#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৬
আনজানার আওয়াজ কানে বাড়ি খেতেই তার কাছপ ছুটে আসে আদ্র। ভয় পেয়ে যায় আনজানা। ভয়ের ঠেলায় দু’কদম পিছিয়ে যায় সে। আদ্র তার দিকে এগিয়ে আসে। দেওয়ালের সাথে ঠেকে মিশে যায় আনজানার শরীর। রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছে সে। আরো এগিয়ে আসে আদ্র। আনজানার কাছে এসে দু’হাত দিয়ে তার গাল স্পর্শ করে সে। ঠান্ডা শিহরণ বয়ে যায় আনজানার শরীরে। আদ্র কাছে আসতেই এক বাজখাঁই গন্ধ নাকে এসে লাগে আনজানার। মুখ পাঁচ এর মতো হয়ে যায়। আদ্রকে ধাক্কা দিয়েও সরিয়ে দিতে অক্ষম হয়। আদ্রর বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না। আনজানার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ তার দিকে ধরে আদ্র। চোখাচোখি হয় তাদের। আনজানার মুখ বিষাদে ছেয়ে যায় আদ্রর এমন অবস্থা দেখে। ফ্যাকাশে মুখে তার দিকে অবাকের চাহনিতে চেয়ে আছে সে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে। ঠোঁটযুগল শুখিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। রক্তিমলাল বর্ণের চোখজোড়া যেন স্বাক্ষী দিচ্ছে কতরাত নির্ঘুম পার করেছে! শার্টের বোতামগুলোও কেমন এলোমেলো করে লাগানো, উপরের বোতাম খোলা। এ যেন এক বিধ্বস্ত আদ্র।
–‘আমাকে ধ্বংস করে সিলেটের ট্রিপ খুব এনজয় করেছো হুম? ‘
আনজানার চোখের কোণে পানি এসে জড়ো হয় । বুঝতে পারে আদ্র তার শূন্যতায় কষ্টের পাহাড় জমাচ্ছিলো! চোখের পানি আদ্রর আড়াল করতে অন্যদিকে দৃষ্টি দেয় আনজানা। আদ্র দেখছে প্রাণ ভরে দেখছে তার প্রণয়িনী কে। আনজানার মুখে বোধ হয় কোনো নেশা মিশ্রিত আছে, যেই নেশার প্রতি গভীর আসক্তি রয়েছে আদ্রর!
আনজানার এলোমেলো চুলগুলোকে সযত্নে কানের পিঠে গুজে দেয় আদ্র। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে আনজানা। মুখ থেকে আওয়াজ বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আদ্র চুল গুঁজে দিচ্ছে এমন সময় তাঁর গালে টুপ করে কোনো তরল পরা অনুভব করে আনজানা। তার নিজ গালে হাত দিয়ে দেখে লাল তরল, তার হাতটা রঞ্জিত হয়ে যায়। চটজলদি আদ্র র হাতের দিকে তাকাতেই দেখে রক্তের বন্যা বয়ে চলছে! আদ্রর হাতটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে। রক্তের স্রোত বয়ে ফ্লোরে যেয়ে পরছে। ফ্লোরটাও রক্তে টইটম্বুর!
–‘আরে, রক্ত! আপনার হাতের একি অবস্থা হয়েছে? ‘
চিৎকার দিয়ে আনজানা বলে। ম্লান হাসি দেয় আদ্র।
–‘এভাবে কেউ নিজেকে আঘাত করে? পাগল মানুষ? থামেন’
আদ্রকে সরিয়ে দিয়ে রুমের বাহিরে যায় আনজানা। তার চিল্লাচিল্লিতে তাকে কিডন্যাপ করা লোকগুলো ছুটে আসে।
আতঙ্কিত হয়ে বলে,
–‘কি…কি হয়েছে? সব ঠিক আছে? আদ্র…
লোকটাকে বলতে না দিয়েই আনজানা বলে,
–‘নাহ, সব ঠিক নেই আদ্র নিজের হাতে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করে ফেলেছে । জলদি চলুন তাকে হসপিটালে নিতে হবে’
লোকটা আরো কয়জনকে নিয়ে ছুটে আসে আদ্রর কাছে। আনজানা আদ্রর কাছে যেতেই আদ্র টাল হয়ে তার কাছে আসে। এসেই জ্ঞান হারিয়ে আনজানার উপর ঢুলে পরে সে। আদ্রর বাহুদ্বয় শক্ত করে চেপে ধরে আনজানা।
—————-
বাসায় কেদে কেদে অস্থির আয়না। রাত হয়ে চলল তাও মেয়ের কোনো খোঁজ নেই। আনাজ একদিক সেদিক ছোটাছুটি করলেও বারবার তা ব্যর্থ প্রচেষ্টা হচ্ছে! থানায় গিয়ে আইনকে ব্যক্ত করলে তারা জানিয়েছে চব্বিশ ঘণ্টার আগে তারা কোনো একশান নিতে পারবে না।
আনজানার সব বান্ধবীকে ফোন করা হয়েছে। আনজানার ফোনে এখনো ট্রাই করা হচ্ছে। রিং হচ্ছে তবে উঠছে না। নম্বর ট্র্যাক করে লোকেশান বের করার চেষ্টা চালায় আনাজ। তার আগেই আনজানার নম্বর থেকে কল আসে। চটজলদি রিসিভ করে নেয় আনাজ৷ সবার আগ্রহী চাহনি আনাজে আবদ্ধ। আনাজ অস্থির হয়ে ‘হ্যালো’ বলতেই অপরপাশ থেকে ভেসে আসে…..
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৭
—‘মা একজন, গুরুতর আহত পেশেন্ট এসেছে, অবস্থা খুব খারাপ এক্ষুনি আমাকে যেতে হবে’
শার্টের উপর তড়িঘড়ি করে শুভ্র রঙের এপ্রোনটা পড়তে পড়তে বলে আনাজ। বিন্দুমাত্র সময় নেই আর।
—‘কিন্তু আনজু? ওর খোঁজ কে করবে? ‘
ভাঙা ভাঙা গলায় বলেন আয়না। ইয়ানারও চোখ দিয়ে রীতিমতো অশ্রুধারা বয়ে চলতে শুরু করেছে।
–‘মা তোমারই শুধু মেয়ে হারিয়ে যায়নি, আমারও একটা বোন হারিয়েছে। হ্যা, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি তাকে খুঁজে বের করার। তাই বলে তো এই নয়, তার জন্য একটা পেশেন্ট, চিকিৎসার অভাবে মারা যাক? লেট মি গো!’
বড় বড় পা ফেলে তরিৎ গতিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় আনাজ। আয়না বুঝতে পারেন, তার ছেলে ভুল কিছু বলে নি।
নিচের ড্রাইভারকে বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে আনাজ। প্রচন্ড তাড়া তার।সেখানের সহযোগী ডাক্তাররা সামলে নিচ্ছে তারপর আনাজ গেলে দেখে শুনে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হবে।
–‘ড্রাইভার ভাই, ফাস্ট চালান। টাইম নেই।’
–‘ঢাকা শহরের রাস্তা, এইখানে জলদি চলানো মুশকিল। সামনেই জ্যাম আইয়া পরবো’
–‘আপনি দেখেশুনে চালান।
আবার বেজে ওঠে আনাজের ফোন। চট করে রিসিভ করে অস্থিরতার সাথে বলে,
–‘হ্যা, কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো? শাহবাগের ওদিকে দেখেছো? ভার্সিটির আসেপাশে ঠিকমতো দেখেছো? মেয়েটার প্রতেকটা বান্ধবীকে কল করা হয়েছে। সবাই বলছে আনজানা একা গেছে। এখন কই যে গেলো…’
–‘আচ্ছা শুনো, তোমরা অফিসে যাও, আমি দেখছি’
মুখ থেকে চ এর মতো শব্দ করে ফোন কেটে দেয় আনাজ। মাথা কাজ করছে না তার। বারবার ভয় হচ্ছে আনজানাকে নিয়ে। মেয়েটা কিছু হলো না তো? কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায়।
ড্রাইভার পার্কিং লটে গাড়ি ফেরায়। ফটাফট নেমে যায় আনাজ। হাসপাতালের ভেতরে যেয়ে লিফ্টের বাটনটায় চাপ দেয়। মুহূর্তেই বেজে ওঠে তার ফোন রিসিভ করেই বলে,
–‘জ্বি, আমি চলে এসেছি। উপরে আসছি’
টুট করে লাইন কেটে দেয়। লিফ্ট নিচে আসলে জলদি পা বাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। কপালের কোনে বিন্দু বিন্দু নোনতা ঘাম চিক চিক করছে। হাতে থাকা সফ্ট ওয়াচটার দিকে পরখ করে নেয় সে। লিফ্ট চারতলায় উঠলেই নেমে যায় আনাজ। নার্সের কথায় ৪০৪ নম্বর রুমটাতে প্রবেশ করে সে। আনাজ যে রুমের দিকে যাচ্ছিলো সে রুমটার পাশেই ওয়েটিং সিটে বসে ছিলো আনজানা। ভাইয়াকে দেখতেই চটজলদি নিজেকে আড়াল করে নেয় সে। আনাজের তাড়া থাকায় ফটাফট রুমে প্রবেশ করে।
বাহিরের সিটে নির্জীব হয়ে বসে আছে আনজানা। মাথা ধরে আসছে তার। এরকম একটা পরিস্থিতি হবে, তা কখনোই কল্পনা করতে পারেনি। বারংবার তার চোখে ভেসে উঠছে আদ্রর কীর্তিকলাপগুলো। লাইক সিরিয়াসলি? একটা মানুষের প্রতি একজনের কতোটা এফেকসন থাকলে এভাবে পাগলামি রটিয়ে দিতে পারে? নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলছিলো আদ্র। বুক ভারী হয়ে আসে আনজানার। কাঁদতে ইচ্ছা করছে খুব। তবে, এটা হসপিটাল। জোরে জোরে কথা বলাও এলাউ নেই আর কাঁদা তো দূরেই থাক!
এক সময় মনে পড়ে যায়,ওহ তার তো একটা ফ্যামিলিও আছে! এতোক্ষণ আদ্রর প্রতি এতোটাই মত্ত হয়ে পড়েছিলো যে খেয়ালই নেই মা বাবাকে ফোন করার!
ফট করে ব্যাগ হাতড়িয়ে ফোনটা বের করে সে। ফোনটা পাওয়ার অফ করে রাখা। ছাৎ করে আৎকে উঠে সে। সবাই নিশ্চয়ই ফোন করে হয়রান হয়ে গেছে?
রিস্টার্ট দিতেই মাথা ঘুরে যায় তার। ফোনকলের নোটিফিকেশনে ফোনের স্ক্রিন সয়লাব! যেটার ভয় ছিলো সেটাই হলো। তবে সে মোটেও কাউকে বলতে চায় বা তাকে এভাবে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। নয়তো নিঃসন্দেহে বাবা আদ্রকে জেলের ভাত খাওয়াবেন। আর এটা মেটেও আনজানা চায় না। কাপা কাঁপা হাতে ফোন দেয় আয়না কে। সাথে সাথে রিসিভ করে নেন তিনি৷ এতোক্ষণ তো এটারই অপেক্ষার প্রহর গুণছিলেন। হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলেন,
–‘আনজু? মা তুই কই?’
গলা ভারী হয়ে আসে আনজানার। সামলে নিয়ে বলে।
—‘মা আমি ঠিক আছি, আর তুৃমি এভাবে কাঁদছো কেনো? আমার কিছু হয় নি তো। ফ্রেন্ড দের সাথে.এক..টু মজা করছিলা…
লাস্টের কথাটা জড়তা নিয়ে বলে আনজানা। তার কথা শেষ হতে না দিয়েই আয়না রাম ধমক দেন।
–‘চুপ! আজকাল একদম ফাজিল হয়ে গেছিস তুই। আমাদের একবার জানাবি না? বাসার সব কি অবস্থা জানিস? আর ফোন বন্ধ কেন ছিলো? কোন বান্ধবীর বাসায় ছিলি? তোর সব বান্ধবীর খোঁজ নেওয়া হয়েছে। সবাই বলছে তুই তাদের সাথে নেই? এই মেয়ে উত্তর দে….!’
চুপসে যায় আনজানা। মনে মনে আওড়ায়,
”যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়!’
–‘আ…আম্মু ওই অন্য একটা ফ্রেন্ডের সাথে গিয়েছিলাম, তোমরা ওকে চেনো না হয়তো। আর আমরা ওই পার্কের ওইদিকে ছিলাম।’
–‘বাসায় আয় ফাজিল! জলদি আয়। আমি সবাইকে জানিয়ে দেই, তোকে পাওয়া গেছে।’
রাগে গজগজ করলেও ভেতরে ভেতরে শান্তি লাগছে আয়নার। আফটার অল, মেয়েকে পাওয়া গেছে, যদিও সে নিজেই ধরা দিয়েছে! সবাইকে জানিয়ে দেন তিনি। প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইয়ানাও।
———-
মা বললেও বাসায় যেতে মন চাচ্ছে না আনজানার। থাকতে ইচ্ছে করছে খুব। আদ্র ছেলেটার হুশ ফিরলে আনজানাকে না পেয়ে আবার না জানি কি পাগলামি করে বসে! তবে, মায়ের জন্য এখনই যেতে হচ্ছে। রীতিমতো দ্বন্দ্বে ভুগছে সে!
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২৮
হ্যান্ড গ্লাভস গুলো খুলতে খুলতে বের হচ্ছে আনাজ। মুখে দুটো সর্জিক্যাল মাস্ক এখনো লাগানো আছে। অপারেশন করতে হয় নি তাকে। হাতের বিক্ষত অংশে ড্রেসিং করিয়ে দিয়েছে। আর কিছু চেক আপ করেছে। পেশেন্টের ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে সিটে দিকে এগোয় আনাজ। ভরকে যায় আনজানা। কাঁপাকাপি শুরু করে দেয় সে। হাত দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে নিজের চেহারাকে আড়াল করার। ভয়টা বেড়ে দ্বিগুণ! অন্যদিকে তাকালেও ব্যর্থ হয় সে। আনাজ তার সামনে আসতেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়! আনজানা নিজেকে অগোচর করতে ব্যর্থ হয়ে মাথা নিচু করে নতজানু হয়ে বসে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে, হৃদ স্পন্দন অতি বেগে স্পন্দিত হচ্ছে।
–‘আনজু তুই এখানে? ‘
(জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে আনাজ)
আনজানার কোনো রেসপন্স নেই। মাথা নিচে লরে বসে আছে সে।
ঠসসসস্! আনজানার গালে ঠাটিয়ে চড় বসিয়ে দেয় আনাজ। অবাকের দৃষ্টিতে তাকায় আনজানা। চোখ থেকে এক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরে। এটা কি সত্যিই তার ভাই? নাকি সে স্বপ্ন দেখছে? আজ পর্যন্ত আনজানার গায়ে হাত লাগায়নি আনাজ। তবে আাজ?!
–‘এই মেয়ে, তুই এখানে কি করছিস হ্যা? তুই জানিস বাড়ির সবাই তোকে না পেয়ে কেমন নাজেহাল হয়ে বসে আছে? ইউ নো হোয়াট, বিকাল থেকে সবাই কেমন পাগলের মতো তোকে খুঁজছি? আর ফোন ফোন অফ কেন হ্যা!???
গরগর করে আওড়িয়ে দেয় আনাজ। ম্লান হাসি দেয় আনজানা। ভেতরে ভেতরে কষ্টে পাথর হয়ে যাচ্ছে সে। একসময় চোখ দিয় স্রোতধারার ন্যায় উপচে উপচে কষ্টগুলো গড়িয়ে পরতে থাকে। আনাজ কে ধরে কান্না জুড়ে দেয় সে। নরম হয়ে যায় আনাজ। একটু বেশি করে ফেলেছে সে। অবশ্য, নিজের প্রিয় কিছু হারালে সবাই উন্মাদনায় মত্ত হয়ে যায়! তবে, আনজানার অবস্থাটাও জানা উচিত ছিলো তার। দু-হাত দিয়ে পরম অবলীলায় জড়িয়ে ধরে আনজানাকে। আনাজানা এখনো ছোট শিশুর মতো কান্না জুড়ে দিয়েছে। আনাজ টুপ তার করে কপালে চুমু খায়। শীতল কন্ঠে বলে,
–‘আম এক্সট্রিমলি সরি আনজুপাখি। তোকে না জেনে এভাবে হার্ট করা উচিত হয় নি আমার। কষ্ট হচ্ছে খুব। তবে, তোর ভাইটার কথাও একবার চিন্তা কর। তোকে না পেয়ে কি অবস্থা হয়েছিলো তার ভেবে দেখেছিস একটিবার?’
আরো জোড়ে কেঁদে দেয় আনজানা। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আনাজকে। এটাই হয়তো ভাইবোনের ভালোবাসা।
–‘সরি ভাইয়া, আমার এভাবে না জানানো ঠিক হয়নি’
হেঁচকি তুলে কাঁদছে সে। আনাজ তার চুলে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
–‘ছেলেটা কে? দেখ আমাকে যদি সত্যিসত্যিই ভাই মনে করে থাকিস, তাহলে মিথ্যে বলবি না।’
ঢোক গিলে আনজানা। তাহলে ধরা পরেই গিয়েছে। অবশ্য না পরেই বা থাকতো কতক্ষণ?
আমতা আমতা করে বলে,
–‘ভা…ভাইয়া তুমি যা ভাবছো মোটে…ও সেরকম কিছু না। ও জাস্ট ওজাস্ট আমার ফ্রেন্ড! ‘
–‘খুব সুন্দর করে মিথ্যে বললি!’
হাসি দিয়ে আনাজ বলে। আবার ঠোঁট যুগল প্রসারিত করে আনাজ।
–‘ তাহলে ছেলেটা আমার জান আমার জান বলে চিল্লাচ্ছিল কেনো?’
থতমত খেয়ে যায় আনজানা। ছেলেটা তার বারোটা বাজিয়ো ছারবে দেখছি! রাগ লাগে তার, অসম্ভব রাগ। ছেলেটা ইয়ানার প্রেস্টিজটাই খেয়ে দিয়েছে!
কি বলবে বুঝতে পারছে না আনজানা। আবারও নতজানু হয়ে বসে রইলো সে।
-‘তুই কি ছেলেটাকে ভালোবাসিস? ‘
–‘আ, হ্যা..না! ‘
কি বলবে বুঝতে পারছে না আনজানা। সত্যিটাও বলতে পারছে না। নতুবা আদ্রকে এখনি টুকরো টুকরো করে ফেলবে আনাজ।
–‘কি হ্যা না লাগিয়েছিস? ক্লিয়ারলি বলতে এতো লজ্জা করছে। নিজের ভাইকে একবার বলেও দেখলি না কাউকে ভালোবাসিস? কি করে ছেলেটা? দেখতে শুনতে তো ভালোই মনে হচ্ছে। তবে, তুই একটা ড্রিন্ক করা ছেলের সাথে এসব করতে পারলি? সো শেইম অন ইউ!’
মাথা তুলে ফট করে আনাজের দিকে তাকায় ইয়ানা। আনাজের দৃষ্টি স্বাভাবিক হলেও ভেতরে ভেতরে আবার রাগটা তীব্র হয়েছে।
–‘ভাইয়া তুমি যা ভাবছো, তা একদমই না। ট্রাস্ট মি। আর এসব ব্যাপারে তোমাকে পরে বলবো আগপ বলো আদ্র ঠিক আছে? ‘
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আনাজ।
–‘আজকাল ফ্যামিলির থেকে তোর ওই থার্ড ক্লাস মার্কা প্রেমিকই বেশি ইমপোর্টেন্স পাচ্ছে দেখছি? নিজের ফ্যামিলির দিকে ঘুরেও না দেখে তোর সো কলড্ প্রেমিকের পিছনে জান দিচ্ছিস? যাহ একটু দেখা করে আয়। সেন্স ফিরতেই সে জান জান বলে ভেবাচ্ছে। তুই না গেলে আবার হার্টবিট ঠিক থাকবে না। আবার আমার খাটনি। যা দেখা কর। আর হ্যা, তোর সো কলড্ প্রেমিককে এটাও বলবি যাতে ড্রিংক একটু কম করে। নাহলে নিঃসন্দেহে এর এফেক্ট তার বডিতে প্লাস তোর উপর পরবে। গট ইট? ‘
শেষের কথাটা আনজানাকে ঠেস মেরে বলে আনাজ। আনজানা অপপাত সহ্য করে নিচ্ছে। সব দিক থেকেই বিপদটা দারুনভাবে আক্রমণ করেছে। জলদি উঠে চোখের জলগুলো হাতের পিঠ দিয়ে মুছে নেয় সে। রাগ, ক্রোধ, ক্ষোভ এসব সম্মিলিতভাবে মনে আক্রমণ করছে তাকে। ধীরে ধীরে হসপিটালের রুমের ভেতরে যায় সে। পেছন পেছন যায় আনাজও।
আনজানা ভেতরে পৃরবেশ করতেই দেখে শুয়ে থাকা আদ্রকে। ধবধবে ফরসা হাতটায় ড্রেসিং করানো। মারাত্মকভাবে আঘাত লেগেছে হাতে। ঠোঁটের নিচ অংশেও খানিকটা কেটেছে। যার দরুন সেখানেও ব্যান্ডেজ।আস্তে আস্তে আদ্রর দিকে এগোয় সে। আদ্র আনজানার দিকে দৃষ্টি দিতেই থমকে যায় সে। উৎসুক চাহনি তার। আনজানার প্রতি। আনাজের ফোন বেজে উঠতেই বাহিরে চলে যায় সে। রুমের মধ্যে শুধু আনজানা আর আদ্র আছে। আদ্রর বেডের মাথার কাছে যেয়ে বসে আনজানা। আদ্র অবাক হচ্ছে। আনজানাকে তো এভাবে কোনোদিন কাছে আসতে দেখেনি! তাকে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে তার ঘন কালো চুলগুলোয় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয় আনজানা।
চলবে,,,
[