গল্পটা তোমারই পর্ব ১

|১|
– আমি মা হতে পারবো না এই কারনে আপনি আমায় ডিবোর্স দিচ্ছেন তাই না ইফাজ!(কাতর গলায়)
অহমির কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল ইফাজ।ইফাজের মাথা নিচু করা দেখা এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো অহমির।ডিবোর্স পেপার হাতে দাড়িয়ে নিঃশব্দে কান্না করছে অহমি।
জীবনে হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি সে মা হতে পারবে না বলে ইফাজ তাকে ডিবোর্স দিবে।
ইফাজ শক্ত গলায় অহমিকে বলে উঠলো।

– অহমি ডিবোর্স পেপারে সাইন করে দেও।আর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।(শক্ত গলায় কথাটা বলেই ইফাজ রুম ত্যাগ করলো)
ইফাজের শক্ত গলার কথাগুলো অহমির মনে গভীর ভাবে আচড় কাটলো।কান্নারত ভেজা নয়নে ইফাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে অহমি।
অহমি ভাবছে এই কি সেই ইফাজ যে তাকে ভালোবাসতো সবসময় আগে-পিছে ঘুরঘুর করতো।সবসময় ভালোবাসি,ভালোবাসি বলতো।যে তার জন্য পাগল ছিলো আজ সেই ইফাজ তাকে ডিবোর্স দিচ্ছে ভাবতেই অহমির অবাক লাগছে।

ইফাজের কথাগুলো এখনো অহমির কানে বাজছে।অহমি পারছে না চিৎকার করতে কাদঁতে।
নিরুপায় হয়ে অহমি ডিবোর্স পেপারে সাইন করে দিলো।অহমি ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে মেয়ে কোন পুরুষকে বাবা ডাক শোনাতে পারে না সে মেয়ে কারো বউ হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না।ডিবোর্স পেপারে সাইন করে অহমি অস্তিস্তহীন ভাবে ধীর পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আর নিজের ব্যাগ-পত্র গোছাতে লাগলো।
ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অহমি।তার সামনেই বাড়ির সকল লোক দারিয়ে আছে।অহমি শেষ বারের মতো ইফাজের দিকে তাকালো।
কিন্তু ইফাজ তার দিকে একবার ঘুরেও তাকালো না।অহমি ভেবেছিলো ইফাজ একবার হলেও তাকে পিছু ডেকে বলবে।

– অহু প্লিজ যেও না আমি মানি না এই ডিবোর্স আমি তোমার সাথে থাকতে চাই সারাজীবন থাকতে চাই কারন আমি তোমায় ভালোবাসি কি হয়েছে আমরা মা-বাবা হতে পারবোনা আমরা একটা বাচ্চা এডপ্ট করবো।

কিন্তু না ইফাজ নিশ্চুপ ছিলো।অহমি ল্যাগেজ হাতে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মিসেস রুপশা মুক বেকিয়ে বলে উঠলেন।

– বাপু এ কেমন অপয়া মেয়ে আমার ছেলের কপালে জুটলো যে কিনা মা হতে পারবেনা।ভাগ্যিস আপদ বিদেয় হয়েছে আমার ইফাজটার কপাল থেকে বলি শুনছো ইফাজের বাবা আমি আগেই জানতাম এই মেয়ের মাঝে খাদ আগে কিন্তু তুমি তো শুনোনিকি ছেলের পছন্দে একদম হ্যাঁ হ্যাঁ বলেই গিয়েছিলে।(মুক বেকিয়ে)
মায়ের এমন কথা শুনে ইফাজ দ্রুত রাগে বড় বড় পা ফেলে হনহন করে উপরে নিজের রুমে যেতে লাগলো।
প্রাক্তন শ্বাশুড়ি মায়ের এহেন কথা শুনে কাদতে কাদতে বাড়ি থেকে ল্যাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো অহমি।

|২|
রাগে ইফাজের ঘাড়ের রগ ফুলে উঠেছে সাথে কপালের রগ গুলোও ফুলে উঠেছে বর্তমানে সাইকোর মতো দেখতে লাগছে ইফাজকে।রাগে সামনে থাকা কাচের টেবিলটাকে উল্টো করে ফেলে দিলো ইফাজ।
এদিকে উপরের রুম থেকে কিছু শশব্দে পড়ার আওয়াজে কেপে উঠলো ড্রয়িংরুমে উপস্থিত থাকা সকল লোকজন।মি. আয়মান দ্রুত উপরে উঠে যেতে লাগলেন সাথে বাড়ির সকল লোকজন।
ইফাজ রুমের প্রতিটা জিনিস ভেংগে ফেলছে আর রাগে চিৎকার করে বলে উঠেছে।

– আমাকে কেন ঠকালে অহমি? কেন আমায় ঠকালে!(বলেই চিৎকার করে জিনিস পত্র ভাংছে ইফাজ)

অন্যদিকে।
ইফাজ অহমিকে ডিবোর্স দিয়েছে মুহুর্তেই তা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে।ড্রয়িংরুমে মাথা নিচু করে বসে আছে অহমি পাশেই তাত দুই ছোট বোন আর বাবা মা সাথে বাড়ির সকল বড়রা আর পাড়ার কিছু লোকজন।

ড্রয়িংরুমে উপস্থিত থাকা পাড়া প্রতিবেশি লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে।অহমির বাড়ির বাহিরে লোকজনের বির সবার মুখে একটাই কথা মাননীত সম্মানিও ব্যাক্তি ইশান শিকদারের বড় মেয়ে অহমিকে তার স্বামি ডিবোর্স দিয়ে দিয়েছে।
ড্রয়িংরুমে উপস্থিত থাকা এক মহিলা শব্দ করেই বলে দিয়েছেন।

– নিশ্চয় মেয়েটার মাঝে কোন সমস্যা আছে যা দেখে স্বামি ডিবোর্স দিয়ে দিয়েছে আর বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
অন্য জন বলে উঠলো।

– হয়তো কোন পর পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো তাই হয়তো শ্বশুড় বাড়ি লোকজন জানতে পেরে ছেলেকে দিয়ে ডিবোর্স দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

লোকজনের এমন লাগামহীন কথাবার্তা শুনে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না অহমি নিঃশব্দে মাথা নিচু করে কান্না করে দিলো।মি. ইশান শিকদার চেচিয়ে উঠলেন।

– এই আপনারা এখানে আমার মেয়ের নামে এমন বাজে কথা বলছেন কেন।কেউ কি কখনো আমার মেয়েকে কোন ছেলের সাথে ঘুরতে দেখেছেন বা মিশতে দেখেছেন তাহলে কোন হিসেবে আমার মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন।(রাগে চেচিয়ে)
মুহুর্তেই উপস্থিত থাকা সকল লোক মুখ কালো করে বেরিয়ে যেতে লাগলেন।

|৩|
লোকজনের এমন থুথু ছিটেনো কথা বার্তা শুনে মেয়ের প্রতি চটে গেলেন মিসেস রুম্পা।রাগে সাপের মতো ফুসে উঠলেন তিনি জাত,কাল না দেখেই গটগট করে বলে উঠলেন।

– বলি আমাদের কি শান্তি দিবি না বিয়ের আগেও জ্বালিয়ে মেরেছিস আর এখনও বিয়ে পরও ডিবোর্সি হয়ে এখানে এসেছিস লোকের কাছে গালমন্দ করতে এখনও জ্বালাচ্ছিস বলি এবার একটু শান্তি দে।আর শোন এক্ষুনি এবারি থেকে বেরিয়ে যা তোর জন্য আমার দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ তো আর নষ্ট করতে পারি না তাই বেরিয়ে যাবি আমার বাড়ি থেকে।

মি. ইশান এখন কিছু বলতে পারলেন না ওনার পক্ষে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যাওয়া ভয়ংকর অসম্ভব ব্যপার।এদিকে মায়ের এমন কথা শুনে আজ সত্যিই অহমি মানতে বাধ্য হচ্ছে সৎ কখনো আপন হতে পারেনা।
অহমি‌র আজ সত্যিই এই চেনা শহরটাকে বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে যেখানে না আছে ভালোবাসা আর না আছে নারীর সম্মান।আছে শুধু অভিমান,এক বুক কষ্ট,অসম্মান।
অভিমান ইফাজের প্রতি বড্ড অভিমান হচ্ছে অহমি।
আর একচুল দাড়ালো না অহমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে গেলো।এদিকে মেয়ের অভিমানের সম্পর্কে গত হয়েছেন ইশান মেয়ের এরূপ আচরনে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন তিনি।
.
.
আনমনে মাঝ রাস্তায় হাটছে অহমি।আর ভাবছে তার ভাগ্য কি এই কঠিন পরিহাস লেখা ছিলো ছোটকাল থেকে সবার কাছ থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে।
বিয়ের পর ভেবেছিলো ইফাজ তাকে ভালোবাসবে তার সব দুঃখ,কষ্ট ভুলিয়ে দিবে কিন্তু বিয়ের চারমাস পূর্ণ না হতেই ইফাজ অহমিকে ডিবোর্স দিয়ে দিলো।আনমনে হাটতে হাটতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তার উপর পড়ে গেলো অহমি।মুহুর্তেই জ্ঞানে ফোরে এলে অহমি।তারাতারি লোকটার উপর থেকে সরে এলো অহমি।আমতা আমতা করে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো।

– আ’ম আ’ম র রিয়্যালি ভেরি সরি আ আসলে আমি দেখতে পাইনি।স স সরি সরি।(ভয়ে ভয়ে)
অহমি কাপা কাপা চোখে ভালো করে সামনে তাকিয়ে দেখলো সুদর্শন একজন পুরুষ তার সামনে দাড়িয়ে আছে আর জ্যাকেট ঝারছে। লোকটা জ্যাকেট ঝাড়া বন্ধ করে অহমিকে শক্তপোক্ত গলায় বলে উঠলো

– স্টুপিডদের মতো রাস্তায় চলাফেরা করার কোন মানে হয়না ইডিয়েট কোথাকারের।আপনাদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েরা পারেই বা কি রাস্তায় যার তার শরীরের উপরে গিয়ে পড়েন।বড়লোক ছেলে দেখলেই কি এরইকম গায়ের উপর গিয়ে পড়েন!(রেগে শক্ত গলায়)
লোকটার কথা শুনে মুহুর্তেই জল চলে এলো অহমির চোখে অশ্রুশিক্ত চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো।

– স সরি আসলে আম আমি দেখতে পা পায়নি পেলে কখনো আপ আপনাদের মতো ব বড়লোকদের রাস্তার আশেপাশে দিয়ে যেতাম না।(বলেই অহমি চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো)
এদিকে অহমির কথায় রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলল সেহরিশ।চোখ বন্ধ করে রাগে বলে উঠলো।

– স্টুপিড মেয়ে ।
(বলেই হনহন করতে করতে গাড়িতে গিয়ে বসলো সেহরিশ)

চলবে,,
পরবর্তী পর্ব রেসপন্সের ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

#গল্পটা_তোমারই
[১ম পর্ব]
#Rubaita_rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here