ক্রাশ পর্ব -২০

#ক্রাশ
#পর্ব_২০
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
মোহনা অনেক চেষ্টা করেও সামিরার সাথে আলাদা করে কথা বলতে পারলো না।
কারন সাগর সবসময় তাদের সাথেই থাকলো।
সামিরা যদিও বলছে সব ঠিক আছে কিন্তু মোহনার কেনো জানি সবকিছু এলোমেলো লাগছে।
এতো কম সময়ের মধ্যে সাগর কি করে সব ম্যানেজ করলো?
তার বাবা আর দাদু এতো কড়া লোক তাদের কে কি করে এতো সহজে রাজি করালো?
মোহনার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না।

মোহনা একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বললো সামিরা দেখো তো এটা কেমন?
সামিরা মাথা নাড়লো।
কিন্তু কোন কথা বললো না।
সাগর তখন বললো সুন্দরই আছে।
এটাই তাহলে প্যাকেট করতে বলি।।
মোহনা তখন বললো আগেই প্যাকেট করতে বলো না আরো কয়েকটা দেখি।
দোকানদার সে কথা শুনে আরো কয়েক টা শাড়ি বের করে দিলো।
মোহনা শুধু উল্টাতেই আছে উল্টাতেই আছে।
সাগর তা দেখে বললো এতো দেখার কি আছে?
নাও তো যেকোন একটা।
হাতে সময় খুব কম।
মোহনা তখন বললো আমি শাড়ি চয়েচ করছি তুমি সামিরাকে নিয়ে জুতার দোকানে যাও।
সাগর তখন বললো একসাথেই যাই।
মোহনা বললো তুমি নিজেই তো তাড়াহুড়ো করছো।
সেজন্য ভাবলাম জুতা টা কেনা হয়ে গেলে আর থাকবে কসমেটিক কেনা।
তাড়াতাড়ি কাজ টা হয়ে যাবে না?
সাগর সেকথা শুনে সামিরাকে নিয়ে জুতার দোকানে গেলো।
সাগর যাওয়ার সাথেই মোহনা সামিরাকে একটা মেসেজ দিলো।

“সব ঠিক আছে তো সামিরা?
তোমার কি রনির সাথেই বিয়ে হচ্ছে?
আমাকে সত্যি টা বলো প্লিজ”
আমি তোমার মুখে আলাদা করে না শোনা পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছি না”

সামিরা কোন রিপ্লাই দিলো না।
মোহনা ভাবলো এভাবে হবে না।
তাই সে একটা কাগজে লিখলো।
আর কাগজ সহ কলম টা তার ব্যাগে রেখে দিলো।
সুযোগ বুঝে সামিরার হাতে দিয়ে দেবে।

হঠাৎ মোহনার ফোনে মেসেজ এলো।
সামিরা মেসেজ দিয়েছে যে সব ঠিক আছে।
তুমি এতো টেনশন করছো কেনো?
তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।
মোহনা মেসেজ টা দেখে এতোক্ষনে একটু শান্তি পেলো।
যাক তার ভয় টা কেটে গেলো।
মোহনা সেজন্য তাড়াতাড়ি করে শাড়ি টা প্যাকেট করতে বললো।
তারপর সাগর কে ফোন দিয়ে বললো কই তুমি?
আমার শাড়ি কেনা হয়ে গেছে।
সাগর সেকথা শুনে বললো তুমি ওখানেই থাকো আমরা আসছি।
মোহনা অপেক্ষা করতে লাগলো।

হঠাৎ মোহনার মনে হলো ব্যাগের ভিতর যে কাগজ টা সে রাখলো সেটা ছিঁড়ে ফেলতে হবে।
তা না হলে এটা যদি সাগরের চোখে পড়ে সে আবার মন খারাপ করবে।
মোহনা সেজন্য কাগজ টা ছিঁড়ে ফেললো।
কাগজ টা ফেলে দিতেই সামিরা আর সাগর এলো সেখানে।
সাগর এসেই মোহনাকে বললো তাড়াতাড়ি চলো।
বাড়ি যেতে হবে এখন?
মোহনা তখন বললো কেনো?
বাকি কেনাকাটা কখন করবে?
সাগর তখন বললো আমি আর সামিরা কসমেটিক কিনেছি।
আর কিছু কিনতে হবে না।
যা কিনেছি এটাই অনেক।
বাবা বার বার ফোন করে ডাকছে।
মোহনা বললো ঠিক আছে।
সামিরা তোমার কোন প্রবলেম নাই তো?
তুমি আর কিছু নেবে?
সে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো।
সাগর ওদের কে নিয়ে বাড়ি চলে গেলো।

বাড়িতে সবাই বিয়ে নিয়ে অনেক ব্যস্ত।
এতো কম সময়ে সব ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
এদিকে সামিরাকেও রেডি করানো হচ্ছে।
কারন পাত্রপক্ষ ইতোমধ্যে রওনা দিয়েছে।
মোহনা নিজেও রেডি হয়ে নিলো।
সাগর কে সে মার্কেট থেকে এসে একবারের জন্যও আর দেখলো না।
মোহনা রেডি হয়ে সাগর কে খুঁজতে লাগলো।

মোহনা দেখতে পেলো সাগর আর তার বাবা গল্প করছে।
সেজন্য মোহনা আর সাগর কে ডাকলো না।
সে সাগর কে একটা মেসেজ দিলো।
মোহনা দূর থেকে দেখলো সাগর মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আবার সেটা পকেটেই রেখে দিলো।
আর সামনের দিকে তাকালো।
মোহনা সাগরের তাকানো দেখে রুমের মধ্যে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর সাগর ও আসলো রুমের ভিতর।
সে রুমে এসেই দরজা লাগিয়ে দিলো।
আর বললো,
কি হয়েছে?
মেসেজ দিয়ে ডাকছো কেনো?
দেখছো না বাবার সাথে কথা বলছি?

মোহনা সে কথা শুনে বললো সারাক্ষন কি এই এক শার্ট পরেই থাকবে?
চেঞ্জ করবে না?
সাগর বললো আমি তো বাসা থেকে আর কোন শার্ট আনি নি।
মোহনা সে কথা শুনে বললো আগে গোসল করে এসো।
আমি তোমার জন্য নতুন শার্ট কিনেছি।
আমার এই শাড়ি টাও নিয়েছি।
দেখো তো কেমন হয়েছে?
সাগর এতোক্ষন খেয়ালই করে নি।
মোহনা তো শাড়ি পড়ে রেডিও হয়েছে।
সাগর তখন মোহনার কাছে গিয়ে বললো শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে ডাকতে গেছো আমাকে।
আগে ডাকলে কি হতো?
একসাথে গোসল করতাম।

মোহনা তখন বললো বাড়িভর্তি মানুষ।
আর তুমি আমার সাথে গোসল করতে চাচ্ছো?
তোমার সাহস দেখে সত্যি অবাক হচ্ছি।
সাগর সে কথা শুনে মোহনাকে জড়িয়ে ধরে বললো আমার সাহস নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে?
তাহলে সাহস টা দেখাই একটু।
মোহনা সাগরের কথা শুনে তাকে সরিয়ে দিলো।
আর বললো অনেক কষ্টে শাড়ি টা পড়েছি।
ওসব আজেবাজে চিন্তা মাথাতেও আনবে না খবরদার।
এই বলে মোহনা সাগর কে গোসলখানায় ঢুকিয়ে দিলো।
আর বাহিরে থেকে লক দিয়ে রাখলো।

সাগর বললো কি করছো?
বাহির থেকে লক দিলে কেনো?
মোহনা বললো তাহলে তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হও।
সাগর বললো ঠিক আছে করছি।
লক টা তো খোলো।
মোহনা বললো না।
তুমি আবার বের হয়ে শয়তানি শুরু করবে।
সাগর বললো করবো না।
সত্যি বলছি।
মোহনা বললো তোমাকে বিশ্বাস করি না আমি।
তুমি তাড়াতাড়ি গোসল করে বের হও।
তারপর খুলে দিবো।
সাগর সে কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে গোসল করছে।
এদিকে মোহনা সাগরের জন্য শার্ট আর প্যান্ট বের করে রাখলো।
আর সাগরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

হঠাৎ সাগর মোহনাকে আবার ডাক দিলো আর বললো বাথরুমে তোয়ালে নাই।
তোয়ালে টা দিয়ে যাও।
মোহনা বাহির থেকে উত্তর দিলো ভালো করে দেখো ওখানেই আছে।
সাগর বললো বলছি তো নাই।
মোহনা বললো রুমেও তো দেখছি না।
সাগর তখন বললো তাহলে তোমার একটা ওড়না দাও।
মোহনা সেই কথা শুনে তার একটা ওড়না নিয়ে গোসলখানার দরজার সামনে গেলো।
ছিটকিনি টা খুলতেই সাগর মোহনার হাত টেনে ধরলো।
মোহনা সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলো
আর বললো, কি করছো?
আমি রেডি হয়েছি।
প্লিজ ভিজে দিও না।
সাগর তখন বললো দিবো না।
কিন্তু আমার সাথে দুষ্টামি করার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।।
মোহনা বললো কি দুষ্টামি করলাম?
সাগর সেই কথা শুনে যেই মোহনাকে ভিতরে টেনে নিয়ে যাবে ঠিক সেই সময়ে তার খালাতো বোন আসলো।
সে ভাবি ভাবি করে ডাকতে লাগলো।

সাগর লিমার ডাক শুনে মোহনার হাত ছেড়ে দিলো।
মোহনা বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে বললো কি হয়েছে লিমা?
লিমা বললো সাগর ভাইয়া কই?
খালু ডাকছে।
মোহনা সে কথা শুনে লিমা কে বললো বাবাকে বলে দাও উনি গোসল করছেন।
কিছুক্ষন পরে যাবে।
লিমা সে কথা শুনে চলে গেলো।

সাগর লিমার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে এলো।।
আর ঝটপট রেডি হতে লাগলো।
সাগরের এতো তাড়াহুড়ো করা দেখে মোহনা হাসতে লাগলো।
আর বললো এখন কি হলো?
এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো?
এতোক্ষন তো খুব শয়তানি করলে?
এখন আমি যদি একটু শয়তানি করি কেমন হবে তখন?

সাগর মোহনার দিকে না তাকিয়ে রেডি হচ্ছে।
আর বলছে দাঁড়াও একটু আসছি।
এই বলে সে তাড়াতাড়ি করে বাহিরে চলে গেলো।

সাগর চলে যাওয়ার পর মোহনা বাথরুম থেকে সাগরের শার্ট প্যান্ট গুলো আনতে গেলো।
যেগুলো ওর পরনে ছিলো।
যেহেতু মোহনা আগেই গোসল করেছে সেজন্য এখন ধুতে পারবে না সে।
কিন্তু প্যান্ট হাতে নিতেই খেয়াল করলো ভারি লাগছে।
ভাবলো সাগর হয় তো ফোন নিতে ভুলে গিয়েছে।
তাই ফোনটা বের করলো।
কিন্তু একি?
এটা তো সাগরের ফোন না।
সামিরার ফোন সাগরের কাছে?
মোহনা মুহুর্তের মধ্যে শকড খেয়ে গেলো।
সাগর আবার মেসেজ টা দেখে নি তো?
যেটা সে সামিরাকে মার্কেটে গিয়ে পাঠিয়েছিলো।

মোহনা বুঝতে পারলো না কিছু?
সে অনেক কিছু ভেবে বসলো।
মোহনা তার মাথা খাটালো।
সে মনে মনে চিন্তা করলো এমনো তো হতে পারে যে সামিরা নিজেই মেসেজ টা দেখে নি।
আর উত্তর টাও সে দেয় নি।
কিন্তু সাগর কেনো উত্তর দেবে?
মোহনা আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।
দৌঁড়ে সামিরার রুমে গেলো।
কিন্তু ঘর ভর্তি মানুষের কারনে কিছুই বলতে পারলো না।
তাই মোহনা আবার তার রুমে চলে গেলো।
একটা কাগজে লিখলো তোমার কি রনির সাথেই বিয়ে হচ্ছে?
সত্যি টা আমাকে জানাও সামিরা।।
প্লিজ প্লিজ।
মোহনা কাগজ আর কলম টা নিয়ে সামিরার পাশে গিয়ে বসলো।
আর সেটা সামিরার কোমরে গুজিয়ে দিলো।
আর ফিসফিস করে বললো বাথরুমে গিয়ে দেখো।

সামিরা বুঝতে পারলো তার ভাবি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে।
সেজন্য তিনি বার বার এভাবে জিজ্ঞেস করছেন।
আর এখন কোমরে কি যেনো গুজিয়ে দিলেন।

সামিরা তখন তার মাকে বললো মা আমি একটু বাথরুমে যাবো।
এই বলে সামিরা বাথরুমে গেলো।
বাথরুমে গিয়ে কাগজ টা পরে সেখানে লিখলো,

ভাবি রনি কে বাবা আর ভাইয়া বেঁধে রেখেছে।
আমি যদি ওদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে না করি তাহলে রনিকে ওরা পুলিশে দেবে।
তুমি ভাইয়াকে প্লিজ বলো না যে তুমি সব জেনে গেছো।
তা না হলে বাবা কিন্তু ওকে মেরেই ফেলবে।
আমি চাই না আমার কারনে ও মারা যাক বা ওর কোন ক্ষতি হোক।
আর ভাইয়া তোমাকে মিথ্যা বলেছে।
ও চালাকি করে আমাকে ডেকে এনেছে।

সামিরা লেখা শেষ করে বললো ভাবি এদিকে একটু এসো তো?
আমার গলার মালা টা খুলে গেছে।
সামিরার মা সে কথা শুনে নিজেই এগিয়ে গেলেন আর বললেন বাথরুম থেকে আগে বের হ।
মোহনা এগিয়ে গিয়ে তার মালাটা লাগিয়ে দেওয়ার অভিনয় করলো।
যদিও মালাটা ঠিকই আছে।
কিন্তু তার মা সামনে থাকায় কিছু বলতে পারছে না।
সামিরা তখন কাগজটা চুপ করে মোহনার হাতে দিলো।
মোহনা সেটা তার কোমরে গুজিয়ে রাখলো।
আর সামিরাকে বললো বাথরুম থেকে বের হও।
আর মোহনা নিজে তাড়াতাড়ি করে তার রুমে চলে গেলো।

মোহনা তার রুমে গিয়ে আগে দরজা লাগিয়ে দিলো।
তারপর কাগজ টা পড়লো।
সে তো কাগজ টা পরে আকাশ থেকে পড়ে গেলো।
সাগর এতো বড় একটা বেঈমান সে ভাবতেই পারে নি।
তাকে মিথ্যা কথা বলে সামিরার ঠিকানা জেনে নিয়েছে।
মোহনা সাগরের সাথে এ নিয়ে পরে কথা বলবে।
তার আগে বিয়ে আটকাতে হবে।
আর সাগরের ফ্যামিলি কে এমন ভাবে অপদস্থ করবে যা তারা কল্পনাও করে নি কখনো।
তাদের মানসম্মান আজ সে নিজে হাতে শেষ করে দিবে।
শুধু শুধু মানসম্মানের ভয় দেখিয়ে সামিরার জীবন টা তারা শেষ করছে।
মোহনা নিজের জন্য একবার ও ভাবলো না।
তার যা হবে হোক।
তবে সাগর তার সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সেজন্য সে উচিত শিক্ষা পাবে।

এদিকে পাত্রপক্ষ এসে গেছে।
যদিও তেমন কেউ সাথে আসে নি।
মাত্র পাঁচজন এসেছে।

মোহনা একবার ভাবলো সাগর কে বলে দেখবে।
পরে আবার ভাবলো না এটা করা যাবে না।
রনি যেহেতু ওদের হাতে আছে।
তাছাড়া সামিরা তার ভাইকে বলতে নিষেধ করেছে।
তাকেই কিছু একটা করতে বলেছে।
কিন্তু মোহনা এই মুহুর্তে কি করতে পারে?
সে কি করে বিয়ে টা আটকাবে সেটাই ভাবতে লাগলো।

চলবে,,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here