ভয়ংকর প্রণয় পর্ব ২১+২২+অন্তিম

#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_21+22
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain

গৌর রং এর মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা নাফিয়াকে গহনা পরিয়ে দিচ্ছে ।নাফিয়া ড্যাপড্যাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাশুড়ির দিকে ।ইনিই হচ্ছেন স্পর্শের মা মিসেস পুষ্প শেখ । উনাকে দেখে বোঝা যাচ্ছেনা উনি রেগে আছেন নাকি খুশি হয়েছেন ছেলের বিয়ে বলে ।পুষ্প শেখের চেহারাতে গম্ভীর ভাব স্পষ্ট ।তারমানে রেগে আছেন ।নাফিয়া পুষ্প শেখের চেহারার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে কথাগুলো ।পুষ্প শেখের কথায় সে ভাবনা থেকে ফিরে এল ।

বলা নেই কওয়া নেই হ্ঠাৎ করে ছেলে এসে আমাদের জানাল বিয়ে করবে তাও আবার আজকের মধ্যে।প্রথমে আমরা রাজি হচ্ছিলামনা কিন্তু পরে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছি ।একটা মাত্র ছেলে আমাদের । ওর কোনো ইচ্ছা কোনোদিন অপূর্ন রাখিনি আজকেও রাখবনা ।শোন মেয়ে তুমি কে , তোমার পরিবার কেমন কিছুই জানিনা আমরা তোমার সম্পর্কে ।স্পর্শ আমাদের কিছুই বলেনি তোমার সম্পর্কে ।আমি অত সহজে আবার অচেনা অজানা মানুষকে আপন করে নিতে পারিনা । তারমধ্যে আবার হ্ঠাৎ করে তোমার সাথে আমার ছেলের বিয়ে হচ্ছে তাই তোমাকে মেনে নিতে আমার সময় লাগবে বুজলে পুষ্প শেখ গম্ভীর গলায় নাফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন ।কথাগুলো বলতে বলতে তিনি নাফিয়াকে গহনা পরানো শেষ করলেন ।

পুষ্প শেখের সরল স্বীকারোক্তিতে নাফিয়া ঘেমে উঠল ।ঢোক গিলে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বোজাল ।

আন্টি নাফিয়াকে সাজানো কম্পিলিট হয়েছে ? তাহলে নিচে নিয়ে যাই ? কাজী সাহেব এসে পরেছেন হিমি রুমে ঢুকে বলল ।

হ্যাঁ হিমি হয়ে গেছে ।

হিমি আর পুষ্প শেখ নাফিয়াকে নিয়ে নিচে নামলেন ।নাফিয়াকে বসিয়ে দিলেন স্পর্শের পাশে ।স্পর্শদের হলরুমের সোফাগুলোতে সবাই লাইন ধরে বসে আছে ।আরদিনের পরিবার , স্পর্শের পরিবার আর স্পর্শের বন্ধুবান্ধব সবাই ।নাফিয়া আড়চোখে তাকাল স্পর্শের দিকে ।
স্পর্শ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল সে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের ।স্পর্শ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার লাল টুকটুকে বৌটার দিকে ।গাঁ-এ জড়ানো লাল টুকটুকে জামদানি শাড়ি , ঠোটে লাল লিপস্টিক ।নাফিয়াকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে স্পর্শের আজকে ।নাফিয়া স্পর্শের থেকে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিচু হয়ে রইল । ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত স্পর্শকে আজ খুবই মোহনীয় লাগছে নাফিয়ার কাছে ।

আয়ান গলা খাকারি দিয়ে কৌতুকের স্বরে স্পর্শকে উদ্দেশ্য করে বলল ,জলদি শুভ দৃষ্টি শেষ কর শালা নাহলে সারারাত এখানেই কাঁটাতে হবে ।নাফিয়া লজ্জায় মিশে গেল আড়চোখে আবারো স্পর্শের দিকে তাকাল ।স্পর্শ ঠোট কামড়ে হাসছে ।

আয়ানের কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাঁসতে লাগল ।আরদিন ধুম করে আয়ানের পিঠে কিল মেরে বসল ।

কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করে দিলেন ।কাজী সাহেবের মুখে পিতার নাম আজম খাঁন শুনে নাফিয়ার চেহারার রং বদলে গেল ।আজকে রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আতিফার কাছে ফোন দিয়েছিল এমনকি আতিফা ফোন রিসিভও করেছিল ।তবে আশ্চর্যজনক কথা হল নাফিয়া বিয়ের কথা বলার পর থেকে আতিফা একটা টুঁ শব্দ পর্যন্ত করেনি ।নাফিয়া রাইশা আর আছিয়ার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু আতিফা খট করে ফোন কেটে দিয়েছিল ।বোনের এহেন আচরনে নাফিয়া কিছুক্ষণ চিন্তায় পরেগিয়েছিল ।তবে বিষয়টাকে পরে আর পাত্তা দেয়নি বিয়ের তালে পরে ।
কাজী সাহেবের গলা শুনে নাফিয়া ভাবনা থেকে ফিরে এল ।

বলুন মা কবুল ।

নাফিয়া স্পর্শের দিকে তাকাল ।স্পর্শ আলতো করে নাফিয়ার হাত ধরে ইশারা করল কবুল বলতে ।

নাফিয়া চোখজোড়া বুজল ।তার মায়ের চেহারাটা ভেসে আসছে চোখের সামনে ।কত শখ ছিল মায়ের তার বিয়ে নিয়ে অথচ আজকে মা নেই তার পাশে ।নাফিয়া সেকেন্ড দশেক পর চোখ মেলে তাকাল সোফায় বসে থাকা নাফিজ রহমানের দিকে । নাফিজ রহমান নাফিয়াকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললেন কবুল বলতে ।

নাফিয়া অস্ফুটস্বরে কবুল বলল ।

কাজী সাহেবের কথামত তিনবার কবুল বলল নাফিয়া ।নাফিয়া তিনবার কবুল বললে আনিতা বেগমের চেহারায় ভয়ংকর ক্রোধ ফুঁটে উঠল । এই বিয়েতে থাকতে চাননি তিনি ।শুধুমাত্র আরদিনের জোড়াজুড়িতে এই বিয়েতে থাকছেন তিনি। আগে থেকেই ছোট মেয়ে রিয়ার জন্য স্পর্শকে খুব পছন্দ করতেন তিনি।মনে মনে চাইতেন স্পর্শকে ছোট মেয়ের জামাই করতে ।কিন্তু হায় !তার সব ইচ্ছা ভঙ্গ করে দিল এই মেয়েটা ।তলে তলে এই ছিল এই মেয়ের মনে ।তাইতো নাফিয়ার প্রতি ক্ষোভ মেটাতে এক ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছেন তিনি ।

কাজী সাহেব স্পর্শকে কবুল বলতে বললে , স্পর্শ সেকেন্ডও দেরি না করে তিন কবুল বলে দিল ।

আশিক কৌতুকের স্বরে বলল , দেখ দেখ তর সয়না কেমনে কবুল বলে দিল ।সবাই মিটমিট করে হাঁসলো শুধু পুষ্প শেখ ছাড়া ।উনার চেহারা আগের মতোই গম্ভীর ।

স্পর্শ চোখ গরম করে তাকাল আশিকের দিকে ।

আবরার শেখ স্পর্শের বাবা হোঁ হোঁ করে হেঁসে বললেন এই না হলে আমার ছেলে ।আ’ম প্রাউড অফ ইউ মাই সান ।বাবার কথায় স্পর্শ ঠোট কামড়ে হাঁসল ।লজ্জাও পেল কিছুটা ।

এরপর নাফিয়া আর স্পর্শ দুজনেই রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিলে কাজী সাহেব তাদের হাজবেন্ড ওয়াইফ ঘোষনা দিল ।সবাই মোনাজাত ধরল ।মোনাজাত শেষে সবাই মিষ্টিমুখ করল ।
স্পর্শের বন্ধুরা সবাই আর আরদিনের পরিবার সবাই আজ স্পর্শের বাসাতেই থাকবে ।

রাত ক’টা বাজে নাফিয়ার জানা নেই ।অনেকক্ষণ আগে রিয়া আর স্পর্শের মেয়েবন্ধুগুলো নাফিয়াকে স্পর্শের রুমে রেখে গেছে । বেডের মাঝখানে বসে থাকতে থাকতে নাফিয়ার পিঠ ব্যথা হয়ে গেছে ।সে যেইনা বালিশে হেলান দিতে যাবে অমনি দরজা খট শব্দ করে খুলে গেল ।স্পর্শ এক পা এক পা করে নাফিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে ।নাফিয়া স্পর্শকে এগিয়ে আসতে দেখে বিছানা দেখে উঠে দাঁড়াল ।
স্পর্শ নাফিয়ার সামনে এসে বলল ,অযু করে এসো নাফিয়া ।দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করব ।

নাফিয়া স্পর্শের কথামত অযু করে আসল ।স্পর্শ দুজনের জন্য জায়ানামাজ বিছিয়ে দিল ।স্পর্শ আর নাফিয়া নামাজ আদায় করল ।
নাফিয়া বিছানার একপাশে চুপটি করে বসে আছে ।স্পর্শ জায়নামাজ রেখে নাফিয়ার সামনে হাটুভেঙে বসে নাফিয়ার কোলে মুখ গুজল ।নাফিয়া শিউরে উঠল স্পর্শের এহেন কান্ডে ।স্পর্শ ঘোরলাগা কন্ঠে বলল

অবশেষে আমাদের ভালোবাসা পূর্নতা পেল হুম ।নাফিয়া…তোমাতে ডুবে যেতে চাই ।

নাফিয়া চোখমুখ খিঁচে বসে ছিল ।স্পর্শের কথাশুনে তার সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল ।সে চোখ মেলে তাকাল স্পর্শের দিকে।নাফিয়া চোখমেলে তাকাতেই স্পর্শ নাফিয়ার ঠোটজোড়া আকড়ে ধরল ।এক সময় ভালোবাসার উন্মাদনায় একে অপরের সাথে মিশে যেতে লাগল ।রাত যত গভীর হচ্ছে তাদের ভালোবাসার উন্মাদনাও তত বাড়ছে….. ।

কানে শোরগোলের আওয়াজ আসতেই নাফিয়া চোখমুখ কুঁচকে শোয়া থেকে উঠে বসল ।নাফিয়া চারপাশে চোখবুলিয়ে বুজতে পারল সকাল হয়ে গেছে ।স্পর্শকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা তারমানে সে নিচে ।এদিকে শোরগোলের আওয়াজটাও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ।নাফিয়া ভ্রু কুচকে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এল ।নিচে নামতেই তার কলিজা ধক করে উঠল ।আজম খাঁন , তনয় ,নিলয় , আরিফ খাঁনের সাথে স্পর্শ চিৎকার করছে ।আজম খাঁন কিভাবে খুঁজে পেল তাকে ভাবতেই নাফিয়ার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে ।সে ঢোক গিলে তাদের সামনে গেল ।

নাফিয়াকে দেখতে পেয়ে স্পর্শ ধমকে বলে উঠল

তুমি নিচে নামলে কেন ? উপরে যাও আমি দেখছি ।নাফিয়ার ভয়ার্ত দৃষ্টি আজম খাঁনের দিকে ।আজম খাঁনের চোখজোড়া লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে কালকে সারারাত ঘুমায়নি ।চেহারা শুকিয়ে গেছে আজম খাঁনের ।চোখের নিচে কালি পরে গেছে ।আজম খাঁনকে দেখতে আগের তুলনায় ভয়ংকর লাগছে ।

হ্ঠাৎ করে আজম খাঁন নাফিয়ার হাত ধরে আকুতি স্বরে বলল , বাড়ি যাবিনা মা?

নাফিয়া আজম খাঁনের থেকে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করল ।কিন্তু পারলনা ।

স্পর্শ নাফিয়ার হাত ধরে বলল , আমার ওয়াইফ কোথাও যাবেনা । আপনারা চলে যান ।

আজম খাঁন অনেক কষ্টে নিজের ভেতরের ক্ষোভটা দমিয়ে রাখছে ।তিনি একটা দম ছেড়ে ঠোটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে বলল , তোমার বৌ আমার মেয়ে ।তোমার বৌরে আমরা একেবারের জন্য নিয়া যাইতাসিনা ।আমার এলাকায় আমার একটা সুনাম আছে ।সবাই যদি জানে আমাদের মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করছে তাহলে আমাদের আর মান সম্মান থাকবনা ।তাই আমি চাই আমাদের মেয়েকে সসম্মানে তোমার হাতে তুলে দিতে ।

স্পর্শ দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল , কোনো প্রয়োজন নেই তার ।ও কোথাও যাবেনা ।
তনয় স্পর্শের দিকে ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।তার হাত পা নিশপিশ করছে স্পর্শকে খুন করতে ।

পুষ্প শেখ বলল , স্পর্শ ও বাড়ি চলে যাক ।আমরা সসম্মানে ওদের বাড়ি গিয়ে বৌ নিয়ে আসবো ।আর তুমি এত অস্থির হচ্ছ কেন ? বৌ তো আর একেবারে চলে যাচ্ছেনা ।

অনিতা বেগম পুষ্প শেখের সাথে তাল মিলিয়ে নাফিয়কে বলে উঠল , নাফিয়া চলে যাও তোমার বাবার সাথে ।তোমাকে সসম্মানে আবার এই বাড়িতে নিয়ে আসা হবে ।

স্পর্শ , আরদিন , রিয়া , নাফিজ রহমান সবাই ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিতা বেগমের দিকে ।

আজম খাঁন নাফিয়ার হাত ধরে ধরা গলায় বলল ,

তুই যাবিনা মা ? এইভাবে পর করে দিসনা মা তোর এই বাপটাকে ।তুই পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষ আমাদের নিয়ে আজেবাজে কথা বলে ।তুই বাড়ি ফিরলে সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে ।আমরা ধুমধাম করে এলাকার সব মানুষকে জানিয়ে আবার তোর বিয়ে দিব স্পর্শের সাথে ।সসম্মানে তুই এই বাড়িতে পা রাখবি ।তখন কেউ তোকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবেনা ।আজম খাঁনের গলায় আজ নাফিয়ার প্রতি অনুরোধ আর আকুতি ।চোখজোড়ায় পানি টলমল করছে আজম খাঁনের ।

আজম খাঁনের আকুতি শুনে নাফিয়া এক মুহূর্তের জন্য গলে গেল ।

নাফিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আজম খাঁন আবার বলে উঠল, তোর পা-য়ে ধরব বল ?দরকার হলে আমি তোর পা-য়ে পরছি ।তারপর-ও তুই আমার শেষ অনুরোধ টা রাখ ।

নাফিয়া চট করে বলে ফেলল , আমি যাবো বাড়ি ।

স্পর্শ ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে তাকাল নাফিয়ার দিকে ।যার জন্য কোনোকিছু পরোয়া না করে দ্রুত বিয়ে করে ফেলল সেই এখন বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ।স্পর্শের মন অভিমানে ভরে গেল ।ক্ষুব্ধ হয়ে নাফিয়ার হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিল ।নাফিয়া টলমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্পর্শের দিকে ।স্পর্শকে কিছু বলতে চাইল কিন্তু বলতে পারলনা তার আগেই আজম খাঁন নাফিয়ার হাত ধরে বেরিয়ে যেতে লাগলেন বাড়ি থেকে ।বাড়ি থেকে বের হবার সময় নাফিয়ার চোখ গেল অনিতা বেগমের দিকে ।অনিতা বেগমের ঠোটে ক্রুর হাঁসি ।তার মানে কি অনিতা বেগম আজম খাঁনকে খবর দিয়েছে ?

নাফিয়া চলে যেতে যেতে পেছনে ফিরে তাকাল ।স্পর্শ ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে ।যার কারনে স্পর্শের চেহারাটা দেখতে পাচ্ছেনা সে।আচ্ছা স্পর্শ কি কাঁদছে ? তার বলতে ইচ্ছে করল , ভালোবাসি স্পর্শ ।আমাদের আবার দেখা হবে ।তার মনের কথা মনেই রয়ে গেল ।বেরিয়ে এল বাড়ি থেকে ।দেখতে পেলনা তার স্পর্শকে আর ।

আজম খান নাফিয়াকে গাড়িতে বসাল ।পেছনের সিটে নাফিয়া আর আজম খাঁন ।মাঝখানের সিটে তনয় আর আরিফ খাঁন ।সামনের সিটে ড্রাইভার আর নিলয় ।

গাড়ি কিছুদূর চলে যেতেই নাফিয়া হঠাৎ করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল ,

বাবা আমি স্পর্শের কাছে ফিরে যাবো এক্ষুণি ।গাড়ি থামাতে বলুন ।

আজম খাঁন নাফিয়ার কথা শুনেও শুনল না ।নাফিয়ার ভয় হতে লাগল ।তার কিছু ভালো লাগছেনা ।গলা শুকিয়ে আসছে ।স্পর্শকে চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছা করছে ।

সে আবারো কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
বাবা গাড়ি থামাতে বলুন ।আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাইনা ।স্পর্শের কাছে ফিরে যেতে চাই ।দয়া করে গাড়িটা থামান ।

নাফিয়াকে অবাক করে দিয়ে আজম খাঁন নাফিয়ার হাত , পা , মুখ , চোখ সব বেধে দিল ।নাফিয়া হাত পা ছুড়াছুঁড়ি করতে লাগল ।তারমানে আজম খাঁনের সব নাটক ছিল ।সব ফাঁদ ছিল ।আর সে এই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে ।নাফিয়ার গালবেয়ে পানি পড়ছে ।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ।তনয় আজম খাঁনের হাতে একটা ধারালো ছুড়ি দিল ।আজম খাঁন আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে নাফিয়ার গলায় পোঁচ মারল ।নাফিয়া হাতপা ছোড়াছুঁড়ি করে কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে গেল ।পরে রইল নাফিয়ার নিথর দেহ ।গাড়ি চলছে নিজ গতিতে ।

ড্রাইভার নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিল ।আজম খাঁম , তনয় , আরিফ খাঁন , নিলয় নাফিয়ার লাশটাকে বস্তায় ভরল ।আজম খাঁন তার তিনজন খাশলোকের হাতে বস্তাটা দিয়ে বলল ,

বস্তাটা নির্জন জায়গায় পুঁতে রাখতে ।

মোটা কালো বেঁটে ধরনের লোকটা বলল,
চিন্তা করবেন না স্যার ।আমরা আমাদের কাজ ঠিকমত করব ।

আজম খাঁনরা সবাই গাড়িতে উঠে বসল ।গাড়ি চলতে শুরু করল সব মায়া , সব পিছুটান পেছনে ফেলে ।

_________________________

সাদা ফরফরে জামা পরিহিত নূরানি চেহারার মেয়েটি এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে ।মেয়েটি এবার মুচকি হেঁসে ঘুমন্ত স্পর্শের কপালে নিজের ঠোটজোড়া ছুয়ে দিতেই গগন কাঁপানো চিৎকার দিয়ে স্পর্শ শেখ শোয়া থেকে উঠে বসল ।সত্তর বছরের বয়স্ক স্পর্শ শেখ থর থর করে কাঁপছে ।প্রায় মাঝেমাঝে স্পর্শ শেখ এই একই স্বপ্ন দেখে ।চারদিকে অন্ধকার নিস্তব্ধ রাত ।কাঁপা কাঁপা হাতে স্পর্শ শেখ তার বালিশের পাশে টর্চ লাইট টা আর চশমাটা হাতে নিল ।চোখে চশমা পরে টর্চ লাইট টা জ্বালিয়ে বিছানা ছেড়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে দেয়ালের দিকে গেল ।দেয়ালে টাঙানো জমধরা বড় ছবিটার দিকে টর্চ লাইট টা মেরে স্পর্শ শেখ ধরা গলায় বলল

ন্ নাফিয়া….

সমাপ্ত
@Nusrat Hossain

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here