মনের_পিঞ্জরে পর্ব ৯+১০

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_09

চোখের উপর এক হাত রেখে বিছানায় শুয়ে রয়েছে ইশফা।ইশরা টেবিলে বসে জোড়ে জোড়ে শব্দ করে পড়ছে।ইশফা,ইশরার পড়ার শব্দ সাথে লাইটের আলোর জন‍্য চেষ্টা করেও ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে পারছে না।

ইশফা কিছুক্ষন ঘুমানোর জন‍্য এপাশ-ওপাশ করেও ঘুম না আসায় বিরক্ত হয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন বের করে সময় দেখলো।সময় রাত ১১:৪৯ মিনিট।ইশরা যে ইশফাকে বিরক্ত করার জন‍্য এমন করছে তা ইশফা ভালোই বুঝতে পারলো।তা না হলে যেই মেয়ে পরিক্ষার সময়েও টেনেটুনে১১টা পযর্ন্ত টেবিলে থাকে।ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে একটু কোনমত মুখ নাড়িয়ে পড়ে। সেই মেয়ে এখন এতো রাত পযর্ন্ত পড়ছে।তাও আবার শব্দ করে।

অন‍্য সময় হলে ইশফা,ইশরাকে দুকথা শুনিয়ে পড়ার আওয়াজ ও লাইট বন্ধ করতে বলতো।কিন্তু আজ ইশফা কোন কথা না বলে মুখের উপর বালিশ চেপে শুয়ে রইল।

ইশরা এতোক্ষন ইচ্ছে করেই শব্দ করে জোড়ে জোড়ে পড়ছিল।যাতে ইশফা ওকে কিছু বলে।কিন্তু না,তাতে তার কাজ হলো না।ইশরা পড়ার ফাকে ফাকে ইশফাকে লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো।লাইটে আলো আর পড়ার শব্দে যে ইশফার অসুবিধে হচ্ছে তা ইশরা ঢের বুঝতে পারল।ইশফার অসুবিধের জন‍্যই তো ইশরা ইচ্ছে করে একটার জায়গায় দুটো লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে।যাতে ইশফা কিছু বললে সে ছুতো ধরে ইশফার সাথে কথা বলতে পারে।কিন্তু ইশরার আশায় ইশফা এক বলতি পানি ঢেলে চুপচাপ শুয়েই রয়েছে।

ইশরা বিরবির করে বলল…..

—ভাঙবে তবু মচকাবে না।অসুবিধে যখন হচ্ছে তাহলে একটু বললে কি হত লাইট অফ করতে।না তা বলবে কেন?তা বললেই তো আমার সাথে কথা বলা হয়ে যাবে না।আমার সাথে তো সে আবার কথা বলে না।আমার সাথে রাগ করে মুখে কলা দিয়ে বসে রয়েছে।ইরুরে এভাবে কাজ হবে না।অন‍্য ভাবে কাজে লেগে পর।

ইশরা মুখ ভরে নিশ্বাস ফেলে টেবিল থেকে উঠে লাইট অফ করে আস্তে আস্তে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আদুরে গলায় বলল……

—আফু….ও ইফু আফু…..ঘুমিয়ে পরেছো বোইনা?

ইশফা,ইশরার ডাক শুনেও ইশরার ডাক ইগনোর করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।

ইশরা আস্তে আস্তে ইশফার দিকে চেপে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে কাদো কাদো গলায় বলল…..

—সরি।এখন থেকে কিছু হলে আমি সর্ব প্রথম তোমাকে জানাবো।অপরের কাছ থেকে জানতে হবে না তোমাকে।

ইশরা মনে মনে বলল……

—রিদের বাচ্চা তোর খবর আছে।কে বলেছিলো পাকনামি করে ইফুকে আমার কথা বলতে।তোর জন‍্য মহারানি এখন আমার সাথে রাগ করে বসে রয়েছে।এখন এর রাগ ভাঙাতে না জানি আমাকে কি কি করতে হয়।

ইশফা কোন কথা না বলে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।

ইশরা ঠোট ফুলিয়ে বলল…..

—বললাম তো আর হবে না সরি।এবার কিন্তু আমার সাথে কথা না বললে সত‍্যি সত‍্যি কান্না করবো।

(কালকে ইশরার সাথে যা ঘটেছে তা ইশরা ইশফাকে জানায় নি।ইশরা চায়নি ইশফা ওর জন‍্য আবার কোন ঝামেলা করুক।তা নিয়েই ইশফা,ইশরার সাথে রাগ করেছে।)

ইশফা,ইশরার কানটেনে ধরে ঝাঝালো গলায় বলল……

—এতোক্ষন জ্বালিয়ে হয় নাই?এখন তুমি কুয়ারা করতে আসছো।কথায় বেলায় তো বহুত পটু।মুখ এতো চলে আপনার সাথে হাত একটু-আকটু চালালে কি হয় ?

—আহ্ কান ছাড় শয়তান মহিলা লাগছে আমার।আমি যদি হাত চালাই তাহলে তুই কিভাবে হিরোর মত আইসা আমারে বাচাবি বল।আমি তো চাইলে মুখের সাথে হাতও চালাতেই পারি। কিন্তু তোরে হিরো বানানোর লিগাই তো হাত চালাই না।

—তোর হিরোর গুষ্টিকিলাই।আগে বল এর পর থেকে কিছু হলে সবার আগে আমাকে জানাবি কিনা।অবস‍্য আর আমাকে জানাতে হবে না।আমার ডিউটি শেষ।

ইশরা কান ডলতে ডলতে উঠে বসে বলল…..

—ডিউটি শেষ মানে?কিসের ডিউটির কথা বলছিস তুই?

ইশফা একটা রহস‍্য জনক হাসি দিয়ে বলল…..

—আমি ঘুমোব।কোন ডিস্টাব করবি না।যদি কানের সামনে প‍্যানপ‍্যান করিস তাহলে তোর খবর আছে।(চোখ রাঙিয়ে)

ইশরা ইনোসেন্ট মুখ করে বলল….

—আমি ভোলাভালা,মাসুম একটা বাচ্চা।আমারে তুই এমনে কইতে পারোস?এখন আমার চেহারার উপর দরদ দেখিয়ে বলে দে তুই কিসের কথা বললি?

—চুপচাপ ঘুমা আর আমাকে ঘুমোতে দে।কালকে তোর জন‍্য এমন কিছু অপেক্ষা করতাছে তা তুই কল্পণাও করতে পারবি না।

ইশরা সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল….

—ইফু তুই কিসের কথা বলতাছিস রে।হেয়ালি না করে একটু ক্লিয়ার করে বল তো।তা না হলে তো আমার আবার রাতে ঘুম আসবো না।

—আজকের রাতটা শান্তি মত ঘুমিয়ে নে।গুড নাইট।

কথাটা বলেই ইশফা চুপচাপ শুয়ে রইলো।ইশরা কিছুক্ষণ ইশফার থেকে কথা শোনার জন‍্য ইশফাকে বিরক্ত করল।কিন্তু ইশফার চোখ রাঙানো দেখে ইশরা দমে গিয়ে চুপকরে শুয়ে রইল।

💦💦💦💦💦💦

সান তার বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডা কম সে তো চুপচাপ বসে বসে আশেপাশে কাউকে খুজতে ব‍্যস্ত।নিরব অনেকক্ষন ধরে সানকে পর্যবেক্ষণ করছে।বেচারাকে দেখলেই যে কেউ বলে দিবে সে রাতে
ঠিকমত ঘুমোয় নি।চেহারা,চোখ-মুখ কেমন ফুলে রয়েছে।নিরব গলা পরিষ্কার করে গান ধরলো…..

—চুরাকে নিন্দ তেরা….
গরিয়া কাহা চলি…..
পাগল হুয়া দিওয়ানা হুয়া,
পাগল হুয়া মেরি দোস দিওয়ানা হুয়া……
আ……

আর কিছু বলার আগেই সান নিরবের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই নিরব গান থামিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলল…..

—এমনে তাকাস কেন?দেখোস না গান গাইতাছি।কি সুন্দর গান ধরছিলাম।দিলি তো আমার গানের মুডটা নষ্ট করে।

হেনাঃতোর এই কাকের গলার গান কেউ সুনতে চায় নাই।একে তো কাকের গলা তার উপরে গানটাও ঠিকমত বলতে পারলি না।

নিরবঃফ্রিতে ভালো জিনিস তো তোর আবার ভালো নাগে না।আমি তো ভালো না ভালো লইয়াই থাইকো।

হেনাঃঠিক বলেছিস ফ্রি জিনিস আমার এমনিতেও ভালো লাগে না।আমাদেরকে ফ্রিতে গান না শুনিয়ে ভাবিকে এই কাকের গলায় গান শোনানোর জন‍্য তুলে রাখ।

নিরব হতাস হয়ে বলল…..

—আর ভাবি।তোর ভাবি আমার জীবন…….

আর কিছু বলার আগেই পাশ দিয়ে রিধি, তুশি, ইশফাকে যেতে দেখে নিরব ওদের কে ডাক দিল।

ওরা তিনজন সামনে আসতেই নিরব হাসিমুখে বলল……

—কেমন আছো তোমরা?এই যে পিচ্ছি কি খবর তোমার?(ইশফাকে উদ্দেশ্য করে)

ইশফাঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।

নিরব বিরবির করে বলল…..

—ভালো থাকলেই ভালো।আরেক জন তো তোমার বিরহে ভালো নেই।

ইশফা নিরবের কথা শুনতে না পেরে বলল…..

—কিছু বললেন আমাকে?

নিরব কথা ঘুড়িয়ে ইশফার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল….

—পিচ্ছি তোমার হাতে কি হয়েছে?

ইশফাঃতেমন কিছু না।একটু কেটে গেছে।

নিরবঃসান দেখ পিচ্ছির হাত কেটে গেছে। তোর ও তো হাত কেটে গেছে।যা দুজনে মিলে কোলাকুলি কর।

ইশফা নিরবের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই নিরব কথা ঘুড়িয়ে বলল…..

—না মানে দুজন হাত মিলাও।আমরা একটু দেখি বেন্ডেজ করা হাত মিলালে দেখতে কেমন লাগে।(বোকা হেসে)

ইশফাঃমনে হচ্ছে আপনার মনে খুব ইচ্ছে জাগছে বেন্ডেজ করা হাত মিলালে দেখতে কেমন লাগে তা দেখার?

নিরব মুচকি হেসে বলল….

—কেন আমার এই ইচ্ছে পূর্ণ করবে?

ইশফা মেকি হেসে বলল……

—আপনি চাইলে পূর্ণ করতেই পারি।আপনার হাত দুটো দিন।আমি আবার খুব সহজেই হাত ভাঙতে পারি।তখন নিজের ভাঙা হাতে বেন্ডেজ করে সারাদিন হাত মিলিয়ে বসে থেকে নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারবেন।

কথাটা শোনার পর নিরব বাকা চোখে সানের দিকে তাকালো।সান মিটমিট করে হাসছে।সানের হাসি দেখে নিরবের রাগ হল।মনে মনে বলল…..

—তুই শালা বন্ধু নামের কলংক।তোর সামনে তোর বন্ধুরে ছোট খাট ওয়ার্নিং দিতাছে আর তুই হাসতাছোস।

💦💦💦💦💦💦

ইশরা ক্লাসে আসার পর থেকে লিপি ইশরাকে ঝেকে ধরে তার কথার ঝুলি থেকে কথা সুনাচ্ছে।
আজও সেই এক কথাই চলছে সবার মুখে মুখে।

লিপিঃইরুরে কেন যে কালকে তুই ক্লাশ শেষ হওয়ার আগেই চলে গেলি।মিস করে ফেললিরে। বড্ড মিস করে ফেললি।নতুন টিচারটা পুরোই আগুন।বিশ্বাস কর দেখলে তুইও চোখ ফেরাতে পারবি না।

ইশরার এমনিতেই কালকে মন ভালো ছিল না।আর সবাইকে নতুন টিচারকে নিয়ে এমন মাতামাতি করতে দেখে আরো বিরক্ত লাগছিলো।তাই সে কাল সব ক্লাশ না শেষ করে বাড়িতে চল গিয়েছিল।

ইশরা বিরক্ত হয়ে বলল……

—এই পযর্ন্ত এই কথাটা তুই ১০০বার বলছোস।আরেক বার বললে তোর খবর আছে।(চোখ রাঙিয়ে)

—আরে এখনি তো স‍্যারের ক্লাস শুরু হবে।তাই তোকে আমি আগের থেকেই সতর্ক করতাছি।যাতে তুই স‍্যারকে দেখার পর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারিস।ফিট না হয়ে যাস।

—আমি তোর মত অতো লুচি পরোটা না যে,একজনকে দেখেই ফিট হয়ে যাবো।

—তুই আমারে এমনে কইতে পারলি আমি লুচি পরোটা।(কাদো কাদো হয়ে)

ইশরা কথা না বলে ভেঙচি কেটে বসে রইল।

একটু পর স‍্যার ক্লাসে আসাতেই সবাই দাড়িয়ে গেল।ইশরাও সবার দেখা দেখি দাড়িয়ে গেল।স‍্যার ক্লাশে আসার পরেও ইশরা স‍্যারের দিকে চোখ তুলে তাকায় নি।

স‍্যার হাসিমুখে বলল……

—সিট ডাউন প্লিস।

কন্ঠটা শুনেই ইশরা ফট করে স‍্যারের দিকে তাকালো।ইশরা ফ‍্যালফ‍্যাল করে স‍্যারের দিকে তাকিয়েই রয়েছে।সবাই বসে পরেছে কিন্তু ইশরা স‍্যারের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে দাড়িয়েই রয়েছে।লিপি ইশরাকে এমন দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইশরার হাত ধরে টেনে বসালো।

লিপি ফিসফিস করে বলল…….

—তুমি না খুব সাধু মানুষ।তাহলে এমনে স‍্যারের দিকে তাকাইয়া রইছো কেন?

লিপির কথা ইশরার কানে গেল না।সে তো এখনো স‍্যারকে দেখতে ব‍্যস্ত।(আব কোন আয়া🙄)
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_10

কলেজ মাঠের এক কোনে পাকা বেঞ্চের উপর বসে বসে মনের সুখে পা ঝুলাচ্ছে ইশরা।ঝড়ের গতিতে লিপি ইশরার সামনে এসে বসে হাপাতে লাগলো।

ইশরা লিপির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল….

—ঐ ছেমরি কি হইছে তোর? হাপানী রুগীর মত এমন করতাছোস কেন?

লিপি ব‍্যাগ থেকে পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে বলল…

—ইরু তুই এটা কোন কাজ করলি?তুই কিন্তু কাজটা একটুও ভালো করোস নাই।

ইশরা সন্দেহর চোখে লিপি দিকে তাকিয়ে বলল…..

—কি করছি আমি?কিসের কথা কইতাছোস তুই?

লিপি রাগ দেখিয়ে বলল…..

—তুমি জানো না আমি কিসের কথা বলতাছি?

—ঢং না করে বলতো।কি হয়েছে?

লিপি গাল ফুলিয়ে বলল……

—তুই তখন কেন ক্লাশ থেকে এসে পরলি?জানিস তুই ক্লাশ থেকে বের হবার পর স‍্যার অনেক রেগে গিয়েছিলো।আমি স‍্যারের চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছি।

(ঠিক ধরেছেন আপনারা ইশরার নতুন টিচার আর কেউ নয় বরং জিদান।জিদানকে দেখার পর ইশরা এক ঘোরের মধ‍্যে চলে গিয়েছিল।লিপির ধাক্কায় ঘোর কাটতেই ইশরা দেড়ি না করে ক্লাশ থেকে চুপচাপ বের হয়ে গেছে।ইশরা নিজের চোখের জল কাউকে দেখাতে চায় নি।তাইতো সে নিজের চোখের জল লুকাতে ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে সোজা ওয়াসরুমে গিয়ে চোখে,মুখে পানি দিয়ে নিজেকে সাভাবিক করতে মাঠে বসে শরীরে হাওয়া লাগাচ্ছে।)

লিপির কথা সুনে ইশরা স্বাভাবিক ভাবেই বলল….

—তো……

ইশরার এই খাপ ছাড়া কথায় লিপি রেগে বলল…..

—তো মানে কি হ‍্যা তো মানে কি?তুই কি ভয় পাচ্ছিস না?একটুও কি তোর ভয় করছে না?যদি স‍্যার তোর নামে কমপ্লেইন করে।তোকে যদি কলেজ থেকে বের করে দেয়?

—তো……

—আবার তো। আমার ভয়ে হাত পা কাপছে আর তুই তো তো করছিস।

ইশরা লিপির মাথায় গাট্টা মেরে বলল….

—এই টিকটিকির আত্না নিয়ে চলিস কিভাবে তুই?গাধী এইটুকু কারনে কেউ কলেজ থেকে বের করে দেয় না।

লিপি মাথা ঢলতে ঢলতে বলল…..

—তা না হয় দেয় না।কিন্তু তুই কেন ক্লাশ থেকে বের হলি?স‍্যার তো তোকে খারাপ ভাবলো বল।আর বড় কথা তখন স‍্যারের দিকে ওমন ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে ছিলি কেন?খুব তো আমাকে কথা সুনিয়েছিলি?এখন কি হল হ‍্যা।কিরে স‍্যারকে দেকে কুছকুছ হুয়া?(হালকা ধাক্কা দিয়ে)

—তেমন কিছুই না।

—তাহলে কেমন কিছু।বল…বল…..

—ম‍্যাম….আপনাকে ইশান স‍্যার ডাকছে।

ইশরা কিছু বলার আগেই একজন পিয়ন এসে কথাটা বলল।

ইশরাঃআমাকে ডাকছে?

পিয়নঃজ্বি ম‍্যাম।আপনাকেই ডাকছে এবং এখনি যেতে বলেছে।

ইশরাঃঠিক আছে।আপনি যান আমি আসছি।

ইশরা মনে মনে বলল……

—আজ প্রথম বার এই ইশান স‍্যার আমাকে ঠিক টাইমে ডেকেছে।তা না হলে এই মহিলার প্রশ্নের উওর দিতে দিতে আমি বুড়ি হয়ে যেতাম।

💦💦💦💦💦💦

ইশরা, ইশান স‍্যারের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।ইশান স‍্যার এর বাবা কলেজের চেয়ারম্যান।সেই সুবিধার্থে স‍্যার নিজের জন‍্য আলাদা এক রুম বরাদ্দ করে রেখেছেন।তার আবার জন্ম থেকেই এক খারাপ স্বভাব আছে,সবার সাথে তেমন মিসতে পারে না।যাদের সাথে মিসবে তাদের সাথে একেবারে ফ্রি।ছোট,বড় তখন আর দেখবে না।আর যাদের সাথে মিসতে না পারবে তারা বোম মেরেও তার পেট থেকে কথা বের করতে পারে না।

ইশরা দরজায় নক করে বলল…..

—মে আই কাম ইন স‍্যার।

ইশান স‍্যারঃকাম ইন।

ইশরা ভিতরে ঢুকতেই ইশান স‍্যার বলল…….

—তো মিসেস খান কি খবর আপনার?

ইশরা, ইশান স‍্যার এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ইশান স‍্যার বলল…..

—আরে মিসেস খান দাড়িয়ে আছেন কেন?বসুন প্লিজ।তা কি অর্ডার দিব?কি খাবেন বলুন।

ইশরা দাতে দাত চেপে বলল……

—আপাতত তোর মন্ডু।

ইশানঃদেখুন মিসেস খান এটা কলেজ আর আমি আপনার স‍্যার।তাই তুই,তোকারি বন্ধ করুন।আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।

ইশরাঃতোর স‍ম্মানের খেতায় আগুন।তোরে তো এখন আমার কাচা চাবাইয়া খাইতে মন চাইতাছে।

ইশানঃআজ আমার মিষ্টি বোনটা এমন রাগলো কেন?কি হয়েছে তার?

(থামুন থামুন। গাড়ি ফুল স্পিডে চালিয়ে ইশানকে নিয়ে বেশি কিছু ভাবতে হবে না।ইশান হল ইশিতা বেগম এর একমাত্র ছেলে ইশান মাহমুদ।ইশান এর সাথে ইশরা,ইশফার ভাইবোনের সম্পর্কের সাথে টম এন্ড জেরির সম্পর্ক)

ইশরা রেগে বলল…..

—একদম আমার সাথে মিষ্টি সুরে কথা বলতে আসবি না।আর তখন থিকা কি মিসেস খান মিসেস খান শুরু করছোস।আমার কি বিয়া হইয়া গেছে তুই মিসেস লাগাইতাছোস।(রেগে)

—তোর দেখি এতো দিনেও কোন পরিবর্তন হয়নি।সেই আগের বেয়াদব বেয়াদবী আছিস।স‍্যার দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা এখনো শিখিস নি?

কথাগুলো বলতে বলতে জিদান ইশরার সামনে এসে দাড়াল।ইশরা চোখ রাঙিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশান ভ্রু কুচকে বলল…….

—এমনে তাকিয়ে আছিস কেন?আমি কি কিছু বলেছি নাকি?যে বলেছে তাকে কিছু না বলে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস।

ইশরা দাতে দাত চেপে বলল…….

—তুই কি জন‍্য আমারে এখানে ডাকছোস তাড়াতাড়ি বল।আমার ক্লাশ আছে।

জিদানঃতুই তো দেখি আগের থেকেও বেশি বেয়াদব হয়ে গেছিস।এতোগুলো কথা বলার পরেও আবার তুই তোকারি করছিস।শিক্ষকে সম্মান দিয়ে কথা বল।আর কি বললি,তোর ক্লাশ আছে।তুই যে কি ক্লাশ করবি তা আমাদের ভালো করেই জানা আছে।

ইশরাঃসরি স‍্যার।আমি আপনার কথা রাখতে পারলাম না।আমি আমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছি।তাকে আমি তুই বলি তুমি বলি অথবা আপনি বলি।যা খুশি তাই বলতে পারি।সেখানে আপনার নাক না গলালেও হবে। আমি আবার আমার কাছের মানুষদের তুই,তোকারি করতেই পছন্দ করি।সেটা তারা ভালো করেই জানে। আর তাছাড়া আমি এখন ক্লাশে নেই।ক্লাশে থাকলে আমি ওকে ঠিকই সম্মান দিয়ে কথা বলতাম।আপনাকে সেটা কষ্ট করে বলতে হবে না।

জিদানঃইশান তোর কাছের মানুষ তাহলে আমি কি?

ইশরাঃআপনি আমার নতুন টিচার।আমার স‍্যার।

জিদান এতোক্ষন ধরে ইশরার দিকেই তাকিয়ে ছিল।ইশরার চোখ পুরো লাল হয়ে গেছে।ইশরার কথাগুলো কেমন যেন কাপাকাপা শোনা যাচ্ছে।ইশরা যে নিজের কান্না আটকিয়ে এভাবে কথা বলছে তা জিদান ভালোই বুঝতে পারল।

জিদান ইশরার কাধে হাত রেখে বলল……

—আমার ইশু এতো অভিমানী কবের থেকে হল?সে তার জিদ ভাইয়ার সাথেও ফরমালিটি পূরণ করে কথা বলছে?

ইশরা ঝাড়া দিয়ে জিদানের হাত সরিয়ে দিয়ে রাগি গলায় বলল….

—শিক্ষক শিক্ষকের মত থাকবেন।গায়ে হাত দিতে আসবেন না।দ্বিতীয় বার গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করলে আমি ভুলে যাব আপনি আমার শিক্ষক।

কথাগুলো বলে ইশরা ডানে বামে না তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

জিদান আর ইশান অবাক চোখে ইশরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

জিদান মনে মনে বলল…….

—তোর সব অভিমান আমি ভাঙবো। তাতে যতই আমার কাঠ-খড় পোড়াতে হোক না কেন।

(জিদান পারবে তো ইশরার মান-অভিমান ভাঙাতে)

#চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here