#ক্রাশ
#পর্ব_১৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
সাগর বাসের মধ্যে চুপচাপ বসে আছে।।।
সে একটা কথাও বলছে না।
আর মোহনার দিকে একবারো তাকাচ্ছেও না।
সে শুধু তার বাবার কথাই ভাবছে।
কারন মোহনাকে দেখলে তিনি নিশ্চয় রেগে যাবেন।
এতো বারণ করার পরও মোহনাকে সে সামিরার কথা বলে দিয়েছে।
আবার তাকে সাথে করে নিয়েও যাচ্ছে।
সাগর তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায়।
তার কোন কথা ফেলতে পারে না।
যা আদেশ করে সেটাই শোনে।
এখন পর্যন্ত সে তার বাবাকে যথেষ্ট সম্মান করে।
কিন্তু তার বাবা তাকে আজ সামিরাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিলো কিন্তু সে বাড়ি এসে মোহনাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
তার বাবা এজন্য নিশ্চয় রাগ করবেন তার উপর।
সাগর জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে দেখছে আর এসব ভাবছে।
কিন্তু মোহনা এভাবে আর চুপ করে থাকতে পারছে না।
সে সাগর কে বললো,
তুমি আমার সাথে একটা কথাও বলছো না কেনো?
সেই তখন থেকে শুধু বাহিরের দিকেই তাকিয়ে আছো?
সাগর মোহনার কথা শুনেও সেই আগের মতোই চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।
মোহনা তখন বললো,
আচ্ছা,তুমি হঠাৎ করে তোমার মন চেঞ্জ করলে কেনো?
আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য রিক্সাতে উঠিয়ে দিলে,
তুমিই আবার রিক্সা থেকে নামালে?
আবার তোমার সংগে করে নিয়েও যাচ্ছো?
আমাকে যে সংগে করে নিয়ে যাচ্ছো কেউ কিছু বলবে না এখন?
সাগর এবারও কোন উত্তর দিলো না।
মোহনা তখন বললো,
কোন উত্তর দিচ্ছো না কেনো?
আমার কিন্তু তোমার সাথে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই।
তুমি কিন্তু আমাকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছো।
এভাবে চুপ করে থাকলে আমি কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে যাবো।
সাগর সে কথা শুনে মোহনার মুখ জোরে করে টিপে ধরলো।
মোহনা তখন শুধু উঃ উঃ করতে লাগলো।
আর সাগরের হাত তার মুখ থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো।
সাগর তা দেখে তার হাত সরিয়ে নিলো।
আর বললো একদম চুপচাপ থাকো।
কোন কথা বলো না।
এতো কথা শুনতে ভালো লাগছে না কিন্তু।
মোহনা সেই কথা শুনে অন্য মুখ হয়ে থাকলো।
আর একটা কথাও বললো না।।
সাগর ও কিছুক্ষন চুপচাপ থাকলো।
আর বার বার মোহনার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো।
সাগর বুঝতে পারলো মোহনা রাগ করে অন্য মুখ হয়ে আছে।
তাই সে মোহনাকে টেনে এনে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।।।
কিন্তু মোহনা কোন রিয়েক্ট করলো না।
সে চুপচাপ করেই থাকলো।
সাগর তখন মোহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
আর বললো,তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছিলো না তাই সাথে করেই নিয়ে এলাম।
সবার বারন সত্ত্বেও তোমাকে কিন্তু নিয়ে যাচ্ছি।
কোন উল্টাপাল্টা কাজ করবে না।
আর এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে আজেবাজে কথাও বলবে না।
আর সামিরা কে কোন কুবুদ্ধি দিবে না।
ওকে বুঝাবে যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে যেনো তাকেই বিয়ে করে।
মোহনা কোন উত্তর দিলো না।
কারন তার কানে সাগরের কোন কথাই ঢুকছে না।
সাগর যে এতো বড় একটা স্বার্থপর ছেলে সে পরিষ্কার বুঝতে পারলো।
মোহনাকে পাওয়ার জন্য সে কত কি করেছে?
আর বোনের ভালোবাসা মেনে নিতে পারছে না।
সাগর একা একা কথা বলেই যাচ্ছে।
আর মোহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে মোহনা ঘুমিয়ে পড়েছে।
সাগর যখন দেখলো মোহনার কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছে না তাই সে মোহনার দিকে তাকালো।
তাকে ঘুমানো দেখে আরো ভালো করে কোলের মধ্যে নিলো।
আর নিজেও চোখ বন্ধ করে থাকলো।
কিছুক্ষন পর বাসের হেল্পারের ডাকাডাকি শুনে সাগর চমকে উঠলো।
সাগর তাই মোহনাকে ডাকতে লাগলো।
কারন মোহনার ঘুম এখনো ভাংগে নি।
এদিকে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।
মোহনা সাগরের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি করে উঠলো।
আর তার শরীরের পোশাক ঠিক করে নিলো।
সাগর এক হাতে ব্যাগ নিলো আর আরেক হাতে মোহনার হাত শক্ত করে ধরে গাড়ি থেকে নামলো।
মোহনা কোন কথাই বলছে না।
তার কোন কথা বলতেই ইচ্ছা করছে না।
সাগর তাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সে সেদিকেই যাচ্ছে।
সাগর কোন রিক্সা না নিয়ে হেঁটে হেঁটেই যাচ্ছে।
তার মানে সামনেই বাসা।
হ্যাঁ সেটাই হলো।
সাগর মোহনাকে নিয়ে একটা বাড়ির ভিতর ঢুকলো।
মোহনা বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখে সবাই বারান্দায় বসে আছে।
তাদের কে দেখেও কারো মুখে কোন কথা নাই।
কিন্তু মোহনা তো এভাবে চুপচাপ থাকতে পারে না।
কে কথা বললো আর কে বললো না তার কোন যায় আসে না।
তার একটুও খারাপ লাগছে না।।।
কারন সে শুধুমাত্র সামিরার জন্য এখানে এসেছে।
তাই সবাই যদি তার উপর রাগও হয় তবুও সে কিছুই মনে করবে না।
মোহনা তাই তার শাশুড়ী কে বললো মা কেমন আছেন?
আপনাদের না বলেই চলে এলাম।।।
মোহনা তার শাশুড়ীর উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার জিজ্ঞেস করলো মা সামিরা কই?
ও কেমন আছে?
শুনলাম ও নাকি অসুস্থ?
মোহনার শাশুড়ী কোন উত্তর দিলেন না।
তিনি মোহনাকে রেখে রুমের ভিতর চলে গেলেন।
তা দেখে সাগর এলো মোহনার কাছে।
আর ফিসফিস করে বললো,হচ্ছে টা কি?
সেজন্য নিয়ে এলাম?
চুপচাপ থাকো।।
খবরদার একটা বাড়তি কথাও বলবে না।
কিন্তু সাগর তার দাদু আর বাবাকে দেখতে পেলেন না।
হঠাৎ সেখানে সাগরের খালা এলো।
আর বললো, তুমি এতোক্ষণ পর আসলে?
আর তোমার ফোন বন্ধ কেনো?
সাগর সেই কথা শুনে পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বললো,
কই বন্ধ?
খোলায় তো আছে?
এই বলে ফোনে টাচ করলো।
কিন্তু ফোন আসলেই বন্ধ হয়ে আছে।
সাগর তাড়াতাড়ি করে ফোন টা অন করলো।
তখন সাগরের খালা বললো, এখন আর ফোন অন করে কি হবে?
যা হবার তা তো হয়েই গেছে।
জানি না আজ কি হবে?
তা শুধুমাত্র উপরওয়ালাই জানে?
সাগর সেই কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলো।
আর বললো,
খালা সব কিছু ঠিক আছে তো?
সামিরা কই?
সেই কথা শুনে খালা বললো বাড়ি থেকে পালিয়েছে সে।
তোমার বাবা আর দাদু খুঁজতে বের হইছে।
আল্লাহই জানে কি হবে এখন?
মানসম্মান পুরাই শেষ এবার।
সাগর এই কথা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়ে গেলো।
সে তার ফোন টা বের করে দাদু কে ফোন দিলো।
কিন্তু ফোন বার বার ব্যস্ত দেখাচ্ছে।
এদিকে তার বাবাকে ফোন দেওয়ার সাহসই হলো না।
কারন তার বাবা তাকে বার বার রিকুয়েষ্ট করেছিলো সামিরাকে ভালো করে পাহারা দিতে।
বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কোথাও না যেতে।।
সাগর এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না।
এদিকে তার মা ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
সাগর এবার তার খালুকে ফোন দিলো।
তার খালু জানালো তারা সবাই একসাথেই আছে।
কিন্তু সামিরাকে এখনো খুঁজে পাই নি।
সাগরের খুব খারাপ লাগলো।
একদিকে মানসম্মান এর ভয়।
অন্য দিকে তার বাবা কি বলবে কে জানে?
এই রকম একটা পরিস্থিতিতে তার মোটেও বাড়ি যাওয়া ঠিক হয় নি।
সব মোহনার জন্য হয়েছে।।
সাগর রাগ করে মোহনাকে বকতে লাগলো।
মোহনা কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ থাকলো।
কারন এই পরিস্থিতিতে তার কথা বলা মোটেও ঠিক হবে না।
সাগর মোহনাকে চড় দিতে ধরে আর দিলো না।
হাত সরিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
মোহনা পড়ে গেলো মহাবিপদে।।
এখন সে কি করবে?
তার আসাটাই ঠিক হয় নি।
সে এখন একা একা কি করবে?
তাই একটা রুমে গিয়ে বসে থাকলো।
কিছুক্ষণ পর সাগরের খালাতো বোন এলো রুমে।
সে মোহনার সাথে কোন কথা বললো না।
সোকেচ থেকে প্লেট বাটি বের করে নিয়ে গেলো।
মোহনা তখন বললো তুমি সাগরের কে হও?
মেয়েটি তখন বললো আমার নাম তমা।
আমি সাগরের খালাতো বোন হই।।।
সেই কথা শুনে মোহনা তমার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখতে লাগলো।
কারন এই তমার সাথে সাগরের বিয়ে দেওয়ার জন্য তার খালা উড়েপড়ে লেগেছিলো।
কিন্তু সাগর সাফ জানিয়ে দিয়েছিলো সে কোন আত্নীয়র মধ্যে বিয়ে কিছুতেই করবে না।
তাছাড়া সাগরের বাবাও আত্নীয়র মধ্যে কিছুতেই আরেকটা নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে চায় নি।
এইজন্যই মনে হয় তার খালা আর খালাতো বোন তাকে এড়িয়ে চলছে।
মোহনাকে তারা হিংসের চোখে দেখছে।
তমা রুম থেকে চলে গেলো।
মোহনার খুব অস্বস্তি লাগছে।
সাগরের সাথে তো আজ আর দেখা পাওয়াই যাবে না।
বোনকে না খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত মনে হয় না সে বাসায় ফিরবে?
মোহনা মনে মনে ভীষণ খুশি হলো।
সামিরা কাজের মতো একটা কাজ করেছে।
এতো করে বলার পরও জোর করে তাকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে।
এখন কই গেলো মানসম্মান?
সবাই মিলে যদি আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই ছেলের সাথেই বিয়ে দিতো তখন কি আর এই ভাবে মানসম্মান নষ্ট হতো?
ফ্যামিলির লোকগুলো কেনো যে বোঝে না?
মোহনা সামিরার পালিয়ে যাওয়া দেখে খুশি হলেও তার ভীষণ ভয় করছে।
কারন সাগর যেহেতু তার কারনেই বাড়ি চলে গিয়েছিলো সেজন্য যে কি কি কথা শুনতে হয় আল্লাহই ভালো জানে?
মোহনা তার মন কে শক্ত করলো।
যে যাই বলুক সে একটা কথাও বলবে না।
সাগর কে সে বাড়ি যেতে বলেছে নাকি?
দাদী ফোন করেছে সেজন্য সাগর বাড়ি চলে গিয়েছে।
এতে তার কি দোষ???
চলবে,,,,,
সবাই অবশ্যয় সবার মতামত প্রকাশ করবে???
সাগর আর মোহনার এখন কি হবে সেটাই দেখার বিষয়।