গল্পটা তোমারই পর্ব ২

#গল্পটা_তোমারই
[২য় পর্ব]

|৪|
-ইফাজ আপনি কেন আমার সাথে এরকমটা করলেন।আজ আপনার জন্য সমাজের প্রতিটা লোক আমার গায়ে থু থু ছিটেলো আমার নামে বাজে কথা বললো!আচ্ছা আপনিই বলুন যেই জিনিসে কারো দোষ না থাকে সমাজের প্রতিটা লোক তাকেই কেন দোষী প্রমান করতে উঠে পড়ে লেগে যায়।(হাটুতে মুখ গুজে কান্নার স্বরে বলল অহমি)

সত্যিই আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ কারো যদি দোষ নাও থাকে তাহলে তাকেই দোষী প্রমান করে আর যার দোষ থাকে সেই আসল স্বাধীন মানুষদের মতো ঘুরেফেরে।
অহমি পারছে না আর এইসব সয্য করতে।অহমি ভেবেছিলো ইফাজ তাকে মন-প্রান দিয়ে ভালোবাসবে,একটা আলাদা সপ্নের দুনিয়া সাজিয়ে নিয়েছিলো ইফাজের সাথে কিন্তু দিন শেষে ইফাজ কি করলো তাকে ডিবোর্স দিয়ে দিলো ছেড়ে দিলো তাকে জীবনের অর্ধাংশ একা করে দিলো।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হচ্ছে আর ততটাই বিভিষীকা ময় মুহুর্ত গুলো অহমির মনের মাঝে গভীর দাগ কাটছে তার কাছে ভয়ে লাগছে চারদিকে মানুষের আনাগোনাও কম হয়ে যাচ্ছে।
শোনা যায় এখানে সন্ধ্যা পর আর কোন মানুষ থাকেনা থাকে শুধু মানুষ রুপি পশুরা।যারা মদ খেয়ে মাতলামি করে আশেপাশে দিয়ে কোন মেয়ে যাওয়ার পথে তাকে ইভটিজিং,অসম্মানিত,বিরক্ত করে।ফলে লজ্জায় মেয়েটি নিজের ক্ষতি করে বসে।

অহমির মনের মাঝে ভয়েরা এসে হানা দিয়েছে।অহমি মনে মনে ভাবছে যদি এখন ইফাজ এসে তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলতো।

– অহমি আমি মানি না এই ডিবোর্স আমরা আমাদের সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যাবো!তোমাকে সবসময় নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো।

কিন্তু আফসোস ইফাজ এমন কিছুই করবেনা।কারন অহমি যে ইফাজের থেকে শত গুন দূরে চলে আসছে যেথায় ইফাজ চাইলেও অহমিকে খুজে পাবে না
হ্যাঁ অহমি চলে এসেছে তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যেখানে মা,বাবা,সমাজের দৃষ্টিভঙ্গতার লোকজন আর না থাকবে ভালোবাসার ইফাজ থাকবে শুধু অচেনা শহর,অচেনা অলিগলি আর থাকবে অচেনা ভিন্ন ধাচের মানুষজন।

অহমির ভাবনার মাঝেই কারো স্পর্শে হালকা কেপেঁ উঠে অহমি।ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে মাতালের মতো ডুলছে আর বাজে ভাবে হাসছে।

অহমি ভয়ে লোকটার থেকে দূরে চলে আসে।অহমি দূরে যেতেই লোকটা তাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে।ভয়ে অহমি লোকটাকে ধাক্কাচ্ছে কিন্তু পারছে না একজন পুরুষের কাছে একজন মহিলার শক্তি নিছকই তুলনাহীন।
একসময় অহমির বিষন নাড়াচাড়য় লোকটা রেগে অহমির গালে প্রচন্ড শব্দে একটা চড় মারে।এতে অহমি পাশে থাকা বেঞ্চের উপর গিয়ে পড়ে চড়ের গতিটা এতটাই জোরে ছিলো যে অহমির ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়াতে লাগে।

লোকটা অহমিকে আবারো স্পর্শ করতেই অহমি এবার নিজের গায়ের সব শক্তি দিয়ে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে অন্ধকারে দৌড়াতে থাকে।

|৫|
হালকা ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় একটা গোলাপ আর একটা কাগজের টুকরো হাতে বসে আছে সেহরিশ।জীবনে যাকে চেয়েছে তাকে সে পায়নি আজ হেরে গেছে সেহরিশের ভালোবাসা।সেহরিশ আফসোস করছে যদি আরেকটু আগে মেরিডকোর্টে গিয়ে পৌঁছাতে পারতো।
সেহরিশের রাগ হচ্ছে মেয়েটার উপর তার জন্য আজ তার ভালোবাসা তার সামনেই অন্যকারো হয়ে গেছে।সেহরিশ রাগে কাগজের টুকরো টুকু ছিড়ে ফেলল।

– ইডিয়েট মেয়ে তোমাকে যদি আরেকবার পাইনা তাহলে দেখবে তোমাকে আমি কি করি।(রাগে গিজগিজ করতে করতে)

সেহরিশের বলার সাথে সাথে কেউ হুমড়ি খেয়ে তার বুকের উপর পড়লো।আচমকা ভারী কিছু একটা বুকে পড়ায় ভরকে যায় সেহরিশ তবুও নিজের ব্যালেন্স ঠিক রেখে ভারী জিনিসটাকে ধরে ফেলে।

সেহরিশ বুকের উপর থাকা রমনীর মুখের দিকে তাকাতেই ভরকে গেলো।এতো সকালের সেই তার সাথে ধাক্কা লেগে তার উপর পড়ে যাওয়া মেয়েটা।
সেহরিশ চমকে অহমির মুখের দিকে তাকালো দেখলো অহমির ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে আর ভয়ার্ত আধো আধো চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে।
একসময় সেহরিশ বুঝতে পারে অহমি অতিরিক্ত ভয়ের কারনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
সেহরিশ তৃতীয় কোন ব্যাক্তির আচ পেয়ে সামনে তাকায় দেখে সামনে একটা লোক মাতালবস্থায় ডুলছে সম্ভবত মেয়েটির পিছু পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে এসছে।
এদিকে মাতালবস্থায় ডুলতে থাকা লোকটা সেহরিশকে দেখে ভয়ে লোকটা কাপঁতে লাগলো।
আসলে কি আমরা যেই অবস্থায় থাকি না কেন।
সামনে আব্বু-আম্মুকে দেখে ঠিকই সোজা হয়ে যাই। যাকে বলে

“যাতে মাতাল তালে ঠিক।
লোকটা সেহরিশকে দেখে আর দাড়ালো না উল্টো ঘুরে ভয়ের রেশ নিয়ে দৌড়াতে লাগলো।এদিকে লোকটাকে এভাবে অহমির পিছু আসতে দেখে সেহরিশ আচ করে ফেলল আজ মেয়েটার সাথে বড় অঘটন ঘটনা ঘটে যেতে যদি সে এখানে না থাকতো।

|৬|

চোখ খুলে নিজেকে অন্যকারো বেডরুমে আবিস্কার করতেই ভয়ে আতৎকে উঠলো অহমি।ভয়ে ভয়ে চারদিকে তাকিয়েই পালানোর জন্য দৌড়ে বেড থেকে নেমে দরজা খোলার চেষ্টা করলো অহমি।ভয়ে জেনো অহমির কথা বলার সাধ্য টুকুও হাড়িয়ে ফেলেছে সে।
নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
দরজা খোলার আরও একটু চেষ্টা চালাতেই অহমি খট করে দরজা খোলার আওয়াজ পেলো কিন্তু সেটা রুম থেকে বেরুনোর দরজা খোলার শব্দ নয় বরংচ রুমের ভেতরে থাকা ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ।

অহমি চমকে পিছু তাকাতেই লজ্জায় পড়ে গেলো।লজ্জায় চোখ বড় বড় করে সামনে তাকালো।হয়তো কখনি কল্পনাতেও আনেনি সামনে সেহরিশকে এই অবস্থায় দেখবে।
অহমি জিভ দিয়ে ঠোঁট বিজিয়ে বলে উঠলো।

– আম্ আমি এখানে ক কিরে!(ভিতু গলায়)

সামনেই সেহরিশ টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে উঠলো।

– আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই আপনি এখানে আমারই রুমে।(চুল মুছতে মুছতে গম্ভীর গলায় জবাব দিলো সেহরিশ)
অহমির যেনো কথা গলায় আটকে আসছে।রুদ্ধধার কন্ঠে কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো।

– এএ এটা ক কা কার বাড়ি!(অহমি নিজের প্রশ্নেই নিজেই বেকুব হয়ে গেলো)
সেহরিশ ভ্রু কুচকে বলে উঠলো।

– এভাবে নাগিন দের মতো রুপ পাল্টানোর সময় যেভাবে কাপে সেভাবে কাপছেন কেন!মনে হচ্ছে সামনে বাঘ দেখছেন!(ভ্রু কুচকে)

সেহরিশের এমন উত্তরে ভরকে গেলো অহমি মুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো সামনে সেহরিশ খালি গায়ে দাড়িয়ে আছে।
এটা মনে পড়তেই অহমি চোখ বড় বড় করে সেহরিশের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো।

কিছুক্ষন কেটে যাওয়ার পরও কিন সাড়া শব্দ না পেয়ে অহমি মাথা তুলে সামনে তাকালো।দেখলো সেহরিশ টি শার্ট পড়ে তার দিকে দুহাত বাজ করে দেয়াল ঘেষে দাড়িয়ে আছে।সেহরিশের চোখে চোখ পড়তেই জমে গেলো অহমি সেহরিশ শীতল চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজনের চোখে চোখ পড়তেই সেহরিশ ধীর পায়ে একপা,দুপা করে অহমির দিকে আগাচ্ছে।
এদিকে সেহরিশের আগানো দেখে ভয়ে জমে গেলো অহমি।সেহরিশের আগাচ্ছে আর অহমি ভয়ে একটু করে পেছাচ্ছে এখন পর পেছানোর জায়গা নেই কারন পিছনেই দরজা।অহমি ঠেকে গেলো দরজার সাথে সেহরিশ অহমির দিকে হালকা জুকে মুখটা অহমির মুখের কাছে নিয়ে গেলো।

তখনি সেহরিশ খট করে দরজা খুলে ফেলল।আর সরে এলো অহমির কাছে থেকে।

– আপনি কি সামনে থেকে সরবেন নাকি এভাবে সার্কাসের জোকার মুর্তির মতো এভাবে দাড়িয়ে থাকবেন।

|৭|
রুমের এক কোণায় দাড়িয়ে আছে অহমি।মাথা নিচু করে ভাবছে তখন সেহরিশ কি করেছে আর অহমি কি ভেবেছে ভাবতেই অহমির ইতস্থত বোধ করতে লাগলো।
অহমি ভাবছে এখান থেকে কি করে বাহিরে যাবে।কিন্তু বাহিরে গেলে যদি আবারো সেইসময়ের ঘটনার শিকার হয় আজ সেহরিশ ছিলো বলে বেচে গেছে অহমি।

সেইসময়ের লোকটার কথা ভাবতেই অহমিে গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।আজ যদি ইফাজ তাকে ডিবোর্স না দিতো তাহলে এতক্ষনে হয়তো ইফাজ অফিস থেকে ফিরতো আর রোজকার মতো তার জন্য বেলীফুলের মালা,আলতা,অনেক গুলো চকলেট আনতো।কিন্তু নিয়তি আজ ইফাজ আর অহমি সম্পর্কটাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রুপে পরিণত করলো।

চলবে,,
[পরর্বতী পর্ব রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে দিবো।আশা করি গঠন মূলক মন্তব্য করবেন]
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ!]
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here