#ক্রাশ
#পর্ব_১৯
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
সাগরের কথা সামিরা কিছুতেই বিশ্বাস করলো না।
তখন মোহনা তাকে অনেক বুঝালো যে তার ভাই সত্য বলছে।
তখন সামিরা বললো ভাবি,Iam sorry.
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
আমি আর বাড়ি যাবো না।
কারন আমি আমার ফ্যামিলি কে ভালো করেই চিনি।
তখন মোহনা বললো সেই জন্যই তো তোমার ভাই এভাবে লুকিয়ে তোমাকে না জানিয়ে রনির সাথেই তোমার বিয়ে ঠিক করেছে।
তোমার বাবা মা বা ফ্যামিলির কেউ যাতে না শোনে সেজন্য তোমাকেও বলে নি।
সেই কথা শুনে সামিরা রনিকে জিজ্ঞেস করলো।
কিন্তু রনি বললো সে কিছু জানে না।
বাবা তো তাকে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলে নি।
সেই কথা শুনে সাগর রনিকে বললো তোমার বাবা হয় তো এখনো তোমাকে বলে নি।
তুমি আগে বাড়িতে যাও তারপর সব জানতে পারবে।
সামিরা বুঝতে পারছে না সে এখন কি করবে?
কারন এই মুহুর্তে সে কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
তখন মোহনা বললো সামিরা অন্তত আমাকে বিশ্বাস করো।
আমাকে বিশ্বাস করো তো?
আমি থাকতে তোমার রনির থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।
আর তোমার ভাই আমাকে মিথ্যে বলতেই পারে না।
সামিরা সেই কথা শুনে বললো ঠিক আছে ভাবি।
আমরা আসছি।
কারন আমি তোমাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করি।
তুমি শুধু আমার ভাবি না একজন বন্ধুও।
মোহনা তো সেই খুশি।
সাগর যে এইভাবে সামিরার ভালোবাসাকে মেনে নেবে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না।
মোহনা ফোন রেখে দিয়ে সাগর কে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো, আমি আজ অনেক বেশি খুশি তবে তোমার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।
এভাবে আমাকে না বলে একা একা সব ব্যবস্থা করেছো।
আমাকে বললে কি হতো?
সাগর তখন বললো তুমি যদি ভুল করে কাউকে বলে দিতে এজন্য বলি নি।
মোহনা সেই কথা শুনে বললো তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না?
তুমি আমাকে একটা কথা বলতে বারণ করে দিবে আর আমি সেটা কাউকে বলে দিবো?
আমার প্রতি তোমার এই বিশ্বাস?
সাগর বললো প্রশ্নটা বিশ্বাসের না?
ভুল করে যদি কারো কানে যেতো তখন কি হতো?
মোহনা তখন বললো এখন তো আমি সব জানি।
তাহলে সবাই কে এখন বলেই দেই।।
এই বলে মোহনা উঠতে ধরলো।
সাগর তখন মোহনার হাত ধরে বললো সত্যি সত্যি যাচ্ছো দেখি?
মোহনা বললো হ্যাঁ।
কারন তুমি তো আমাকে বিশ্বাসই করো না।
সাগর তখন বললো অনেক বিশ্বাস করি।
আর এ ভুল হবে না।
এখন থেকে কিছু করার আগে তোমাকে বলবো।
ঠিক আছে?
মোহনা সেই কথা শুনে বিছানায় এসে বসলো।
তখন সাগর হঠাৎ করে মোহনার হাত টেনে ধরে তাকে কাছে টেনে আনলো।
তারপর তাকে জড়িয়ে ধরলো।
মোহনা চুপ করে থাকলো।
কারন সাগর তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলে অন্য রকম একটা অনুভূতি হয় তার।
মনে হয় সারাবছর যদি এইভাবেই থাকতে পারতো সে?
কারন সব শান্তি আর সুখ সে যেনো সাগরের বুকেই খুঁজে পায়।
হঠাৎ সাগর মোহনার কপালে একটা কিস করলো।
তারপর তার ঠোঁটে কিস করতে লাগলো।
মোহনা বললো কি হচ্ছে এটা?
হঠাৎ করে প্রেম উথলে পড়ছে যে?
সাগর তখন বললো আমার প্রেম ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ আছে তোমার?
তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা সবসময় একই থাকে।
তুমি বুঝতে পারো না।
মোহনা তখন বললো আমার ঘুম ধরেছে।
এখন এসব প্রেম ভালোবাসা বাদ দাও।
সাগর সেই কথা শুনে বললো এই তোমার কি আমাকে ডিস্টার্ব করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই?
চুপচাপ থাকো।
এই বলে সাগর মোহনার ঠোঁটে গভীর কিস করতে লাগলো।
মোহনা সাগরের ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দিলো।
আর দুইজনই কিছুক্ষনের মধ্যেই ভালোবাসার অতল গহবরে তলিয়ে গেলো।
কিছুক্ষন পর,
সাগর বললো, মোহনা তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
আমি একটু বাহিরে যাবো।
মোহনা সেই কথা শুনে বললো,
পাগল হইছো?
এতো রাতে বাহিরে যাবে কেনো?
সাগর জানালো সে একটু তার বাবার রুমে যাবে।
তারা ঘুমায়ছে কিনা একটু গিয়ে সে দেখে আসবে।
মোহনা বললো সবাই ঘুমায়ছে।
এতো রাতে কেউ জেগে নাই।
তুমি ঘুমাও তো।
এই বলে সাগর কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
সাগর বললো বেশি দেরী করবো না।
শুধু দেখা করেই চলে আসবো।
মোহনা বললো ঠিক আছে।
সেই কথা শুনে সাগর বাহিরে চলে গেলো।
মোহনা সাগরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।
সকাল ৯ টা বাজলো।
তবুও মোহনা ঘুমিয়েই আছে।
অনেক রাতে ঘুমানোর ফলে মোহনা আর সকালে উঠতে পারলো না।
এদিকে বাড়ির সবাই উঠে গেছে।
বাহিরে লোকজনের কথা শোনা যাচ্ছে।
হঠাৎ মোহনার ঘুম ভেংগে গেলো।
সে দেখতে পেলো সাগর বিছানায় নাই।
সাগর রাতে ঘরে এসেছিলো কিনা সেটাও তার মনে পড়ছে না।
মোহনা তাড়াতাড়ি করে উঠে বাহিরে গেলো।
গিয়ে দেখে অনেক লোকজন।
সে কিছুই বুঝতে পারলো না।
মোহনাকে দেখে সাগরের খালাতো বোন লিমা বললো, ভাবি আপনি এতোক্ষনে উঠলেন?
আমি আপনার রুমে গিয়েছিলাম ডাকতে কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে আছেন দেখে আর ডাকি নি।
তখন মোহনা বললো এতো লোকজন কেনো?
লিমা বললো,সামিরার বিয়ে সেজন্য।
সামিরার কথা শুনে মোহনা চমকে উঠলো।
সে আবার কখন এলো?
ওর না আজ সকালে রওনা দেওয়ার কথা?
সেই হিসেবে দুপুরে বাড়িতে পৌঁছানোর কথা।
মোহনা তখন লিমাকে বললো সামিরা কই?
লিমা হাত দিয়ে সামিরার ঘর দেখালো।
মোহনা সেই ঘরে দৌঁড়ে গেলো।
গিয়ে দেখে বাড়ির সবাই সেই ঘরেই বসে আছে।
সেজন্য সামিরাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না সে।
মোহনাকে দেখে সাগর এগিয়ে এলো।
আর বললো ঘুম শেষ হলো?
মোহনা সেই কথা শুনে সবার সামনে থেকে সাগর কে টেনে নিয়ে অন্য ঘরে গেলো।।
সাগর মোহনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললো কি করছো?
ঘরভর্তি মানুষ।
সবার সামনে এভাবে টেনে আনলে কেনো?
মোহনা সেই কথা শুনে সাগরের হাত ছেড়ে দিলো।
আর বললো তুমি রাতে রুমে আসো নি কেনো?
আমি সারারাত একা একা ঘুমিয়েছিলাম?
তুমি কই ঘুমাইছিলে?
সাগর তখন বললো বাবা মার রুমে গিয়ে দেখি সবাই সেখানে।
কেউ ঘুমায় নি।।।
তাহলে আমি কি করে ঘুমাই?
সেজন্য জেগেই ছিলাম।
মোহনা সেই কথা শুনে বললো সারারাত তোমরা জেগেই ছিলে?
সাগর বললো হ্যাঁ।।
একবার তোমার রুমে গিয়েছিলাম,গিয়ে দেখি তুমি তো গভীর ঘুমে মগ্ন।
সেজন্য আর ডাকি নি।
ভাবলাম আর ডিস্টার্ব করি না তোমাকে।
এমনিতেই আমি নাকি তোমাকে শুধু ডিস্টার্ব ই করি।
মোহনা তখন বললো সামিরা কখন এসেছে?
ও কি একাই এসেছে?
বাড়ির লোক কিছু বলে নি?
সাগর তখন বললো আমি মেনেজ করে নিয়েছি।
ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
একটু বাহিরে বের হতে হবে।
মোহনা তখন বললো কই যাবে?
সাগর বললো আজকেই যেহেতু বিয়ে তাহলে কিছু কেনাকাটা করতে হবে না?
ভাবছি দুইজন মিলেই যাবো।
তখন মোহনা বললো সামিরা এসেছে কখন সেটা আগে বলো?
আর এই সময়ের মধ্যে বিয়েও ঠিক করে ফেলেছো?
এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো?
সাগর তখন বললো বিয়ে তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়াই ভালো।
তাছাড়া আজকেই তো বিয়ের ডেট ছিলো।
যেহেতু সবাই জানে আজকেই সামিরার বিয়ে সেজন্য আর ডেট চেঞ্জ করে নি কেউ?
মোহনার কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না।।
এই কম সময়ের মধ্যে কি করে বিয়ের আয়োজন করছে তারা?
মোহনা তখন বললো সামিরাকেও সাথে নেই।
যেহেতু ওর বিয়ে তাহলে ওর চয়েজই সবকিছু কেনা হবে।
সাগর তখন বললো ঠিক বলেছো।
তাহলে ওকেও নিয়ে যাবো।
তুমি নিজে আগে রেডি হয়ে নাও।
আমি সামিরাকে রেডি হতে বলছি।
এই বলে সাগর চলে গেলো।
মোহনা সাগরের কথা শুনে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছে না।।
হচ্ছে টা কি?
মোহনা এসব ভাবছে আর রেডি হচ্ছে।
হঠাৎ সাগর এলো রুমে।
এসেই তাকে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো,এতোক্ষণ লাগে রেডি হতে?
মোহনা সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো আচ্ছা তুমি তোমার বাবা কে কি বললে?
ওনারা কিছুই বললো না?
সাগর তখন বললো বলেছি সামিরা ওর এক বান্ধুবীর বাসায় গিয়েছিলো।
ও ওর প্রেমিকের সাথে পালায় নি।
সেজন্য বাবা আর কিছু বলে নি।
ও যে ফিরে এসেছে,বাবার মানসম্মান ঠিক রেখেছে এতেই খুশি তিনি।
মোহনা তখন বললো আমাকে ডাক দিলে কি হতো?
আমাকে তোমরা কেউ ডাকো নি?
আর আমারও যে কি হয়েছিলো কাল?
এতো ঘুম কেনো আমার চোখে?
আর দেখো তুমি সারারাত জেগেই ছিলে?
সাগর তখন বললো কি করে আমি ঘুমাই বলো তো?
যেখানে বাবা মা সবাই জেগে আছে।
হঠাৎ সামিরা এলো রুমে।
সে যখন দেখলো সাগর মোহনাকে জড়িয়ে ধরে গল্প করছে তখন আবার বাহিরে গেলো।
এদিকে এরা দুইজন গল্প করতেই আছে।
কিছুক্ষন পর মোহনা সাগর কে বললো এভাবে ধরে থাকলে আমি রেডি হবো কেমনে?
ছাড়ো এখন।
সেই কথা শুনে সাগর মোহনাকে ছেড়ে দিলো।
মোহনা তখন আবার রেডি হতে লাগলো।
তখন সাগর বললো আমি বাহিরে গেলাম।
তুমি রেডি হয়ে এসো।
সাগর রুমের বাহিরে যেতেই দেখে সামিরা দাঁড়িয়ে আছে।
সামিরাকে দেখে সাগর বললো তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
রুমে যা।
সামিরা তখন বললো এখনি আসলাম।
সাগর সেই কথা শুনে সামিরাকে রুমে নিয়ে গেলো।
মোহনা সামিরাকে দেখামাত্র জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো তুমি ঠিক আছো তো সামিরা?
আর কখন এসেছো?
তুমি না কাল বললে সকালে রওনা দেবে?
সামিরা তখন বললো রাতেই রওনা দিয়েছি।
সেজন্য সকালে এসে পৌঁছেছি।
মোহনা তখন সামিরার শরীরে একটা টেলা দিয়ে বললো এখন খুশি তো?
কেমন লাগছে বিয়ের কথা শুনে?
সামিরা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো হ্যাঁ অনেক খুশি।
আর সবটা হয়েছে তোমার জন্য।
ধন্যবাদ ভাবি।
না না ভাবি না।।
ধন্যবাদ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
সাগর তখন বললো দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
কেনাকাটা করতেও তো সময় লাগবে।
আমার অনেক কাজ আছে কিন্তু।
মোহনা সে কথা শুনে বললো,
তাহলে তোমার যাওয়ার কি দরকার?
আমরা দুইজনই যাই।
তাছাড়া কেনাকাটা করতে যেমন সময় লাগে তেমনি ধৈর্যও লাগে।
তুমি থাকলে আমরা ঠিক করে কিছু কিনতে পারবো না।
সাগর তখন বললো আমাকে তো সেজন্যই তোমাদের সাথে যেতে হচ্ছে।
তা না হলে তোমরা এক ঘন্টার কাজ পাঁচ ঘন্টায় শেষ করবে।।
কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি এসো।
এই বলে সাগর মোহনা আর সামিরার হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে গেলো।
চলবে,,,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।
কেমন হচ্ছে গল্প অবশ্যই জানাবে।