ক্রাশ পর্ব -২১

#ক্রাশ
#পর্ব_২১
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
মোহনা সাগরের খালাতো বোন লিমাকে শরবতের একটা গ্লাস দিয়ে বললো এটা তোমাদের নতুন দুলাভাই কে দিও।
আর বাকিদের আমি দিচ্ছি।
কিন্তু ছেলেটি শরবতের গ্লাস টি নিজে না নিয়ে তার বড় চাচাকে দিয়ে দেয়।
মোহনা গ্লাসে ঘুমানোর ঔষধ দিয়েছিলো।
যাতে ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়ে।
আর বিয়ে টা অফ হয়ে যায়।
কিন্তু পাত্রের চাচা হঠাৎ এভাবে ঘুমানোর ফলে সবাই ডাকাডাকি করতে লাগলো।
কারন কিছুক্ষন পরেই বিয়ের কাজ শুরু হবে।
তিনি ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললেন তোমরা বিয়ের কাজ শুরু করে দাও।
আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজী এগিয়ে আসলো।
সাগরের দাদু আর তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।

মোহনা এখন কি করবে বুঝতে পারছে না।
এদিকে সাগর এর উপর সে আগেই আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
তাই ওকে আর কিছু বললো না সে।
সে হয় তো আবার তার সাথে অন্য কোন চালাকি করতে পারে।

মোহনা কোন উপাই না দেখে তার শশুর কে বললো বাবা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
তার শশুর সেই কথা শুনে বললো কি কথা?
তাড়াতাড়ি বলো।
মোহনা তখন বললো রুমে চলুন।
সবার সামনে বলা যাবে না।
সেই কথা শুনে মোহনার শশুর রুমে চলে গেলো।
সে চাইলে সবার সামনেই কথাটা বলতে পারতো।
কিন্তু তার শশুরের মানসম্মানের কথা ভেবে আড়ালেই এ নিয়ে আলোচনা করতে চাইলো।
যতই ওনার উপর সে রাগ করে থাকুক না কেনো হাজার হলেও শশুর তিনি।
মোহনা জানে এই কথা গুলো শোনার পর আজ অনেক কিছু হতে পারে।
ওনাদের বাড়িতে হয় তো তাকে আর উঠতেই দিবে না।
কিন্তু তবুও সে সাহস করে বলেই ফেললো,

বাবা,বিয়ে টা বন্ধ করুন প্লিজ।
এভাবে সামিরাকে জোর করে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারেন না আপনি?
ও সারাবছর কি করে এই অচেনা ছেলের সাথে কাটাবে?
ও রনিকে অনেক ভালোবাসে।
আর ওকেই বিয়ে করতে চায়।

সাগরের বাবা সে কথা শুনে হেসে উঠলো।
এই মেয়ে বলে কি করে?
তিনি তখন বললেন তোমার সাহস দেখে সত্যি অবাক হলাম!!!!
তুমি কোন শাসনে এই কথা টা বলছো আমাকে?
বাড়ির বউ তুমি,বউ এর মতো থাকো।
বড়দের সিদ্ধান্তে নাক গলাতে এসো না।
আমার মেয়েকে আমি কার সাথে বিয়ে দেবো সেটা বলার তুমি কে?

মোহনার ভীষণ রাগ হলো।
সে তখন বললো এটা ঠিক বলেছেন আমি সামিরার আপন কেউ নই।
ওর সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নাই।
আপনারা হলেন ওর আপনজন।
রক্তের সম্পর্ক আপনাদের।
ওর ভালোমন্দ আপনারা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।
কিন্তু আপনারা কেমন আপনজন যে মেয়েকে নিজের হাতে খুন করছেন?
যাকে নিয়ে সে সারাবছর হ্যাপি থাকবে তার কাছ থেকেই দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন?

সাগরের বাবা মোহনার কথা শুনে তাজ্জব লেগে গেলো।
এ কার সাথে তারা সাগরের বিয়ে দিয়েছে?
বড়দের মুখে মুখে তর্ক করছে?
এই মেয়ে যে তার বাড়ির বউ,তার একমাত্র ছেলের বউ।
তিনি ভাবতেই পারছেন না।
সাগরের বাবা সাগর কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।

সাগর তার বাবার ডাক শুনে দৌঁড়ে এলো।
আর বললো কি হয়েছে বাবা?
কি হয়েছে?
সাগরের বাবা তখন বললো,
তোর বউ আমাকে সামিরার বিয়ে আটকাতে বলছে।
এই মেয়ে এতো বড় সাহস কই পেলো?
এতো বড় স্পর্ধা এর হলো কি করে?

সাগর তার বাবার চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে গেলো।
সে মোহনাকে বললো,
কি আবোলতাবোল বকছো?
রুমে চলো।
এই বলে সে মোহনার হাত ধরলো।
মোহনা রাগ করে তার শশুড়ের সামনেই সাগরের হাত জোরে এক ঝাটকায় সরিয়ে দিলো।
আর বললো,
তোমার মতো একজন প্রতারক,বিশ্বাসঘাতক আর মিথ্যাবাদীর সাথে আমার কোন কথা নাই।
তুমি আমার সাথে কথা বলা তো দূরের কথা,
আমার ধারে কাছেও আসবে না।
সাগরের বাবা মোহনার এমন ব্যবহার দেখে বললো,
সাগর এই মেয়ে তোর সাথে এমন ব্যবহার করছে কেনো?
তুই ঠিক আছিস কি করে?
তুই কি ছেলে মানুষ না অন্যকিছু।
বউ তোকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলার সাহস কিভাবে পেলো?

সাগর তার বাবার কথা শুনে বললো মোহনা বাবার সামনে এসব কি বলছো?
ভদ্র ভাবে কথা বলো।
বড়দের রেসপেক্ট করতে শেখো।
মোহনা সাগরের কথার কোন উত্তর না দিয়ে তার শশুড় কে বললো,
বাবা আমার কথায় মন খারাপ করে থাকলে আমি সরি।
কিন্তু আপনারা সবাই আমাকে যাই বলুন না কেনো আমি কিছু মনে করবো না।
তবে সামিরার বিয়ে আমি রনি ব্যতীত আর কারো সাথে হতে দেবো না।

সাগর সেই কথা শুনে দৌঁড়ে সামিরার রুমে গেলো।
আর সামিরাকে সবার সামনে একটা চড় দিলো।
আর বললো,
বলেছিলাম না মোহনা কে বলবি না কিছু?
কেনো বলেছিস?
মোহনাও সাগরের পিছু পিছু সামিরার রুমে ঢুকলো।
আর সাগর কে সরিয়ে দিয়ে বললো,
ওকে মারছো কেনো?
ও কিছুই করে নি।
মারতে হলে আমাকে মারো।
যা করার আমি করছি?
সাগর তখন মোহনাকে বললো অনেক বেড়ে গেছো তুমি?
তোমার সাহস দেখে সত্যি আমি নিজেও অবাক হয়ে যাচ্ছি।
তোমাকে ভালোবাসি তার মানে এই না যে তোমার সব অপরাধ মাফ করে দেবো?
তুমি আমার পরিবারের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করছো কিন্তু।
এটা আমি কিছুতেই মানতে পারবো না।

মোহনা তখন বললো তোমার যা মন চায় করো তুমি।

সামিরা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো ভাবি তুমি আমার জন্য নিজেদের সম্পর্ক এভাবে নষ্ট করো না।
প্লিজ তোমরা থামো।
আমার যা হয় হবে।
তুমি এভাবে আর তর্ক করো না প্লিজ।

ইতোমধ্যে পুরো বাড়ি হইচড় শুরু হয়ে গেলো।
ছেলেপক্ষও সামিরার রিলেশনের কথা জেনে গেলো।
তারা যা নয় তাই বলে গালাগালি করলেন।
এবং মোহনাকে এর জন্য ধন্যবাদ দিলেন।
সে সত্যি টা বলে তাদেরকে অনেক বড় বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে।
পাত্রপক্ষ আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।
তারা সবাই চলে গেলো।

সামিরা শুধু কাঁদছে আর বলছে ভাবি তুমি এটা কি করলে?
এখন রনির কি হবে?
মোহনা তখন সবার সামনে বললো আপনারা সবাই সাক্ষী থাকলেন কিন্তু।
সামিরা আর রনির যদি কিছু হয় তাহলে বুঝবেন এরাই ওদের ক্ষতি করেছে।
এরপর নিশ্চয় সামিরার উপর এনারা অত্যাচার করবেন।
আর রনিকেও মারধর করবেন।
আপনারা প্লিজ কিছু একটা করুন।
মোহনার কথা শুনে সবাই ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো।
সাগরের ফ্যামিলির লোকদের বকাবকি করতে লাগলো।
মানুষ এতো খারাপ কেমনে হয়?
প্রেমিক কে বেঁধে রেখে প্রেমিকাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিচ্ছে।
তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে ছেড়ে দিন।
আর সামিরার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন।
সবাই তা নিয়ে চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলো।

সাগরের বাবা কল্পনাও করে নি এইরকম কিছু একটা হবে।
তিনি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
সাগরের দাদুও অবাক।
তিনি মোহনাকে বললেন তুমি যে আজ আমাদের মানসম্মান এভাবে নষ্ট করলে একবার ভেবে দেখেছো তোমার কি হবে?
তুমি নিজের জীবনের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনলে কিন্তু।

সাগরের বাবা তখন বললো,
বাবা তুমি এই অভদ্র মেয়ের সাথে কথা বলে নিজের মানসম্মান নষ্ট করো না।
ওর বাবা মাকে খবর দিয়েছি।
এসে মেয়েকে নিয়ে যাবে।
বিয়ের তিনমাস যেহেতু এখনো হয় নি এখন কোন ডিভোর্স দেওয়া যাবে না।
তিনমাস পরে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সামিরা সে কথা শুনে বললো,
বাবা কি বলছো এসব?
তোমরা আমাকে মেরে ফেলো তবুও এই কাজ করো না।
তোমার নিজের ছেলের জীবন এভাবে নষ্ট করো না।
সামিরার কথা শুনে তার বাবা বললো তুই কে রে?
আমাকে খবরদার বাবা বলে ডাকবি না।
তোর মতো আমার ছেলে এতো বেয়াদব না।
যে একটা থার্ড ক্লাস অভদ্র মেয়ের জন্য ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
ওর চেয়ে হাজারগুন ভালো মেয়ের সাথে আমি ওর বিয়ে দেবো
সামিরা সে কথা শুনে তার বাবার পায়ে পড়লো।
ওনার পা ধরে বললো,
ঠিক আছে বাবা আমাকে মেয়ে হিসেবে স্বীকার করো না।
তবে ভাই আর ভাবীকে আলাদা করো না প্লিজ।
আমার জন্য ওদের জীবন টা নষ্ট করো না।
সাগরের বাবা তার পা সরিয়ে নিলেন।
আর বললেন সবাই সবার রুমের ভিতর যাও।
শুধু এই বেয়াদব মেয়ে দুই টা যেনো ঘরে উঠতে না পারে।
ওরা ওদের ঠিকানা মতো চলে যাবে।
আমাদের পরিবারে এদের কোন জায়গা নাই।

সাগরের মা কাঁদতে কাঁদতে মোহনাকে বললো,
আমরা তোমার কি ক্ষতি করেছিলাম?
তুমি এভাবে আমাদের সর্বনাশ করলে কেনো?
মোহনা পাথরের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।
তবে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে অনবরত।
সে কোন উত্তর দিলো না।
সাগরের বাবা তখন বললো তুমি আবার কি শুরু করলে এসব?
তোমাদের মেয়ে মানুষের আজাইরা কান্দাকান্দি কিন্তু ভালো লাগে না আমার।
রুমে যাও বলছি।
আর সাগর তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
না ধরে নিবো আমার কোন সন্তানই নাই?
তুই যদি মনে করিস তোর বউ এর সাথেই থাকবি তাহলে চলে যা।
কারন আমার বাড়িতে এই মেয়ের আর জায়গা কোনদিনই হবে না।
এই মেয়েকে আমি আমার বাড়িতে আর দেখতে চাই না।

সাগর তখন তার বাবাকে বললো,
না বাবা।
তোমাদের সন্তান এখনো বেঁচে আছে।
যে আমাদের পরিবারের মানসম্মান এভাবে নষ্ট করলো সে কখনোই আমার নিজের কেউ হতে পারে না।
তোমরা রুমে যাও।
আমি পরে যাচ্ছি রুমে।
তবে তার আগে শুধু একবার কথা বলতে দাও ওর সাথে।
সেই কথা শুনে সাগরের বাবা রুমে চলে গেলো।

সাগর মোহনার কাছে এগিয়ে গেলো।
আর তার হাত ধরে বললো,
তুমি আমার সাথে আর থাকতে চাও না,আমাকে ভালো লাগছে না আর,সেগুলো নিজের মুখে বললেই তো হতো।
এতো নাটক করে আমাদের ভালোবাসাকে এভাবে শেষ করলে কেনো?
কি দরকার ছিলো এসব করার?
তুমি তো জানো বাবাকে সবার সামনে এভাবে অপমান করলে আমাদের সম্পর্ক টিকে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।
না তুমি এটাই চেয়েছিলে যে আমাদের সম্পর্ক টাই সারাজীবন এর জন্য শেষ হয়ে যাক।

মোহনা সে কথা শুনে তার হাত সরিয়ে নিলো আর বললো,
আমি কোন নাটক করি নি।
তুমি নিজেই চাও না আমাদের সম্পর্ক টা টিকে থাক।
সেজন্য তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছো।
আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো?
কেনো করলে এমন?
সামিরা তো পালিয়েই গিয়েছিলো।
তুমি কেনো আমাকে ব্যবহার করে ওর সাথে প্রতারণা করলে?
ওকে জোর করে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছো?
তুমি একবারের জন্যও ভাবলে না এটা করা অন্যায় হচ্ছে তোমার?
তোমার প্রতি আমার যে বিশ্বাস, আস্থা সব নষ্ট হয়ে যাবে।

সাগর তখন চিৎকার করে বললো,
তুমি রনির সম্পর্কে কি জানো?
আমি ওর খুঁটিনাটি সব জানি।।
ওর বাবা রিক্সা চালায়।
সে নিজেও একজন বেকার।
কোন কাজকর্ম নেই।
সারাদিন শুধু ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।
আমার বোন কে নিয়ে যে একটা আলাদা ঘরে থাকবে সেরকম রুমও নাই।
আমি এসব জেনেও কি করে সামিরার সাথে ওর বিয়ে দেই?
সামিরার এখনো তেমন বুদ্ধি হয় নি?
ও ভালোমন্দ কিছু বুঝতে পারছে না।
ও আবেগের জন্য এখন এসব পাগলামি করছে?
আমি জেনেবুঝে কি করে এটা মেনে নেই?
আমরা সবাই আরাম আয়েশে দিন পার করবো আর ও কেঁদে কেঁদে বেড়াবে?
আমি কি করে সেটা সহ্য করতাম?

মোহনা তখন সামিরার কাছে গেলো।
আর বললো,
তুমি রনির বিষয় এ এসব জানতে?
সামিরা মাথা নাড়িয়ে বললো হ্যাঁ।
আমি জেনেবুঝেই ওকে ভালোবেসেছি।
সাগর তখন রাগ করে বললো,
চুপ কর।।
এসব কে ভালোবাসা বলে না।
এটার নাম পাগলামি।
দুইদিন পর না খেয়ে পেরে ঠিক কাঁদতে কাঁদতে বাবার বাড়ি চলে আসতিস।
সামিরা তখন বললো,
যেদিন আসতাম সেই দিন যদি এই কথাগুলো বলতিস তাহলে ভালো হতো।
সাগর তখন বললো,
তোর যা মন চায় কর এখন।
বাবা তো তোকে মুক্ত করেই দিলো।
আর তোর রনিকেও বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
আমরা কেউ আর তোকে বাঁধা দিবো না।
তবে জীবনেও আর ওই মুখ দেখাবি না আমাদের।

সামিরা তখন বললো,
ঠিক আছে ভাইয়া।
তোরা যখন চাস না আমি তোদের সাথে আর সম্পর্ক রাখি তবে সেটাই হবে।

কিন্তু যাওয়ার আগে শুধু একটা কথা বলতে চাই তুই ভালোবাসার মানেই বুঝিস না।
কাউকে মন থেকে সত্যি সত্যি ভালোবাসলে তাকে ছেড়ে থাকা যায় না।
পুরো দুনিয়া একদিকে আর সে একাই অন্য আর দিকে।
রনিও আমার কাছে তেমন।
ও যেমন ই হোক,আর ওর কর্ম থাক বা না থাক আমি তবুও ওর সাথেই সারাজীবন থাকতে চাই।
আল্লাহর কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা আমার রনিই যেনো আমার ফাস্ট এবং লাস্ট ভালোবাসা হয়।
সে আমার ক্রাশ ছিলো আর থাকবেও সারাজীবন।

আর তোকে এসব বলে তো কোন লাভ নেই।
জীবনে কাউকে ভালোবাসিস নি তো?
সেজন্য এই ফিলিংস টা বোঝার ক্ষমতা তোর নেই।
তোর কপাল ভালো ছিলো বলে তুই ভাবির মতো একজন বউ পেয়েছিস।
যে তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
সেজন্য অন্যজনের ভালোবাসা হারানোর কষ্ট তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন নি।
কিন্তু ভাবির কি খারাপ কপাল?
অন্যের ভালোবাসার সম্পর্ক বাঁচাতে গিয়ে আজ নিজের সম্পর্ক শেষ করে ফেললো।
ভাবীর জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে।
কিন্তু যেখানে আমার কথার কোন মূল্যই নেই সেখানে কে শুনবে আমার কথা?
তবুও বলছি প্লিজ তোদের সম্পর্ক টা নষ্ট করিস না।
প্লিজ বাবাকে থামা।
বাবার সাথে তুই ও পাগলামি করিস না।
আর তোর মতো একজন ভালোবাসাহীন হৃদয়ের মানুষকে এসব বুঝেও কোন লাভ নেই।
তোর যা মন চায় সেটাই কর।

সাগর সে কথা শুনে সামিরাকে বললো,
বোন তুই কয় বছর ধরে রনিকে ভালোবাসিস?
একবছর?
না দুইবছর?
সামিরা বললো দেড় বছর।
সাগর সে কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো মাত্র দেড় বছর?
আর এতেই বুঝে গেছিস ভালোবাসা কি?
আবার আমাকেও ভালোবাসা শেখাচ্ছিস?

সাগর তখন মোহনার গা ধরে টেলা দিলো।
আর বললো,
আরে তুমি চুপ করে আছো কেনো?
তুমি কিছু বলো?
আমার ছোট বোন আমাকে ভালোবাসা শেখাচ্ছে?
সে আমাকে ভালোবাসার ফিলিংস বুঝাচ্ছে?
তুমিও ভালোবাসা নিয়ে কিছু বলো?
আমি তো কাউকে মন থেকে ভালোবাসি নি?
আমি কি করে ভালোবাসার মানে বুঝবো?
ভালোবাসার মানুষ কে ছাড়া যে থাকা অসম্ভব সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে নাকি?
সাগরের চোখ দিয়ে জল ঝরছে।
সে আর একটা কথাও বলতে পারলো না।
তার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না।

হঠাৎ সাগর মোহনাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
তুমি তো জানো আমি আমার পরিবারকে কত ভালোবাসি?
আমার বাবা মা আমার কারনে কষ্ট পাক সেটা কখনোই চাই না।
কিন্তু তোমাকে ছাড়া যে থাকতে পারবো না,
জীবিত থেকেও মৃত সেটা তো নিশ্চয় জানো?
আমাদের ভালোবাসার কথা যদি তুমি একবার ভাবতে তাহলে এতো বড় অন্যায় টা কিছুতেই করতে না।
মোহনা একটা কথাও বললো না।
কারন তার মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে।
তবে চোখের জল আর বাঁধা মানছে না।
অনবরত ছুটেই চলছে।

সাগর কে এভাবে কাঁদা দেখে সামিরা বললো,
ভাইয়া তুই মনে হয় ভাবিকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলছিস?
তা না হলে কাঁদছিস কেনো এভাবে?
মন থেকে ভালো না বাসলে চোখ দিয়ে জীবনেও পানি বের হবে না।

সাগর তখন বললো,
তুই ভুল ভাবছিস সামিরা।
এরকম কিছু ঘটে নি।
তোর ভাবীকে আমি একটুও ভালোবাসি না।
আমার মনে ওর কোন জায়গা নাই।
আমার চোখের পানিও মিথ্যা।
এমনি এমনি বের হচ্ছে।
আমি মিথ্যা অভিনয় করছি।
তোর ভাবিকে ডিভোর্স দিয়ে আবার নতুন আরেকটা বিয়ে করবো তো সেই আনন্দে কাঁদছি।
তাই না মোহনা?

চলবে,,,,,,,,
সবাই সবার মতামত অবশ্যয় জানাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here