুটা শান্ত করে বলল—–সরি —-সরি মম—-আসলে এটা একটা ইম্পর্টেন্ট ফাইল মম।কাল আমাকে সিলেট যেতে হবে।ওখানে আমাদের কোম্পানির যে নতুন ব্রাঞ্চ খুলা হয়েছে ওই কোম্পানির কিছু ফিন্যান্সিয়ালের প্রবলেম হয়েছে।তাই আমি একটা মিটিং ডেট ঠিক করতে বলেছিলাম।ওটা কাল ঠিক করেছে।
সাদিয়া চৌধুরী কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল ও আচ্ছা এই ব্যাপার ঠিক আছে।
সাদিত তারপর বলল — হুম মম—- এবার বলো কি বলবে তুমি—-
কি বলতে চেয়েছিলাম সেটা পরে বলবো তোর পাপার সামনে।
তারপর সাদিত আর ওর মা বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে, সাদিত রুমে চলে গেলো।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
রাতে খেতে খেতে সাদিত ওর পাপাকে বলল —-
পাপা কাল সকালের ফ্লাইটে আমাকে সিলেট যেতে হবে। আমাদের সিলেটের নতুন ব্রাঞ্চে যে প্রবলেমটা চলছে ওটারই মিটিং আছে।পরশু আবার ব্রেক করবো।
সাদিতের কথা শেষ না হতেই মিসেস চৌধুরী বলল—আরে তোর পরশু দিন ব্রেক করতে হবে না।তুই আরও সাতদিন ওখানে একটু সময় কাটিয়ে আয়।মাইন্ডটা ফ্রেস লাগবে— সব সময় তোর কাজ আর কাজ।এতো কাজ করতে যে কারোর ভালো লাগে —-তা তোকে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবেনা—কাজ কাজ করতে করতে না এই অল্প বয়সে আমার ছেলেটার মাথাটা না যায়।
সাদিত কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল–আসলে মা —আসলে ব্যাপারটা তা না। আমি আসলে এতোদিন ওখানে থাকা সম্ভব না।প্রবলেম আছে।
সাদিতের মা কারণটা বুঝতে পেরেও,বলল– কেন সম্ভব না আর প্রবলেম শুনি।
তারপর সাদিত কিছুটা গলা আটকিয়ে আটকিয়ে বলল—আসলে মা আমাকে তো এদিকের সব ব্রাঞ্চের সকল কাজ সামলাতে হয়।আমি একদিন না থাকলেই,পরে কাজের হিসাব মিলাতে পারবো না।কথা গুলো কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল–
একদিকে ছেলের কথা শুনে সাদিয়া চৌধুরী কিছুটা হেসে বলল—– আরে সাদিত বাবা আমার আমি চায় তুই আর কিনারা মা কিছু দিন একটু আলাদা সময় কাটিয়ে আয় ভালে লাগবে ।মাঝে মাঝে কাজের থেকে ছুটি নিতে হয় বুঝতে পেরেছিস।না হলে এর প্রভাব তোর পার্সোনাল লাইফে তোর ফ্যামিলির উপর পড়বে।তখন তুই ও কারণে-অকারণে কিনারার সাথে খারাপ আচরণ করবি।আর আমরা তা চাই না।।।।।।।।।।।।। তাছাড়া কিনারারও পরিক্ষা শেষ, ও বাসায় তো এখন বসেই আছে।আর আমাদের বাংলো তো আছেই ওখানে কয়েকদিন থাকবি প্রবলেম কই।আর তুই এদিকের কথা বলছিস।এগুলো বিজনেসের সকল কাজ এই সাতদিন না হয় তোর পাপাই সামলাবে।তারপর সাদিতের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে—-তুমি কি বলো।
মিস্টার সাইফ চৌধুরী খাবার চিবাতে চিবাতে বলল —-সাদিয়া একদম ঠিক বলেছে।তারপর সাদিতকে বলে—-হুম ঘুরে আসো —তোমার ও ভালো লাগবে আর কিনারারও—– তাছাড়া বিয়ের এতোদিন হয়ে গেলো।তুমি কাজের চাপে সেভাবে কিনারাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারোনি।কিনারারও তো কোথাও যেতে ইচ্ছে করে হয়তো তা তোমাকে বলতে পারেনা।তো তোমার তো এসব খেয়াল রাখা উচিত তাই না।কিনারা কাল তুমি সাদিতের সাথে সিলেট যাচ্ছো এটাই ফাইনাল।আর সাদিত তোমার এ নিয়ে কোনো আপত্তি না শুনি।
সাদিত যেনো মিস্টার সাইফ চৌধুরীর কথা শুনে আকাশে চাঁদ পাওয়ার মতো খুশিতে চোখ মুখ চিকচিক করতে শুরু করলো।ওর মনে-প্রাণে হালকা একটা প্রশান্তি ছেয়ে গেলো।তারপর শ্বাস ছেড়ে বড়ো করে বুক ফুলে একটা নিশ্বাস নিলো।আসলে সাদিত ভেবেছিলো।ওর মা ওকে একা সাতদিন আলাদা সময় কাটানোর জন্য বলছে।কিন্তু এদিকে সাদিত ভাবছিলো কিনারাকে ছাড়া একটা রাত ওখানে গিয়ে থাকবে এটার জন্যই সাদিতের মন ছটফট করছিলো।আরো সাতদিন তো দূরের কথা। কারণ এতোদিনে সাদিত কখনো বাইরে যায়নি কারণ কিনারাকে ছাড়া থাকতে হবে।কিন্তু কাল ওখানে একটা ইম্পর্টেন্ট মিটিং থ্রো করেছে যে না গিয়ে উপায় নেই। তাই মনকে সাত-পাঁচ বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে।কিন্তু এখন যখন কিনারা সাথে যাচ্ছে সাত দিন কেন সাত জনম থাকলেও সাদিতের কোনো প্রবলেম নেই। কারণ কিনারা সাথে আছে তো।
এদিকে মিস্টার সাইফ চৌধুরী কথা শুনে কিনারার মনে ধুক করে উঠলো।কেমন জানি অজানা এক অনুভূতি সারা শরীরে দোল খেয়ে গেলো।সাদিতের দিকে তাকাতেই সাদিত যখন চোখ মারলো।কিনারার বুকে তখন অলরেডি ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে।তারপর শুধু মাথা নেড়ে আচ্ছা ঠিকে আছে তোমরা যা ঠিক করবে সেটাই হবে।বলে খাবার খেতে শুরু করলো। কিনারাকে যেনো এক অজানা লজ্জা গিয়ে ধরলো।
★★★★★★
পরেরদিন সকাল ৮ টাই ওদের ফ্লাইট।এখান থেকে আকাশ পথে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে ওদের সিলেট পৌঁছাতে।সকালে ঢাকার রাস্তায় তেমন জ্যাম থাকেনা জন্য সাদিত ঠিক করছে ও আজ নিজে ড্রাইভ করে এয়ারপোর্টে যাবে।সাদিত ড্রাইভ জানলেও কখনো ড্রাইভার ছাড়া বের হয়না।কিন্তু সাদিত ইদানীং লক্ষ্য করছে কিনারা পাশে থাকলে ওর অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছে জাগে।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
কিনারা আর সাদিত মিস্টার চৌধুরী এন্ড মিসেস চৌধুরীর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে আসলো।কিনারা গিয়ে গাড়ির পিছন সিটে বসতে যাবে —–ঠিক তখনি সাদিত ওকে ডেকে বলল—-পছনে নই এখানে সামনে সিটে এসে বসো।
তারপর কিনারা সামনে সিটে বসতেই দেখলো ড্রাইভিং সিটে কেউ নেই।এটা দেখে কিনারা খুব অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো—ড্রাইভার কাকা কোথায়
সাদিত ড্রাইভিং সিটে বসে একটু মুচকি হেসে উত্তর দিলো—–আমার আজ ইচ্ছে হলো নিজে ড্রাইভ করার।তাই আমি ড্রাইভারকে না করে দিয়েছি। উনাকে বলে দিয়েছি পরে যেনো গিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িটা নিয়ে আসে।
কিনারাকে ছোট্ট করে বলল ওহ্ বলতেই—- সাদিত আস্তে আস্তে কিনারার দিকে এগিয়ে গেলো।সাদিত এগিয়ে যেতেই সাদিতের নিশ্বাস-প্রশ্বাস কিনারা নিজের ঠোঁটের উপর অনুভব করলো।সাদিত হুট করেই কিনারার এতো কাছে চলে আসায় হঠাৎই কিনারার হার্টবিট বেড়ে গেলো।কিনারা সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো।কিনারা চোখ করে আছে।এক সেকেন্ড দুই সেকেন্ড পাঁচ সেকেন্ড ও পেরিয়ে গেলো।কিন্তু তাও কিনারা সাদিতের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের উপর অনুভব করতে পারলোনা ।কিনারা চোখ খুলে দেখলো সাদিত ওর কাছে এগিয়ে এসে সিট বেল্টটা আটকে দিচ্ছে। এ দেখে কিনারা হকচকিয়ে গেলো। এটা ও কি দেখছে।কিনারা তো ভেবেছিলো।সাদিত এগিয়ে এসে ওকে একটা কিস করবে।কিন্তু সাদিত যে কিনারার সিট বেল্টটা বাঁধতেই ব্যস্ত। এসব ভেবে কিনারা লজ্জায় মুখ ঠিক কোথায় যে লুকাবে তা বুঝতে পারছিলোনা।
#চলবে
#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৩
প্রায় ৫০ মিনিট পর ওরা সিলেট এয়ারপোর্টে পৌঁছলো।সাদিত আর কিনারা এয়ারপোর্টের বাইরে গেটের কাছে আসতেই একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ওদের দেখে এগিয়ে এসে,সাদিতের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা কিছুটা নিচু করে সাদিতকে সালাম করলো।
উনি আসতেই সাদিত সালাম নিয়ে বিনয়ের সাথে বলে উঠলো —কেমন আছো জাহিদ কাকা।
এইতো বয়স যত বাড়ছে রোগব্যাধিও বাড়তেই আছে আজ এই সমস্যা তো কাল ওই সমস্যা।তবুও আল্লাহ ভালোই রাখছে।তো বাবা তুমি কেমন আছো।তারপর কিনারার দিকে চোখ গেতেই জাহিদ কাকা বলে উঠলো —-বাবা এ কে——একে তো ঠিক চিনলাম না।কাল না তুমি বললে একা আসবে।
কাকা ও তোমাদের বউমা।আসলে কাকা হুট করে কাল রাতে হুট করে ডিসাইড হয় কিনারাও আমার সঙ্গে আসবে।
ও আচ্ছা।।। তা বাবা ও কিন্তু ভারী মিষ্টি একটা মেয়ে। একদম মিষ্টি একটা পুতুলের মতো ।তা ছোট মেম আপনি কেমন আছেন।
কিনারা জাহিদ কাকার কথা শুনে বলল—ছি ছি কাকা আপনি আমাকে মেম মেম কেন করছেন৷।আমি আপনার মেয়ের বয়সী হবো।আপনি আমাকে মেম না বলে নাম ধরে ডাকলে আমি ইজি ফিল করবো।আসলে আমি এই মেম শব্দটার সাথে অভস্ত্যত না।আপনি আমাকে কিনারা বলে ডাকবেন তাহলেই খুশি হবো।বলে কিনারা মুচকি হাসলো।যাতে উনার মনে যে সংকোচটা ওকে নিয়ে আছে তা কেটে যাবে।
কিনারাকে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলতে আর হাসতে দেখে, জাহিদ কাকা ভিতরে ভিতরে আশ্বাস পেয়ে অনেক খুশি হলো।ও ভেবেছিলো আজকালের ছোট ছোট সুন্দরী মর্ডান মেয়েগুলোকে আমাদের মতো গরীব মানুষ নাম ধরে ডাকলে বিরক্ত হয়,মেজাজ দেখায়।জাহিদ কাকারও এরকম একটা ধারণা হয়েছিলো কিনারার সম্পর্কে। কিন্তু কিনারার সাথে কথা বলে তার ধারণাটা ভুল প্রমাণ হলো।এখন আর৷ কিনারার সম্পর্কে ওরকম ধারণা আর নেই।তারপর জাহিদ কাকা একগাল হেসে বলল —-আচ্ছা আচ্ছা আমি তোমাকে ভালোবেসে কিনারা মামনি বলে ডাকবো।কারণ তুমি আমার মেয়ে রিতার বয়সীই হবে।
কিনারা খুশি হয়ে বলল—ও আচ্ছা কাকা আপনার মেয়ে আছে।তাহলে তো ওর সাথে আড্ডা দেওয়া যাবে।
তারপর সাদিত বলল—- এখানেই দাঁড়িয়ে সব কথা বলবে আগে বাড়িতে তো যায়।তারপর সবার সাথে কথা বলতে পারবে।
তারপর সাদিত আর কিনারা গাড়ির পিছন সিটে উঠে পড়লো।
গাড়ি আপন গতিতে চলছে।রাস্তার চারপাশে গাছগাছালির মেলা।সারি সারি গাছ গুলো গাড়ির পিছন দিকে ছুটে যাচ্ছে।সিলেটের রাস্তা গুলো কেমন উঁচু-নিচু গাড়ি চলার সময় যখন উপরে উঠে আবার নিচে নেমে আসে তখন কেমন একটা ফিল হচ্ছে কিনারার।কিনারার কখনো সিলেট আসেনি।এই প্রথম বার এসেছে।তাই গাড়ির জানালা দিয়ে যতটা সম্ভব প্রকৃতির দৃশ্য গুলো দেখে যাচ্ছে।মাঝে মাঝে রাস্তার সাইডে বনের মতো ঘন,গাছগাছালি বের হচ্ছে আবার কখনো লাল মাটির ছোট বড়ো টিলা দেখতে পারছে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর গাড়িটা বিশাল বড়ো৷ একটা গেটের সামনে দাঁড়াতেই সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান এসে গেট খুলে দিলো।গাড়িটা ভিতরে প্রবেশ করতেই রাস্তার দুই সাইড দিয়ে ফুলের গাছের সারি।তারপর গাড়িটা গিয়ে থামলো ডুপ্লেক্স হোয়াইট কালার বাড়ির নিচে।গাড়ি থামতেই জাহিদ কাকা এসে দরজাটা খুলে দিলো।কিনারা নামতেই দেখলো বাড়িটা একদম বাইরের কান্টির ডুপ্লেক্স বাড়ি গুলোর মতো ঝকঝক করছে।বাড়ির একসাইডে মাধবীলতার গাছ ছাদ থেকে মাটি অব্দি নেমে গেছে।হাজার হাজার ফুল ফুটে আছে যা বাড়িটাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।সাথে সুন্দর একটা ফুলের বাগান।
কিনারা আর সাদিত ভিতরে ঢুকতেই কিনারার বয়সী একটা মেয়ে সোনালি কালার সুতির থ্রি-পিস পড়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।এসে সাদিতের পা ছোঁয়ে সালাম করে বলে ভাইজান কেমন আছেন।বলে উপরে উঠতেই কিনারাকে দেখে বলে উঠলো উনিকে ভাইজান।
হুম ভালো, আর ও হচ্ছে কিনারা তোর ভাবি।
কি বললেন ভাইজান ও আমাগো ভাবি।বাহ্ মাশাল্লাহ আমাগো ভাবি খুবই সুন্দরী। আপনার সাথে খুব মানায়ছে ভাবিকে।আপনি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর আমাগো ভাবি পাইছেন।কথা গুলো খুব হাসিখুশি হয়ে দ্রুত বলে উঠলো।
কিনারাকে সাদিতের সাথে মানায়ছে কথা টা শুনে কিনারা কিছুটা লজ্জা পেলো।তারপর বুঝতে পারলো মেয়েটা খুব চঞ্চল ও হাসিখুশি প্রিয়।কথা গুলো শেষ করতেই কিনারা মুচকি হেসে বলল—-তোমার নাম কি রিতা।
জি ভাবি আমার নাম রিতা। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে।
আরে জাহিদ কাকা বলেছে।তুমি অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।
রিতা বললল—-ও আচ্ছা।কি যে বলেন ভাবি।টুকটাক কথা বলে। রিতা বলল, ঠিক আছে ভাবি আপনারা উপরে যান।আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
সাদিত উপরে যেতে যেতে কিনারাকে বলল—আমি ছোট থেকেই জাহিদ কাকাকে দেখে আসছি অন্তত ভালো মানুষ উনি।আমরা তো ঢাকায় থাকি।তাই পাপা উনাকে ফ্যামিলির সাথে এখানে থাকতে বলছে,আসলে উনাদের থাকার জয়গা ছিলোনা।তো আমাদের বাড়িও পাহারা দেওয়া হবে আর উনাদের থাকার জন্য একটা জায়গায়ও হবে।তবে আমরা মাঝে মাঝে ফ্যামিলি টুগেদারে এখানে ঘুরতে আসতাম। এখন অবশ্য তেমন ভাবে আসা হয়না।এখন পাপা আর মম দেশের বাইরেই থাকে প্রায় সময়,তো আমাকেও ঢাকা সহ সব জায়গা সামলাতে হয়।এখানে আমি আসি মাঝে মাঝে কাজের জন্য। আর জাহিদ কাকার ওয়াইফ অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। ছোট বেলায় যখন আসতাম আমাকে অনেক আদর করতেন।।আমি যখন ইন্টারে পড়তাম তখন একদিন উনি জ্বরে মারা যায়।।আমরা তখন এসেছিলাম।আরও অনেক গল্প করতে করতে রুমে প্রবেশ করে।তখনি জাহিদ কাকা এসে লাগেজ দুটো রুমে পৌঁছে দেয়।কিনারা চারপাশ টা ঘুরে ফিরে দেখলো। রুমটা ঠিক সাদিতের রুমের মতোই পরিপাটি।রুমের সাথে বিশাল বড়ো একটা বেলকনি নানান ফুলে, অজানা বাহারি গাছে সাজানো। কিনারা আর সাদিত ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো ব্রেকফাস্ট করতে।তারপর খেয়ে সাদিত মিটিং এর জন্য বেরিয়ে পড়লো।
★★ ★ ★
কিনারা আর রিতা মিলে অনেকক্ষন আড্ডা দিলো ড্রইং রুমে ।কিনারার সাথে রিতা খুব ক্লোস হয়ে গিয়েছিলো।রিতা এতোটা চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে কিনারার সাথে ভাব হতে বেশি সময় লাগলো না ।তারপর রিতা দুপুরের রান্না করার জন্য কিচেনে চলে গেলো কিনারা। প্রায় অনেকক্ষন একা বসে বসে সিরিয়াল দেখতে লাগলো। টিভি দেখতে দেখতে ক্লান্ত অনুভব করতেই সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়লো।
★ ★ ★ ★ ★
কিনারা ঘুম ভাঙতেই দেখলো ও সাদিতের বুকে,পরমুহূর্তেই মনে হলো আমি তো সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম।হয়তো চোখটা লেগে গিয়েছিলো কিন্তু আমি এখানে আসলাম কি করে।কিনারা কিছুই বুঝতে পারলো না।পাশে তাকাতেই দেখলো কিনারা বেডরুমে।তারপর সাদিতের দিকে তাকাতেই কিনারার হঠাৎই রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেলো।উনি এখানে এসেই কাজের জন্য মিটিং এ চলে গেলেন।এখন আবার যদি ও বাসায় এসেছেন তবুও উনি ওই কাজই করছেন। আমার কি কোনো মূল্য নেই। আমাকে উনার বুকের একপাশে রেখে অন্য পাশে আধ শুয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।তা দেখে কিনারার রাগে গা পৃত্তি জ্বলে যাচ্ছে। কেন এখন কাজ রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে কি শুয়া যেতো না।এখনি কাজ করতেই হবে।পরে কি করা যাবেনা এসব ভেবে কিনারা রাগে ফুঁসতে লাগলো।
এদিকে সাদিত হঠাৎই লক্ষ্য কিনারা চোখ মেলে তাকিয়ে আছে —-কিনারাকে দেখে সাদিত বলল— কি ঘুম হলো তোমার।আর তোমার কি হলো, মুখ এমন হঠাৎই লাল হলো কি করে।নাকি আমার বুকে শুয়ে আছো এটা ভেবেই লজ্জায় ব্লাস করছো।
কিনারা সাদিতের কথা শুনে উঠে বসলো।তারপর সাদিতের দিকে হয়ে বলল—-আপনি আমার সাথে কোনো কথায় বলবেন না।থাকুন আপনি আপনার কাজ নিয়ে। আমি কি হয় আপনার,কিচ্ছু হয়না, কেউ না,।আমি এখানে থাকবো না।আজই ঢাকায় ব্যাক করবো।
সাদিত কিনারার হঠাৎই এমন বিহেভিয়ার দেখে বুঝতে না পেয়ে,বলল— আরে বাবা কি হলোটা কি তোমার।তা তো আমাকে বলতে হবে।ঘুম থেকে উঠে হঠাৎই রেগে গেলে কেন।আর ঢাকায় কেন যেতে চাও।আমার কথা তো শুনো—-
কিনারা রেগে গেলো আরো—- না আমি কিচ্ছু শুনবোনা।
সাদিত কিনারাকে একটানে বুকের উপর নিয়ে জড়িয়ে ধরে কিনারার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
কিনারার তখন মনে হলো আমি রাগ করেছি জন্য উনি আমাকে আদর করতে আসছে, তা না হলে তো আমার পাত্তাও নেই।কাজ নিয়েই পড়ে থাকতেন। এসব ভেবে আরো ভিতরে ভিতরে রেগে গেলো।সাদিতের উপর থেকে উঠে আসতে চাইলো।তবে সাদিতের সাথে পেয়ে উঠছেনা।
পরমুহূর্তেই সাদিত কিনারাকে শান্ত করার জন্য কিনারার উম্মুক্ত ঘাড়ে একের পর এক অনবরত কিস করতে শুরু করলো।কিনারা সাদিতের ঠোঁট নিজের ঘাড়ে অনুভব করতেই কিনারার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা একটা শিতল অনুভূতি সারা শরীর জুড়ে দোল খেয়ে গেলো।কিনারা বারবারই কেঁপে উঠছিলো।কিনারা কেঁপে উঠে শান্ত হয়ে গেলো।কিনারা নিজেও কেমন একটা ঘুরের মধ্যে চলে গেলো।সাদিতের স্পর্শ সহ্য করতে না পেয়ে একসময় চোখ বন্ধ করে, নিজের হাত দিয়ে সাদিতের চুল আঁকড়ে ধরলো।
সাদিতের চুল আঁকড়ে ধরতেই, সাদিত কেমন একটা উম্মাত হয়ে গেলো।কিনারার ঘাড় থেকে মুখ সরিয়ে কিনারার মুখের দিকে তাকালো।দেখলো কিনারা তখনো বারবার কেঁপেই উঠছে।সাথে কিনারার ঠোঁটও।সাদিতের কিনারাকে এই অবস্থায় দেখে বেশ মজায় লাগলো।নেশালো চোখে কিনারার মুখের দিকে এগিয়ে গেলো।কিনারার কাপালের উপর আসা চুল টা ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিতেই কিনারা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো—–কিনারা চোখ মেলে সাদিতকে দেখতেই—-সাদিত সঙ্গে সঙ্গে কিনারার ঠোঁট দুটো আবদ্ধ করে নিলো।কিনারা যেনো কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা।আসলে হলোটা কি।যখন বিষয়টা কিনারা বুঝতে পারলো তা ফিল করতে পারলো তখন কিনারা সমান তালে সাদিতের সাথে রেসপন্স দিতে শুরু করলো। এতে সাদিত আরো পাগলের মতো কিস করতে শুরু করলো।মিনিট দশেক না যেতেই সাদিতের ফোন অনবরত বেজে উঠলো।ফোনের শব্দে দুজনের হুস ফিরে।সাদিত কিনারাকে ছেড়ে উঠে জোরে শ্বাস নিতে নিতে ফোনটা রিসিভ করলো। এদিকে কিনারাও হাঁপাছে আর লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।কিছুক্ষনের কথা মনে পড়তেই কিনারা লজ্জায় নেতিয়ে গেলো।কিনারার এটা ভেবে আরো লজ্জা পাচ্ছে যে আজ ও সাদিতের সাথে সমান তালে রেসপন্স দিয়েছে।
সাদিত কথা বলে এসে দেখে কিনারার গালদুটো গোলাপি হয়ে ব্লাস করছে।আর কিনারা কি জানি ভেবে মিটি মিটি করে হাসছে।সাদিতের কিছু একটা মনে হতেই বাঁকা হেসে কিনারার শরীর ঘেঁষে বসলো।বসে একহাত দিয়ে কিনারার থুতনিটা তুলে, কিনারার গোলাপি ব্লাসিং গালে আস্তে করে একটা কামুড় বসিয়ে, একটা গভীর চুমু দিয়ে বলে উঠলো এতো ব্লাসিং দিয়ে হাসছো কেন,কারণ টা কি শুনি।আমাকেও বলো আমিও একটু তোমার সাথে হাসি।কথাগুলো সাদিত কিনারাকে আরো লজ্জায় ফেলার জন্য বলে উঠলো।
কিনারা সাদিতের এমন কথা শুনে লজ্জায় আরো গুটিয়ে গেলো।
কি হলো বউ বলো—-কিনারা কিছু বলতে পারছেনা, ভিষণ লজ্জা করছে।
সাদিত কিনারাকে প্রশ্ন করতে করতে কিনারার কাছে চলে গেলো।গিয়ে কিনারার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে আবার অনবরত চুমু খাচ্ছে। কিনারা সহ্য করতে না পেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল —- মিস্টার চৌধুরী প্লিজ আমাকে ছাড়ুন।অনেক বেলা হয়ে গেছে,দুপুরের খাবার ও মনে হয় খাননি আপনি।আর আমাকে ছাড়ুন আমি গোসলে যাবো।সাদিত কিনারার কথা শুনতে নারাজ।কিনারার এসব কথায় কেমন বিরক্ত হচ্ছে আর কিনারার গলায় ছোট ছোট বাইট দিচ্ছে আর চুমু খাচ্ছে।কিনারা সাদিতকে ছাড়ানোর জন্য নানান বাহানা দিচ্ছে।
#চলবে