এক রক্তি ভালোবাসা পর্ব ১

লুঙ্গি পড়ে লুঙ্গি ড্যান্স লুঙ্গি ড্যান্স গানে উরাধুরা বেডের উপর নাচছে সিয়া এই মুহুর্তে তার হুশ নেই থাকবে কি করে পুরো এক বোতল মদ খেয়ে ফেলেছে সে।টেবিলের উপর মদ,সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে এখনো একটা জলন্ত সিগারেট টেবিলের উপর টিমটিম করে জ্বলছে।সিয়ার হুশ নেই তার সামনে বা আশেপাশে কেউ দাড়িয়ে আছে কিনা।সে তার মতো উরাধুরা নাচছে আর মাতালকন্ঠে পাগলের মতো বলছে।

-আরে ওই জরিনা বয়ফ্রেন্ড শুনে নে তুই আমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝে চড় মেরেছিস আবার সবার সামনে ব্রেকাপ বলে আরেকটা চড় মেরেছিস তাইনা দেখেনিস কাল তোরে সবার সামনে এক,দুই,তিন হ্যাঁ পাচঁটা চড় মারবো ওই লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স!(মাতাল কন্ঠে পাগলের মতো নাচতে নাচতে)

সিয়ার রুমের দরজা খোলা আর বাড়ির সকলেই সেখানে হা করে দাড়িয়ে আছে।এদিকে সিয়ার জন্য দেখতে আসা পাত্রপক্ষ হা করে চোখ বড় বড় করে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।পাত্রের মা চটে গেলেন রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন

-আমি এই মেয়েকে কিছুতেই কোনমতেই আমার বাড়ির বউ করবো না ছি ছি ছি পাত্রপক্ষদের ডেকে এনে মেয়ের মাতলামি দেখাচ্ছেন!(এই বলে পাত্রের মা পাত্রের হাত ধরে টানতে টানতে সপরিবারের বেরিয়ে গেলো)
এদিকে সিয়ার বাবা মিঃআদমান শায়রি রেগে ক্ষীর রাগী গলায় চিৎকার করে সিয়াকে বলে উঠলেন

“সিয়া তোমার সাহস হয় কি করে আমার বাড়িতে মদ খেয়ে এইসব পড়ে মাতলামি করার আজ তুমি আমার মান-সম্মান সব মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছো!এক্ষুনি বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।আমার বাড়ির মেয়ে হয়ে আমারি নিজের মেয়ে হয়ে তুমি এইরকম মদ-সিগারেট খাচ্ছো তাও আবার জোরে মিউজিক ছেড়ে নাচছোও!(অতি রাগী গলায়)

সিয়া ভরা চোখে ডুলুডুলু করতে করতে বেড থেকে এক লাফে নিচে নেমে আসলো আর তার বাবার সামনে গিয়ে চারদিকে উকিজুকি দিয়ে দেখলো যে পাত্রপক্ষ আরও আগে এখান থেকে কেটে পড়েছে।

সিয়া যুদ্ধজয় করা মাতাল হাসি দিয়ে একটানে লুঙ্গি খুলে ফেলল আর সেটা সযত্নে তার ছোট বোন লিয়ার হাত গুজে দিলো আর মিউজিক অফ করে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলো

-তোমরা কি ভেবেছো আমি মাতাল আমি মদ খাই আর সাথে সিগারেটও খাই আর সাথে কোন ছেলের সাথে প্রেম করে ছ্যাকা্ খেয়েছি আরে না না তুই বল লিয়া আজ পর্যন্ত কোন ছেলের দিকে রোমান্টিক আর ভালো নজরে তাকাইছি নাকি যেই ছেলে লাইন মারতে এসেছে তাকে পিটিয়ে হসপিটালের মেঝেতে ফেলে বিল পে করে আসছি।আর কি ভাবছিস আমি মদ-সিগারেট খাই আরে না না দেখ দেখ ভালো করে দেখ গ্লাসে ওটা কোকাকোলা আর ওইটা ওইটা সিগারেট না কাগজ।(বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো সিয়া)

মুহুর্তেই সবার হাত সবার মুখে পৌঁছালো।এ মেয়ে কি এত বড় নাটক করলো।মিসেস তমা শায়রি(সিয়া,লিয়ার আম্মু)কর্কশ গলায় বলে উঠলেন

-তাহলে এইসব করলি কেন অতোশত লোকের মাঝে আমাদের মাথা নিচু করার জন্য।(রাগী গলায়)
সিয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল।

-সবেমাত্র ক্লাস ১০ এ পড়ি আর তোমরা এখন আমার মতো একটা নিড়িহ পিচ্ছির সাথে একটা মহিষ(পাত্র)এর সাথে বিয়ে দিচ্ছো সেটা কি করে মেনে নিবে আমার সয়তান মনটা বলো তো আর কখনো শুনছো যে সুপোরি গাছে ঝড়বৃষ্টি ছাড়া ব্যাকা হয়ে যেতে।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
মিসেস তমা শায়রি ভাবুক দৃষ্টিতে বলে উঠলেন

-এই তুই সুপোরি গাছ বাকা হওয়ার কথা বলছিস কেন!
সিয়া চুল ঠিক করতে করতে বলল।

-কারন তোমরা তো সুপোরি গাছ তোমাদের মাথা তো নিচু হয়নি এখনি সোজাই আছে তাহলে বলো কেন যে তোমাদের মাথা আমি নিজ হাতে নিচু করসি!
মি:আদমান শায়রি আর পারলেন না তেড়ে সিয়ার দিকে এগোতেই সিয়া দৌড়ে বাড়ির বাহিরে চলে গেলো।
মি: আদমান শায়রি থেমে গেলেন সিয়া কি মনে করে আবার ফিরে আসলো এসেই এক দৌড়ে রুমে ডুকে কোকাকোলা বোতল হাতে নিয়ে আবার পুনরায় দৌড়ে বাড়ির বাহিরে চলে গেলো।এদিকে মিসেস তমা মেয়ের এই অবস্থা দেখে মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলেন

-এটা কি মেয়ে নাকি কোন জলজ্যান্ত এলিয়েন।
লিয়া ব্যাঙ্গ করতে করতে বলে উঠলো
-আম্মু এলিয়েনের চেয়েও কম না তুমি তো ওকে ডাস্টবিন থেকে কুরিয়ে পেয়েছো বলো হয়তো দেখো ওই হসপিটালে কোন এলিয়েন ডেলিভারী হয়েছে আর সে বাচ্চাটাকে লুকাতে ডাস্টবিনে রেখেছে পরবর্তীতে তুমি ওকে পেয়েছে মায়া লেগেছে তাই নিয়ে আসছো তাইনা!(ব্যাঙ্গ করে)
মিসেস তমা লিয়ার মাথায় আলতো ভাবে চড় মেরে বললেন
-চুপ কর নয়তো দেবো এক চড়।চল কিচেনে কাজ আছে।(বলেই মিসেস তমা একবার মি:আদমানের দিকে তাকিয়ে ছুট লাগিয়ে তাড়াহুড়ো করে কিচেনে চলে গেলেন)
___________________________

ভার্সিটির করিডোরে থাকা ব্যাঞ্চে বসে আছে সিয়া সাথে তার দলবল।

-দোস্ত শুনলাম কাল নাকি অদ্রিয়ান ভাইয়া তোকে চড় মেরেছে আর ব্রেকাপ করেছে।(লামিয়া)
-হুম আমি শুনেছি এ কথা তা তুই কিছু বলিস নি সিয়া?(মাইশা)

সিয়া ভাব নিয়ে বলে উঠলো।
-আজ আসুক না একবার ভার্সিটিতে ওকে এমন মজা দেখাবো না যে বুঝবে এই সিয়াশা শায়রি কি জিনিস?(ভাব নিয়ে)
বলেই কোকাকোলার বোতলে এক চুমুক দিলো সিয়া।
কিছুক্ষন পর–

-সিয়া দেখ ওই অদ্রিয়ান ভাইয়া আসছে।(লামিয়া)
সিয়ার একশান শুরু সে দাড়িয়ে গেলো খালি বোতলটা ধরে ফুটবলের মতো একটা লাথি দিলো আর সাথে সাথে ওটা অদ্রিয়ানের গায়ে গিয়ে পড়লো।গায়ের মধ্যে কিছু একটা পড়াতে চমকে উঠলো অদ্রিয়ান আশেপাশে তাকালো দেখলো সিয়া ফুল এ্যাটিটিউডে দাড়িয়ে আছে।অদ্রিয়ান সিয়ার ভাব দেখে বুঝে গেলো কাজটা তারই আমান বড় বড় পা ফেলে সিয়ার সামনে গেলো আর গিয়েই ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো।

-তোমার সাহস হয় কি করে আমার গায়ে নোংরা জিনিস ছুড়ে মারো?(রাগী গলায়)
সিয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল।

-এই লামু,মাইশা,আদিব,রিজান,তাসু তোরা কি দেখেছিস আমি এই লাভলি বোতলটা এই জাইআন্টের উপর ছুড়ে মেরেছি?(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
সাথে সাথে ওরা মাথা নাড়লো যার মানে না।সিয়ার এমন ভাব,ভঙ্গি দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো অদ্রিয়ান রাগী চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলে উঠলো।

-কি কি বললে আমি জাইআন্ট আমি দৈত্য একবার শুধু তোমায় একা পেয়ে নেই তারপর বোঝাবো আমি দৈত্য নাকি অন্য কিছু বজ্জাত লেডি(বলেই বড় বড় পা ফেলে রাগে ফোস ফোস করতে করতে অদ্রিয়ান চলে গেলো)

এদিকে অদ্রিয়ান যেতেই সিয়া সাথে তার বন্ধুবান্ধব জোরে জোরে হেসে উঠলো।

-ভাই ডোস টা একটু মজাই ছিলো কি অপমান টাই না করলাম!(সিয়া)
সবাই হাসলেও লামিয়া চুপ করে রইলো।পরক্ষনেই বলে উঠলো

-দেখ সিয়া অদ্রিয়ান ভাইয়াকে রাগানো ঠিক হয়নি এর শোধ ভাইয়া ঠিকই নিবে?(ভাবুক গলায়)
সিয়া হাসা বন্ধ করে মুচকি হেসে বলল।

-তোর মাথা ওই ক্রেজিজাইআন্ট করবেও বা কি যা গিয়ে দেখ দেয়ালে মুখে গুজে এই অপমানের জন্য ভ্যা ভ্যা করে কাদঁছে(বলেই হাসা ধরলো সিয়া)
লামিয়া সিয়ার কথা শুনে মনে মনে বলে উঠলো।
“অদ্রিয়ান ভাইয়া যখন তোমায় এক্সট্রা ডোস দিবে তখন বুঝবে মজা কাকে বলে হেসে নাও যত পারো হেসে নাও যখন বাঘের গুহায় আটকাবে না তখন ব্যাঙের মতো লাফাবে তবুও ছাড় পাবে না হুহহ্(মনে মনে বলে ভেংচি কাটলো লামিয়া)
____________________________
ফাকাঁ একটা গলি দিয়ে হেটে যাচ্ছে সিয়া‌।হর্ঠাই কারো টানে দেয়ালে গিয়ে বারি খেলো সিয়াশা।সাথে সাথে আউচচ করে উঠলো সে হাতের কনুইয়ে দেয়ালের সাথে খুব জোর বারি খেয়েছে সে সাথে পিঠেও। সিয়া চমকালো সাথে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সামনে তাকালো দেখলো অদ্রিয়ান এক হাত পকেটে গুজে আরেক হাত দেয়ালে দিয়ে তার দিকে একটু জুকে আছে।এটা দেখে সিয়া দেয়ালের সাথে আরও মিশে গেলো ভয়ে ভয়ে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠলো।

-অ্ অদ্রিয়ান প্লিজ দূরে স্ সরু্ সরুন!(কাপাঁ কাপাঁ গলায়)
অদ্রিয়ান সরলো না বরং সিয়ার দিকে আরেকটু জুকে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো।

-সেইসময় কাকে জানি জাইআন্ট বলছিলে তাও আবার ক্রেজিজাইআন্ট।তোমার সাহস হয় কি করে আমায় রাগীদৈত্য বলার!(গম্ভীর গলায়)
সিয়া কাপাঁ কাপাঁ চোখে একবার অদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো অদ্রিয়ান সিয়ার থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বলল।

চলবে,,,

#এক_রক্তি_ভালোবাসা
#Part_1
#Writer_রুবাইতা_রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here