হিয়ার মাঝে পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫

#হিয়ার_মাঝে
৪৩.
#WriterঃMousumi_Akter

মধ্যরাতে রুমময় ছোট ছোট্ট ক্যান্ডেল জ্বলিয়ে লাভ আকৃতি করলো নিরব রঙ বেরঙের ক্যান্ডেল দিয়ে সাজিয়েছে দেখতে লাভ আকৃতি হয়েছে।এমন সময়ে রিক ভাইয়া মুনতাহা আপু সুপ্তি রিফাত ভাইয়ার আগমণ হলো।রুমে ঢুকেই আমাকে জড়িয়ে ধরে এনিভার্সারীর শুভেচ্ছা জানালো।আমি জাস্ট অবাক হয়ে গিয়েছি এত বড় সারপ্রাইজ ভাবতে ও পারিনি আমি।ছোট্ট টি টেবিল এনে কেক টা রেখে একটা ছোট্ট ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে দিলো নিরব।আমার হাত ধরে ছুরি দিয়ে কেক কাটলো নিরব।আমার গালে এক টুকরো কেক দিয়ে আমার খাওয়া অংশ নিজে খেয়ে নিলো।আমিও নিরব এর গালে এক টুকরো কেক খাইয়ে দিলাম।এরপরে রুমের সবাই কেক খাইয়ে দিলাম।সুপ্তি আর মুনতাহা আপু আমার আর নিরবের গালে কেক মাখিয়ে দিলো।

মুনতাহা আপুর কাছে নানা কানের দুল বানিয়ে পাঠিয়েছে।নানার হাতের জিনিস দেখলেই মনে হয় এটা মা দিয়েছে।আপুকে বললাম দুল টা পরিয়ে দাও।আপু আমায় দুল টা পরিয়ে দিলো।সুপ্তি আমাদের ফটো দিয়ে একটা সুন্দর ফটোফ্রেম এনেছে দেখেই তাক লেগে গেলো।রিক আর রিফাত ভাইয়া দুজনে দুইটা সুন্দর শাড়ি এনেছে।সাথে সবাই তাজা ফুল ও এনেছে।সবার এত সুন্দর উপহারে ভীষণ হ্যাপি আমি।সব থেকে হ্যাপি বিশেষ দিনে ওদের পাশে পেয়েছি আমি।রিফাত ভাইয়া আমাদের ছবি তুললেন।

হঠাত নিরব আমাকে বলছে মৃথিলা আপনাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।সব কথাতে বার বার আপনি আপনি করছে।ওর আপনি বলা শুনে ওরা সবাই হাসাহাসি করছে।আমি নিরব কে চিমটি কেটে বললাম কি সমস্যা কি এভাবে আপনি আপনি করছেন কেনো?ওরা হাসছে সবাই দেখছেন না।নিরব আমাকে বললো ওরা হাসছে কারণ তুমি আমাকে আপনি বলো তাই।তুমি আমাকে আপনি বললে আমিও বলবো।আমার কি শখ করে না একমাত্র বউ আদর করে তুমি করে বলুক।এই পাতলা ঠোঁটের তুমি ডাক আহা ভাবতেই শান্তি।আমি নিরব কে বললাম আচ্ছা এই ব্যাপার তাই না। ঠিক আছে তোমাকে তুমি বলবো তাও আর আপনি বলো না প্লিজ।নিরব বললো ইস শুধু যদি এরা না থাকতো এক্ষুনি হালকা রোমান্স হয়ে যেতো।তুমি প্রথমবার তুমি ডেকেছো সেই উপলক্ষে বোনাস চায় আমার।আমি আবার হাত ধরে চিমটি কেটে বললাম এখন থামো ওরা শুনবে।সুপ্তি চিল্লিয়ে বলে উঠলো এই মিথু ফিসফিস করে কি বলছিস রে।নিশ্চয় বলছিস এদের জন্য আজ রাতের রোমান্স মিস হয়ে গেলো।

“আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম,আচ্ছা সুপ্তি তোর কি মনে হয় আমি রোজ রাতে রোমান্স করি।”

“অবশ্যই তাতে কোনো সন্দেহ আছে নাকি।জিজু হলো জাতির ক্রাশ।এমন ক্রাশ বর পেয়ে ঘর থেকে বের ই হও না আমরা কি আর বুঝি না”

“রিফাত ভাইয়া বলে উঠলেন,না আপনার মতো বর রেখে উপোস থাকবে নাকি সব মানুষ। বিয়ের পরেও একটু কাছে যেতে দাও না।এই মিষ্টি বর সামলে রেখো বুঝলে সুপ্তি নইলে দেখবে কোন শাঁকচুন্নি ফাঁসিয়ে নিয়ে গেছে।”

“আগে নিক তারপর দেখে নিবো।আমাকে তো চিনে না। আমার বর ভাগিয়ে নেওয়া অতটা ইজি হবে না।”

রিফাত ভাইয়া রিক ভাইয়া মুনতাহা আপুকে বললো ভাবি আপনি কি বিয়েতে রাজি হবেন।নাকি আপনার জন্য আমি আজন্মকাল বউ ছাড়া ঘুমোবো।

মুনতাহা আপু ভ্রু কুচকে বললো আমি কি করলাম।

যা করার তো আপনি করছেন।আপনি বিয়েতে রাজি না হলে ভাইয়া চিরকুমার থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভাইয়া বিয়ে না করলে আমার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ঘর জামাই থাকতে হবে।

মুনতাহা আপু হেসে দিয়ে বললো রিফাত এই কারণেই রাজি হচ্ছি না।আমি চাইছি তুই ঘর জামাই থেকে যা।বেশ কিছুক্ষণ হাসি তামাশার পর সুপ্তি বললো,,

আচ্ছা মিথু জিজুকে কোনো গিফট দিবি না।

আমি নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি একটা কেক এনেছিলাম ওটার কি হবে।ভেবেছিলাম উনাকে সারপ্রাইজ দিবো বাট সারপ্রাইজ তো উনিই দিয়ে দিলেন।

নিরব আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,ছাদে চলো তোমার আনা কেক কাটা হবে।

ছাদের দরজা খুলেই আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।পুরা ছাদ ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো।কয়েক শত বেলুন এর সমারোহ।আমি জাস্ট স্পিস লেস।ছাদের মাঝে লাভ আকৃতি করা ভেতরে ক্যান্ডেল দিয়ে আই লাভ ইউ অর্ধাঙ্গীনী লেখা।ছাদের ওই মাঝের লেখা টুকু রঙ বেরঙের ক্যান্ডেল এ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।চারদিকে বেলুন আর মাঝে এমন সুন্দর লেখা এই সৌন্দর্য মুখে বলে শেষ করার মতো নয়।প্রতিটি বেলুনের মাঝে একটা করে লাইট দেওয়া।ছাদের লাইট অফ থাকাতে ছাদের সৌন্দর্য আরো বেশী ফুটে উঠেছে।আমার আনা কেক টা আবার সবাই মিলে কাটলাম।নিরবের জন্য আমি ব্লু পাঞ্জাবী এনেছি কারণ ও কালো ছাড়া পরে না।তাই ভিন্ন কালার এনেছি সাথে একটা ব্রান্ডের ঘড়ি।নিরব কে ঘড়িটা পরিয়ে দিলাম।নিরব অনেক বেশী খুশি হয়েছে ঘড়িটা পেয়ে।ঘড়িতে একটা চুমু দিয়ে সবাই কে আড়াল করে ঠোঁট এক জায়গা করে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলো।আমি প্রশান্তির একটা হাসি দিলাম।নিরব আমার হাতে একটা ডায়মন্ড রিং আর গলায় একটা হার পরিয়ে দিলো।আমার হাত ধরে বললো, তুমি খুশি হয়েছো।ওর দিকে তাকিয়ে বললাম ভীষণ হ্যাপি।গ্যাস দিয়ে ফুলানো বেলুন অনেক গুলা এক জায়গা করে আকাশে উড়িয়ে দিলাম।উড়ন্ত বেলুনের দিকে তাকিয়ে আছি আমি আত হাসছি।নিরব আমার হাসি দেখে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমাদের রেজাল্ট ও বেরিয়ে গিয়েছে এবার ও গোল্ডেন পেয়েছি।নিরব আজ ভীষণ হ্যাপি।আমার থেকে ও বেশী হ্যাপি।আমার হাত ধরে বলেছে,আমার জীবনের একটায় স্বপ্ন তোমার স্বপ্নের আকাশে পৌছে দেওয়া।সেই মানুষ গুলো যেনো একদিন বুঝতে পারে তারা মৃথিলার যোগ্য না।

অবশেষে মুনতাহা আপু বিয়েতে রাজি হয়েছে।রিক ভাইয়ার বিয়ের দিন আমরা ঢাকা থেকে রওনা হলাম নড়াইল এর উদ্দেশ্য। অনেক লেট হয়ে গিয়েছে অল রেডি রওনা হতে কারণ টাইম মত রিফাত উধাও।রিফাত কে পাওয়া যাচ্ছে।অবশেষে মেসেজ করেছে সে অন্য গাড়িতে পৌছে যাবে আমরা যেনো পৌছে যায়।এইদিকে সুপ্তি রেগে আছে বিয়ের দিন সে কোথায় হাওয়া হলো।কি এমন কাজ পড়েছে।আমরা নড়াইল পৌছে গেলাম বিয়ে ও শেষ কিন্তু রিফাত ভাইয়ার কোনো খবর নেই।নিরব,সুপ্তি,রিক ভাইয়া সবাই ফোন দিচ্ছে কারো ফোন তুলছে না।ফোন দিলেই কেটে দিচ্ছে।বিয়ে শেষে আমরা রওনা হলাম পরের দিন সকাল দশটায় এসে আবার ঢাকা পৌছে গেলাম কিন্তু রিফাত ভাইয়া বাসায় পৌছায় নি।

বাড়ির সবাই এবার ভীষণ চিন্তা শুরু করেছে।রিফাত ভাইয়ার নিজের ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো। এত দিন ধরে সব প্লান করেছে অথচ আজ সেই নেই।কি এমন হয়েছে আর কোথায় বা গিয়েছে।কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।বাসার সবাই ভীষণ চিন্তিত।এদিকে ফোন হচ্ছে অথচ রিসিভ করছে না।তার ফোন রিসিভ না করার কারণ কেউ বুঝছে না।সুপ্তি আর রিফাত ভাইয়ার মা কাঁন্নাকাটি শুরু করেছে।নিরব বিভিন্ন জায়গা ফোন দিয়েই যাচ্ছে অথচ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না রিফাত ভাইয়াকে।

দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা এমন সময় একটা বিয়ের গাড়ি রিক ভাইয়াদের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো।আমরা সবাই এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম বিয়ে তো রিক ভাইয়ার ছিলো আরেক টা বিয়ের গাড়ি কার।গাড়ি টা ফুল দিয়ে সজ্জিত করা।গাড়ির ভেতরে সেরওয়ানি আর বেনারসি পরা এক জোড়া দম্পতি।
#হিয়ার_মাঝে
৪৪.
#WriterঃMousumi_Akter

বিয়ের গাড়ি থেকে যখন নতুন দম্পত্তি হিসাবে রিফাত ভাইয়া আর নবনিতা আপুকে বের হতে দেখলাম আমার পায়ের নিচের মাটি কাঁপাকাঁপি শুরু হলো সমস্ত শরীর ও কাঁপতে থাকলো।আমি সহ বাকি সবার ই একই অবস্থা। বিশেষ করে সুপ্তি সুপ্তির মুখের দিকে তাকানোর মতো কোনো অবস্থায় ছিলো না।সুপ্তি কোনো রিয়্যাক্ট ও করছিলো না শুধু অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো রিফাত ভাইয়ার দিকে।কারো মুখে কোনো কথা ছিলো না সবাই বাকরুদ্ধ।রিফাত ভাইয়ার পক্ষে এমন কাজ করা কিছুতেই সম্ভব নয় কিন্তু কিভাবে হলো এটা।আমার বুঝতে বাকি রইলো না এখানে নবনিতা আপুর কোনো না কোনো চক্রান্ত আছে।আমি রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম ভাইয়া তোমরা এখানে এ ভাবে।রিফাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,আমরা বিয়ে করেছি মৃথিলা।কথাটা শুনেই মাথার মাঝে চক্কর দিয়ে উঠলো।একবার সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে।সুপ্তির কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছিলাম না একটুও।আমি আপুকে বললাম,তুমি কি করেছো রিফাত ভাইয়ার সাথে বলো।রিফাত ভাইয়ার জানের থেকে প্রিয় সুপ্তি ভাইয়া কিছুতেই সুপ্তি কে ছেড়ে তোমাকে বিয়ে করতে পারে না।এই সব কিছুর মাঝে তোমার হাত আছে।সব তোমার ই প্লান।জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম বলো কিভাবে ফাঁসিয়েছো।

“আপু ঠোঁট বাকিয়ে বললো,কেনো মিথু সেকেন্ড বার বিয়ে করতে গেলে বুঝি ফাঁসানো লাগে।”

“অবশ্যই তুমি রিফাত ভাইয়াকে ফাঁসিয়েছো।”

“ঠিক এইভাবে তোর মা আমার বাবাকে ফাঁসিয়েছো আর তুই নিরব কে ফাঁসিয়ে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিস।”

“কথাটা শুনেই আপুর গালে ঠাসস করে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম,আমার মা কাউকে ফাঁসায় নি।আমার মায়ের সে চরিত্র ছিলো না।তোমার বাবা আমার মাকে ফাঁসিয়েছিলো।তোমার বাবার রক্ত তোমার শরীরে তাই তুমি রিফাত ভাইয়াকে ফাঁসাতে পেরেছো”

নিরব এগিয়ে এসে বললো নবনিতা তোমার ছিলাম কবে আমি যে মিথু ফাঁসাবে।তোমার মতো ন্যারো মাইন্ডের মেয়ে জীবনে দেখি নি।আমার রুচি এত লো লেভেলে নামে নি যে তোমার মতো মেয়ের হবো।তাকিয়ে দেখো সুপ্তির দিকে।

আপু সুপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,কেমন লাগছে সুপ্তি।তুই অনেক আমার বিপক্ষে গিয়েছিস।মৃথিলার সাথে হাত মিলিয়ে অনেক পলিটিক্স করেছিস।আজ তোকে বুঝিয়ে দিলাম কষ্ট কি? তোর সব থেকে প্রিয় জিনিস টা কেড়ে নিয়ে।সুপ্তি নির্বাক ভাবে তাকিয়ে রইলো আপুর মুখের দিকে কোনো উত্তর করলো না।

নিরব রিফাত ভাইয়ার কলার চেপে ধরে বললো এটা কি করলি তুই।খাল কেটে কুমির নিয়ে আসলি।তুই জানিস না ও কোন লেভেলের মেয়ে।এই পরিবারের প্রত্যকের ক্ষতি করবে ও।বল কেনো সুপ্তির জীবন টা নষ্ট করলি।ওই বাচ্চা মেয়েটা এই যন্ত্রনা সহ্য করবে কিভাবে।নবনিতা সুপ্তি কে মেরে দিবে।

রিফাত ভাইয়ার বাবা এগিয়ে এসে বলেন,কুলাঙ্গার হবে কখনো ভাবতে পারি নি।আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।এক্ষুণি বের হয়ে যাও বলছি।রিক ভাইয়া উনার বাবাকে বললেব বাবা শান্ত হও অনেক বড় কোনো ষড়যন্ত্র হয়েছে প্লিজ আমাদের রিফাত কে একটা কাজের জন্য ভুল বুঝো না।আগে আমরা সব টা জানি তারপর।বাসার সবাই যে যা পারছে ইচ্ছা মতো বলে যাচ্ছে।রিফাত ভাইয়া কে অনেক বার প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় নি।বাসার সবাই বেরিয়ে যেতে বললে নবনিতা আপু পুলিশ ডাকার হুমকি দেয়।সে নাকি পুলিশ ডেকে বলবে বধূনির্যাতন করা হচ্ছে।পরিস্হিতি অন্য দিকে যেতে পারে তাই রিক ভাইয়া সহাইকে চুপ করিয়ে বললো নবনিতা ভেতরে প্রবেশ করো।

পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি।চোখ দিয়ে ঝরে চলেছে অঝরে পানি।কিছুক্ষণের মাঝেই সুপ্তির আম্মু চলে আসে।সুপ্তি ওর আম্মুকে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে।সুপ্তির আম্মুর চোখেও পানি।সুপ্তির কাঁন্নায় বাসার প্রতিটা মানুষ কেঁদে দিলো।

“আম্মু আমাকে নিয়ে চলো আম্মু।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।আম্মু আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে।আমি ঠকে গেছি আম্মু আমার লাইফ টা শেষ হয়ে গিয়েছে।আমি কোনো সত্যি মিথ্যা জানতে চাই না আম্মু।প্লিজ আম্মু এক্ষুণি আমায় নিয়ে চলো আমার হার্ট এট্যাক হবে আম্মু এক্ষুণি।আম্মু মনের ভেতরে জ্বলে পুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে আমার।”সুপ্তির ভীষণ কাঁন্নায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।বার বার আম্মু আম্মু করে চিৎকার করছিলো।আমার জীবনের সব থেকে সাপোর্টিং মানুষ টা আজ এইভাবে ছটফট করছে।নবনিতা আপু শুধু মাত্র আমার উপর রাগ থেকে সুপ্তির সাথে এই অন্যায় টা করলো।

নিজের আম্মুর কোলে সুপ্তি সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলো।কোনো ভাবেই জ্ঞাণ ফিরছে না সুপ্তির।পাশের থেকে একটা ডাক্তার নিয়ে আসলে ইনজেকশন পুশ করলে জ্ঞান ফিরে আসে সুপ্তির।সুপ্তিকে নিয়ে সবাই উত্তেজিত কিন্তু কিন্তু সুপ্তির মুখে কোনো কথা নেই।সুপ্তির আম্মু বলছে সুপ্তি তোমার জাস্ট কাবিন হয়েছিলো এমন কিছুই হয় নি যে তোমার জীবন টা নষ্ট হবে।আমি তোমাকে লেখাপড়া শেখাবো তুমি প্রতিষ্টিত হবে।তোমাকে আমি এইভাবে কষ্ট পেতে দিবো না মা।যারা বেঈমানি করেছে তাদের আমি ছাড়বো না।

ছাদে একাকি দাঁড়িয়ে আছে রিফাত ভাইয়া।জ্বলন্ত সিগারেট এ হাত পুড়িয়ে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলছে।চোখ দিয়ে ঝরছে অঝরে পানি।এমন সময় রিক ভাইয়া আর নিরব ছাদে গেলো।রিফাত ভাইয়ার ঘাড়ে হাত দিতেই রিফাত ভাইয়া নিরব কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে দিলো।নিরব বললো কাঁদছিস ক্যানো রিফাত। কাঁদবে তো সুপ্তি।

নিরব তুই ও বুঝলি না আমায়।প্লিজ আমায় বাঁচিয়ে নে ভাই।আমি আমার জীবনের সব থেকে ভয়ানক পরিস্হিতিতে দাঁড়িয়ে আছি।সুপ্তি কে বলিস আমাকে যেনো মাফ করে দেয় আমার এই পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

নিরব রিফাত ভাইয়াকে কয়েক টা চড় থাপ্পড় মেরে বললো,হাউ চিপ ইওর মাইন্ড রিফাত।আমি তোর থেকে এটা আশা করি নি।যেটায় হোক তার সমাধান আছে। তার মানে এটা নয় নিজের লাইফ ত্যাগ করতে হবে।রিক ভাইয়া বলেন আমরা তোর সাথে আছি তুই আমাদের সাথে শেয়ার কর।নিরব বললো তুই সুপ্তির সাথে কথা বল। রিফাত ভাইয়া বললো ওর মুখোমুখি হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয় আমার।আমি ওর চোখে চোখ রাখতে ভয় পাচ্ছি।প্লিজ তোরা একটু কনভাইস কর।সুপ্তি আমার পাশে থাকলে আমি সব পারবো।আর সুপ্তি আমায় ছেড়ে চলে গেলে আমি কিছুই পারবো।

নিরব, আর রিক ভাইয়া কে রিফাত ভাইয়া ঠিক আর কি কি বলেছিলো আমরা কেউ কিছুই জানিনা।

সুপ্তির জ্ঞান ফেরার পর নিরব বললো রিফাত আর সুপ্তি একটু আলাদা কথা বলুক।সুপ্তির আম্মু কোন ভাবেই কথা বলতে দিবেন না।আমাদের অনুরোধ এ রুম থেকে বেরোলেন।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলে রিফাত ভাইয়া সুপ্তির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।সুপ্তি কিছু কথা ছিলো প্লিজ শোনো আমার কথা।

সুপ্তি কোনো কথার ই উত্তর দিলো না।

রিফাত ভাইয়া হাজার বার ডাকলেও সুপ্তি ডাক শোনে নি।

অবশেষে, সুপ্তি খাট থেকে নেমে রিফাত ভাইয়াকে বললো,আমি চলে যাচ্ছি রিফাত। অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করলে আমি কষ্ট পেলেও মানিয়ে নিতাম। আমাকে কষ্ট দিয়েছো ব্যাপার নাহ তুমি মৃথিলার জীবন টা নষ্ট না করলেও পারতে।আমার জীবনে আমি মৃথিলার গুরুত্ব সব সময় বেশী দিয়েছি।মৃথিলার কোনো ক্ষতি হলে সেদিন তোমাকে আমি ছাড়বো না মিষ্টার রিফাত।আমি চলে যাচ্ছি।এই জীবনে কখনো আর মুখোমুখি হবো না। হওয়ার ইচ্ছা ও নেই।ভাল থাকবেন।বলেই দু’ফোটা চোখের পানি ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো সুপ্তি।

-রিফাত ভাই কাঁন্না ভেজা কন্ঠ নিয়ে বললেন,যেও না সুপ্তি।প্লিজ যেও না।তোমার থেকে যাওয়ার জন্য ই তো আমার এত কিছু করা।
রিফাত ভাইয়ার চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরে পড়ছে।

-স্যালুট আমাকে এতটা ভালবাসার জন্য।

-আই লাভ ইউ সুপ্তি প্লিজ যেও না। তুমি থেকে গেলে আমি হয়তো বেঁচে যাবো কিছুটা খারাপ সময় অতিক্রম করে হলেও।

-আই হেট ইউ রিফাত।আই জাস্ট হেট ইউ।
দেখা হবে কোর্টে।এই জীবনের মতো এখানেই সমাপ্তি।

সুপ্তি ওর আম্মুর সাথে সেদিন বাসায় চলে গেলো।সুপ্তিকে আর দেখা যায় না,ফোন দিলেও ধরে না। ঢাকা থেকে রাজশাহী চলে গিয়েছে ওর কোনো খালার বাসায়।অনেক কিছুও এলোমেলো হয়ে গিয়েছে এর ই মাঝে।সুপ্তি সব জায়গা থেকে রিফাত ব্লক করে দিয়েছে। রিফাত ভাইয়া কে শেয়ার করার সুযোগ দেয় নি এমন কি হয়েছিলো।রাজশাহী কোন আত্মীয়র বাসায় সেটা কেউ জানে।আমাদের কারো সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই সুপ্তির।কোথায় ভর্তি হয়েছে কি করছে কেউ কিছুই জানে না।

কেটে গিয়েছে আরো ছয়টা মাস। বিগত ছয় মাসে কেউ ভাল সময় কাটাতে পারে নি সুপ্তি কে ছাড়া।কারণ সুপ্তিকে খুব প্রয়োজন এই মুহুর্তে।

আজ অনেক দিন বাদে নিরবের বুকে মাথা দিয়ে কাঁদছি আমি।সুপ্তির জন্য ভীষণ মন কেমন করছে।হঠাত একটা আননাউন নাম্বার থেকে ফোন দেখে ফোন টা রিসিভ করলাম।ফোন রিসিভ করতেই আমার বুকের মাঝে আচমকা একটা বাড়ি মেরে উঠলো।সুপ্তির ফোন পাবো ভাবতেই পারি নি।ফোনের ওপাস থেকে মলিন কন্ঠ ভেসে এলো মিথু ভীষণ মিস করছি তোকে।আমি খুব কাঁন্না করলাম। সুপ্তি ও কাঁদছে খুব।

আগামি কাল সুপ্তি ঢাকায় ফিরছে।আমার যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়েছে সুপ্তির সেটা জানাই হলো না।

আজ ই রিফাত ভাইয়া নবনিতা আপুদের বাসায় গিয়েছে।ওখানে গিয়েই নাকি থাকবে এখন থেকে।এত দিন পর সুপ্তি এসে দেখলে আবার কষ্ট পাবে।নবনিতা আপু আর সুপ্তিদের বাসা পাশাপাশি ই।

নিরব আমাকে বললো চিন্তা করো না জানপাখি।বড় কিছু পেতে হলে ছোট কিছু ত্যাগ করতে হয়।রিফাত ওখানে আর এমনি এমনি যায় নি।তার পিছনে অনেক বড় কোনো কারণ আছে।জানো মৃথিলা রিফাত ওর জীবনে অনেক বড় স্যাক্রিফাইস টা করলো আর সুপ্তি পেলো ভীষণ কষ্ট শুধু তোমাকে ভাল রাখার জন্য।আমি ওদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ।কাল সুপ্তি এলে সব বুঝিয়ে বলবো।অভিমানি মেয়েটা সব বুঝলে হয়।
#হিয়ার_মাঝে
৪৫.
#Mousumi_Akter

সুপ্তির ঢাকায় ঢাকায় আসার কারণ যে রিফাত ভাইয়া কে ডিভোর্স এর জন্য ছিলো সেটা অজানা ছিলো আমাদের।সুপ্তি এতদিন নিজেকে সামলানোর জন্য সবার আড়ালে ছিলো।নিজেকে কঠিন করে নিয়ে এসছে। সুপ্তি ঢাকায় পৌছানোর সঙ্গেই অস্হির হয়ে গেলাম আমি সুপ্তি কে দেখার জন্য।

এর মাঝে সুপ্তি আমাকে ফোন করলো,নবনিতা আপুদের বাসার সামনে নাকি দুই গাড়ি পুলিশ সাথে কয়েকজন মহিলা পুলিশ ও আছে।আপুদের বাসায় প্রবেশ করে নাকি প্রায় ঘন্টাখানিক পরে মা,আপু আর বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে সাথে নাকি রিফাত ভাইয়া ও আছে।কি করণ তার নাকি কিছুই জানে না সুপ্তি।আমি ফোন টা কেটে নিরব কে বললাম শুনেছো।

“নিরব গায়ে পারফিউম মারতে মারতে বললো,হুম শুনেছি আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি বড় শালি সব জেলে এখন। নিরব যেনো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম।”

“তার মানে আপনি জানেন।”

“নিরব হেসে দিয়ে বললো হুম রিফাত বলেছে। তাছাড়া আমাদের প্লান তো এমন ই ছিলো তাই এটা হওয়ার ই ছিলো।”

“কিহ কিসের প্লান।”

“সব প্লান ই বলবো আগে চলো জেলে তাদের চাঁদমুখ টা দেখে আসি।কেমন আছেন তারা।”

“সুপ্তি,আমি,নিরব জেল খানায় পৌছে গেলাম।রিফাত ওখানেই ছিলো।সুপ্তিও কারণ জানতে চাইলো আসলে হয়েছে কি?”

রিফাত ভাইয়া বলতে শুরু করলেন,

নবনিতা সাইকো হয়ে গেছিলো নিরব কে পাওয়ার জন্য।নবনিতা যে কোনো ভাবে মৃথিলা কে মেরে নিরব এর একাকিত্ব জীবনের সঙ্গী হতে চেয়েছিলো।রিক ভাইয়ার বিয়ের দিন নবনিতার প্লান ছিলো মৃথিলা কে কার এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে দিবে।যার জন্য নবনিতা মোটা অঙ্কের টাকা ও দিয়েছিলো কিলার দের।কিন্তু নবনিতার প্লান ফেইলড হয়ে যায়।কিলার এর ছোট ভাই এর সাথে আমার ভালো রিলেশন ছিলো কোনোভাবে সে জেনে যায় মৃথিলা আমার কাজিন।তাই কিলারের ভাই মৃথিলা কে না মারতে অনুরোধ করে।এবং কিলার কে বলে ও দেয় নবনিতা খারাপ মেয়ে আর মৃথিলা ভালো।কিলার নবনিতা কে টাকা ফেরত ও দিয়েছিলো।কিলারের ভাই আমাকে চিনে যে কারণে কিলার টাকা ফেরত দিয়েছে এই কারনেই নবনিতা আমাকেই টার্গেট করে।আমি ভাইয়ার বিয়ের দিন ফুল কিনতে বাইরে বেরিয়ে ছিলাম।আমার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা ও আমাকে একটা কোকাকোলা দেয় আর সেটা খেয়েই আমি অচেতন হয়ে যায়।জ্ঞান ফেরার পরে দেখি একটা অন্ধকার কুঠুরি তে আমি একটা চেয়ারে হাত পা বাঁধা আমার।মুখ বাঁধা কয়েকজন ছেলে আর আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নবনিতা।আমাকে চেয়ারে বসিয়ে আমার গলায় ছুরি ধরেছিলো নবনিতা।আমি বুঝতে পারছিলাম না ওই মুহুর্তে কি করা উচিত আমার।নবনিতা আমাকে তখন বলে আমি যদি মৃথিলা কে সরিয়ে নিরব কে ওর জীবনে এনে না দেয় তাহলে ও সুপ্তি কে মেরে দিবে।সুপ্তিকে বাঁচাতে চাইলে যে কোনো ভাবে আমি যেনো নিরব কে তার জীবনে এনে দেয় এবং তাকে সব ধরনের সহায়তা করি।আমি যখন নবনিতা কে বললাম নিরব কোনো ভাবেই তোমাকে গ্রহন করবে না তখন নবনিতা আমাকে বলে তাহলে আমার তাকে বিয়ে করতে হবে।নবনিতা আমাকে বলে,তুমি আমাকে বিয়ে না করলে মৃথিলার মায়ের মতোই মৃথিলার অবস্থা হবে।ওই মুহুর্তে ওখান থেকে নবনিতা কে বিয়ে না করলে আমাকে ওখানেই বেঁধে রাখবে মৃথিলার মৃত্যু হলে তবেই ছাড়বে।এমন কি বলে নবনিতা নাকি জেল পুলিশ ফাঁসি কোনো কিছুর ই তোয়াক্কা করে না।সে মৃথিলা কে মেরেই ফাঁশিতে ঝুলতে চায়।আমার কাছ থেকে আমার ফোন নিয়ে নেওয়া হয় আমি যে কিছু রেকর্ড করবো সেই উপায় ও ছিলো না।পৃথিবীর সব থেকে বাজে আর কঠিন সিসুয়েশন এ দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি।একদিকে আমার ভালবাসা সুপ্তির প্রাণ অন্যদিকে আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু নিরবের ভালবাসার প্রাণ দুটোই মহা সংকটে।আমার কাছে কোনোটার ই কম গুরুত্ব ছিলো না।আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আর আমার ভালবাসা দুজনের ই কলিজা মৃথিলা।মৃথিলার কিছু হলে সুপ্তি আমায় ক্ষমা করবে না কোনদিন।সুপ্তি যদি জানতে পারতো মৃথিলাকে বাঁচানোর অপশন থাকতেও আমি বাঁচাতে পারিনি সুপ্তি আমায় এমনিতেও ছেড়ে যেতো।তাছাড়া নিরব মৃথিলাকে ছাড়া বড্ড অসহায়।আমার জীবনে আমি আমার থেকেও নিরবের ভাল টা বেশী চেয়েছি সব সময়।মৃথিলার কিছু হলে নিরব বাঁচতো না।মৃথিলার মতো নিষ্পাপ একটি মেয়ে সারাজীবন যার সাথে অন্যায় হয়েছে আর এভাবে ওকে শেষ হতে দিতে পারতাম না আমি।।তাছাড়া আমার মাথায় তখন একটাই জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছিলো মৃথিলার মায়ের মতোই ওর অবস্থা হবে তার মানে মৃথিলার মায়ের মৃত্যুর কারণ ও জানা যাবে।আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম নবনিতা আমাকে ভালবাসে না ও শুধু আমাদের বাড়িতে আমাদের ফ্যামিলি তে ঢুকতে চেয়েছিলো মৃথিলার ক্ষতি করতে।ওখানে আমি রিয়্যাক্ট করলে ওরা আমাকে ওখানে আটকে রেখে মৃথিলাকে মারা হলে তবেই ছাড়বে আমাকে ক্লিয়ারলি বলে দিয়েছিলো নবনিতা।এমন ই একটা সিসুয়েশন হাতে ছিলো না কোনো প্রমান।আবার কাউকে কিছু বললেও বিপদ।আমি কাউকে কিছু বললে সুপ্তি, মৃথিলা উভয়ের মেরে দিবে।পুলিশের কাছে গেলেও কি বলে যেতাম। নিরব অল টাইম বাসায় থাকে না মৃথিলা মাঝে মধ্য একাই বের হয়।কারো যদি ইচ্ছা থাকে কাউকে মারবে তাহলে সে পারে এটা তেমন কঠিন কাজ নয়।মৃথিলার মাকে যদি মারতে পেরেছে তাহলে মৃথিলা কে মারবে ওদের কাছে কোনো ব্যাপার না।সেদিন আমি নবনিতা কে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।

আমি নবনিতার সাথে কোনো কালেমা পড়ে বিয়ে করিনি।নবনিতা উত্তেজনাতে আমার একটা টোপ গিলে ফেলছিলো।আমি হঠাত একটা প্লান করি আর অভিনয় শুরু করি।নবনিতাকে এটা বোঝায় যে আমি তাকে অলওয়েজ হেল্প করবো।আমি নিরব মৃথিলার ঘনিষ্ট বন্ধু আমি চাইলেই মৃথিলার ক্ষতি করতে পারবো।আমার নিখুত অভিনয় গিলেছিলো নবনিতা।আমি বলছিলাম এখানে ওয়েট করো বিয়ের পেপার নিয়ে আসি।একটা স্টাম্প পেপার কে বিয়ের কাগজ বলে সাইন করেছিলাম আর ওকেও সাইন করিয়েছিলাম।চালাক মানুষ ও ভুল করে আর নবনিতাও করেছিলো।আর ভাবছো এক ঘরে থেকেছি আমাদের মাঝে ক্লোজ কিছু হয়েছে কিনা।আমি একতা রাত ও বাসায় কাটায় নি।নিউজ জব নিয়েছি নাইট ডিউটি এগুলা বলে কাটিয়েছি।নবনিতার মাথায় সব সময় ঘুরপাক খায় সে কিভাবে নিরবের থেকে মৃথিলাকে আলাদা করবে আমার দিকে ওর খেয়াল ছিলো না।আমি শুধু অভিনয় করতাম কারণ প্লান টা নিরব আর রিক ভাইয়া দিয়েছিলো।নবনিতার বেষ্ট ফ্রেন্ড হয়েছি ওর ফ্যামিলির বিশ্বস্ত হয়েছি।ওদের বুঝিয়েছি আমিও চায় নিরব মৃথিলার ক্ষতি হোক।সুপ্তি যে খালার বাসায় আছে সেটা আমি জানতাম।সুপ্তির আম্মুও অনেক সহায়তা করেছে এ ব্যাপারে।সুপ্তির আম্মুকে এ পুরো ঘটনাটা আমি জানিয়েছিলাম তাইতো সুপ্তির আম্মু সুপ্তিকে নিয়ে রাজশাহীতে চলে গেছিলেন।আমার হাতে যখন সব প্রমান চলে এসছে তখন ই সুপ্তির আম্মুকে জানিয়ে দিলাম যে সুপ্তিকে নিয়ে চলে আসতে।আজ ওরা মৃথিলার মরা লাশ দেখতে চেয়েছিলো সময় ওদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে দেখো।
নবনিতার আম্মুকে বললাম আন্টি আপনি কিভাবে মেরেছিলেন মৃথিলার আম্মুকে সেইম ভাবেই মৃথিলাকে মারবো।তখন উনি বললেন সিঁড়ি থেকে খুব জোরে ধাক্কা দিয়েছিলাম মিথুর আম্মুকে আর সেখান থেকে পড়েই মাথায় ভীষণ আঘাত পেয়ে মারা যায়।কিন্তু আমরা পুলিশ কে জানিয়েছি ও পা পিছলে পরে গিয়েছে।মৃথিলাকেও একই ভাবে মারতে হবে।ওদের কথা রেকর্ড করলাম,নবনিতার এত দিনের প্লান রেকর্ড করেছিলাম।তাছাড়া পুলিশের সাথে আগে থেকেই কথা বলা ছিলো আমার।এখন সব প্রমান পুলিশের হাতেই।হ্যাঁ তোমাদের জানালে হয়তো ভাল হতো কিন্তু তোমাদের প্রাণের রিস্ক যেখানে সেখানে কিভাবে তোমাদের এগুলা বলি।আমার বন্ধু জানতো না নবনিতা কোকা কোলাতে কি মিশিয়েছিলো।আমার বন্ধুকে হাত করে বলেছিলো আমাকে যেনো ড্রিংক্স টা খাইয়ে দেয়।বলো সুপ্তি আমার কি করার ছিলো। এক দিকে তুমি,নিরব,মৃথিলা মাঝ খানে আমি।সুপ্তি এখনো কি আমায় ভুল বুঝবে।ছেড়ে চলে যাবে।অনেক কষ্ট হয়েছে জানো তোমায় ছাড়া।রাজশাহী একটা সেফ জায়গা তোমাকে রেখেছিলাম।আমি এদিকে এত বড় একটা মিশনে ছিলাম।তাই তোমাকে সেফ রাখতেই দূরে পাঠানো।তাছাড়া তুমি তো বলেছিলে সুপ্তি যেদিন মৃথিলা জাস্টিস পাবে তুমি সব থেকে হ্যাপি হবে।

রিফাত ভাইয়াকে বলার মতো কোনো ভাষায় আমার ছিলো না।পৃথিবীর যে কোনো ভাষা ই ছোট হবে উনাকে বললে।নিরব রিফাত ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আমার আর মৃথিলার জন্য নিজের জীবন থেকে এত গুলো দিন স্যাক্রিফাইস করেছিস ভাই তুই।শুধুমাত্র আমার ভালবাসা রক্ষা করতে তুই যা করেছিস পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো বন্ধু আছে কিনা আমার জানা নেই।ভালবাসি ভাই তোকে কত যন্ত্রণা তুই ভোগ করেছিস সেটা আমি জানি কিন্তু সেল্ফিস এর মতো দেখেছি কারণ আমার হাতে আর কোনো অপশন ছিলো না।রিফাত ভাইয়া বলেন,ধুর ভাই আমার কাছে মৃথিলার ভাল থাকার অনেক গুরুত্ব আছে।মৃথিলার জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে এত টুকু ত্যাগে কিছুটা হলেও মৃথিলার জন্য কিছু করতে পেরেছি।আমি ও সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললাম আমায় কেনো এত ভালবাসিস সুপ্তি তুই।আমি তো জীবনে কিছুই করিনি তোর জন্য।খুব কষ্ট পেয়েছিস তাইনা সুপ্তি।সুপ্তি কোনো কথা না বলে অঝরে কেঁদে চললো।পৃথিবীতে বন্ধুত্ত্বের চরম দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ রিফাত ভাইয়া।

সুপ্তি রিফাত ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদলো।দুটো প্রাণ যারা দুজন দুজন কে খুজছিলো তারা অনেক দিন পর আবার এক হয়েছে।

জেলে বন্দি আজ ওরা সবাই আমি ওদের জাস্ট বললাম সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেন ছেড়ে দেন না।তোমাদের উপযুক্ত বিচার ঠিক ই হবে।মা কে একটাই কথা বললাম আমাকে মেরে কি শান্তি পেতে।আজ তোমাদের পাপে নিজের মেয়ের জীবন টাই নষ্ট করলে।কত দিন জেলে কাটাবা তার হিসাব ও নেই।

আজ নানা, মামা অনেক খুশি তার মেয়ের খুনিরা আজ শাস্তি পাবে।

ছোট বেলা থেকে তীব্র যন্ত্রনা নিয়ে বড় হবার পরে যে ফ্যামিলির বাইরের এত গুলা মানুষের ভালবাসা পাবো ভাবতে পারি নি আমি।

সব ভালো বোধহয় তার ই শেষ ভালো টা যার হয়।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here