#গল্পটা_তোমারই
[৩য় পর্ব]
|৭|
এলোমেলো ভাবে পার্কে বসে আছে ইফাজ।অহমির জন্য কোথাও একটা দুঃখ অনুভব করছে সে।যখন থেকে অহমির শূণ্যতা লাগতে শুরু করেছে তখন থেকে ইফাজের মন আনচান আনচান করছে।
অহমিকে একটিবার দেখার জন্য শিকদার বাড়িতে গিয়েছিলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে মিসেস রুম্পা’র থেকে একগাধাঁ কথা শুনে আর দাড়ায় নি ইফাজ ব্যার্থ হয়ে চলে এসেছে সে বাড়ি থেকে।
মাথা নিচু করে পার্কের একটি নিরলা ব্যাঞ্চিতে বসে আছে ইফাজ।মুখে হাজারো ক্লান্তি নিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আনমনে বলে উঠলো।
– আমি জানি অহু সমাজ একজন ডিভোর্সি মেয়ের জন্য কতটা কঠিন!কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম অহু সত্যিই নিরুপায় ছিলাম।যদি আমি তোমায় না ছাড়তাম তাহলে তোমাকে পৃথিবীর আলো ত্যাগ করতে হতো।আমি চাই নি তোমার কোন ক্ষতি হোক!আমায় ক্ষমা করে দিও অহু কিন্তু তুমিও আমায় ঠকিয়েছো অহমি(বলতে বলতে ইফাজের চোখে থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো)
ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা কখনো কখনো কারো মোহে পড়তে বাধ্য করে আবার কাউকে ছেড়ে দিতে বাধ্য করে।ইফাজের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে সে কখনোই সমাজের চোখে অহমিকে একজন ডিভোর্সি মেয়ে,অসম্মানিত করতে চায়নি।কিন্তু নিয়তি তাকে এটা করতে বাধ্য করিয়েছে।
ইফাজ জানে অহমির মাঝে কোন খাদ নেই কিন্তু তাকে ছাড়ার জন্য ইফাজ অহমির বিরুদ্ধে মিথ্যা হসপিটাল রিপোর্ট বানিয়েছে যেখানে স্পর্ষ্ট লেখা অহমি কোনদিন মা হতে পারবেনা কিন্তু কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ইফাজ তা ভালো করেই জানে।
কথা গুলো ভেবে ইফাজ দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো।কারন ইফাজ যে বাধাঁ সে শত চাইলেও অহমিকে নিজের কাছে ধরে রাখতে পারবে না কারন ইফাজের অধিকারি অন্যএকজন যে যা বলবে ইফাজ তার লক্ষি ছেলের মতো তাই করবে।
ঠিক যেভাবে তার কথায় অহমিকে ডিভোর্স দিয়েছে।
|৮|
– আমি বাড়ি যাবো!(ইতস্তত বোধ করে)
অহমির কথা শুনে ল্যাপটপে কাজ করা বন্ধ করে অহমির দিকে ভ্রু কুচকে গম্ভীর ভাবে তাকালো সেহরিশ।
অহমির দিক থেকে চোখ সরিয়ে সেহরিশ আবারো ল্যাপটপে চোখ দিলো।
সেহরিশের হ্যালামিতে অহমি আবারো ইতস্তত বোধ নিয়ে বলে উঠলো।
– আমি বাড়ি যাবো প্লিজ!
এবারো ঠিক আগের রিয়্যাক্টশন নিয়ে অহমির দিকে তাকালো সেহরিশ।কিছুক্ষন তাকিয়ে উঠে ধীর পায়ের অহমির দিকে আগাতে লাগলো।এদিকে সেহরিশের এইরকম আগানো দেখে ভরকে গেলো অহমি।চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলল।
সেহরিশ অহমির দিকে আগাতে আগাতে বলে উঠলো।
– আপনার ব্যাপারে আমি সব জানি মিস অহমি শিকদার।সরি মিস বললাম কারন আপনিতো আগে অন্যকারো মিসেস ছিলেন তবে এখন আর নন কারন কালই তার সাথে আপনার ডিভোর্স হয়েছে।এরপর বাবা’র বাড়িতে গিয়েছে সেখানে সৎ মায়ের কঠিন আচরন বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে আর ঠিক তখনই আপনার সাথে আমার দেখা।(স্লো কন্ঠে)
সেহরিশের কথা শুনে অবাক হয়ে সেহরিশের দিকে তাকালো অহমি।ভাবছে সেহরিশ এতকিছু জানে কিভাবে।অহমির ভাবুক চেহারা দেখে সেহরিশ বাকা হেসে বলে উঠলো।
– বর্তমানে আপনার যাওয়ার কোনও জায়গা নেই একমাত্র এবাড়ি ছাড়া।আমার কাছে একটা অফার আছে আমার মনিমা অনেক অসুস্থ এককথায় বলতে গেলে প্যারেলাইসড তোমার কাজ হচ্ছে ওনাকে দেখে রাখা কখনো কি প্রয়োজন হয়ে সেটা দেখা।ফলে তুমি এখানে থাকতে পারবে,আর তোমার সব খরচ আমি দিয়ে দিবো।কি রাজি!(বাকা হেসে)
অহমি মাথা নিচু করে নিলো খানিকক্ষন সময় নিতে ভাবতে লাগলো সেহরিশের কথায় সেকি রাজি হবে নাকি হবে না।সেহরিশ অহমির দিকে আগানো বন্ধ করে দুহাত বাজ করে অহমির দিকে তাকিয়ে রইলো।
অহমি কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো সে সেহরিশের কথায় রাজি হবে।
যদি রাজি না হয় তাহলে তাকে এবাড়ি ছাড়তে হবে রাস্তায় যেতে হবে কিন্তু কালকের মতো ঘটনাটা যদি আবার ফেইস করতে হয়।অহমি ভয়ে ভয়ে বলে দিলো।
– আম্ আমি রাজি।ত তবে আমি এই রুমে থা থাকবো না।
সেহরিশ মুখে বাকাঁ হাসি বজায় রেখে বলে উঠলো।
– রুম থেকে বেরিয়ে রুমের অপরদিকে একটি রুম আছে সেটাই তোমার রুম সব গোছগাছ করা আছে যাও।(বলেই ল্যাপটপের দিকে মনোযোগি হলো সেহরিশ)
অহমি দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে অন্য রুমে চলে যেতে লাগলো।
|৯|
অহমি আর সেহরিশের পরিচয় দেওয়া যাক।
অহমি শিকদার।বয়স ১৯,দেখতে মাশাআল্লাহ্ ভালোই তবে গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা।চেহারায় অনেক মায়া যে কেউ একবার দেখলে তার মায়ায় আবদ্ধ হতে বাধ্য হবে।অহমিরা তিন বোন কোন ভাই নেই অহমির দুই বোন তার সৎ বোন।অহমির ২ বছর থাকতেই অহমির মা অহমিকে আর মি. ইশানকে ছেড়ে চলে যান।তার কিছুদিন পর মি.ইশান শিকদার আবার বিয়ে করেন মিসেস রুম্পাকে।
বিয়ের বছর খানেক মিসেস রুম্পা অহমিকে স্নেহের চোখে দেখতে কিন্তু যখন দেখতে দেখতে ওনার নিজ্বস্ব সন্তান হলেন তখন থেকেই মিসেস রুম্পা খিটখিটে স্বভাবে হয়ে যান একপ্রকার অহমিকে বোঝা ভাবা শুরু করেন।অহমির বাবা পাড়ার স্কুলের হ্যাড মাষ্টার এক হিসেবে ওনার আলাদাই একটা নাম,ডাক ও সম্মান আছে।
__
সেহরিশ চৌধুরি।বয়স ২৬ এর কাছাকাছি দেখতে মাশাআল্লাহ্ দুধে আলতা গায়ের রং।মুখে হালকা খোচা খোচা দাড়ি।লম্বায় ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি।সিক্স প্যাগ বডি।চোখের মনি বাদামি কালারের যা যে কোন মেয়ে একবার দেখলেই সেই চোখে ডুবে যাবে।
সেহরিশের মা,বাবা নেই ছোট থাকতে তার বাবা ব্রেন ক্যান্সারের মারা যায় তার কিছু বছর পর সেহরিশের মা স্ট্রোক করেন।এরপর থেকে সেহরিশ তার মনিমা আর বাবাইয়ের কাছে থাকে।সেহরিশের বাবাই মি. আজমীন চৌধুরি বর্তমানে ইন্ডিয়ায় বিজনেস করেন বছরে একবার বাড়িতে আসেন।সেহরিশ আপাতত পড়ালেখা শেষ করে তাদের বাংলাদেশের বিজনেস সামলাচ্ছে।
এই হলো সেহরিশ আর অহমির পরিচয়।
রুমের ভিতরে বেডে চুপটি করে বসে আছে অহমি।শত চাইলেও ইফাজের কথা ভুলে থাকতে পারছে না।যতই হোক বারবার ইফাজের কথা মনে পড়ছে।অফিস থেকে আসার সময় ইফাজ তার জন্য কতকিছু নিয়ে আসতো ছুটির দিনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতো কতো দুষ্টুমি,খুনশুটি করতো।
কিন্তু ভাগ্যর পরিহাস দুইজন দুই প্রান্তে পৌঁছে গেছে।
অহমি এসব ভাবতে ভাবতে তার চোখ থেকে আপনাআপনি জল গড়াতে লাগলো।
আসলেই প্রথম ভালোবাসা কেউ সহজেই ভুলতে পারেনা।
অহমির ব্যাপারেও সেটা হয়েছে সে কিছু ইফাজ আর তার খুনশুটি মাখা সময় গুলো ভুলতে পারছেনা না।
|১০|
সময় কখনো থেমে থাকেনা সবসময় নিজের আপনগতিতে চলতে থাকে।অহমি সেহরিশের বাড়িতে এসেছে এক সপ্তাহ্ হয়ে গিয়েছে।এই সপ্তাহ খানেকের মধ্যে অহমির সাথে মিসেস রিহিয়া বেগমের সম্পর্কে সেহরিশের মনিমার সাথে অহমির বেশ ভালোই ভাব জমে গেছে।
মিসেস রিহিয়া কথা বলতে পারেন,নিজে নিজে খেতে পারেন কিন্তু হাটতে পারেন না।
রিহিয়া বেগমের সাথে বাগানে ফুল নিয়ে কথা বলছে আর মিটিমিটি হাসছে অহমি।পজ কতদিন পর তার মুখে একটু হলেও হাসি ফুটেছে।
অন্যদিকে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে সেহরিশ দৃষ্টি তার অহমির দিকে।মেয়েটা হাসতেও পারে,আর হাসলে তাকে এক অপূর্ব লাগে সেহরিশের জানা ছিলো না।
এক শীলত চাহনি নিয়ে অহমির দিকে তাকিয়ে আছে সেহরিশ।অহমির সাথে যা হয়েছে তা ভেবে সেহরিশের একটু খারাপ লাগছে।সেহরিশের ঠোঁটে আনমনা হাসি ফুটে উঠলো।আনমনে বলে দিলো
– এই মেয়েটা হাসতেও পারে আগে জানা ছিলো না।হাসলে যে মেয়েটাকে অপূর্ব লাগে তাও জানা ছিলোনা।সত্যিই মেয়েরা আলাদাই এক অপরূপা এ কয়েকদিনে মনিমার কত কাছেই হয়ে গেছে।মেয়েটা সত্যিই কিউট(আনমনে বলে উঠলো সেহরিশ)
মনিমার সাথে কথা বলতে বলতে অহমির চোখ যায় উপরে নিজের রুমের বেলকনিতে দাড়িয়ে থাকা সেহরিশের দিকে।লোকটা তার দিকে অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে আছে।অহমি একটু অসস্তি নিজের ওড়না আর ভালো ভাবে গায়ে জরিয়ে নিলো।
এদিকে অহমির কান্ড দেখে মুচকি হেসে উঠলো সেহরিশ।মেয়েটা বড্ড ইতস্তবোধি।
চলবে,,
বিঃদ্রঃ প্রথমেই জানিয়ে নিচ্ছি কিছু কিছু জায়গায় বানান ভুলের কারনে তার জন্য আমি অত্যান্ত দুঃখিত।
[পরবর্তী পর্ব রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে]
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ!]
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)