#শুভ্র_বর্ষণ
#প্রভা_আফরিন
#পর্ব_১৫
শোভা গালে হাত দিয়ে বাহিরের ঝলমলে আকাশ দেখছে। পরিষ্কার আকাশ। তাতে সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে ভেসে বেড়াচ্ছে কিছু শুভ্র মেঘ। অবশ্য আকাশ দেখা ছাড়া সে কোনো কাজ খুজে পাচ্ছে না। কিংবা পাচ্ছে কিন্তু শারীরিক পরিশ্রমের কাজ সে করতে নারাজ। তার চাই মোবাইল। যেখানে কিছু ইন্টারনেট খরচের মাধ্যমে ভরপুর বিনোদন পাওয়া যায়।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো অথচ রিয়াদের কোনো খবর নেই। ফোনটা কখন হাতে পাবে সেই নিয়ে শোভার ছটফটানি বাড়ছে। সারাদিনে একবারও অনলাইনে ঢু মারা হয়নি। কিন্তু রিয়াদ লাপাত্তা। শোভা রিয়াদের ফোনটা সুইচ অফ করেনি। করতে ইচ্ছেও করেনি। ওর মনে একটু উশখুশ করছিলো এটা জানার জন্য যে ওই নিমরস ব্যাক্তিটির কোনো বিশেষ মানুষ আছে কি না। তবে ফোন লক করা এবং পাসওয়ার্ড না থাকায় ফোন ঘেটে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। রিয়াদ যেভাবে বলেছে তাতে বিশেষ কেউ থাকলে নিশ্চয়ই কল দেবে, সেই আশায়, কৌতুহলে ফোন বন্ধ করার ইচ্ছা জাগেনি।
শোভা স্বীকার করতে না চাইলেও এটা ঠিক যে, একসময় সে রিয়াদের স্মার্টনেস পছন্দ করতো। যদিও রিয়াদের ক্রমাগত উপেক্ষা, অপমান এবং উভয়ের ঝগড়ায় কবেই তাতে ভাটা পড়ে গেছে। এখন ঝগড়াটাই যেন মূখ্য।
শোভা সারাদিন অপেক্ষা করে মাত্র দুইটা কল পেয়েছে রিয়াদের ফোনে। একটা অফিস কল এবং আরেকটা আননোন নাম্বার। সেই আননোন নাম্বার দেখে শোভার চোখ চকচক করে উঠেছিলো। ভেবেছিলো রিয়াদের সেই বিশেষ ব্যাক্তিটি বোধহয়। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই সেই আশায় একরাশ নিরাসা জুটেছে। ফোনটা মূলত রিয়াদই করেছিলো তার অন্য ফোন থেকে, এটা বোঝার জন্য যে শোভা ফোন বন্ধ করেছে কিনা। শোভা হ্যালো বলতেই অপরপাশে রিয়াদের কন্ঠ ভেসে এলো।
“কি ব্যাপার, তুমি আমার ফোন কেনো অফ করোনি?”
শোভা প্রশ্নটায় হকচকিয়ে গেলেও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে। সে নিজের অবাকতা লুকিয়ে চোখা কন্ঠেই বললো,
“কাজ করছিলাম তাই ভুলে গিয়েছিলাম।”
অপরপাশ থেকে রিয়াদের কৌতুকপূর্ণ গলা পাওয়া গেলো,
“ভুলে গিয়েছো নাকি ইচ্ছে করেই বন্ধ করোনি? কোনটা?”
“ইচ্ছে করে বন্ধ করিনি মানে? আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড কি জেনে বসে আছি আমি যে ফোন ঘাটবো?”
“অন্যকিছুও হতে পারে। একজনকে নিয়ে আরেকজন মানুষের কৌতুহলের তো অভাব থাকে না।”
“কিসের কৌতুহল? আমার আপনার ব্যাপারে বিন্দমাত্র কৌতুহল নেই।”
“আসলেই! নেই বলছো!”
শোভা হকচকিয়ে গেলো। কৌতুহল অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা বুঝতে দিলে চলবে না। শোভা বললো,
“না নেই। সামান্য ফোন খোলা বা বন্ধ নিয়ে কিসের আগ্রহ থাকবে বুঝতে পারছি না।”
“আমার বিশেষ মানুষটার সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হচ্ছে না!”
“আপনার বিশেষ মানুষ দিয়ে আমার কি! আজব! ফালতু কথা রাখুন। এবার বলুন আমার ফোনের কি খবর।”
“পেয়ে যাবে।”
খট করে ফোনটা কেটে গেলো। কিন্তু শোভা রিয়াদের কণ্ঠে একটা কৌতুকপূর্ণ হাসি ঠিকই টের পেয়েছে। আজকাল রিয়াদের আচরণ অনেকটাই বদলে গেছে। আগে দেখা হলে পাশ কাটিয়ে চলে যেত কিন্তু এখন উপেক্ষা না করে উল্টো ঝগড়া করে পা বাড়িয়ে। অবশ্য ঝগড়াটা রিয়াদ করে না। ঝগড়া করে শোভা। রিয়াদের কাজ শুধু তাতে ঘি ঢালা। এবং কথায় কথা বাড়িয়ে শোভাকেই নাস্তানাবুদ করা। এই নতুন স্বভাব টুকুও শোভার বেশ চিন্তার কারণ। কিন্তু সব চিন্তা ঝেরে ঝুরে ফেলে সেই এক ঘটনাই মাথায় আসে, ফুল চুরি থেকেই ঝগড়ার সূত্রপাত।
___________
রাহেলা বেগম খেয়াল করেছেন ছেলের ইদানীং দৌড় ঝাপ খুব বেশি হয়ে গিয়েছে। সারা সপ্তাহ অফিসে দৌড়ের ওপর থেকে ছুটির দিনটা নিশান্ত স্ত্রীর নিকট কাটাতে যায়। কিন্তু সেখানে যাওয়া আসাও একটা ধকলের মধ্যে পড়ে। এখন মনে হচ্ছে ব্যস্ততার মাঝে ছেলের বিয়ে দিয়ে তিনি ছেলেকে আরো ব্যস্ততায় ডুবিয়ে দিলেন। নিশান্তের চেহারায় ক্লান্তি ভাব দেখে রাহেলা বেগমের খারাপ লাগে। একটা দিন ভালো করে ছেলের যত্ন নিতে পারেন না।
কতবার বলেছে চাকরিটা বদলাতে। কিন্তু নিশান্ত দেখি দেখি করে আর বদলানো হলো না। অবশ্য পুত্রবধূ বাড়িতে থাকলে এই সমস্যার একটা সমাধান হয়। নিশান্তকে আর আলাদা করে দৌড় ঝাপ করতে হবে না। তিনিও একটা দিন ছেলেকে কাছে পাবেন। এই অল্প একটু দেখা আর কথায় কি কখনো মায়ের মন ভরে!
একটা সময়ের পর মেয়েদের সম্পূর্ণ আকাশ জুড়ে শুধু তার সন্তানদের বিচরণ ঘটে। অন্য সব ধ্যান জ্ঞান এর কাছে তুচ্ছ। আকাশটা ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখলেও মায়ের মন ভরে না। সন্তান বড় হতে হতে মায়ের আকাশ থেকে নিজের স্বাধীন আকাশে ডানা মেলে। সন্তানের নিজস্বতা তৈরি হয়। সেই স্বাধীন আকাশ টুকুও মমতাময়ী প্রবল মমতায় আগলে রাখে। অথচ তার নিজস্বতার সবটা জুড়ে শুধুই তার সন্তানেরা থাকে। রাহেলা বেগমেরও তাই।
এক ছেলে ডিফেন্সে যাওয়ার পর এমনিতেই তার বুকের ভেতর খা খা করে। তীব্র ভালোবাসার তেষ্টায় মুখিয়ে থাকে। ছোট ছেলের মাধ্যমে সেই তৃষ্ণা অনেকটা মিটে যায়। নিশান্ত তার উচ্ছলতা দিয়ে সেই তৃষ্ণা মিটিয়ে দেয়। বড় ছেলে বাড়ি ফেরার পরও এখন তার ভেতর আবারও সেই তৃষ্ণার অস্তিত্ব রয়েছে। একসাথে দুই ছেলেকে প্রানভরে দেখার আকাঙ্ক্ষা অল্পতে মিটছে না। মায়েদের এই তেষ্টা বোধহয় সারা জীবনেও মেটে না। তাই ঠিক করলেন মিহাকে যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে তুলবেন তিনি। রাহেলা বেগম এবার একটা ভরা সংসার দেখতে চান।
রাহেলা বেগম মনের কথা ছেলেকে জানাতেই নিশান্ত মায়ের ইচ্ছেতে সম্মতি দিয়েছে। তার নিজেরও এবার মনে হচ্ছে সম্পর্কের গতিশীলতা দরকার। এভাবে কাছে দূরে থেকে সে এবং মিহা, দুজনেরই শান্তি হচ্ছে না। আবার নিজের ব্যস্ততাও কমাতে পারছে না। এমন নয় যে নিশান্ত সারা বছরই ব্যস্ত থাকে। সারা বছর কাজের চাপ এতো থাকে না। অনেক সময় আরামেই কাটে। বছরে কয়েকটা মাস শুধু একটু বেশি পরিশ্রম যায়। চাকরি বদলাবে ভেবেও বদলানো হয়নি। কোম্পানির সাথে বন্ডিংয়েরও একটা ব্যাপার আছে। তাছাড়া টাকাও একটা বড় কারন।
নিশান্তের বাবা নাজমুল হক একজন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। আগে একটা ব্যবসা করলেও বর্তমানে সমাজ সেবামূলক কজে নিযুক্ত। নিশান্ত চাকরি পাওয়ার পর থেকে বাবাকে আর ব্যবসা করতে দেয়নি দুইভাই। সংসারের একটা বড় অংশ নিশান্ত সামলায়। তাছাড়া এখন সে বিবাহিত। আল্লাহর ইচ্ছে হলে সন্তান-সন্ততি আসতেও সময় লাগবে না। খরচ দিন দিন বাড়বে বৈ কমবে না। সবদিক বিবেচনা করে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছুটা ব্যস্ততা সামলাতেই হয়।
মিহার জ্বরের ঘোরে বলা কথাগুলো নিশান্তকে এলোমেলো করে দিয়েছে। ভেতরে একটা খারাপ লাগা তৈরি হয়েছে। সে নিজেও তো স্ত্রীর থেকে দূরে থাকতে চায় না। সারাক্ষণ তার কাছাকাছি থাকতে চায়। প্রান ভরে ভালোবাসতে চায়। তাই মিহাকে নিজের কাছে এনে রাখাই নিশান্তের কাছে এখন উত্তম বলে মনে হচ্ছে।
রাহেলা বেগম ফোন করে আনোয়ার সাহেবকে নিজের ইচ্ছের কথা জানাতেই তিনি চুপসে গেলেন। বললেন,
“কিন্তু আমরা তো ঠিক করেছিলাম আমি হজ্জ থেকে ফিরলে সব হবে। ততদিন চলুক না যেভাবে চলছে।”
রাহেলা বেগম বললেন,
“আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি ভাই সাহেব। আপনি হজ্জে যাবেন সামনের বছর। তার আগ পর্যন্ত নাহয় ছোট বউমা দুই বাড়িতেই যাতায়াত করবে।আমার এখানে এসে কিছুদিন করে থেকে যাবে।আপনার কাছে থাকলো, আর আমার কাছেও।”
আনোয়ার সাহেবের ভেতর এক অদ্ভুত বোবা কান্না ভর করলো। বিয়ে দেওয়ার সময় সব কত সহজ মনে হয়েছে। অথচ কবুল বলার পর মেয়ের ওপর যে জোর কমে যায় সেটা তিনি এখন বুঝতে পারলেন। জোর গলায় বলতে পারলেন না, মিহাকে আমি এখন এই বাড়ি থেকে যেতে দিতে চাই না।
নিজের ইচ্ছার আগে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির ইচ্ছাটা দেখতে হয়। সুমা বেগম ভাইয়ের বলার ধরন শুনেই বুঝে গেছেন ঘটনা। তার বুকের ভেতর তীব্র হাহাকার এসে হানা দিচ্ছে। বসার ঘরে সকলের মাঝে অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা ভর করেছে।
মিহা রুম থেকে বেরিয়ে সকলের এমন বিমর্ষ মুখ দেখে এগিয়ে এলো। মামার কাছে বসে মামার হাত ধরলো। আনোয়ার সাহেব ভাগ্নীর হাতটা মুঠো পুড়ে শক্ত করে ধরলেন। খেয়াল করলেন তার হাত কাপছে।
“কি হয়েছে মামা? এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাদের?”
“কিছু না রে মা। তুই একটু আমার কাছে বসে থাক।”
সুমা বেগম কাজের কথা বলে চলে গেলেন রান্নাঘরে। তার পেছনে ছুটলেন শিরীন বেগমও। মিহা কিছুই বুঝতে পারলো না। হঠাৎ কি হলো সকলের!
আনোয়ার সাহেব মিহাকে খেয়াল করে দেখলো। হুট করেই মেয়েটা বড় হয়ে গেছে। এইতো সেদিনও মাছের কাটা বেছে খাওয়া নিয়ে কি বিড়ম্বনায় না পড়লো। মামা মাছ বেছে না দিলে তার ইলিশ খাওয়া হয় না। মামা বাহিরে থেকে ফিরলে দৌড়ে গিয়ে হাতের ব্যাগটা নিয়ে নেয়। জোর করে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। শোভাকে বড় বোনের মতো আগলে রাখে।
মেয়েটা চুপচাপ বোকাসোকা হলেও সাংসারিক বুদ্ধি তার আছে। শুধু নিজের মনের কথা জানাতে একটু দ্বিধা বোধ করে। জিজ্ঞেস না করলে নিজের প্রয়োজনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না মেয়েটা। অথচ তাকে একদিন আস্ত এক সংসার সামলাতে হবে। সবার খেয়াল রাখতে হবে।
জগতের নিয়ম কত নিষ্ঠুর! কারো হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায়, যত্নে গড়া সন্তানকে দিয়ে দিতে হয় অন্য নীড়ে। সেই নীড়ই হয়ে ওঠে তার সব। তার নিজের।
মিহা রাতে জানতে পারলো বাড়ির সবার মন খারাপের কারন। নিশান্ত ফোন করে সব বলার পর ওর মন খারাপ হয়ে গেলো। আসলে মিহা দুই ধরনের অনুভূতির চাপে পড়লো। এক, সে তার স্বামীকে প্রতিদিন কাছে পাবে। এতে তার মনে আনন্দ ভর করছে। আর দুই, তাকে নিজের মা, মামা, মামী, শোভাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। যেটা সে ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। দুইয়ের মাঝে মন খারাপের পাল্লাটাই ভারী হলো। নিশান্ত বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ বদলাতে বললো,
“তুমি কাল জ্বরের ঘোরে যা যা বলেছো তার জন্যই তো এতো জলদি তোমায় ঘরে তুলতে মত দিলাম। নাহলে আবার আমায় বেধে রাখলে তো আর চাকরি করতে পারবো না। সংসার চলবে কি করে!”
মিহা লজ্জা পেয়ে গেলো। কাল রাতের সব কথাই তার আবছা মনে পড়েছে। এরপর থেকে বেশ লজ্জাতেই ডুবে ছিলো সারাদিন। তাই আজ একবারও কল দেয়নি নিশান্তকে।
“কি হলো কথা বলছো না যে! আমি ঠিক বললাম তো! বউ অভিযোগ তুলেছে আমি তার ভালোবাসা বুঝি না। প্রেম বুঝি না। আমি একজন দায়িত্ববান স্বামী। এবং বউয়ের সেই অভিযোগ খন্ডানো আমার নৈতিক দায়িত্ব। তাইনা!”
“আ’ আপনি বোধহয় ক্লান্ত। আপনার ঘুমানো উচিৎ। আমারও দুর্বল লাগছে, ঘুমাবো।”
“ফোন যদি কেটেছো, আজ তোমারই একদিন কি আমারই একদিন।”
_________
শোভার ফোন ফেরত পেলো পরদিন সকালে। তবে পেছনের গ্লাস কভারটা সেইম ডিজাইনের নয়। কিছুটা আলাদা। এটা নিয়ে শোভা আবার ঝগড়া করবে কিনা ভাবছিলো রিয়াদ। তবে ওকে অবাক করে দিয়ে শোভা কোনো উচ্চবাচ্য করলো না। কারন আগেরটা থেকে এবারের কভারটা বরং সুন্দর লাগছে। শোভাকে কিছু বলতে না দেখে রিয়াদ কিছুটা বিস্মিত হয়েছে। মনে মনে একটা ঝগড়ার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো সে। তাতে জল ঢেলে দিয়ে শোভা ঠোঁট টিপে হেসে রিয়াদের ফোন ফেরত দিয়ে চলে গেলো। রিয়াদ ওর হাসি দেখে ভ্রু বাকালো। হলো কি মেয়েটার! হঠাৎ এতো ভদ্রতা কি ভালো লক্ষন!
রিয়াদ পিছনে ফিরতেই ভড়কে গেলো। ওর পেছনে টফি লেজ নাড়াচ্ছে। বোধহয় বেশ খুশি খুশিও লাগছে তাকে। তবে রিয়াদের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কারণ টফিকে মেক-আপ করানো হয়েছে। গালে গাঢ় গোলাপি ব্লাশন দেওয়া। কপালে কাজল দিয়ে বড় টিপ দেওয়া। চিকন, লম্বা স্টোনের দুইটা ক্লিপ ওর কানে আটকানো হয়েছে। ঠোঁটের বাহিরে বোধহয় লিপস্টিকও দিয়েছিলো, সেটা টফি চেটে ফেলেছে। হালকা লাল রঙ দৃশ্যমান ঠোঁটের কোণে।
টফি বারদুয়েক ডেকে রিয়াদের সামনে নিজের পা উঁচিয়ে দেখালো। সেখানে পিঙ্ক কালারের নেইলপলিশ। টফির মূলত সেই রঙটা পছন্দ হয়েছে বলেই এতো খুশি সে। রিয়াদের রাগ হলো। তার পরিষ্কার ছানাটাকে রঙ মাখিয়ে জোকার করে ফেলেছে। এই নির্বোধ ছানাও রঙ দেখে খুশি। কাজটা কে করেছে বুঝতে বাকি নেই ওর। পিছন ফিরে শোভাকে ডাকতে গিয়ে দেখলো শোভা ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়াদ তাকাতেই সে ঠোঁট গোল করে অদ্ভুত ভঙ্গিতে ভেংচি কাটলো। তারপর দৌড়ে পালালো ভেতরে।
#শুভ্র_বর্ষণ
#প্রভা_আফরিন
#পর্ব_১৬
আনোয়ার সাহেবের বাড়িতে উৎসব উৎসব রব চলছে। মিহার বিদায়ের সময় খুব বেশি দূরে নেই। এই সপ্তাহেই তারিখ দেওয়ার কথা ছিলো। নিশান্তের মা বলেছেন এসে তারিখ দেবেন মিহাকে অনুষ্ঠান করে তুলে নেওয়ার। কথাটা শোনার পর থেকে মিহা আনমোনা হয়ে উঠেছে। বাবার কথা মনে পড়ে ভীষণ। পুরোনো বাড়িটায় গিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কতদিন বাবার গায়ের ঘ্রান পাওয়া হয় না! তাই মিহা ঠিক করেছে দুয়েকদিনের মধ্যে একবার পুরোনো বাড়িটায় ঘুরে আসবে
ওর মন খারাপ দেখে বাড়ির প্রতিটা মানুষেরও মন ভারাক্রান্ত। সকলের এমন খাপছাড়া অবস্থায় আনোয়ার সাহেব আর কয়েকটা দিন সময় চেয়েছেন নাজমুল হকের কাছে। তারাও বুঝতে পারছে আনোয়ার সাহেবের বাড়ির অবস্থা। তাই বলেছে যা হবে সব ধীরে সুস্থে হবে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই।
মিহা চলে গেলে ওর মা হয়ে উঠবে পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। এখানে সবার সাথে হাসিখুশি থাকলেও সুমা বেগমের এক বুক হাহাকার রয়ে যাবে। স্বামীকে হারানোর পর মেয়েকে আকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন তিনি। সেই মেয়ে দূরে যাওয়ার পর সুমা বেগমের প্রতি রাতের সঙ্গী হবে নিঃসঙ্গতা। এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন রোগ হলো এটি।নিঃসঙ্গতা একজন মানুষকে অল্প অল্প করে শেষ করে দেয়। দিনশেষে যখন পাশে কেউ থাকে না তখন জগতের সকল দুঃখেরা যেন আলিঙ্গন করে।
মিহা মায়ের শোক থেকেই মূলত অসুস্থ হয়ে পড়ছে বারবার। ঠিকমতো খাবারও খেতে পারে না। জ্বরের পর থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নিশান্তের সাথে দেখা হয়েছিলো মাত্র একবার। এরপর রাগ করে আসেনি সে। মিহার অসুস্থতা নিয়ে নিশান্ত রেগে আছে। অনিয়ম করে শরীরের যত্ন নিচ্ছে না মেয়েটা। তাই নিশান্ত কড়াকড়ি ভাবে বলে দিয়েছে, নিজের যত্ন না নিলে, একদম সুস্থ না হয়ে উঠলে সে আর আসবে না। এতে অভিমানী মিহার মন খারাপ আরো একদফা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শোভা অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। ওর উচ্ছলতায় ভাটা পড়েছে। সেই কারণটাও মিহা। আজ হোক বা কাল, মিহাকে শ্বশুর বাড়ি যেতেই হবে। আজকাল বাহিরে ঘোরাঘুরি কম করছে শোভা৷ ঘুরে বেড়ানোর সেই সময়টুকু দুইবোন এখন একসাথে কাটাচ্ছে। একে অপরের চুল বেধে দেওয়া, ছাদে বসে কফি খাওয়া, পছন্দের মুভি দেখা কিংবা ছোটবেলার কোনো ক্রাসকে নিয়ে আলোচনা, শোভা সবদিক থেকেই মিহার সাথে কাটানো সময়টুকু আনন্দময় করে তুলছে। শোভ বুঝেছে মিহা চলে গেলে পরিবারে ওর ফাকা স্থানটুকু ওকেই ভুলিয়ে রাখতে হবে।
টফি ইদানীং ছাড়া পেলেই শোভার বাড়ির আশেপাশে এসে ঘোরে। মিহার আদর খায়। কিন্তু শোভার থেকে পাত্তা পায় না। শোভা টফিকে দেখলেই নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় আগে, যেন এই বজ্জাত ওর রুমে না ঢুকতে পারে।
টফি শোভাকে দেখলেই নিজের পা বাড়িয়ে দেয়। কেন দেয় সেটা শোভা জানে। টফি নেইলপলিশ পছন্দ করে।
সেইদিন ওর নখে গোলাপি রঙের নেইলপলিশ লাগানোর পর থেকেই টফি শোভাকে দেখলে পা বাড়িয়ে দেয় যেন শোভা আবার রঙ মাখিয়ে দেয়। এরপর পুরোটা সময় টফি পায়ের রঙিন নখের দিকেই তাকিয়ে থাকে, নখ চাটে, যতক্ষন না রিয়াদ ওর নেইলপলিশ তুলে দিচ্ছে।
শোভার নেইলপলিশের অত্যাচারে রিয়াদের ঘরে এখন নেইলপলিশ রিমুভার রাখতে হচ্ছে। শোভাকে না করেও কাজ হচ্ছে না। বরং মানা করলে মেয়েটা আরো বেশি বেশি সেই কাজ করে। অবশ্য টফি এবং শোভা নেইলপলিশ দেওয়া বাদে এখনো সেই শত্রুর মতো একজন আরেকজনের পেছনে লেগে থাকে। টফি সুযোগ পেলেই শোভার কোনো একটা জিনিস নষ্ট করে ছুটে পালায়।
___
শোভা ভার্সিটি শেষে যখন বাড়ি ফিরছিলো আজ কাকতালীয় ভাবে অভির সাথে দেখা হয়ে গেলো। অভি সেই পথে বাইক নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলো। শোভাকে দেখে ব্রেক করলো।
হুট করে একটা বাইক নিজের সামনে এসে থামতে দেখে অবাক হলো শোভা। হেলমেট খুলে যখন অভি ওর দিকে ফিরলো শোভার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। অভি বললো,
“কেমন আছো শোভা?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি ভাইয়া। আপনি এই পথে?”
“হ্যা কাজে যাচ্ছিলাম। তোমাকে দেখে থামলাম। বাড়ি যাচ্ছো?”
শোভা মাথা নাড়াতেই অভি আবার বললো,
“চলো তাহলে পৌঁছে দেই। আমি এই পথ ধরেই যাচ্ছি।”
শোভা ইতস্ততবোধ করে বললো,
“সমস্যা নেই ভাইয়া। আমি যেতে পারবো, সামনেই তো। আপনার দেরি হয়ে যাবে।”
“কিচ্ছু দেরি হবে না। আমাকে দেখে ইতস্তত করার কিছু নেই। তুমি আমার অনেক ছোট, বোনের মতো। বেয়াইন তো পরের কথা। আমার তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি! চলে আসো নামিয়ে দেই।”
শোভার ইচ্ছে করছিলো না যেতে। কিন্তু অভি বোনের মতো শব্দটা উচ্চারণের পর একটা ভালোলাগা কাজ করলো ওর মনে। নিশান্তের বন্ধুরা যতটা না দুষ্টু ততটা দায়িত্বশীলও বটে। শোভা অভির বাইকে উঠতে সম্মতি দিলো। এককদম এগোতেই হঠাৎ রিয়াদ সামনে রিক্সা নিয়ে এসে হাজির হলো। হুট করে রিয়াদের আগমনে ভড়কে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো শোভা। বিরক্তি নিয়ে বললো,
“কি ব্যাপার! আপনি এখানে?”
“কেনো আসতে পারি না?”
“পারবেন না কেনো! অবশ্যই আসবেন। এসে বসে থাকবেন। চাইলে শুয়েও থাকতে পারেন। সামনে থেকে সরুন আমি যাবো।”
রিয়াদ চোখমুখ শক্ত করে বললো,
“যাবে, তবে আমার সাথে।”
শোভা অবাক হয়ে একবার অভির দিকে তাকালো।অভি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। শোভা আবার বললো,
“আপনার সাথে যাবো মানে! আপনার সাথে কেনো যাবো?”
“আমার নতুন জব হয়েছে। তাই মায়ের জন্য শাড়ি কিনবো। আমি শাড়ি সম্বন্ধে ভালো বুঝি না। তাই তুমি আমায় সাহায্য করবে। চলো।”
রিয়াদের ক্রোধে ঢাকা চেহারায় তাকিয়ে কেনো যেন শোভার বিশ্বাস হলো না কথাটা। বললো,
“আমি আপনার সাথে কোথাও যেতে পারবো না। আপনি অন্য কাউকে খুজে নিন। আমি এখন অভি ভাইয়ার সাথে বাড়ি যাবো। দেরি হয়ে যাচ্ছে ওনার সরুন।”
“আমারো দেরি হয়ে যাচ্ছে। তোমার অভি ভাইয়ার দেরি হলে তাকে চলে যেতে বলো। তোমার তো নিশ্চয়ই কোন কাজ নেই বাড়িতে। তাই আমার সাথে যাবে তুমি।”
রিয়াদের কথায় শোভা বাক রুদ্ধ হয়ে গেলো। ওর কন্ঠে স্পষ্ট অধিকার বোধ। রিয়াদের এই কন্ঠস্বর শোভা শুনেছিলো সেই বৃষ্টির দিনে। যখন রিয়াদ ওকে রিক্সায় ওঠার জন্য বলেছিলো। এই স্বরের সামনে কেনো জানি শোভা উচ্চবাচ্য করার সাহস পায় না। যদিও মুখে কপট রাগী ভাব বজায় রাখে।
শোভার কোনো হেলদোল না দেখে রিয়াদ নিজেই এগিয়ে এসে শোভার হাতের কব্জি নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরলো। এতে যেন শোভা আকাশ থেকে পড়লো। হচ্ছে টা কি আজ! এই ছেলের মাথা ঠিক আছে তো! অভি ভাইয়ার সামনে কিনা হাত ধরলো! শোভা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। রিয়াদ সেসব উপেক্ষা করে অভির দিকে তাকিয়ে বললো,
“প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড, আপনি চলে যান। ও আমার সাথে শপিংয়ে যাবে। দরকার ছিলো একটু।”
অভি এতোক্ষন দুজনকেই পরখ করছিলো। রিয়াদের কথায় ওদের হাতের বন্ধন থেকে চোখ সরিয়ে মৃদু হেসে বললো,
“সমস্যা নেই আপনারা আসুন। আমি তাহলে যাচ্ছি।” তারপর শোভার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শোভা, তোমার সাথে নাহয় পরে আবার দেখা হবে। ভালো থেকো।”
অভির সামনে এভাবে হাত ধরায় শোভার ভীষণ লজ্জা লাগছে। অভির কথার জবাব পর্যন্ত দিতে পারলো না। কোনোমতে মাথা কাত করলো। মুচকি হেসে সে বাইক নিয়ে চলে গেলো। অভি চলে যেতেই রিয়াদ শোভার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
“রিক্সায় ওঠো।”
শোভা রিক্সায় উঠে বললো,
“আপনি অভি ভাইয়ার সামনে আমার হাত ধরলেন কেনো?”
“হাতে ফোসকা পড়েছে নাকি আমি ধরায়!”
“সোজা প্রশ্নের বাকা উত্তর দিচ্ছেন কেনো? সোজা উত্তর দিন।”
রিয়াদ আগের সেই অ্যাটিটিউডে ফেরত এসে বললো,
“কথা শুনছিলে না বলেই ধরেছি। নেহাৎ মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনবো বলে। নাহয় তোমাকে সাথে আনার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলো না।”
শোভা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো কথাটা শুনে। ইচ্ছে ছিলো না মানে? অথচ রিয়াদের অমন অধিকার বোধে শোভা কিছুক্ষণ হলেও অন্য কিছু ভাবতে যাচ্ছিলো। আর ওকেই কিনা এতো বড় অপমান! চড়া গলায় বললো,
“আপনি সেধে ডেকে এনে রিক্সায় বসিয়ে বলছেন আপনার ইচ্ছে ছিলো না! যাবো না আপনার সাথে। অন্যকাউকে খুজে নিন। এই মামা রিক্সা থামান।”
“রিক্সা থামবে না। আর তুমিও নামবে না। চুপচাপ বসে থাকো। নাহলে বাড়ি গিয়ে মায়ের শাড়ি পছন্দ না হলে বলবো তোমার হ্যাল্প চেয়েও পাইনি। আর বাগানের ফুল কেলেঙ্কারির কথাতো আছেই।”
শোভা হাত জোর করার ভঙ্গিতে হিসহিসিয়ে বললো,
“আপনার বাগানমুখো আমি আর হবো না। আর না আজকের পর আপনার কোনো কথা শুনবো। শুধু আন্টির শাড়ি পছন্দটুকুই।”
“আপাতত ওটুকুই চলবে।”
_________
বিকেলের সিদুর রাঙা মেঘ জানান দিচ্ছে সূর্যের বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে আসছে। পাখিদের কিচিরমিচির, রিক্সার টুংটাং কিংবা বাচ্চাদের খেলাধুলা কোনোটাতেই মনোযোগী হতে পারছে না মিহা। ওর উদাসী মন আকাশের দক্ষিণের কোণে একলা ভেসে বেড়ানো কালো মেঘের দিকে। প্রিয় মানুষটার রাগ ওকে ওই এক টুকরো কালো মেঘের মতো আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। শুভ্র অথবা সিদুর রাঙা মেঘের ছোয়া মনকে স্পর্শ করতে পারছে না। কি বিষাদময় এক বিকেল। সুন্দর আবহাওয়াও অনেক সময় মন খারাপের জন্য বিষাদময় লাগে। একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের মন, আবেগ, অনুভূতিকে এতোটা প্রভাবিত করতে পারে তা নিশান্ত ওর জীবনে না আসলে অজানাই থাকতো।
মিহা কিভাবে নিশান্তের রাগ ভাঙাবে বুঝতে পারছে না। এক সপ্তাহ হলো সে আসে না। ফোন দিলে দরকারি কথার বাইরে একটা শব্দও বলতে চায় না। এদিকে নিশান্তকে দেখার জন্য, তারসাথে অফুরন্ত কথা বলার জন্য মিহার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সবে বিকেল পাঁচটা বাজে। নিশান্তের অফিস থেকে বের হতে ছয়টা বেজে যায়। নিজেকে গুছিয়ে কল দিলো মিহা। আজ নিশান্তকে আসতে বলবে। এলে যেভাবেই হোক রাগ ভাঙাবেই সে। দুইবার বাজতেই ফোন রিসিভ হলো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
নিশান্ত ক্লান্ত কন্ঠে সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
“বলো কি বলবে?”
মিহার রাগ হলো। বলবে বলেই না কল দিয়েছে। ভালোমন্দ জিজ্ঞেসও করলো না। এতো রাগ কোথা থেকে আসে! অবশ্য নিশান্ত প্রতিদিনই শোভাকে কল দিয়ে ওর আদ্যোপান্ত জেনে নেয় সেটা মিহা জানে। বললো,
“না মানে মা বলছিলো আপনি আজ আসবেন কিনা, তাহলে আপনার জন্য রান্না করবেন। তাই জানতে কল দিলাম।”
“শুধু আম্মা জানতে চেয়েছে?”
“হু।”
“আচ্ছা, আমি আম্মার সাথে কথা বলে নেবো। আর কিছু?”
“না মানে আমিও জানতে চাইছিলাম আরকি।”
“তুমি জেনে কি করবে? আমার দেওয়া শর্ত কি তুমি মানছো? নিজের যত্ন নিচ্ছো? আমি খবর নিয়ে জেনেছি তুমি আবারো বৃষ্টিতে ভিজেছো।”
মিহা অভিমানী কন্ঠে বললো,
“সেই বৃষ্টিতে শোভাও ভিজেছে আমার সাথে। জ্বরও হয়নি। তাছাড়া আমার মন খারাপ হলে ভিজতে ইচ্ছে করে। কেউ তো আর মন ভালো করতে আসে না।”
নিশান্ত কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
“যদি আসি তাহলে আম্মার হাতের রান্না খেতে আসবো। কেউ যেন মনে না করে আমি তার জন্য আসছি। রাখছি।”
ফোন কেটে গেলো। মিহা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
“আসুন একবার। আমিও দেখবো কিভাবে মুখ ফিরিয়ে থাকেন আপনি।”
চলবে…