#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৮_৯
আমি কি কোন কল্পনা দেখছি না এইটা কোন সত্যি। নাকি ঘুমের ঘোরে আছি,এ আমি কাকে দেখছি!!
কে এই মেয়েটি?আমার সামনে চুল আঁচড়াছে।একদম ঘন কালো চুল,কুমোরের নিচ পর্যন্ত পরছে,চুলগুলো হালকা কুঁকড়ানো দেখেই মন জুড়িয়ে যাচ্ছে।বরাবরই আমার লম্বা চুল পছন্দ। তার পরনে নীল শাড়ি। পিছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে কোন অপ্সরী যে তার সামনে তার পছন্দের শাড়ি পরে খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছে।তার মনের ভিতরে অজানা অনুভূতি কাজ করছে। মনের মাঝে এক ধরনের কৌতূহল কাজ করছে এই রমনীর পরিচয় জানার জন্য। তাকে জানতে হবে কে এই মেয়ে?
তাই কিছু না ভেবেই প্রশ্ন করে,” এই আপনি কে আর আমার রুমেই বা কি করছেন?”
আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতা রিতিমত অবাক হয়ে যায়। বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।
অদ্রিতাকে দেখা মাএই আমি রাগে চোখ বন্ধ করে ফেলি।একটু আগেই তাকে দেখে মনে হলো আমার সামনে অনেক সুন্দরী রমনী দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাকে দেখা মাএই মুহূর্তেই আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো।
অদ্রিতা ভয়ে ভয়ে বলে আমি আপনার স্ত্রী অদ্রিতা। এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন নাকি!
আরিয়ান আশাহত হলো। কাপাল কুঁচকে গেলো তার। গম্ভীর স্বরে বললো,”তোমাকে আমি কি করে ভুলতে পারি। তোমার জন্যই তো আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল।থাক সকাল সকাল তোমার সাথে কথা বলে আমার দিনটা নষ্ট করতে চাই না।আমি এখন ঘুমাবো। আমাকে এখন আর ডিস্টার্ব করবে না।”এই বলে সে আবার ঘুমিয়ে যায়।
অন্যদিকে আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতার মন খারাপ হয়ে যায়।চুল বেঁধে সোজা রান্না ঘরে চলে যায়।রান্না ঘরে যেতেই দেখে মাঝবয়সী এক মহিলা রান্না করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অদ্রিতা গিয়ে তাকে বলে,”খালাম্মা আজ আমি রান্না করবো আপনি শুধু দেখিয়ে দেন কোথায় কি রাখা আছে।”
আপনি বাড়ির নতুন বউ, আপনাকে দিয়ে রান্না করালে ম্যাডাম আমাকে পরে বকবে আর তাড়াছাড়া এত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে গেলেন কেন? গিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন রান্না শেষ হলে আমি সবাইকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসবো।
আমি সবসময় সকালেই ঘুম থেকে উঠি আর আমি আপনার মেয়ের বয়সী তাই আমাকে আপনি না বলে তুমি করে বলবেন।আর আজ আমি সব কিছু রান্না করবো আপনি শুধু বলে দিন কোথায় কি আছে।বউমনি তুমি সত্যিই অনেক ভালো। স্যার ঠিক বলেছেন তোমার মতো মেয়ে হয় না।দেখবেন আরিয়ান বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসবে।
আমি ওনার কথা শুনে শুধু মুসকি হাসি দিলাম।( ওনী তো আমাকে সহ্যই করতে পারেন না, কালো বলে সবসময় আমাকে অপমান করেন আবার ওনী আমাকে ভালোবাসবেন এইটা কোনদিনও হয়তো সম্ভব নয় মনে মনেই এই কথা গুলো ভাবলো অদ্রিতা)সবাই উঠার আগেই সকাল সকাল সব রান্না প্রায় শেষ করে ফেলে।
অদ্রিতা আবার এইসব খুব ভালোই পারে। কলেজ যেইদিন অফ থাকতো সেই দিন সে সবার জন্য নিজের হাতে রান্না করতো।তার বাবা তার রান্না অনেক পছন্দ করতো কিন্তু আজ সে যাদের জন্য রান্না করছে তারা হয়তো তাকে উপহাস করবে। কালো বলে অপমান করবে।মেয়েদের জীবনই হয়তো এমনই। যেখানে সে নিজের বাপের বাড়িতে রাজকন্যার মতো থাকে কিন্তু বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ীতে দাসীর মতো থাকতে হয়।
যেখানে তাকে কিছু না হতেই কথা শুনতে হয়।কালো বলে তার স্বামীর কাছে তার কোন মূল্য নেই। তার সাথে সব সময় খারাপ ব্যবহার করে। কোন কারণ ছাড়াই সব সময় অপমান করে।এইসব ভেবে তার মনের ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
এই সব কিছুই সে মেনে নিয়েছে।তাই এইসব না ভেবে সে আবার রান্নায় মন দেয়। ওর রান্নার হাত অনেক ভালো কারণও হয়তো তার এই কালো হওয়া।সে কালো বলেই তার বন্ধু- বান্ধব কম ছিল।তাই সে এত ঘুরাঘুরি,পার্টি,শপিং এই সব থেকে দূরে থাকতো।কলেজ অফ থাকলে সারাদিন বাড়িতে থাকতো মাকে কাজে হেল্প করতো,ছোট ভাই বোনকে পড়াতো আর আল্লাহর ইবাদাত করতো।
রান্না প্রায় শেষ এই সময় পিঠে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয়ে পেয়ে যায়।
.
.
.
চলবে…….
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৯
পিঠে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার শ্বাশুড়ি মা।
ওনাকে দেখে মুচকি হেসে বলি, “আসসালামু আলাইকুম মা।মা আপনি এত সকালে কেন উঠেছেন? কিছু লাগবে।”
ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমার কিছু লাগবে না। আর তুমি এতো সকালে রান্নাঘরে কি করো?সালমা কোথায়?? ওই তো প্রতিদিন সকালে রান্না করে। এই বলে তিনি তাকে ডাক দেন।
এই সালমা এইদিকে আয়……
ম্যাডাম আমি তো ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিলাম।
আমার শ্বাশুড়ি একটু রেগে বলে, “তোর কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই নতুন বউকে রান্না করতে দিয়ে চলে গেছট্।”
অদ্রিতা ইসস্তত করে বলে,” না মা মানে আমিই রান্না করতে চেয়েছি।আমার রান্না করতে ভালো লাগে তো তাই,খালা তো না করছিল কিন্তু আমিই জোর করে ওনাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।মা আজ থেকে আমিই রান্না করতে চাই, আপনি শুধু বলে দিবেন কি রান্না করতে হবে, আমি সব করে দিব।প্লিজ মা না করবেন না।(ভয়ে ভয়ে কথা গুলো বললো অদ্রিতা)”
অদ্রিতার কথা শুনে তার শ্বাশুড়ি সালমাকে বলে,”তুই যা।গিয়ে রুম পরিস্কার কর আর তোর স্যারকে গিয়ে রুমে চা দিয়ে আয়।”সালমাকে এই কথা গুলো শুনে কিছু না বলে চলে যায়। সালমা চলে যাওয়ার পরে তিনি অদ্রিতাকে বলেন এত ভয় পাওয়ার কি আছে। এটা এখন তোমারও সংসার যা তোমার ভালো লাগে করবে।তোমার মতো মেয়েকেই তো সবাই ছেলের বউ হিসেবে চায়।আল্লার কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া তিনি আমাদের মনের মতোন বউ দিয়েছেন।
অদ্রিতা অনেকটা অবাক হলো তার শ্বাশুড়ির আচরনের। সব সময় তো এটাই শুনে আসছে শ্বাশুড়িরা শুধু বউয়ের খুঁট ধরে। একটু ভুল হলেই কথা শুনাতে ছাড়ে না।তাছাড়া ও তো সুন্দর না কালো ওনার ছেলের সাথে তাকে একদম মানায় না।তিনিও তো হয়তো আশা করেছেন কোন সুন্দরী মেয়েকে ওনার ছেলের বউ করবেন। তবুও তাকে কিছু বলছে না উল্টো তার প্রশংসা করছেন।সত্যিই আমার ভাগ্যটা অনেক ভালো, না হলে কি এত ভালো শ্বাশুড়ি পেতাম। খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে।
অদ্রিতার চোখে পানি দেখে ওর শ্বাশুড়ি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,”তুমি কাঁদছো কেন? কিছু হয়েছে?”
অদ্রিতা এক হাতে চোখের পানি মুছে বলে না মা কিছু হয়নি। এইটা তো সুখের কান্না।মা আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমি কি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
হ্যা করো,,,
ওনী তো কতো সুন্দর আর আমি কালো তবুও আপনি আর বাবা আমাকে ওনার জন্য কেন পছন্দ করলেন।আমাকে কি আপনার সত্যিই পছন্দ হয়েছে?
সত্যি বলতে কি আমারও তোমাকে প্রথম পছন্দ হয়নি নি।আমিও চাইছিলাম আমার ছেলের সাথে কোন সুন্দরী মেয়ের বিয়ে দিতে। তাই তিনি যখন তোমাকে দেখার পর এইটা বলে যে তোমাকে এই বাড়ীর বউ করে নিয়ে আসবে এইটা আমিও মানতে পারি নি।তাই তো বাড়িতে এসেই এই নিয়ে ওনার সাথে কথা বলি। আমি আর আরিয়ান কিছুতেই তোমাকে এই বাড়ির বউ করতে রাজি ছিলাম না।কিন্তু ওনী আমাকে তোমার কিছু কথা বলে যা অনেক মূল্যবান ছিল।তাছাড়া তোমার গায়ের রঙটাই শুধু একটু কালো অন্য সব দিক দিয়ে তুমি একদম পারফেক্ট। মানুষ মহান আল্লাহর সৃষ্টি। তিনিই কাউকে সাদা তো কাউকে কালো বানিয়েছেন। তো এই সাদা – কালোর ভেদাভেদ করার আমরা কে?মানুষের মাঝে মূল্যবোধতাই আসল। আর তুমি মানুষকে মানুষ বলে মূল্যায়ন করতে পারো। তোমার মাঝে সবাইকে আপন করে নেওয়ার গুণ আছে। খুব নম্র- ভদ্র একটি মেয়ে, বড়দের সম্মান করো এর থেকে বেশি আর কি চাই।
অদ্রিতার চোখে পানি এসে গেছে। আমি অনেক ভাগ্যবতী যে আপনার মতো একজন শ্বাশুড়ি পেয়েছি।আমার আর কিছু চাই না।
তিনি কিছুটা অভিমানী কন্ঠে বললেন,” হুমম, আমি তো শুধুই তোমার শ্বাশুড়ি। আমাকে কি তোমার মা ভাবা যায় না।যদি আমাকে তোমার মা ভাবতে তবে কিছুতেই আমাকে তুমি আপনি করে বলতে পারতে না।”
অদ্রিতা কাঁদতে কাঁদতে তাকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে, “তুমি তো আমার মাই। আর তুমিও আমাকে তুই করে বলবে।মা মুখ থেকে তুই ডাক শুনতে অনেক ভালো লাগে।” অদ্রিতা আজ অনেক খুশি। তার পরিবারের পর আরও দুইজন মানুষ পেয়েছে যারা তার কালো হওয়াটাকে কোন সমস্যা মনে করে না।সে যেমন তাকে সেভাবেই ভালোবাসে।কিন্তু তবুও মনের ভিতর একটা কষ্ট রয়ে গেছে। আরিয়ান যে তাকে মেনে নিতে পারছে না।আদৌও কি আরিয়ান তাকে মেনে নিবে! মনে মনে এইসব ভাবছে সে।
ঠিক আছে।রান্না তো শেষই। তুই গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে আর আরিয়ানকে ও ডেকে নিয়ে আয় সালমা টেবিলে খাবার রেখে আসবে।
আমিই খাবারগুলো টেবিলে রাখছি। খালাকে বলছি ওনাকে ডেকে নিয়ে আসতে।
নতুন বউ কই সব সময় স্বামীর আশে-পাশে থাকবি। তুই তো দেখছি এখন থেকেই দূরে দূরে থাকছিস্।কি হয়েছে?আরিয়ান কি তোকে এখনো মেনে নেয়নি, সে কি তোকে কিছু বলেছে। আমাকে বল্,,,
না মা ওনী আমাকে কিছু বলেনি। আমি এক্ষনি ওনাকে ডেকে নিয়ে আসছি।এই বলে সে ভয়ে ভয়ে যায় আরিয়ানকে ডেকে নিয়ে আসতে। এখন ওনাকে ডাক দিলে আবার কি যেন বলেন মনে মনেই এই কথা গুলো ভাবছে আর রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,,,,
.
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১০_১১
অদ্রিতা রুমে ঢুকে দেখে আরিয়ান এখনো ঘুমাচ্ছে তাই সে তাকে কয়েক বার ডাক দেয় কিন্তু আরিয়ান তবুও উঠে না।সে তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে ডাক দিতে চায় কিন্তু পরক্ষনেই তার রাতের কথা মনে পরে যায়। তাই কোন উপায় না পেয়ে সে আরিয়ানের মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে দেয় আর তাতে তার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম থেকে উঠে অদ্রিতার হাতে পানির জগ দেখতে পায় সে বুঝতে পারে তাকে জাগানোর জন্যই হয়তো তার মুখে পানি দিয়েছে।আরিয়ানের তাকানো দেখেই অদ্রিতা মনে মনে ভয় পেয়ে যায় এইবার জানি ওনী কি করেন? কিছুটা ভয়ে ভয়েই বলে,” মা আমাদের ফ্রেস হয়ে নিচে যেতে বলেছে একসাথে আর আপনাকে অনেকবার ডাকার পরেও উঠেন নি তাই বাধ্য হয়েই মুখে পানি দিয়েছি।”
আরিয়ান উঠে দাঁড়ায় এবং অদ্রিতাকে কিছু না বলেই সে ওয়াশরুমে চলে যায়। আরিয়ানের এই আচরণে অদ্রিতা কিছুটা অবাক হয়ে যায়।তাই সে যেখানে ছিল সেইখানেই ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।
এরই মধ্যে আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে চলে আসে আর অদ্রিতাকে ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হয়।
আরিয়ান শুধু টয়ালে পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে তা দেখে অদ্রিতা লজ্জায় মাথানিচু করে ফেলে।
আরিয়ান তা বুঝতে পেয়ে একটু রেগে গম্ভীর স্বরে বলে এখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাকাও আমার দিকে,,,যত্তসব।মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই। জানোই তো ফ্রেস হয়ে আসছি যখন কাপড় চেঞ্জ করবো আর তুমি খাম্বার মতো এখনো দাঁড়িয়ে আছো। এখন কি তোমার সামনে কাপড় চেঞ্জ করবো নাকি!তোমার ভিতরে কি সামান্য কমনসেন্স টুকুও নেই।
আরিয়ানের বকা শুনে সে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসে। তার অনেক খারাপ লাগছে আরিয়ানের কথাগুলো শুনে। তাকে এইভাবে না বললেও পারতো।বিয়ের রাত থেকেই তার সাথে যখন কথা বলেছে সবসময় শুধু অপমান করেছে। তার থেকে বিয়েটা না করলেই তো পারতো। আমিও তো একটা মানুষ আমারও যে কষ্ট হয় তা কেন বুঝতে পারে না?
আরিয়ান বাহিরে এসে দেখে অদ্রিতা গভীর ভাবে কি যেন চিন্তা করছে আর শাড়ীর আঁচল হাতের আঙ্গুলে পেচাচ্ছে, সে চলে যাচ্ছে তবুও তার কোন খেয়াল নেই। তাই সে আবারও তাকে ধমক দিয়ে বলে,” এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?কি এত ভাবছো যে কোন কিছুর খেয়াল নেই। নিচে যাবে না নাকি।না এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।”
আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতা অপরাধের স্বরে বলে না মানে।
আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,” না মানে কি? তাড়াতাড়ি চলো।”এই বলে অদ্রিতাকে রেখেই সে নিচে চলে যায় আর অদ্রিতা তার পিছু পিছু নিচে যায়।টেবিলের সামনে এসেই দেখে সব খাবার গুলো টেবিলে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়ে গেছে আর তার শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি খাবার টেবিলে তাদের জন্য ওয়েট করছে।তাই এসেই সবার আগে সে তার শ্বশুরকে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম, বাবা।”
ওয়ালাইকুম আসসালামু,কেমন আছো তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ বাবা, আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ।আরিয়ান বস আর বউমা তুমিও বসো।আজকে সবাই একসাথে খাবো।
তার শ্বশুরের কথা শুনে সে কিছু না বলে চুপচাপ সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে সে নিজেও টেবিলে বসে পরে।সবাই যার যার মতো খেয়ে যাচ্ছে কোন কথা বলছে না আর এইদিকে অদ্রিতা কোন কিছু খেতে পারছে না ভয়ে।যদি রান্না ভালো না হয় তবে!
খাওয়া শেষ হলে তার শ্বশুর বলে,”আজ সালমাকে কিছু পুরস্কার দিকে হবে। অনেক দিন পরে এমন রান্না খাচ্ছি।একদম আমার মায়ের হাতের রান্নার মতো।আমার মনটা ভরে গেছে। ”
আরিয়ানের মা হেসে বলে, “পুরস্কার দিতে হলে তোমার বউমাকে দাও। আজকে সকাল সকাল উঠে নিজের হাতে সে সব রান্না করেছে। সালমা কিছু করে নি।”
তাই তো বলি আজকে রান্নার স্বাদ অন্য রকম কেন? আমি অদ্রিতাকে প্রথম দেখেই বুঝেছি ও অনেক ভালো ও সাংসারিক তাই তো আমার একমাএ ছেলের বউ করে এনেছি।পরে অদ্রিতাকে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি খুশি তো আমার ছেলের বউ হয়ে?”
অদ্রিতা কিছুক্ষন আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে পরে বলে হ্যাঁ বাবা,আমি অনেক খুশি।
খাওয়া শেষ হলে রুমে যাওয়ার সময় তিনি অদ্রিতাকে বলেন একটু পরে পার্লার থেকে মেয়ে আসবে তোমাকে সাজানোর জন্য আর বৌভাতের অনুষ্ঠানের জন্য বাড়িতে মেহমান আসতে শুরু করবে তাই আর রেস্ট নেওয়ার সময় পাবে না,এখনি গিয়ে রেস্ট নিয়ে নাও।
খাওয়া শেষ হতেই আরিয়ান রুমে চলে যায় আর অদ্রিতা সব কিছু গুছিয়ে পরে রুমে যায়।
.
.
.
চলবে…….
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১১
খাওয়া শেষ হতেই আরিয়ান রুমে চলে যায় আর অদ্রিতা সব কিছু গুছিয়ে পরে রুমে গিয়ে দেখে আরিয়ান খাটে শুয়ে আছে আর শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে,তাই সে গিয়ে শোফার উপর শুয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নেয়। প্রায় আধাঘন্টা রেস্ট নেওয়ার পরে দরজায় করো নক করার শব্দ শুনতে পায়।
অদ্রিতা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারে তারা হয়তো তাকে সাজানোর জন্য এসেছে, তাই সে তাদেরকে নিয়ে রুমে ঢুকে।আরিয়ান মেয়েদেরকে দেখা মাএই রুম থেকে বের হয়ে যায়।
আরিয়ান রুমে থেকে যাওয়ার পরই তারা আমাকে সাজানো শুরু করলো।বৌভাতে আমি পিংক কালারের লেহেঙ্গা পরবো।লেহেঙ্গাটা দেখেই আমি অবাক হলাম।লেহেঙ্গাটা অনেক সুন্দর পরোটা জনিম সূতা আর পুতির কাজ করা।লেহেঙ্গাটি পরে আসতেই তারা আমাকে সাজানো শুরু করলো। আমাকে সাজানো শেষ হতেই তারা চলে গেল আর আমি আয়নার সামনে বসে আছি।সত্যিই নিজেকে এখন অন্যরকম লাগছে।
ডয়িংরুমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বাড়ির সবাই আর গেস্টরা সবাই ওইখানেই আছে।আমি একাই রুমে বসে আছি। একটু পরে রুমে ওনার এক চাচাতো বোন আসলো।
ভাবি তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে দেখবে ভাইয়া আজ তোমার থেকে চোখই ফিরাতে পারবে না।
তার কথা শুনে লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেছে।
আমি আস্তে করে বললাম কি যে বলো।
যে আমাকে কালো বলে সহ্যই করতে পারে না। আমার দিকে একবারও ভালো করে তাকাইনি পর্যন্ত সে আবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারবে না নিজের মনে মনেই কথা গুলো বললো অদ্রিতা।
সত্যি বলছি ভাবি আর তাড়াতাড়ি নিচে চলো সবাই নিচে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
হুমম…
আরিয়ান তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে এমন সময় হঠাৎ করেই তার সিঁড়ির দিকে চোখ পরে।সিড়ির দিকে চোখ পড়তেই সে অবাক হয়ে যায়।অদ্রিতাকে আজ একদম অন্যরকম লাগছে।পিংক কালারের লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি, মুখে হালকা মেকাপ,চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া, ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক, লম্বা হালকা কুঁকড়ানো চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। সত্যিই তাকে এই সাজে অসাধারণ লাগছে। আমি যেন তার থেকে চোখই সরাতে পারছি না।
অদ্রিতা সিড়ি থেকে নিচে নামতেই আরিয়ানের দিকে চোখ পরে।ব্লু শার্টের সাথে ব্লাক কোর্ট সাথে ম্যাচিং করা সুজ আর প্যান্ট।হাতে ব্যান্ডেড ওয়াচ,সিল্কি চুলগুলো বাতাশে উড়ছে।ওনার থেকে চোখই ফেরাতে পারছি না।ওনার মতো স্বামী পেয়ে আমি সত্যিই অনেক লাকী।
সবাই তো আর তার প্রিয় মানুষের ভালোবাসা পায় না। আমিও না হয় নাই পেলাম।তবুও তো ওনী শুধুই আমার। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো ওনাকে নিজের করে নেওয়ার।ওনাকে কখনো কোন কষ্ট পেতে দিবো না। ওনার মনের মতোন হওয়ার চেষ্টা করবো।
আরিয়ানের খেয়াল হতেই সে অদ্রিতার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় আর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে শুরু করে।
অদ্রিতাও লজ্জায় আরিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নেয় আর নিচে নেমে গ্রেস্টদের সাথে কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই অদ্রিতার পরিবারের সবাই চলে আসে।তাদের সবাইকে দেখে সে অনেক খুশি হয়। একটা দিন যে সে তাদের ছাড়া কিভাবে থেকেছে তা সে নিজেই জানে। সে গিয়েই প্রথমে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আর পরে সবার সাথে কথা বলতে থাকে।
হঠাৎ করে দরজার দিকে তাকাতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। মনে মনে বললাম নিলদা এখানে। এতদিন পর আমি ওনাকে দেখবো তা ভাবতেই পারি নি।আমার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।ওনাকে দেখা মাত্রই আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না। সেখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকি।
অন্যদিকে প্রায় দেড় বছরপর আমি এভাবে আমার ব্লাক কুইনকে দেখবো তা ভাবতেই পারিনি। আমার চোখ- মুখ লাল হয়ে গেছে। কোন ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না।বুকের ভিতরে তীব্র এক যন্ত্রণা হচ্ছে। সবকিছু কেমন যেন বিষাক্ত লাগছে।
.
.
.
চলবে…….
(