#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_05
ইশফা গুটিগুটি পায়ে সান এর সামনে গিয়ে একটা শপিং ব্যাগ সামনে ধরে বলল…..
—এটা আপনার।
সান একবার ইশফা আর ইশফার হাতের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে সাভাবিক ভাবেই বলল……
—তা হঠাৎ কি মনে করে আমাকে গিফট দিচ্ছ?আজ কি কোন স্প্যেশাল ডে?
ইশফাঃআমি আপনাকে গিফট দিতে যাব কেন?
সান ভ্রু কুচকে বলল…..
—তাহলে?
ইশফা নিচু সুরে বলল….
—কালকে যে আপনার শার্ট নষ্ট করেছি তার জন্য।
—শার্ট এর জন্য আমি কি তোমাকে কিছু বলেছিলাম?
সান এর এমন কথায় ইশফার মাথা গরম হয়ে গেলো।নিজে না বলে অন্যকে দিয়ে বহু কথা শুনিয়ে এখন কি সুন্দর ভাব নিয়ে কথা বলছে।ইশফা এলির দিকে তাকিয়ে বলল…..
—আপনি না বললে কি হবে। আপনার কথা অন্যদের কাছে পৌচ্ছে দেবার জন্য আপনার চেলারাই যথেষ্ট।
এলি ইশফার কথা সুনে মুহূর্তে মধ্যে রেগে গেল।একে তো কালকে তাকে কথা শুনিয়েছে।এখন আবার ওকে সানের চেলা বলছে।এলি রেগে বলল….
—এই মেয়ে তোমার সাহস দেখি বেশি বেড়ে গেছে।তুমি আমাকে সানের চেলা বলছো।জানো সান কালকে ও না আমাকে অনেকগুলো কথা শুনিয়েছে।(ন্যাকা সুরে)
সান নরম গলায় বলল….
—তুই কি করেছিলি?
সান এর এমন নরম সুরের কথা সুনে এলি ঘামতে লাগলো।রাগের মাথায় কথা বলে নিজের কথায় নিজেই ফেসে গেল।সান যে ওর ব্যপারে অন্য কাউকে কথা বলা পছন্দ করে না সেটা সে ভালো করেই জানে।আর সান যে কাউকে ছেড়ে কথা বলে না সেটাও তার অজানা নয়।তাই তো সে সানকে না জানিয়ে ইশফাকে কথা শুনিয়েছে।এলি মনে করেছিলো ইশফা সহজ সরল মেয়ে।ওকে কথা শুনালে পাল্টা প্রতিবাদ করবে না।এই মেয়ে যে উল্টো ওকে কথা শুনাবে আর ওমন এক কান্ড করবে তা ওর জানা ছিলো না।
সানঃকিরে কথা বলছিস না কেন?
সানের কথায় এলি ভাবনা জগত থেকে ফিরে এসে আমতা আমতা করে বলল…..
—আ-আমি কিছু করিনি।আমার কথা শোন।আমি সত্যি….
এলি আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই সানের রাম ধমকে সে চুপ করে রইল।সান চোখ মুখ কঠিন করে বলল…..
—কি শুনবো তোর কথা?সে কারন রেখেছিস তুই?সামান্য একটু কোল্ড ড্রিংকস লাগার কারনে তুই এই মেয়েটার সাথে যা তা ব্যবহার করেছিস।এমনকি মেয়েটার ফ্যেমেলিকে নিয়ে আজে বাজে কথা বলেছিস।আবার শার্ট নিয়েও কথা শুনিয়েছিস।তুই এই মেয়েটার কাছে আমাকে শার্ট কিনে দেবার কথা বলে আমার আর তোর সম্মান তুই কতটা নিচে নামিয়েছিস ভাবতে পারছিস?এতোটা নিচে তুই কিভাবে নামতে পারলি?আর কোল্ড ড্রিংকস তো আমার শার্টে লেগেছিলো তুই এতো রিয়েক্ট কেন করেছিলি?
এলিঃসান বিশ্বাস করো আমি তেমন কিছুই করি নি।এই মেয়েটা তোমাকে উল্টোপাল্টা বুঝিয়েছে।এই মে……
সানঃআউট।
এলি সানের হাত ধরে বলল…..
—সান আমি তো……
সান হাত ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে চেচিয়ে বলল…..
—আই সে গেট আউট।
এলি একবার ইশফার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে গটগট করে হেটে চলে গেলো।
সানকে এভাবে রাগ করতে দেখে ইশফার ও কেন যেন ভয় করছে।সান এর বাকি বন্ধুরাও চুপ করে রয়েছে।কারো কোন কথা বলার সাহস হচ্ছে না।ইশফা শপিং ব্যাগটা এক সাইডে রেখে আস্তের উপর কেটে পরতে নিলেই সান গম্ভীর গলায় বলল…..
—আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?
সান এর কথা সুনে ইশফা চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।সান ইশফার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল……
—তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।তুমি আমার গায়ে ইন ছুড়ে মেরে শার্ট নষ্ট করে আবার আমাকে শার্ট দিতে এসেছো।বাহ্ বেশ সাহস আছে তো দেখছি তোমার।
সানের এমন গম্ভীর গলার কথা সুনে ইশফা কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রইল।কেউ মনে হচ্ছে গলা চেপে ধরে রেখেছে।যার জন্য সে কোন কথাই বলতে পারছে না।অনেক চেষ্টা করেও সে একটা শব্দও মুখ দিয়ে বের করতে পারলো না।ইশফাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সান এক রাম ধমক দিল।সান এর ধমক সুনে সানকে আর কিছু বলতে না দিয়েই ইশফা মাটিতে লুটিয়ে পরল।
💦💦💦💦💦💦
চোখে মুখে পানির ঝাপটা লাগতেই পিটপিট করে চোখ খুলল ইশফা।ইশফা চোখ খুলতেই বুঝতে পারলো সে কারো বাহুতে আছে।মানুষটা থেকে ফট করে সরে যেতে নিলেই তুশি ঝাঝালো গলায় বলল…..
—এমন করতাছোস কেন?আমার শরীরে কি কারেন্ট আছে নাকি তোরে শর্ট করতাছে?
ইশফা আস্তে আস্তে উঠে বসে দুই হাতে মাথাটা চেপে ধরে বলল……
—মিটার এমন গরম হইলো ক্যান?
তুশি ইশফাকে মারতে নিয়েও হাত গুটিয়ে বসে রইল।রিধি ইশফার কাধে হাত রেখে বলল……
—তুই ঠিক আছিস?আমরা তো অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
ইশফাঃআমি ঠিক আছি।তখন হঠাৎ করেই মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠেছিল।
নিরব ইশফার সামনে এসে বলল……
—এই যে পিচ্ছি।এতো ভয় পেলে চলে?তুমি তো আমার বন্ধুকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলে।এক ধমকেই সেন্সলেস হয়ে গেলে।
তুশি বিরবির করে বলল……
—এ আর ভয়।এর ভয়েই মানুষ সেন্সলেস হয়।
ইশফা তুশিকে একটা চিমটি কেটে বলল…..
—তেমন কিছু না।ইদানিং পেসার টা একটু বেশিই লো হয়ে আছে।তাই তখন……
নিরব মুচকি হেসে বলল…..
—নিজের খেয়াল রেখে।ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করো।
ইশফা কোন কথা না বলে শুধু মুচকি হাসলো।তার এই হাসিতে যে কেউ ঘায়েল হয়ে গেলো তার বিন্দু মাত্র টেরও সে পেলো না।
💦💦💦💦💦💦
ড্রয়িং রুমে দম ফাটানো হাসির রোল পরে গেছে।হাসির শব্দ শুনে ইশিতা বেগম এর মুখের হাসির ঝিলিক চলে আসলো।সে তো এই দিনটির অপেক্ষায়ই থাকে।কখন তার ভূতপুরী বাড়িতে একটু হৈ-হুল্লর হবে।হাতে ট্রেতে করে চায়ের কাপ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে চায়ের কাপ সামনের টি টেবিলে রেখে সোফায় আয়েশ করে বসে বলল….
—কি নিয়ে তোরা এমন হাসাহাসি করছিস?আমাকে একটু বল আমিও একটু হাসি?
ইশরা হাসতে হাসতে বলল…..
—ফুপি তুমি আমাকে বল না আমি নাটক বাজ।শোন তুশির থেকে তোমার আদরের মেয়ে ইশফা কি করেছে?
ইশিতা বেগমঃকি করেছে আমার ইশফা?
তুশিঃবেশি কিছু না।ইফু( ইশফা) একজনকে সরি বলার থেকে বাচতে ইরুর (ইশরা)টেকনিক অবলম্বন করে সেন্সলেস হওয়ার নাটক করেছে।
ইশিতা বেগমঃমানে?কিভাবে কি?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইশরা হাসতে হাসতে বলল……
—আমি বলছি।একেবারে প্রথম থেকে।
ইশরা ইশফার ভার্সিটিটে প্রথম দিন থেকে ইশফার সাথে যা যা ঘটেছে সব সংক্ষেপে বলল।( ইশফাকে যে কেউ চিরকুট দিয়েছিল তা বাদে)সব সুনে ইশিতা বেগম মাথায় হাত দিয়ে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—এগুলো কি শুনছি আমি?
ইশফা গাল ফুলিয়ে বলল…..
—তাছাড়া আর কি করতাম।ইশরার দিকে তাকিয়ে…
—এই শাকচুন্নীকে ভার্সিটির কাহিনী বলার সময় সে ফোন লাউডে রেখে আমার সাথে কথা বলছিলো।আর মা সব শুনে নিয়েছে।মা আমাকে প্রমিস করতে বলেছে আমি যেন কালকের থেকে ভার্সিটিতে গিয়ে কোন ঝামেলা না করি।আর হাতও যেন না চালাই।আর তুমি তো জানো ও সব সরি টরি আমার মুখ দিয়ে বের হয় না।তাই এই শাকচুন্নীর টেকনিক অবলম্বন করেছি।
তুশি অবাক হয়ে বলল….
—তার মনে তুই আন্টিকে প্রমিস করেছিস আর কখনো ঝামেলায় জড়াবি না?
ইশফাঃআমি মাকে সেদিন প্রমিস করেছিলাম কাল কোন ঝামেলায় জড়াবো না।সব সময়ের কথা বলি নি।(ভাব নিয়ে)তাই তো ঐ সেন্সলেসের টেকনিক অবলম্বন করেছি।
ইশফা মনে মনে বলল…..
—শুধু সরি বলার জন্য অমন করি নি।ঐ বাদর যেভাবে রেগে ছিল কেন যেন তখন তাকে দেখে ভয় করছিলো।ভয় আর সরি দুইটার থেকে বাচতেই তখন অমন করেছিলাম।কিন্তু তোদেরকে তা বলা যাবে না।তাহলে তোরা আমার মান-সম্মান সব অলু ভর্তা করে দিবি।
(ইশফা সান এর কাছ থেকে কেটে পরার জন্য দরজার দিকে পা বাড়াতেই সানের কথায় থেমে গিয়েছিলো।তখন ইশফা চোখ দিয়ে তুশিকে ইশারা করে।ইশফার ইশারা পেয়ে ইশফা পরে যাবার পর তুশি কাউকে ইশফাকে ধরতে না দিয়ে নিজেই নিজের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়।)
ইশিতা বেগমঃ সেন্সলেস হওয়ার কারণ না হয় বুঝলাম।কিন্তু প্রথম দিন ওমন সহজ-সরল সাজতে গিয়েছিলি কেন?
ইশফা হেলান দিয়ে সোফায় আয়েশ করে বসে বলল…..
—সব তোমার ভাইজানের দোষ।তিনিই ভার্সিটিতে যাবার আগে পইপই করে বলে দিয়েছে কোন ঝামেলা না করতে।সান্ত মেয়ের মত থাকতে।তাই তো একটু সহজ-সরল,সান্ত মেয়ে হওয়ার চেষ্টা করছিলাম।বহুত কষ্টে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলাম তখন।কিন্তু যখন ঐ লম্পটটা হাত ধরলো তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি।ঠাটিয়ে দিয়েছি একটা।
ইশিতা বেগমঃমারে এভাবে মাথা গরম করলে চলে বল?মেয়ে হয়ে জন্মেছিস একটু তো মাথা ঠান্ডা করে চলতে হয় নাকি।হুটহাট রাগ করলে কি চলে?
ইশরাঃওকে বলে লাভ নেই ফুপি।ও এক কান দিয়ে ঢুকাবে অন্য কান দিয়ে বের করবে।
ইশফাঃআমি চাইলেও এটা ছাড়তে পারবো না।এই রাগ,জিদ আমার রক্তে মিশে গেছে।খান বাড়ির মেয়ে হয়ে যদি একটু রাগ,জিদ না দেখাই তাহলে তো আমার দাদার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।(ভাব নিয়ে)
ইশিতা বেগম মুখটা মলিন করে বলল….
—তার মান সম্মান এমনিতেও ধুলোও মিশে গেছে।
ইশিতা বেগমের কথা শুনে ইশরা ইশফার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।ইশিতা বেগমকে সাভাবিক করতে ইশরা বলল…..
—ফুপি বাদ দাও তো এই পাগলের কথা।এবার বল,কি খাওয়াবে?
ইশিতা বেগম মুচকি হেসে বলল…..
—আমার মামুনিদের যা পছন্দ তাই খাওয়াবো।
তুশিঃফুপি তুমি কিন্তু ঐ বার আমাকে হালিম খাওয়াও নি।এবার খাওয়াতে হবে।তোমার হাতের হালিমের কথা মনে পরলেই জিভে জল চলে আসে।
ইশিতা বেগমঃওকে মা এবার তোর হালিম পেয়ে যাবি।এবার চা টা শেষ কর।চা জুড়িয়ে তো পানি হয়ে গেলো।
ওরা চা খেতে থাক আমরা সবার পরিচয় জেনে নেই।কারো চায়ের দিকে নজর না দেয়াই ভালো।
জিনাত ইশিতা বেগম।ইশফা আর ইশরার বাবার চাচাতো বোন।চাচাতো বোন হলেও সব সময় তিনি তাকে নিজের আপন ছোট বোনের মত আদর,শাষন করেছেন।
ইশরা,ইশফা জমজ বোন।ইশফা,ইশরা জন্মের পর ইশিতা বেগম তার নামের সাথে মিলিয়ে একই রকম নাম রাখেন।একি রকম নাম হওয়ার কারনে সবাই তাকে বলেছিলেন, মিলিয়ে ভিন্ন নাম রাখতে।তার এক কথা এই নামই থাকবে আর এই নামেই সবার ডাকতে হবে।ছোট বোনের আবদার রাখতে ইশরা,ইশফার বাবা,মা তাই মেনে নেন।বাড়ির লোকদের সুবিধের জন্য ইশফাকে সবাই ইফা আর ইশরাকে সবাই ইরা বলে ডাকে।কিন্তু ইশিতা বেগম তাদের পুরো নামেই ডাকে।
ইশফা,ইশরা,ইশিতা ফুপি বলতেই পাগল।ফুপির সাথে তারা সব সময় বন্ধুর মত সব কিছু সেয়ার করে।
ইশফা,ইশরার বাবা একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে।মা স্কুল টিচার।তাদের নিজস্ব একটা ফ্লাট আছে।ইশফা,ইশরাদের বাসা থেকে ওদের বাবা যেখানে জব করে সেখান যাতায়াতের অসুবিধা থাকার কারনে সে তার অফিসের সামনে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।
ইশফার নতুন ভার্সিটি বাবা যেখানে থাকেন সেখান থেকে সামনে বিধায় ইশফা কিছুদিনের জন্য বাবার বাসা থেকেই ভার্সিটিতে যাতায়াতের সিদ্ধান্ত নেয় ।যাতে তার এক কাজে দু কাজ হয়ে যায়।বাবার সাথে সময় কাটানোও হবে আর প্রথম প্রথম যাতায়াতের কিছুটা সুবিধাও হবে।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_06
ইশফা ভার্সিটিতে এসে ক্লাশরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই রিধি এসে ইশফাকে ঝেকে ধরেছে।
রিধিঃকি হয়েছিলো তোর?দুদিন ধরে তোর কোন খবর নেই কেন?কালকে ভার্সিটিতে আসিস নি কেন?জানিস কত টেনশনে ছিলাম?তোর ফোন নাম্বারটাও নেই যে তোর কোন খোজ নিব।
ইশফাঃএইটু দম ছেড়ে কথা বল।এক সাথে এতো প্রশ্নের উওর কিভাবে দিব।
রিধিঃআগে একে একে সব প্রশ্নের উওর দে পরে দম ছাড়া যাবে।
ইশফাঃআমি ঠিক আছি।কিছুই হয়নি আমার।ফুপির বাসায় গিয়েছিলাম শুক্রবার।ফুপি আসতে দেয়নি।তাই শনিবার ফুপির বাসায় থেকে ওখান থেকেই আজ ভার্সিটিতে আসা।
রিধি কোমরে হাত দিয়ে রাগি গলায় বলল…..
—তুই এদিকে বেড়িয়ে,খেলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিস আর তোর চিন্তায় আমাদের জান যায় যায় অবস্থা।
ইশফাঃআরে রাগ করছিস কেন?যা এর পরের বার তোকেও সাথে নিয়ে যাব।
রিধিঃতোর সাথে যাওয়া লাগবে না আমার।এখন আগে ফোন নাম্বার দে।
ইশফাঃদিচ্ছি দিচ্ছি এতো রাগ করতে হবে না।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা,তুশি,রিধি কেন্টিনে বসে আছে।খাওয়া-দাওয়ার সাথে সাথে তাদের গল্পের ভান্ডার নিয়ে বসেছে।গল্পের মধ্যে তুশি ইশফাকে খোচাতে লাগল।কয়েকবার খোচা দেবার পর ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল…..
—ঐ ছেড়ি কি হইছে তোর?এমন খোচাইতাছোস কেন?
তুশি সামনের দিকে ইশারা করে বলল…..
—দেখ ঐ ছেমরায় তোর দিকে কেমনে তাকাইয়া রইছে।
ইশফাঃতাকাইলে তাকাক।তাতে আমার কি?ওর চোখ দিয়া ও তাকাইছে।
তুশিঃআরে দেখনা একবার তাকিয়ে কেমন আগুন চোখে তোর দিকে তাকাইয়া রইছে।মনে হইতাছে তোরে তার চোখের আগুনে জ্বালাইয়া দিব।
ইশফাঃদিতে থাক।তাতে আমার কি।
রিধিঃআরে একবার তাকিয়ে দেখোই না চিনোস কিনা।
ইশফা ওদের কথায় বিরক্ত হয়ে উল্টোদিকে ঘুরে বলল…
—কোন ছেলেটা।
তুশিঃঐ যে দেখ হাতে বেন্ডেজ করা ছেলেটা।
ইশফা ছেলেটাকে ভালোমত দেখে ঠিক করে বসল।
তুশিঃতুই কি চিনোস তাকে?
ইশফাঃহুম।এইটারেই থাবরা মারছিলাম।
তুশিঃকিহহহ?তুই এই হ্যান্ডসাম পোলাডারে থাবরা মারছোস?
ইশফাঃএতোই যখন তোর কাছে হ্যান্ডসাম লাগতাছে এক কাজ কর তুই যাইয়া গলায় ঝুইলা পর।
তুশি ইশফার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই ইশফা বলল……
—এমনে তাকাইয়া না থাইকা তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর।তোর……
ইশফা আর কিছু বলার আগে সামনের দিকে চোখ পরতেই দেখলো সান,নিরব ওদের দিকে আসছে।ইশফা হিজাব ঠিক করে কেটে পরার জন্য বলল…..
—তোরা আয় আমি ক্লাশের দিকে যাচ্ছি।
ইশফা দাড়াতেই রিধি ইশফার হাত ধরে বলল….
—কই যাস তুই?এক সাথে আসছি এক সাথে যামু।
ক্লাশ শুরু হওয়ার আরো ১৩মিনিট বাকি আছে।(হাতের ঘড়ি দেখে)
ইশফাঃতাতে কি হয়েছে আমার না কিছু বই লাগবে।আমি একটু লাইব্রেরী থেকে ঘুড়ে আসি।
রিধিঃআমারও বই লাগবে ছুটির পরে এক সাথে যাওয়া যাবে।এখন চুপচাপ এখানে বসেন।
নিরব ওদের সামনে এসে বলল….
–এই যে পিচ্ছি কেমন আছো তুমি?
ইশফ রিধির দিকে একবার চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল…
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?
নিরব চেয়ার টেনে বসে মুচকি হেসে বলল……
—এতোক্ষন ভালো ছিলাম না।তোমাকে দেখার পর ভালো হয়ে গেছি।
ইশফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল…..
—মানে???
নিরবঃআরে দাড়িয়ে আছো কেন?বস বস।তোমার শরীরের অবস্থা এখন কেমন?
ইশফা ভদ্রতার খাতিরে চেয়ারে বসে বলল……
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ।
সান এতোক্ষন পাশে দাড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছিলো।কথা শেষ করে ইশফার মুখামুখি হয়ে চেয়ার টেনে বসে পরল।
নিরব বসে বসে ইশফাকে এটা সেটা জিগ্যেস করতে লাগলো।ইশফা না চাওয়া শর্তেও হু হা করে তার উওর দিতে লাগলো।
মুহূর্তের মধ্যে কেন্টিন খালি হয়ে যেতে লাগলো।সবাইকে একে একে কেন্টিন থেকে চলে যেতে দেখে ইশফা বলল…….
—চল তোরা সবাই চলে যাচ্ছে।আসি ভাইয়া।
কথাটা বলে দাড়াতেই নিরব বলল……
—এতো তাড়া কিসের।বস তোমাদের সাথে কথা আছে।
ইশফা নিরবের কথা সুনে চুপচাপ বসে রইল।
একটু পর কেন্টিন পুরো খালি হতেই সান নড়েচড়ে বসে বলল….
—তো মিসঃ ইশফা খান ইফা কেমন আছেন আপনি?পেশার ঠিক আছে তো?আজ আবার ভয়ে সেন্সলেস হয়ে যেয়ো না।যে আমার গায়ে ইন ছুড়ার সাহস রাখে সে নাকি আবার আমার এক ধমকেই সেন্সলেস হয়ে যায়।
সান এর এমন পিন মারা কথা শুনে ইশফা নিজের রাগটাকে সাইডে রেখে দাতে দাত চেপে বলল…..
—তেমন কিছুই না।সাহস আমার বরাবরই একটু বেশি।
সানঃ হুম তা তো দেখতেই পারছি।সাহসের নমুনা তো আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন।তা এবার কাজের কথায় আসি।আমার গাড়িতে শার্ট রেখেছে কে?
(সেদিন ইশফা যাওয়ার সময় সুন্দর করে একটা চিরকুট লিখে শপিং ব্যাগের সাথে লাগিয়ে সান এর গাড়িতে রেখে যায়।চিরকুট টা অবশ্য তুশি লিখে দিয়েছিল।চিরকুটে লিখা ছিল…….
“প্লিজ ভাইয়া ছোট বোন মনে করে আমার ভুল ক্ষমা করে দিবেন।শার্ট টা রেখে গেলাম।প্লিজ রাগ করবেন না।ইন ছুড়ে আপনার শার্ট নষ্ট করার জন্য নয়।ছোট বোনের পক্ষ থেকে বড় ভাইয়ের জন্য গিফট হিসেবে ।যদি ক্ষমা না করতে পারেন তাহলে রাস্তায় কোন ফকির মিসকিনকে শার্টটা দিয়ে দিয়েন।”)
ইশফা এক পলক তুশির দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলল….
—আমি।
সানঃচিরকুটে কি লিখেছিলে?
রিধি সানের দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হেসে বলল…..
—কেন ভাইয়া আপনি লিখা পড়তে পারেন নি?লিখাগুলো তো খুব স্পস্ট ছিল।এমনকি খুব বড় করেই লিখা ছিল।সমস্যা নেই আমার মনে আছে কি লিখা ছিল তাতে।আমি বলছি,প্লিজ ভাইয়া ছোট বোন মনে করে……
সান রিধিকে থাকিয়ে দিয়ে রিধির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল…..
—আমি উপরে যেই চিরকুট ছিল সেটার কথা বলছি না।শার্টের মধ্যে যে চিরকুট ছিল সেটার কথা বলছি স্টুপিট।
কথাটা শোনার সাথে সাথে ইশফার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..
—কিহহহ?শার্টের মধ্যে চিরকুট ছিল?কি লিখা ছিল তাতে?
সান ভ্রু কুচকে বলল…..
—এমন ভাব করছো মনে হয় নিজে জানোই না কি লিখা ছিল?
ইশফাঃনিজে জানলে আপনাকে আর কষ্ট করে জিগ্যেস করতাম না তাতে কি লিখা ছিল।টাইম নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি বলুন কি লিখা ছিল?
সান পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে টেবিলের উপর রেখে রাগি গলায় বলল….
—তুমিই পড়ে দেখো কি লিখেছিলে।
ইশফা চিরকুটটা খুলে হাতের লিখা দেখতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।এই হাতের লিখা যে কার তা চিনতে তার একটুও ভুল হল না।ইশফা দ্রুত চিরকুটটা পড়তে লাগলো।চিরকুটে লিখা ছিল…….
“বাদরের গলায় মুক্তার মালা পরালে বাদরকে দেখতে যেমন লাগে আপনি এই শার্টটা পরলে ঠিক একি রকম লাগবে।অবশ্য আপনাকে আমি আপনার অগোচরে বাদর বলেই ডাকি।চাপ নিবেন না আমি না হয় বাদর ডাকি তাতে কি হয়েছে।আপনি তো জানেন আপনি বাদর না মানুষ🙃”
চিরকুট টা পড়ে ইশফা মাথা নিচু করে বসে রইল।রাগে তার চোখ,মুখ লাল হয়ে গেলো।হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠার কারনে মাথা উচু করে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে দেখলো ফোনের স্কিনে “মি”লিখাটি জ্বলজ্বল করছে।ইশফা কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা শব্দ করে টেবিলের উপর রাখলো।সবাই এতোক্ষন ধরে ইশফার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে সান কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই ইশফার ফোনটা আবার বেজে উঠল।সানের চোখ ইশফার ফোনের দিকে পরতেই দেখতে পেল স্কিনে উপর হার্ট সেপের একটা পিক দেয়া পিকচার ভেসে উঠেছে।যার মধ্যে সুন্দর করে ইংলিশ ফন্টে লিখা মাই লাভ।আর উপরে ইংলিশ ফন্টে “মি” লিখাটা জ্বলজ্বল করছে।ইশফা এবারো ফোনটা কেটে দিল।৩য় বার কল আসতেই ইশফা রেগে ফোন রিসিভ করে রাগি গলায় বলল….
—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই,টিকটিকি,গরিলা,হনুমান তোরে এখন সামনে পাইলে যে আমি কি করতাম তা আমি নিজেও জানি না।
অপর পাশ থেকে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ পেতেই ইশফার রাগ পানি হয়ে গেল।ইশফা চিন্তিত সুরে বলল…..
—কি হয়েছে তোমার?কথা বলছো না কেন?
—……
—কি হল কথা বলছো না কেন?
—………..
—কোথায় আছো তুমি?
—বা-বাড়িতে।
— আমি এখনি আসছি।
কথা শেষ হতেই তুশি বলল……
—কিরে কি হয়েছে?কার ফোন ছিল?
ইশফাঃআসছি।পরে সব বলল।
ইশফা আর কোন কথা না বলেই তাড়াতাড়ি করে চলে গেল।সবাই ইশফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।সান চোখ মুখ কঠিন করে সামনের চেয়ারে এক লাথি দিয়ে ভেঙে গটগট করে হেটে চলে গেল।
(সান এর আবার কি হল?মিটার এমন গরম হল কেন🙄)
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_07
ছাদের এক কোনে কফির মগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে জিদান।দৃষ্টি তার ব্যস্ত নগরীর দিকে।হঠাৎ রাস্তায় এক ছোট মেয়ের দিকে চোখ পরতেই তার চোখ সেখানেই আটকে গেল।মেয়েটার বয়স অনুমানিক ৭/৮বছর হবে।মেয়েটা সুন্দর একটা লং গাউন পরেছে।দূরের থেকে মেয়েটাকে পুরো পুতুলের মত লাগছে।মেয়েটা পাশেষ একজন বয়ষ্ক লোকের হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।আর হাত নাড়িয়ে একেক কথা বলছে।মেয়েটাকে দেখের পর জিদানের চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরোন কিছু স্মৃতি।
—ভাইয়া,ভাইয়া দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?
জিদান টেবিলে পড়াশুনা করছে।বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বিরক্ত হয়ে বলল…..
—দেখ ইশু আমি পড়ছি আমাকে ডিস্টাব করিস না।
—পড়ছো তো কি হয়েছে।একটু কি তাকিয়ে দেখে বলা যায় না।
—তুই তো পেত্নী।নতুন করে তোকে কি দেখবো।পেত্নী যতই পরি সাজার চেষ্টা করুক না কেন তাকে পেত্নীই লাগবে।
ইশু কটমট করে বলল…..
—তুই পেত্নী ,তোর বউ পেত্নী।
—মাথা মোটা আমি কিভাবে পেত্নী হব?
—তুই পেত্নী হতে যাবি কেন তোর বউ হবে পেত্নী।
জিদান রাগ দেখিয়ে বলল…..
—ঠাটিয়ে দিব এক চর।তুই আবার আমার সাথে তুই তোকারি করছিস কেন?
ইশু ভেংচি কেটে বলল…..
—হুহ আমার মনে হয় হাত নাই।
—দেখ তুই কিন্তু ইদানিং বেশি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।আমি কিন্তু চাচ্চুর কাছে বিচার দিব।
—দে বিচার না করলো কে।তুই আমার নামে একটা বিচার দিবি আর আমি তোর নামে বড় মার কাছে হাজারটা দিব।তাও বানিয়ে বানিয়ে হুহ…..
জিদান দাতে দাত চেপে বলল….
—বেয়াদব মেয়ে বের হ তুই আমার রুম থেকে।
ইশু বেডে আরাম করে বসে বিরবির করে বলল…..
—আসছে আমাকে এই রুম থেকে বের করতে।বিয়েটা শুধু হতে দে।তখন দেখবি কে কাকে রুম থেকে বের করে।
জিদান সব শুনেও না শোনার ভান করে ভ্রু কুচকে বলল…
—কি বিরবির করছিস।বললাম না রুম থেকে বের হ।
—ভাইয়া আসবো?
জিদান সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—অনুমতি নেয়ার কি আছে।আয় ভিতরে।
মেয়েটি গুটিগুটি পায়ে ভিতরে আসতেই জিদান হাসি মুখে বলল…..
—বাহ আমাদের বুচিকে তো মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে।তা হঠাৎ শাড়ি পরলি কেন?
মেয়েটি মুচকি হেসে বলল….
—ধন্যবাদ ভাইয়া।শাড়ির কথা আর বলোনা আসলে ও….
আর কিছু বলার আগেই ইশু জিদানের দিকে তেড়ে এসে কোমরে হাত রেখে বলল……
—ও আসতে না আসতেই ওরে সুন্দর লাগতাছে তা বললে।আর আমি যে কখন থেকে জিগ্যেস করছি আমাকে কেমন লাগছে তখন কিছু বললে না কেন?আমাকে সুন্দর লাগছে বলতে কি মুখে তোমার ফোসকা পরে?
জিদান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল…..
—বুচি আর তুই কি এক হলি নাকি।তাছাড়া বুচিকে সুন্দর লাগছে তাই বললাম।আমি আবার পেত্নীদের মন রক্ষার জন্য মিছেমিছে তারিফ করতে পারি না।
ইশু ছলছল চোখে জিদানের দিকে একবার তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
ইশুর কাজে জিদান অবাক হয়ে গেল।জিদান ভেবেছিল ইশু ওর সাথে ঝগড়া করবে।তা না করে যে এভাবে বের হয়ে যাবে তা ও ভাবতেও পারেনি।
—উফ ভাইয়া দিলে তো মেয়েটাকে কাদিয়ে।একটু সুন্দর বললে কি এমন হতো। তোমার জন্য কত কষ্ট করে শাড়ি পরলো সাজলো।সাথে দেখো আমাকেও বস্তা পরিয়ে রেখেছে।এখন যাও তার মান ভাঙাও।আমি কিন্তু কোন সাহায্য করতে পারবো না।
কথাটা বলে মেয়েটি ও রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
জিদান অসহায় মুখ করে সেখানেই দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো,তার অভিমানির অভিমান কিভাবে ভাঙাবে।
পুরোন স্মৃতি মনে করে জিদান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো, এখনো বুঝি তুই এভাবেই গাল ফুলিয়ে,রাগ করে থাকিস তাই না?সেদিন তোকে দেখতে পুরো পুতুলের মত লাগছিল।মনে হচ্ছিল আমার সামনে একটা পুতুল দাড়িয়ে তার হাত নেড়ে কথা বলছে।আমার উপর তোর অনেক অভিমান জমেছে তাই নারে।তাই তো কোন খবর নিসনি আমার।তোর সব অভিমান,অভিযোগ ভাঙাতে আমি আসছি।আই এম ব্যাক।
💦💦💦💦💦
ইশফা,তুশি ভার্সিটির মাঠের এক কোনে বসে রয়েছে।ইশফাকে আজ অন্য দিনের থেকে একটু অন্য রকম লাগছে।তাই তুশি কিছু জিগ্যেস করার সাহস পাচ্ছে না।
ঝড়ের গতিতে রিধি ওদের কাছে এসে ওদের পাশে বসে হাপাতে হাপাতে বলল……
—সরি রে দেড়ি তে আসার জন্য।আজ ভার্সিটিতে আসার ইচ্ছে ছিলো না।কিন্তু এক উজবুকের তাড়ায় আমাকে আসতে হল।
রিধির কথা শুনে তুশি একটু মুচকি হাসলো।ইশফা সেই আগের মত বসেই রয়েছে। কোন কথা বলল না।রিধি ইশফাকে চুপকরে বসে থাকতে দেখে ইশারায় তুশিকে জিগ্যেস করল ইশফার কি হয়েছে?তুশি ইশারায় বলল,সে জানে না।রিধি নজর ইশফার হাতের দিকে পরতেই রিধি ইশফার হাত ধরে চিন্তিত শুরে বলল…..
—হাতে কি হয়েছে তোর?এতো বড় বেন্ডেজ করেছিস কেন?
ইশফা রিধির থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল…..
—হাত কেটে গেছে?
তুশি ইশফাকে রিধির সাথে কথা বলতে দেখে একটু সাহস করে বলল……
—কি হয়েছে তোর?মন খারাপ কেন?
—……….
তুশি কিছুটা আচ করতে পেরে বলল……
—তুই আবার কোন ঝামেলা করিস নি তো?
ইশফাঃকোন ঝামেলাই করি নি।সোজা গিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছি।
রিধি অবাক হয়ে বলল…..
—কি বলছিস তুই?কার হাত ভেঙেছিস?
ইশফাঃএক অমানুষের।
তুশিঃতুই কি একটু রাগটাকে কন্টল করতে পারিস না?
ইশফা রেগে বলল….
—ঐ অমানুষের জন্য তোমার এতো দরদ দেখাতে হবে না।বেশি কিছুই করিনি।শুধু হাত টাই ভেঙে দিয়েছি।ইচ্ছে তো করছিলো জানে মেরে দিতে।আফসোস পারিনি।
রিধিঃতোরা কিসের কথা বলছিস আমাকে একটু ক্লিয়ার করে বলবি প্লিজ।আমি তোদের কথা কিছুই বুঝছি না।
তুশিঃআমারও তো মাথা ভনভন করছে।কি হয়েছে পুরোটা ক্লিয়ার করে বল না ভাই।
ইশফাঃবলবো সব আগে আমার মাথা ঠান্ডা হতে দে।
ইশফা কথাটা বলে উদাস মনে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল।ওরাও ইশফাকে আর কোন জোর করলো না।
ইশফা একজনকে হাসিমুখে ওদের দিকে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালো।চোখের ভুল ভেবে কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে পুনরায় সামনের দিকে তাকালো।ততক্ষনে লোকটি তার বড় বড় কদম ফেলে তার সামনে এসে দাড়ালো।ইশফা চোখ খুলতেই বুঝতে পারলো,না সে ভুল দেখছে না।তার সামনে সত্যি সত্যি সেই মানুষটি দাড়িয়ে আছে।সামনের মানুষটি আর কেউ নয় স্বয় জিদান।ইশফা দাড়িয়ে ছলছল চোখে জিদানের দিকে তাকিয়ে রইল।
জিদান হাসি মুখে বলল…..
—কেমন আছিস?
ইশফা কোন কথা না বলে চলে যেতে নিলেই জিদান ইশফার হাত ধরে করুন কন্ঠে বলল……
—সবাই আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেও আমি জানি তুই অন্তত মুখ ফিরিয়ে থাকবি না।তুই ও কি আমাকে ভুল প্রমান করে মুখ ফিরিয়ে নিবি?
ইশফা কোন কথা না বলে কিছুক্ষন ছলছল চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে উল্টো ঘুড়ে জিদানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠল।
()