#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৩৭
” দাদী তুমি এখনে?”
ভেবাচেকা খেয়ে জিজ্ঞেস করলো ফরিদ। শেহেতাজ বেগম সরু চোখে তাকিয়ে, বললেন…
” তুই এখানে কি করছিস?
” আমি তো এমনিতেই এসেছি।”
দাদী সরে গিয়ে বললো..” এই মেয়েটা কে ফরিদ?”
ফরিদ ওরিনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকালো। কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়। দাদী ধমকের সুরে বললো…
” কি হলো বলছিস না কেনো?”
” দাদী ওর নাম ওরিন। ”
” ও এখানে কি করছে? তোর লজ্জা নেই একটা মেয়ে কে তুলে এনেছিস?”
” দাদী প্লিজ আমার কথা টা শোনো, আমি ওরিন কে ভালোবাসি। ওর বাবা ওর বাবা ওর বিয়ে ঠিক করেছে তাই তুলে আনতে বাধ্য হয়েছি। ”
” দাদী আমার বিয়ে ঠিক হয়, নি। আমি তো এখনো বাচ্চা মানুষ। ”
দাদী ওরিনের দিকে তাকালো, আবার ফরিদের দিকে তাকিয়ে, বললো…
” এই কথাটা তুই আমাকে বলতে পারতি। কিন্তু মেয়েটাকে তুলে আনার কি আছে? আমি ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলতাম। ”
” সরি দাদী।”
” সরি বলেই, সব বিষয়ে মাফ পাওয়া যায় না। কাল রাতে যখন তুই খাবার নিয়ে, যাচ্ছিলি তখন বুঝতে পেরেছি কোন না কোন ঘাপলা আছে। মেয়েটার বাবা মায়ের ওপর কত চাপ যাচ্ছে। জানিস তুই?”
ফরিদ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। দাদী আর কিছু বললো না। দাদী চলে গেলো, ওরিনও দাদীর পিছু পিছু হাটা শুরু করলো। দাদী ওরিনের দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…
” তোমাদের বাসা কোথায়?”
” শাহাবাগ চার রাস্তার মোর, বাম দিকে হালকা হলুদ রংয়ের বিল্ডিং টা আমাদের। ”
দাদী গাড়িতে উঠলো, ইশারা করে ওরিন কেও বসতে বললো। ওরিন দাদীর পাশে বসলো। গত কাল রাতে যখন ফরিদ রুম থেকে বেরিয়ে গেছিলো, হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে, দাদীর কিঞ্চিৎ সন্দেহ থেকে ফরিদের পিছু নেয়।
এপার্টমেন্টের পিছনে, ছোট দুটো রুম ওয়ালা ঘর আছে। দাদী সেখানে যেতেই দেখতে পেলো একটা মেয়ে কে ফরিদ ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে দিয়েছে। নিজের নাতী এমন কুকর্ম করবে তা তিনি মনের এক কোনেও আনতে পারেন নি। তারপর যখন ফরিদ নিজ হাতে ওরিন কে খাইয়ে দিলো, তখন তার ধারনা টাই বদলে গেলো। ওরিন কে খাইয়ে দিয়ে যখন আবার দরজা আটকে দিয়েছে , ফরিদ অন্য রুমে চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঠিক তখনি দরজা খুলে ওরিন কে বের করে নেয় শেহতাজ বেগম।
ওরিনের মুখে সত্য ঘটনা জানার পর রাগে উঠছিলো শেহতাজ বেগমের। ফরিদ এমন ছেলে নয় নিশ্চয়ই কেও মিথ্যা কথা বলে ছিলো, ওরিনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই ছেলেটা বাধ্য হয়ে কাজ টা করেছে। হঠাৎ গাড়ি থামতেই শেহতাজ বেগমে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলেন। ড্রাইভার পেছন ঘুরে বললো…
” ম্যাডাম চলে এসেছি। ”
শেহতাজ বেগম, গাড়ি থেকে নামলেন। যেহেতু ওরিন দের বিল্ডিংয়ে লিফট নেই, শেহতাজ বেগমের শিড়ি বেয়ে উঠতে সমস্যা হলো। ওরিন দাদীর অনুমতি নেয়ার জন্য বললো…
” দাদী আপনার উঠতে সমস্যা হচ্ছে, আমি আপনার হাত টা ধরি? ”
শেহতাজ বেগম কিছু বললেন না, কোন এক মহা পুরুষ বলেছিলেন চুপ থাকা সম্মতির লক্ষন। তাই ওরিন দাদীর হাত টা ধরলো। তারপর ওরিনের সাহায্য ছয় তালায় উঠতে সক্ষম হলেন৷
ওরিন দের বাসার দরজা খোলা, দরজা বরাবর সোফায় নাছিম বসে, আছে। দাদী কে দেখা মাত্রই নাছিমের চোখ চড়ক হয়ে উঠলো। এই সকাল বেলা দাদী এ বাসায় কি করছে। নাছিম দ্রুত দাদীর কাছে যেতেই, শেহতাজ বেগম নাছিমের দিকে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো।
” নাছিম তুই এখানে কি করছিস?”
” দাদী এটা মিস আয়শার বাসা। ওনার বোন কে কেউ ধরে নিয়ে, গেছে। কিছুক্ষণ আগেই এসেছি। ”
নাছিম ওরিন কে দেখে, আবারো অবাক হলো। আয়শার বোন দাদীর সাথে, কি করছে। দাদী কি কিডন্যাপ করেছে? নাহ নাহ দাদী এমন কেন করতে যাবে। সব তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ভেতরে ঢুকতেই আয়শা ওরিন কে জিরিয়ে ধরলো, দু বোন কান্না করছে। আয়শা ওরিনে কাধ চেপে ধরে, বললো…
” তুই গত কাল কোথায় ছিলি। বাবা তোর চিন্তায় কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে গেছে। ”
শেহতাজ বেগম বললেন..
” সব প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো। ”
” তোমাদের বাবা কোথায়, উনি এখন কেমন আছেন? ”
” বাবা ওনার রুমে রেস্ট নিচ্ছেন। ”
” আমি কি ওনার সাথে কথা বলতে পারি?”
আয়শা বললো..” জ্বি দাদী অবশ্যই। ”
আয়শা এবং নাছিমের দাদী শেহতাজ বেগম আয়শার বাবার রুমের দিকে গেলো পিছু পিছু নাছিম ও গেলো। ভেতরে প্রবেশ করার আগে, আয়শা দাদীর হাত ধরে বললো…
” আমি জানি না কি হয়েছে, কি করেছে ওরিন কিন্তু, বাবার সামনে প্লিজ অমন কথা বলবেনা প্লিজ যাতে বাবা কষ্ট পায়। ”
দাদী হালকা হেসে আয়শায় গালে হাত দিয়ে, বললো…
” তোমার মতো মেয়ে, আছে বলেই তোমার বাবা ভাগ্যবান আমার মনে হয়। ”
আয়শা দাদী আর নাছিম কে নিয়ে ঘরে ঢুকলো, আয়শা দুটো চেয়ার এনে, নাছিম এবং দাদী কে বসতে দিলো। আয়শা বাবা চোখ খুলে তাকালেন। আয়শা প্রফুল্লের স্বরে বললো…
” বাবা ওরিন এসেছে। উনি নাছিম স্যারে দাদী উনিই ওরিন কে নিয়ে এসেছেন। ”
নাছিমের দাদী ভদ্রতার খাতিরে বললো..” এখন কেমন আছেন আপনি?”
আয়শার বাবা মর্মাহত গলায় বললেন। ” যার মেয়ে চব্বিশ ঘণ্টা ধরে নিঁখোজ হয়, সে কেমন থাকতে পারে? ”
” ওরিন ঠিক ঠাক আছে। আসলে, লজ্জার কথা, কিভাবে বলি, আমার ছোট নাতী ওরিন কে পছন্দ করে, কারো কাছ থেকে শুনেছে ওরিনের বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাড়া হুড়ো বসতো সত্যি টা যাচাই না করে, ও ওরিন কে কিডন্যাপ করে। আপনার মেয়ে আমার কাছে সুরক্ষিত ছিলো, আমার নাতি ওকে ছিটে ফোটা কষ্ট দেয় নি। অসভ্য আচারন করেনি। আমি আপনার কাছে মাফ চাইছি। ”
” আপনি আমার বয়সে বড় এভাবে হাত জোর করবেন না। মেয়ে হলো, বাবার আমানত এই আমানত যদি কেউ ক্ষতি করে তাহলে আমি, সত্যি রাগ হতাম। তবে আপনি আমার মেয়েকে নিজ দ্বায়িত্ব রেখেছেন। আমার মেয়ে সহীহ ছালামত বাসায় এসেছে এটাই শুকরিয়া। ”
” আপনার কথা শুনে খুশি হলাম। আয়শার কাছ, আপনার কথা শুনেছি। যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রস্তাব দিতে চাই, একটা ছেলে যেহেতু একটা মেয়ে কে পছন্দ করে, ভালোবাসে। পরিবারের উচিত তাদের এক করে, দেয়া। আমি চাই ফরিদ আর ওরিনের বিয়ে হোক। ”
আয়শার বাবা, চুপ করে রইলেন। বড় লোকদের কাছে, সম্পর্কে ভিত্তি মূলবান হয়, না। আর পাঁচটা সম্পর্কের মতো তারা বিয়ের সম্পর্ক মূল্যায়ন করে না। এজন্যই হয়তো সমাজে ডিভোর্স এতো বেশি হয়।
চব্বিশ বছর আগেই তা বুঝতে পেরেছিলেন। যখন আয়শার মা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আফজাল সাহেব কে বিয়ে করেন। আয়শার নানা তাদের সম্পর্কটা মেনে নেয় নি। আফজাল সাহেব তখন ছোট চাকুরী করতেন বলে। আসলে, টাকার নিচে রক্তের সম্পর্ক গুলো মাঝে ধামা, চাপা পরে যায়। আজ আয়শার বাবারও সব আছে, কিন্তু শেষ বয়সে আয়শার নানা তার মেয়েকে পেলেন না।
” কিছু বলছেন না, যে?”
আয়শা বাবা বেখেয়ালি হয়ে, বললেন…
” তাড়াহুড়ো করে ডিসিশন নিতে চাচ্ছি না। দুটো জীবনের ব্যাপার এখানে। ”
” আপনার সাথে, আমি সহমত। সময় নিন, কিন্তু আশা করি, আপনি দুজন কে নিরাষ করবেন না। আজ আসছি আফজাল সাহেব। ”
বলেই উনি উঠে রুম থেকে বেরিয়ে, গেলেন। আয়শা সব সময় দাদীকে হাসি খুশিই দেখেছে, কিন্তু আজ দাদীর সিনসিয়ারনেস দেখতে পেলো। দাদীর সিদ্ধান্তটাকি বাবা মেনে নিবে, বিষয় টা আয়শাকে ভাবাচ্ছে।
আয়শা দাদী কে এগিয়ে, দেয়ার জন্য দাদীর পিছু পিছু গেলো। দাদী আয়শা কে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে, বললেন…
” তোমার বাবা কে একটু বুঝিও আয়শা। আমি তো হাওয়ায় হাওয়ায় বুড়ো হইনি। আমার একটু হলেও ওনার চেয়ে বেশি জ্ঞান আছে। ”
” আমি বুঝতে পারছি দাদী আমি অবশ্যই বাবা কে বুঝাবো। বাবার বিয়ে নিয়ে একটা অতীত আছে। বাবা এখনো সেই ট্রামা কাটাতে পারেনি। ”
দাদী নিঃশ্বাস ফেলে, বললেন…” দেখা যাক কি হয়। ইনশাআল্লাহ ভালোই হবে। ”
দাদী গাড়িতে উঠে গেলেন। নাছিম, আর আয়শা দাঁড়িয়ে আছে, আয়শার দাদীর যাবার পানে তাকিয়ে আছে। নাছিম আয়শার উদ্দেশ্য বললো…
” আমি যে দিন, প্রথম আপনার বাসায় এসেছিলাম, তখন আপনার ছোট বোন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো আমার ছোট ভাই আছে, কি না। ”
” আপনার আর ফরিদের চেহারায় বেশ মিল আছে। এই জন্যই হয়তো জিজ্ঞেস করেছে। ”
” হুম। ঠিক বলেছেন। এখন আমি আসি। ”
” চলে যাচ্ছেন? ”
নাছিম, আয়শার দিকে তাকিয়ে হাসলো। মেয়েটা বড় অদ্ভুত, কাছে আসতে দেয় না। দূরের যেতেও দেয় না।
।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৩৮
বিকেলের দক্ষিণা বাতাস বইছে, বারান্দার দরজায় শব্দ হচ্ছে৷ আফজাল সাহেব আসরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ বাসায় আসার পর এখনো, ওরিন বাবার সম্মুখীন হয় নি। এসবের জন্য ওরিন নিজেকেই দ্বায়ী মনে করছে। আয়শা এক কাপ চা বানিয়ে, ওরিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে, বললো…
” যা চা টা বাবা কে দিয়ে আয়। ”
ওরিন গুটি গুটি পায়ে বাবার রুমে গেলো। আফজাল সাহেব নামাজ শেষে তাজবিহ পড়ছেন, বারান্দার চেয়ারে বসে। ওরিন টেবিলে চা টা রেখে, দাঁড়িয়ে রইলো। বাবা কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। আফজাল সাহেব তসবিহ পড়া শেষ করে, চায়ের কাপ টা হাতে নিলেন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন…
” চা কি আয়শা বানিয়েছে? ”
” হ্যাঁ বাবা। ”
আফজাল সাহেব ক্ষানিক ক্ষন চুপ করে রইলেন অতঃপর বললেন…
” তুই ছেলেটাকে পছন্দ করিস?”
ওরিনের টনক নড়লো, ওরিন এদিক সে দিক তাকিয়ে, আমতা আমতা করে, বললো…
” জানি না বাবা। ”
” তোর জানার কথাও না। ছেলেটা তো আর তোর মর্জিতে নিয়ে যায় নি। তোকে এক প্রকার কিডন্যাপ করে, নিয়ে গেছে। আর এই ছেলের কাছে আমার মেয়ে কে বিয়ে দেবো, কোন ভালো লক্ষন দেখতে পারছি না। ”
ওরিন থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। আয়শা ওরিনের পাশে এসে দাঁড়ালো, ওরিন কে ইশারা করে চলে, যেতে বললো। ওরিন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়শা বললো…
” এক জন দ্বায়িত্ববান বাবা, এখনো এমন ছেলের কাছে যাচাই না করে বিয়ে দেবে না। ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে, যাচাই করে সিদ্ধান্ত নাও বাবা৷ ওরিন ছেলেটাকে অপছন্দ করে, না। আমি ওর বোন আমি তা কিঞ্চিৎ হলেও বুঝি। সিলেট যাবার আগে, আমাকে ওরিন ছেলেটার কথা বলেছিলো, পছন্দ করে কি না তা জানায় নি। ”
” তুই বলছিস যাচাই করতে? তোর নানা তোর মায়ের সাথে আমার সাথে কি করেছিলো তুই তা ভালো মতোই জানিস।”
” জানি বাবা। সে জন্যই তো বলছি বাবা, আমি চাই না। কেউ কারো থেকে দূরে সরে যাক। নানা যেই ভুলটা চব্বিশ বছর আগে করেছে। সেই ভুলটা তুমি এখন করো না। আমি হাত জোর করে বলছি বাবা। ”
আফজাল সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। ‘ তোর মতো মেয়ে পেয়ে, আমি ধন্য রে মা। ‘ আফজাল সাহেব আয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আয়শা বললো…
” আশা করি তুমি ব্যাপার টা যাচাই করে, সিদ্ধান্ত নিবে। কাউকে নিরাষ করবে না। ”
” হুম৷ আমি যাচাই করবো। তোর কথা রাখার জন্য, হলেও আমি যাচাই করবো, ওরিনের জন্য। ”
আয়শা খুশি হলো৷ সিলেট থেকে আনা জিনিস গুলো,বাবার হাতে দিয়ে বললো…
” এগুলো তোমার জন্য এনেছি বাবা। দেখতো পছন্দ হয় কি না। ”
আফজাল সাহেব পেকেট খুলে, গিফট দেখে খুশি হলেন। আয়শা বাবার রুম থেকে, বেরিয়ে, এলো। নিজের রুমে গেলো। ওরিন বিছানায়, শুয়ে আছে৷ আয়শা ও পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো, ওরিনের চোখের কোনে জল চিক চিক করছে৷ ওরিন ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো…
” বাবা আর আগের মতো আমাকে বিশ্বাস করে, না। তাই না আপু। এর জন্য হয়তো আমি নিজেই দ্বায়ী। ”
” তুই দ্বায়ী না, আর ফরিদও দ্বায়ী না। আসলে তোরা দুজনেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিস। এখানে কারোই দোষ নেই আমি মনে করি। ”
” আচ্ছা আপু, বাবা কি আমাকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে, দেবে?”
” জানি নাহ আমি৷ আচ্ছা একটা কথা বলতো, তুই কি ফরিদ কে ভালোবাসিস? ”
ওরিন ক্ষানিকটা চুপ থেকে বললো..” ভালোলাগে নাকি, ভালোবাসি জানি না তবে, আমি ফরিদের মধ্যে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছি অনেক আগেই। যখন আমি রাস্তা, পার হতে গিয়ে গাড়ির সামনে পরে, গিয়েছিলাম, ফরিদ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে রক্ষা করেছে। ”
” হুম। বুঝতে পারছি। আচ্ছা শোন, বাবা মনে হয় ফরিদের বেকগ্রাউন্ড খোঁজ করবে, তোর মতে ফরিদ ছেলে কেমন? ”
” অদ্ভুত জানো আপু। ফরিদ ভাই দেখতে স্মার্ট বৃত্তবান ভার্সিটিতে বেশি ভাগ মেয়ে নাকি তাকে, মনে মনে পছন্দ করে। তবে তার সাথে কোন মেয়েকে দেখা যায় নি, তনু বলেছে। আমি নিজেও দেখিনি। বজ্জাত টা সব সময় আমার পিছে লেগে থাকতো। কিভাবে আমাকে হেনস্তা করবে, আমি ও কম নই। টায়ার পাংচার করে দিয়েছিলাম। ”
আয়শা হো হো করে হাসে দিলো। যাই হোক ফরিদের চারিত্রিক কোন সমস্যা নেই, বুঝা গেলো। হবেই, বা কি ভাবে ফরিদ তো নাছিমেরই ভাই, বড় ভাই ভালো হলে, ছোট টা খারাপ হবে না৷ আয়শা ওরিনের গিফট গুলো দিলো, ওরিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মালা পড়ছে।
আয়শা মনে মনে, ভাবছে। এভাবেই যেন তার বোনটা সব সময় হাসি খুশি থাকে। ওরিন মালাটা পড়ে আয়শাকে, দেখিয়ে বললো…
” আপু আমাকে কেমন মানিয়েছে?”
” অনেক সুন্দর। ”
ওরিন কারু কাজ করা চিরুনি টা হাতে নিয়ে, বললো..” এটা খুব সুন্দর আপু। ”
———————————-
নাছিম কফির কাপে, চুমুক দিয়ে, বললো..
” তাহলে সেদিন তুই ওরিনের ছবির দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলি?”
ফরিদ মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। নাছিম কিছুটা অবাক হয়ে, বললো…
” তাহলে তুই আগে কেনো আমাকে, বলিসনি? ”
” আসলে, আমি ভেবেছিলাম নিজে, ডিপেন্ড হয়ে তারপর ওরিন কে বিয়ের প্রস্তাব দেবো৷ ততো দিনে, ওরিনো পড়াশোনার টা এগিয়ে নিয়ে যাবে। ”
” তাহলে, হঠাৎ এসব কেনো?আচ্ছা তুই কি জানতিস ওরিন যে আয়শার বোন? ”
” ওরিনে বড় বোন আছে, জানতাম, কিন্তু আয়শা ফটোগ্রাফার যে, ওরিনের বোন তা আজ জানতে পেরেছি। ”
নাছিম, কিছুক্ষণ ভেবে বললো..” তোর তো মাস্টার্স ফাইনাল এক্সাম শেষ। তুই আমার থেকে, থার্টি পারসেন্ট শেয়ার নিবি। নিজে বিজনেসে ফিল আপ করবি। ”
” আমি কি পারবো, তোমার মতো দ্বায়িত্ব নিতে৷ ”
” পারবি, পারতে তোকে, হবেই৷ আয়শার বাবার কাছে, নিজেকে প্রমান করতে হবে তোকে। তুইও দ্বায়িত্ব নিতে পারিস। ”
” আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট চেষ্টা করবো ভাইয়া। ”
নাছিম হালকা হাসলো। ফরিদ নিজের রুমের, দিকে যাবে ঠিক তখনি দেখলো, রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন। ফরিদ দাদীর কাছে, গিয়ে বসলো। দাদী দেখেও না দেখার ভান করে, রইলেন।
ফরিদ দাদীর হাত ধরে, বললো। দাদী প্লিজ আমাকে মাফ করে, দাও আমি মানছি আমি ভুল করেছি। তাই বলে কি আমাকে একটা সুযোগ দেবে না আমাকে?
দাদী থম থমে মুখ নিয়ে, বললেন..
” সব কিছুতে মাফ চাইলে, মাফ পাওয়া যায় না। ফরিদ। আর সুযোগের কথা বলছো নাছিম তো তোমাকে সুযোগ দিয়েছে৷ ”
” দাদী এভাবে কথা বলছো কেনো? তুমি আমার সাথে কথা না বললে, আমার খারাপ লাগে। ”
” তুই, নাছিম, আর মারিয়া আমার কলিজা। তোদের সাথে কথা না বললেও আমার খারাপ লাগে। কিন্তু তুই একজন বাবার আমানত কেড়ে নিয়ে এসেছিস। লোকটার কতো কষ্ট পেয়েছে জানিস? ”
” তুমি যদি চাও আমি, গিয়ে ক্ষমা, চাইবো। ”
” ঠিক আছে। যদি তুমি ক্ষমা পাও। তাহলে আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। ”
ফরিদ উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। দু দিন, নিজের কাছের মানুষেদের খোঁজ লাগিয়ে, ফরিদের কোন খারাপ দিক খুঁজে পেলেন না, আফজাল সাহেব। তাহলে কি আয়শার কথাই তাকে, মানতে হবে। ঘরময় পায়চারি করে ভাবছেন আফজাল সাহেব।
চিন্তা ভাবনা ক্ষানিকটা কমানোর জন্য, আফজাল সাহেব নিজেকে ব্যাস্ত রাখার চেষ্টা করছেন। বেলকনিতে বুলানো গাছ গুলোতে পরিচর্যা করছেন৷ ওরিন, আয়শা, ওরিন কেউ এক্ষন বাসায় নেই, ওরিন কোচিংয়ের জন্য বেরিয়েছে, আর আয়শা এই সময় টাতে বেশিরভাগ অফিসেই থাকে।
এক কাপ চা খেতে পারলে মন্দ হতো না। আফজাল সাহেব রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন চা তৈরি করবার জন্য। ঠিক তখনি বেল বাজার শব্দ হলো৷ আফজাল সাহেব দরজাটা খেলে ক্ষানিকটা অবাক হলেন কারন….
।
।
চলবে