অপূর্ণতা পর্ব ১২+১৩+১৪+১৫

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১২_১৩

প্রায় দেড় বছরপর আমি এভাবে আমার ব্লাক কুইনকে দেখবো তা ভাবতেই পারিনি।আমার চোখ- মুখ লাল হয়ে গেছে। তীব্র এক যন্ত্রণা হচ্ছে নিজের বুকের ভিতরে। সবকিছু কেমন যেন বিষাক্ত লাগছে।কোন ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না। কি করেই বা পারবো কেউকি পারবে তার নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে মেনে নিতে, পারবে না তো।তবে আমি কি করে পারবো।দোষ তো আমারই ছিল আমার জন্যই তো আজ আমি তোমাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললাম। যাই হয়ে যাক আমি তোমাকে ভালোবেসেছি আর তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।অন্য কেউ কখনো আমার লাইফে তোমার জায়গা নিতে পারবে না।সবার ভালোবাসাই তো আর পূর্ণতা পায় না। আমারটাও না হয় অপূর্ণই থেকে যাবে।হয়তো এই #অপূর্ণতা আমাকে ভেতরে ভেতরে কুরুে কুরুে খাবে তবুও তো আমি বেঁচে থাকবো। তোমাকে নিজের করে নাই বা পেলাম চোখের দেখা তো দেখতে পারবো। এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।আমি কখনো তোমার জীবনে কোন সমস্যা সৃষ্টি করবো না।তোমার সব বিপদে আমি সব সময় তোমার একজন ভালো বন্ধু হিসেবে পাশে থাকবো। লাইফপাটনার নাই বা হলাম।তবুও আমি তোমার জন্য ওয়েট করবো।মনে মনে কথা গুলো ভাবছে সে।

আরিয়ান হঠাৎ করেই দরজার দিকে তাকালো।ওনাকে দেখে খুশি হলাম।আমি ভাবতেই পারিনি ওনী আসবেন।তাই তাড়াতাড়ি ওনার কাছে গেলাম। থ্যাংকস্ ফর কামিং স্যার। আসুন আপনাকে আমার ওয়াইফের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

আরিয়ান মনে মনে ভাবে এখন আমাকে সবাইকে দেখানোর জন্যে ওর সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। সবার সাথে তাকে নিজের ওয়াইফ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। ভাবতেই নিজের ওপর রাগ হতে লাগলো। যাকে আমি সহ্যই করতে পারি না তাকে হেসে সবার সামনে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।তবে কি আর করার বাধ্য হয়েই আমাকে তা করতে হবে।

আরিয়ার ওনাকে তার ওয়াইফের সামনে নিয়ে যায় আর বলে সি ইজ মাই ওয়াইফ অদ্রিতা। এন্ড অদ্রিতা হি ইজ মি. নিলয় চৌধুরী A.R Group of company er নিউ ওনার৷আমি ওনার কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করি।

নিলয় নিজের কষ্ট লুকিয়ে হাসি মুখে বলে, “Congratulations মিসেস অদ্রিতা।কেমন আছো?”

অদ্রিতা স্বাভাবিক ভাবে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি?”

অদ্রিতা মনে মনে বলে ওনার সাথে কথা বলার এখন আমার কোন ইচ্ছে নাই।আমি তো ওনাকে আমার অনেক ভালো বন্ধু মনে করতাম হয়তো ভালোবাসতে শুরু করছিলাম আর ওনীও তো আমাকে ভালোবাসতো তবে কেন হঠাৎ কিছু না বলে এভাবে চলে গেলেন আর চলেই যখন গিয়েছিলেন তবে এখন কেনই বা আমার জীবনে চলে এসেছে।এখন আমি আর আগের কোনো কথা ভাববো না,এইসব কথা ভাবাও এখন আমার জন্য পাপ।

নিলয় অদ্রিতার মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে আলহামদুলিল্লাহ। পরে মনে মনে বলে এই সাজে তো তোমাকে আমি সব সময় দেখতে চেয়েছি কিন্তু আফসোস একটাই এই সাজটা আমার জন্য নয় অন্য একজনের জন্য। কি করে সহ্য করবো আমি এটা বলতে পারো?আমার ভিতরটা যে জ্বলে- পুঁড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি তুমি এখন আমার সাথে আর কথা বলতে চাও না। তাইতো মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে আমার সাথে কথা বলছো।সেইদিন সত্যিই আমার কিছু করার ছিল না।পরিস্থিতি এমন ছিল যে তোমাকে কিছু না বলে চলে যেতে হয়েছে আর যখন সব কিছু ঠিক হলো তোমার সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। ছোটবেলা থেকেই আমি মেয়েদেরকে ঘৃণা করতাম কিন্তু তোমাকে যেইদিন প্রথম দেখিছিলাম তখনই কেন জানি ভালো লাগে আর ধিরে ধিরে তোমার সম্পর্কে জেনে তোমাকে ভালোবেসে ফেলি কিন্তু আপসোস তোমাকে আমি আগলে রাখতে পারি নি।পারি নি তোমাকে ভালোবেসে সারাজীবনের মতো নিজের করে নিতে। আমি চাই তুমি সবসময় সুখী হও। ভালো থাকো।

অদ্রিতা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”নিলদা আপনি তো অনেক ভালো গান গাইতে পারেন। আমি চাই আমার জীবনের এমন একটি সুখের দিনে আমাদের সবার জন্য একটি গান গান।গাইবেন তো একটি গাণ?”

অদ্রিতা এইটা বলে নিলয়ের দিকে একপলক তাকায়। পরে নিজের চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়ে মনে মনে বলে আমি চাই না নিলদা কোনো ভাবে এইটা বুঝোক যে আমার আগের কথা ভেবে কষ্ট পাই। আমি চাই নিলদা এইটা ভাবুক আমি আগের সব কথা ভুলে গেছি। আরিয়ানের সাথে আমি অনেক সুখী। আমি চাই না ওনী আবার আমার জীবনে প্রবেশ করুক।আমি এখন আরিয়ানকে অনেক ভালোবাসি আর স্বামী হিসেবে তাকে মন থেকে মেনে নিয়েছি। তাই অন্য কোনো কিছু আর ভাবতে চাই না।

আরিয়ান অবাক হয়ে অদ্রিতাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কি করে নিলয় স্যারকে চিন?”

অদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে, “আমরা একই ভার্সিটিতে পড়তাম।ওনী আমার সিনিয়র ছিলেন আর,,,

অদ্রিতার কথার মাঝেই নিলয় গান গাওয়া শুরু করে আর সবাই তার দিকে চেয়ে মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনতে লাগলো……

Kaise kahun ishq mein tere
Kitna hun betaab main
Aakhu se Aakhe mila ke
Chura lun tere khawaab main
Kaise kahun ishq mein tere
Kitna hun betaab main
Aakhu se Aakhe mila ke
Chura lun tere khawaab main
Mere saaye hain saath mei
Yaara jis jagah tum ho
Main jo jee raha hun
Wajah tum ho
Wajah tum ho
…………………….

(বাকিটুকু ইচ্ছে হলে নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

পুরোটা গানই সে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে গায় কিন্তু অদ্রিতা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকায় তা খেয়াল করে নি। অন্য কেউ তা খেয়াল না করলে কি হবে আরিয়ান তা খেয়াল করে। গান গাওয়া শেষ হতেই নিলয় আরিয়ানকে বলে তার কোন জরুরি কাজ আছে তাই সে চলে যাবে।অদ্রিতার সাথে কোন কথা না বলেই সে চলে যায়।

আরিয়ান ভাবছে অন্য কথা।কেন জানি তার এইটা মনে হচ্ছে যে নিলয় স্যার অদ্রিতাকে পছন্দ করে আর অদ্রিতা সে কি পছন্দ করে নিলয়কে?
.
.
.
চলবে……..

( গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লাগছে, কোন চরিত্র ভালো না লাগলে বলবেন। শুধু নাইস আর নেক্সট লিখলে তো গল্প আপনাদের কাছে কেমন লাগছে তা বুঝা যায় না। গঠনমূলক কমেন্ট করলে ভালো লাগে)

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৩

আরিয়ান ভাবছে অন্য কথা কেন জানি তার মনে হচ্ছে নিলয় স্যার অদ্রিতাকে পছন্দ করে আর অদ্রিতা সে কি পছন্দ করে নিলয়কে?সে তো অদ্রিতাকে পছন্দ করে না তাকে তার স্ত্রী হিসেবে মানে না তবে তার ভিতরে কেন এমন লাগছে?অদ্রিতাকে সে ছাড়া অন্য কেউ ভালোবাসবে, স্পর্শ করবে এই কথা ভেবেই রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।বাড়ি ভর্তি মেহমান তাই তাদের সামনে সে কিছুই করতে পারছে না আবার তার রাগটাও কন্ট্রোল করতে পারছে না।সে বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার এমন কেন লাগছে?কেন তার এমন মনে হচ্ছে অদ্রিতার উপর শুধুই তার অধিকার। সে তাকে স্ত্রী হিসেবে মানুক আর নাই মানুক সে শুধুই তার থাকবে।হঠাৎ করেই তার কাছে সব কিছু বিষাদময় লাগছে।

বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হতেই আরিয়ান অদ্রিতাকে টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে যেতে থাকে।আরিয়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, অদ্রিতা একবার তার দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বার আর তার দিকে তাকানোর সাহস হারিয়ে ফেলে।তার মনে হচ্ছে আরেক বার সে যদি আরিয়ানের চোখের দিকে চায় তবে সেই দৃষ্টিতে সে ভস্ম হয়ে যাবে।বুঝাই যাচ্ছে আরিয়ান অনেক রেগে আছে। আরিয়ানের এমন ব্যবহার করার মানে সে কিছুই বুঝছে না। এতক্ষন তো সবই ঠিক ছিল তবে হঠাৎ করে কি এমন হলো যার জন্য ওনী এততা রাগে আছেন।সে তো কিছুই করে নি তবে আরিয়ানের এমন রেগে থাকার কারণ সে বুঝতে পারছে না।

রুমে ঢুকেই আরিয়ান দরজা বন্ধ করে দেয়।অদ্রিতা তা দেখে ভয়ে বড় বড় করে ঢোক গিলতে থাকে।আল্লাহই জানে এখন তার কপালে কি আছে।এততা রাগ করতে সে আরিয়ানকে আগে কখনো দেখেনি।দরজা বন্ধ করেই আরিয়ান ধীরে ধীরে অদ্রিতার দিকে এগিয়ে যায় আর অদ্রিতা তা দেখে পিছুতে থাকে।পিছাতে পিছাতে দেওয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে।ভয়ে তার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না।আরিয়ান এসেই অদ্রিতার দুইবাহু জোরে চেপে ধরে ব্যাথায় অদ্রিতা আহ.. শব্দ করে তার চোখে পানি এসে পরে।

আরিয়ান রেগে ভ্রু কুচকে বলে, “তোর সাথে নিলয় স্যারের কি সম্পর্ক? সারা অনুষ্ঠানে কেন সে তোর দিকে ঐ ভাবে তাকিয়ে ছিল?তোদের মতো মেয়েদের তো আবার কোন বিশ্বাস নেই। বড়লোক ছেলে দেখলেই তো তাদের ফাঁসাতে চাস। কিন্তু এই বাড়িতে থেকে এইসব হবে না।তোকে আমি আমার স্ত্রী হিসেবে মানি আর নাই মানি মা বাবা তোকে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছে। আমি চাই না তোর জন্য তাদের বা আমাদের বাড়ির কারো মাথা নতো হউক বা এই বাড়ির সম্মান নষ্ট হউক বুঝেছিস্,,,”

আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতার সারা শরীর রাগে আর ঘৃণায় রি রি করছে। একটা মানুষের চিন্তা- ভাবনা এতটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারে তা সে ভেবে পাচ্ছে না। সে কালো তাই তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় নি। কথায় কথায় সে তাকে অপমান করে এইসব কিছুই সে মেনে নিয়েছে কিন্তু তাই বলে তার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বললে তা সে কি করে মেনে নিবে? সে রেগে বলে, আপনার সাহস হয় কি করে আমার চরিত্র নিয়ে এইসব কথা বলার।আপনাদের সবার সম্মান আছে,মান- অপমান বোধ আছে আর আমার নেই।আমাকে কি আপনার মানুষ বলে মনে হয় না? নাকি এইটা মনে করেন আমি কালো বলে আমাকে যা খুশি বলা যাবে তাতে আমার কষ্ট হবে না। আমার ভিতরে কোন যন্ত্রণা হবে না। কোনটা বলেন? এখন চুপ করে আছেন কেন?
আমাকে এতটা খারাপ বলে যখন আপনার মনে হয় তবে আমাকে বিয়েটা না করলেই তো পারতেন।আমি তো আর আপনাকে জোর করি নি আমাকে বিয়ে করার জন্য। আপনার মা- বাবা আপনাকে বিয়ে করতে জোর করেছে তাতে তো আমার কোন দোষ নেই। আপনি যদি আমাকে একবার বলতেন যে আমি এই বিয়েটে রাজি নন তবে আমি নিজেই এই বিয়ে ভেঙে দিতাম।কিন্তু আপনি তো আমাকে কিছুই বলেন নি।বলার পরেও যদি আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করতাম তবে সেখানে আমার দোষ থাকতো, এখানে আমার দোষটা কোথায় বলতে পারেন? আমি কালো এটাই কি আমার দোষ বলেন?আমি তো আর ইচ্ছে করে কালো হয়নি তবে এই রঙের জন্য কেন আপনি সেই প্রথম থেকে আমাকে অপমান করছেন, কালো বলে আমাকে আপনি আপনার স্ত্রী হিসেবে মানতে পারেন না।আমিও তো মানুষ আমারও তো মন আছে, আমারও যে কষ্ট হয়, তা কেউ কেন বুঝে না!আর এই সব সহ্য করতে পারছি না।কেন সব সময় মেয়েদেরকে তাদের চরিত্র নিয়ে কথা শুনতে হবে?কেন তাদের কোন সখ – আহ্লাদ থাকতে পারে না,কেন তারা নিজেদের মতোন করে বাঁচতে পারে না?বিয়ে আগে মা- বাবা বলে তোরা পরের আমানত তাই এমন কিছু করবি না যাতে আমাদের সম্মান নষ্ট হয়।বিয়ে পরে যা মন চায় করবি আর বিয়ের পরে স্বামী, শ্বশুরবাড়ির মানুষই সব। তাদেরকে না জানিয়ে নিজের মা- বাবার সাথেও দেখা করা যায় না।আর আমার মতো মেয়েদের তো কষ্ট আরও অনেক বেশি হয়। অদ্রিতা কখনোই আরিয়ানকে এত গুলো কথা বলতো না কিন্তু কেউ তার চরিত্র নিয়ে কিছু বললে তো আর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। এর থেকে যদি মেরে ফেলতো তবুও ভালো হতো। এত কষ্ট তো আর সহ্য করতে হতো না।

অদ্রিতার কথা গুলো শুনে আরিয়ানের এখন নিজেরই খারাপ লাগছে। রাগের মাথায় এই কথাগুলো বলা তার একদমই ঠিক হয়নি।সে সাথে সাথে অদ্রিতার হাত ছেড়ে দেয়। নিজের ব্যবহারের জন্য তাকে সরি বলে সেখান থেকে সুজা বেলকনিতে চলে যায়।আর অদ্রিতা ওইখানে বসে বসেই কাঁদতে থাকে। কেন আল্লাহ তাকেই এত কষ্ট দিচ্ছে। সে তো কখনোই কারো খারাপ চায়নি কখনো কাউকে কোন কষ্ট দেয়নি। তবে কেন তাকেই এই সব কিছু সহ্য করতে হবে?

আরিয়ান বেলকনি থেকে এসে দেখে অদ্রিতা এখনো সেখানে বসে ওইভাবেই কান্না করছে সে তাকে কিছু না বলেই খাটে গিয়ে শুয়ে পরে কখন যে ঘুমিয়ে পরে তার কোন খেয়াল নেই।মাঝ রাতে উঠে দেখে অদ্রিতা কান্না করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে পরেছে।কান্না করায় চোখ-মুখ ফোলে লাল হয়ে গেছে। তাই কিছু না ভেবেই সে অদ্রিতাকে পাঁজা কোলে করে খাটে এনে শুয়িয়ে দেয় আর সেও অন্য দিক ফিরে ঘুমিয়ে পরে।
.
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৪_১৫

সকালের ফজরের আজান শুনে অদ্রিতার ঘুম ভেঙে যায়।ঘুম থেকে উঠে নিজেকে খাটে দেখে অবাক হলো।
সে তো নিচে ওইভাবেই ঘুমিয়ে ছিল তবে খাটে কি করে এলো!পরে ভাবে হয়তো খাটে এসে ঘুমিয়ে ছিল মনে নেই।রাতের কথা ভাবতেই খারাপ লাগলো। আরিয়ানের ওই কথা গুলোই তার কানে ভাজতে লাগলো।সে কি করে তাকে এমন কথা বলতে পারলো। এই সব ভেবে তার চোখ দিয়ে আবারও পানি পরছে।কোনো ভাবে নিজেকে শান্ত করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে নামাজ পরে নেয়।নামাজ পড়া শেষ হলে কতক্ষন কোরআন শরিফ পড়ে সুজা নিচে চলে যায়।

নিচে গিয়ে দেখে কাজের বোয়া ডয়িং রুম ঝাড়ু দিচ্ছে। সে কিছু না বলে রান্না ঘরে গিয়ে রান্না সেরে ফেলে।রুমে এসে দেখে এখনো আরিয়ান ঘুমাচ্ছে। সে তাকে ডাক দিতে চেয়েও দেয়নি।এখন সে আরিয়ানের উপর রাগ বা অভিমান করে আছে কিনা তা সে জানে না, কিন্তু রাতে আরিয়ানের বলা কথাগুলো সে ভুলতে পারছে না। যার জন্য সে তার থেকে দূরে থাকতে চাইছে।তাই সে নিজে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে, ফ্রেস হয়ে এসে দেখে আরিয়ান ঘুম থেকে উঠে গেছে।সে তার দিকে না তাকিয়ে আয়নার সামনে এসে চুল বাঁধতে থাকে। আরিয়ান কিছুটা অবাক হয়।আগের দিনতো এসে আমাকে ডাক দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। আজ কি হলো যে আমাকে দেখেও না দেখার অভিনয় করছে। ঘুম থেকে উঠতে এতো লেট হলো তবুও ডাক পর্যন্ত দিলো না।হয়তো কাল রাতের কথা শুনে এখনো রাগ করে আছে তাই এমন করছে। যা খুশি করোক গিয়ে আমার কি?আমি তো এইটাই চাই যে ও আমার থেকে দূরে থাকুক।

আরিয়ান ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।ফ্রেস হয়ে এসে দেখে অদ্রিতা রুমে নেয় সে আর কিছু না ভাবে কাপড় চেঞ্জ করে খাবার টেবিলে চলে যায়। গিয়ে দখে সেখানে সবাই তার জন্য ওয়েট করছে। টেবিলে বসতেই তার বাবা বললো এতো লেট করলি কেন তোর জন্য সেই কখন থেকে ওয়েট করছি?

একটু ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল তাই।

কাল থেকে যাতে আর না হয় আর বউমা ওর দেরি হলে তুমি ওকে দেকে উঠিয়ে দিবে।

জি,বাবা।

অদ্রিতা সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজেও টেবিলে বসে খাবার খেয়ে নেয়।খাওয়া শেষ হলে তার বাবা বলে,”আরিয়ান একটু পরে বউমাকে নিয়ে তার বাড়িতে যাবি তাই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।”

আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে শান্ত স্বরে বলে, এখন যেয়ে কি করবে? গতকালই তো তার পরিবারের সবার সাথে কথা বলছে। তাদের সাথে দেখা করছে। তাই অন্য কোন দিন নিয়ে যাব।আজ পারবো না।

আরিয়ানের বাবা কিছুটা রেগে গম্ভীর স্বরে বলে, “আমি তোর মতামত জানতে চাইনি।আর পরে তো সময় পাবি না তোর ছুটি শেষ হয়ে যাবে। তাই আজই নিয়ে যাবি এইটা ফাইনাল। এই নিয়ে আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।আর যাওয়ার সময় কিছু নিয়ে যাস। খালি আবার চলে যাস না। ”

আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত হয়ে ঠিক আছে কথাটা বলে রুমে চলে যায়।

অদ্রিতা কিছু বলে না,সে সব কিছু গুছিয়ে ঘরে এসে দেখে আরিয়ান রেডি হয়ে বসে আছে।অদ্রিতা রুমে ঢুকতে দেখে রাগী ভাবে বলে,” আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি। তুমি ৫ মিনিটে রেডি হয়ে আসবে।একদম বেশি সময় নিবে না।”

অদ্রিতা কিছু বলে না শুধু মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেয় আর আরিয়ান চলে যায়।কিছুক্ষন পরে আরিয়ান সিড়ির দিকে চেয়ে দেখে অদ্রিতা আসছে।সে বুঝতে পারছে না এখন বোরকা পরে আসার কি মানে যাবে তো গাড়ি দিয়ে তবে বোরকা পরার কি দরকার ছিল।তাকে দেখেই কেন যানি এখন তার হাসি পাচ্ছে। তার মা সামনে থাকায় হাসতেও পারছে না। কিন্তু মানুষ তো আর বেশিক্ষন হাসি আটকিয়ে রাখতে পারে না। ঠিক তেমনি আরিয়ান পারছে না।তাই সে হেসে ফেলে।তার মা অনেকক্ষন ধরে আরিয়ানের এই অবস্থা দেখছে।মনে মনে ভাবছে ছেলে পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি এভাবে একা একা বসে বসে হাসছে। তাই তিনি জিজ্ঞেস করেই ফেলে,” এভাবে একা একা হাসছোস্ কেন? কি হয়েছে?”

আরিয়ান হেসে হেসেই বলে এমনি হাসছি কিছু হয় নি।

আরিয়ানের মা অবাক হয়ে বলে,” এমনি আবার কেউ হাসে নাকি। আর মানলাম এমনেতেই হাসছোস্, তবে বউমার দিকে তাকিয়ে হাসার কোন কারণ তো দেখছি না…. বল?”

আরিয়ান তার মায়ের কথা শুনে বিপাকে পরে যায়। সে এখন তার মাকে কি বলবে তা বুঝতে না পেরে বলেই দেয়, “আমরা তো যাব গাড়ি দিয়ে তো বোরকা পরার কোন কারণ তো দেখছি না।তাছাড়া ও এমনিতেই কালো তার উপরে কালো বোরকা পরে মুখে হিজাব পরে এসেছে দেখতে কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে তাই হাসি পাচ্ছে। ”

আরিয়ানের কথাগুলো শুনে অদ্রিতা অনেক কষ্ট পেল।তার চোখে পানি এসে পরেছে তবুও সে কাঁদতে পারছে না।তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার চোখের পানি এখনি বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পরবে। এততা কষ্ট পাওয়া সত্বেও সে মুখে কিছু বলে না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

অন্যদিকে আরিয়ানের কথা শুনে তার মার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়। তিনি কখনো এইটা আশা করেনি তার ছেলে কোন মেয়েকে এইভাবে অপমান করতে পারে। সে তো তাকে এমন শিক্ষা দেয়নি।সবসময় মেয়েদেরকে সম্মান করার শিক্ষা দিয়েছে। তবে কি করে সে অদ্রিতা এই কথা বলতে পারে।তাই তিনি রাগেই বলেন,
তোর সাহস কি করে হয় আমার সামনে ওকে এইভাবে কথা বলার। আমরা কি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি।মানছি মেয়েটা একটু কালো তাই বলে তাকে তুই এইভাবে অপমান করবি।আর মেয়েটা পর্দা করে এইটা তো ভালো কথা। তুই কটতা ভাগ্যবান যে এমন একটা স্ত্রী পেয়েছত, যে কিনা নিজের স্বামি ছাড়া অন্য কারো সামনে পর্দা ছাড়া বের হয় না।তোর তো উচিত তাকে নিয়ে গর্ববোধ করা আর উল্টো তুই তার অপমান করিস্।তোর মুখ থেকে যদি কখনো এমন কথা শুনি তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
.
.
.
চলবে…….

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৫

এই প্রথম আরিয়ান তার মাকে এমন ভয়ঙ্কর রুপে দেখলো।সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি এই সামান্য কথায় তার মা এততা রাগ করতে পারে। এই কথায় তার মা এইভাবে তার সাথে কথা বলতে পারে।এমনিতে তার মা অনেক শান্ত- শিষ্ট। আরিয়ান তাদের একমাএ সন্তান, তাই সে যাই করুক না কেন কখনো তার সাথে উঁচু স্বরে কথা বলেনি, এভাবে ধমক দেয়নি। আসলে মা- বাবার একমাত্র সন্তান বলে সবসময় শুধু তাদের ভালোবাসা পেয়েছে। মনে মনে অদ্রিতাকে দোষারুপ করতে থাকে সে।যেই মা তার সাথে কখনো উঁচু স্বরে কথা বলেনি আজ তার জন্য এভাবে এতগুলো কথা শুনালো।

আরিয়ান তার মার দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি এখনো রেগে আছেন।আজ তার মাকে এই রুপে দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। তাই তো সাথে সাথেই বলে,” আচ্ছা আই এম সরি।ভুল হয়ে গেছে আর কখনো হবে না। এখন আমাদের যেতে হবে নইলে দেরি হয়ে যাবে।”

আরিয়ানের মা রেগে বলে সরি আমাকে না বউমাকে বল্।

আরিয়ান তার মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে অদ্রিতাকে সরি বলে।

আরিয়ানের মা গম্ভীর স্বরে বলে,”ঠিক আছে.. তোরা সাবধানে যাস্।আর অদ্রিতা তুই ওর কথায় কষ্ট পাস না।ও এমনই কি বলতে যে কি বলে ফেলে তার কোনো খেয়াল থাকে না।”

অদ্রিতা মুচকি হসে বলে, “আমি কষ্ট পাইনি মা। তুমি আর বাবা নিজেদের খেয়াল রেখো আমরা কালকেই চলে আসবো।”

ইম্পসিবল….. কি বলছো এইসব। আমরা রাতেই চলে আসবো।ঐখানে থাকার আবার কি দরকার?

আরিয়ানের মা গম্ভীর্যতা বজায় রেখেই বলে, হ্যাঁ…. এইটা নিয়ম। তোদের আজ রাত সেখানে থাকতে হবে। রাতে সেখানে থেকে সকালে বা বিকালে চলে আসতে পারস্।আর এই নিয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।”

আরিয়ান আর কিছু না বলে কিছুটা বিরক্ত হয়ে গাড়িতে এসে বসে।অদ্রিতাও তার পিছু পিছু গাড়িতে গিয়ে বসে।আরিয়ান অদ্রিতাকে আস্তে করে বলে ভালোই করেছো মুখ ঢেকে হিজাব পড়েছো। নইলে তোমার মতো কালো মেয়েকে আমার পাশে দেখে মানুষ যা নয় তা বলতো।তার থেকে ভালো হয়েছে তুমি মুখ ঢেকে হিজাব পরে আছো।এখন তোমাকে কেউ দেখতে পাবে না আর আমাকেও কোন কথা শুনতে হবে না।বাঁচা গেল,,,

আরিয়ানের এই কথায় সে অনেক কষ্ট পায় তবুও মুখ ফোটে তাকে কিছু বলে না। তার মুখটা আরিয়ান থেকে সরিয়ে গাড়ির গ্রাস দিয়ে বাহিরের দিকে তাকায়।বাহিরে তাকিয়েই নিজের চোখের পানি মুছে। সে আর একবারের জন্যও আরিয়ানের দিকে তাকায় নি। এইপাশে তাকিয়েই নিরবে কান্না করে।

আরিয়ান বুঝতে পারে তার এই কথায় অদ্রিতা অনেক কষ্ট পাচ্ছে হয়তো ঐদিক ফিরে কান্না করছে। এইটাই তো সে চেয়েছে যে অদ্রিতা কষ্ট পাক। তার জন্যই তো ইচ্ছে করে এই কথা গুলো বলেছে।অদ্রিতার জন্যই তো আজ প্রথম তার মা তার সাথে এইভাবে কথা বলেছে।এতগুলো কথা তো তার জন্যই তো শুনতে হয়েছে তার শাস্থি তো তাকে পেতেই হবে।তাছাড়া আমি এত সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও ওর মতো কালো মেয়েকে কি করে মেনে নিব।আমার পক্ষে কখনোই এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। জাস্ট ইম্পসিবল।তোমার সাথে এমন ব্যবহার করবো যে তুমি বাধ্য হবে আমাকে ডিভোর্স দিতে।

একটু পরে হঠাৎ আরিয়ান গাড়ি থামায়। হঠাৎ করে গাড়ি থামাতেই অদ্রিতা আরিয়ানের দিকে তাকায়। তা দেখে আরিয়ান বলে… তুমি গাড়িতে বসো আমি কিছু নিয়ে আসি।

আপনাকে কোথায় যেতে হবে না। কিছু লাগবে না। আমাকে তো আপনার ওয়াইফ হিসেবেই মানেন না। তো এই সব ফর্মালিটির কোনো দরকার নাই।

আরিয়ান ঝারি মেরে বলে তোমাকে বেশি কথা বলতে হবে না। আমি জানি আমার কি করা উচিত সো আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না। বসতে বলেছি যাস্ট চুপ করে বসো।

আরিয়ানের এইকথা শুনে সে সে ভাবতে থাকে কোনটা তার আসলরুপ। কখনো মনে হয় ওনী অনেক ভালো আর আমাকে হয়তো আস্তে আস্তে মেনে নিবেন। আর কখনো মনে হয় ওনী ভালো নয় আর আমাকে মেনে নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় ।প্রায় ২০ মিনিট পরে আরিয়ান অনেক গুলো প্যাকেট নিয়ে গাড়িতে এসে বসে। অদ্রিতার দিকে তাকাতেই আরিয়ান বুঝতে পারে সে অনেক অবাক হচ্ছে। তাই বলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তোমার মা- বাবাকে বুঝাতে হবে তো তারা কোন ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছে। তাদের বুঝাতে হবে তো কালো হওয়া সত্ত্বেও তাদের মেয়ে কত ভাগ্যবতী যে এমন সুন্দর আর ভালো ছেলের বউ হয়েছে….. তাই না।

আরিয়ানের কথা শুনে তার সব সংসয় কেটে যায়। বুঝতে পারে তার ধারণা কতো ভুল ছিল।আরিয়ান তো শুধু তার পরিবারকে দেখানোর জন্য এইসব নিয়ে গেছে। এখন কেন জানি তার মনে হচ্ছে আরিয়ান তাকে কোনো দিনও মেনে নিতে পারবে না।হয়তো সারা জীবনই সে এভাবে তাকে অপমান করবে।সে জানে না এই বিয়ের শেষ পরিণতি কি হতে চলেছে। তবুও সে চেষ্টা করবে আরিয়ানের মনের মতোন হওয়ার। কিন্তু আদৌও কি আরিয়ান কখনো অদ্রিতাকে মেনে নিবে? তাকে স্ত্রীর অধিকার দিবে,আদৌও কি কখনো পূর্ণতা পাবে তাদের সম্পর্ক?তার মনে হাজারও প্রশ্ন কিন্তু তার কোনোটির উত্তর তার কাছে নেই,,,,,,,
.
.
.
চলবে……..
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here