#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
তৃতীয় পর্ব
অর্নিতার বাবা চলে এসেছেন এইমাত্র তিনিও একটি কাজে চট্টগ্রামের হালিশহরে গিয়েছিলেন।
মেয়ের উপর এতবড় দায়িত্ব তিনি দিতে চাননি তবে মেয়ের জেদ আর আগ্রহ দেখে মেয়েকে তারই সংস্থায় কাজ করতে দিয়েছেন।
মেয়ের প্রতি বিশ্বাস তার বরাবরই ছিল।
এখনো আছে তবে যেকোন সময় দূর্ঘটনায় পরার আগে সবকিছু নিয়েই ভাবতে হয় বা পরিকল্পনা করতে হয়।
আগুন নিয়ে খেলতে হলে আগুনের উত্তাপ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে তা তিনি ভালো করেই শিখিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে।
______________________________________
গার্ড-ম্যাডাম পাচঁতলার সেই লোকটিকে কি করবো?
অর্নিতা- ওহ, আচ্ছা নিয়ে আসুন তাকে। তার সাথে কিছু কথা বাকি আছে।
আর আপনারা বলেছিলিন দুজন অফিসার নাকি আমার সঙ্গে থাকার কথা কোথায় তারা? এ পর্যন্ত আমি তাদের দেখিনি! কি করছে তারা?
গার্ড আনছি ম্যাডাম, বলেই তারা আরাফ আর অরুপের খোজে গিয়েছে।
অর্নিতা অরুপের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
গার্ডরা অরুপকে ধরে নিয়ে আসলো।
অরুপ অসহায়ের মত ওই দুজন গার্ডের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্নিতার সামনে অরুপকে নিয়ে এসে বলল-
ম্যাডাম একে কি করবেন?
অর্নিতা- মুখ খুলেদিন এর!
মুখ খুলেদেওয়ার পর, অরুপ কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনেক কষ্ট করে বলে উঠলো –
একগ্লাস পানি দিতে পারবেন? গলা শুকিয়ে গেছে।
খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
গার্ডরা পানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢকঢক করে পানি গিলে ফেললো সে।
অর্নিতা – তা বলুন কত দিন পর্যন্ত এই পথে আছেন?
অরুপ মুখটা ফ্যাকাশে করে চেয়ে আছে অর্নিতার মুখের দিকে।
অর্নিতা ধমক দিয়ে বলে উঠলো- বলুন!
ধমক শুনে অরুপ বেচারা নিজের পকেট থেকে আইডেন্টি কার্ড বের কের অর্নিতার সামনে তুলে ধরল!
অর্নিতা একবার কার্ড তো একবার অরুপের দিকে তাকাচ্ছে।
অরুপ লজ্জায় নিচে মুখ করে রেখেছে। যে কাজে এসেছে সেটাই গোলমেলে করে ফেলেছে।
আর অর্নিতা রাগে ফুসফুস করছে।
তার রক্ষা করতে এসেই
তাকেই কিনা সন্দেহ করলো!!
অরুপ- আসলে আপনি সেই লোকের খুব কাছের লোক ছিলেন, আর তাছাড়া আপনি অফিসিয়াল কাজ রেখে এই হোটেল এসেছিলেন। যে হোটেলটির নামে অলরেডি অনেক কমপ্লেইন আছে। তাই আপনার ওপরে আমাদের সন্দেহ ছিল। আর তাছাড়া আপনি নিজেও তো সেই সন্দেহ আমাকেই করলেন।
অর্নিতা- তাই বলে… আচ্ছা বাদ দিন, এবারের মত মাফ করে দিলাম! তবে সব সময় কাজে একটু সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করবেন। গার্ডদের ইশারা করে সে বলল
ছাড়ুন ওনাকে। বলেই অর্নিতা বেরিয়ে গেল।
বাহিরে মিডিয়ার লোকের সমাগম!
হবেই না কেন, এত বড় গটনা! একটি হোটেলে এতকিছু গটেগেল, নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে মদ, এবং নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি সব পাওয়া গিয়েছে এখানে।
আবার জড়িয়ে আছে বড় বড় নাম।
আজ সন্ধ্যায় বিখ্যাত লাইফস্টার হোটেলে, জেইড স্কোয়ার ও আবিদ ইন্ডাস্ট্রিস এর মালিক সহ বেশ কিছু সনাম ধন্য ব্যবসাহী মহলের লোকদের ড্রাগস সহ অবৈধ দ্রব্যাদির সঙ্গে ধরা হয়েছে। এরা সবাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের নাম কামিয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু কিভাবে এত টাকার মালিক বনে গেলেন সেটাই বের হয়নি।
___________________________________________
টিভির সামনে বসে আছে অর্না, টিভিতে চলছে একটি নিউজ!
আমরা আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি আইয়াজ রহমান
হতে এই তথ্য পেলাম যে এই চক্রটি ভারত ও মায়ানমার বোর্ডার হতে এই ড্রাগস এবং মদ স্পালাই করে আসছে।
আর এই চক্রটিকে ধরতেই আজ বাংলাদেশের একটি বিশেষ সংস্থা মাঠে নেমেছে এবং সফল হয়েছে।
আমরা এও জেনেছি যে এই চক্রের মধ্যে জড়িত আছেন
কিছু বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ!
ইয়েএ!! হুররে!! আম্মু! ভাইয়া দেখে যাও! আপু কি করেছে!
টিভিতে দেওয়া নিউজ শুনে লাফিয়ে উঠেছে
অর্না!
আয়শা- কি হয়েছে?
অর্না- আম্মু আপুর প্রথম সাক্সেস! তুমি বুঝতে পারছো?
প্রথম মিশনে যে ফার্স্ট হয়ে সে সব সময় ফার্স্ট হয়!!
আমার আপ্পি ফার্সট হইছে।
জাহিন- কই দেখি, দেখি!
অর্না- হুম, তুমি যাও তোমার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বসো।
কি জেনো নাড়ছিলে না! ও কম্পিউটার! যাও কম্পিউটার ঠিক করো গিয়ে!
জাহিন- হুহ! তুই বেশি লাফালাফি করিস না বুঝেছিস! বেশি লাফালাফি করলে তোকে নিয়ে মোবাইল মেকানিক না গাড়ির গ্যারেজ এ গাড়ির চাকায় যে পাম্প দেয় তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো।
অর্না- আম্মুওওওও!! দুম করে দুটো কিল বসিয়ে দিল জাহিনের পিঠে।
আয়শা – এই তোরা থামবি? বড়বোন এতবড় একটা কাজে গিয়েছে কি হতে কি হয়েযেত তার খবর নেই।
ওনারা যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।
মায়ের বকা খেয়ে
দুজনে মিলে আবার নিউজ দেখতে লাগল।
___________________________________
এইদিকে………….
অফিসার – আসসালামু আলাইকুম, স্যার, আমরা অফিসার অর্নিতা ম্যাডাম এর তথ্য মতে সবাইকে ধরেছি। এখানে ম্যাডাম সব তথ্য দিয়েছেন আপনি এই ফাইলে এবং এই চিপ, মডেম গুলোতে সব পেয়ে যাবেন।
জাহিদ আফসারী-হুম, ঠিক আছে, অফিসার অর্নিতাকে আসতে বলুন।
অর্নিতা-স্যার আমাকে ডেকেছেন?
জাহিদ আফসারী- আপনার জন্য দুজন অফিসার পাঠানো হয়েছিল, আপনি তাদের সঙ্গে না এসে একা একা এই ধরনের স্টেপ কেন নিলেন?
আপনার যদি কিছু হতো আমরা কি করতাম বলুন?
অর্নিতা মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ থেকে আবার উচু করে বলে উঠল- আজ যদি আমি আমার সেফটির কথা বিবেচনা করে বসে থাকতাম তাহলে স্যার আমার কাজটা সফল হতো না!!
তাহলে তা সফলতার পর্যায় না পরতো না।
তাই আমি নিজেই এই কাজে পা দিয়েছি।
জাহিদ আফসারী – আপনার এই কাজকে আমি অসমর্থন করছি। আপনি আসতে পারেন।
বাবার কথায় অর্নিতা মাথা নিচু করে চলে গিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর একটি বোর্ড মিটিংয়ে বসেছে সবাই সেখানে উপস্থিত জাতীয় ও বাংলাদেশ গোয়েন্দা পরিদপ্তর থেকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং এর উচ্চপদস্থ অফিসাররা বসেছেন সেই মিটিংয়ে।
তারা অর্নিতার পদক্ষেপে খুব খুশি হয়েছেন।
অর্নিতাকে তার সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে সেই মিটিংয়ে।
জাহিদ আফসারী ও মেয়ের সাহসিকতা ও সম্মানজনক এই পদক্ষেপে খুশি হয়েছেন।
এই পর্যায় এই প্রথম কোন নারী অফিসার আসতে পারেনি। তাই হয়তো আর কিছুদিন পরই তার জন্য জাতীয় পর্যায়ের সম্মাননা রয়েছে।
বোর্ড মিটিংয়ের পর অর্নিতা ও জাহিদ আফসারী দুজনে মিলে বেরিয়ে পরল নিজেদের গন্তব্যে।
গাড়িতে উঠেও বাবা মেয়ে গাড়িতে কোন কথা বলেনি।
বাসায় এসে অর্নিতা কারোর সঙ্গে কথা না বলে নিজের রুমে ডুকে পরল।
রুমে ডুকেই তার নজর পরল দেওয়ালে টাঙ্গানো একটি ছবি। খুব সুন্দর ছবিটি! একটি ছোট্ট পরিবারের ছবি!
অর্নিতা ছবিটির দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে গিয়ে নিজের উইগ বা পরচুলাটি খুলে ফেলল,চোখ থেকে লেন্স, আর চশমা খুলে ফেলল সে,
আর মেকাপ তুলার পর সে ভাবতে লাগল।
দীর্ঘ তিনমাস তাকে এই পরিশ্রম করতে হয়েছিল।
একটা অভ্যাস থেকে শুরু করে, তার পরিচয়, তার চালচলন কথার ধরন সবকিছু পরিবর্তন করতে হয়েছিল।
ইশশ, পুরো একমাস কথা হয়ে সাজতে তার কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছিল তা একমাত্র সেই জানতো।
এইতো সবে শুরু তারপর আরো কত পথ বাকি আছে।
মনে মনে এতকিছু ভাবতে ভাবতে সে
ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলেগেল।
____________________________________
বাসায় আসার পর অর্নিতা ডায়নিং টেবিলে বসেছে।
অর্নিতা বা জাহিদ আফসারী কারো মুখেই কোন রা নেই।
উপস্থিত অন্যরাও বুঝে গিয়েছে বাবা মেয়ের মধ্যে কিছু চলছে।
সরাসরি গৃহযুদ্ধ নয় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ!
তাই কেউই তেমন শব্দ করছে না।
অর্না দুবার লাফিয়ে উঠে সেও মুখে আঙ্গুল পুড়ে বসে আছে। আর তার বাবা ও বোনের স্নায়ু যুদ্ধ দেখছে বসে বসে।
জাহিন বারবার ইশারা করছে সে যেন কোনভাবে কোন ঝামেলা না পাকায়।
সবাই যার যার মত খেয়েদেয়ে উঠেগেল।
অর্নিতা বাবার মুখপানে চেয়ে আছে কিন্তু বাবা তারদিকে তাকাচ্ছে ও না।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে।
অর্নিতা নিজের রুমে চলে আসলো।
______________________________________________
জাহিদ আফসারী অর্নিতার রুমে এসেছেন।
কথা সবে মাত্র কফির মগ নিয়ে বসেছে তার রিডিং টেবিলে, নোটবুকে তুলে নিচ্ছে সামনে তার কি কাজ বাকি। এখনো অনেক কাজ তার বাকি, বাবার জন্য আজ সে এই পথে বাবার কথা শুনা দরকার তার ভাবছে আর নিজের যাবতীয় কথা লিখছে।
জাহিদ আফসারী মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।
অর্নিতা বাবার দিকে তাকালো।
জাহিদ আফসারী হেসেই বলে উঠলেন – ক্যাপ্টেইন অর্নিতা আফসারী ডাকবো নাকি কথা রহমান ডাকবো তোমাকে?
অর্নিতা- হেসেদিল তার বাবার কথায়। হেসেই জড়িয়ে ধরল, তোমার যা ইচ্ছা তাই ডাকো! তবুও রেগে থেকো না বাবা।
জাহিদ আফসারী – আমার মেয়ের সঙ্গে কি আমি রেগে থাকতে পারি? আমার মেয়ে যাই করুক ঠিক করে তবে সব সময় নিজের উপর সব দায় আর বিপদ নিয়ে ফেলে সেটাই তো আমার বিরক্ত লাগে।
অর্নিতা- বাবাকে জড়িয়ে ধরে আর করবো না।
জাহিদ আফসারী- জানিস আমার না খুব অবাক লাগে এই সেই মেয়েত যে গুটিগুটি পায়ে আমার কাছে এসেছিল?
ছোট্ট দুটি হাত দিয়ে বারান্দার রেলিং ধরে রেখেছিল?
আমি এসেছি বলে সেই কালো দিনটায় আমার কোলে এসে বসেছিল।
কত লোক তোকে কোলে নিতে চাইলো।
আর তুই সবাইকে ছেড়ে আমার কোলে এসে ঝাপিয়ে পরেছিলি।
অর্নিতা- কেদে দিল, প্লিজ বাবা ওই দিনের কথা বলো না। আমার ভালো লাগেনা এ সব শুনতে।
জাহিদ আফসারী- রাত অনেক হয়েছে, ঘুমিয়ে পর।
এরপর মিশন!………. .. ………
চলবে।