মনের_পিঞ্জরে পর্ব ১১,১২,১৩,১৪

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_11

কারো সাথে “সম্পর্ক” টিকিয়ে রাখার জন‍্য উভয় পক্ষের লোককে সেই সম্পর্কের মূল‍্য দিতে হয় সম্মান করতে হয়।যদি একজন হ‍্যারফ‍্যার করে তাহলে সেই সম্পর্ক টেনেটুনে কিছুদুর এগিয়ে যাওয়ার পর মাঝ পথে তার সুতো ছিড়ে যায়।

আর এই সম্পর্কটা যদি সৃষ্টি হয় বিবাহের মধ‍্যমে,তাহলে তো কোন কথাই নেই।স্বামী,স্ত্রী দুজনকেই দুজনের পরিপূরক হতে হবে।একে অপরকে সম্মান করতে হবে।নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করার জন‍্য একে অপরের কাছে খোলাসা করে সব কিছু সেয়ার করতে হবে।একে অপরের ঢাল হয়ে সব সময় পাশে থাকতে হবে।সেখানে যেন অবহেনা নামক কোন কিছুর কোন অসিস্ত না থাকে।

জানালার শিক ধরে উদাস মনে পাশের খালি মাঠের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হাফসা বেগম।তাদের বাড়ির সামনেই এই বিশাল মাঠ।যেখানে আগে প্রতিদিন বিকেলে বাচ্চারা খেলাধুলা করতো।কিন্তু কয়েক বছর ধরে তার স্বামী আওলাদ খান সেটা দখলে নেবার পর থেকে কেউ সেখানে খেলা তো দুর মাঠের মাঝপথ দিয়েও কেউ হেটে যেতে পারে না।সবাইকে মাঠের পাশ দিয়ে যে রাস্তা আছে সেখান দিয়ে যেতে হয়।

হাফসা বেগম মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে তাসিল‍্য হেসে বিরবির করে বলল……

—পরের হক মেরে খাবি খা এবার বেশি করে।এখন শস‍্যর জায়গায় ঘাস খা।তাতে যদি তোর মাথায় কোন সুবুদ্ধি আসে।

হাফসা বেগম এই কথাগুলো আর কাউকে না বরং নিজের স্বামী আওলাদ এর উদ্দেশ্যেই বলেছে।আওলাদ খান জোর করে মাঠ নিজের দখলে নেবার পর প্রতিবছর নানা রকম শস‍্য মাঠে বপন করে।এবং তা দ্বারা লাভবান হন।এবারো তার বিপরীত করেননি।প্রতিবার মাঠের কিছু যায়গা খালি রেখে শস‍্য চাষ করলেও এবার পুরো মাঠে নানান ধরনের শস‍্য বোপন করেছেন।কথায় আছে না জুলুম কারীর জুমুল আল্লাহ্ সহ‍্য করেন না।ঠিক তেমনি হয়েছে আওলাদ খানের উপর।সে মাঠের কাজে যাদের দিয়ে দিন-মজুর খাটিয়েছে।তারা তাদের পারিশ্রম নিতে আসলে তাদের কিছু টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।তারাও আওলাদ খানের মুখের উপর দিয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি।তাই তারা না চাওয়া সর্তেও মুখ বুজে সব সহ‍্য করেছে।
কেননা তারা জানে আওলাদ খানকে কিছু বলা আর নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা একি কথা।

কিছুদিন পর শস‍্য কিছুটা বড় হলে শস‍্য পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে কিটনাশক ঔষধ স্পে জাতীয় মেশিন এর মাধ‍্যমে শস‍্যর মধ‍্যে দেওয়া হয়।(ফসলের ক্ষেতে যেই স্পে মেশিনটা দিয়ে ঔষধ দেয় আমি তার নাম জানি না।কারো মেশিনটার নাম জানা থাকলে আমাকে নামটা জানালে খুশি হব।)কিন্তু সেখানে ভুলে আওলাদ খানই কিটনাশক ঔষধ এর জায়গায় এন্ডিল দিয়ে দেন।শস‍্যর মধ‍্যে দেবার জন‍্য।আর বাকিটা ইতিহাস।

হাফসা বেগম মনে মনে ভাবে,মানুষটাকে আমি আজও কেন চিনতে পারলাম না।এতো টাকা থাকতেও কেনই বা মানুষটা এমন টাকার পিছনে ছুটে।আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল সিদ্ধান্ত কি এটাই ছিল মানুষটার সাথে মানিয়ে নিয়ে জীবনের শেষ নিশ্বাস ত‍্যাগ করার সিধান্ত নেয়া?

হাফসা বেগম আর আওলাদ খান এর বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।প্রথমদিকে আওলাদ খান আর হাফসা বেগম এর সম্পর্ক মোটামুটি ভালোই চলছিলো।জিদান হওয়ার পর তাদের সম্পর্কে যতটুকু ফাটল ছিলো তাও ঘুচে গিয়েছিল।কিন্তু কয়েক বছর পর থেকে আগে যতটুকু তাদের সম্পর্কে ফাটল ছিলো তার থেকেও দ্বিগুন সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হল।কিছু হলেই আওলাদ খান হাফসা বেগমের সাথে বকা,ঝকা করে।কয়েকবার তো গায়েও হাত তুলেছে।কিন্তু পরবর্তীতে আর তার শশুর এর জন‍্য গায়ে হাত তুলতে পারে নি।

হাফসা বেগম সবকিছু জিদান এর মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ বুজে সহ‍্য করে গেছেন।তখন কার বাঙালি মেয়েদের তো এক কথাই ছিল,যাই হয়ে যাক না কেন স্বামীর সংসার করেই যাব।লাল শাড়ি পড়ে স্বামীর ঘড়ে ঢুকেছি সাদা শাড়িতে স্বামীর ঘড় থেকে বের হব।আর সেটা হবে কাফনের কাপড়।সব কিছু মুখ বুজে সহ‍্য করে মানিয়ে নিতে নিতেই হাফসা বেগম আজ এই পযর্ন্ত এসেছে।

আমাদের এই আধুনিক যুগেও কিছু মেয়ে আছে যারা হাফসা বেগম এর মত এক কথাই বলে, যাই হয়ে যাক না কেন,গলে,মরে,পচে স্বামীর ঘড়েই কাটাবো।তারা হয়তো পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কিংবা পরিবারের জন‍্য এই সিদ্ধান্ত নেয়। অথবা লোকের কথা থেকে বাচতে।কেননা কোন মেয়ে স্বামীর ঘড় থেকে চলে আসলেই সবাই আগে মেয়েদের দিকে আঙুল তুলে বলে,মেয়েটাই ভালো না।স্বামীর সংসার করতে পারলো না।এমনকি যা না হয় তাও তেল মসলা মিলিয়ে বলতে শুরু করে।মেয়েটার কারো সাথে সম্পর্ক আছে,এটা সেটা ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি।

এসব কথা এই অধুনিক যুগে শহরে শোনা না গেলেও আমাদের গ্রাম অঞ্চলগুলোতে কিন্তু ঠিকই শোনা যায়।যুগ আধুনিক হয়েছে কিন্তু আমাদের এই আধুনিক যুগের কিছু মানুষ তাদের চিন্তা-ধারা সেই আগের মতই রেখেছেন।তারা মানুষকে সান্ত্বনা দেবার মাঝেও তাদের কষ্টকে আরো জাগিয়ে তুলে।

আমাদের সবাইকে আমাদের চিন্তা-ধারা বদলাতে হবে।কারো সম্পর্কে কিছু মতব‍্য করার আগে আগে আমাদের সঠিক খবর জানতে হবে।তা না করে কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়।

(যাই হোক অনেক কথা বললাম।কথার মধ‍্যে যদি ভুলক্রটি থেকে থাকে তাহলে ছোট বোন হিসেবে ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন।)

—আম্মা ভাইজান ফোন করছে।

কাজের মেয়ে মিতুর ডাক সুনে ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসলেন হাফসা বেগম।

মিতুর থেকে ফোন নিয়ে হ‍্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসলো……

—কেমন আছো মা?

— আলহামদুলিল্লাহ্।তুই কেমন আছিস বাবা?

— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।তোমার শরীর সুস্থ আছে তো?ঠিকমত ঔষধ খাচ্ছ তো?

হাফসা বেগম মুচকি হেসে বলল…..

—হ‍্যা বাবা খাচ্ছি।তুই ঠিক আছিস তো।

মনে মনে বলল…….

—ঔষুধ কিনে দিবে তাও আবার তোর বাবা?তার টাকা শেষ হয়ে যাবে না।তার কাছে তো ডাঃ রোগ ছাড়াই এমনিতেই বেশি বেশি ঔষধ লিখে দেয়।

হাফসা বেগম জিদানের সাথে কিছুক্ষন কথা বলার পর ফোন রেখে দিল।ছেলের সাথে কথা বলেই তার মনে যে এতোক্ষন উদাস ভাব ছিলো তা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেলো।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথায় বেনী করছে।ইশরা পিছনে দাড়িয়ে চোখ রাঙিয়ে ইশফার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফা আয়নায় ইশরার চেহারা দেখেই বুঝে গেছে সে যে রেগে আছে।আর ইশরা কেন রেগে আছে তা ইশফার অজানা নয়।

ইশরা কোমরে এক হাত দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল……

—তুই সব জানতি তাই না?

ইশফা আপন মনে বেনী করতে করতে বলল……

—কি আমি সব জানতাম?কিসের কথা বলছিস তুই?

ইশরা রেগে ইশফার হাত থেকে বেনী ছাড়িয়ে নিয়ে পুরো বেনী খুলে দিয়ে রাগি গলায় বলল….

—ঢং করো ঢং।সব জেনেও না জানার ভান করে আইন্না ভাত খাও।

ইশফা, ইশরার চুল টেনে বলল……

—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই তুই আমার বেনী খুললি কেন?

ইশরা ইশফার হাত থেকে চুল ছাড়িয়ে বলল…..

—করেছি বেশ করেছি।তুই সব জানার পরেও কেন আমারে জানাস নাই।

—থাবরা চিনোস শয়তান ছেমড়ি।কি হইছে না কইয়াই এক গান শুরু করছোস?কি জানাই নাই তোরে?

—তুই আমাকে জি…..

কথাটা বলতে গিয়ে ইশরা থেমে গেল।

ইশফা ভ্রু কুচকে বলল…….

—আমি তোকে জি…..কি?

ইশরা মাথা নিচু করে বলল…….

—তুই জানিস আমি নামটা নিতে চাচ্ছি না।এই নামটা ৪বছর আগেই আমার জীবন থেকে মুছে গেছে।তুই সব জেনেও নতুন করে কেন এসবের মধ‍্যে আমাকে জরাচ্ছিস ইফু?আমি তাই বুঝতে পরছি না।

ইশফা,ইশরার কাধে হাত রেখে নরম সুরে বলল….

—তুই সবাইকে বোকা বানাতে পারলেও আমাকে পারবিনা ইরু।ভুলে যাস না তোর থেকে আমি বেশি তোকে বুঝি।তোর বলা,না বলা সব কথাই আমার অজানা নয়।যা হয়েছে তাতে তো ভাইয়ার কোন দোষ ছিল না।তাহলে কেন তুই ভাইয়াকে দোষারোপ করছিস?ভাইয়া কেন অপরের ভুলের জন‍্য কষ্ট পাবে?

ইশরা ছলছল চোখে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল…..

—আমি এসব কথা শুনতে চাই না ইফু।যার জন‍্য আমি,আমার বাবা,মাকে এতো কথা সুনতে হয়েছে তাকে তো আমি কখনো………

এতোটুকু বলে ইশরা থেমে গেল।চোখের জল গড়িয়ে পরার আগেই ওরনা দিয়ে চোখ মুছে বলল…..

—এ নিয়ে আর কোন কথা সুনতে চাই না।

কথাটা বলে দেড়ি না করেই ওয়াসরুমে চলে গেলো।

ইশফা হতাস হয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।সে ঢের বুঝতে পেরেছে তার পাগলী বোনটা বড্ড অভিমান করেছে।যার অভিমান ভাঙাতে গেলে তার ভাইয়ের রফা-দফা হয়ে যাবে।

(ইশরা_জিদান এর সাথে অভিমান করার কারণ আস্তে আস্তে জানানো হবে)

💦💦💦💦💦💦

ইশফা ক্লাশরুমে বসে নোট লিখছে।রিধি,তুশি এখনও ভার্সিটিতে আসেনি।ইশফা আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে।ক্লাশ শুরুর এখনো অনেক সময় বাকি।তাই একা একা অযথা বসে সময় নষ্ট না করে ইশফা সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে।

—এই যে পিচ্ছি কেমন আছো?

কথাটা সুনে ইশফা ফট করে মাথা উঠিয়ে তাকাতেই দেখে নিরব হাসি মুখে সামনে দাড়িয়ে আছে।

ইশফা লিখায় এতোই ব‍্যস্ত ছিলো যে,আশেপাশে কি হচ্ছিলো কোন খবর ছিলো না।

ইশফা দাড়িয়ে বলল…..

— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।আপনি?

কথা বলার সাথে সাথে ইশফা পুরো ক্লাশরুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিল।ক্লাশে হাতে গনা কয়েকজন আছে।আর সবাই ইশফার দিকে ড‍্যাবড‍্যাব করে তাকিয়ে আছে।

ইশফা ছোট ছোট চোখ করে নিরবের দিকে তাকিয়ে বলল……

—কিছু বলবেন ভাইয়া?

নিরব মাথা চুলকিয়ে মুচকি হেসে বলল……

—তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।

—জ্বি বলুন।

—এখানে না।যদি একটু ক্লাশ থেকে বের হতে।

ইশফা কিছুক্ষন দ্বিধা-দ্বন্দ করে খাতা কলম ব‍্যাগ এর মধ‍্যে রেখে বলল….

—চলুন।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা নিরবের পিছু পিছু অডিটোরিয়াম রুমে গেল।নিরবের জায়গায় অন‍্য কেউ হলে ইশফা কখনো তার সাথে যেত না।এই কয়দিনে ইশফা নিরবকে ভালোমত চিনতে না পারলেও এতোটুকু চিনেছে যে,নিরব ছেলে হিসেবে খারাপ না।আর তাছাড়া ইশফা,রিধিকে ক্লাশে ঢুকতে দেখেই নিবরের সাথে যাবার জন‍্য রাজি হয়েছে।ইশফা একা হলে কখনোই রাজি হত না।

অডিটোরিয়ামে রুমে ঢুকেই ইশফার মাথা গরম হয়ে গেল।কেননা সান অডিটোরিয়াম রুমে ফুল এটিটিউড নিয়ে বসে ফোনে গুতাচ্ছে।ইশফা বুঝে না এই পোলায় এতো এটিটিউড কই পায়।যখনি দেখে খুল এটিটিউড নিয়ে থাকে।

নিরব সানকে ডাক দিতেই সান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল…..

—এসেছিস?

নিরব চোখ রাঙিয়ে সানের দিকে তাকালো।মনে মনে সানকে গালি দিয়ে বিরবির করে বলল….

—শালা ভাবটা নিতাছে কি?মনে হয় এখানে কি হইতাছে সে জানেই না।তুই যে শালা ভাবীর দিকেই ফোনের বাহানা দিয়া বাকা চোখে তাকাইতাছিলি তা আমার জানা আছে।

সান ফোন পকেটে রেখে নিরবের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল……

—কিছু বললি তুই?

নিরব হাসার চেষ্টা করে বলল…..

—না ভাইজান আপনারে কি কিছু বলতে পারি বলেন।

সান নিরবের দিকে চোখ রাগিয়ে তাকিয়ে পাশ থেকে একটা শর্পিং ব‍্যাগ হাতে নিয়ে ইশফার সামনে গিয়ে ব‍্যাগটা ইশফার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল……

—এটা তোমার?

ইশফা এক পলক শপিং ব‍্যাগের দিকে তাকিয়ে সাভাবিক ভাবে বলল……

—কিসের জন‍্য।

সানঃসেদিন তোমার গিফট টা আমি রেখেছি আজ তুমি আমার টা নেবে।তাহলেই হিসাব বরাবর।

সানের কথা শেষ হতেই ইশফা কিছু বলার আগেই রিধি ফোড়ন কেটে দাত কেলিয়ে হেসে বলল…..

—সেদিন তো ইফু আপনাকে ছোট বোন হিসেবে গিফট দিয়েছিলো।তা আজ আপনি কি হিসেবে ওকে গিফট দিচ্ছেন?বড় ভাই হিসেবে ভাইয়া?

(আহারে রিধি তো বড় ভাই বলে বেচারা সানের মনটাই চুরমার করে দিল।)
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_12

সোফায় বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে সিনথিয়া।সান পাশে বসে রাগি চোখে সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সেদিকে সিনথিয়ার কোন খেয়াল নেই।কেননা সে তো তার মত হাসতে ব‍্যস্ত।

সান রাগি গলায় বলল……

—ডাইনী বের হ আমার রুম থেকে।

সিনথিয়া কোন মত হাসি থামিয়ে বলল…….

—ভাই শেষ পযর্ন্ত তোকে বড় ভাই বানিয়ে দিল।আহারে বেচারা আমার ভাই এর মুখটা তখন কেমন ছিলো তা দেখার মনে বড্ড ইচ্ছে জাগছে আমার।

কথাগুলো বলে সিনথিয়া আবার হাসতে লাগলো।

সান সিনথিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে রাগি গলায় বলল……

—তুই আমার রুম থেকে বের হবি নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তোকে বের করবো।

সিনথিয়া হাসি থামিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল……

—আরে আরে এতো রাগ করছো কেন আমার উপর?এতোদিন তো এমন কিছু বলোনি।এখন নতুন আরেক বোন পেয়ে আমাকে অবহেলা করছো।(কথাটা বলে মিটমিট করে হাসতে লাগলো)

সান সিনথিয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল……

—আমি বুঝিনা তোদের আমার সাথে কিসের এতো শক্রতা?আমার হবু বউরে আমার বোন বানানোর জন‍্য উঠে পরে কেন লেগেছিস?

সিনথিয়া ভেংচি কেটে বলল……

—এহ আসছে হবু বউ বলতে।পারলো না এখনো ভাবীকে প্রপোজ করতে।আবার বড় বড় কথা।দেখিস তুই তোর মনের কথা বলার আগেই কেউ ভাবীরে তোর চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাবে।তখন তুই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারবি না।মিলিয়ে নিস আমার কথা।

সিনথিয়া কথাটা শেষ করতে না করতেই সান রেগে পাশের থেকে একটা ফুলদানি ফ্লোরে ছুড়ে মেরে চোখ,মুখ শক্ত করে বলল…….

—কেউ আমাদের মাঝে আসলে তাকে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।ও শুধু আমার।

কথাটা বলেই হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।যাওয়ার সময় নিজে রাগ দরজায় দেখিয়ে দরজায় এক লাঠি দিয়ে গেলো।

সান চলে যেতেই সিনথিয়া মিটমিট করে হেসে মনে মনে বলল…….

—তীর ঠিক নিশানায় লাগিয়েছি।এবার দেখা যাক কি হয়।

💦💦💦💦💦💦

মাঝরাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ইশফার।ইশফা বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই অপর পাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে ভেসে আসলো……

—কোথায় ছিলে তুমি।ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে কেন?

লোকটার কথা শুনে ইশফার রাগ হল।একে তো মাঝরাতে ফোন দিয়ে তার ঘুমের রফা-দফা করে দিয়েছে।তার উপরে তাকেই আবার কথা শুনাচ্ছে।ইশফা রাগটাকে সাইডে রেখে ভালো ভাবেই বলল……

—কে আপনি?কাকে ফোন দিয়েছেন?

—নাম্বারটা যখন তোমার তাহলে তো পাশের বাসার আন্টিকে ফোন দেইনি।অবশ‍্যই তোমাকে ফোন দিয়েছি।

ইশফা রাগি গলায় বলল……

—ফাজলামো পাইছেন।বাড়িতে মা,বোন নাই।এতো রাতে অন‍্যের ঘুম নষ্ট করে ইয়ারকী করতাছেন।

লোকটা মুচকি হেসে বলল…….

—মা,বোন তো বাড়িতেই আছে।তুমিই তো নেই।তাই তোমার কাছেই ফোন করলাম।আমার ঘুম হারাম করে আমার বাঘীনী শান্তিতে ঘুমাবে তা আমি কিভাবে হতে দেই বলো।

ইশফা কিছুক্ষন চুপ করে মাথায় কিছুটা জোর লাগালো।কিছু একটা মনে পরতেই সন্দেহের গলায় বলল….

—আপনি কি সে,যে আমাকে চিরকুট দিয়েছিলেন?

—বাহ মনে আছে দেখি আমার কথা।এখনো ভুলতে পারোনি আমাকে।

ইশফা দাতে দাত চেপে বলল…..

—মনে থাকবে না কেন?আমার হাত ধরার সাহস দেখিয়েছেন।এতো সহজে কি ভুলে যাব।আপনাকে শুধু একবার সামনে পাই।দেখবেন আপনার কি হাল করি।

—আমাকে পেয়ে যাবে।আমি তোমার আশেপাশেই আছি।তা নিয়ে মাথা ঘামিও না।এখন কাজের কথা শোন,ঐ সান,নিরব ওদের থেকে দূরে থাকবে।ওদের ধারের কাছেও যেন তোমাকে না দেখি।

—আপনার কথামত আমি চলবো নাকি?

—আমার কথা মত না চললে তাতে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে।

—ভীতুর মত দূর থেকে কথা বলছেন।আপনি যে কি করতে পারবেন তা আমার ভালো করেই জানা আছে।সাহস থাকলে পারলে সামনে এসে কথা বলুন। আর হ‍্যা দ্বিতীয় বার আমাকে ফোন করার সাহস দেখাতে আসবেন না।

কথাটা বলেই ইশফা কোন কেটে দিয়ে সাথে সাথে নাম্বার ব্লক করে দিল।ইশফা রাগে গজগজ করছে।ছেলেটাকে এখন সামনে পেলে যে ইশফা কি করতো তা সে নিজেও জানে না।

—বরফ আনবো মাথায় ধরার জন‍্য।

ইশরার কথা সুনে ইশফা টেবিল ল‍্যাম্প অন করল।ইশরা চোখ বন্ধ করে ইশফার দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।ইশফা,ইশরার বাহুতে একটা থাপ্পর মেরে বলল…..

—ইয়ারকী করছিস আমার সাথে।

ইশরা হাত ডলতে ডলতে বলল……

—তোর আশিকের রাগ আমার উপর উঠাস কেন?

ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল……

—ইরু……

—আরে চেতোস কেন?আমি কি কিছু ভুল বললাম নাকি।তা যাই হোক পোলার কিন্তু বহুত সাহস আছে।তোরে মাঝরাতে ফোন দিয়া ওয়ার্নিং দেয়।ভাবা যায় এসব।

—তুই থামবি?

—আরে শোন না আমার কথা।আমার না পোলাডার লিগা আসসোস হইতাছে।নিজেই নিজেরে বিপদের মুখে ফালাইতাছে।আল্লাহ তুমি পোলাডারে এই শাকচুন্নীর হাত থেকে রক্ষা করো।আমিন।(হাত উঠিয়ে)

ইশফা সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…..

—তুই আমার বোন?

—কেন সন্দেহ আছে তোর?

—আমার তো মনে হইতাছে হাসপাতালে পাল্টা-পাল্টি হইছে।তা না হলে এতো রাতে আমারে ফোন দিয়া একজন ডিস্টাব করছে।তুই তারে কিছু না কইয়া তার জন‍্য আসসোস করতাছোস।

—আরে বেচারা তো তোর মাসুম চেহারা দেইখা মনে হয় উস্টা খাইয়া তোর প্রেমে পইরা হাবুডুবু খাইতাছে।সে তো আর জানে না তুই কোন সুনামি।তাই একটু বেচারার জন‍্য আসসোস করতাছি।

ইশফা রেগে বালিশ দিয়ে ইশরাকে মারতে লাগলো।সাথে তো তার স্পেশাল বকা ফ্রি।

💦💦💦💦💦💦

জিদান স‍্যারের ক্লাশের আগেই ইশরা ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেছে শরীরে হাওয়া লাগাতে।কেননা সে জিদানের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না।আজ তিন দিন পর সে কলেজে এসেছে।এই তিনদিন তিন ছুতো দিয়ে কলেজ বন্ধ করেছে।একদিন মাথা ব‍্যাথা, একদিন পেট ব‍্যাথা আরেক দিন পা ব‍্যাথা।ইশরা যে জিদানের খপ্পর থেকে বাচতে এসব ছুতো দিয়েছে তা ইশফার অজানা নয়।ইশরা আজ কোন ছুতো খুজে না পাওয়ায় এক প্রকার ধরে বেধেই ইশফা, ইশরাকে কলেজে পাঠিয়েছে।

লিপি তো জিদান স‍্যারের জন‍্য পাগল তাই সে ইশরার সঙ্গ দিতে আসে নি।ইশরাও লিপিকে বেশি জোর করেনি।কেননা সে চায় না নিজের জন‍্য লিপির ক্লাশ মিস হোক।

—মেরি সামনে ওয়ালি খিরকি মে এক চান্দ কা টুকরা রেহেতাহে…….

আশেপাশে লোকজন না থাকায় ইশরা গানটা গুনগুন করে গাইতে গাইতে কেন্টিনের দিকে যাচ্ছে।ইশফার সাথে রাগ করে না খেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছে ।ইশরার মতে পেট শান্তি করে শরীরে হাওয়া লাগালে সেটা ভালো কাজে দিবে।

কেন্টিনে যাওয়ার পথেই জিদান ইশরার সামনে এসে দাড়ালো।ইশরা জিদানের পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই জিদান ইশরার হাত ধরে ফেলল।

ইশরা হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে হাত ছুটানোর জন‍্য জোড়াজুড়ি করতে করতে জিদানের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই তার হাত-পা মৃদু কাপতে লাগলো।কেননা জিদান চোখ-মুখ লাল করে রাগি চোখে ইশরার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ইশরা কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মিনমিনে গলায় বলল…….

—স‍্যার আ…আমার হাত ছা…ছাড়ুন।

জিদান শক্ত গলায় বলল…….

—এখনি তুই ক্লাশে যাবি।তা না হলে তোকে আমি কাধে করে ক্লাশে নিয়ে যাব।ফাজিল মেয়ে ক্লাশ না করে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুড়ছে।

ইশরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল……

—এটা কলেজ।আর আপনি আমার স‍্যা…….

আর কিছু বলার আগেই জিদান ধমক দিয়ে বলল…..

—তুই এখন সোজা কথায় ক্লাশে যাবি নাকি আমি আমার মত তোকে ক্লাশে নিব।

—আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না।

—আমি কি করতে পারি তা তোর অজানা নয়।
যদি ভুলে গিয়ে থাকিস তাহলে আমি মনে করিয়ে দিতে পারি।(রেগে)

ইশরা জিদানের কথা সুনে মনে মনে বলল…..

—এইটারে দিয়া বিশ্বাস নাই।হাতের কাছেই আছি কথা না সুনলে আমার গাল আর গাল থাকবো না।থাবরাইতে থাবরাইতে খাল বানাইয়া ফালাইবো।আগে এর হাত থেকে বাচি পরে দেখা যাবে কি করি।

—কিরে কথা বলছিস না কেন?আমি তো তোর সামনেই আছি।আমাকে নিয়ে ধ‍্যান করার দরকার নেই।

—আমি ক্লাশে যাচ্ছি।

—গুড।এবার সোজা ক্লাশে যাবি।

ইশরা মনে মনে বলল……

—তুই করাবি আমারে ক্লাশ।তোর কথা শোনার জন‍্যই তো বইসা রইছি।

ইশরা আশেপাশে তাকিয়ে বলল…..

—হাত না ছাড়লে ক্লাশে কিভাবে যাব।

জিদান ইশরার হাত ছাড়তেই ইশরা গটগট করে হেটে চলে গেল।তার একটাই প্রতিজ্ঞা সে ক্লাশ করবে না।তাই সে ক্লাশের দিকে না গিয়ে অন‍্য দিকে চলে গেল।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_13

জিদান এর সামনে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রয়েছ ইশরা।জিদান রাগি চোখে ইশরার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

—“কিরে কথা বলছিস না কেন?ক্লাশ না করে কোথায় গিয়েছিলি?”

জিদানের এমন গম্ভীর কথা সুনে ইশরা ঘামতে লাগলো।ইশরা ভাবতেও পারেনি জিদানের কথা না সুনে ত‍্যাড়ামি করে তখন ক্লাশ না করার করনে যে, জিদান ওকে এমন বাঘের মত ধরবে।

ইশরা তখন জিদানের কথা না সুনে ত‍্যাড়ামি করে জিদানের ক্লাশ করেনি।প্রথমত ইশরার জিদানের উপর ক্ষভ। দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাশ।যা তার ছোটবেলা থেকে শক্র।ইশরা ছোট থেকেই ইংলিশে প্রচুর কাচা।ইশরাকে ইংলিশ নিয়ে কেউ কিছু বললে, উল্টো সে তাকে কথা সুনিয়ে দেয়।তাও আবার বিশাল বিশাল ব‍্যাখ‍্যা দিয়ে।ইশরার মতে, যেহেতু আমরা বাংগালী।আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।এই বাংলা ভাষার জন‍্য মানুষ কত কি না করেছে।এমনি হাজার হাজার মানুষ ভাষার জন‍্য শহীদও হয়েছে।তাহলে আমরা কেন অন‍্যের ভাষার দিকে এতো জোড় দিব?আমি বাংগালী।আর আমি বাংলা ভাষা বলতে,পড়তে, লিখতে সব পাড়ি।আমার অন‍্যদের মত অন‍্যের ভাষা শিখার এতো আদিক্ষেতা নেই।

ইশরার এরকম আরো উল্টাপাল্টা কথা বলে যে ইশরাকে বুঝাতে আসে তার তেরোটা বাজিয়ে দেয়।

ইশরা সব ক্লাশ শেষ করে জিদানের চোখ ফাকি দিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে যায়।কলেজ গেডের সামনে গিয়ে নিজেকে নিজে বাহ্ বাহ্ দিতে থাকে।
মুখে চলে আসে বিশ্ব যুদ্ধে জয়ী হওয়ার হাসি।

কিন্তু তার এই হাসিটা বেশিক্ষন মুখে টিকলো না।একজন পিয়ন হাপাতে হাপাতে ইশরার সামনে এসে বলল…….

—“ম‍্যাম আপনাকে ইশান স‍্যার ডাকছে?”

ইশরা পিয়নের কথা সুনে সাথে সাথেই বলল……

—“স‍্যার কে গিয়ে বলুন আমি বাসায় যাচ্ছি।এখন দেখা করতে পারবো না।”

পিয়নঃম‍্যাম স‍্যার আপনাকে এখনি দেখা করতে বলেছে।বলেছে খুব দরকার।আপনাকে এখন সাথে করে না নিয়ে গেলে ইশান স‍্যার আমাকে বকবে।

ইশরা কিছু একটা ভেবে বলল……

—“আচ্ছা আপনি কি নতুন টিচার জিদান স‍্যারকে দেখেছেন?না মানে স‍্যার কি কলেজে আছে।আসলে স‍্যারের সাথে পড়ার বিষয়ে কিছু কথা ছিল।কলেজের ভিতরে যখন আবার যেতেই হবে তাহলে এক কাজে দু কাজ করা হয়ে যেত।তাই আর কি?(হাসাল চেষ্টা করে)”

পিয়নঃম‍্যাম জিদান স‍্যার তো অনেক আগেই কলেজ থেকে বের হয়ে গেছে।

ইশরা খুশি হয়ে বলল…….

—“সত‍্যি?”

পিয়ন ইশরার দিকে অবাক হয়ে তাকাতেই ইশরা কথা ঘুড়ানোর জন‍্য মন খারাপ করার ভান করে বলল…..

—“চলে যখন গেছে কি আর করার কাল কথা বলে নিব স‍্যারের সাথে।”

ইশরা পিয়নের কথা মত ইশান স‍্যার এর রুমে এসে বসে রয়েছে।ইশান স‍্যার রুমে নেই।পিয়ন ইশরাকে বসতে বলে চলে গেছে।

ইশরা পায়ের উপর পা তুলি গুনগুন করে গান গাইছে।অনেকক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পরেও ইশান এর আসার খবর নেই। ইশরা বিরক্ত হয়ে চলে যাওয়ার জন‍্য বসা থেকে উঠে দাড়াতেই সুনতে পেল…….

—“চালাক তো ভালোই হয়েছিস?কি ভেবেছিলি আমার সাথে চালাকি করবি আর আমি এমনি এমনি তোকে ছেড়ে দিব?”

জিদানের কন্ঠস্বর সুনে ইশরা ঠাই দাড়িয়ে রইলো।ইশরার ইচ্ছে করছে এখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে।কিন্তু তার পা সায় দিচ্ছে না।ইশরার পা মনে হচ্ছে কেউ আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে।

জিদান ইশরার সামনে এসে ইশরার মুখোমুখি হয়ে টেবিলের উপর বসে নিজের প্রশ্নের উওর চাইতে লাগলো।

বতর্মানেঃ

ইশরার আকাশ-কুসুম ভাবার মাঝেই জিদান টেবিলের উপর হাত দিয়ে বারি দিয়ে হালকা চেচিয়ে বলল……

—“বোবা হয়ে গেলি কেন?কথার উওর দে?”

জিদানের রাগ দেখে ইশরা হালকা কেপে উঠল।
ইশরা কাপাকাপা পায়ে রুম থেকে বের হবার জন‍্য সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন‍্য এক কদম বাড়িয়ে দ্বিতীয় কদম বাড়ানোর আগেই জিদান হুমকি দিয়ে বলল…….

—“আর এক পা বাড়াবি তো তোর পা আমি ভেঙে দিব।”

জিদানের হুমকি সুনে ইশরা কিছুটা সাহস জুগিয়ে জিদানের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল…….

—“কেন এমন করছেন?”

জিদান ইশরার দিকে কাপালে ভাজ ফেরে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল…….

—“কেন এমন করছি তুই বুঝতে পারছিস না?”

ইশরা তাসিল‍্য হেসে বলল……

—“তাই তো বুঝতে পারছি না।আমার মত ছলনাময়ী,খারাপ,চরি……..

আর কিছু বলার আগেই জিদান ইশরার মুখ চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলর……

—“নিজের সম্পর্কে আর একটা খারাপ কথা বলার চেষ্টা করবি তাহলে তোর মুখ আমি আর মুখ রাখবো না।”

ইশান এতোক্ষন দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিল।জিদানকে ইশরার মুখ চেপে ধরতে দেখে তাড়াতাড়ি এসে ইশরাকে জিদানের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলল……

—“পাগল হয়ে গেছিস তুই জিদান?কি করছিস?জানিস না ও কেমন?পাগলের সাথে পাগলামী করলে চলে?”

জিদান দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে কন্টল করার চেষ্টা করছে।ইশানের কথার উওর না দিয়ে জিদান বলল…….

—“ইশান ওকে এখান থেকে চলে যেতে বল।আর বলে দে কাল থেকে ক্লাশ বন্ধ করার কথা স্বপ্নেও যেন না ভাবে।”

ইশান কিছু বলার আগেই ইশরা ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল।ইশরা চলে যেতেই ইশান জিদানের উপর রাগ দেখিয়ে বলল…..

—“কি করছিলি তুই?মেয়েটা এভাবেই তোর উপর অভিমান করে আছে।কোথায় তাকে মানানোর চেষ্টা করবি তা না করে উল্টো রাগ দেখাচ্ছিস?”

—“যা করেছি বেশ করেছি।ওর সাহস হয় কি করে আমার সামনে দাড়িয়ে ও নিজের নামে বাজে কথা বলার সাহস দেখায়।”

ইশান, জিদানের কাধে হাত রেখে নরম গলায় বলল…….

—“সব সময় রাগ দেখিয়ে সব হয় না।প্রথমে ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতে হয়।”

—“আমি ওকে রগে রগে চিনি।সবার ভালো কথা মেনে নিলেও আমার ভালো কথা সুনে ও আরো আমার মাথায় চেপে বসে।ওর চিন্তা তুই করিস না।ওকে কিভাবে ঠিক করতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”

💦💦💦💦💦💦

ইশফার আজ বাড়িতে ফিরতে একটু না বেশিই দেড়ি হয়ে গেছে।ভার্সিটির ক্লাশ শেষে রিধি আর তুশির অনুরোধ রাখতে ইশফা ওদের সাথে শর্পিং এ গিয়েছিলো।তার জন‍্যই ফিরতে দেড়ি হয়েছে।

ইশফার বাড়ির গেডের সামনে রিকশা থামতেই ইশফা ভাড়া বের করতে লাগলো।রিকশা ওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে দিতে না দিতেই ইশফার ফোনটা বেজে উঠল।ইশফা ফোন রিসিভ করে বলল…….

—“হ‍্যা ভাইয়া বলো।

ফোনের অপর পাশের কথা সুনে ইশফা থমকে গেল।

অপর পাশের ব‍্যক্তি ইশফার কোন কথা সুনতে না পেয়ে হ‍্যালো, হ‍্যালো করতে লাগলো।ইশফা অপর পাশের ব‍্যক্তির গলার আওয়াজ সুনে কাপাকাপা গলায় বলল…..

—“ভাইয়া আই মিন পেশেন্ট এখন কোন হাসপাতালে আছে?”

(এর আবার কি হল?মরতে-তরতে গেছে নাকি🙄)
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_14

সোফার এক কোনে কাচুমাচু করে বসে রয়েছে ইশান।তার দিকেই রাগি চোখে তাকিয়ে রয়েছে ইশফা।ইশরা,ইশানের পাশে কুশন নিয়ে খেলছে আর মিটমিট করে হাসছে।ইশান,ইশরার হাত থেকে কুশন টেনে নিয়ে অসহায় সুরে আস্তে আস্তে বলল…….

—ইরু বোইন আমাকে বাচা।দেখছোস ডেভিল রানী আমার দিকে কেমনে তাকাইয়া রইছে।কুশন নিয়ে পরে খেলতে পারবি।দরকার পরলে তোরে আমি খেললা কিনে দিব।তার পরেও এই ডেভিল রানীর হাত থেকে বাচা আমাকে।

ইশরা ভেংচি কেটে বলল……

—আবদার দেখলে বাচি না হুহ।আমারে যখন মিথ‍্যা কইয়া নিয়া রাক্ষসের মুখের সামনে ফালাইছিলি তখন মনে ছিলো না আমার কাছেও সাহায্যর জন‍্য তোর হাত পাতা লাগতে পারে।তুই আমাকে রাক্ষসের মুখে পরতে সাহায্য করছোস তাই আমি এখন তোরে এই ডেভিল রানীর থেকে বাচাতে সাহায্য করবো না।

ইশান ইশরার দিকে কুশন ছুড়ে মেরে বলল……

—আজ থেকে তুই আমার বোইন না।

ইশরা মাছি তাড়ানোর মত করে বলল…..

—যা যা এমন ভাই আমার লাগে না।

ইশান আড় চোখে ইশফার ভাব-ভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে মিনমিনে গলায় এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল…..

—বোইন এভাবে তাকাইস না।তোর এই তাকানো দেখলে আমার ভয় লাগে।কখন যেন ভয়ে হার্ট এট‍্যার্ক করি।

ইশফা দাতে দাত চেপে বলল……

—তোর মত শয়তান এতো তাড়াতাড়ি দুনিয়া থিকা বিদায় হইবো না।বদের হাড্ডি,মিনমিনা শয়তান।ভাবটা এমন নেয় যেন ভাজা মাছটা উল্টাইয়া খাইতে জানে না।বাহির হো তুই আমাদের বাড়ি থেকে।

ইশানঃতোর বাড়ি হল কিভাবে এটা?এটা আমার মামার বাড়ি।এখানে আমি যখন খুশি আসতে পারবো।যত খুশি থাকতে পারবো।তোর কথা মত হবে নাকি।দুদিন পর তোর টিকেট দেখিস আমিই এই বাড়ি থেকে কাটবো।

ইশফা,ইশানের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল…..

—আমার টিকেট পরে কাটিস আগে এখন বের হ তুই।

ইশানঃআপন হয়ে পরের মত করছিস কেন?কি করেছি আমি যে,তুই এমন ব‍্যবহার করছিস?

ইশফা রাগি গলায় বলল……

—বাহ্ বাহ্ ভাবটা দেখো যেনো কিছুই জানে না।

(ইশান তো ভাব নিয়ে বসে আছে সে কিছুই জানে না।কি আর করার আমরাই ফ্লাসব‍্যাক থেকে জেনে আসি কি হয়েছে।ইশফার ইশানের উপর এমন রাগ করার কারণ কি?

ফ্লাশব‍্যাকঃ

ইশরাকে রাগ করে কলেজ থেকে বের হতে দেখে জিদান, ইশরাকে বাড়িতে পৌচ্ছে দেবার জন‍্য ইশানকে ইশরার সাথে পাঠায়।

ইশান, ইশরাকে নিয়ে ওদের বাড়িতে এসে কিছুক্ষন মিসেস খান এর সাথে গল্প করে তার থেকে বিদেয় নিয়ে বেড়িয়ে যায়।

ইশান নিচে নেমে ইশফাকে রিকসা থেকে নামতে দেখে ইশান একটু আড়ালে লুকিয়ে দুষ্টুমি করে নিজের নাম্বার থেকে কল করে ভয়েস পাল্টিয়ে বলেছে,এই নাম্বারের মালিক এক্সসিডেন্ট করেছে।তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ইশফা হাসপাতালে নাম জিগ্যেস করলে,ইশান হাসপাতালের নাম, ঠিকানা সব দিয়ে বলে,পেসেন্টের অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ।বাচার সম্ভবনা একেবারেই নেই।কথাটা শোনার সাথে সাথেই ইশফা ডুকরে কেদে উঠে।কান্না করতে করতে কিছু একটা বলে কিন্তু সেটা ইশানের কানে পৌচ্ছয় না।ইশফার কান্নার আওয়াজ পেয়ে ইশান উওেজিত হয়ে বলে…..

—আরে ইফু তুই এভাবে কান্না করছিস কেন?আমি ঠিক আছি।আমি তো তোর সাথে একটু মজা করছিলাম।

ইশানের কন্ঠস্বর ইশফার কান পযর্ন্ত পৌচ্ছালো না।ইশফা সে তো নিজের কান্নায় ব‍্যস্ত।

জিদান আর ইশানকে ইশফা ছোটবেলা থেকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখেছে।আপন ভাই না থাকায় ওদের থেকে একটু আদুরে ডাক, কেয়ার,সাষন পেলেই খুশির কোন সিমা থাকতো না।ইশফা আল্লাহ্ এর কাছে প্রতিনিয়োত শুকরিয়া আদায় করে ওকে এমন দুটো ভাই মিলিয়ে দেবার জন‍্য।

ইশফা যতই নিজেকে সব সময় শক্ত রাখার চেষ্টা করুক না কেন,আপন লোকদের কোন কিছু হয়েছে সুনলে তখন সে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না।মুহূর্তের মধ‍্যে তার সকল কঠিনতা চলে গিয়ে ভিতরের নরম মানুষটা বের হয়ে আসে।)

💦💦💦💦💦💦

আপন মনে ফোন বেজে যাচ্ছে জিদানের।জিদান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে ফোন রিসিভ করে বলল……

— আসসালামু আলাইকুম?কেমন আছেন বাবা?

ফোনের অপর পাশে আওলাদ খান হুংকার দিয়ে বলল……

—রাখো তোমার কেমন আছো?আগে বল কোথায় আছো?তোমার মায়ের কাছে সুনলাম তুমি নাকি অন‍্যের গোলামী খাটার জন‍্য শহরে গিয়েছো?

জিদান তাসিল‍্য হেসে বলল…..

—শহরে এসেছিতো ১৫দিনের উপরে হতে চলল।তা আজ সময় পেলেন নাকি আমাকে ফোন করার?

—তোমার প্রশ্নের উওর দেবার জন‍্য আমি ফোন করিনি।তুমি কাল সকালেই গ্রামে ফিরবে।এটা আমার শেষ কথা।

কথাটা বলেই আওলাদ খান ফোন কেটে দিল।জিদান রাগ করে ফোন বেডে ছুড়ে মেরে বেডের এক কোনে বসে দু হাতে মাথা চেপে ধরে রাখলো।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা,তুশি খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাশ করছে।পাশে রিধি বসে ছটফট করছে।স‍্যার কি ক্লাশ করছে কি বুঝাচ্ছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।

ক্লাশ শেষে স‍্যার চলে যেতেই রিধি হাফ ছেড়ে বলল……

—আমার পক্ষে কিছু পেটে না ঢুকিয়ে ক্লাশ করা আর সম্ভব না।এতোক্ষন ক্ষিধের জ্বালায় স‍্যারের কোন কথাই আমার কানে ঢুকে নি।

ইশফাঃসারাদিন শুধু রাক্ষসনীর মত খাই খাই করোস ক‍েন?দুদিন পর তো ফুলে ফুটবল হয়ে যাবি।

রিধিঃতাতে কি হয়েছে।আমার কোন টেনশন নাই।আমি আগেও গুলুমুলু ছিলাম আবার না হয় হয়ে যাব।আর তাছাড়া আমার জামাই এর আমার গুলুমুলু রুপটাই বেশি পছন্দ।

তুশি অবাক হয়ে বলল…..

—তোর জামাই মানে?তোর বিয়ে হয়েছে?

তুশির কথায় রিধির হুস ফিরলো।সে যে কথার ছলে কোন কথা থেকে কোন কথা বলে ফেলেছে এখন বুঝতে পারলো।রিধি আমতা আমতা করে কথা ঘুড়ানোর জন‍্য বলল……

—বি…বিয়ে হলে কি তোরা জানতি না।

ইশফা সন্দেহের চোখে রিধির দিকে তাকিয়ে বলল…..

—আমার তোর কথা, বার্তায় কেমন যেন সন্দেহ হয়?মনে হয় তুই কিছু লুকাচ্ছিস আমাদের থেকে।

রিধি ঘাড়বে গিয়ে বলল……

—ক…কি লু…লুকাবো তোদের থেকে?

ইশফাঃএটাই তুই পাবনা মেন্টেল হাসপাতালের পালাতন রুগী।

ইশফার কথা সুনে তুশি মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

রিধি ইশফার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল……

—আমাকে দেখে তোর মেন্টেল মনে হয়?

ইশফাঃকোন সন্দেহ আছে।

রিধি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল……

—দাড়া তুই আমিও আজ তোকে দেখাবো এই পাগল কি করতে পারে।

ইশফা রিধিকে তেড়ে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি করে ক্লাশরুম থেকে বের হতে গিয়ে বেঞ্চের সাথে লেগে পায়ে ব‍্যাথা পেল।

💦💦💦💦💦💦

ইশফা পা ধরে বসে রয়েছে। মুহুর্তের মধ‍্যে পা ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে।তুশি ইশফার পাশে পানির বোতল হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।পায়ে পানি দিয়ে ম‍্যাসেজ করে দেবার জন‍্য।কিন্তু ইশফা কিছুতেই কাউকে পা ধরতে দিবে না।

পায়ে ব‍্যাথা পারার পর ইশফা কাউকে পা ধরতে দেয়নি।নিজেই পা ধরে বসে রয়েছে।ক্লাশে স‍্যার আসার সময় হয়ে যাওয়ার কারনে রিধি,তুশি দুজন মিলে ইশফাকে পাশের খালি ক্লাশরুমে নিয়ে আসে।রিধি ইশফাকে ভালোভাবে বসিয়ে দিয়ে ওর দিকে এক পলক রাগি চোখে তাকিয়ে আসছি বলে ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে যায়।

তুশি পানির বোতল দিয়ে ইশফার মাথায় হালকা করে মেরে রাগি গলায় বলল……

—আর কতোক্ষন এমনে পা ধইরা মন্ত্র পরবি।এবার তো একটু পায়ে কিছু করতে দে।দেখ পা টা কেমনে ফুলে গেছে।

ইশফা কড়া গলায় বলল…..

— না আমি পা ধরতে দিব না।পা ধরলেই আরো বেশি ব‍্যাথা পাবো।

— তোর পা তুই এমনেই সাজাইয়া রাখ।বান্দর ছেড়ি তোরে আর কিছু বলুম না।কতোক্ষন ধইরা কইতাছি পানি দিয়া পা টা একটু আস্তে আস্তে ম‍্যাসেজ করে দেই।না তার এক কথা পায়ে ব‍্যাথা পাবে।

ইশফা এক হাতে পা ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে রয়েছে।হঠাৎ পায়ের কারো হাতের ছোয়া পেতেই ইশফা ব‍্যাথায় কুকরিয়ে উঠে চোখ মুখ আরো শক্ত করে নিজের হাত দিয়ে অপর ব‍্যক্তির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল……

—আমি না করেছি পায়ে হাত দিতে তোদের।আমার পা ছাড়া।

ইশফার কথা শেষ হতে না হতেই পায়ের ব‍্যাথা মনে হয় তার দ্বিগুণ বেড়ে গেল।ইশফার মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে কেউ ওর ব‍্যাথার জায়গা চেপে ধরেছে।ইশফা চোখখিচে পা সড়ানোর চেষ্টা করতেই একটা গম্ভীর কন্ঠে ভেসে এল……

—পা নাড়ানোর চেষ্টা করলে পায়ে আরো দ্বিগুন ব‍্যাথা দিব।

কথাটা কর্নপাত হবার সাথে সাথেই ইশফা চোখ খুলতেই দেখে তার পায়ের সামনে হাটু গেড়ে সান বসে আছে।সান এক হাত দিয়ে ইশফার পা ধরে আছে আর ইশফা নিজ সানের অপর হাত ধরে আছে।

ইশফা সানকে দেখে ঘারড়ে গিয়ে ফট করে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল…..

—আ…আপনি এখানে কি করছেন?

সান দাতে দাত চেপে বলল….

—তোমার পা ভাঙার ব‍্যবস্থা করছি স্টুপিট।

ইশফা পা সরানোর চেষ্টা করে বলল……

—আমি আমার পা কাউকে ধরতে দেই না।আপনি আমার পা ছাড়ুন।

সান হুমকি দিয়ে বলল…….

—এখন তো পায়ের পাতায় ব‍্যাথা পেয়েছো।বেশি তিড়িং বিড়িং করলে পুরো পায়ে ব‍্যাথা পাবার ব‍্যবস্থা করে দিব।

💦💦💦💦💦💦

জিদান ক্লাশে ঢুকে ইশরাকে চুপচাপ লাষ্টবেঞ্চ বসে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো।মনে মনে বলল…..

—ডোজটা তাহলে কাজেই দিয়েছে।

জিদান ক্লাশ করাচ্ছে আর আড়চোখে ইশরাকে দেখছে।ইশরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর মনের সুখে কলম মুখে দিয়ে বসে রয়েছে।জিদান,ইশরাকে কিছু না বলে নিজের মত ক্লাশ করে গেল।ক্লাশ শেষে জিদান ইশরার দিকে তাকিয়ে বলল……

—মিসেস ইশরা খান। আপনার কিছু নোটস আমাকে কাছে আছে। এসে নিয়ে যান।

কথাটা বলেই জিদান ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে গেলো।ইশরা চোখ বড় বড় করে জিদানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।পাশ থেকে লিপি ধাক্কা দিয়ে বলল…….

—তোর বিয়ে হয়ে গেছে আর তুই আমাদের কে জানাসনি।এই প্রতিদান দিলি বেষ্ট ফ্রেন্ড হবার।স‍্যার জানলো অথচ আমি জানতে পারলাম না।

লিপির ধাক্কা খেয়ে ইশরা লিপির দিকে কাদো কাদো ফেস করে তাকিয়ে সবার দিতে চোখ বুলিয়ে নিল। ক্লাশের সবাই ওর দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে রয়েছে।ইশরা মনে মনে জিদানকে ইচ্ছে মত বকছে আর বলছে…..

—আমি জানি তো তিনি ইচ্ছে করেই আমাকে হেনস্থা করার জন‍্য এমন করেছে।মিঃস‍্যার আমি এখান থেকে বেচে ফিরতে পারলে আপনাকেও বুঝিয়ে দিব কার সাথে পাঙ্গা নিতে এসেছেন।

#চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here